তোমাতে করিবো বাস💗 #পর্ব_৪

0
349

তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_৪
লেখনীতে-আফনান লারা

আসিফ ফোন রেখে দেয়ার আগে তার ফোনে একটা কল আসে।সেই অচেনা নাম্বার। এর আগেও কতগুলা অচেনা নাম্বার থেকে মিসড কল দেখেছিল।আজ এত কল কেন আসছে ভেবে কলটা রিসিভ করে আসিফ।

‘হ্যালো আপনি কি আসিফ বলছেন?’

‘জ্বী।আপনি কে?’

‘আমি কামাল হোসেন বলছি।ইন্সপেক্টর কামাল হোসেন’

‘ওহহ।আমার কোনো দরকার নাকি স্যার?’

‘হ্যাঁ,অনেক দরকার।তার আগে বলেন মানুষ মোবাইল কেন ব্যবহার করে?’

‘কল করতে আর কল ধরতে।যোগাযোগের দারুণ একটা মাধ্যম।আজকাল তো মোবাইল করতে পারেনা এমন কাজই খুঁজে পাওয়া মুশকিল’

‘ভেরি গুড আনসার।তবে এটা বলুন, আপনি মোবাইল কেন ব্যবহার করেন?’

‘আমিও তো এইসব কাজের জন্যই মোবাইল ব্যবহার করি।আপনি এই প্রশ্ন কেন করছেন?

‘কেন করছি?কারণ,আপনার আদরের বউ আমাদের কাছে আশ্রয়ে আছে।আপনি তো পৃথিবীর বাহিরে থাকেন তাই আপনাকে পাওয়া যায়না।হয়ত এখন ল্যান্ড করেছেন আমাদের এই পৃথিবীতে, এসেই যখন গেছেন তখন দয়া করে আপনার বিয়ে করা বউকে নিয়ে উদ্ধার করুন আমাদের’

‘বউ!মানে!রিনি?’

‘জ্বী।রিনি সুলতানা,আপনার বউ।মেয়েটি তো এটাই বলছে।আমি বাসায় যাব,আমার ছেলের আজ জন্মদিন তাড়াতাড়ি এসে নিজের বউকে নিয়ে যাও।বিয়ে করার সময় খবর থাকে, বিয়ের পরে খবর থাকেনা।কার বউ আর কে প্যারা নিচ্ছে!’

কথাটা বলে পুলিশ অফিসার কামাল ফোনটা কেটে দেন।
রাতুল আর মিনার দম ফেলে এবার।যাক মেয়েটি তার ঠিকানা পেয়ে গেলো অবশেষে।
রিনি সেইসময় কামাল হোসেনের সামনে রাখা পানির গ্লাসটা নিজের হাতে নিয়ে ফেলেছে।প্রচণ্ড খিধা পেয়েছে তার।পুটলির গিট্টু খুলতে পারেনি বলে বাতাসা মুড়ি আর খাওয়া হলোনা।
রিনিকে পানি খেতে দেখে রাতুল একটা কাগজের টুকরা ওর হাতে ধরিয়ে দেয়।গ্লাসটা রেখে রিনি বলে,’কার নাম্বার ইগা?’

‘এখানে আমার আর মিনারের নাম্বার আছে।কোনো একদিন মন চাইলে দেখা করিয়েন আপা।আমাদের বাসায় এসে দাওয়াত খেয়ে যাইয়েন’

রিনি মাথা নাড়ায় তারপর কি মনে পরে রাতুলের হাত চেপে ধরে ছলছল চোখে চেয়ে থেকে বলে,’আন্নেরা অনেক ভালা মানুষ’

রাতুল লজ্জায় লাল হয়ে যায়।
মিনার এসে ওকে সরিয়ে নিজের হাতটা বাড়িয়ে রিনির সাথে হ্যান্ডশেক করে।
——
আসিফের মাথা ঘুরাচ্ছে।রিনি এসময় ঢাকাতে!তাও আবার পুলিশ স্টেশনে।বাবা মা কেউ তাকে কিছু জানায় নি কেন!আর একা একটা মেয়েকে তারা কি করে ছাড়লো!!

মাথা কাজ করছেনা আসিফের।সোজা হাসপাতালে যাবে নাকি রিনির কাছে যাবে সেটা ভাবছে আসিফ।এদিকে বাপ্পির নাম্বার থেকে বার বার কল আসছে।কোনদিকে মোড় নিলে কাজের কাজ হবে সেটা ভেবে কুল পায়না আসিফ।পরে সিদ্ধান্ত নিলো আগে রিনিকে নিয়ে আসবে।তারপর ওকে নিয়ে হাসপাতালে যাবে।একসাথে তটিনিকেও বোঝানো হয়ে যাবে।
এই ভাবনাটা তার কাছে সঠিক মনে হলো তাই সোজা সিএনজি নিয়ে নিছে রিনির কাছে যাবার জন্য।
রাত আটটার আগেই আসিফ পৌঁছে যায় ওখানে।ছুটে ভেতরে ঢুকতেই দেখে দুটো জোয়ান ছেলে চেয়ারে একজন আরেকজনের গায়ে লেগে ফোনে গেমস খেলছে।ওদের একটু পাশেই চেয়ারে বসে পা দোলাচ্ছে রিনি।তারা কেউই আসিফকে তখনও দেখেনি।আসিফ রিনির দিকে এগিয়ে এসে রিনির নাম ধরে ডাকে।রিনি ওকে দেখে চমকে দাঁড়িয়ে পড়ে।এরপর মুখে হাসি ফুটিয়ে সালাম একটা দিয়ে মাথা নিচু করে ফেলে।

‘তুই এখানে কি করিস?’

রিনি মাথা নিচু করেই আছে।আসিফের দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছেনা।আসিফ আবারও ধমকে জানতে চায় একই প্রশ্ন। এবার গা শিউরে ওঠে রিনির।
রাতুল আর মিনার ফোন পকেটে পুরে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে।সেই পুলিশ অফিসার কামাল হোসেন ভেতরের রুম থেকে এসে আসিফকে দেখে বললেন,’ওহ!আপনি তাহলে আসিফ!নিয়ে যান আপনার স্ত্রীকে।আর এই ছেলে দুটোকে চা খাইয়ে দিয়েন।আপনার বউ নিয়ে অনেক ঘাটের পানি খাইছে ওরা।দ্যা রিয়েল স্বেচ্ছাসেবক! ‘

কথাগুলো বলে দাঁত বের করে হাসতে হাসতে চলে গেলেন তিনি।রাতুল আর মিনার আসিফের সামনে এসে হেসে দিলো এরপর রাতুল বললো,’আসিফ ভাইয়া আমরা আসি।অনেক রাত হয়েছে এমনিতেও।বাড়ি ফিরতে হবে আমাদের।

আসিফ রাগ কমিয়ে মুখে জোর করে হাসি ফুটিয়ে বললো,’অনেক থ্যাংকস ওর খেয়াল রাখার জন্য।তোমাদের অবদানের ঋণ আমি শোধ করতে পারবোনা।একটু অপেক্ষা করো চা খাব আমরা’

‘আরেহ না না ভাইয়া, এসব লাগবেনা।আমরা যাচ্ছি,দেরি হয়ে যাচ্ছে’

‘বেশি দেরি হয়নি।আটটা বাজে।ছেলেদের জন্য এটা বেশি রাত না।চলো কাছেই একটা ভাল রেস্টুরেন্ট আছে।’

এই বলে আসিফ রিনির হাত খপ করে ধরে আরেক হাতে একসাথে চারটা ব্যাগের রশি টেনে ধরে হাঁটা ধরলো।রিনি ভয় কাঁপছে।
আসিফ ওর আপন মামাতো ভাই।সেই আসিফের যৌবনের শুরুতেই পরিবারগত ভাবেই তাদের বিয়েটা হয়েছিল।শর্ত ছিল আসিফ চাকরি পাওয়া অবধি রিনিকে উঠিয়ে নেয়া হবেনা।অর্থাৎ অনুষ্ঠান এখনও হয়নি।বিয়েটা হবার পর আসিফকে রিনির পরিবার বলেছিল সে চাইলে এসে এসে থাকতে পারে।কিন্তু সে এর উত্তরে কিছুই বলেনি,আসেও নি। বিয়ে হয়েছে কিন্তু দুজন দুজনকে জানা হয়নি।
আসিফ ক্লাস সেভেন থেকেই ঢাকায় পড়াশুনার জন্য চলে আসে।অবাক করার হলেও ওদের বিয়েটা হয়েছিল আসিফ যখন ক্লাস এইটের জেএসসি পরীক্ষা দিয়ে গ্রামে বেড়াতে এসেছিল সেবার।বিয়ের কথাটা আসিফ ঢাকার কাউকে জানায়নি।
আসিফের বাবার সাথে তটিনির বাবার মনমালিন্য বলে আসিফের বিয়ের খবরটা এই পরিবার অবধি আসেইনি!!দশ- বিশজন মেহমানের মাঝে বিয়েটা হয়েছিল।যত দ্রুত বিয়ে ততই দ্রুত অর্ধেক দ্বীন পূর্ণ এই ভাবনা নিয়ে তিনি ওদের বিয়েটা খুব জলদিতে দিয়ে দিছিলেন।আসিফের তখন বয়স ১৫।আর রিনির ছিল ১০বছর।রিনি বিয়ের ব ও জানতোনা অথচ সে ১০বছরে বধু হয়ে গেছিলো।আসিফকে বছরে দুবারই দেখতো।কোরবান ঈদে আর গরমের ছুটিতে।কখনও দুই লাইনের বেশি কথা আসিফের সাথে তার হয়নি।আসিফকে সে অকারণেই ভয় পায়।অবশ্য এর পেছনে কারণ আছে।তা হলো আসিফের জোড়া ভ্রু!আসিফ ভ্রু কুঁচকালেই হাতের পশম খাড়া হয়ে যায় রিনির।
সে আসিফের ধমক কখনও খায়নি তাও ভয় পায় আর আজ ধমক খেয়ে আরও বেশি ভয় পাচ্ছে।আসিফ ওর হাতটা খুব শক্ত করে ধরে হেঁটে চলছে।
রিনি ওকে শেষবার দেখেছিল দেড় বছর আগে।ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা নিয়ে অনেক ব্যস্ত ছিল বলে আসিফ গ্রামের বাড়িতে যাওয়াই বন্ধ করে দেয়।
রিনির তাই ওকে আর দেখা হয়নি।সেই রেস্টুরেন্টে এসে রাতুল মিনার একপাশে বসে আর অন্যপাশে আসিফ, রিনি।
মেন্যুকার্ড নিয়ে আসিফ গড়গড় করে অনেকগুলো অর্ডার দিয়ে দেয়।মিনার লজ্জা পেয়ে বলে,’ভাইয়া কি দরকার এত টাকা নষ্ট করার।আমাদের সত্যিই খিধে নেই’

‘তোমরা তো খাবেই সাথে রিনিও খাবে।ওর
চেহারা বলে দিচ্ছে সকাল থেকে না খেয়ে আছে’

‘আপুকে বলেছি কিছু খাবেন কিনা,কিনে দেই।কিন্তু আপু কি যে বলছে আমরা ওনার ভাষাই বুঝিনা’

আসিফ রিনির দিকে তাকিয়ে জানতে চায় সে কি বলছিল।
রিনি আবারও আসিফের ভ্রুর দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলে।

রাতুল তখন বলে উঠলো,’আমার মনে আছে কি বলেছিল।বলছে””””কিয়া আর খাইয়াম।হাইদ হোয়াদের গুজার নাই কিছুর’

আসিফ চোখ বড় করে তাকায় রাতুলের দিকে তারপর রিনির দিকে।রিনি তখনও মাথা নিচু করে ছিল।এরপর ফিক করে হেসে দেয় আসিফ।ওর হাসি দেখে রাতুল বললো,’এর মানে কি হাস্যকর ছিল ভাইয়া?’

‘নাহ, তবে তোমার গলায় হাস্যকর শোনালো’
———
তটিনি আর বাপ্পি একটা পার্কে এসে বসে আছে।তটিনি বাপ্পির ফোন টিপে টিপে আসিফকে কল করেই যাচ্ছে আর বাপ্পি ওর পাশে বসে এই দৃশ্য দেখছে।একটা সময়ে বাপ্পির ফোনে কল আসে ওর মায়ের।তটিনি বাধ্য হয়ে ওকে ফোনটা দেয়।বাপ্পি হ্যালো বলতেই মা বললেন তটিনি যদি ওর পাশে থেকে থাকে তবে যেন ওকে নিয়ে হাসপাতাল ফেরত চলে আসে।তটিনির বাবা ওকে ডেকেছেন।
বাপ্পি ঠিক আছে বলে কথাটা তটিনিকে জানায়।তটিনি ওমনি দাঁড়িয়ে পড়ে যাবার জন্য।তারপর কিছুদূর গিয়ে আবার থেমে যায়।পেছনে ফিরে বলে,’বাবা যদি আমায় আপনাকে বিয়ে করতে বলে বলবেন আপনি আর আমায় চান না,ঠিক আছে?’

‘মিথ্যে বলতে পারবোনা।আমি তোমায় চেয়েছি,এবং চাই ও’

তটিনি দাঁতে দাঁত চেপে বলে,’আচ্ছা আপনার মা তো খুব বড়াই করেছিল, আপনি নাকি হ্যানত্যান।তবে আমায় কেন?আপনার জন্য কি আর ভাল মেয়ে নেই?আমায় ছাড়ুন না।দেখছেন না আমি একটা ছেলের জন্য কত পাগল?তাকে কত ভালবাসি?এত কিছু হয়ে যাবার পরেও আমি তাকেই চাচ্ছি?’

‘এক্সাক্টলি।এতকিছু হয়ে যাবার পরেও আমি তোমাকেই চাচ্ছি’

চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here