#বৌপ্রিয়া #আভা_ইসলাম_রাত্রি #পর্ব – ২৮

0
387

#বৌপ্রিয়া
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
#পর্ব – ২৮

‘ কুসুম? ঘুম থেকে উঠবে না আজ? ‘

কুসুম উচ্ছ্বাসের কথা শুনল। শুনেও উঠল না। বরং কম্বল দিয়ে মাথা অব্দি ঢেকে ফেলল। উচ্ছ্বাস হেসে উঠল। ঝরঝরে, প্রাণোচ্ছ্বল হাসি কুসুমের কানে প্রবেশ করলে কুসুম অবাক হয়ে শুনল। উচ্ছ্বাস ভীষন পারফেক্ট একজন, ঝরঝরে হাসি, ছাড়াছাড়া কথা, লম্বাটে, বলিষ্ট দেহ। এমন ছেলে কার না স্বপ্নের পুরুষ হয়ে উঠে! উচ্ছ্বাসের পাশে কি কুসুমকে মানাত? উহু! তবুও উচ্ছ্বাস আর কাউকে না, কুসুমকে ভালোবাসে। এই কথা ভাবলে কুসুমের সুখে আকাশে উড়তে ইচ্ছে করে। উচ্ছ্বাস আরো একবার ডাকল কুসুমকে। কুসুম উঠল না। চোখ মুখ খিঁচে শুয়ে রইল। উচ্ছ্বাস এবার জোর করে কুসুমের মাথা থেকে কম্বল সরিয়ে বলল,

‘ বিছানার লেগে থেকে লাভ নেই। উঠো দ্রুত। ফ্রেশ হয়ে নিচে যাব আমরা। দুপুরের খাবার খেয়ে বের হতে হবে আমাদের। ভুলে গেছো? ‘

কুসুমের মনে পরল, আজকে তাদের বাড়ি ফিরে যাবার কথা। আরো কদিন থাকত তারা। তবে উচ্ছ্বাসের জরুরি কল এসেছে। দ্রুত ঢাকা পৌঁছাতে বলা হয়েছে তাকে। কুসুম উঠে বসল। কপালের পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এলোমেলো চুল কানের পেছনে গুঁজে ইতি-ওতি তাকাল। মিনমিন করে বলল,

‘ আ-আপনি এ-এখানে থাকবেন? এই র-রুমে? ‘

উচ্ছ্বাস ভ্রু কুঁচকে বলল, ‘ তো কোথায় যাব? ‘

‘ না, মানে…’

উচ্ছ্বাস এবার টিপ্পনী কেটে বলল, ‘ তুমি কি লজ্জা পাচ্ছ? আরে আমিই তো। আমাকে চেনো না? আমার আম্মা এবং তোমার পরিবারের সম্মতিতে আমাদের তিন কবুল পড়ে ফাতেমী মোহরে বিয়ে হয়েছে। আর গতকাল আমাদের এতদিনের পেন্ডিং বাসরও হয়ে গেছে। অথচ তুমি আমাকে চেনো না? আমার সামনে লজ্জা পাচ্ছ? আমি তোমার হাসবেন্ড! তোমার না..’

বাকি কথা সম্পন্ন করতে পারল না উচ্ছ্বাস। কুসুম দ্রুত এসে উচ্ছ্বাসের মুখ চেপে ধরল। অসহায় কণ্ঠে বলল,

‘ দোহাই লাগে আপনি চুপ করেন। দয়া করে আর লজ্জা দিবেন না। আমি লজ্জায় মারা যাচ্ছি। ‘

উচ্ছ্বাস কুসুমের চেপে রাখা হাতে চুমু বসাল। কুসুম উচ্ছ্বাসের মুখ ছেড়ে দিল। উচ্ছ্বাস আর জ্বালালো না কুসুমকে। বরং মৃদু কণ্ঠে বলল,

‘ ব্যথা হচ্ছে? ‘

কুসুম উত্তর দিল না। উচ্ছ্বাস উত্তরের অপেক্ষাও করল না। উঠে গিয়ে একটু আগে কিনে আনা দুটো ঔষধ কুসুমের হাতে দিল। কুসুম জিজ্ঞেস করল,

‘ কিসের ঔষধ? ‘

উচ্ছ্বাস বলল, ‘ একটা ব্যথার। আরেকটা…’

উচ্ছ্বাস থেমে গেল। কুসুম ভ্রু কুঁচকে উচ্ছ্বাসের দিকে চেয়ে আছে। উচ্ছ্বাস একটু থেমে নিভু স্বরে বলল, ‘ দুটোই ইম্পর্ট্যান্ট মেডিসিন। তোমার জন্যে ভালো। খেয়ে নাও দ্রুত। ‘

কুসুমের এতকিছু ভাবার সময় নেই। শরীরের ব্যথায় পিষে যাচ্ছে সে। গা ব্যথায় টনটন করছে। কুসুম উচ্ছ্বাসের হাত থেকে পানির গ্লাস নিয়ে দুটো ঔষধ চুপচাপ খেয়ে ফেলল। উচ্ছ্বাসকে এবার স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলতে দেখা গেল।
____________________________
রাতের দিকে বাড়িতে প্রবেশ করল কুসুম-উচ্ছ্বাস। রাত থেকেই উচ্ছ্বাসের বোনেরা কুসুমের আগেপিছে ঘুরছে। কুসুম প্রথমে বুঝতে না পারলেও, এখন বুঝতে পেরেছে এদের উদ্দেশ্য মূলত কি! তাতেই কুসুম মুখে কুলুপ এঁটে যে বসেছে, বসেছেই। কাউকে কিছু বলছে না। রাতের খাবারের পর এবার কুসুমকে টেনে নিয়ে শিউলি রুমে গেল। বাকি বোনেরাও একে একে কুসুমকে ঘিরে বসল। শিউলি জিজ্ঞেস করল,

‘ ভাবি, কিছু তো বলো। আমাদেরও তো শিখতে হবে, মানুষ হানিমুনে গিয়ে কি করে? অ্যাই ওয়ান্ট টু নো। ‘

কুসুম কাঁচুমাঁচু করে বলল, ‘ বিয়ে হলে এমনি শিখবে। আগে শেখার কি দরকার? তাছাড়া আজকাল ইউটিউবে সব ড্রামা, মুভিজে শেখায় এসব। ওখান থেকে দেখে শিখে নাও। কিন্তু এখন আমার না প্রচুর ঘুম পাচ্ছে। যাই আমি, ঠিকাছে? তোমরা গল্প করো। ‘

কুসুম কোনরকম সেখান থেকে পালিয়ে এলো। রুমে প্রবেশ করলে উচ্ছ্বাকে কোথাও দেখা গেল না। কুসুম দরজায় খিল আটকে বারান্দায় গেল। ঐযে উচ্ছ্বাস বসে আছে। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। এলোমেলো চুল কপালে পরে আছে। ঘুমঘুম চোখ, ক্লান্তিতে অবসন্ন চেহারা। কুসুমের হৃদস্পন্দন একটুর জন্য বন্ধ হয়ে পরপরই দ্রুত চলতে শুরু করল। একটা মানুষের আর কতভাবে প্রেমে পরবে কুসুম? এই প্রেম, ভালোবাসার অন্ত কোথায়? কুসুমের মনে হয়, সারা পৃথিবীর ভালোবাসা এক করেও তাদের এই ভালোবাসার পরিমাপ করতে পারবে না। কুসুম দৌঁড়ে এগিয়ে গেল।

উচ্ছ্বাসের কোল থেকে ল্যাপটপ সরিয়ে ফেললে উচ্ছ্বাস খানিক বিরক্ত হয়। বলে, ‘ গুরুত্বপূর্ন ক্লাস করছি, কুসুম। প্লিজ ল্যাপটপ দাও। ‘

কুসুম ল্যাপটপ দিল না। বরং এগিয়ে এসে উচ্ছ্বাসের কোলে চড়ে বসল। উচ্ছ্বাস চমকে উঠল। কুসুম আজকাল ভীষন চঞ্চল হয়ে গেছে। সারাক্ষণ উচ্ছ্বাসের আশেপাশে ঘুরঘুর করে। নতুন নতুন ভালোবাসা অনুভব করলে এমনই হয়, উচ্ছ্বাস বুঝে। তার যে এসব মন্দ লাগে এমন নয়। বাহ্যিক ভাবে স্বাভাবিক থাকলেও, ভেতর ভেতর অস্থির বোধ হয়। কুসুমকে নিজের বুকের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলতে মন চায়। ইচ্ছে করে কুসুমকে সারাক্ষণ চোখের সামনে বসিয়ে রেখে ইচ্ছেমত দেখতে।

উচ্ছ্বাসের ধ্যান ভেঙে যায় কুসুমের কথা শুনে,

‘আপনি এত সুন্দর কেন, বলেন তো? আপনাকে দেখলেই আমার বুকের ভেতর কাঁপে। এই যে, এখনো কাঁপছে। এমন কেন হয়? আগে কেন হয়নি, এখন কেন হচ্ছে? আমি কিছু বুঝতে পারছি না। ‘

কুসুমের এমন অদ্ভুত কথা শুনে উচ্ছ্বাসের ভ্রু কুঁচকে গেল। পরপপর সে কুসুমের কোমরে আলতো করে হাত রাখল। কুসুমকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে বলল,

‘ ভালোবাসো যে, তাই। ‘
‘ ভালো কি শুধু আমিই বাসি? আপনি বাসেন না? তাহলে শুধু এই অস্থির বোধ আমি কেন অনুভব করি? আপনি কেন না?
‘ কে বলেছে আমার হয়না? আমি বলেছি? ‘
‘ হয় যে সেটাও তো বলেন নি। আমি আগে বলেছি। ‘

উচ্ছ্বাস উত্তর দিল না। বরং কুসুমের হাত নিজের বুকে আলগোছে রেখে বলল,
‘ মন দিয়ে অনুভব করো। কিছু বুঝতে পারছ? ‘

কুসুম কপাল কুঁচকে মনোযোগ দেবার চেষ্টা করল।
পরপরই অবাক হয়ে বলল, ‘ আপনার হৃদ স্পন্দন খুব দ্রুত চলছে। ‘
‘হ্যাঁ, হচ্ছে। কারণ এটাই স্বাভাবিক। আমরা যাকে ভালোবাসি, সে আশেপাশে থাকলে আমাদের হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়। আমরা আবেগে উত্তেজিত হয়ে যাই বলেই এটা ঘটে। এটা হার্টের একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ‘

কুসুমের মনটা ভরে গেল খুশিতে। উচ্ছ্বাসের দিকে নির্নিমেষ চেয়ে রইল। একপর্যায়ে উচ্ছ্বাস কুসুমের কোমরে হাত জড়িয়ে মিষ্টি স্বরে জিজ্ঞেস করল,

‘ কি বলেছিলে, আমি সুন্দর? ‘

কুসুম সম্মোহনের ন্যায় আদুরে কণ্ঠে বলল,

‘ ভয়াবহ সুন্দর। ‘

উচ্ছাস হাসল। আঙ্গুল দিয়ে কুসুমের নাক টেনে বলল,

‘ তাহলে তুমিও এই সুন্দরের সুন্দর বৌ। বৌপ্রিয়া আমার! ‘

#চলবে
গল্পের পরবর্তী সকল আপডেট পেতে যুক্ত হোন লেখিকার নিজস্ব গ্রুপে। গ্রুপ লিংক,
https://facebook.com/groups/929533097975216

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here