#চন্দ্রাবতীর_রাতে #সৌরভে_সুবাসিনী(moon) #পর্বঃ৩

0
209

#চন্দ্রাবতীর_রাতে
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
#পর্বঃ৩

নারিকেল গাছের চেরা পাতার ফাক দিয়ে জ্যোৎস্না যেনো টুপটুপ করে পড়ছে। হালকা বাতাস নিজে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো আয়েত্রীকে। ততক্ষণে একফালি মেঘে ডাকা পড়েছে চাঁদ। কয়েক মূহুর্তের ব্যবধানে আয়েত্রী নদীর পানির অনেকটা কাছাকাছি চলে এসেছে।
কেমন একটা মোহ কাজ করছে পানির প্রতি।

“মিস আয়েত্রী? হোয়াট আর ইউ ডুয়িং হিয়ার? ”

আচমকা কারো ডাকে যেনো প্রাণ ফিরে পেলো আয়েত্রী।বেশ জোরে জোরে বার কয়েক শ্বাস নিলো। মাছ ধরার সময় বসার জন্য বানানো বাঁশের মাচানে বসে পড়লে শাওন এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“আজকে আপনি এখানে কি করছেন? এমন মৃত ব্যক্তির মত হাটছিলেন কেনো?”

মৃত ব্যক্তির কথা মনে হতেই এক প্রকার শীতলতা অনুভব করে আয়েত্রী। ডান পাশে তাকিয়ে দেখে পুলিশ খানিকটা জায়গা Do not cross লেখা হলদে কালো প্লাস্টিকের কাগজ বাঁশের সাথে বেধে বেড়া দিয়ে গেছে।
তবে কি খুন এখানে…….
গলা শুকিয়ে উঠে মেয়েটার এই চিন্তায়। এমন না সে ভীতু কিন্তু তাই বলে এতটা সাহসী না যে রাত-বিরেতে মার্ডার প্লেসে আসবে।

“পানির পাশ থেকে সরে এদিকটায় বসুন। ”

শাওনের ডাকে সাড়া দিয়ে খানিকটা ডান দিকে সরে বসে আয়েত্রী।পাশে শাওন বসতেই আয়েত্রী বলল,

“আ’ম সরি। কখন এসেছি মানে… আমি…. ”
“ইট’স ওকে। কিন্তু এভাবে আপনার রাত বিরেতে বের হওয়া উচিৎ নয়। ”

“আপনি এখানে কি করছেন? আর তাছাড়া কাল ওখানে…… ওয়েট! আপনি! আপনি তো….. ”

“যার কথা বলছেন সে সম্পর্কে আমার দুলাভাই।অবশ্যই আমি আমার দুলাভাইকে খুন করিনি।কারণ আমার তিনজন ভাগ্নে আছে।আপনার চিন্তা ভাবনা এপ্রিশিয়েট করার মতো মিস.আয়েত্রী।”

“আ’ম সরি। ওভাবে বলতে চাইনি।আসলে… বাদ দিন।
আপনি আজ এখানে কেনো? ”

“আমি তো এদিকটায় ছিলাম না। আমার বাড়ি ওদিকে। বাড়ির পাশে বসে ছিলাম। হঠাৎ আপনাকে দেখলাম আপনাকে কেমন একটা হিপনোটিজম হিপনোটিজম লাগছিলো।আর ইউ ওকে? ”

” আসলে হালকা জ্বর। আর কিছুই না। ”

“আয়েত্রী! আপনার নিয়মিত কোর-আন শরীফ তেলাওয়াত করা উচিৎ। গতকাল রাতেও আপনার……”

শাওনের কথা কেটে আয়েত্রী বলল,

“আপনিও কি বিশ্বাস করেন? আমার মুখের কথায় এসব হয়?”

“পৃথিবীতে শয়তানের অস্তিত্ব আছে। সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত তাদের কিছু শক্তি রয়েছে৷ যেমন সৃষ্টিকর্তার অনুসারী রয়েছে তেমন রয়েছে শয়তানের পূজারী।
শয়তানের পূজারী থেকে একমাত্র সৃষ্টিকর্তা বাঁচাতে পারবেন। কোর-আন শরীফ এমন একটি ধর্মীয় গ্রন্থ, যেখানে আপনি সকল সমস্যার সমাধান পাবেন।
আশা করি বুঝেছেন।”

কথা শেষ করে শাওন কিছুক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো।হঠাৎ তার চেহারার রঙ পাল্টে চিন্তার রঙ ফুটে উঠেছে। পর মুহূর্তেই শাওন আয়েত্রী কে তাগিদে দিতে লাগলো। আগের দিনের মতন বাড়ির গেট অবধি পৌঁছে দিয়ে সে চলে যায়।এক বার পিছন ফেরে দেখে না।না কি আয়েত্রী অপেক্ষা করে না…..

পরদিন সকালে ঘুম থেকে জেগেই আয়েত্রী দুটো গুড নিউজ শুনতে পায়।

১.ছোট মামা সামিউল দেশে ফিরবে কাল।
২.প্রত্যাশা কে আগামী পরশু পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে৷

আয়েত্রীর জন্য দুটো সংবাদ সুখের হলেও শরীর হঠাৎ খারাপ হয়ে পড়লো।হাত-পা কাঁপছিলো ভীষণ খারাপ ভাবে। এদিকে আয়েত্রী নানা আজ থেকে আগামী তিনদিনের জন্য মসজিদে থাকবে।ইয়েমেন থেকে একদল মুসুল্লি যুবক তাবলীগে এসেছেন। তাদের খেদমতের জন্য উনি ওখানেই থাকবেন।
যাওয়ার আগে শুধু আয়েত্রীর নানুকে বলে গেলেন,

” অতীতে দুই মেয়ের দায়িত্ব ছিলো।এখন পাঁচ মেয়ের।দেখে শুনে রেখো।কারণ তারা অন্যের আমানত।আমার অবর্তমানে সকল প্রকার সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুমতি আমি দিয়ে গেলাম। ”

সেদিন বিকেলবেলা আয়াত,মানহা-মালিয়াত-প্রতীক্ষা কে নিয়ে আয়েত্রীর বাবা এবং প্রত্যাশার বাবা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।কারণ সকাল ভোর রাত চারটে এর ফ্লাইটে সামিউল সাহেব বাংলাদেশে পৌঁছানোর কথা।
আয়েত্রী -প্রত্যাশার যাওয়া হলো না।
আয়েত্রীকে দেয়নি ওর মা কারণ মেয়ে অসুস্থ আর প্রত্যাশা কে দেখতে আসবে তাই।

কথায় আছে দুই বোন যদি একজন অপর জনের মাথায় উকুন আনতে বসে তাহলে নাকি উকুনের দল বলে

“আজ আমাদের সবার দিন শেষ। কারণ দুই বোন এক সাথে বসছে। সুখ দুঃখের কত আলাপ করবো। দেখিস আমাদের বংশ নি-বংশ হইয়া যাবো তাও এদের কথা ফুরাইবো না।”

প্রত্যাশা -আয়েত্রী বসে বসে গল্প করছিলো।বড় মামী কোথা থেকে এসে যেনো বাটি ভর্তি বাদাম দিয়ে গেলেন।বাদাম খাওয়ার জন্য দেয়নি।ছিলে রাখার জন্য দিয়েছেন। কারণ কাল সকালে মরিচবাটা সাথে খুদ ভাত রান্না করবেন।
অথচ ভদ্র মহিলা এটাও জানেন হয়তো চার-ভাগের এক ভাগ পাওয়া যাবে বাকীটা দুইজনের পেটে চালান হয়ে যাবে।

রান্নাঘরের সামনে দুয়ারে পাটি বিছিয়ে বসে বসে কাজ করছিলো আয়েত্রী-প্রত্যাশা।সামনেই আয়েত্রীর নানু পিঠা ভাজছে আর প্রত্যাশার মা বানাচ্ছে। বড় মামী -আয়েত্রীর মা রাতের খাবারের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এতক্ষণ পিঠা ভালোই হচ্ছিলো কিন্তু হঠাৎ করেই তেলের পিঠা ভাজছে কিন্তু হচ্ছে না। ছড়িয়ে যাচ্ছে কিংবা পুড়ে যাচ্ছে।বাহির থেকে কোন মানুষ আসেনি। পিঠা শুধু প্রত্যাশা,আয়েত্রী নিয়েছিলো। ভদ্রমহিলা কিছুক্ষণ কি যেনো ভাবলো।তারপর প্রত্যাশা কে ডাক দিয়ে হাতে একটা তেলের পিঠা দিয়ে বললেন,

“উত্তরে-পশ্চিমে ঢেল দিয়া এই পিঠা দিবা। আর চুপচাপ আইসা পড়বা। পিছন ফিরবা না।”

প্রত্যাশা নানুর কথা মতন কাজ করে এসে বসে আবার কাজ করছিলো। কিছুক্ষণ আগে কি হয়েছে এটা কারো অজানা নয়। এ বাড়ির উত্তর-পশ্চিম দিকে একটা ডুমুর গাছ আছে। গাছের বয়স হবে দুশোরও বেশি। গাছে না কি এক জ্বিন বাস করে।এবাড়িতে কিছু তৈরী করলে তাকে দিতে হয়। সে নিজের উপস্থিতি এভাবেই জানান দেয়। তবে দীর্ঘ তিন বছর যাবত এখানে সে আসতো না। হঠাৎ এভাবে উপস্থিতি জানান দেওয়াটা বেশ ভাবিয়ে তুললো আয়েত্রীর নানুকে।

“দেখছিস? কি ছোট আত্না! একটা পিঠা? মাত্র একটা পিঠার জন্য এসব করে কেউ? ফকির স্বভাবের। আরে নিবি যখন বেশি করে নে। ”

আয়েত্রীর কথায় খিলখিলিয়ে হেসে উঠে প্রত্যাশা।স্বাভাবিক গড়নের হালকা পাতলা এই শ্যামলী মেয়ের হাসি সরাসরি বুকে আঘাত করে আয়েত্রী। ঠোঁট ফুলিয়ে প্রত্যাশাকে উদেশ্য করে আয়েত্রী বলল,

“আমার তোর হাসি কে বড্ড হিংসে হয় প্রতী! বড্ড হিংসে হয়। ”

দুবোনের হাসি-কথায় ফোড়ন কাটে এক ভদ্রমহিলা। আয়েত্রী তাকে এক নজর দেখে মুখের দিকে বিরক্তিকর ভাব নিয়ে তাকিয়ে আছে।
ভদ্রমহিলার গায়ের রঙ সাদা। মানে উনি একটু সুন্দরী বলে অহমিকায় পা মাটিতে পড়ে না। সবাই কে হেলাছ্যাত্তা করে বেড়ায়।মহিলা এগিয়ে এসে পিড়িতে বসতে বসতে বলল,

“তা খালামণি! হাসি দিয়েই কি সব হয় না কি? পাত্র পক্ষ কি খালি হাসি দেইখা তোমার বইনেরে নিবো? আরে ও পল্লবী কইছিলাম আমার দেবর রে দিয়া তোর মেয়ে নিবো কিন্তু দিলি না। কারণ আমার দেবর দোজবর।আর একটু টাকা পয়সা বেশিই না হয় চাইছিলাম।যা দিতি তোর মেয়ে-মেয়ের জামাইয়েরই তো থাকতো না কি?আমরা তো নিতাম না। আরে তোর এই মেয়েরে টাকা পয়সা ছাড়া কে নিবো বল তো? আগে দর্শনধারী পরে গুণ বিচারী।
শুনলাম কাল দিন পর না কি দেখতে আসবো? সারা জীবন খালি দেইখাই যাইবো। এই বেগুণ আর কেউ নিবো না ”

প্রত্যাশা বড্ড শক্ত করে আয়েত্রী হাত ধরলো।এই মহিলা বারবার ওকে অপমান করে। এমন না যে প্রত্যাশা কারো থেকে কম।শুধু গায়ের রঙ উজ্জল শ্যামলা।যা প্রত্যাশা কে অন্য সবার থেকে আলাদা করে।প্রত্যাশার চোখের পানি যখন আয়েত্রীর হাতে পড়লো!
আয়েত্রী উক্ত মহিলাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“প্রতীকে পাত্র পক্ষ পছন্দও করে বিয়েও হবে।এবং কাল দিন পর যারা আসবে তারাই করবে ওকে পছন্দ।আমার বোন অবশ্যই সুখী হবে। কিন্তু আপনারটা বলতে পারলাম না।
সার্জিকাল ব্লেড দিয়ে আপনার ওই শরীরের সাদা চামড়ার পরত উঠিয়ে সেখানে বগুড়ার চিকন শুকনো মরিচের গুঁড়ো আর লবণ আপনার পুরো গায়ে মাখলে আপনার রঙ বীভৎস কালো হয়ে যাবে। এতেও আপনি মরবেন না। কারণ তখন কালো চামড়ার হয়ে আপনার অনুভূতি কি আমি শুনতে আসবো।তখন বুঝবেন জ্বলন কাকে বলে…………

চলবে

#ছবিয়ালঃশামীমা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here