#বেনেবউ
#পর্ব_১৩
#তানজিলা_খাতুন_তানু
নিভ্র একজনের কাঁধে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইপ্সিতা নিভ্রকে এই অবস্থায় দেখে অধৈর্য হয়ে উঠল,
– ‘কি হয়েছে আপনার? ঠিক আছেন তো।’
– ‘ভাবি সব বলছি, আগে ভেতরে যেতে দিন।’
ইপ্সিতা জিভ কাটলো, তাড়াতাড়ি জায়গা করে দিলো ওদের ভেতরে প্রবেশ করানোর মতো। লোকটি নিভ্রকে নিজের ঘরে দিয়ে আসলো, নিভ্র একা ঠিক মতো হাঁটতে পারছে না।
লোকটি কিছু বলতে যাবে তার আগেই নিভ্র বলল,
– ‘পায়েতে একটু চো*ট লেগেছে আর কিছু না।’
কথাটা ইপ্সিতার বিশ্বাস হলো না। সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিভ্রের দিকে তাকাল। লোকটি চলে যাবার পরেই নিভ্রের মা ঘরে এসে ছেলেকে অন্যমনস্ক থাকার জন্য বকাবকি করতে থাকেন।
– ‘আহ মা বকছো কেন? দ্যাখো আমি একদম ঠিক আছি।’
– ‘তা তো দেখতেই পাচ্ছি। ইপ্সিতা ওর জন্য গরম দুধ নিয়ে আয় তো।’
ইপ্সিতা কোনো উত্তর না দিয়ে চুপচাপ চলে যায়। নিভ্রের চো*ট লাগাটা ওর কাছে স্বাভাবিক লাগছে না, মনে হচ্ছে নিভ্র কিছু একটা লুকিয়ে যাচ্ছে কিন্তু কি?
জামাইয়ের চোট পাবার কথা শুনে ইপ্সিতার বাবা মা নিভ্রকে দেখে গেছে।
– ‘কি খাবেন আপনি?’
– ‘কিছু ভালো লাগছে না।’
ইপ্সিতা নিভ্রের কথাতে কান না দিয়ে স্যুপ বানিয়ে এনে হাতে ধরিয়ে দিলো।
– ‘বললাম তো খাবো না। নিয়ে আসলে কেন?’
– ‘এখন যদি আপনি আরো অসুস্থ হয়ে পড়েন তাহলে দোষটা আমারই হবে। তাই চুপচাপ খেয়ে নিন।’
– ‘খেতে পার একটা শর্তে।’
– ‘এইখানেও শর্ত!’
– ‘রাজি না হলে কিন্তু আমি খাচ্ছি না। আর সবাইকে ডেকে ডেকে বলবো, বউ আমার সেবা করে না।’
ইপ্সিতা ফোঁস করে শ্বাস নিলো, এই ছেলে জ্বা’লানোর দিকে এক্সপার্ট।
– ‘আচ্ছা কি বলুন।’
– ‘আমাকে খাইয়ে দিতে হবে।’
– ‘পারবো না।’
– ‘তাহলে আমিও খাবো না।’
– ‘আপনার তো পায়ে চো*ট লেগেছে কিন্তু হাতে ছোট কিছুই হয়নি তাহলে খেতে কি সমস্যা?’
– ‘আচ্ছা হাতে চো*ট করে দিই তাহলে খাইয়ে দেবে তো।’
ইপ্সিতার রাগ মাথায় চ’ড়ে বসলো, এই ছেলে কি পাগল হয়ে গেছে নাকি ইচ্ছা করে নিজেকে আঘা’ত করবে?
– ‘ফাজলামির একটা লিমিট থাকে।’
– ‘বউয়ের কাছে আবদার করছি, বউ যদি না শোনে তাহলে তো এইরকম ফাজলামি করায় যায়।’
ইপ্সিতা হার মেনে নিলো, এই ছেলের সাথে কিছুতেই কথাতে পারবে না। তাই চুপচাপ কথা মেনে নেওয়াটাই শ্রেয়। ইপ্সিতা নিভ্রকে স্যুপ খাইয়ে দিচ্ছে আর নিভ্র দুষ্টুমি করে চলেছে। ইপ্সিতা না পারছে সহ্য করতে না পারছে কিছু বলতে।
– ‘আপনি কিন্তু খুব দুষ্টু হয়ে গেছেন।’ (বিরক্ত হয়ে)
– ‘যা বাবা কিছুই করলাম না এখুনি দুষ্টু হয়ে গেলাম।’ (বোকা বোকা চাহনি দিয়ে)
ইপ্সিতার ইচ্ছা করছে নিভ্রের গ’লাটা টি’পে দিতে কিন্তু আফসোস এটা সম্ভব না, তাই কথা না বাড়িয়ে রাতের রান্না করতে চলে গেল। নিভ্র মনে মনে হাসতে লাগল, ইপ্সিতাকে আচ্ছা করে জ’ব্দ করেছে। মেয়েটার রাগী মুখটা ওর বুকে কাঁ’পন ধরিয়ে দেয়, ইশ এত মিষ্টি কেন ইপ্সিতা। নিভ্রের ইচ্ছা করছে ইপ্সিতাকে নিজের করে পেতে কিন্তু সেটা সম্ভব না।
রাতেও নিভ্র ইপ্সিতার হাতেই খেয়েছে, উল্টো পাল্টা বায়না করে ইপ্সিতাকে বিরক্ত করছে।
– ‘ইপ্সিতা। আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাও না।’
– ‘এই আপনি আমাকে এত জ্বা’লাতন করছেন কেন?’ (বিরক্ত হয়ে)
– ‘জ্বা’লাতন করছি এইটা বলতে পারলে! আমার মাথা ব্য’থা করছে তাই বলেছি, ঠিক আছে দিতে হবে না আমি মাকে ডাকছি। মা মা,
ইপ্সিতা দৌড়ে গিয়ে নিভ্রের মুখটা চে’পে ধরল।
– ‘এই আপনি কি করছেন,চুপ করুন।’
ইপ্সিতা আর নিভ্র কাছাকাছি, অনেকটাই কাছাকাছি। দুজন দুজনের নিঃশ্বাসের শব্দ অনুভব করতে পারছে, নিভ্র ইপ্সিতার দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে। ইপ্সিতার খেয়াল আসতেই সরে যেতে যাবে তখনি নিভ্র ওর হাত ধরে নিজের দিকে টেনে নিয়ে কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
– ‘আমার বেনেবউ।’
নিভ্রের ফিসফিসিয়ে বলা কথাটা ইপ্সিতার বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে। মানুষটার কাছে থাকলে এতটা ভালো লাগে কেন?
নিভ্র কিছু না বলে ইপ্সিতার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ল।
– ‘মাথাটাই হাত বুলিয়ে দাও।’
ইপ্সিতা দ্বিমত পোষণ না করে নিভ্রের চুলে নিজের হাত বোলাতে লাগলো। ইপ্সিতার ভালোবাসার পরশে নিভ্রের পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই নিভ্র ঘুমিয়ে পড়ে, ইপ্সিতা নয়নে তাকিয়ে দেখে তার স্বামীকে। এত সুন্দর একটা মানুষ ওর স্বামী ভাবতেই মনে একটা প্রশান্তির বাতাস বয়ে যায়। ইপ্সিতার মনে একটা নি’ষিদ্ধ ইচ্ছা জাগছে, নিভ্রের কপালে চুমু দেবার সাধ জাগছে। ইপ্সিতা নিজের ইচ্ছাটাকে নিজের মনেই রেখে উঠতে যাবে তার আগে নিভ্র ঘুমের ঘোরেই ইপ্সিতার কোমড় জড়িয়ে ধরলো। ইপ্সিতা পড়লো বড্ড ফ্যাসাদে কি করবে বুঝতে পারল না।
ইপ্সিতা নিভ্রের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে সেইদিকে খেয়ালই নেই। সকালে নিভ্রের আগে ঘুম ভাঙে, ঘুম থেকে উঠে ইপ্সিতার ঘুমন্ত ঘুমটা দেখে চমকে উঠল। পরক্ষনেই সবকিছু মনে পড়তেই মুখে হাসি ফুটে উঠল, আবার ইপ্সিতা সারারাত এইভাবে কাটিয়েছে এটা ভাবতেই মনটা খারাপ হয়ে যায়। আসতে করে উঠতে যাবে পায়ে লেগে যায়,
– ‘আহ্।’
ইপ্সিতার ঘুম ভেঙে যায়। নিভ্রকে দেখে উত্তেজিত হয়ে পড়ে,
– ‘কি হলো। আপনি ঠিক আছেন?’
– ‘হুমম, ঠিক আছি।’
– ‘একটু সাবধানে থাকবেন তো।’
– ‘তুমি আছো তো।’
– ‘চলুন আপনাকে ফ্রেশ করিয়ে দিই।’
– ‘হুম।’
ইপ্সিতা নিভ্রকে ফ্রেশ করিয়ে বারান্দায় নিয়ে গেল। তারপর নিভ্রের জন্য এক কাপ কফি নিয়ে আসলো।
– ‘এক কাপ আনলে যে।’
– ‘এমনি।’
– ‘সত্যিটা বললেই পারো, আমার সাথে এক কাপে খেতে চাও।’
– ‘আমি কেন আপনার সাথে খেতে যাবো!’ (গোল গোল চোখ করে)
– ‘আরে এটাও জানো না। স্বামী স্ত্রী একসাথে এক পাত্রে খেলে ভালোবাসা বেড়ে যায়।’
– ‘দরকার নেই ভালোবাসা বেড়ে যাবার। আমি এমনিতেই ঠিক আছি।’
– ‘দেখব দেখব কি করো। এখন আছি তো তাই বলছো আর যখন থাকবো না তখন খুঁজবে।’
ইপ্সিতা রাগী চোখে নিভ্রের দিকে তাকাল।
– ‘এইসব কি বলছেন আপনি?’
– ‘ঠিকই বলেছি।’
– ‘এইসমস্ত কথা বললে আমি কিন্তু বাপের বাড়ি চলে যাবো।’
– ‘ওই তো নীচে বাপের বাড়ি। আমি যখন ইচ্ছা চলে যেতে পারব, তাই ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।’
– ‘আপনার সাথে কথা বলাই বেকার, দূর।’
ইপ্সিতা রাগ দেখিয়ে রান্নাঘরে চলে যায়। নিভ্র হাসলো, ইপ্সিতার কেয়ার, রাগগুলো নিভ্রের বড্ড ভালো লাগছে। নিভ্রের মা ছেলে আর ছেলের বউয়ের খুনসুটি দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন, ওদের জীবনটা স্বাভাবিক হলেই শান্তি।
ইপ্সিতা রান্না করছে তখনি কলিং বেল বেজে উঠল।
– ‘এখন আবার কে আসলো?’
– ‘দ্যাখ না একবার।’
– ‘দেখছি।’
ইপ্সিতা দরজা খুলে সামনে মানুষটিকে দেখে চমকে উঠল,
– ‘তুমি!’
#চলবে..
ইপ্সিতা আর নিভ্রের খুনসুটি গুলো আপনাদের কেমন লাগছে জানাতে ভুলবেন না। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
আসসালামু আলাইকুম।