বেনেবউ #পর্ব_১২ #তানজিলা_খাতুন_তানু

0
237

#বেনেবউ
#পর্ব_১২
#তানজিলা_খাতুন_তানু

নিভ্রের মা ইপ্সিতাকে এখনো মেনে নিতে পারছেন না, যদিও বা কোনো প্রকার খারাপ আচরন করেননি তবে ভালো আচরনও করেননি। সবকিছু নিয়ে একটু ডিপ্রে’শড হয়ে আছে ইপ্সিতা। না পারছে সবকিছু মন থেকে মেনে নিতে আর না পারছে স্বাভাবিক হতে, অতি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।

নিভ্র ইপ্সিতার অবস্থা ভালো করেই বুঝতে পারল তাই সিদ্ধান্ত নিল মায়ের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করবে।

– ‘মা।’
– ‘বাবু তুই কিছু কি দরকার?’
– ‘তোমার সাথে একটা কথা ছিল।’
– ‘কি বল।’

নিভ্র কিছু না বলে মায়ের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ল। মা পরম মমতায় ছেলের কপালে হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।

– ‘মা তুমি আমাকে ভালোবাসো তো?’
– ‘এইসব কি বলছিস বাবু।’
– ‘না উত্তর দাও তুমি।’
– ‘হুমম ভালোবাসি।’
– ‘আমি খুশি থাকলে, হ্যাপি থাকলে তুমিও হ্যাপি থাকবে তো?’
– ‘হুমম।’
– ‘তাহলে কেন এইরকম করছো কেন?’
– ‘কি করেছি আমি!’
– ‘মা তুমিও তো একটা মেয়ে, ইপ্সিতার দিকটা একবার ভেবে দ্যাখো। ঠিক কিভাবে ওহ এতগুলো দিন পার করেছে সেটা ওহ ছাড়া আর কেউই জানে না। আমি ওকে ভালো রাখার জন্য বিয়ে করে এনেছি আর সেখানে ওহ আরো ডিপ্রে’শনে পড়ে যাচ্ছে।’
– ‘এইসব কি বলছিস তুই‌।’
– ‘মা বিয়ের পর প্রতিটা মেয়েই আশি করে তার শাশুড়ি মা তাকে নিজের মেয়ের মতো আগলে রাখবে তুমি এইসবের কিছুই করেছো?’
– ‘তুই কি আমাকে অভিযু’ক্ত প্রমান করতে চাইছিস।’
– ‘না মা, আমি জানি আমার মা বেস্ট মা। জীবনে অনেকবার তো আমার জন্য অনেক কিছু করেছ এইবার একটুকু করো।’

নিভ্রের মা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
– ‘ঠিক আছে তুই যেটা চাইছিস সেটাই হবে।’
– ‘মা তোমার ইচ্ছার বিরু’দ্ধে আমি তোমাকে কিছুই করতে বলছি না। ওর সাথে একটু মিলে মিশে থাকার চেষ্টা করো প্লিজ।’
– ‘আচ্ছা তাই হবে।’

নিভ্রের মা স্বাভাবিক হতে শুরু করলেন। নিভ্রের কথাগুলো শোনার পর ইপ্সিতার সাথে মিশতে শুরু করলেন।

– ‘ইপ্সিতা।’
– ‘হ্যা বলো মা।’
– ‘দুকাপ চা করে আমার ঘরে আয়, আড্ডা দেবো।’

ইপ্সিতা একটু অবাক হয়। তবুও কিছু না বলে চুপচাপ চা বানিয়ে শাশুড়ির ঘরে চলে যায়।

– ‘মা আপনার চা।’
– ‘বসো আমার পাশে।’

নিভ্রের মা চায়ের কাপে চুমুক দিলেন। নিস্তব্ধ হয়ে বাইরের দিকে একমনে তাকিয়ে আছে, ইপ্সিতা চুপ করে আছে কি দিয়ে শুরু করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। নিভ্রের মা নিরবতা ভেঙে বললেন,

– ‘নিভ্র আমার বড্ড আদরের। অনেক সাধনার পরে নিভ্র আমার পেটে আসে, যেদিন ওহ এই পৃথিবীতে আসে তখন আমার অবস্থা খুবই খারাপ। বেঁ’চে থাকার চান্স ছিল না, ডাক্তাররা অনেক চেষ্টা করার পর আমি সু’স্থ হয়ে উঠি। নিভ্রের বাবা আমাকে আর বেবি নিতে দেয়নি। নিভ্রকে নিয়েই আমার গোটা দুনিয়া। কয়েকবছর পর নিভ্রের বাবা আমাদের ছে’ড়ে চলে যায়। তখন থেকে ছেলেটাকে নিয়ে একাই চলতে থাকি। নিভ্র কখনোই আমার বিরুদ্ধে যায়নি এইপ্রথম তোমার জন্য গিয়েছে, প্রচন্ড রাগ হয়েছিল আমার মেনে নিতে পারিনি। এমনিতেই তোমার অতীত জানার পর তোমার উপরে আমি একটু বিরক্ত বোধ এসেছিল আর নিভ্র তোমাকে বিয়ে করার পর সেটা অনেকটাই বেড়ে যায়। তোমাকে কিছুতেই বউমা হিসাবে মেনে নিতে পারছিলাম না। তবে কালকে রাতে নিভ্র আমার ভুলটা ভাঙিয়ে দেয়, আমাকে মাফ করে দিও।’

নিভ্রের মা কেঁদে উঠল। ইপ্সিতা একটা অদ্ভুত পরিস্থিতিতে পড়লো, কি করবে কিছুই বুঝতে পারল না।

– ‘মা আপনি এইভাবে কাঁদবেন না। হয়তো আপনার জায়গায় আমি থাকলে এই কাজটাই করতাম।’

নিভ্রের মা ইপ্সিতাকে জড়িয়ে ধরল। দুজনের মধ্যে থাকা মান-অভিমানের পালা শেষমেশ মিটলো। নিভ্র দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে মা আর স্ত্রীর কান্ড দেখত লাগলো।

– ‘মা আর বেনেবউয়ের মিল তো হয়ে গেল, আবার কবে হবে?’ (বিরবির করে)

রাতে, ইপ্সিতা ঘরে গিয়ে দেখল নিভ্র কম্পিউটারে কিছু একটা করছে। ইপ্সিতার উপস্থিতি টের পেয়ে মাথা না তুলেই বললো,
– ‘কি ব্যাপার সারাদিন তো কোন খোঁজই নেই আপনার।’
– ‘কেন বাড়িতেই তো আছি।’
– ‘কিন্তু আমার কাছে তো নেই।’
– ‘আপনার কাছে থাকব কেন?’

নিভ্র কম্পিউটারটা ছেড়ে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে ইপ্সিতার হাত ধরে নিজের কাছে টেনে নিলো।

– ‘আরে কি করছেনটা কি?’
– ‘কেন বউয়ের সাথে রোমান্স করছি।’
– ‘কিসব কথাবার্তা এইগুলো।’
– ‘বারে বউয়ের সাথে এইরকম কথা বলবো না তো বাইরের মেয়ের সাথে কথা বলবো?’
– ‘সে যায় করুন না কেন, আমার কি।’ (ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)
– ‘আমার একজন কলিগ আছে আমাকে লাইক করে প্রোপসও করেছে অনেকবার। ভাবছি এইবার এক্সসেপ্ট করে নেবো।’

ইপ্সিতা রাগী চোখে নিভ্রের দিকে তাকাল। নিভ্র ইপ্সিতার কান্ড দেখে ফিক করে হেসে দিলো।

– ‘হাসছেন কেন?’
– ‘সিক্রেট।’

নিভ্র নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। ইপ্সিতা ফ্রেশ হয়ে ঘুমাতে চলে গেল।

পরেরদিন সকালে,

ইপ্সিতা নিভ্রের জন্য খাবার রেডি করে দিলো।

– ‘আপনি রেডি হয়েছেন?’
– ‘হয়েছি কিন্তু টাইটা বাঁধতে পারছি না।’

ইপ্সিতা নিভ্রের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,
– ‘এতগুলো বছর তাহলে কে বেঁধে দিতো?’

নিভ্র দাঁত কেলিয়ে দিলো, ইপ্সিতা ভালো করে বুঝল নিভ্র শয়তানি করছে। তাই সরে যেতে যাবে তার আগেই নিভ্র ইপ্সিতার হাত ধরে নিজের দিকে টেনে নিয়ে বলল,

– ‘একটাই তো আবদার করলাম আর তুমি মেটাবে না!’
– ‘উহ আপনি বড্ড জেদি।’

ইপ্সিতা নিভ্রের টাই বেঁধে দিতে লাগল। নিভ্র ইপ্সিতার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, অপরূপ লাগছে মেয়েটিকে। আচ্ছা ইপ্সিতা কি এতটাই সুন্দর দেখতে নাকি ওর চোখে এতটা সুন্দর লাগছে?

– ‘নিন হয়ে গেছে।’

নিভ্র কিছু না বলে ইপ্সিতার কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলো, ইপ্সিতা পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয়। নিভ্রের স্পর্শ ওর কখনোই বিরক্ত লাগে না, একটা অন্যরকম অনুভূতি হয়।

– ‘আসছি। নিজের আর মায়ের খেয়াল রাখবে কেমন।’
– ‘আপনিও নিজের খেয়াল রাখবেন।’

নিভ্র বেরিয়ে গেল। কিন্তু ইপ্সিতার মনটা কিরকম একটা খচখচ করছে, আবার নতুন কোনো বি’পদ আসবে না তো? ইপ্সিতাকে অধৈর্য হতে দেখে নিভ্রের মা বলল,
– ‘কিরে কি হয়েছে? এইভাবে উশখুশ করছিস কেন?’
– ‘মা আমার মনটা কিরকম একটা খচখচানি করছে।’
– ‘কেন?’
– ‘জানি না মা। আমার খুব ভয় লাগছে।’
– ‘চিন্তা করিস না খুব ঠিক হয়ে যাবে।’
– ‘তাই যেন হয়।’

নিভ্রের মা আর ইপ্সিতা দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে গল্প করছিল তখনি কলিং বেলের শব্দ বেজে উঠল।

– ‘আমি দেখছি‌।’

ইপ্সিতা এগিয়ে এসে দরজা খুলে দিলো। দরজা খোলা মাত্রই চমকে উঠল…
– ‘আপনার কি হয়েছে?’

#চলবে…

কেমন লাগলো আজকের পর্ব সকলে জানাতে ভুলবেন না। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

আসসালামু আলাইকুম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here