বেনেবউ #পর্ব_৬

0
279

#বেনেবউ
#পর্ব_৬
#তানজিলা_খাতুন_তানু

“মৃ’ত্যুর অপেক্ষায় আছি।”
ফেসবুকে স্টোরিটা দেখে নয়নের ভ্রু কুঁচকে গেল। তাড়াতাড়ি ইপ্সিতাকে মেসেজ করল,

– ‘কি হয়েছে?’
কিন্তু মেসেজ সিন হলো না। ইপ্সিতা অফলাইন হয়ে গেছে। নয়ন হতাশ হয়ে ফোনটা রেখে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

**

নিভ্র অফিস থেকে ফিরে খেতে বসে দেখল মা আনমনা হয়ে আছে। মনটা কিরকম একটা খারাপ হয়ে আছে।

– ‘মা কি হয়েছে?’
– ‘কিছু না।’
– ‘তাহলে এইভাবে বসে আছো কেন?’
– একটা কথা তোকে সোজাসুজি বলে দিচ্ছি।’
– ‘কি?’
– ‘ওই ইপ্সিতার সাথে মেলামেশা বন্ধ করে দে। আমি কখনোই এই সম্পর্ক মেনে নেব না।’
– ‘কিন্তু কেন মা?’
– ‘একজন ধ’র্ষি’তার কোনো জায়গা নেই আমার পরিবারে।’

কথাটা শোনার পর নিভ্রের গলা দিয়ে খাবার নামলো না, খাবার ফেলে রেখেই উঠে চলে গেল। নিভ্রের মা হতাশার নিঃশ্বাস ফেললেন, সবকিছুই হাতের বাইরে চলে গেছে, কিভাবে সবটা স্বাভাবিক করবেন উনি নিজেও ভেবে উঠতে পারছেন না। এই কয়েকদিনে মেয়েটার প্রতি নিজের ওহ একটা দূর্বলতা সৃষ্টি হয়েছে কিন্তু ওই একটাই বাঁধা।

নিভ্র কিছুতেই শান্ত হতে পারছে না। কথাটা বারবার নিজের মাথাতে ঘুরপাক খাচ্ছে, ইপ্সিতার সাথে কথা বলার জন্য ছটফট করছে। ছাদে ইপ্সিতার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে কিন্তু সময় পেরিয়ে যায় ইপ্সিতা আসে না।

ইপ্সিতা নিজেকে সম্পূর্ণ ঘর বন্ধি করে নিয়েছে, নিভ্রের মায়ের বলা কথা গুলো চাইলেও ভুলতে পারছে না। পরেরদিন, অহনা আহমেদের জরুরী তলব আসাতে ইপ্সিতাকে বাধ্য হয়েই বের হতে হয়।

স্ট্যান্ডের কাছে চিরচেনা মানুষটির দেখা পাই, তবুও দেখেও না দেখার ভান করে দাঁড়িয়ে থাকে। নিভ্র বাইকটা পাশে রেখে দাঁড়িয়ে আছে ওর বিশ্বাস ছিল ইপ্সিতাকে বাড়িতে না পেলেও এইখানে ঠিকই পাবে।

– ‘ইপ্সিতা।’

ইপ্সিতা এদিক ওদিক তাকাতে থাকে কিছুতেই মানুষটার সাথে কথা বলবে না। কিন্তু নিভ্র নাছোড়বান্দা, ইপ্সিতার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
– ‘কি হলো এইভাবে ইগনোর করছো কেন?’
– ‘দেখুন নিভ্র আপনি আবার তেমন কেউই হননা, তাহলে আমি কেন বেকার বেকার আপনাকে ইগনোর করতে যাবো?’

নিভ্র আহত হলো। ইপ্সিতার কন্ঠ সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ছিল, তারমানে এই কয়েকদিনে ইপ্সিতার মনে কি একটুও জায়গা করে নিতে পারেনি?

– ‘বেকার আমার পেছনে সময় নষ্ট করবেন না, আমি নিতান্তই একজন সাধারণ মেয়ে তার উপরে ধর্ষিতা তাই আমাকে এতটা প্রায়োরিটি দেবার প্রয়োজন নেই।’

ইপ্সিতা চলে যায়। নিভ্রের কানে কথাগুলো বাজতে থাকে, ইপ্সিতার মুখে ধ’র্ষি’তা কথাটা শুনে ওর বুকে ঝড় উঠে গেছে। মেয়েটা এতকিছুর পরেও স্বাভাবিক কিভাবে?

**

অহনা আহমেদের বাড়িতে যাবার পরেই উনি ইপ্সিতার বিষয়টি সম্পর্কে আলোচনা করতে থাকেন।

– ‘সরি গো কালকে থাকতে পারিনি।’
– ‘কোথাও গিয়েছিলেন বলেছিলেন তো‌।’
– ‘হ্যাঁ আসলে আমার ছেলের কাছে গিয়েছিলাম।’
– ‘ওহ। উনি কোথায় থাকেন?’
– ‘রিহাবে।’ (মাথা নীচু করে)
– ‘কি?’ (অবাক হয়ে)
– ‘হ্যাঁ। একটা কাজে ১মাসের জন্য দেশের বাইরে গিয়েছিলাম, দেশে ফিরে ছেলের এই অবস্থা দেখি। সম্পূর্ণ ড্রা’গ’স, ম’দে’র নেশায় ডুবে গিয়েছিল।’

অহনা আহমেদ চোখ মুছলেন। ইপ্সিতার বড্ড মায়া হলো, যে মানুষটি সকলের বি’পদে ঝাঁ’পিয়ে পড়ে তার সন্তানেরই বেহাল দশা।

– ‘ম্যাম।’
– ‘সরি একটু ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলাম। বাই দ্যা ওয়ে আমি তোমার বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করছিলাম তবে মনে হচ্ছে না বিষয়টার কোনো সমাধান হবে।’

ইপ্সিতা হতাশার নিঃশ্বাস ফেলল। তাহলে কি অপরাধীকে শাস্তি দিতে পারবে না?

– ‘মনখারাপ করো না ইপ্সিতা, আমি আমার সবটা দিয়ে চেষ্টা করবো। আর নিজের প্রতি করা অন্যায়ের বিচার না পাও অন্য জনকে তো ন্যায় পাইয়ে দিতে পারবে। মনে রেখো এই সৌভাগ্যটাও কিন্তু সবার হয় না।’
– ‘মানে?’
– ‘এই নাও তোমার জয়েনিং লেটার, আজ থেকে তুমি আমার সহকারী হিসাবে জয়েন করছো।’

ইপ্সিতার ভারাক্রান্ত মনটা নিমিষেই ভালো হয়ে যায়। অহনা আহমেদ পেশায় একজন সমাজসেবী। বহু নারীকে ন্যায় পাইয়ে দেবার কাজ করে চলেছেন এতগুলো বছর, নারী সংগঠন হিসাবে ওনার এনজিও এর নাম বেশ সুপরিচিত।

ইপ্সিতা বেশ ফুরফুরে মেজাজে অহনা আহমেদের বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে। মনটা হালকা লাগছে, না হয় নিজের কষ্টটাকে নিজের মাঝে রেখেই অন্যের উপকারে লিপ্ত হবে।

রাস্তার ধারে ফুচকা বিক্রি হতে দেখে ইপ্সিতার খেতে ইচ্ছা করলো, ওই ঘটনার পর থেকে নিজের সমস্ত ইচ্ছাগুলোকে গ’লা টি’পে শে’ষ করে দিয়েছে। আজকে কতদিন পর নিজের প্রিয় খাবারটা খেতে ইচ্ছা করছে, ইপ্সিতা এগিয়ে দোকানের কাছে দাঁড়াল। দাঁড়িয়ে ফুচকা খাওয়ার মজাটাই আলাদা, উফ্ কতদিন এই আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

ইপ্সিতা ফুচকা খেতে লাগল। দেখতে দেখতে ৫০ টাকার ফুচকা খেয়ে ফেলেছে, নাক চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছে। ঝালে চোখ মুখ লাল হয়ে আছে।

– ‘ঝাল খেতে পারেন না, তাহলে ঝাল খান কেন?’

পরিচিত কারোর কন্ঠস্বর পেয়ে ইপ্সিতা সামনে তাকিয়ে দেখল নিভ্র ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। এই পরিস্থিতিতে পুরানো কোনো কথাই ইপ্সিতার মাথাতে নেই, ঝালে উহঃ আ করতে করতে বলল,

– ‘দেখছেন তো ঝাল লেগেছে, সেটা কমানোর চেষ্টা করুন না।’
– ‘ঝাল কমানোর চেষ্টা করতে পারি তবে একটা শর্তে।’
– ‘কি শর্ত? আর একটা মানুষ ঝালে মরে যাচ্ছে আর আপনি শর্ত দিচ্ছেন লজ্জা করে না।’
– ‘না করে না। আমার শর্ত না মানলে আমি ঝাল কমাবো না।’

ইপ্সিতার ঝালে অবস্থা খারাপ হচ্ছে, অনেকদিন পর এতটা ঝাল খাওয়ার জন্য এই অবস্থা হয়েছে। ঝালে মাথার ঠিক নেই, কিভাবে কমবে সেই চিন্তায় আছে তাই নিভ্রের শর্তে রাজি হয়ে গেল।

– ‘ঠিকাছে আমি রাজি।’
– ‘প্রমিস তো।’
– ‘পাক্কা প্রমিস।’
– ‘ওকে আগে এইটা খেয়ে নাও তারপর বলছি।’

নিভ্র ইপ্সিতার দিকে একটা দইয়ের ভাড় এগিয়ে দিলো। যখন ইপ্সিতাকে ফুচকা খেতে দেখে তখনি বুঝেছিল ঝাল লাগবে তাই জন্য পাশের মিষ্টির দোকান থেকে দই কিনে নিয়ে এসেছিল। নিভ্র অফিসের একটা কাজে এই দিকে এসেছিল, কিন্তু কে জানত ইপ্সিতার সাথে দেখি হয়ে যাবে।

ইপ্সিতা দইটা খেতে লাগল, নিভ্র ইপ্সিতাকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখে চলেছে মেয়েটা যতই দেখে না কেন তবুও দেখেছে মন চাই। কি আছে ওর মাঝে? কেন এতটা টানে নিভ্রকে?

ইপ্সিতা স্বাভাবিক হয়ে চলে যেতে যাবে তখনি নিভ্র বলল,
– ‘এই যে ম্যাডাম কোথায় যাচ্ছেন?’
– ‘কেন?’
– ‘শর্তের কথা কি ভুলে গেলে?’
– ‘ওহ সরি। বলুন কি শর্ত?’
– ‘আমার শর্ত হলো,
– ‘কি!’
– ‘আরে এখনো তো বললামই না তাতেই এই রিয়াকশন দিচ্ছো।’
– ‘হেয়ালি না করে বলুন না।’
– ‘আমার সাথে গোটা একদিন বীরভূম জেলাটা ঘুরতে হবে।’
– ‘আপনি পাগল নাকি, একদিনে গোটা বীরভূম ঘুরবো কেমন করে?’
– ‘যতটুকু পারি ঘুরবো। কি হলো বলো।’
– ‘আমি পারবো না।’
– তুমি কিন্তু কথা দিয়েছো।’

ইপ্সিতা ভাবনায় পড়ে যায়। সত্যি ওহ কথা দিয়েছিল এখন কথা না করলে কথার খেলাপ হয়ে যাবে তাই ইপ্সিতা অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজি হয়ে গেল।

– ‘ওকে। তাহলে কবে যাবে?’
– ‘আগামীকালকেই।’
– ‘ওকে।’

ইপ্সিতা চলে যায়। নিভ্র বিশ্বজয়ের হাসি দিলো, আগামীকাল কি হবে? নিভ্র কী আবারো ইপ্সিতার সাথে নিজের সম্পর্কটা স্বাভাবিক করে তুলতে পারবে?

#চলবে…

আগামী পর্বে বীরভূম জেলাটিকে ঘুরে দেখবো আমরাও। আজকের পর্বটা কেমন হয়েছে বলবেন সবাই।

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
আসসালামু আলাইকুম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here