অবাধ্য_বাঁধনে #পলি_আনান [পর্ব সংখ্যা ২৩ক]

0
587

#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ২৩ক]
______________________
” বাপ ছেলের এক কথা আমাদের পছন্দ অপছন্দ পরে আগে অনু কি বলে সেটা জানার বিষয়।মেয়েটা কি পড়া শেষ করবে নাকি এখনি বিয়ের জন্য মত দেবে।আপনি বলেন ভাবি এত ভালো প্রস্তাব সচরাচর কি পাওয়া যাবে?হাত ছাড়া করলে তো আমাদেরি লস।ছেলের মা বলেছে বিয়ের পরেও ছেলের বউকে পড়াবে তাহলে এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া কি উচিত হবে আপনার বিবেকে কী বলে?”

এই নাগাড়ে কথাটি শেষ করে থামলেন দোলন।অনুর বিয়ের ব্যপারে তিনি ভীষণ খুশি অবশ্য খুশি হবেন না কেন এত বড় ঘর থেকে প্রস্তাব এসেছে কেউ তো চাইবে না ফিরিয়ে দিতে।ঈশা গায়ে ওড়না জড়িয়ে আড়ালে বেরিয়ে পড়লো কক্ষ ছেড়ে এক্ষুনি তাকে অনুর কাছে যেতে হবে।
অনুদের বাসায় এসে বেল বাজাতে দরজা খুলেন অনুর বাবা বেলায়াত।ঈশাকে দেখে তিনি ভীষণ খুশি হলেন।

” কেমন আছো আম্মু?জ্বর সেরেছে?”

” আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আঙ্কেল আপনি ভালো আছেন?অনু কোথায়?”

” বেশ ভালো আছি যাও যাও অনু তার রুমে আছে।”

হাসি মুখে অনুর কক্ষে এগিয়ে গেলো ঈশা দরজাটা লাগানো ছিলো ছিটকিনি ছাড়া।অল্প চাপে দরজা ঠেলতে সঙ্গে সঙ্গে খুলে যায় তখনি নজরে আসে বেগুনি শাড়ি পড়া অনুকে।মেয়েটা বিছানার কোনে বসে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে জানলার বাইরে।কক্ষে কারো উপস্থিত টের পেয়ে ভেজা চোখ দুটো মুছে নেয় অনু।ঘাড় ঘুরাতে ঈশাকে দেখতে পেয়ে দ্বিগুণ চমকে যায়।গায়ের শাড়িটা ঠিক করে চপল পায়ে দাঁড়ায় মেঝেতে।

” তুই এখানে?”

” বিয়ে করছিস আমায় ছাড়া।”

” আমি তোকে বলেছিলাম আজ দেখতে আসবে।”

” হুম।”

ঈশা এগিয়ে এলো চোখ বুলালো পুরো রুমটায়।মেঝেতে কয়েকটা কাঁচের চুড়ি ভেঙ্গে পড়ে আছে নিশ্চয়ই জেদ করে ভেঙ্গেছে।

” রাসেল ভাইয়া জানে এসব?”

” ওর সাথে আমার আর কোন সম্পর্ক নেই।”

“কেন সম্পর্ক নেই আমার জন্য?”

অনু নেতিবাচক মাথা নাড়ায়।ঈশা তার হাত টেনে পাশে বসায়।

“যে দেখতে এসেছিলো ছেলে কেমন?”

” জানি না।”

” কেন তুই দেখিসনি?”

” দেখার প্রয়োজন বোধ করিনি।ছেলের মায়ের কথাগুলো গায়ের চামড়া জ্বালিয়ে দিয়েছে।”

” কেন কী বলেছে?”

” বারবার বলছিলো উনার ছেলের মাসিক ইনকাম নাকি অনেক বেশি।উনার ছেলেকে জামাই হিসেবে পেয়ে আমাদের জনম জনমের ভাগ্য।আমাদের মতো পরিবার তাদের জন্য না। চাইলে তারা আরো বড় পরিবারে ছেলের বিয়ের ব্যবস্থা করতে পারেন।”

” তো এখানে পড়ে আছে কেন?”

” ছেলের পছন্দ তাই।”

ঈশা হতাশার শ্বাস ছাড়লো।শাশুড়ীটা বেশি সুবিধার নয় ছেলের ইনকাম নিয়ে যার বিয়ের আগে বড়াই বিয়ের পর না জানি কি কি বলবেন।

” আঙ্কেল আন্টি রাজি?”

” আম্মু রাজি তবে ভাইয়া আর বাবার এক কথা আমি যা বলবো তাই হবে।”

” তো তুই কি করবি?”

” জানি না।মা যা বলবে তাই।”

” আগুনে ঝাপ দিতে প্রস্তুত তাহলে। এসব ছাড় রাসেল ভাইকে ফোন কর সব মিটমাট কর।আমি আর রেগে নেই আর এই বিয়েটা ক্যান্সেল কর।”

খুশিতে ডগমগ হলো অনু।কান্নার মাঝে হেসে ফেললো শব্দ করে খুশিতে জড়িয়ে ধরলো ঈশার গলা।

” সত্য বলছিস আমরা আবার স্বাভাবিক হবো?”

” হুম হবো।”

৪৭.
ব্যস্ততার মাঝে ইসমাইলের খোজ পাওয়ার মাধ্যমটি কাজে লাগাতে বেমালুম ভুলে বসে ছিলো ঈশান।অবশ্য কাজের চাপে এসব কথা মাথায় থাকার কথাও না।সেদিন ধরা পড়া লোকটির দেওয়া নাম্বারে ফোন করলো ঈশান।দুই তিনবার চেষ্টার পর ফোনে পাওয়া গেলো বড় সাহেবকে।ঈশানের পরিচয় পেয়ে কিঞ্চিৎ শব্দ করে হেসে উঠলেন তিনি।

” ঈশান শাহরিয়ার আমাকে ফোন করেছেন এটা তো আমার ভাগ্য?তা বলুন কীভাবে সাহায্য করতে পারি আপনাকে?”

” ইসমাইলকে প্রয়োজন আমার।আমি যে আপনার সাথে যোগাযোগ করেছি এটা যেন ইসমাইল না জানে।”

” ইসমাইল আপনার অনেক কাজ করে দিয়েছে তা আমি জানি শুনেছি।হঠাৎ আবার ওঁকে প্রয়োজন কেন?”

” সেসব কথা পরেও জানতে পারবেন তবে আপনার সাথে আমি একটা ডিল করতে চাই।আপনি যত টাকা চান আমি দেবো শুধু ইসমাইলকে আমার প্রয়োজন।”

” তার খোঁজ আপনি জানেন?”

” জানিনা বলেই আপনার সাথে যোগাযোগ করেছি।”

” আমার এক বিদেশি ক্লাইন্টের সাথে সে প্রতারণা করেছে এর দায়ে ইসমাইলকে তারা নিয়ে যায়।লা শ টা কোথায় ফেলেছে আমি নিজেও জানি না।”

বড় সাহেবের শুনে চমকে যায় ঈশান।ইসমাইলের লা শ! কি বলছেন এসব।

” লাশ মানে?”

“ইসমাইল মারা গেছে সেটা সুনিশ্চিত তবে তার লা শ এই দেশে নেই এটাও আমি সুনিশ্চিত।”

ঈশান থমকে গেলো।ইসমাইল মারা গেছে এটা বিশ্বাস করতেও তার কষ্ট হচ্ছে।এভাবে একটা মানুষ উধাও হয়ে গেলো পৃথিবী ছেড়ে।

৪৮.
সেদিন রাতেই অনু তার বিয়ের ব্যপারটা বেশি দূর যেতে দেয়নি।রাতেই এই বিয়ে না করেছে।এতে অবশ্য অনুর বাবা বেলায়েত বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাননি।তিনি আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এই বিয়ের ব্যপারে অনু যা বলবে তাই হবে।যেহেতু অনুর পড়া শেষ হয়নি তাছাড়া ছেলের পরিবারকে খুব একটা সুবিধার মনে হয়নি তার।কিন্ত বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখালেন অনুর মা দোলন। সেদিন রাতে অনুর উপর ক্ষেপে চেচিয়ে সারা বাড়ি মাথায় তুলেছিলেন।প্রায় একসাপ্তাহ রেগে মেগে অনুর সাথে কথা বলেননি।রাসেলকে পাওয়ার জন্য অনু যেকোনো ঝামেলা পোহাতে রাজি এমনি এমনি এই ছেলেটা বাঘে আনেনি সে কতটা কৌশলে বাঘে এনেছে সেটা একমাত্র অনু জানে।
অপরদিকে ঈশান ঈশার সম্পর্কে উন্নতি হয়েছে।দুজনের ঝুটঝামেলা কিছুটা হলেও কমেছে।
আজ টিউশনিতে যাবে না বলে ঠিক করেছে ঈশা এর পেছেও অবশ্য বড় একটা কারণ আছে।

দুপুরের পর রোদ কেটে আকাশটা মেঘলা হয়ে উঠেছে।চারিদিকে শীতল বাতাস বইছে।ঈশা ব্যাগ থেকে ফোন বের করে কল করলো ঈশানকে।একবার রিং হওয়ার সাথে সাথে ফোন তুললো ঈশান।

” আপনি কোথায় ঈশান?আমি আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবো।”

” পাঁচ মিনিট প্লিজ।এই শহরের যানজটের কথা আর নতুন করে বলার নেই।আর একটুখানি অপেক্ষা করো প্লিজ।”

পাঁচ মিনিটের কথা থাকলেও ঈশা দাঁড়িয়ে রইলো প্রায় বারো মিনিট।ঈশান আসতে কপট রাগ দেখিয়ে তাকিয়ে রইলো ঈশা।

” গাড়িতে উঠুন মেডাম একটু দেরি হয়ে গেছে আমার সরি।”

” একটু না আপনি অনেকটা দেরি করেছেন।”

ঈশান হাসলো ঈশা উঠে বসতে পুণরায় চলতে শুরু করলে।ঈশানের পোশাকে বোঝা যাচ্ছে সে অফিস থেকে ফিরেছে তার ক্লান্ত চেহারা দেখে ঈশা বলে,

” দুপুরের খাবার খেয়েছেন?”

” না সময় পাইনি।”

” তাহলে আগে খাবেন তারপর শপিং এ যাবো।”

” একবারে বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে খেতে হবে।”

” এত কথা শুনতে চাই না।”

ঈশান হাসলো ঈশা তার ইদানীং একটু বেশি যত্ন করছে।

” মা এই সাপ্তাহে আসছে তাই তোমাকে আজ তাড়া দিয়েছি শপিং এ যাবো বলে।আমি চাই মায়ের রুমটা নিজের হাতে সাজাতে আর এসব ব্যপারে তুমি সাহায্য করবে।”

” সময় তো একদম কম এই অল্প সময়ে এতগুলো শপিং কর‍তে পারবেন?খাট,আলমারি,সোফা আরো কত কি।আপনি এক কাজ করুন রান্না ঘরটা আন্টির সাজেশন নিয়ে সাজিয়ে নিন যেহেতু আন্টি দেশে আসলে তিনি আপনাকে রান্না করে খাওয়াবেন একজন গৃহিনীর কাছে তার রান্না ঘরটা কিন্তু অতি আপন এবং ভালোবাসার।”

” এটা আমি ভেবে দেখিনি ঈশা ভালো বলেছো।”

ঈশান একটা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামলো।খাবার অর্ডার করে ঈশাকে বসিয়ে সে চললো ফ্রেশ হতে।

ঈশার টেবিল থেকে কিছুটা দূরের টেবিলে ছিলো ভার্সিটির সেই স্মোক করা বেয়াড়া স্বভাবের মেয়েগুলো।ঈশাকে একা দেখতে পেয়ে তারা উঠে আসে ঈশার কাছে।সেদিনের পর তাদের নামে অভিযোগ জানানো হয় এবং ভার্সিটি থেকে তাদের সবাইকে একমাসের জন্য সাসপেন্ড করা হয়।তাই ঈশার প্রতি তাদের জমানো ক্ষোভ ছিলো অসীম।

ঈশা বসে বসে ফোন স্ক্রুল করছিলো তার পাশে কেউ দল বেঁধে দাঁড়িয়েছে বুঝতে পেরে চমকে তাকায় সে।মেয়েগুলোকে দেখতে পেয়ে কলিজাটা শুকিয়ে এলো ঈশার।দলের মাঝে একটা মেয়ে ঈশার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নেয়।

” কিরে তোকে এখানে পাবো স্বপ্নেও ভাবিনি।কার সাথে এসেছিস তোর নাগরের সাথে?কই তোর নাগর দেখি তারে।”

মেয়েগুলোর বিশ্রি ইঙ্গিতে প্রচন্ড জেদ লাগলো ঈশার।

“বেয়াদবি করছেন কেন আপনারা?সময় থাকতে থাকতে এখান থেকে চলে যান।”

” চলে যাবো?তোর এক ধমকে চলে যাবো কি ভাবিস নিজেকে তোর মতো মেয়ে কি করে এত সুন্দর একটা ছেলে পটায় আমার মাথায় ধরে না।সেদিনের সেই ছেলেটাকে এক দেখাতেই আমি ফিদা।”

মেয়েটার কথা সামিল হয় অন্য একটি মেয়ে সুযোগ পেয়ে ঈশাকে অপমান করতে পিছ পা হয়না সেও।

” আসলেও ছেলেটাকে দেখছিস এই মেয়েটার সাথে মোটেও যায় না।এই মেয়ে ওই ছেলের নাম্বারটা দে।”

তীব্র অপমানে গা জ্বলে উঠলো ঈশার।মুখ ফুটে কিছু বলার আগে ঈশানের কণ্ঠে থমকে যায় সে।মেয়েগুলো আকস্মিক ঈশানের কথা শুনে ঘুরে তাকায়।

” নাম্বার দিয়ে কি করবেন প্রেম টেম করার ইচ্ছে আছে নাকি?সরি আমি অলরেডি বুকিং হয়ে গেছি।বউ আমার ভীষণ তেজি অন্য মেয়েদের দিকে তাকালে চোখের চাহনি দিয়ে আমায় ভষ্ম করে ছাড়বে।”

ঈশান থামলো ঈশার পাশাপাশি দাঁড়িয়ে তার কাধে হাত রেখে আগলে ধরলো।মেয়েগুলো ড্যাবড্যাব চোখে চেয়ে রইলো ঈশানের দিকে।

” আমার নাম্বার দিয়ে কি করবেন আপনারা হু?প্রেম করতে চাইছেন?কি বলছিলেন যেন ঈশার মতো মেয়ে আমার সাথে যায় না।তবে কার সাথে যায় আপনাদের মতো মেয়েদের সাথে?আমার রুচির এতটাও দুর্ভিক্ষ হয় নি যে ঈশান শাহরিয়ার আপনাদের মতো মেয়ের সাথে প্রেম করবে।”

অপমানে নড়ে চড়ে একে অপরের দিকে তাকালো মেয়েগুলো।তারা ভাবেনি সত্যি সত্যি ঈশানের দেখা পাবে।ঈশান মেয়েগুলোর চাহনি বুঝতে পেরে ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

” জান বিরক্ত লাগছে তাই না?এই আপনারা সরুন সামনে থেকে আমার জানের বিরক্ত লাগছে, থাক সরতে হবে না আমরাই সরে যাই ডাস্টবিনের আশেপাশে তো আর বসা যায় না।”
#চলবে___

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here