অবাধ্য_বাঁধনে #পলি_আনান [পর্ব সংখ্যা ২৯]

0
498

#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ২৯]
____________________
৬৪.
” সব তো ঠিক ঠাক হলো এবার ঈশার বাবা যে তোমার বাবার সাথে কথা বলতে চায় এবার কি করবে তুমি?”

ভারী চিন্তায় পড়লো ঈশান কি করে কি করবে ভেবেও কুল কিনারা খুঁজে পেলো না।তার বাবাকে যদি বিয়ের কথা বলা হয় তবে নিশ্চয়ই তুলকালাম কান্ড বাঁধাবে এই বিয়েতে কিছুতেই সম্মতি দেবেন না তিনি।মায়ের চোখেমুখে চিন্তার ছাপ সেন্টার টেবিলে থাকা পানির গ্লাসটা এক ঢোকে সাবাড় করেলেন তিনি।ক্ষনে ক্ষনে গলদেশের উত্তাল পাতাল সবটাই পরখ করলো ঈশান।তার কপালে চরণ করা দুই আঙুল থামালো কিয়ৎক্ষণের জন্য।

” বাবা এখন কোথায় থাকবেন?”

দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালেন মাহমুদা।বাংলাদেশ সময়ের সাথে সেই দেশের সময়ের মিল থাকবে না স্বাভাবিক।সময়ের হিসেব নিকেশ করে চটপট বললেন,

” এখন তার অফিস শেষ নিশ্চয়ই শাওয়ারে আছে।”

ঈশান মাথা দুলালো ল্যাপটপ বের করে দ্রুত ফোন করলো তার বাবাকে।বুকের ভেতরের হৃদ যন্ত্রটা কেমন লাফাচ্ছে।দ্রিম দ্রিম শব্দে শুকিয়ে এলো ঈশানের গলদেশ।দেশে আসার পর বাবাকে কখনো সে ফোন করেনি জানতে চায়নি মানুষটা কেমন আছে।নিজ স্বার্থে আজ প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করতেই হলো।

মাত্র শাওয়ার ছেড়ে বেরিয়েছেন আবিদ।বারান্দার গাছগুলো দেখছিলেন খুটিয়ে খুটিয়ে।এখানে বেশি গাছ নেই, টবে রাখা তিন চারটে গাছ।এই গাছগুলো মাহমুদার ভীষণ যত্নের,দেশে যাওয়ার আগে বারবার বলে গেছে গাছের যত্ন নিতে।আজকে আকাশটা ভালো নেই চারিদিকে ঘুটঘুটে কালো মেঘ।টব টেনে কক্ষে আনলেন আবিদ।না হয় প্রচন্ড বাতাসে গাছগুলোর বেহাল দশা হবে।হঠাৎ ফোন বেজে উঠতে কিছুটা বিরক্ত হলেন এই সময়ে আবার কে ফোন করলো।স্কিনে ঈশানের নাম্বারটা দেখে অচেনা আতঙ্কে বুকটা ভারী হয়ে এলো।ঈশান কখনো ফোন করবে না তাকে হঠাৎ কি এমন হলো ছেলেটা ফোন করেছে।কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন তুললেন আবিদ।একটু দম ছাড়ার ফুসরত না করে অতি সত্বর বলেন,

” হঠাৎ কেন ফোন করেছো?আমার মাহমুদা ঠিক আছে?প্রেশার কি বেড়েছে?এক্ষুনি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাও বাড়িতে বসে থেকো না।”

ঈশান নিশ্চুপ হয়ে শুনলো বাবার বলা প্রতিটা বাক্য।মায়ের প্রতি বাবার এই অস্থিরতা দেখে ভীষণ ভালো লাগলো ঈশানের। আচ্ছা তবে সে কি তার বাবার মতো হয়েছে?এমন অস্থির মানব।

” কি হলো কথা বলছো না কেন?এই মাহমুদা ঠিক আছে।আমি আসছি আস… ”

” রিল্যাক্স এত অস্থির হচ্ছেন কেন?আমাকে কথা বলতে দিন।”

আবিদ থমকালেন।গলা ঝেরে বসলেন কাউচে।কণ্ঠে আনলেন সেই চিরচেনা গম্ভীরতা।

” কেন ফোন করেছো?”

” আপনার ছেলে যে বড় হয়েছে সেদিকে তো আপনার খেয়াল নেই।যাজ্ঞে ছাড়ুন সেসব কথা মূল কথায় আসি,আমি বিয়ে করতে চলেছি মেয়ে দেখা শেষ।”

” বিয়ে করতে চলেছো তো আমায় এখন ফোন করেছো কেন?দাওয়াত করতে?আমায় ছাড়া মেয়ে দেখলে আর এখন….”

” কথাটা শুনুন।”

” কি শুনবো?আমি বাবা হই তোমার।বাবা হয়ে ছেলের বিয়ের খবরটুকু জানি না।”

” জানাতে ফোন করেছি আমি।মেয়ে দেখা শেষ মেয়ের বাবা চায় আপনার সাথে কথা বলতে।”

” এই বিয়ে তো তুমি করতে পারবে না ঈশান।”

” কেন?”

” কারণটা তোমার অজানা নয়।আমি আমার কথার খেলাপ করি না।”

” নিজের ছেলের জীবন ধ্বংস করতে উঠে পড়ে লেগেছেন দেখছি।”

” শুধুই কি আমার ছেলের জীবন ধ্বংস আর কারো না?”

” এসব আমি শুনতে চাই না। ”

” আমি যা বলছি তাই হবে।আমিও দেখবো আমায় ছাড়া তোমার বিয়ে কি করে হয়।”

মাহমুদা চিন্তায় পড়লেন ভয়ে পুনরায় গলা শুকিয়ে এলো তার।বুকের ভেতরটা কেমন করছে।বাবা ছেলের এই মনোমালিন্য কবে থামবে?

“আম্মুকে আর কোনদিন আপনার কাছে ফিরতে দেবো না।যে পুরুষ ঘরকে পর করে তার প্রয়োজন নেই স্ত্রী সন্তানের।”

ঈশানের কথায় ঈশানের বাবা আবিদ শব্দ করে হেসে উঠলেন।বাইরে মৃদু বাতাস শুরু হয়েছে রুমটা প্রচন্ড ঠান্ডায় ঘিরে গেছে।দ্রুত উঠে গিয়ে রুম হিটার অন করলেন তিনি।ঈশানের বড়বড় নিশ্বাসের শব্দ তার কানে আসছে ছেলেটা নিশ্চিয়ই উত্তেজিত হয়ে গেছে।

” তুমি তোমার মাকে আমার কাছে পাঠাবে না এই একই সংলাপ তোমার নানা ভাইয়ো দিয়েছেন।তিনি বিয়ের আগে বলেছেন, তোমার মতো ছেলের সাথে আমি আমার মেয়ের জীবন জুড়ে দিতে পারিনা।আমার মেয়েকে নিয়ে যে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে তোমার পরিবার তা ফিরিয়ে দিচ্ছি। এরপর তোমার নানীর চাপে বিয়েটা হলো, এরপর তার ডায়ালগ ছিল
আবিদ আমার মেয়েকে কোনদিন তোমার কাছে পাঠাবো না, বিয়ে হয়েছে তো কি হয়েছে সব ভেঙে যাবে সময় দাও।আর এখন দেখো পরিস্থিতি সময় কতটা বদলে গেছে।মৃত্যুর আগে তিনি আমার মাথা ছুঁয়ে বলেছেন,তুমি আমার শেষ ভরসার হাত আমার পরিবারকে দেখো। আমি যা বলছি তাই শুনো ঈশান বিয়েটা হচ্ছে না এতদিন যা জেদ দেখানোর দেখিয়েছো এখন সঠিক পথে আসো আর পাগলামি করার সময় নেই।আমি একবার যদি রেগে যাই কি হবে তা ভেবে তুমি কুল পাবে না।”

” নানা ভাই ঠিকই বলতেন আপনি একগুঁয়ে,জেদি,নিজের স্বার্থে সব করতে প্রস্তুত একজন পাষাণ মানব।”

“ভুলে যেও না তোমার নানা ভাই আমাকে এটাও বলেছেন, আবিদ তোমার ছেলে ঈশান একদম তোমার মতো হয়েছে এক কিসিমের।যার রাগ,জেদ,গর্জন, ঈর্ষা সবটা তোমার মতো প্রখর।”

” আমি আপনার ছেলে আশা করি আমার জেদ সম্পর্কে আপনি অবগত।তাই ঝামেলা না পাকিয়ে যা বলছি করুন।”

” আমি তোমার বাবা তুমিও আমার সম্পর্কে জানো তাই এসব চিন্তা মাথা থেকে সরাও।”

বাবা ছেলের তর্কে দিশাহীন হয়ে উঠলেন মাহমুদা।ঈশান বড়বড় শ্বাস ছাড়লো।এই বিয়ে করা তার দশ মিনিটের কাজ কিন্তু ঝামেলা বাঁধিয়ে কোন সম্পর্ক শুরু করতে চায় না ঈশান।সবচেয়ে বড় কথা বাবা ছেলের এই রেষারেষির প্রভাব যদি ঈশাদের পরিবারে পড়ে তবে সবটা ভেস্তে যাবে।

” আমার জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্তটা আমার নয় কি?”

” হুম তোমার নিশ্চয়ই কিন্তু অতীত ভুলে গেলে চলবে না।আচ্ছা বাদ দাও সে সব এখন বলো তোমার পছন্দ করা মেয়ের বংশ পরিচয় কি?মেয়েদের অর্থবিত্ত সম্পর্কে আমাকে জানাও।”

” আমি মেয়ের বাবার অর্থ বিত্ত বিয়ে করছি না আমি মেয়েটাকে বিয়ে করছি তাই আপনাকে অন্যদিকে ফোকাস না করলেও চলবে।”

” আমার রক্তের একমাত্র ছেলে তুমি।
আমি এমন পরিবার চাই যারা আমার পায়ে পা মিলিয়ে চলতে পারবে যাদের নিয়ে আমার জড়তা থাকবে না।তাই আমি চাই মেয়ের পরিবার হতে হবে নামি-দামি অর্থ বিত্তে কোন অংশে ত্রুটি থাকবে না এমন কাউকে।”

” কিন্তু আমি চাই ঈশাকে।”

” ঈশা কে?”

ভ্রু কুচকে এলো ঈশানের বাবার।তার সন্দিহান কণ্ঠে ঠোঁট বাকালো ঈশান
দ্রুত ফোন কেটে ফোনটা ছুড়লো বিছানায়।

” আমি জানতাম তোমার বাবা এমন করবে এবার কি করবে তুমি?”

” বাবাকে তুমি মানাবে সেটা যে করে হোক।”

” আ..আমি।”

” ইমোশনাল কথা বার্তা বলে যেভাবে পারো ব্যবস্থা করো।”

” আমি পারবো না তুমি তোমারটা সামলে নাও।”

ঈশান তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো তার মায়ের দিকে।তার চাহনিতে ভড়কে গেলেন মাহমুদা।বাপ ছেলে হয়েছে এক যার রাগ থাকবে ঊর্ধ্বে।

” তুমি আমায় ভালোবাসো না আম্মু?”

” তুমি আমার ছেলে তোমাকে ভালোবাসবো না কেন?”

” তুমি ঈশাকে পছন্দ করো না?”

” হীরের টুকরো মেয়ে ওঁকে তো ভীষণ ভালোবাসি।”

” তাহলে তুমি আমার দলে যা বলছি তাই করবে।”

” তুমি ঠান্ডা মাথায় ধমক দাও আমায়?তোমার ধমকে আমি নড়বো না আমার সাথে বেশি রাগারাগি দেখালে রুমার বাসায় চলে যাবো মনে থাকে যেনো।”

৬৫.
কানে হাত দিয়ে নত মস্তকে রাসেলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে অনু।মেয়েটার দু’চোখ টলমল করছে, তিরতির কাপছে দু’ঠোঁট।রাসেলের ক্রোধ দেখে মনে ঝাপটানো সব প্রজাপতিরা বিলীন হয়ে গেছে।রাসেল এতটা রুক্ষ ব্যবহার করতে পারে ভাবনায় ছিল না অনুর।আকস্মিক হেঁচকি তুললো মেয়েটা নিরবতার মাঝে শব্দ পেয়ে মাথা তুলে তাকায় রাসেল।মেয়েটা কান্না আটকানোর বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দু’চোখ জলে টইটম্বুর এসব দেখে মন গললো না রাসেলের বরং রুক্ষ স্বরে হুকুম করে,

” দাঁড়িয়ে আছো কেন?আরো বিশবার উঠবস করা বাকি।”

” রাসেল আপনার অনুরূপীকে ক্ষমা করা যায় না?”

” তুমি বসবে নাকি আমি…

রাসেল উঠতে নিলে দ্রুত বসে পড়ে অনু একে একে বিশবার কানে ধরে উঠবস করে সে।নিরিবিলি রাস্তায় তেমন মানুষজন নেই আর যারা আছে তারা অনুকে খেয়াল করেনি।গাড়ির দরজা খুলে সিটে বসে আছে ছেলেটা মাথাটা প্রচন্ড গরম আশেপাশে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে দম ছাড়লো।বিশ বার শেষে অনু চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো এক কোনে মেয়েটা নিশব্দে কাদছে।রাসেল উঠে দাঁড়ালো এবং অনুকে উদ্দেশ্য করে বলল,

” যাও বসো পানির বোতল রেখেছি একটু পানি খাও।”

অনু বসলো না সে রাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো আগের মতো।রাসেল ছুঁয়ে দিতে ঝটকায় সরিয়ে দিলো তার হাত।

“রাসেল তুমি ভিষণ খারাপ লোক।তুমি আমাকে ভালোবাসো না।তোমার সাথে আমি আর এই সম্পর্ক রাখবো না।”

” আচ্ছা তো কার সাথে রাখবে?”

” কয়েকদিন আগে সে বিয়ের প্রস্তাব এসেছিলো সেখানে হ্যা বলে দিব।একমাত্র তোমার কারনে করিনি কিন্তু এখন আমি আমার ভুল বুঝতে পারছি।আমি বিয়ে করে ফেলবো।”

” তারপর?”

” স্বামী নিয়ে তোমার নাকের ডগায় ঘুরবো।”

” তারপর?”

” ওরা আমাকে পড়াশোনার জন্য জোরাজোরি করবে না ওরাই ভালো।কয়েক মাস যেতে বাচ্চা নিবো।”

” তারপর?”

” তারপর বছর ফুরালে তোমার চোখের সামনে আমি আমার বাচ্চা নিয়ে ঘুরবো।ওদের দেখিয়ে বলবো দেখ দেখ তোদের না হওয়া বাবা।আমার বাচ্চাদের দেখে আপনি শোকে দুঃখে বাপ্পা রাজের মতো বলবেন না আমি বিশ্বাস করি না। ”

রাসেল পানির বোতল এগিয়ে এনে অনুর হাতে রাখলো এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করে দিয়ে টিস্যুর সাহায্যে চোখটা মুছে দিলো।মেয়েটা একটু পরপর নাক টানছে কান্নার শ্রোতটা ধীরে ধীরে লোপ পেয়েছে।

” তারপর কি হবে বললে না তো।”

” আর কি হবে হয় তুমি বাপ্পা রাজ হবে না হয় প্রতারক হবে আমাকে ভুলে যাবে।আর আমি আমার বাচ্চাদের মুখের দিকে তাকিয়ে তোমাকে ভুলে যাব হুহ।”

” তোমার বাচ্চাদের দিকে তাকিয়েও তুমি আমায় ভুলতে পারবে না।”

” কিন্তু কেন?”

” কারণ তোমার বাচ্চাদের চেহারা হবে আমার মতো।”

” আমার বাচ্চার চেহারা আপনার মতো হবে কেন?তাদের বাবা তো ভিন্ন কেউ।”

রাসেল জবাব দিলো না সে চুপচাপ তাকিয়ে রইলো অনুর পানে।মেয়েটা হিসাব কষাতে ব্যস্ত।এখানে আসার অনেকটা সময় ফুরিয়ে গেছে মেয়েটা নিশ্চয়ই দুপুরের খাবার খায়নি।

” গাড়িতে উঠো।”

” আমি যাব না তোমার সাথে।তুমি আমার সাথে আজ যা করলে…

” আমি কি করেছি?দোষটা কি তোমার ছিল না?তুমি একটা মেয়ের সাথে ঝগড়া করছিলে সবচেয়ে বড় কথা তোমাদের মাঝে হাতাহাতি হয়েছে চুলাচুলি করার আগেই তো আমি হাজির হয়েছি।তুমি এমন কেন অনু?এখন তো বড় হয়েছো এসব এখন মানায়?”

” মেয়েটা আমাকে এক্সামে দেখালো না ওর কারণে আমি ফেল করেছি স্যার আমাকে অনেক অনেক অপমান করেছেন।তাই তো…”

” সে কেন তোমাকে দেখাবে?নিজের পড়া নিজে পড়তে পারনা?লজ্জা লাগে না দেখে লিখতে।তোমার মতো একটা গবেট হবে আমার বউ!”

ফুঁপিয়ে উঠলো অনু।গায়ের ওড়না ভাজ করে হাটা ধরলো সরু পিচ ঢালা রাস্তায়।তার আচরণে বড্ড অবাক হলো রাসেল গাড়ির দরজা লাগিয়ে ছুটলো তার পিছু।

” এই কি সমস্যা তোমার?চলে এলে কেন?”

” আমি বাড়ি যাব ভালো লাগছে না।”

” আসো আমি পৌঁছে দিব।”

“আমার বাবা আমাকে যথেষ্ট ভাড়া দেয় আমি চলে যেতে পারবো।আর যদি বলেন আপনার এসি গাড়িতে যেতে তবে বলবো আমার বাবা ভাইয়ের যথেষ্ট ভালো ইনকাম আছে আপনার মতো একটা ড্রাইভার আর এমন একটা গাড়ি আমাকে কিনে দেওয়ার।এই কাজ তাদের কয়েক ঘন্টার ব্যপার।”

অনুর ব্যবহারে অবাক হলো রাসেল মেয়েটা তাকে অপমান করেছে।শেষ-মেষ তাকে ড্রাইভার বানিয়ে ছাড়লো।

” আশ্চর্য আমি তোমার ড্রাইভার?”

” তা নয় তো কি প্রতিদিন ভার্সিটি থেকে বের হতেই গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন আমায় নিয়ে যান।আমার ক্লাসমেটরা তো ভেবেও নিয়েছে আপনি আমার ড্রাইভার।”

” ভালোর জন্য তোমায় আমি শাসন করেছি আর তুমি আমার সাথে এখন এমন আচরণ করছো।”

” সবটা না জেনে কথা বলবেন কেন?ওই পক্ষের কথা শুনেছেন আমার কথা তো শুনলেন না।আগের এক্সামে আমি না লিখে মেয়েটাকে দেখিয়েছি তার কোন প্রিপারেশন ছিল না।যতটুকু পারা যায় খাতা উলটে পালটে সব ভাবে সাহায্য করেছি আর আমার সময় এসে সে তার রূপ পালটে নিলো।ফেইল তো করেইছি মেয়েটা আজ স্যারের কাছে নালিশ করলো আমি নাকি তাকে বিরক্ত করি এক্সামে।এমনি এমনি তর্কাতর্কি করিনি মনের দুঃখে তর্ক লেগেছিলাম হাতাহাতি করতে চাইনি ওটা রাগের দরুনে হয়ে গেছে।”

রাসেল অনুর হাত ধরলো মেয়েটা এবারেও ছাড়াতে চাইলো তবে তাকে প্রশ্রয় দিলো না সে।শক্ত হাতে হাটা শুরু করলো পেছন দিকে।রাসেলের শক্ত বন্ধনীতে ছাড়া পেলো না অনু তীব্র কষ্ট মনে বিড়বিড় করে বলে,

” আমার সুখ আমায় দুঃখ দিয়েছে।”

” ভালোবাসা এখনো বাকি তোমার সুখ সবটা পুষিয়ে দেবে।”
৬৫.

ঈশানের শেষ ভরসা ছিলো তার মা মাহমুদা কিন্তু গত দুইদিনেও তিনি সিদ্ধান্ত পাল্টালেন না।নিজের সিদ্ধান্তে অটল রইলেন তিনি।যেখানে ঈশান ফোন করা সত্ত্বেও তার বাবা আবিদ মত ফিরালেন না সেখানে মাহমুদা বলা মানে ঝামেলা কমার চেয়েও উল্টো বেশি বাড়া।তবুও আবিদকে কথার ছলে একবার বলেছেন তিনি কিন্তু মানুষটা এসব ব্যপারে শুনতে রাজি নয়।মাহমুদার এড়িয়ে যাওয়াটা মেনে নিতে পারছে না ঈশান চিন্তায় সবটা তার এলোমেলো হয়ে গেছে।রাত বাজে দুইটা মাহমুদা অপেক্ষায় আছেন ঈশান কখন বাড়ি ফিরবে কিন্তু ছেলেটা বাড়ি ফিরলো না।রাসেল সবার সাথে যোগাযোগ করেও ঈশানের কোন হদিস পেলো না।সব মিলিয়ে বড্ড চিন্তায় পড়লেন মাহমুদা এবং রাসেল।ঘড়ির কাটা তিনটা পেরিয়ে যখন চারটায় পৌঁছালো তখনি বাড়ি দেখা শোনার লোক কাসেম ছুটে এসে খবর দিলেন ঈশান ফিরেছে।ছেলের খোঁজ পেয়ে কিছুটা চিন্তা মুক্ত হলেন মাহমুদা কিন্তু মাতাল অবস্থায় ঈশানকে দেখে তার পায়ের তলার মাটি সরে গেলো।রাসেল কস্মিনকালেও ভাবেনি মাহমুদা থাকাকালীন ঈশান ড্রিংকস করে বাড়ি ফিরবে সে ছুটে গেলো ঈশানের কাছে।

” ত..তুই ড্রিংকস করেছিস ঈশান মাথা তোর ঠিক আছে?”

” হুহ।”

” ড্রাইভিং তুই করেছিস?”

” হুহ।”

” যদি এক্সিডেন হয়ে যেত তবে?”

” হুহ।”

” কি হুহ হুহ করছিস একটা চড় খাবি।ড্রিংকস কেন করেছিস আগে সেটা বল।”

” আমার কথা কেউ ভাবে না কেউ না।”

ঈশান মাতাল অবস্থায় কেঁদে ফেললো লুটিয়ে পড়লো মাহমুদার চরণে।মাহমুদা সরে দাঁড়ালো, ছেলের এত অধঃপতন দেখে বুক ফেটে কান্না আসছে।

” তুমি আমার ছেলে?তুমি আমার ঈশান তো?”

” আমার কথা কেন কেউ ভাবে না?”

” তুমি যা ইচ্ছে তাই করো এসব কেন করেছো কি ভেবেছো আমি বুঝি না?তোমার বাবাকে আমি রাজি করাতে পারবো না।শুনছো তুমি পারবো না।”

” আমি শেষ হয়ে যাব।”

ঈশানের ভ্যা ভ্যা শব্দে তেতে উঠলেন মাহমুদা।বাইরে থেকে নিজেকে শক্ত রাখলেও ভেতরে ভেতরে তিনি ভেঙে গুড়িয়ে যাচ্ছেন ছেলের এই হাল তার চোখে সয় না।রাসেলের হতবাক চাহনী উপেক্ষা করে তিনি বলেন,

” রাসেল এই আবর্জনার বস্তাটাকে তার রুমে ফেলে আসো।”

মাহমুদা চলে গেলেন।রাসেল টেনে হেঁচড়ে ঈশানকে তার রুমে নিয়ে গেলো।শরীরের ভার ছেড়ে দেওয়া ঈশান নিজের রুমে ফিরে সটান দাঁড়িয়ে পড়লো দুই হাত দুই দিকে ছড়িয়ে হাই তুলে বলে,

” এত রাতে গোসল করতে কেমন লাগে বলতো।”

রাসেল আশ্চর্যান্বিত হলো তার মাথা কেমন করছে।

“তার মানে তুই মাতাল না।”

” নাহ।”

” তাহলে তোর গায়ে মদের গন্ধ কেন?”

” ওটা নাটক ছিল গায়ে মদ ঢেলেছি ব্যস এইটুকুই।”

“তুই ছিলি কোথায়?”

” দুইটা পর্যন্ত শ্বশুরের সাথে ছিলাম বাকিটা সময় গাড়ি নিয়ে এদিক সেদিক ঘুরেছি।”

” শ্বশুর মানে?ঈশার বাবার সাথে তোর এত রাতে কি?”

” ঈশাদের পাড়ায় যে ক্লাব আছে ওখানে দাবা খেলেছি।উনি এত ভালো পারে আমি বারবার হেরেছি।আগামীকাল অফিস বন্ধ তাই আর কি রাত জেগে এসব একটু দাবার আসর বসালাম।”

” মাতালের অভিনয় করলি কেন?”

” আম্মুর শক্ত সিদ্ধন্তটাকে নরম করতে এবার দেখবি বাবাকে কিভাবে রাজি করায়।”

ঈশান গায়ের শার্টটা খুলে ঝুড়িতে রাখে রাসেল এখনো তার দিকে হতবাক চাহনিতে তাকিয়ে আছে।তার এই চাহনি পালটে দিলো ঈশানের বলা প্রতিটা বাক্যে।

“অনু আজকে আমায় ফোন করেছে তোর নামে অনেক্ষণ নালিশ করেছে। সবচেয়ে বড় কথা তোর অনুরূপী তো বিয়েতে হ্যা বলে দিয়েছে।তোর সাথে নাকি সম্পর্ক রাখবে না।
#চলবে__

[এই দুই জুটির মাঝে একটা জুটিকে মিল দিতে ইচ্ছে করছে না জাতি কি আমায় মানবে?👀]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here