#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৩০ ক]
_____________________
৬৭.
সকাল সকাল মাহমুদা নাস্তা তৈরি করে ঈশানের অপেক্ষায় ছিলো ছেলেরা নামলে তিনজন একসাথে নাস্তা করবে এটা তাদের প্রতিদিনের রুটিন।ঘড়িতে সকাল নয়টা বাজে ঈশান এখনো আসেনি রাসেল অফিসের উদ্দেশ্যে তৈরি হয়ে নিচে নামলো মাহমুদাকে মনমরা একা বসতে দেখে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।গালে গাল ছুঁইয়ে বলে,
” আমার মিষ্টি সকাল এবার পরিপূর্ণ।”
” নবাবের উঠার সময় এখন হলো তবে আরেক নবাব কোথায়?
” আমি ওর রুম চেক করে এসেছি সে তো নেই?”
” ঈশান তো নিচে নামেনি ঈশান কোথায়?”
” দাঁড়াও ফোন করে দেখি।”
রাসেল ফোন করলো ঈশানকে কয়েকবার রিং হতে ফোন তুললো সে।
” তুই কোথায় ঈশান?”
” অফিসে।”
” মানে কি নাস্তা করবি না?”
” না।না খেয়ে ম রার পরিকল্পনা করেছি।”
” কেন?হঠাৎ তোর এই অনশন।”
” যতদিন না বাবাকে রাজি করানো হচ্ছে সবটা এমনি চলবে।”
ঈশান ফোন রাখলো রাসেল আড় চোখে তাকালো মাহমুদার দিকে।তিনি ভীষণ ক্ষেপে গেছেন।দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে বসলেন চেয়ারে।
“গত তিনদিন রাতে মাতাল হয়ে বাড়ি ফেরা,আজ নাস্তা না করে চলে যাওয়া কি ভেবেছে সে আমি সহ্য করবো?আমি আজকেই রুমার বাড়ি চলে যাবো আজকেই।কি পেয়েছে সে?সে তার বাবার খবর জানে না?বাপ ছেলে হয়েছে এক দুজনেই জেদি এদের নিয়ে আমি আর পারবো না।”
” সব ঠিক ঠাক আঙ্কেলের অযথা যুক্তিতে ঈশানের জীবন কেন শেষ হবে? ”
” তোমার আঙ্কেল কখনো ঠিক হবেন না।আমি জানি আমার ছেলে কেমন প্রতিটা সংসারে বিষ ঢালার জন্য একটা না একটা মানুষ রূপধারী বিষের কৌটা আছেই।”
.
ঝমঝম বৃষ্টি পড়ছে আকাশের কালো মেঘে সবটা অন্ধকার।মানুষের আনাগোনা বেশ কম।গাড়ির দেখাও পাওয়া গেলো না ঈশার আজ দিনটা বোধহয় বৃথা।অনুকে বার বার বলেছিলো চল ভার্সিটি যাই কিন্তু মেয়েটা জেদ ধরে বসে আছে সে নাকি যাবে না স্যার তাকে অপমান করেছে বাধ্য হয়ে ঈশা একাই চললো।গাড়ি না পেয়ে যতটুকু পারা যায় হাটছে ঈশা।মাঝামাঝি পথে এসে দ্বিধায় ভুগছে সে কোন দিকে যাবে?ভিজে ভার্সিটি নাকি বাসায়।এই বৃষ্টির মাঝে ঈশার মনে হচ্ছে কেউ তার পিছু নিয়েছে কিন্তু কে?আশেপাশে তাকিয়ে কারো হদিস পেলো না।ভয়ে ধুরু ধুরু বুক নিয়ে ছুটে চললো ঈশা।কিছুটা পথ যেতেই কেউ তার মুখ চেপে ধরে।অন্য হাতে দুই হাত পেছন থেকে আকড়ে ধরে।আকস্মিক আক্রমণে ছাতাটা ছিটকে পড়লো রাস্তায়।হাত পা ছিটিয়ে ঈশার তড়পাতে থাকে।সেই আগন্তুক তাকে কিছুতেই ছাড়লো না।ঈশার ছোটাছুটির মাঝে বেঁধে দিলো চোখ,হাত,মুখ ক্রমশ টেনে নিয়ে গেলো গাড়ির কাছে।বৃষ্টিতে এতক্ষণে কিছুটা ভিজে গেছে ঈশা অপরদিকে ব্যক্তির দৈহিক শক্তির কাছে পেরে উঠলো না সে।ছোটাছুটির মাঝে ঈশাকে তোলা হলো গাড়িতে।ভয়ে জমে গেলো মেয়েটা বড় শ্বাস নিয়ে নিজকে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করলো।শরীরের ঝাঁকুনি দিতে বুঝতে পারলো গাড়ি চলতে শুরু করেছে।ঈশার তড়পানো ক্রমশ বাড়লো।আগন্তুক কিয়ৎক্ষণ বাদে গাড়ি থামালো পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো ঈশার পানে।এগিয়ে এসে মেয়েটার ভেজা গালে নিজের নাক ঘষে দিল।লহমায় ঈশার হৃদস্পন্দন বাড়লো।সেদিন রাজিবের হাতে এন্টিকাটারে অসাবধান বশত গলার নিম্ন ভাগে কেটে যাওয়া সেই দাগ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।এই দাগ এখনো বিলীন হয়নি আর হয়তো হবেও না।আগন্তুক বৃদ্ধা আঙুলের সাহায্যে ছুঁয়ে দিলো সেই দাগ ঈশা কেঁদে ফেললো মুখ দিয়ে গোঙানির শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দ পাওয়া গেলো না।আগন্তুক পুনরায় গাড়ি চালাতে শুরু করেছে বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি আকাশের গর্জনে কেঁপে উঠছে ধরণি।কিছুটা দূর যাওয়ার পর আগন্তুক ঈশার হাতের বাঁধন খুলে দিলো ছাড়া পেয়ে ঈশা দ্রুত তার চোখ মুখ খুলে পাশে তাকায়।কিন্তু পাশে ঈশানকে দেখতে পেয়ে স্তব্ধ হয়ে যায়।বড় বড় শ্বাস ছেড়ে পুনরায় চারদিকে চোখ বুলালো সে,ঈশান নিশ্চিন্ত মনে ড্রাইভ করছে ঈশার দিকে ঘুরে তাকানোর প্রয়োজন বোধ করলো না।না তাকিয়ে ঈশার দিকে বাড়িয়ে দিলো পানির বোতল।পানি পেয়ে এক নাগাড়ে ঢকঢক করে পুরো পানিটা সাবাড় করলো ঈশা।
ঈশান গাড়ি থামালো কিঞ্চিৎ হেসে তাকালো ঈশার দিকে।মেয়েটা এখনো কাঁপছে,তিরতির কাঁপছে দু’ঠোঁট।
“ঈশান..”
” হুম।”
ঈশা ফুঁপিয়ে উঠলো ধীরে ধীরে তার কান্নার গতি বাড়লো ভয়ে এখনো কাঁপছে সে ঈশান কিছুটা এগিয়ে এলো ঈশা তার হাত ধরে কিছুটা সময় কাঁদলো কান্না গতি থামলো না এই কান্না ধীরে ধীরে বাড়ছে হেঁচকি তুলতে ঈশা জড়িয়ে ধরলো ঈশানকে।ঈশান হাসছিলো মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে তাকিয়ে রইলো বাইরের দিকে।জানলার কাঁচ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে বৃষ্টির পানি এই দৃশ্য বড্ড সুন্দর।
” ভয় পেয়েছো?”
” হুম।”
” আমি ছিলাম আমি..”
ঈশা মাথা তুলে তাকালো ঈশানের পানে কান্নাটা থেমে এসেছে।হঠাৎ ঈশানের এই অদ্ভুত কাজ করার মানে কি?
” এমন কেন করলেন ঈশান?আপনি জানতেন আমি ভয় পাবো ইচ্ছে করে এমনটা করেছেন তাই না?”
” মাঝে মাঝে ভয় পাওয়া ভালো।”
” পা গ ল আপনি এমন কেউ করে?এমন কেন করেছেন?”
” তোমায় একটু দেখালাম বুঝালাম অনুভব করালাম যদি আমাদের বিয়েটা না হয় এভাবে নিয়ে আসবো।”
কান্নার মাঝেও শব্দ করে হেসে দিলো ঈশা।তার হাসিতে হাসলো ঈশান।
” আমাদের পরিবার রাজি আপনারা দেরি করছেন কেন?”
” তুমি জানো বাবার সাথে আমার একটু ঝামেলা আছে তাই উনি সহজে মানছেন না।”
ঈশার মনটা খারাপ হয়ে এলো তা বুঝতে পারলো ঈশান।ঈশার হাত ধরে টেনে এনে মেয়েটার পিঠ ঠেকিয়ে দিলো তার বুকে।
” মন খারাপ করার কিছু নেই সব ঠিক হয়ে যাবে এবং খুব শীঘ্র।তুমি একা কোথায় যাচ্ছিলে?”
” ক্লাস ছিল।”
“অনু কোথায়?”
” সেদিনের পর আর ক্লাসে যাচ্ছে না।রাসেল ভাইয়ার সাথেও কোন যোগাযোগ রাখেনি।ভাইয়া শুধু শুধু তাকে এতগুলা কথা শুনিয়ে দিলো দোষটা ওই মেয়ের ছিল।”
” আমাকে সব অনু বলেছে।আমি রাসেলকে বলেছি অনু বিয়েতে হ্যাঁ বলে দিয়েছে তাই তো এখন রাসেলের মেজাজ অত্যাধিক গরম থাকে এদিকে অনুর সাথেও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।”
ঈশা চুপ হয়ে যায় বাইরের বৃষ্টি দেখায় মগ্ন সে।ঈশানের হাত আরো শক্ত হয় ঈশার কটিদেশে।ঘাড়ে নিশ্বাসের উথাল-পাতাল আভাসে চুপ হয়ে রয় ঈশা।ঈশান তার হাত টেনে শব্দ করে ঠোঁট ছোঁয়ায়।
” আপনার অফিস নেই?”
” যাব না।”
” ওহ।”
” ঈশা একটা কথা বলি?”
” বলুন।”
” চলো আমরা বিয়ে করে ফেলি আমার রিক্স নিতে ভালো লাগছে না।”
” কিসের রিক্স?কি বলছেন আপনি?”
” পরে যদি পরিবারের মত পালটে যায় আমার ভালো লাগছে না ঈশা প্লিজ চলো আমরা বিয়ে করে ফেলি কেউ জানবে না।একদম কেউ না।”
ঈশা নড়ে চড়ে সরে বসে ঈশানের পাশ থেকে।ঈশার দূরত্বে হতাশা দ্বিগুণ হলো ঈশানের নিরুপায় চোখে ঈশার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ সে কিছু বলেও বলতে পারবে না।অদ্ভুত এক অনুভূতি,দূরত্বের আভাস সব মিলিয়ে ক্রমশ বেসামাল হয়ে উঠছে ঈশান।
” যা হবার তা হবে ঈশান।আমাদের পরিবারে বাঁধা নেই।আপনি শুধু শুধু চিন্তা করছেন।”
“তুমি আমার দিকটা বুঝতে পারছো না ঈশা।”
” কি বুঝবো আমি?এখন যদি আপনি জোরাজোরি করেন তবে আমি ভেবে নিবো আপনাদের মাঝে কিছু একটা ঝামেলা আছে।”
” ঝামেলা?”
” আপনার বাবার সাথে আপনার কি সমস্যা ঈশান?আমাকে এখনো সেসব কিছুই বলেননি।”
” একটু সময় দাও আমি সবটা বলবো।তুমি প্লিজ আমার কথায় রাজি হও ঈশা।গত তিন চারদিন আমার চোখে ঘুম নেই একটুও না।আমি উন্মাদ হয়ে যাচ্ছি”
ঈশানের কাতর চাহনিতে কিছুটা স্থির হলো ঈশা।হাত বাড়িয়ে ঝাকিয়ে দিলো ঈশানের আধা ভেজা চুল।
” কিসের চিন্তা সব ঠিকঠাক হবে।”
” যদি না হয়?”
” তবে একটু আগে যা করেছেন তাই হবে।”
শেষোক্ত বাক্যটি বলে খিলখিলিয়ে হাসলো ঈশা।ঈশা মজার ছলে কথাটি বললেও ঈশানের মুখে এখনো হাসির রেশ নেই।
৬৮.
বৃষ্টির মাঝে কাথা মুড়িয়ে ঘুমন্ত অনুর দিকে চেয়ে রইলো তার মা দোলন।এতটা বেলা হয়েছে অথচ মেয়েটা পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে ওদিকে ডেলিভারি ম্যান এসে দাঁড়িয়ে আছে অনু নাকি কি অর্ডার করেছে অনলাইনে।অনলাইন কেনাকাটা বড্ড বিরক্ত লাগে দোলনের কাছে তার ভাষ্যমতে দোকান থেকে স্বচক্ষে যা ভালো লাগবে তাই কিনবে কিন্তু এই মেয়েটা তার উলটো।অনুকে দুই তিনবার ভদ্র ভাবে ডাকলো তার মা কিন্তু মেয়েটার ঘুম না ভাঙলে ভীষণ বিরক্তবোধ করেন তিনি না পারতে গায়ের কাঁথা টেনে সরিয়ে ফেলেন।গ্লাসে রাখা একটুখানি পানি ছিটিয়ে দেন মেয়েটার মুখে।ঠান্ডা অনুভবে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে অনু।কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মায়ের দিকে তাকিয়ে সবটা রাগ আড়াল করলো।
” আম্মু কি করছো তুমি?”
” তুমি কি করেছো আগে তার জবাব দাও অনলাইনে কি অর্ডার করেছো ডেলিভারি দিতে ছেলেটা এসে দাঁড়িয়ে আছে।”
” আ..আমি?কই আমি কোন অর্ডার করিনি।”
“তোমার নাম বললো ছেলেটা যাও গিয়ে দেখো।”
অনু প্রচন্ড বিরক্ত হলো এলোমেলো পায়ে দ্রুত নামলো বিছানা ছেড়ে।আশেপাশে নজর বুলিয়ে ওড়নার হদিস পেলো না বাধ্য হয়ে চেয়ারে থাকা লাল রঙের সুতির গামছাটা নিয়ে এগিয়ে গেলো দরজার দিকে।মাটিতে লেগে থাকা প্লাজু,ঢিলে ঢালা লম্বা টি-শার্ট,গায়ে লাল রঙের গামছা দেখে ভীষণ হাসি পেলো রাসেলের।মেয়েটার সাথে যোগাযোগ করার এত চেষ্টা করেও লাভ হলো না, রাসেল বুঝে নিলো অনুর অভিমান।তাই তো কুল না পেয়ে ডেলিভারি ম্যান সাজতে হলো তাকে।
ঘুম ঘুম চোখে রাসেলকে চিনতে কিছুটা দেরি হলো অনুর।তবে রাসেলের কণ্ঠ শুনে মুহূর্তে ঘুম উবে গেলো আশেপাশে তাকিয়ে দেখতে পেলো মা এদিকেই আসছে দ্রুত রাসেলের হাত থেকে প্যাকেটটা নিয়ে স্বল্প স্বরে বলে,
” যাও এখান থেকে।”
” যাব না আগে বলো প্যাকেটটা দেখবে।”
” হুম দেখবো যাও।”
রাসেল দ্রুত চলে গেলো অনু হাতের প্যাকেটটি আড়াল করে নিজের রুমে প্রবেশ করতে ডেকে উঠলো তার মা।
” কিরে কি এনেছিস?”
“মেকাপ প্রডাক্টস আম্মু এখন আমায় ডিস্টার্ব করবে না আমি আবার ঘুমাবো।”
অনু কক্ষে ফিরে দ্রুত দরজায় খিল দিলো।প্যাকেট বিছানায় উপড় করতে একে একে বেরিয়ে এলো কয়েকটি প্লাস্টিকের তেলাপোকা এবং ব্যাঙ।প্রথম দেখায় অনু ঘাবড়ে গেলেও পরক্ষণে বুঝতে পারলো এগুলো নকল।ভাজ করা সাদা কাগজটি দেখে হাতে তুললো অনু।দ্রুত ভাজ খুলে পড়তে শুরু করলো সে,
” কি ভেবেছিলে রাগ করে বসে থাকবে আর আমি মিষ্টি মিষ্টি সারপ্রাইজ গিফট পাঠাবো?ওসব হচ্ছে না তিন ঘন্টা সময় দিলাম এই তিন ঘন্টার মাঝে যদি আমায় ফোন না দাও তবে সশরীরে তোমার বাসায় গিয়ে উঠবো এবং সবার কাছে সবটা বলবো।একবার যেহেতু তোমার বাসায় আসার সাহস করেছি তখন বুঝতেই পারছো কাজটা আমার জন্য কতটা সহজ।তেলাপোকা গুলো কিউট না?রুদবার জন্য খেলনা কিনতে গিয়ে ভালো লেগেছিলো ভাবলার তোমার জন্য ঠিক হবে।যাই হোক আমার দিক থেকে আমি সরি না বুঝে এমন আচরণ করা আমার ঠিক হয়নি সেটা বুঝতে পারছি।আমার কানে একটা খবর এসেছে তুমি নাকি বিয়েতে হ্যা বলেছো?ভালো করেছো তোমার বিয়ের দাওয়াত খেতে আসছি।কি গিফট দেওয়া যায় বলতো?তোমার পছন্দ কি সাজেস্ট করো।”
অনু চিঠিটা হাতে রেখে থ বনে তাকিয়ে রইলো।ভেবেছিলো মিষ্টি করে সরি জানাবে অথচ উলটো কতগুলো কথা শুনিয়ে দিলো।উদ্ভট লোক একটা।
.
ঈশাকে নিয়ে রুমার বাসায় এসেছে ঈশান অবশ্য সে আসতে চায়নি ঈশানের কাছ থেকে যখন রুমা জানতে পারে ঈশা তার সাথে আছে তখন এক প্রকার বাধ্য করলো তাদের আসতে।দুপুরের খাওয়ার শেষ মাত্র রুদবার সাথে টুকটাক গল্প করছে ঈশা।মেয়েটা তার ড্রয়িং খাতাটা বের করে ঈশাকে দেখাচ্ছে ঈশাও হাসি মুখে মেয়েটার প্রশংসা করছে তাদের দুজনের কান্ড ড্রাইনিং টেবিলে বসে দেখছে ঈশান।হাতে তার কোল্ড ড্রিংস।তাদের দেখতে দেখতে গ্লাসটা ঠোঁটে নিয়ে একটু একটু চুমুক দিচ্ছে সে।আকস্মিক ফোন আসায় তার ধ্যান ভঙ্গ হয় ফোনের স্কিনে তার বাবা আবিদের নাম্বারটা দেখে কিছুটা উত্তেজিত হয় হঠাৎ বাবা কেন ফোন করলো?
” হঠাৎ আমাকে স্মরণ করলেন?”
” তুমি আমার স্মরণে প্রতিদিন থাকো।”
” কেন ফোন করেছেন?”
” কতটুকু এগিয়ে গেলো তোমার বিয়ে?না মানে বিয়ের ভূত কি মাথা থেকে নেমেছে?”
” এটা আপনার কাছে ভূত মনে হয়?এত ফানি ভাবে নিচ্ছেন এই বিয়ে?”
” না তোমার বিয়ে ফানি নয় তবে যাকে বিয়ে করবে বলছো…”
” এসব ব্যপারে আমি কোন কথা শুনতে চাই না।”
” আমি যা বলছি তাই শুনো নিজের ভবিষ্যৎ ভালো হবে।আমি আমার সিদ্ধান্ত কখনো বদলাই না সেটা তুমি জানো।”
” আমি কখনো আমার চাওয়া পাওয়া অপূর্ণ রাখিনা সেটাও আপনি জানেন।”
” তুমি উন্মাদ হয়ে গেছো ঈশান।এখানে আসো ধুমধাম করে বিয়ে দেবো তোমার।মেয়ে তৈরি আছে এখন শুধু তোমার আসার অপেক্ষা।”
সহসা উত্তেজিত হয়ে পড়লো ঈশান।হাতের গ্লাসটা চেপে ধরে আছাড় দিলো চেয়ারের সাথে।কয়েক টুকরো ভাঙা কাঁচ মাংস গলিয়ে ঢুকে গেলো ঈশানের হাতে।রক্তের শ্রোতধারা বইছে ছেলেটার হাতে।কাঁচ ভাঙার শব্দে উত্তেজিত হয়ে পড়লেন আবিদ তিনি অনেকবার ঈশানকে ডাকলেও সাড়া শব্দ মিললো না বরং একটা সময় ফোন কেটে দিলো।ভাঙার শব্দে এগিয়ে এলো রুমা ঈশানের হাতে রক্ত দেখে কিছু বলার আগে কানে এলো রুদবার কান্না।ঈশানের হাতে রক্ত দেখে মেয়েটা ভীষণ ভয় পেয়েছে।রুদবার কান্নায় স্থির হয় ঈশান রুমাকে উদ্দেশ্যে করে বলে,
” রুদবাকে নিয়ে ভেতরে যাও।”
” ঈশান…”
” যেতে বলেছি আমি।”
শেষোক্ত বাক্যটি ধমক সুরে বললো ঈশান।শান্ত ছেলেটার হঠাৎ কি হলো ভেবে পেলো না রুমা।সে দ্রুত রুদবাকে নিয়ে ভেতরে চলে যায়।ঈশা ততক্ষণে এক কোণে ভয়ে কুঁকড়ে দাঁড়িয়ে আছে।
” ঈশান..”
ঈশার কণ্ঠে এগিয়ে গেলো ঈশান।হাতের সব কাঁচ ঝরলেও একটি বড় কাঁচ সরেনি সেটি উপড়ে ফেললো ঈশান। ঈশার কাতর চাহনি দেখে মুচকি হেসে রক্তাক্ত হাতে ছুঁয়ে দিলো ঈশার গাল ঈশানের রক্তে ঈশার গালের একপাশ রঞ্জিত।
” এমনটা কেন করেছেন?”
” যা করেছি বেশ করেছি।”
” চলুন হাসপাতাল যাই।”
” কোথাও যাব না।তুমি একা বাসায় যেতে পারবে না?একা রিক্সা দিয়ে বাসায় চলে যেও।”
” হুম।”
” আমি এখন বাড়ি ফিরবো।”
ঈশানের রক্ত ক্রমশ গড়িয়ে পড়ছে ঈশার গাল বেয়ে গলায়।ঈশা ভয়ে ঠকঠক কাঁপছে কেমন যেন সবটা এলোমেলো লাগছে।ঈশাদ অবস্থা দেখে ঈশার কপালে মাথা ঠেকায় ঈশান স্বল্প স্বরে বলে,
” তুমি ভয় পেও না এই ভীতু মেয়েটাকে আমি ভালোবাসিনি আর কোন দিন বাসবো না।আমি ভালোবেসেছি সূর্যের মতো প্রখর উদ্দীপ্ত সেই মেয়েটিকে।”
#চলবে___