অর্ধাঙ্গিত_পূর্নিমা পার্ট:৬

0
229

#অর্ধাঙ্গিত_পূর্নিমা
পার্ট:৬
Written By Ayat Mushtarih Ayan
.
-আমি আপনাকে কেনো বিয়ে করবো?আমি আয়ানকে ভালোবাসি।(রুহি)
-আমি এতো কিছু জানি না জানতেও চাই না।এই রাজ্য আমার।এখানে মানুষ ভুলে চলে আসতে পারে কিন্তু আমার অনুমতি ব্যতিত যাওয়া সম্ভব ই না।তোমাকে আমি সর্বোচ্চ ২দিন সময় দিলাম।আর হে।পালানোর চেষ্টা করে লাভ নেই।কারণ তুমি মনে মনে পালানোর যে প্ল্যান করবা তা পাশে থাকা মানুষ এমনেই জেনে যাবে।হাহাহা।
.
.
রুহি বসে পরে মাটিতে।কি হলো তার সাথে?না এ হতে পারে না।আমার বিশ্বাস আছে আয়ান আসবে।
.
.
ইউসুফ রাফইয়াদদের শহরে যাওয়ার ব্যবস্থা হইছে?
-না আরেকটু সময় লাগবে।মন্ত্রটা জোগাড় করছি।
-আচ্ছা একটু জলদি কর।না জানি রুহি কি করতেছে কেমন আছে।আমার টেনশন হইতেছে।
-আমি করতেছি যতো দ্রুত সম্ভব।
.
আয়েশা ফারহান সবাই টেনশন এ শেষ।এই প্রথম রুহি বাসা থেকে এভাবে না বলে উধাও হয়েছে।আবার রুম এর ভিতর থেকে গায়েব।ফারহান পুলিশ কেস করে দেখা যাক পাওয়া যায় কি না।কিন্তু সে তো আর পাওয়া যাবে না সেটা তো কেউ জানে না।
.
আয়ান আর ইউসুফ দাঁড়িয়ে আছে রাফইয়াদদের জগতের দরজার সামনে দাঁড়ানো।সাব্বির কে আনে নি আয়ান। কারণ সে চায় না সাব্বির কোন বিপদে পড়ুক।
তারা রাফইয়াদদের জগতে ঢুকার মন্ত্র পড়ে।কিন্তু এটা অন্য রাস্তা। এই শহরে ঢোকা হলে ইউসুফকে দেখা যাবে।সবাই আয়ান আর ইউসুফ দুইজনকেই দেখতে পারবে।এটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা।ইউসুফ রাস্তা দেখাচ্ছে আর আয়ান পিছন পিছন যাচ্ছে।
-কিরে ইউসুফ? কতোদূর রে?
-আরেকটু ভাই।কিন্তু জিল্লাদের গ্রামে প্রবেশ করতে যাচ্ছি আমরা।এখান থেকে লাশ এর উপর ভর করেই আসিয়ুসদের জগতে যেতে হবে।
-কি বলিশ?মারতেই হবে?
-হে ভাই।না হলে এরা আমাদের মেরে দিবে।
-আরে ব্যাস।
আয়ান আর ইউসুফ ভয়ে ভয়ে জিল্লাদের গ্রাম এ প্রবেশ করে।আয়ানকে দেখা মাত্রই কেউ একজন চেচিয়ে কি যেনো বলতে থাকে।এরপর চারিদিক থেকে আয়ানের দিকে বিভিন্ন জিনিশ ছুড়ে মারা হতে থাকে।ইউসুফ নিজের যাদু বিদ্যা দিয়ে সব সরাতে পারছে না।কারণ এগুলা একেকটা প্রানীর লাশ।বাদুর, পেচা এগুলার মরদেহ ছুড়ে মারা হচ্ছে তাদের দিকে।আয়ান নিজের লাঠি বের করে আর একের পর এক বস্তু সরাতে থাকে লাঠির ইশারাতে।আয়ানের যাদুর দক্ষতা দেখে জিল্লাদরাও ভয়ে কাপছে।আয়ান তার লাঠি মাটিতে বারি মারে আবারো।আশেপাশে যা ছিলো সবাই শুয়ে যায়।
-কিরে ইউসুফ?সব তো শেষ।এবার তো যাওয়া যাবে?
-এটা কি করলেন?লাঠির শক্তি এক ঘন্টার জন্য শেষ করে দিলেন?এর পরেও আরো অনেক গ্রাম পার হয়ে যেতে হবে আসিয়ুসদের জগতে।
-কি?তুই না বললি জিল্লাদের পার করলেই হবে?
-জিল্লাদের পার করে বলছি।কিন্তু এর পরে যে আর নাই তা তো বলি নাই?
-আরে ক্লেয়ার করে বলবি না?লাঠি বাদ এ কিভাবে হবে?আর এদিকে তুই ও দৃশ্যমান।তুই যে কিছু করবি তাও তো সম্ভব না।
-১ঘন্টা এখানে বসেও থাকা যাবে না।চলে সামনের দিকে এগুই।এদের কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে রাজা রাফইয়াদ এখন ই সৈন্য পাঠাবে।তার সৈন্যদের সাথে পেরে উঠা সম্ভব না বা সময় ও নেই।
-আচ্ছা দ্রুত চল।
.
সামনে অন্ধকার এক কুয়ায় নামতে হবে আয়ানদের।এই কুয়োয় অজস্র সাপ এর বসবাস।এই সাপ গুলো সব পাহাড়াদার।এদের বিশেষত্ব হচ্ছে এদের বিষে যে কেউ গভীর নিদ্রায় চলে যায় যতোক্ষন অব্দি না তাদের উপর নীল নদের পানি না মারা হয়।নীল নদ রাফইয়াদ জগতের একদম শেষে।তা আনতে আনতে যে কেউ কোমায় চলে যাবে।
.
-এমন ভয়ানক গোহায় নামছে কোন প্রস্তুতি ছাড়া।কিন্তু রুহির জন্য নামতেই হবে আয়ানকে।
.
.
মিম এর কাছে খবর আসে। ইয়ামিনকে নিয়ে শহরে আসতে।সে সব বাদ দিয়ে দ্রুত শহরে আসে।
-আয়ান কোথায় জানি গেছে।সম্ভবত আসিয়ুস দের জগতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।সাব্বির একা।এই সুযোগ সাব্বিরকে শেষ করে দে।কারণ সাব্বির এর সাথে ইউসুফ নেই।(শয়তানি শক্তি)
-আচ্ছা জাহাপনা।(মিম)
.
.
-বিয়ের জন্য তোমাকে আজ থেকে সাজানো হবে রহি।এতো সুন্দর তোমাকে এমন করে সাজাবো যে সারা বিশ্ব দেখবে।(নাফিদ)
-আমি ঘৃণা জানাই আপনাকে।আমি ভেবে ছিলাম আপনি ভালো একজন মানুষ কিন্তু আপনি এভাবে জোড় করে বিয়ে করছেন?আয়ান আসলে আপনাকে বাচাবে না দেইখেন।
-আমাদের রাজ্যের নিয়ম।ছেলেরা মেয়েদের দেখে কবুল বললেই বিয়ে হয়ে যায়।মেয়েদের বলতে হয় না।তাই তোমাকে বিয়ে করা খুব সোজা।
-আমি মানি না এই বিয়ে।
-না মেনে কোথায় যাবে।আর আয়ান।তাকে আমি শেষ করে দিবো।দেখবো তার কতো জোড়।যদি সে এখানে পাত্তাই পাবে না।
-দেখে নিয়েন।আমার আয়ান আসবে।
.
.
-কিরে ইউসুফ। এই গোহায় নামলে তো মৃত্যু নিশ্চিত।
-সব আপনার দোষ। কে বলেছিলো যে লাঠির শক্তি খচর করতে?আমি সামলাচ্ছিলাম না?
-আমি মনে করলাম তোর কষ্ট হচ্ছে তাই।
-হইছে।বলেন যে রুহির সাথে দেখা করার তাড়ায় এগুলা করছেন।
-আরে সত্যি বেশি বলা ভালো না ইউসুফ।কিভাবে এদের কাম তামাম করবো তা ভাবো।
-আরে সোজা।এরা নীমের গন্ধ সহ্য করতে পারে না।আমাদের গোহার মাঝ বরাবর থেকে নিম এর পাতা আনতে হবে।নীম এর গন্ধের জন্য সেখানে তারা আসে না।কিন্তু যদি পড়ে যান তাহলে কিন্তু শেষ।
-আচ্ছা আমি যাচ্ছি।রুহির জন্য এই টুকু করতেই পারবো।
.
আয়ান আস্তে আস্তে নিচের দিকে নামছে।হাত পিছলে যেতে চাচ্ছে তার কিন্তু তাকে যে হাত ধরেই রাখতে হবে।নিজে মরে গেলে সমস্যা ছিলো না।মৃত্যু নিয়ে এর আগেও অনেকবার খেলেছে সে।কিন্তু রুহির জন্য হলেএ তাকে বাচতে হবে।রুহিকে বাচাতে হবে।
.
.
.
১দিন পার হয়ে গেছে।রুহিকে সাজানো হচ্ছে বিয়ের সাজে।সে শুধু অপেক্ষায় আছে কখন আয়ান আসবে।
.
সাব্বির রাত এর বেলা তার বাসায় শুয়ে আছে।সাব্বিরের বাবা আয়ানদের বাসায় এসে সাব্বিরকে নিয়ে গেছে।রাত এ তার রুমের আশেপাশে বিভিন্ন মাকড়শা দেখতে পাচ্ছে সাব্বির।সে বুঝে পায় না এতো মাকড়সা তার রুমে কিভাবে এলো?সে কিছু বুঝে উঠার আগেই বিভিন্ন মাকড়সা এসে সাব্বিরকে কামড়াতে শুরু করে।সে ব্যাথায় চেচাতে থাকে।কিন্তু আওয়াজ বের হচ্ছে না তার মুখ থেকে।ব্যাথায় কুকড়ে যাচ্ছে সে।কিন্তু কেউ আসছে না তাকে বাচাতে।আসতে আসতে তার শরীর নীল আবরণ ধারণ করতে থাকে।
.
.
নীম পাতা আনার শেষ প্রান্তে আয়ানের হাত ছুটে নিচে পড়ে যায়।বিভিন্ন সাপের কামড়ে অজ্ঞান হয়ে যায় সে।ঘুমিয়ে যায় গভীর ঘুম এ।ইউসুফ চেচিয়ে উঠে।কি হয়ে গেলো এটা? এটা তো হওয়াফ ছিলো না।সে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।তার যেভাবেই হোক নিচে যেতে হবে।
.
.
.
আসিয়ুস শহর উৎসবে মাতছে।নাফিদ এর বিয়ে।মেয়ে দেখতে পরীর থেকে কম কই।সবাইকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে রাজপ্রাসাদে।সবাই পেট পুরে খেয়ে রুহিকে দেখে খুশি মনে দোয়া দেয়ে চলে যাচ্ছে।রুহি শুধু আয়ানকে দেখতে চাচ্ছে।
.
কিছুক্ষনের মাঝে বিয়ের কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়।রুহির চোখে শুধু ভাসছে।ওই যে আয়ান আসছে। হাতে তার লাঠি।একেকজনকে উড়িয়ে দিচ্ছে আর তার কাছে আসছে।এই তো মাটিতে বারি দিছে।সবাই ঘুম এ।সে আসছে।হে সে এসে রুহির হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে তাকে।রুহি খুশি।অনেক খুশি এবার।কিন্তু না এসব তো হচ্ছে না।নাফিদ কবুল বলে দিলো।বিয়ে হয়ে গেলো তাদের।আয়ান আসতে পারলো না।এতো শখের ভালোবাসা শেষ হয়ে গেলো রুহির।কতো শখ ছিলো আয়ান আর তার বিয়ে হবে।সুখের সংসার হবে।সব তো ঠিকই ছিলো।আয়ান তার জন্য নিজের সব ছেড়ে দিয়েছিলো।কিন্তু আজ সেই আয়ানকে ছেড়ে অন্য কারো হয়ে গেলো সে।চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝড়ছে রুহির।কিন্তু সেই পানির যে কোন দাম নেই এখন।সে যে এখন অন্য কারো বউ..
.
.
#চলবে
.
যেভাবে রুহির বিয়ে হয়ে গেলো।সাব্বির এর কি হতে পারে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here