অর্ধাঙ্গিত_পূর্নিমা পার্ট:৭

0
185

#অর্ধাঙ্গিত_পূর্নিমা
পার্ট:৭
Writter By Ayat Mushtarih Ayan
.
আয়ান এর জ্ঞান ফিরে।সে এখন রাফইয়াদদের প্রাসাদে।বন্দি অবস্থায়।ইউসুফ আয়ানকে বাচাতে ব্যর্থ হয়।সে নিজেও এখন বন্দি।কিন্তু দুজনেই আলাদা আলাদা জায়গায়।
.
রাফইয়াদ এর কানে খবর যায় আয়ান এর কথা।সে আয়ানকে চিনে।তার প্রতিটা মিশন সম্পর্কে জানতো রাফইয়াদ।রাফইয়াদ কখনোই খারাপ শক্তির গোলাম বা নিজে খারাপ শক্তি ছিলো না।তার ইচ্ছে ছিলো খারাপ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার।কিন্তু তার উপর আদেশ সে যাতে কখনো খারাপ শক্তির বিরুদ্ধে না যায়।তাই সে ইয়ামিন ও মিম কে সাহায্য করছে।
.
-আমি রাফইয়াদ।তোমাকে আমি চিনি।
-আমাকে বন্দি না রেখে ছেড়ে দিন।আমি আপনার কোন ক্ষতি তো করিনি।
-তোমার এই ব্যবহারটাই তো ভাল্লাগে আয়ান।যতো বিপদেই পড়ো।শত্রু পক্ষের সাথে খারাপ ব্যবহার করো না।
-আমার পরিবার থেকে আমাকে সেই শিক্ষা দেয় নি।সবাই আল্লাহর সৃষ্টি। আর আল্লাহর কোন সৃষ্টির সাথে আমি খারাপ ব্যবহার কিভাবে করি?হে দরকারে তাদের প্রহার করতে হয়।কিন্তু আমি বুঝিয়ে নেই।
-জানো আয়ান,পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে তোমার ব্যবহার।এই ক্ষমতা সবার কাছে থাকে না।সবাই অন্যকে নিজের আয়ত্তে আনার চেষ্টায় মাতে।এমন ও অনেকজন কে দেখেছি যারা এই ক্ষমতা চায় যে,ইশ আমি যদি তাকে আয়ত্তে আনতে পারতাম।আমার নিজের মতো চালাতে পারতাম।কিন্তু তারা জানেই না তারা তাদের ব্যবহারের মাধ্যমে যে কাউকে নিজের আয়ত্তে এনে ফেলতে পারে।
-হয়তো ঠিক বলেছেন।
-হয়তো না আয়ান,সঠিক।
-আচ্ছা?তাহলে আমাকে ছেড়ে দিন।আমাকে যেতে দিন আমার রুহির কাছে।
-কিন্তু তুমি যে অন্যায় করেছো।বিনা অনুমতিতে আমার রাজ্যে প্রবেশ করে।
-আমি বাধ্য হয়ে করেছি বিশ্বাস করুন।আমার কাছে আর কোন উপায় ছিলো আসিয়ুসদের রাজ্যে যাওয়ার মতোন।
-সেখানে যাবে নিজের ভালোবাসাকে উদ্ধার করতে?
-হে আমাকে রুহির কাছে যেতে হবে।না জানি কেমন আছে সে।
-সে ভালো নেই রে আয়ান।
-কেনো? কি হয়েছে?বলুন?আপনি কি জানেন রুহির ব্যাপারে?
-আসলে আয়ান।আসিয়ুসদের রাজপুত্র নিফাদ অনেক বাজে চরিত্রের।সে বিয়ে করে নিয়েছে রুহিকে।আজ অনেক বড় উৎসবের মাঝে শেষ হলো তাদের বিয়ে।সে বার বার কেদে কেদে বলেছিলো,
-আমি আয়ানকে ভালোবাসি।প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন।কিন্তু সেই নির্দয়-নিষ্ঠুর নাফিদ আর তার পরিবার জোড় করে বিয়ে দিয়ে দেয় রুহির সাথে নাফিদ এর।
-কি বলছেন এসব?
-আমি মিথ্যা বলি না আয়ান।তুমি সেখানে গেলে নিজের চোখেই সব দেখতে পারবে।
-না এ হতে পারে না। আমি মানি না এসব।
-না মানলে আর কি করার। যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে।
.
আয়ান ভেঙে পরে।তার যেনো বিশ্বাসী হচ্ছিল না। এটা কিভাবে সম্ভব?তার মনে হচ্ছে সে কল্পনায় আছে।আবার রাফইয়াদকেও তার বিশ্বাস হচ্ছে না।তার মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে।
-মাথা গরম করে লাভ নেই আয়ান।আমি নিজে তোমাকে আসিয়ুসদের জগতে পাঠিয়ে দিবো।কিন্তু তোমার আমাকে একটা কাজ করে দিতে হবে।
-কি কাজ?
-আসিয়ুসদের জগতে একটা শক্তির উৎপন্ন হয়।যেটা দ্বারা কাউকে তার কল্পনার জগতে পাঠিয়ে দেওয়া যায়।আমার সেই শক্তি উৎপাদনের যন্ত্রটা লাগবে।তোমার তা এনে দিতে হবে আমাকে।
-আমি কিভাবে পারবো?
-আমি জানি তুমি পারবে আয়ান।আমি জানি।
-আচ্ছা আমি যাবো।কিন্তু ইউসুফ কোথায়?
-ইউসুফ এর চিন্তা করো না তুমি।
-ওকে আমার সাথে নিয়ে যাবো।
-তা তো হবে না।
-কেনো?
-তা তুমি ভালো করে জানো। তুমি যদি পালিয়ে যাও তোমাকে আমি কোথায় পাবো বলো?
-আমি আমার কথার খেলাপ করি না তা আপনার জানার ই কথা।
-জানি।কিন্তু বুঝোই তো মন মানে না।যাই হোক তোমার সঙ্গে ইউসুফকে না দিলেও তোমাকে আমি একটা শক্তি দিবো।
-কেমন শক্তি?
-একটা অস্ত্র।যার মাধ্যমে তুমি একটা মুহূর্তকে ফিরিয়ে আনতে পারবে।মানে ঘটে গেছে এমন একটা মুহুর্তকে তুমি পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারবে।
-সত্যি?তার মানে এটা দিয়ে আমি রুহির বিয়ে বাদ করাতে পারবো?
-হে পারবে কিন্তু মনে রেখো আমার জন্যে আগে সেই শক্তি সংগ্রহ করতে হবে তোমার।নাহলে তোমার বন্ধু ইউসুফ কিন্তু আমার কাছেই আছে।
-ব্ল্যাকমেইল করতে হবে না আপনার।আমি জানি আমার কি করতে হবে।
-জানলে তো হলোই।
-এবার আমাকে আসিয়ুস যাওয়ার রাস্তা দেখান দয়া করে।
-হে দেখাবো।সেখানে সাবধান।তোমার মনের কথাও পাশের মানুষ শুনতে পারবে।আর হে,আমার এক দাসী আছে।তাকেও পাঠাচ্ছি তোমার সাথে।
-লাগবে না আমার।
-আরে লাগবে লাগবে। ফারজানা,এদিকে এসো।
-রাফইয়াদের ডাকে একটা মেয়ে এসে হাজির হয়।আয়ানের বয়সী হবে।দেখতে মাশাল্লাহ।
-তুমি আয়ানের সাথে যাবে।তোমার তো আসিয়ুসদের অলি গলি চেনার কথা।
-হে আমি চিনি।
– ওর যাতে কোন সমস্যা না হয়।আয়ানের খেয়াল রাখতে ভুলবে না কিন্তু।
-ঠিক আছে হুজুর।
-হুম।
.
.
.
রুহি ঘরে বসে আছে।আজ তার বাসররাত।এই রাতটা কার সাথে কাটানোর কথা ছিলো আর আর সাথে হচ্ছে। তার যে কিছুই করার নেই।সে জানে না কিভাবে বের হতে হবে এখান থেকে।সে শুধু দোয়া করছে কোনভাবে যদি আয়ান এসে পড়তো।কিন্তু না তা হয় নি।
ভাবনার ভাবান্তর ঘটিয়ে নাফিদ চলে আসে তার রুমে।সেখানে রুহি বধু বেসে বসে আছে।
সে রুমে প্রবেশ করে খাটের দিকে বসে।রুহিকে কিচ্ছুক্ষণ আগে এখানে বসিয়ে গিয়েছে নাফিদের বোনেরা।নাফিদ রুহির কাছে এসে বসতেই রুহি বলে উঠে,
-কি ক্ষতি করে ছিলাম আপনার?আমার এতো বড় ক্ষতি না করলে কি হতো?
-কি ক্ষতি করলাম তোমার?
-আমি আয়ানকে ভালোবাসি যেনেও কিভাবে আমাকে বিয়ে করলেন?
-আজকালের ভালোবাসা খাট অব্দি ই।
-ছি: কতো নিম্ন মানের চিন্তা ভাবনা আপনার।
-চুপচাপ থাকো আর শাড়ি খুলো।
-একটু লজ্জা করুন।
-কিসের লজ্জা।তুমি বিবাহিত বউ আমার।তোমার পুরো শরীর এর উপর অধিকার আমার।
-দোহায় লাগে।আমি এ বিয়ে মানি না।আমি তো কবুল বলি নাই।
-আবে চুপ কর তো।এবার জলদি খোল।আমার আর তর সইছে না।
-রুহি চুপ মেরে বসে আছে দেখে নিফাদ নিজেই তার কাজ শুরু করে দেয়।রুহি বার বার তাকে ছেড়ে দেওয়ার আকুতি মিনুতি করতে থাকে।কিন্তু লাভ হয় নি।রাফইয়াদ এর শক্তির কাছে পেরে উঠেনি সে।যখনই রুহির শাড়ি অর্ধেক খোলা শেষ তখনই পিছন থেকে কেউ নাফিদ এর পেটে ছুড়ি মারে।রুহি অবাক হয়ে যায়।এতো একটা মেয়ে।এ কিভাবে এখানে এলো?
.
এতো কিছু ভাবার সময় নেই রুহি।আমাদের পালাতে হবে।জলদি করো।
-রুহি নিজের শাড়ি ঠিক করে মেয়েটির পিছনে পিছনে চলতে থাকে।আর এদিকে ব্যাথায় কাতরাচ্ছে নাফিদ মেয়েটি নাফিদের মুখে কি জানি মেরে দিয়েছে যার ফলে চেচাতেও পারছে না সে।
.
জলদি চলো।এ নাফিদ মরার পাত্র নয় এতো সহজে।ওর ক্ষত কিচ্ছুক্ষন পর একাই ঠিক হয়ে যাবে।
-আপনাকে তো চিনলাম না।
-আমি তানজিলা।নাফিদ আমাকেও জোড় করে বিয়ে করেছে।
-কি? ও আগেও বিয়ে করেছিলো?
-হে এর আগেও বিয়ে হয়েছিলো।
-ওর অভ্যাস ই এমন।ও বিয়ে করবে। কয়েক রাত কাটাবে আর এরপর দাসী বানিয়ে রাখবে।
-ও মরে না?
– না ওকে আগেও মারতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দেখলাম কিছুক্ষনের মাঝেই ঠিক হয়ে গেলো।
-আপনার কতোতম বউ ওর?
-নাফিদকে কম বয়সী দেখা গেলেও ও কম বয়সী না।ওর বয়স অনেক।এখানের আসল রাজাদের ওরা বন্দী করে রাজ্য দখল করে।এরপর থেকে এমন কর্মকান্ড শুরু করে।
-তার মানে নাফিদ এর বাবা আসল রাজা না?
-না।
-তুমি এতো কিছু জানো।
-হে কারণ অনেক দিন হলো এখানে আছি আমি।ওকে মারার ক্ষমতা তো হয় নি।কিন্তু তোমাকে বাচাতে ইচ্ছে হলো।আমি ও কাউকে ভালোবাসতাম।কিন্তু ওর জন্য তাকে পাই নি।তোমাকে নিজের প্রতিচ্ছবি মনে হলো।তাই ভাবলাম নিজেকে তো বাচাতে পারি নি।তোমাকে বাচতে সাহায্য করি।
-এখন আমরা কোথায় যাবো?
-গেট আছে একটা।সেইটা দিয়ে নাকি রাফইয়াদ জগতে যাওয়া যায় এখান থেকে ওইখানে যাও। রাজা রাফইয়াদ নাকি আর যাই হোক মেয়েদের সম্মান করে অনেক।তুমি সাহায্য চাইলে সে হয়তো করবে।
-ধন্যবাদ আপু তোমাকে।
– আগে চলো।তোমাকে সেখানে পৌছে দেওয়ার চেষ্টা করি।
-ঠিকাছে।
.
-আয়ান আর ফারহানা আসিয়ুসদের জগতে প্রবেশ করতে যাচ্ছে।কিন্তু সেখানের প্রহরীরা ভয়ংকর।তাদের হাতে রয়েছে সে অস্ত্র যা দিয়ে অনায়াশে আয়ান কে কল্পনার জগতে পাঠিয়ে দিতে পারবে।কিন্তু ফারহানা থাকায় ভয় একটু কম।কারণ সে এর আগেও অনেকবার আসিয়ুসদের জগতে গিয়েছে।
-ফারহানা নিজের নুপুর ঝনঝন শুরু করে।প্রহরীরা বুঝে যায় কেউ এসেছে।তারা যেই দেখতে যাবে কে এসেছে আয়ান তার লাঠি দিয়ে তাদের উড়িয়ে পাঠিয়ে দেয় অন্যত্র।এবার রাস্তা ক্লেয়ার।তারা প্রবেশ করে আসিয়ুসদের জগতে।
.
.
#চলবে…
.
.

সাড়া পেলে নেক্সট জলদি দিবো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here