অর্ধাঙ্গিত_পূর্নিমা পার্ট:৮

0
297

#অর্ধাঙ্গিত_পূর্নিমা
পার্ট:৮
Written By Ayat Mushtarih Ayan
.
আসিয়ুসদের জগতে যে নেশা আছে তা আলাদা।এখানে আয়ান আগেও এসেছে মনে হচ্ছে।এখানের বাতাসে যে মায়া আছে তা বলার বাহিরে।সে বাতাসের অনুভুতি নিতে চাচ্ছে। ফারজানা যতোই তাকে তারাতারি এগুতে বলছে সে যেনো এগুচ্ছেই না।তার মনে হচ্ছে এখানেই তার মরণ হোক তবুও যেনো না যেতে হয়।এতোটা নেশা কেনো এখানের বাতাসে?
.
-কিরে রাবুই।এতো অবাক হচ্ছিশ কেনো?
-আপনি এতো ভালো কবে হলেন উস্তাদ?
-আরে।আয়ানকে আমি ব্রেন ওয়াস করলেও একটা কথা কিন্তু ঠিক ই বলছি।
-কোনটা উস্তাদ?
-এই যে ভালো ব্যবহার দ্বারা সব হাসিল করা যায় এটা।
-আমি তো অবাক হয়ে গেছিলাম যে আপনি কিভাবে ভালো হলেন।
-আরে ভালো ব্যবহার করে ওকে পাঠালাম।আমি শত্রুদের বাচিয়ে রাখি না।আয়ান আমার কাজ করে এখানে এলে একদম উপড়ে ফেলে দিবো ওকে।(রাফইয়াদ)
.
নিফাদ এর ক্ষত অনেকটুকু সেরে গেছে সে মুখের উপর থেকে যাদুর প্রলেমটা সরিয়ে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে রুহি কে খুজতে।তানজিলা কে তো আজ সে মেরেই ফেলবে।তার সৈন্য সামন্ত নিয়ে রাজ্য ছেড়ে বের হয় রুহিকে ধরতে।.
.
ফারহাজানাদের সামনে দিয়ে দুটো মেয়ে আসিয়ুসদের জগতের দরজার সামনে আসছে।সে লুকিয়ে পরে।আয়ান সেখানে ঠাই দাড়িয়ে আছে।তার নেশা এতোটা চরম পর্যায়ে যে, তার পাশ দিয়ে রুহি আর তানজিলা চলে গেলো আসিয়ুসদের জগৎ ছেড়ে রাফইয়াদ দের জগতে তা সে বুঝতেই পারছে না।আর এদিকে রুহি ও নিজের মুখ লুকাতে ব্যস্ত থাকায় আয়ানকে চিনতেই পারলো না।দুজন চলে গেলো দুই প্রান্তে। রুহিকে খুজতে আসা আয়ান এর সামনে দিয়ে রুহি চলে গেলো।
.
আসিয়ুসদের জগতের পরেই রাফইয়াদদের জগত কিন্তু ফারজানা যেমন সহজে চলে এসেছে তেমন সহজে তো আর রুহিরা যেতে পারবে না।তানজিলা সেখানে যেতে চায় নি কিন্তু রুহি সাথে থাকায় সাহস পেয়ে সে ও আজ মুক্ত হতে চায়।রাফইয়াদদের জগতের পথে প্রথম পা বাড়ায় রুহি।
.
.
রাতের বেলা।একটা মাঠ,চারিদিকে বিভিন্ন গাছ পালা।একটু দূরে একটা কুয়া।কুয়ার পাশে বড় একটা আম গাছে।আবার কুয়ার পিছনে একটা নালা মনে হচ্ছে।সেখানে হয়তো কয়েকজন গোসল করছে।রুহি ভাবে এদের থেকে জিজ্ঞেস করা যাবে কিভাবে রাজা রাফইয়াদদের জগতে যাওয়া যাবে।তারা সামনের দিকে এগুচ্ছে।কুয়ার কাছে যেতেই মনে হচ্ছে কুয়ার ভিতর থেকে কেউ ডাকছে তাদের,
-আয়… আয়..আমার কাছে আয়।অনেকদিন হলো রক্ত খাই না।পুকুরের কাছে গিয়ে ওদের সবাই রক্ত খেতে দেয়।আমাকে কেউ দেয় না।অনেক ক্ষুদা লাগছে রে।আমাকে খেতে দিবি না?একটু দে না রে।
আওয়াজ টা এতোটা করুন ছিলো যা বলার বাইরে।মনে হচ্ছে রুহ কেপে যাবে। এতো করুণ আর্তনাদেও মানুষের ভয় করে?কতোটা ক্ষুদার্ত হলে এভাবে ডাকতে পারে?চারিদিক থেকে মনে হচ্ছে হাজারো চোখ জলজল করছে রুহিদের দিকে।পুকুরের দিক দিক খিল খিল হাসির আওয়াজ আসছে,
-হি হি হি।হিহিহি আজ খাবার ভালোই হবে।ইশ,এদের কলিজা গুলা খেতে মজাই লাগবে।আয় আয়।তোদের রক্ত ও থাকবে আজ থেকে এই পুকুরে।
রুহি ভালোভাবে খেয়াল করে সম্পুর্ণ পুকুরে পানি নাই।রক্ত আর রক্ত।সেখানে হেসে খেলে গোসল করছে অনেক নর পিশাচ।এতোক্ষণ এদের মানুষ মনে হলেও এদের চোখ নেই।সারা শরীর বেয়ে টপ টপ করে রক্ত পড়ছে।সাথে আবার চেহারা,ইশ।শেয়ালের মতোন মুখ আর শরীরটা মানুষের মতোন।
.
তানজিলার জ্ঞান হারানোর উপক্রম।চারিদিক থেকে হাসির হো হো আওয়াজ ভেসে আসছে।যে নো এক মৃত্যুপুরী।রুহির মনে একটাই প্রশ্ন,এখান থেকে আদো বের হতে পারবে কি তারা?
.
.
নিফাদ ও তার সৈন্যরা ছুটে এসে আয়ানকে আবিষ্কার করে জগতের গেট এর সামনে।তারা আয়ানকে বন্দি বানিয়ে ফেলে।ফারজানা বুঝে যায় ধরা খাওয়া হয়ে গেছে তাদের।সে লুকিয়ে থাকে।আর নিফাদ আয়ানকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে।রুহিকে তন্ন তন্ন করে খুজেও পাওয়া যায় নি।এমন পাখি হাত ছাড়া হলে যে কারো রাগ উঠে যাবে।
.
.
মাকড়াশার কামড়ে সাব্বির মারা যায়।সকালে রুম এ এসে সাব্বিরের বাবা আবিষ্কার করে সাব্বির কথা বলছে না।ঝাকি দিতেই চোখে পড়ে শরীরে ছোপ ছোপ দাগ।মনে হচ্ছে কোন কিছু কামড়িয়ে ছিন্ন বিন্ন করে দিয়েছে তাকে।চিৎকার করে উঠে বাবা হয়েও।সাব্বিরের মা ও বিশ্বাস করতে পারছিলো না তার ছেলে আর নেই।একদিকে রুহি গায়েব।সাব্বির আর নেই।আয়ানকেও দেখা যাচ্ছে না।সব কিছু যেনো একটু বেশিই অস্বাভাবিক লাগছে আয়েশার কাছে।অন্যদিকে ইদানিং আরাভ একটু বেশি ছটফট করে।রাত এ ঘুমায়।সকালে উঠে দেখে শরীরে ছোপ ছোপ দাগ।মনে হয় কেউ মেরেছে।আর কাল রাত এ মনে হচ্ছিলো আয়েশার বিছানার সামনে দিয়ে কোন বাচ্চা হামাগুড়ি দিচ্ছে।আবার শেষ এ তো বলেই উঠলো।
-মা আমিও তো তোমার বাচ্চা।আমাকে আদর করবে না?আমি ও তোমার পেটে ততদিন ই ছিলাম যতোদিন আরাভ ছিলো।ও মানুষ হয়ে ছিলো।আর আমি রঙ হয়ে।
.
আয়েশা লাফ দিয়ে উঠে বসেছিলো।কিন্তু কিছুই ছিলো না আশে পাশে।সে ভয় পায় অনেক।আর সকালে দেখে আরাভ এর পিঠে দাগ।মনে হচ্ছে কেউ পিটিয়েছে তাকে।
সাব্বিরের পরিবারকে কি বলে শান্তনা দিবে তার ভাষা নেই আয়েশার।আয়ান থাকলে এটা কিভাবে সহ্য করতো।সে নিজেই কাদছে।ছোট থেকে সাব্বির আয়ানের সাথে আছে। নিজের ২য় ভাইয়ের জায়গা দিয়েছিলো তাকে।নিজের আপন ভাইয়ের মতোই মানতো তাকে।
.
.
-কাজ হইছে রে মিম।একটা গেছে।আর রইলো ৩ টা।আয়ান এর কি হবে জানি না।তবে আজ রাত এ আয়েশার পালা।আয়েশাকে উপরে পাঠাবি আজকে।
-ঠিক আছে হুজুর।
.
রাত এর বেলা খাবার শেষ এ আরাভ কে নিয়ে শুয়েছে আয়েশা।আজ ফারহান নেই।সে আজ কাজে বাইরে গেছে।আরাভকে বিছানায় শুয়িয়ে বাথরুমে গেছে আয়েশা।কিন্তু মনে হচ্ছে তার সাথে কেউ আছে।না কেউ বললে ভুল হবে।অনেক মানুষ আছে তার সাথে।হাসাহাসি হচ্ছে।সে ভয়ে পেয়ে যায়।আয়নায় চোখ যেতেই দেখে ভিতর থেকে তার অবয়ব তাকে দেখে হাসছে।সে কেপে উঠে।তখন ই পিছন থেকে কেউ তার ঘাড় এ চেপে ধরে।আয়েশা পিছনের দিকে তাকা পারছিলো না।আয়নায় দেখা যাচ্ছো অনেক বড় একটা সাপ তার গলা পেচিয়ে ধরেছে।
.
না।আজ তার নিজের রুপে ফিরতেই হবে।সে হাত মুঠ করে উপরের দিকে তাকিয়ে তার মন্ত্র বলে ফেলে,
-ইয়াকুলাস আইয়াকুম,সাম কুলায়াম।
.
সাথে সাথে তার চুল উপরের দিকে উঠে যায় আর সে হাসতে থাকে।পিছনে ফিরেই সাপ রুপী অবয়বটার গলা চেপে ধরে আয়েশা,
-কি ভেবে ছিলি?এতো সহজে মেরে দিবি?সাব্বিরকে তুই মারছিশ না?আজ তোর পালা।আমাকে মারতে আসার আগে আমার যাদুকরী শক্তি সম্পর্কে একটু যেনে আসতি।
.
এই বলে অবয়বটাকে উপরের দিকে ছুড়ে মারে আয়েশা।তার চেহারায় এক অন্য রকম হাসি।ভয়ে কাপছে মিম।কারণ এই রুপ ধরে সেই এসেছে।তার শুধু মনে হচ্ছে আজ সে শেষ।আয়েশা ও যে জাদু জানে এটা কি হুজুর জানতো না?তার তো জানার কথা ছিলো তাহলে সে কেনো আমায় বললো না?তার মানে কি সে চায় আমি মারা যাই??
.
.
#চলবে
.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here