মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি #তাহিরাহ্_ইরাজ #পর্ব_২

0
840

#মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_২

রাঈশার মুখনিঃসৃত প্রশ্নে যারপরানাই অবাক হৃদি! বিড়াল ছানাকে আদুরে হাতে আগলে বোনের পানে এগিয়ে এলো সে। বিস্ময় মিশ্রিত কণ্ঠে শুধালো,

” এসব কি বলছিস আপু? আমি আবার কি করলাম? ”

” কি করেছিস? সত্যিই বুঝতে পারছিস না? ”

হৃদি অসন্তুষ্ট বদনে বললো,

” বুঝলে কি আর জিজ্ঞেস করতাম? তুই ঠিকঠাক গুছিয়ে বল তো হয়েছে টা কি? সকাল সকাল বরের সঙ্গে কিচিরমিচির হয়েছে বুঝি? তাই ম”টকা গরম? হুঁ?”

ভ্রু নাচিয়ে হাসি হাসি মুখে শুধালো হৃদি। এতে তেঁতে উঠলো রাঈশা।

” একদম কথা ঘোরানোর চেষ্টা করবি না। আমি ঠিকই আছি‌। বরং তুই ভুলভাল কাজ করছিস। ”

বিড়ালের তুলতুলে দেহে হাত বুলাতে বুলাতে হৃদি পুনরায় শুধালো,

” কি করেছি আমি? ”

” ইরহাম চৌধুরীর সঙ্গে তোর কি কথা হয়েছে? ”

প্রশ্নটি শুনে ঈষৎ চমকালো কি হৃদি! চোখ তুলে বোনের পানে তাকালো।

” আ আমি আবার কি বলেছি? সাধারণ কথাবার্তা। ও-ই সবাই যা বলে। ”

রাঈশা সন্দেহের চোখে বোনকে আপাদমস্তক দেখে নিলো।

” তাই নাকি? কিন্তু আমার কানে যে ভিন্ন কিছু এলো। ”

হৃদি মেকি হেসে বললো,

” হে হে। বাতাসে কত ভুলভাল খবর ছড়ায়। ওসবে কান দিতে নেই। বয়রা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ”

রাঈশা কিছু বলতে উদ্যত হতেই তার মোবাইলে কল এলো। হৃদি উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখলো ‘ ফাহিম ‘ কলিং। হৃদি বোনকে উড়ন্ত চু মু উপহার দিয়ে বললো,

” ডুলাভাই কলিং। নে নে। কথা বলতে থাক। আমি গেলাম। কাবাব মে হাড্ডি হতে নট ইচ্ছুক। ”

হাসিমুখে চতুরতা সঙ্গে বিষয়টি এড়িয়ে যেতে সক্ষম হলো হৃদি। দ্রুত পায়ে পকিমন’কে নিয়ে সেথা হতে প্রস্থান করলো। রাঈশা তীক্ষ্ণ চাহনিতে বোনের গমন পথে তাকিয়ে।

ডাইনিং টেবিলের ওপর স্বাস্থ্যসম্মত-পুষ্টিকর খাবারের সমারোহ। আয়তাকার টেবিল ঘিরে চারটে চেয়ার দখল করে বসে এজাজ সাহেব, মালিহা, ইনায়া এবং রাজেদা খানম। এজাজ সাহেব ফ্রুট জুসে এক চুমুক বসিয়ে স্ত্রীর পানে তাকালেন। বললেন,

” হৃদি না কি যেন নাম মেয়েটার? ওর ফ্যামিলি ব্যাকগ্ৰাউন্ড আমার পছন্দ হয়নি। তবুও দেখতে গেলে। আমার নিষেধাজ্ঞা শুনলে না। গেলে, দেখলে। যা হওয়ার হয়ে গেছে। ওসব এখন মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। ”

সে মুহূর্তে চেয়ারে আসন গ্রহণ করলো ইরহাম। কর্ণ কুহরে পৌঁছালো মায়ের কণ্ঠস্বর,

” শোনো না মেয়েটা খুব মিষ্টি। ওকে আমাদের ইরুর সাথে খুব মানাবে। ”

মালিহার কথায় অমত পোষণ করলেন এজাজ সাহেব।

” দেখতে মিষ্টি হোক কিংবা তেঁতো। আমি যখন বলেছি ওটা বাদ দাও। তখন বাদ দাও। নেক্সট ফ্রাইডে মিস্টার হক আসছেন সপরিবারে। ওনার মেয়ে শায়না। উচ্চ শিক্ষিতা, বিউটিফুল, হাই সোসাইটি থেকে বিলং করে। ইরহাম চৌধুরীর স্ত্রী হিসেবে অমন কেউই পারফেক্ট। বুঝলে? কোনো হৃদি টিদি নয়। ”

বাবার কথা মানতে ব্যর্থ ইনায়া। সে মলিন বদনে বাবা, ভাইয়ের দিকে বার কয়েক তাকালো। তার যে ভাবী হিসেবে হৃদি আপুকে বেশ মনে ধরেছে। ওই শায়না তো আস্ত এক ময়দা সুন্দরী। ঢঙী। ভাবী হিসেবে একদম বেমানান। ভাইয়া কোনো প্রতিবাদ করছে না কেন? শেষমেষ ওর ইচ্ছে পূরণ হলো। ফ্রুট জেলে আচ্ছাদিত পাউরুটিতে এক বাইট দিয়ে ইরহাম বলে উঠলো,

” বলেকয়ে, ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ের জন্য রাজি করিয়েছো। তাই বলে ক্যারেক্টারলেস, উ গ্র স্বভাবের কাউকে বিয়ে করবো এমন ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করো না। ”

এজাজ সাহেব তেঁতে উঠলেন এহেন মন্তব্যে।

” মুখ সামলে কথা বলো ইরহাম। কাকে ক্যারেক্টারলেস, উ গ্র বলছো? শায়না মোটেও অমন মেয়ে নয়। ”

” ও কেমন সে সার্টিফিকেট নাহয় আর দিলাম না। একটু খোঁজ নিলে নিজেই জানতে পারবে। শুধু এটা জেনে রাখো শায়না নামক কোনো আপদ কাঁধে বইতে আমি মোটেও ইচ্ছুক নই। ”

বাবার দিকে না তাকিয়েই নিজস্ব মতামত পেশ করলো ইরহাম। অতঃপর ভোজন সম্পন্ন করে ডাইনিং ত্যাগ করলো। রাগে আর’ক্ত আভা ছড়িয়ে এজাজ সাহেবের মুখশ্রীতে। এতক্ষণে মুখ খুললেন রাজেদা খানম। উনি একমাত্র পুত্রের উদ্দেশ্যে বললেন,

” তোরা জামাই বউ কি শুরু করছোছ বল দেহি? পোলাটা বিয়া করমু না করমু না করছে এতগুলা বছর। শ্যাষম্যাষ যহন রাজি হইছে তোরা মাইয়া লইয়া টানাহেঁ’চড়া লাগাইছোছ? অ্যা কেমন কথা? ”

মালিহা মৃদু স্বরে বলে উঠলেন,

” মা আমি তো.. ”

” তুমি তো চুপ ই থাহো। ওই শানু মাইয়া কেমন তুমি জানো না? জানো তো। তাইলে চুপ কইরা থাকলা ক্যা? জামাইরে কইতে পারলা না ওই মাইয়া এই বাড়ির বউ হইবার যোগ্যতা রাহে না। ”

মালিহা ভীত চাহনিতে স্বামীর পানে তাকালেন। এজাজ সাহেব রাগে ফেটে পড়লেন এবার। সকলের উদ্দেশ্যে বললেন,

” আমি এখানে শায়নার ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট জানতে আসিনি। সবাই কান খুলে শুনে রাখো। এ বাড়ির বউ ওই শায়না ই হবে। অন্য কেউ নয়। ”

নিজের বক্তব্য পেশ করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন এজাজ সাহেব। প্রস্থান করলেন সেথা হতে। ইনায়া দুঃখী বদনে দাদির মুখপানে তাকালো।

” ও দাদি! ওই শায়না আপুকে ভাবী হিসেবে চাই না। সে কেমন তোমরা জানো তো। ”

দাদি ইতিবাচক সম্মতি জানালেন।

” হ জানি। হুদা চিন্তা করিছ না তো। দেহি কোথাকার জল কই গড়ায়। ”

চিন্তিত বদনে কিছু ভাবতে লাগলেন উনি। ওনার কথায় একটু হলেও নিশ্চিন্ত হতে পারলো মালিহা, ইনায়া।

গোধূলি লগ্ন। আঁধারে তলিয়ে যাচ্ছে ধরনী। নিজস্ব রুমে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে নিদিশা। হাতে চিপসের প্যাকেট। দৃষ্টি নিবদ্ধ ওয়াল স্মার্ট টিভিতে। সহসা পাশে বসলো এক রমণী। হকচকিয়ে গেল মেয়েটা। ডান পাশে তাকাতেই নজরে এলো হৃদিপু।

” হৃদিপু! তুমি? ”

চিপসের প্যাকেটে হাত গলিয়ে একটি চিপস মুখে চালান করলো হৃদি।

” হাঁ আমি। এমন ভূত দেখার মতো চমকে গেলি কেন? ”

বিনা কারণেই ঘামতে লাগলো মেয়েটা। চাচাতো বোনের এহেন আচরণ সুক্ষ্ণ চাহনিতে অবলোকন করলো হৃদি। আরেকটি চিপস মুখে পুরে বললো,

” এত ঘামছিস কেন? মনে হচ্ছে চুরি করে ধরা পড়েছিস? ”

মেকি হেসে নিজেকে সামলানোর প্রয়াস চালালো নিদিশা। শুকনো ঢোক গিলে হাত দিয়ে বাতাস করার ভঙ্গিমায় বললো,

” খুব গরম পড়েছে কিনা। তাই.. ”

” আচ্ছা? আমি তো ভাবলাম কূচুটে কাকিমার মতো কথা লাগিয়ে এখন ধরা খাওয়ার ভয় পাচ্ছিস। ”

তৎক্ষণাৎ দুদিকে মাথা নাড়িয়ে আপত্তি জানালো নিদিশা।

” এই না না। আমি কিছু করিনি। আপুকে বলিনি। সত্যি বলছি। ”

হৃদি ওর দিকে ‘ খাইয়া ফালামু ‘ এমনতর চাহনিতে তাকিয়ে। হঠাৎই অভিব্যক্তি পরিবর্তন হয়ে গেল। মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে বোনের চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বললো,

” নিদু সোনা। বড়দের কথায় কান দিতে নেই। ওকে? আরেকবার যদি এমন হয় তাহলে.. তোমার কলেজের পোল খুলতে আমার টাইম লাগবে না। ঠিক আছে? ”

মিষ্টি কথার মাঝে লুকায়িত স্পষ্ট হু’মকি। শুকনো ঢোক গিলতে লাগলো নিদিশা। বোনদের মধ্যে এই একজন হৃদিপু। বড় ভ”য়ংকরী আছে। কাউকে ভয়ডর পায় না। একবার হু’মকি দিয়েছে মানে সে সত্যিই বিপজ্জনক অবস্থানে ঝুলছে। শেষমেষ তার কলেজের আকাম না ফাঁস হয়ে যায়! না বাপু না। সে আর আড়ি পাতবে না। সাধু হয়ে যাবে। ওসব আড়ি পাতা অন্যায়। পঁচা কাজ। সে তো গুড গার্ল। নিজেকে নিজেই বোঝালো মেয়েটা। হঠাৎ ভাবনায় ছেদ পড়লো। ডানে ফিরে চমকালো বেশ! হৃদি তার পাশেই আয়েশ করে বসে। দু পা ক্রস আকৃতি করে ওর চিপসের প্যাকেট দখল করে ওয়েব সিরিজ এনজয় করছে। বাব্বাহ! কি দ্রুত পরিবর্তন! কাঁচুমাচু করে নিদিশাও ওয়েবে মনোনিবেশ করলো। তা লক্ষ্য করে মিটিমিটি হাসছে হৃদি। বোনটা বড় সরল। ভয়ের ‘ ভ ‘ না দেখাতেই কেমন ভয় পেয়ে গেল! হাসি চাপিয়ে হৃদি সাসপেন্স থ্রিলার উপভোগ করতে লাগলো।

দিবাকরের আলোয় আলোকিত ধরিত্রী। প্রতিদিনের ন্যায় কাটছে সময়কাল। নিস্তব্ধ পরিবেশ সহসা কলিংবেলের শব্দে মুখরিত হলো। একজন পরিচারিকা এগিয়ে গেল সদর দরজার পানে। দরজা উন্মুক্ত করে চমকালো! কেউ নেই। জনশূন্য দ্বার। পরিচারিকা এদিক ওদিক দৃষ্টি বুলিয়ে কাউকে পেল না। তাই দ্বার বদ্ধ করতে উদ্যত হতেই থমকে গেল। দরজার বাহিরে মেঝেতে রাখা এক বক্স। মোড়কে আবৃত বক্স দেখে পরিচারিকা ইতিউতি করে হাতে তুলে নিলো। অক্ষর জ্ঞান জানা সে পড়তে পারলো বক্সটি ইরহামের নামে এসেছে। তবে প্রেরকের নাম শূন্য। অদ্ভুত বক্সটি নিয়ে দ্বার বদ্ধ করলো সে। অগ্রসর হতে লাগলো মালিহার রুমের দিকে। তাকে জানানো দরকার এ বিষয়ে। তবে তা আর হলো না। রাজেদা খানমের ডাক শুনে মহিলাটি লিভিং রুমে কারুকার্য খচিত টেবিলের ওপর বক্সটি রেখে পা বাড়ালো রাজেদা খানমের রুমের দিকে। অদ্ভুদ সে নামহীন পার্সেল পড়ে রইলো টেবিলে।

তমস্র রজনী। বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে মেয়েটি। দৃষ্টি নিবদ্ধ ল্যাপটপের যান্ত্রিক পর্দায়। সেথায় প্রদর্শিত হচ্ছে এক মানব অবয়ব। পেশিবহুল পেটানো দেহ আবৃত শুভ্র পাঞ্জাবির অন্তরালে। বাতাসের তোপে স্বল্প এলোমেলো মসৃণ কেশ। নভোনীল চক্ষু জোড়া কিছুটা আড়াল হয়েছে রিমলেস চশমার আড়ালে। হালকা চাপদাড়ির উপস্থিতি তার শৌর্য, পুরুষালি মুখশ্রীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে কয়েক গুণ। অধরে লেপ্টে দুর্বোধ্য হাসির রেখা। বলিষ্ঠ দেহ হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে নতুন ক্রয়কৃত গাড়ির দেহে। বছর পাঁচেক পূর্বের ফটো এটি। যা পাঁচটি বছর পরও নারীমন কেড়ে নিতে সক্ষম। তোলপাড় সৃষ্টি করতে পারে কোমল হৃদয়ে। হৃদি বিমুগ্ধ চাহনিতে তাকিয়ে ল্যাপটপের পর্দায়। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে ফটোখানা। মিথ্যে লাজে রাঙা হয়ে রাঙাপরী রূপ ধারণ করছে। সে মুহূর্তে পাশে এসে শয্যা গ্রহণ করলো কেউ। হকচকিয়ে গেল মেয়েটা। ডানে তাকিয়ে দেখতে পেল নীতি। ওর দিকে দাঁত কেলিয়ে হাসছে।

” কি বোনু? একশো নয় তম ক্রাশকে গিলে খাওয়া হচ্ছে? ”

মিথ্যে রাগ প্রকাশ করলো মেয়েটা।

” হোয়াট ইজ গিলে খাওয়া? সুন্দর করে বল। বল ক্রাশকে দেখে বিমুগ্ধ হচ্ছিলাম। ”

নীতি সুরে সুরে ব্যঙ্গ করে বললো,

” ও রে আমার বিমুগ্ধ রে! দিনরাত কতবার বিমুগ্ধ হস, হা? তোর তো আবার বিমুগ্ধ হওয়ার লোকের অভাব নেই। আজ রণবীর সিং, কাল আরমান মালিক, তো পরশু রণবীর কাপুর। এখন আবার দেশীয় প্রোডাক্ট ইরহাম চৌধুরী। ”

ইরহামের ফটোতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে হৃদি বলে উঠলো,

” তাতে তোর কি রে! সুন্দর পুরুষে ক্রাশ খাওয়া মেয়েদের জন্মগত অধিকার। ”

” বুইন আমার। তোর এই নয়া অধিকার সম্পর্কে মানবাধিকার কমিশন এখনো জানে না। তাগোও তো জানা দরকার যে হৃদি শেখ নামক এক ক্রাশ পা’গলী নয়া অধিকার আবিষ্কার করছে। ”

ভেংচি কাটলো মেয়েটা। তা লক্ষ্য করে হাসলো নীতি। সে মুহূর্তে বাহির হতে শোনা গেল ফারহানা’র কণ্ঠস্বর।

” হৃদি, নীতি। তোরা কোথায়? খেতে আয়। ”

চাচির কণ্ঠ শুনে তড়িৎ উঠে বসলো নীতি। হৃদির পিঠে চাপড় মে রে বললো,

” ওই মাইয়া ওঠ। চাচি খেতে ডাকছে। না গেলে ক্রাশের বদলে ধুমতানা মা’ইর খাওয়া লাগবে। ওঠ ওঠ। ”

বিরক্ত হয়ে ল্যাপটপের শাটার অফ করে উঠে বসলো হৃদি।

” শান্তিতে ক্রাশকে দেখতেও দেয় না। ধ্যাৎ! ”

দু বোন কক্ষ ত্যাগ করে ডাইনিং এ পা বাড়ালো।

বদ্ধ দ্বার ঠেলে অন্ধকারে নিমজ্জিত কক্ষে প্রবেশ করলো ক্লান্ত মানব। সুইচবোর্ড স্পর্শ করে আলোকিত করলো গোটা কক্ষ। ধীরপায়ে এগিয়ে গেল ড্রেসিং টেবিলের সামনে। বাঁ হাত নামিয়ে রিস্ট ওয়াচ, পকেট হতে মোবাইল-ওয়ালেট বের করে রাখলো। অতঃপর রিমলেস চশমা খুলে রাখলো। পাঞ্জাবির বোতাম উন্মুক্ত করতে করতে পা বাড়ালো কাবার্ড এর দিকে। হঠাৎ থমকে গেল। পিছু ঘুরে তাকালো ইরহাম। বিছানার এক পাশে রাখা মোড়কে আবৃত বক্স। বক্সটি দেখেই ভ্রু যুগল কুঞ্চিত হলো। পাঞ্জাবির বোতাম সবগুলো উন্মুক্ত করে পা বাড়ালো সেদিকে। বিছানার ওপর থাকা বক্সটি হাতে নিলো। প্রেরকের নামহীন পার্সেল দেখে বদল এলো চেহারায়। হঠাৎই বক্স হাতে কক্ষে অবস্থিত ছোটখাটো বিন এর দিকে এগিয়ে গেল। বক্সটি ফেলে দিলো বিন এ। অতঃপর কাবার্ডের ধারে অগ্রসর হলো। পোশাক নিয়ে পা বাড়ালো ওয়াশরুমের পানে।

দিবাবসুর দীপ্তিতে উজ্জ্বল বসুধা। লিভিং রুমে টিভির পর্দায় ধ্যান জ্ঞান একত্রিত করে বসে মালিহা। বিপরীত দিকের সোফায় বসে মোবাইল স্ক্রল করছে ইনায়া। হঠাৎই মালিহা ভিন্ন অবতার ধারণ করলেন। অতি দুঃখে জর্জরিত হয়ে বলতে লাগলেন,

” বিবাহযোগ্য এক বাচ্চার বাপ হয়ে ঋদ্ধিও বিয়ে করে ফেলছে। করলো না শুধু আমার ইরু। এই দুঃখ নিয়ে বুড়ো বয়সে কোথায় যাই? তবে কি আমার কপালে পুত্রবধূর সেবাযত্ন লেখা নাই? ”

ইরহাম চুলে হাত বুলিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নামছিল। মায়ের কথাবার্তা ঠিক কানে পৌঁছাচ্ছে। তবুও সে কোনোরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলো না। চুপচাপ নামতে লাগলো। তবে ইনায়া চুপ থাকতে পারলো না। কিঞ্চিৎ বিস্মিত কণ্ঠে প্রশ্ন করে বসলো,

” ঋদ্ধি? এ আবার কে? চেনা পরিচিত কেউ? ”

” আরে ঋদ্ধি। আমাদের ঋদ্ধি। ”

” আরে মা কোন ঋদ্ধি? চিনতে পারছি না তো। ”

মালিহা অসন্তুষ্ট হয়ে বললেন,

” চিনবি কি করে? দিনদুনিয়ার কোনো খোঁজখবর রাখিস? ”

ইনায়া ছোট ছোট চোখ করে মায়ের পানে তাকালো। এতে মালিহা মুখ খুললেন।

” ঋদ্ধিকে চিনলি না? আরে ঋদ্ধিমান সিংহ রায়। গাঁটছড়ার হিরো। ”

হতবিহ্বল ইনায়া! মায়ের পানে বি-স্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে। শেষমেষ গাঁটছড়া সিরিয়ালের হিরোর সাথে ভাইয়ার তুলনা? ভাইয়া শুনলে তো..! ইনায়া আশপাশে সতর্ক দৃষ্টিতে তাকালো। ইরহাম নেই। এসব অহেতুক কথাবার্তা শোনার মতো সময় তার নেই। সে নিজ গন্তব্যে বেরিয়ে পড়েছে। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো মেয়েটা। ভাগ্যিস ভাইয়া কিছু শোনেনি। নাহলে কি যে বলতো!

আঁধারে নিমজ্জিত চারিদিক। কর্ম ব্যস্ততা সেরে ঘরে ফিরছে মানুষজন। রায়হান সাহেব এবং ছোট ভাই রাশেদ সাহেবও ফিরে এলেন। রাতের ভোজন সম্পন্ন করে দু ভাই কথা বলছিলেন লিভিং রুমে। সে মুহূর্তে সেথায় উপস্থিত হলো রাঈশা। রায়হান সাহেবের উদ্দেশ্যে বললো,

” আব্বু কিছু কথা বলার ছিল। ”

চলবে.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here