পাত্র বেশে নিজের অন্যতম ক্রাশকে দেখে বিমূঢ় হৃদি! তার অবাধ্য নয়ন জোড়া বারংবার নিবদ্ধ হচ্ছে সম্মুখে বসে থাকা মানবের পানে। সে কি স্বপ্ন দেখছে! নাকি এটাই বাস্তব! বারকয়েক আঁখি পল্লব ঝাপটালো মেয়েটা। নিশ্চিত হলো সে ভুল নয়। মানুষটি সত্যিই উপস্থিত। বিষয়টি উপলব্ধি হতেই পুলকিত হলো তনুমন। র’ক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়লো কপোলদ্বয়ে। নেহাত গুরুজনরা উপস্থিত। নয়তো এতক্ষণে খুশিতে আত্মহারা হয়ে একদফা নৃত্যকলা হয়েই যেতো। কোনোরূপ নিজেকে সংযত করে নিলো মেয়েটা। পিছলে যেতে উদ্যত শাড়ির আঁচল টেনে কৃষ্ণকালো কেশ অনেকাংশে আবৃত করে নিলো। জোরপূর্বক বসে রইলো অবনত মস্তকে। পাত্রের ঠিক বাঁ পাশেই বসে ছোট বোন ইনায়া। প্রসন্ন চিত্তে মেয়েটা বড় ভাইয়ের কানে ফিসফিসিয়ে বললো,
” ভাইয়া! ভাবিকে দেখতে খুব সুন্দর তাই না? মাশাআল্লাহ্! আমার তো খুউব পছন্দ হয়েছে। ভাবী হিসেবে একেই কনফার্ম করলাম। ”
ইরহাম অসন্তুষ্ট চাহনিতে বোনের পানে তাকালো। ক্ষীণ স্বরে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
” বিগড়ানো মেজাজ আর বিগড়ে দিস না। ওকে? ”
ভাইয়ের কথায় খুশি হতে পারলো না ইনায়া। আশানুরূপ জবাব না পেয়ে সবার অলক্ষ্যে ভেংচি কেটে দিলো। অতঃপর তাকালো হৃদির পানে। মাশাআল্লাহ্! ভাবী তার খুব পছন্দ হয়েছে।
মালিহা উৎফুল্ল ভাব লুকিয়ে একপ্রকার স্বাভাবিক কণ্ঠে রায়হান সাহেবকে বললেন,
” ভাই সাহেব। আমরা তো হৃদি মা’কে দেখলাম। কথা বললাম। এবার যদি ছেলেমেয়েরা একটু আলাদা ভাবে কথা বলে তাহলে ভালো হয়। বুঝতেই পারছেন এখনকার ছেলেমেয়ে এরা। ওদের চিন্তাভাবনা আবার ভিন্ন। নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলে বোঝাপড়া করে নিলে ভালো হয়। ”
রায়হান সাহেব এহেন প্রস্তাবে সম্মত হলেন।
” জ্বি নিশ্চয়ই। রাঈশা! ”
বড় কন্যা রাঈশা পিতার ইশারা বুঝতে সক্ষম হলো। পাত্র এবং ছোট বোনকে নিজের সঙ্গে আসার জন্য অনুরোধ করলো। ইরহাম বিরক্তিকর চাহনিতে মায়ের পানে তাকালো। মালিহা ইশারায় ভুংভাং বুঝিয়ে কোনোমতে সামাল দিলেন। অনিচ্ছা সত্ত্বেও সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো ইরহাম। হৃদিও উঠে দাঁড়ালো। শাড়ি পড়ে হাঁটা মুশকিল। কোনোমতে বাঁ হাতে কুঁচি সামলে হাঁটতে লাগলো। রাঈশার পথ অনুসরণ করে দু’জনে পৌঁছে গেল ফ্লাটের সবচেয়ে বড়, সুন্দর, গোছানো বেলকনিতে। দেশী বিদেশী বিভিন্ন ফুলের সমারোহ সেথায়। মন মাতানো গন্ধে পুলকিত অন্তর। একটি ছোট বেতের সোফা এবং গোলাকার ক্ষুদ্র টেবিল রাখা সুন্দর কায়দায়। রাঈশা ওদের দু’জনকে কথা বলার সুযোগ দিয়ে প্রস্থান করলো। শুভ্র পাঞ্জাবির পকেটে দু হাত গলিয়ে বাহিরে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো ইরহাম। তার মধ্যে আলাপচারিতা করার কোনো লক্ষণ শোভা পাচ্ছে না। একটিবারের জন্য পূর্ণ দৃষ্টিতে মেয়েটির পানে তাকায়নি অবধি। নীরবে অতিবাহিত হলো দু মিনিট। এতেই হাঁপিয়ে উঠলো হৃদি। এতটা সময় ধরে সে নীরব ছিল! এ যে অবিশ্বাস্য, অত্যাশ্চর্য কাণ্ড! ‘ ওরা সাতজন ‘ এর বাকিগুলো জানতে পারলে পা ক্কা হুঁশ হারাতো। বড় শ্বাস ফেলে নিজেকে ধাতস্থ করলো মেয়েটি। উজ্জ্বল মুখশ্রীতে বললো,
” হাই! আ’ম হৃদি। হৃদি শেখ। নাম তো শুনা হি হোগা? তাই না? ”
রিমলেস চশমার আড়ালে কেমন অদ্ভুত চাহনিতে তাকালো ইরহাম। মেয়েটা বত্রিশ দাঁত কেলিয়ে হাসছে। ইরহাম দৃষ্টি সরিয়ে পুনরায় বাহিরে তাকালো। হৃদি নিজের মতো বলে গেল,
” আপনি বোধহয় আমায় চেনেন না। তাতে কি হয়েছে? আমি আপনাকে ফুল্টু চিনি। বলতে পারেন আপনার গোটা ইনফরমেশন আমার মগজে ব ন্দী। অনায়াসে সুপার ডুপার হিট একখানা বায়োপিক বানিয়ে ফেলতে পারবো। খুব বেশিই ট্যালেন্টেড কিনা! ”
কেমন গর্বিত ভঙ্গিতে বাক্যটি সমাপ্ত করলো হৃদি। ইরহাম রীতিমতো স্তব্ধ! কেউ কি করে এত বকবক করতে পারে! তা-ও অজানা অচেনা একজনের সঙ্গে? প্রথম সাক্ষাতে এ-ও সম্ভব?
.
বেলকনি সংলগ্ন করিডোরে বড় বোন নীতির হাত ধরে একপ্রকার টানাহেঁ’চড়া করছে নিদিশা। গন্তব্য বেলকনি। অনুনয়ের স্বরে নিদিশা বলে উঠলো,
” আপু। এই আপু। চল না। ”
নীতি হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
” তুই কি রে? হৃদি ওদিকে ওর হবু কিংবা না হবু জনের সাথে কথা বলছে। সেখানে তুই গিয়ে কি করবি? আঁড়ি পাতবি? ”
দাঁত বের করে হাসলো নিদিশা। অর্থাৎ হ্যাঁ। সে এহেন উদ্দেশ্যেই যেতে ইচ্ছুক। নীতি আপত্তি জানালো।
” নো ওয়ে। আমি এসবে নেই। চাচু জানলে ফ্রি তে উপদেশ দেবে। আমি বাপু এসবের মধ্যে নেই। তুই গেলে যা। ”
বড় বোনের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া না পেয়েও দমে গেল না নিদিশা। নীতি সেথা হতে প্রস্থান করতেই সে চুপিসারে অগ্রসর হলো বেলকনির পানে।
.
” আচ্ছা আমি যে আপনাকে চিনি। এতকিছু জানি। জিজ্ঞেস করবেন না এসব কি করে সম্ভব? হুঁ হুঁ? ”
ভ্রু নাচিয়ে শুধালো হৃদি। ইরহাম এতক্ষণে মুখ খুললো। ওর পানে তাকিয়ে একটাই শব্দ উচ্চারণ করলো শুধু,
” টকেটিভ। ”
হৃদি একটু ভাব নিয়ে বললো,
” সবাই এটাই বলে। নতুন কিছু বললে খুশি হতাম। ”
” ওকে। তাহলে নতুন কিছু বলেই ফেলি। ”
” হুম। হুম। বলুন। বলুন না। ”
কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে মেয়েটা। এতক্ষণে মানুষটা মুখ খুলেছে। কি বলতে চাইছে? নিশ্চয়ই ভালো কিছু? স্বল্প দূরত্বে পিলারের আড়ালে আরো একজন উপস্থিত। নিদিশা। সে-ও শুনতে উদগ্রীব।
•
পাত্রপক্ষ আতিথেয়তা গ্রহণ করে প্রস্থান করেছে কিয়ৎক্ষণ পূর্বে। পরিবারের সদস্যরা যে যার কক্ষের দিকে ধাবিত হচ্ছে। শাড়ি পড়ে বেজায় শ্রান্ত রমণী গুটিগুটি পায়ে নিজ কক্ষে প্রবেশ করলো। আলগোছে কেশে জড়িয়ে থাকা ঘোমটা গড়িয়ে পড়লো পৃষ্ঠে। আকস্মিক শ্রান্ত মুখশ্রীতে পরিবর্তন এলো। খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠলো মেয়েটা। দু হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে পা”গলাটে রূপে নৃত্য করতে লাগলো।
” মনটা করে উড়ু উড়ু.. ”
লাফালাফির সংমিশ্রণে সে এক পা’গলাটে কাণ্ড। ইরহাম কিংবা পাত্রপক্ষ দেখলে নির্ঘাত চেতনা হারাতো। নৃত্যরত পা’গলী এক পর্যায়ে শাড়িতে পা পেঁচিয়ে ভীষণ বেকায়দায় বিছানায় পড়ে গেল। বক্ষস্থলে ভর ছেড়ে দিলো পুরোপুরি। লাফালাফি করে ঘন শ্বাস পড়ছে। অধরে লেপ্টে খুশির ছোঁয়া। এলোমেলো শাড়ির প্রতিটি ভাঁজ। স্বেদজল উপস্থিত মুখশ্রী, গলদেশে। হাঁপাতে হাঁপাতে মেয়েটা হেসে উঠলো। সোজা হয়ে শুলো। হাতের নাগালে থাকা মুঠোফোনটি নিয়ে অ্যাক্টিভ হলো অনলাইনে। মেসেজ পাঠালো ‘ ওরা সাতজন ‘ এর মেসেঞ্জার গ্রুপে।
” দোস্তগণ! আজকে এক চরম আশ্চর্যান্বিত কাণ্ড ঘটেছে। আন্দাজ কর তো কি হতে পারে? ”
অনলাইনে ছিল বন্ধুমহলের কয়েকজন। তৎক্ষণাৎ রিপ্লাই দিলো আফরিন,
” কি হইছে বান্দুপি? পোলা না মাইয়া? ”
হৃদি জবাবে লিখলো, ” বিয়া শাদির খবর নাই। তুই এরমধ্যে মা বানাই দিলি আফু! এগ্লা কিন্তু আমার মতো সিঙ্গেলা জনগন্সের প্রতি অন্যায় অবিচার। ”
আফরিন হাসির ইমোজি দিলো দু’টো। সাবিত মেসেজ পাঠালো,
” ওই চু ন্নি! কি হইছে বল। অত ভনিতা না করে সোজাসুজি লাইনে আয়। অত আন্দাজ আপনা আপনা করার টাইম নাই কা। ”
হৃদি লজ্জা পাওয়ার ইমোজি দিলো বড় করে। নাদিরা লিখলো,
” ওরে লজ্জাবতী রে। লজ্জা রাখ আর বল কি হইছে। ”
হৃদি আরো দু’টো লজ্জা পাওয়ার ইমোজি দিলো। সাবিত এবার রাগান্বিত ইমোজি দিলো। হৃদি এ দেখে হেসে উঠলো। মেসেজ পাঠালো,
” আমি না আজকে… ”
নাদিরা প্রশ্ন পাঠালো,
” আজকে কি? ”
” আজকে.. আমার ওয়ান অফ দ্যা ক্রাশকে সামনাসামনি একেবারে ফেস টু চেহারা দেখছি। ”
আফরিন অবাক হওয়ার ইমোজি পাঠিয়ে লিখলো,
” কিহ্? সত্যি বলছিস? ”
সাবিত লিখলো,
” বাই দ্যা চৌরাস্তা। কোন বেডারে দেখছোছ? হেতি কেডা? কয় নম্বর ক্রাশ? তোর তো আবার বাজার লিস্টের চেয়েও লম্বা কেরোসিনের লিস্ট। ”
হৃদির রাগ হলো এমন চরম সত্য শুনে। সে লিখলো,
” বে দ্দ প। জানিস না মুখের ওপর সত্যি বলতে নাই? ”
” মুখের ওপর বললাম কই? মেসেজ দিলাম তো। ”
আফরিন মেসেজ দিলো,
” ফা’লতু কথা বাদ দে তো। এই হৃদি! তুই নামটা বল না। সত্যি বলবি কিন্তু। কারে দেখছোছ? বল। ”
হৃদি লজ্জা পাওয়ার ইমোজি সহকারে রিপ্লাই দিলো,
” ইরহাম চৌধুরী! ”
অতঃপর! বো মা এক ফা’টিয়ে অফলাইনে চলে গেল হৃদি। ওদিকে নিশ্চয়ই এখন তোলপাড় আরম্ভ হয়েছে! প্রকৃত ঘটনা জানতে উদগ্রীব ‘ ওরা সাতজন ‘ এর কুচুপু গুলো। সে ভেবেই মজা পাচ্ছে মেয়েটা। ওসব ভাবনা ত্যাগ করে এখন ইরহামে মগ্ন হলো। সে এখন বেশ চমকিত-পুলকিত ক্রাশকে দেখে! ভুলেই গিয়েছে আজ এ বাড়িতে ক্রাশের আগমনের মূল হেতু। বিয়েশাদী বিষয়টি মনে আছে কি? মোটেও নেই। তাই তো এত নিরুদ্বেগ সে।
•
আঁধারিয়া রজনী। ‘ আনন্দাঙ্গন ‘ এর লিভিং রুমে সোফায় পাশাপাশি বসে শাশুড়ি বৌমা। সত্তরোর্ধ বৃদ্ধা রাজেদা খানম ভ্রু কুঁচকে শুধোলেন,
” কি বউ? খুশিতে তখন থে আকডুম বাগভুম করতাছো। মাইয়া এত পছন্দ হইছে? ”
মালিহা প্রসন্ন হৃদয়ে বললেন,
” হাঁ মা। হৃদি মেয়েটা দেখতে মাশাআল্লাহ্! দেখতে যেমন সুন্দর কথাবার্তার ধরনও তেমন। খুব মিষ্টি করে কথা বলে। শুনলে মনে হয় আরো শুনি। ওকে আমার ইরু’র সঙ্গে খুব মানাবে। ”
” তয় হুনলাম মাইয়া নাকি বেশি ছোডো? তোমার পোলা তো আধ দা”মড়া হইয়া গেছেগা। এহন শেষমেষ কচি মাইয়া আনবা? ”
মালিহা জিভ কাটলেন তৎক্ষণাৎ।
” ইশ্ মা! এসব কি বলছেন? আমার ইরু’র কতইবা বয়স? সবে ত্রিশ। ”
রাজেদা খানম তীক্ষ্ণ চাহনিতে তাকিয়ে বললেন,
” হপায় তিরিশ! বয়সের কালায় বিয়া করলে অ্যা দ্দি নে চাইর বাচ্চার বাপ থাকতো। ”
সশব্দে হেসে উঠলো ইনায়া। লিভিং রুমে এসে দাদির মজাদার জোকস্ শুনে ওর হাসি থামতে নারাজ। হাসতে হাসতে দাদির পাশে বসলো। হাসির দমকে কথা আঁটকে আসছে।
” দাদি গো তুমি যা বললে না! সেটা যদি মায়ের ইরু বেপ্পি শোনে অন দ্যা স্পট চিৎপটাং! হা হা হা। ”
মালিহা শব্দ করে হেসে উঠলেন। দাদি বিরক্ত হয়ে বললেন,
” পটাং হইবো ক্যা? আমি কি ভুল কইছি? তিরিশ বছরের দা*মড়া পোলা। এহনো বিয়া করমু না করমু না ভজন গাইতে থাহে। ”
ইনায়া কোনোমতে হাসি থামাতে সক্ষম হলো। বললো,
” কি যে বলো না দাদি। ধরো ভাইয়া চার বাচ্চার বাপ। তোমার কথামতো, ঠিক আছে? তাহলে বিয়ে করলো কত বছরে? উম্? বিশ! তাহলে ভাবীর বয়স কত ছিল? দশ? ও এম এ! ”
হাসতে হাসতে ইনায়ার অবস্থা বেহাল। মেয়েটা পেট চেপে হেসে সোফায় লুটোপুটি খাচ্ছে। রাজেদা খানম মুখ বেঁকিয়ে পান চিবোতে লাগলেন। এসব অহেতুক হিসাবনিকাশের উনি ধার ধারেন না। আস্ত এক আধ দা*মড়া! এত হিসাব কষলেই কি তা পরিবর্তন হয়ে যাবে?
•
আঁধারে ঘনিভূত কক্ষ। বিছানার ঠিক মধ্যিখানে উপুড় হয়ে শুয়ে দীর্ঘকায় এক মানব। দেহের ঊর্ধ্বভাগ তার অনাবৃত। কটি’র ধারে পড়ে রয়েছে পাতলা কাঁথা। গভীর নিদ্রায় বুঁজে আঁখি যুগল। নীরবতা ভেদ করে সহসা শব্দ ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো কক্ষ জুড়ে। হালকা হলো নিদ্রা ভাব। আঁখি বুঁজে বিছানার ডান পার্শ্বে থাকা অ্যালার্ম ক্লক ছুঁলো ইরহাম। বন্ধ করলো অ্যালার্মের কৃত্রিম ধ্বনি। কর্ণ কুহরে পৌঁছাতে লাগলো আযানের সুমধুর বার্তা। মহান রবের মহত্ত্ব প্রকাশের ধ্বনি। আস্তে ধীরে ডান কাত হয়ে শুলো মানুষটি। ভঙ্গ হলো নিদ্রা। আযান শেষে ঠোঁট নাড়িয়ে নিঃশব্দে আযানের দোয়া পাঠ করলো। অতঃপর আরামের নিদ্রা ত্যাগ করে উঠে বসলো বিছানায়। পাঠ করলো ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার দোয়া। দেয়ালঘড়িতে একবার চোখ বুলিয়ে হাই তুললো। পদযুগল স্পর্শ করলো মেঝে। বিছানা ত্যাগ করে অদক্ষ ভঙ্গিতে কাঁথা ভাঁজ করে যথাস্থানে রেখে দিলো। তোয়ালে নিয়ে অগ্রসর হলো ওয়াশরুমে।
সমতল আরশির সম্মুখে দাঁড়িয়ে ইরহাম। দু হাত গলিয়ে দেহে জড়িয়ে নিলো সফেদ পাঞ্জাবি। নিম্নে একই রঙা পাজামা। ডান হাতে স্বল্প সিক্ত চুলগুলো পেছনে ঠেলে টুপি পরে নিলো। অতঃপর বাঁ হাতে ঘড়ি পড়ে মোবাইল, ওয়ালেট পকেটে গলিয়ে প্রস্থান করলো কক্ষ হতে। উদ্দেশ্য জামায়াতে সালাদ আদায়।
•
সুবাহের মিঠি রৌদ্রে উজ্জ্বল বসুধা। পুষ্প সুরভিত বাগানে ছুটে বেড়াচ্ছে উচ্ছ্বল রমণী। উদ্দেশ্য তার প্রিয় ছানাকে আয়ত্ত্ব করা। শুভ্র তুলতুলে শরীরের ছানাটা অসংখ্য বৃক্ষের মাঝে সর্বোচ্চ গতিতে ছুটে চলেছে। পিছু পিছু হৃদি। জোরে জোরে ডেকে চলেছে,
” পকি! পকি থাম। অ্যাই পকি! দাঁড়া বলছি। দাঁড়া দুষ্টু।”
পকি শুনলে তো? ক্ষুদ্র শরীর নিয়ে ছুটে চলেছে। তবে বেশিক্ষণ তা স্থায়ী হলো না। হৃদির হাতে বন্দী হলো পকি। পকিমন। তুলতুলে পশমে হাত বুলিয়ে মাথায় চুমু এঁকে দিলো হৃদি।
” আমার দুষ্টু পকি। আমাল ছোনা বাবুতা। মা’কে এভাবে কেউ দৌড় করায়? হুঁ? ”
বিড়াল ছানা জবাব দিলে তো? সে যে মূক। শুধু আদুরে স্বরে ডেকে উঠলো,
” ম্যাঁও! ”
” ও লে লে। ”
হৃদি বিড়াল ছানাকে আদরে আদরে সিক্ত করে তুলছিল। ঠিক সে মুহূর্তে কর্ণ কুহরে পৌঁছালো,
” ভার্সিটিতে পড়ে এতটাই লা’য়েক হয়ে গেছিস যে বিয়ের মতো পবিত্র বন্ধন নিয়ে ছেলেখেলা শুরু করেছিস? ”
#মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#সূচনা_পর্ব
[ আসসালামু আলাইকুম পাঠকবৃন্দ। ছোটোখাটো বিরতি শেষে ফিরে এলাম নতুন কাহিনী নিয়ে। ইরহাম এবং হৃদি’কে নিয়ে নয়া প্রণয় কাহন। পূর্ববর্তী কাহিনী সমূহ হতে এটি ভিন্ন ঘরানার কাহিনী হতে চলেছে। ধীরে ধীরে তা উপলব্ধি করতে পারবেন। প্রথমবারের মতো এ ঘরানায় লিখছি। আশা করি ভালো লাগবে। এটি উপন্যাস আকারে প্রকাশিত হতে চলেছে। বিনোদনের উদ্দেশ্যে কাল্পনিক চরিত্রসমূহ এবং ঘটনা নিয়ে রচিত। আশা করি কেউ বাস্তবতার সাথে মেলাতে গিয়ে বিভ্রান্ত হবেন না।
তো পাঠক বন্ধুরা চলবে কি ‘ মনের অরণ্যে এলে
তুমি ‘? ]