মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি #দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ #তাহিরাহ্_ইরাজ #পর্ব_২১ [ প্রাপ্তমনস্কদের জন্য ]

0
413

#মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_২১ [ প্রাপ্তমনস্কদের জন্য ]

” হ্যান্ডসাম বরের বিরহে কাতর হয়ে হৃদিপু’র এই অস্থিরতা। দুঃখ ভারাক্রান্ত অবস্থা। কি আপু? ঠিক বলেছি না? ”

নিদিশা ভ্রু নাচিয়ে মিটিমিটি হাসছে। হতবিহ্বল হৃদি! যতই সত্য হোক না কেন ছোট বোন ও ননদের সামনে তো সত্যিটা স্বীকার করা সম্ভব নয়। কেমন লজ্জাজনক বিষয়! তবে কথাটি শতভাগ সত্যি। আসলেই তো। সে বড্ড মিস্ করছে তার স্বামীকে। নিজের অর্ধাঙ্গকে। আজ সারাটা দিন পেরিয়ে ধরণীতে আঁধার নেমে এলো। একটিবারের জন্যও দেখা মেলেনি মানুষটির। কোথায় রয়েছে সে। কেমন আছে। জানা নেই। উদ্ধার করার সময় ঝাঁপসা চোখে সে-ই যে এক পলকের দেখা। এরপর আর দেখা মেলেনি। কে জানে কোথায় আছেন উনি, কি করছেন। কোনোভাবে উনি রেগে নেই তো ওর ওপর! কিংবা বিদ্বেষ! না না। এ হতে পারে না। ইরহাম অমন মানুষ নয়। সে একজন বুদ্ধিদীপ্ত, ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন পুরুষ। স্ত্রী অপ:হৃত হয়েছে বলে তাকে ঘৃণা করবে, মুখ ফিরিয়ে নেবে অমন কাপুরুষ নয়। নিশ্চয়ই উনি ব্যস্ত রয়েছেন। শীঘ্রই ফিরবেন। দেখা দেবেন ওর সঙ্গে। নিজেকে নিজেই আশার বাণী শোনালো হৃদি। হঠাৎ ভাবনায় ছেদ পড়লো ইনায়ার কণ্ঠে। ইনু ওর ডান হাতটি মুঠোয় পুরে নিয়েছে। চোখে চোখ রেখে কোমল স্বরে বললো,

” ভাইয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত আছে ভাবী। ঘন্টাখানেকের মধ্যে ফিরে আসবে। ততক্ষণ তুমি একটু বিশ্রাম নাও। প্রেশার নিয়ো না। কেমন? ”

ম্লান বদনে ইতিবাচক মাথা নাড়ল হৃদি। স্বামী নামক মানুষটির কথা বড্ড বেশিই মনে পড়ছে। তাকে একপলক দেখার জন্য তৃষ্ণার্ত চক্ষু জোড়া। কখন ফিরবে সে! ইনায়া ও নিদিশা একে অপরের পানে তাকালো। দু’জনের চোখেমুখে পরিলক্ষিত হচ্ছে চিন্তার ছাপ। আজ দেশজুড়ে যা ঘটেছে তাদের অজানা নয়। তাই তো ভয় হানা দিয়েছে অন্তরে। কি জানি কি হবে।
.

আঁধারিয়া রজনী। ফারহানা বেডে বসে। ওনার কোলে মাথা এলিয়ে হৃদি। নিদ্রায় মগ্ন মেয়েটি। বন্ধুরা দেখাসাক্ষাৎ করতে এসেছিল ঘন্টা দেড়েক পূর্বে। কয়েক দিনের বিচ্ছেদ। তাতেই মনে হচ্ছে কত যুগ ধরে দেখা মেলেনি। প্রিয় বান্ধবীর অবস্থা স্বচক্ষে অবলোকন করে বন্ধুরা বেশ দুঃখ পেল। কি অবস্থা হয়েছে তাদের হৃদুর! চোখমুখ শুকিয়ে গেছে। শরীরের অবস্থা নাজুক। চেনা মেয়েটিকে কেমন অচেনা লাগছে। শোকর আলহামদুলিল্লাহ্ ও বিপদমুক্ত। কোনো বড়সড় অঘটন ঘটেনি। ভালো আছে তাদের সখী। দেখাসাক্ষাৎ এর পর কুশল বিনিময়। এরপরের সময়টা কাটলো চমৎকার! বন্ধুরা মিলে পরিবেশটা ঠিক স্বাভাবিক করে নিলো। খুনসুটিতে কখন যে সময় কেটে গেল টেরও পেল না ওরা। সে মুহূর্তে কেবিনে এলেন ফারহানা। বসলেন মেয়ের পাশে। উনি এবং আফরিন দু’পাশ হতে হাত ধরে দুর্বল শরীরের হৃদি’কে উঠে বসতে সহায়তা করলেন। আফরিন বান্ধবীকে বালিশে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিলো। কথোপকথনের ফাঁকে ফারহানা নিজ হাতে মেয়েকে রাতের খাবার খাইয়ে দিলেন। নৈশভোজ সেরে ওষুধ খেল হৃদি। দুর্বল শরীর। ভালো লাগছে না। কেমন অবসন্ন ভাব। আস্তে ধীরে মাথা এলিয়ে দিলো মমতাময়ী মায়ের কোলে। ফারহানা মলিন হেসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। এবার ঠিক আছে। শান্তি অনুভূত হচ্ছে। ভেতরকার অস্থিরতা সব ফুরুৎ। মা হলো সর্বোত্তম শান্তির স্থল। ইহজগতে তার কোনো তুলনা হয় না। অতুলনীয় শান্তির স্থলে মাথা রেখে বন্ধুদের সাথে টুকটাক কথা বলতে বলতে একসময় নিদ্রায় তলিয়ে গেল হৃদি। দীর্ঘশ্বাস ফেললো বন্ধুরা। তাদের হৃদু কতটা দুর্বল হয়ে পড়েছে! ঘড়ির কাঁটা নয়ের ঘরে পৌঁছাতেই ঘুমিয়ে পড়েছে। অথচ এই মেয়েই বিয়ের আগে একদা নিশাচর প্রাণীর ন্যায় রাত জেগে থাকতো। আজ সবই অতীত। আফরিন, নাদিরা, সাবিত ওরা সবাই ফারহানার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সেথা হতে প্রস্থান করলো। অনেক রাত হয়ে গেছে। এবার ফিরতে হবে। ঘুমন্ত বন্ধুকে আর শুধু শুধু ঘুম থেকে তুললো না। নীরবে চলে গেল।

.

নিস্তব্ধ পরিবেশ। উপস্থিত দশজনের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। দরদর করে স্বেদজল গড়িয়ে পড়ছে চিবুক বেয়ে গলদেশে। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা লোপ পেয়েছে। পরাজিত তারা স্নায়ু যু-দ্ধে। চোখের তারায় দৃশ্যমান এক আগ্রা:সী দা’নবের সর্বগ্রা”সী অবতার। হিসহিসিয়ে হু’ঙ্কার ছাড়ছে সে দা’নব। পেশিবহুল দু হাত ফুলেফেঁপে উঠেছে। রগ চামড়া চিঁ’ড়ে বেরিয়ে আসার উপক্রম। প্রশস্ত বুকের পাটা ঘনঘন ওঠানামা করছে। ক্ষি”প্ততা প্রকাশ পাচ্ছে অবয়বে। চিতার ন্যায় অগ্নিতেজা পদযুগল ফেলছে জমিনে। আঁতকে উঠছে সমান্তরাল রেখার ন্যায় এক লাইনে দণ্ডায়মান তারা দশজন। অকস্মাৎ! অকল্পনীয় ক্রো ধে ফেটে পড়লো রুদ্রনীল। বাঁ পাশেই ছিল গোলাকার ছোট্ট টেবিল। সেথা হতে তুলে নিলো রি-ভলবার। ‘ .ফোর ফোর ম্যাগনাম ‘ রি-ভলবার হতে নিঃসৃত একেকটি ম-রণঘাতী বু:লেট বি”দ্ধ হলো পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকা তিন জনের মাথায়। র:ক্তের ফোয়ারা সিক্ত করলো পাশে উপস্থিত সঙ্গীদের। ভয়ে-আতঙ্কে ছিটকে সরে গেল সাতজন। মেঝেতে লুটিয়ে পড়লো তিন তিনটে নিথর দেহ। হিসহিসিয়ে ক্রো ধ প্রকাশ করলো রুদ্রনীল,

” বাস্টা* ! ”

তর্জনীর সাহায্যে ছোট্ট এক ইশারা। তৎক্ষণাৎ র-ক্তাক্ত নিথর দেহ এবং জায়গাটি সাফ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো সাতজন। রি:ভলবারের তপ্ত মুখ দিয়ে ললাট কার্নিশ হালকা করে চুলকে নিলো‌ রুদ্রনীল। বিড়বিড়িয়ে আওড়ালো,

” ইরহাম চৌধুরী! ”

হ্যাঁ। ওই একটি নাম ই তাদের জীবনে বিচ্ছিরি কাঁটার ন্যায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। দু’দিনের চুনোপুঁটি কিনা এতবড় দুঃসাহস দেখালো! দেশের পাবলিক ফিগার ছয়জনকে কারাগারের কালো অন্ধকারে পাঠালো! বাংলার মাটিতে আজ তুফানি ঝড় উঠলো দিনের আলোয়। কর্মব্যস্ত রুদ্রনীলের তা অজানা। রাতের আঁধারে এসে একজন খবর দিলো কি হয়েছে দিনভর। মুহুর্তের মধ্যেই অসুর ভর করলো দেহে। একটি অপরাধের শাস্তি পেল তিনজন। তবুও অন্তর্দাহ বিদ্যমান। ওই চৌধুরীর র:ক্তস্নান না করা অবধি মিটবে না এ জ্বালা। সে মেটাতে ইচ্ছুক নয়। জ্ব’লুক। জ্ব’লেপু’ড়ে হোক অঙ্গার। সময়মতো এই অ:গ্নুৎপাত ঠিক বি:স্ফোরিত হবে। অপেক্ষা শুধু সঠিক সময়ের। খন্দকার রুদ্রনীল মল্লিকের সঙ্গে টেক্কা দেয়া! ইয়্যু হ্যাভ টু পে ফর ইট চৌধুরী। ইয়্যু হ্যাভ টু।

.

ঘড়ির কাঁটা তখন এগারোর কাছাকাছি। উত্তপ্ত এক দিনের সমাপ্তি। সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে হাসপাতালে এলো ইরহাম। পড়নে এখনো সে-ই বাসি পোশাক। অবসন্ন চেহারা। বাড়ি গিয়ে সতেজ হবার ইচ্ছাটুকু নেই। ছুটে এসেছে প্রিয়তমার অভেদ্য টানে। ওয়েটিং জোনে এসে থমকালো ইরহাম। এজাজ সাহেব, রায়হান সাহেব এবং রাশেদ সাহেব বসে। ওর অপেক্ষায় ছিলেন কি? সেথায় ধীরপায়ে এগিয়ে গেল ইরহাম। এজাজ সাহেব ছেলেকে লক্ষ্য করে উঠে দাঁড়ালেন। তা দেখে দাঁড়ালেন বাকি দু’জন। মুখোমুখি পিতা পুত্র। মৃদু স্বরে ছেলের হালচাল জিজ্ঞেস করলেন এজাজ সাহেব,

” ঠিক আছো তো? ”

ইরহাম বিনা বাক্যে বসলো বিপরীত দিকের স্টেইনলেস স্টিলের ফোর সিট ওয়েটিং চেয়ারের একটিতে। সেথায় মাথা এলিয়ে দিলো। চোখ বুজে ক্লান্ত স্বরে বললো,

” আলহামদুলিল্লাহ্ আ’ম ফাইন। ”

” টিভিতে এসব কি দেখলাম? ”

” যা ঘটেছে তাই। ” বাঁকা জবাব ইরহামের।

এজাজ সাহেব অসন্তুষ্ট হয়ে বললেন,

” তোমার কোনো ধারণা আছে কি নিয়ে খেলছো তুমি? আগুন নিয়ে খেলছো। পু’ড়ে ছাই না হয়ে যাও। ”

চোখ মেলে তাকালো ইরহাম। বসলো সোজা হয়ে। বাবার মুখপানে তাকিয়ে নির্লিপ্ত স্বরে বললো,

” অগ্নি প্রতিরোধক পোশাক পড়ে খেলছি। ইনশাআল্লাহ্ সফলকাম হবো। ”

অপ্রসন্ন হলেন এজাজ সাহেব,

” যা করছো একদমই ঠিক করছো না। এখনো সময় আছে ইরহাম। পিছু হটে যাও। ”

দুর্বোধ্য রেখা ফুটে উঠলো ওষ্ঠপুটে। চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়লো ইরহাম। পাঞ্জাবির পকেটে পুরে নিলো দু হাত। দাঁড়ালো দক্ষিণ পশ্চিম মুখী হয়ে। আত্মপ্রত্যয়ী স্বরে বলে উঠলো,

” একটু একটু করে যে লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েছি তা থেকে ফিরে আসা অসম্ভব। হয় বীরের বেশে জয়লাভ করবো নইলে সগৌরবে ম:রণকে বরণ করবো। তবুও আমার দেশের মাটিকে কলুষতা মুক্ত করবো। ইনশাআল্লাহ্। ”

রায়হান সাহেব এহেন চমৎকার বাক্যে প্রসন্ন হলেন। তরুণ উদ্যমী এ দেহে দেশমাতৃকার প্রতি অগাধ ভালোবাসা। দেশকে কালো থাবা হতে রক্ষা করার স্পৃহা। তরুণ প্রজন্ম তো। এদের শিরায় শিরায় বহ্নি শিখা। যে শিখা জ্বা’লিয়ে পু’ড়িয়ে খাঁটি সোনায় রুপান্তরিত করবে এই বাংলা। উজ্জ্বল বদনে জামাতার পাশে এসে দাঁড়ালেন উনি। কাঁধ চাপড়ে প্রশংসা করলেন,

” আই অ্যাম প্রাউড অফ ইয়্যু মাই সান। ”

এজাজ সাহেব খুশি হতে পারছেন না। যে খেলায় মেতেছে ওনার পুত্র তা নিঃসন্দেহে প্রাণঘা:তী। মৃ ত্যু ঝুঁকি নব্বই শতাংশ। কি করে স্বেচ্ছায় একমাত্র ছেলেকে মৃ-ত্যুর মুখে ঠেলে দেবেন! উনি যে বাবা। বুকের ভেতরটা পু’ড়ে। বড় ভয় হয়।

.

আঁধারে নিমজ্জিত ঘর। চারিদিকে ভয়াল কুৎসিত হাতছানি। একটু একটু করে এগিয়ে আসছে লোলুপ দৃষ্টি। চোখেমুখে বি:ভীষিকাময় হাস্য আভা। মন্থর গতিতে ধোঁয়ার কুণ্ডলী হতে বেরিয়ে আসছে ওরা। একজন। দু’জন। তিনজন। অনেকজন। চেঁচিয়ে চলেছে মেয়েটা। তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে। আসবে না। কাছে আসবে না। তারা শুনলে তো! অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো ঘর। এগিয়ে এলো তারা। খুব নিকটে। নোংরা দু হাত ছুঁয়ে যেতে লাগলো নারী দেহের স্পর্শকাতর অংশ। চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো মেয়েটি। হাত-পা বাঁধা থাকায় নিজেকে রক্ষা করতে ব্যর্থ। কাঁদতে কাঁদতে নিজের সম্মানটুকু ভিক্ষা চাইছে। তন্মধ্যে শোনা গেল দুর্বল কণ্ঠে প্রতিবাদ,

‘ ছেড়ে দে ওদের। ছাড় বলছি। ওকে.. ওকে ‘

অকস্মাৎ শ্বাসকষ্ট আরম্ভ হলো। ছিটকে নিদ্রা হতে বেরিয়ে এলো হৃদি। ঘুমকাতুরে দু চোখ ছাপিয়ে অশ্রু বইছে। অস্থির ভাবে কাঁপছে বক্ষস্থল। সদ্য কেবিনে প্রবেশ করেছে ইরহাম। ভেতরে এসেই নজর কাড়লো অর্ধাঙ্গীর অস্থির রূপ। ঘুমের ঘোরে কাউকে ছেড়ে দেয়ার আকুতি। ত্বরিত বেডের কাছে ছুটে এলো ইরহাম।

” হৃদি! কি হয়েছে? হৃদি শুনতে পাচ্ছো? ”

ঘুম ভঙ্গ হয়েছে বটে। কিন্তু তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব এখনো বিদ্যমান। জাগতিক হুঁশ হারিয়ে স্বপ্নে বিভোর হৃদি। বারবার চিৎকার করে চলেছে। অসহায় মেয়েটিকে ছেড়ে দিতে বলছে। উল্টোপাল্টা ভাবে ছুঁড়ছে হাত-পা। যেকোনো মুহূর্তে আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে। অবস্থা বেগতিক দেখে ইরহাম দু হাতে ওর দুই বাহু ধরে ডাকতে লাগলো। এতে কাজ হচ্ছে না। পা”গলামি বেড়ে চলেছে। মানুষটি দ্রুত বেড সাইড টেবিল হতে পানি ভর্তি গ্লাস হাতে নিলো। প্রিয়তমার চোখেমুখে পানি ছিটিয়ে তাকে চেতন অচেতন অবস্থার মধ্য হতে উদ্ধার করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। এতে কাজ হলো। অস্থিরতা আস্তে ধীরে দূরীকরণ হলো। একটু একটু করে শান্ত হলো মেয়েটি। নির্জীব হয়ে পড়ে রইলো শুভ্র রঙা বিছানায়। অক্ষিকোল গড়িয়ে নামছে নোনাজল। বুকের ভেতর দুঃখ অনুতাপের পাহাড়। দুর্দিনের সে-ই মুহূর্তগুলো আজও স্বপ্নে তাড়া করে বেড়ায়। যন্ত্রণা দেয়। কবে মিলবে এসব হতে মুক্তি। সঙ্গী রূপে বন্দী মেয়েগুলোর আর্তনাদ যেন শ্রবণেন্দ্রিয়ে বি-ষ প্রয়োগের মতন জ্বা’লা করে‌। নিজেকে নিচ মনে হয়। তার সামনে মেয়েগুলো…! অধর কা’মড়ে ক্রন্দনে ভেঙে পড়লো হৃদি। এতে অস্থির হয়ে উঠলো স্বামী নামক মানুষটি। দ্রুত স্নেহময় হাত রাখলো স্ত্রীর মাথায়। আলতো করে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। অত্যন্ত কোমল-হৃদয়স্পর্শী স্বরে ডেকে উঠলো,

” হৃদি! ”

সে-ই চেনা কণ্ঠ। হৃদ সাম্রাজ্যের শাহেনশাহ উপস্থিতি। ভারিক্কি গম্ভীর স্বরে তাকে ডাকা। হুঁশ ফিরলো মেয়েটির। তৎক্ষণাৎ বাম পাশে তাকালো। লহমায় উজ্জ্বল হলো মুখশ্রী। ইরহাম! তার স্বামী দাঁড়িয়ে। সে এসেছে! দু চোখে তখন অশ্রুর ভীড়। ঝাপসা দৃষ্টিতে স্বামীর পানে অপলক তাকিয়ে রইলো হৃদি। নড়তে ভুলে গেল অক্ষিপল্লব। পাশে উপস্থিত মানুষটিও তখন একদৃষ্টিতে তাকিয়ে। থমকে গিয়েছে সময়। তারা বিভোর একে অপরেতে। কতটা সময় অতিবাহিত হলো জানা নেই। চোখের পলক ঝাপটালো হৃদি। অভ্যন্তরে মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো অভিমান। এতগুলো ঘন্টা বাদে মনে পড়লো তাকে। অভিমানী কন্যা দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। আহত হলো পৌরুষ চিত্ত। তার হৃদরাণী দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। কেন! কোন অপরাধে অপরাধী সে। ভাবুক মানুষটি আস্তে ধীরে ঝুঁকে গেল অর্ধাঙ্গীর পানে। অতি সন্নিকটে তারা দু’জন। মধ্যকার দূরত্ব ক্ষীণ। শক্তপোক্ত দু হাতের ভর সঙ্গিনীর কাঁধ বরাবর দু পাশের বিছানায়। পুরুষালি অনুভূতিপ্রবণ স্বরে থেমে থেমে উচ্চারিত হলো,

” কি হয়েছে হৃদি? এমন করে মুখ ফিরিয়ে নিলে কেন? আমার কষ্ট হচ্ছে তো। অ্যাই মেয়ে। একটু তাকাও না। দেখো আমাকে। এতগুলো দিনের তৃষ্ণা মেটানো যে এখনো বাকি। তাকাও না সোনা। ”

তাকাবে না তাকাবে না করে সে-ই তাকালো হৃদি। অশ্রুসিক্ত নয়নে বন্দী হলো ইরহামের নভোনীল নয়ন। উৎকণ্ঠিত চিত্তে আরো নৈকট্যে এলো মানুষটি। ওষ্ঠাধর শুষে নিলো নোনাজল। তাতেই অভিমানী কন্যার সমস্ত অভিমান গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। কয়েক লক্ষাধিক সেকেন্ড বাদে চিরচেনা সেই স্পর্শ। আবেগে আপ্লুত হলো তনুমন। অশ্রু বিন্দু তখন বাঁধনছাড়া লেপ্টে দু কপোলের ত্বকে। দু ভ্রুয়ের সন্ধিস্থলে আর্দ্র পরশ এঁকে দিলো ইরহাম। মোহনীয় স্বরে বললো,

” কাছে আসিনি বলে রাগ হয়েছে? নাকি অভিমান? আমি যে অভিমান ভাঙাতে জানিনা না সোনা। তুমি কি আমায় শিখিয়ে দেবে? তোমার সমস্ত অভিমান দূর করে দেবে এই কাঠখোট্টা আমিটা। ”

আলতো করে স্বামীর বাঁ গালে হাত রাখলো হৃদি। শিউরে উঠলো হৃদয়। ছুঁতে পারছে তাকে। অগণ্য সময় বাদে এ ছোঁয়া। মানুষটিকে এমন অবসাদগ্রস্ত দেখাচ্ছে কেন? খুব বেশিই ক্লান্ত! নিমীলিত নয়নে স্ত্রীর ছোঁয়াটুকু অনুভব করছিল ইরহাম। তখন শ্রবণেন্দ্রিয়ে পৌঁছালো,

” সারাদিন খুব ছোটাছুটি করেছেন তাই না? একটু রেস্ট নিলে কি হয়? ডিনার করেছেন? ”

প্রসন্ন হলো হৃদয়। চোখেমুখে উজ্জ্বলতা। এই তো তার হৃদি। সে-ই আদুরে শাসন। যত্নের প্রলেপ। ছোট্ট করে জবাব দিলো ইরহাম,

” খাবো এখন। ”

চমকালো হৃদি! অস্থির হয়ে শুধালো,

” কয়টা বাজে? আমি তো অনেকক্ষণ ঘুমিয়েছি। আপনি এখনো না খেয়ে? তাড়াতাড়ি খেয়ে নিন। অসুস্থ হয়ে পড়বেন তো। আপনাকে নিয়ে না আর পারি না। সারাক্ষণ শুধু… ”

থমকে গেল শব্দমালা। আদুরে বাঁধায় আবদ্ধ রইলো কণ্ঠনালীতে। অধরোষ্ঠে তখন একান্ত মানবের আধিপত্য। আবেশে মুদিত হলো চক্ষুদ্বয়। পেলব দু হাতে আঁকড়ে ধরলো স্বামীর কাঁধ। আবেগী পরশে শুষে নিতে লাগলো একে অপরের দুঃখকষ্ট-যাতনা। মিটে যেতে লাগলো বিরহ বেদনা। এ স্পর্শে ছিল না কামনা। ছিল একরাশ আবেগ। স্বচ্ছ অনুভূতির ঢেউ। একান্ত মুহূর্তের একপর্যায়ে অনুভব করতে পারলো কপোলের ত্বকে তপ্ত জলের অস্তিত্ব। তার একান্ত পুরুষ কাঁদছে! ধীরে ধীরে অক্ষিপল্লব মেলে তাকালো হৃদি। স্বচক্ষে অবলোকন করলো এক অনাকাঙ্ক্ষিত দৃশ্য। অভাবনীয় দৃশ্য! এ-ও দেখার ছিল! এটা হয়তো সম্ভব ছিল না! অর্ধাঙ্গের বন্ধ দু চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রুবিন্দু। ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে উঠলো। আরেকটু নৈকট্যে টেনে নিলো হৃদি। প্রতিটি পরশে বুঝিয়ে দিতে লাগলো এই তো আমি। ইহকালে আর যাচ্ছি না আপনি হতে দূরে। আম:রণ অটুট রইবে হৃ’হামের হালাল প্রগাঢ় বন্ধন।

চলবে.

[ অনুভূতিপ্রবণ একটি বড় পর্ব। বারবার কেমন আবেগী হয়ে পড়ছিলাম। পবিত্র ভালোবাসা এত সুন্দর, হৃদয়ছোঁয়া কেন? দু লাইন মন্তব্য করে যাবেন হৃ’হামের তরে 💝 ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here