ভালোবাসার_ফোড়ন_২ #মিমি_মুসকান #পর্ব_১৪

0
418

#ভালোবাসার_ফোড়ন_২
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_১৪

“একজন এসেছে তোর জন্য, অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে!

ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম,
“কে সে ?

“কি জানি বলল ছেলেটার নাম, হুমম আহিয়ান! হ্যাঁ আহিয়ান।

“কি আহিয়ান! উনি এখানে?

“হুম এই তো নাম বলল ছেলেটা। উপরে গিয়ে দেখ তোর দাদু ভাই’র সাথে বসে আছে

“দাদু ভাই!

আমি আর অপেক্ষা না করে উপরে চলে এলাম। এসে দেখি দুজনেই একসাথে সিগারেট খাচ্ছে আর গল্প করছে।‌ আহিয়ান কে দেখে বেশ অবাক হলাম যদিও তাকে আশা করি নি আমি। হাতের ব্যান্ডেজ টা এখনো আছে। কপালের ব্যান্ডেজ বোধহয় এখন আর নেই! আমি গিয়ে তাদের সামনে দাঁড়ালাম। দাদু ভাই আমাকে দেখে হাসি মুখে বললেন,

“এই তো এসে পড়েছে আমার নাতনি!

আমি হেসে দাদু ভাই’র দিকে তাকালাম। আহিয়ান মুখে সিগারেট নিয়ে আমার দিকে একবার তাকালাম। তাকানো টা বেশ স্বাভাবিক’ই ছিল। টেবিলে দেখলাম বেশ কিছু নাস্তা সাজানো। মনে হচ্ছে অনেকক্ষণ আগেই উনি এসেছেন।

দাদু ভাই বলে উঠেন,
“নাতনি অনেকক্ষণ ধরে ও অপেক্ষা করছে তোর জন্য!

“জ্বি দাদু ভাই!

আহিয়ান আমার দিকে তাকালো কিন্তু কিছু বলল না। বেশ অস্থির লাগছে আমাকে নিজের কাছে। কেমন একটা অস্থিরতা অনুভব করছি। হঠাৎ’ই আহিয়ান’র আওয়াজে কেঁপে উঠি। আমাকে ডাক দিল সে!

“হুম!

“এক গ্লাস পানি খাওয়ায় তো আমায়!

“আনছি!

উঠতে যাবো তখন’ই দাদু ভাই বলল,
“তুই বস। অনেকক্ষণ ধরে বসে আছে তোর সাথে কথা বলার জন্য। আমি বরং গিয়ে দেখি তোর দাদি কোথায়, তাকে দিয়ে পানি পাঠিয়ে দিচ্ছি। ঔষধের সময় হয়ে গেল বুঝলে নাতি খেয়ে আসি, নাহলে তোমার দাদি আবার রেগে যাবো।

আহিয়ান হেসে বলল,
“জ্বি দাদু আপনি যান!

দাদু হেসে উঠে গেল। আমি গুটিসুটি মেরে বসে রইলাম। মনে হলো দাদু ভাই ইচ্ছে করেই চলে গেল। একা ছেড়ে গেল আমায়। আহিয়ান সিগারেট টা ফেলে দিয়ে আমাকে বলল,

“ভয় পাচ্ছো নাকি তুমি।

“ভয় কেন পাবো।

“তাহলে তোমার মুখের রং কেন পাল্টে গেল।

“মুখের রং আগের মতোই আছে, আপনি এখানে কেন এসেছেন!

“ভার্সিটিতে যাও নি কেন?

আমি উনার দিকে তাকিয়ে বলি,
“ইচ্ছে হয় নি যাই নি, কেন আরো অপমান করতেন বুঝি আমায়!

উনি ঠোঁট টা ভিজিয়ে শান্ত ভাবে বলে,
“সরি!

উনার মুখে সরি শোনার পর রীতিমতো থমকে গেলাম আমি।‌ আহিয়ান কাউকে সরি বলছে এটা ভাবতেই অবাক লাগছে। আমি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করি,

“সরি কেন?

“নিতি যা করেছে তার জন্য।

“এটার জন্য আপনাকে সরি বলার দরকার নেই।

“ঠিক বলেছো। দোষ তো ও করেছে আমি কেন সরি বলবো!

উনার কথা শুনে আবারো অবাক হলাম। এটা আবার কোন ধরনের কথা। বির বির করে বলি,
“যা হয়েছে তা তো আপনার জন্য’ই হয়েছে। আবার আসছে বলতে উনি কেন সরি বলবে হুহ!

“কাল ভার্সিটিতে যাবা!

মনে মনে বলি, (“আপনাকে কেন বলবো! )
কিন্তু মুখে বলি,
“না

“না না হ্যাঁ হবে। তুমি কাল আসছো ভার্সিটিতে!

“আমি না বলার পর আপনি হ্যাঁ বলছেন কেন!

“আমার ইচ্ছে হলো তাই বললাম। বাই দ্যা হয়ে এটা কিন্তু সত্যি যে তুমি আসছো। আর না হলে..

“না হলে!

“সে যখন হবে তখন দেখে নিও! আচ্ছা এখন উঠি আমি।

“এটা বলতেই কি এসেছেন!

“হুম! হসপিটাল থেকে বাসায় আসি ৩ দিন আগে। গত পরশু ভার্সিটি গিয়ে সব শুনি কিন্তু তোমাকে পেলাম না। দুদিন ধরে তোমাকে খুঁজেছি কিন্তু তুমি আসো নি তাই দেখতে এলাম। যদিও তুমি আমাকে সাহায্য করছো তাই দেখতে এলাম তোমায়!

“নিতি আপু জানে এটা।

“আমি কাউকে বলে কিছু করি না!

“সে যাই হোক আমি শুধু আমার ঋণ পরিশোধ করেছি। আপনিও হেল্প করেছিলেন আমায় তাই আমিও করলাম!

“তোমার মনে হয় না তুমি সেই তুলনায় খুব কম করেছো।

“হুম মনে তো হয় কিন্তু আপনার জন্য হওয়া অপমানের কারনে সেটা আর মনে হয় না।

উনি আমার থেকে চোখ সরিয়ে ফোন টা হাতে নিয়ে হাঁটা ধরলেন। তখন’ই দাদি পানি নিয়ে এলেন উনার জন্য। উনি পানির গ্লাস টা হাতে নিয়ে বললেন,

“এতো তেতো ঝগড়া করে মুখটা পুরোপুরি তেতো হয়ে গেছে।‌পানি খাওয়া দরকার!

বলেই পানি খেলেন। আর আমি উনার কথার অর্থ বোঝার চেষ্টা করছি। কেন জানি মনে কথা টা আমাকেই খোঁচা মেরে বলেছেন উনি। আজব সরি বলতে এসেছে নাকি আরো অপমান করতে।

দাদি উনাকে বললেন রাতের খাবার খেয়ে যেতে। উনি না বলে দাদি কে ধন্যবাদ দিয়ে বাইরে চলে এলেন। দাদি আমাকে পাঠালেন উনাকে এগিয়ে দিয়ে আসার জন্য। দাদু ভাই আর দাদী কে দেখে মনে হচ্ছে তারা দুজনেই উনার সাথে খুব মিশে গেছেন। এটা কিভাবে হলো তাও একদিনে!

উনি সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছে, উনার পিছু পিছু আমি নামছি! হঠাৎ আমার ঘরের সামনে এসে দাড়িয়ে গেলেন। যদিও দরজা তালা মারা। উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

“সেদিন না তুমি বলেছিলে তোমার বাসায় আসতে তা আজ বলবে না!

উনার কথায় হতবুদ্ধি’র মতো দাঁড়িয়ে গেলাম। ব্যাপার টা কি হলো। উনি হঠাৎ এই কথা কেন বললেন। আমি আনমনে বলে উঠি,

“আপনি আসবেন আমার ঘরে।

“নাহ! এভাবেই বললাম দেখি তুমি কি বলো।

“এর মানে!

“কিছু না!

বলেই তিনি নিচে গেলেন। আমি বাইরে অবদি এলাম। কিন্তু কোন গাড়ি দেখতে পেলাম না। ব্যাপার কি, আজ কি উনি গাড়ি নিয়ে আসেন নি। যদি আনতো তাহলে তো তখন’ই দেখতাম।

দেখলাম উনি হেঁটে একটা বাইকের দিকে গেলেন। হ্যাঁ এটা দেখেছিলাম অবশ্য। মনে হয় গাড়ি এক্সিডেন্ট হবার কারনে এখন বাইক চালায়। যাই হোক উনি বাইকে চড়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

“কাল তোমায় যেন ভার্সিটিতে দেখি!

অতঃপর বাইক চালিয়ে চলে গেলেন। আমি একটা মুখ ভেংচি কেটে বলি,
“ইশ উনার কথা মতো চলতে হবে নাকি।‌ আমি তো যাবো না দেখি কি করে উনি। আসছে উনি বললেই যেতে হবে। আচ্ছা উনি কেন এসেছেন। উনার জন্য’ই তো বার বার অপমানিত হয় আমি। ভাবলাম এখন আর উনার সামনেই যাবো না আর এখানে উনি বাড়িতে এসে হাজির।‌ আজব!
.
দাদু ভাই আর দাদি’র ঘরে গেলাম ব্যাগ টা আনার জন্য। ব্যাগ টা তাদের ঘরেই রেখে নিচে এসেছিলাম।‌যখন ব্যাগ আনতে গেলাম তখন দাদি আমাকে বসিয়ে একগাদা কথা শুনালেন। পুরোই তার কথা। তার প্রশংসা বললে বেশি সহজ হবে। দাদু ভাই আবার ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে গেছেন নাহলে হয়তো তিনিও বলতেন কতো কথা।‌

কিন্তু একটা ব্যাপার এখনো আমার মাথায় ঢুকলো না উনি কেন আমার ঘরে আসতে চাইলেন। কি জন্য কথাটা বললেন আর এটাও কেন বললেন, আমি ভয় কেন পেয়েছি। তাকে ভয় পাবার কোন কারন কি আছে। তা অবশ্য নেই কিন্তু একটা ব্যাপার আছে যা আমাকে অস্থির করে সেটা হলো আমার মিথ্যে।‌ আসলে একটা মিথ্যে বললে সবসময় সেই মিথ্যে বলার ভয় টাকে নিয়ে চলতে হয়।

তিনি কি এটা জানতে পেরেছেন আমি তাকে মিথ্যে বলেছি। দাদু ভাই কে জিজ্ঞেস করলে হয়তো জানতে পারতাম কিন্তু তাকে কিভাবে জিজ্ঞেস করবো সেটাই তো বুঝতে পারছি না। দাদি মনে হচ্ছে কিছু জানে না কারন আমার মতে তিনি উনার খেদমতেই বেশি ব্যস্ত ছিলেন। এটা একটা আন্তরিকতা যেটা দাদি’র মধ্যে অনেক বেশি দেখা যায়। কেউ ঘরে এলেই দাদি তাকে খুব অ্যাপায়ন করে আর এটা টেবিলের উপর সাজানো খাবার দেখেই বোঝা যাচ্ছে। তার বানানো বিভিন্ন আচার ও দিয়েছেন আহিয়ান কে।

ঘরে বসে পড়তে বসেছি, খেয়াল করলাম মুন্নি আপু মিতুর আপুর সাথে বেশ ভালো ভাবেই কথা বলছে। হয়তো দুই বোনের মাঝে দ্বন্দ্ব শেষ হয়ে গেছে।‌ যাক ভালো হলো ভাই বোনের ভিতর দ্বন্দ্ব থাকলে সেটা দেখতে ভালো লাগে না।‌ তবে দুঃখ হয় আমার ভাই আজ থেকেও নেই। কি হয়েছে যদি সে আমার সৎ ভাই হয় তো। দু’জনের শরীরে তো এক’ই রক্ত তাই না। ভাই অবশ্য আমাকে একবারে আদর করত না এটা বললে ভুল হবে। ছোট বেলায় আমাকে গাছে চড়া, পুকুরে সাঁতার কাটা তিনি’ই শিখিয়েছেন।‌

কোনদিন কারো বাড়ি’র গাছের আম চুরি করে আনলে সেটার ভাগ ও দিতেন আমায়।‌ ইচ্ছে না থাকলেও আদর করতেন আমায় কিন্তু বিয়ের পর সেই অনিচ্ছাকৃত আদর টাও চলে গেল আমার ভাগ্য থেকে।
.
মিতু আপু আর মুন্নি আপু চলে গেছে অনেকক্ষণ! আমি আলসেমি করে এখনো বিছানায় শুয়ে আছি। যদিও উনি আমাকে অনেক ধমকে গেছেন তবুও আমি ভয় পাই না তাকে। আমি যখন বলেছি যাবো না তো যাবো না হুহ!

হঠাৎ করেই দরজায় কেউ কড়া নাড়ল। প্রথমে ভাবলাম হয়তো উনি এসেছেন। এটা সত্যি হয়ে থাকলে আমি আর দরজা খুলছি না। উনি তত’ই দরজায় কড়া নাড়ুক আমি আজ দরজা খুলবো না ব্যস!

এখনো দরজা কড়া নেড়েই যাচ্ছে। আমি বলে উঠি,

“কে?

“আমি! [ দরজার ওপাশ থেকে ]

“ইতি!

“নাহলে কে শুনি!

“আসছি তুই একটু দাঁড়া!

“দাঁড়িয়ে আছি সেই কখন থেকে, খোল এখন!

অতঃপর আমি দ্রুত বিছানা থেকে উঠে দরজা খুলতে গেলাম।‌ তাকিয়ে দেখি ইতি রেগে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

“সরি রে আসলে…
বলতে গিয়েই চুপ হয়ে গেলাম!

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here