অনুভূতিরা_শব্দহীন লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী চতুর্দশ পর্ব

0
235

#অনুভূতিরা_শব্দহীন
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী

চতুর্দশ পর্ব

রাতের খাওয়া দাওয়া শেষে বাসার সবাই আবারো কথা বলছে। মৃত্তিকার জন্য কেমন ছেলে চাই সেটাই এখানে মুখ্য বিষয়।

“মিউকো মা একজন এডুকেটেড মেয়ে। পিএইচডি ডিগ্রিও নিবে আশা করি। তো ওর জন্য একজন পারফেক্ট ছেলেই লাগবে। তাড়াহুড়ো করে যার তার হাতে ওকে তুলে দেয়া যাবে না।”

শাফিন সাহেব সত্যই বলেছেন। শিক্ষিত মেয়ের জন্য শিক্ষিত ছেলে না হলে ভবিষ্যতে সমস্যা হতে পারে।

“তুমি ঠিক বলেছো, শাফিন।”

মমতাজ বেগম রুম থেকে বের হতে হতে বললেন। লুৎফর রহমান উনার দিকে ফিরে বললেন,
“তুমি এখানে?”
“কেন? আসতে পারবো না বুঝি?”

অভিমানী সুরটা লুৎফর সাহেব বুঝলেন। ঘরে থেকে থেকে মানুষটা যে হাঁপিয়ে উঠেছেন। মমতাজ বেগম এসে ইমতিয়াজের পাশে বসলেন।

বড়রা সোফায় বসা। তানজিম আর মৃত্তিকা ডাইনিং এ চেয়ারে বসেছে।

দেলোয়ারা বললেন,
“কিন্তু বাবা মায়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে কি বলবেন? (একটু থেমে) না মানে, ডি°ভো°র্সের কথা তো বলা যাবে না।”
“না, ডি°ভো°র্স বলা লাগবে না। বাবা-মা নেই, মা°রা গেছে। মামার কাছে থেকেছে। থ্যাটস ইট, আর কিছু বলার দরকার নেই।”

শাফিনের কথায় সবাই সম্মত হলেও ইমতিয়াজ বলে,
“মামা, কিছু মনে করবেন না। একটা কথা বলি।”
“হ্যাঁ, হ্যাঁ, বলো।”

ইমতিয়াজ একবার মৃত্তিকার দিকে তাকিয়ে বলল,
“বাবার কথা না বললে পরে তো ওর বাবার কথা জানতেই পারবে, উনি যেভাবে মৃত্তিকার আশেপাশে থাকে।”

শাফিনের মুখে চিন্তার ভাঁজ পড়লো, ইমতিয়াজের কথা সত্য। মৃত্তিকার দৃষ্টি ইমতিয়াজের দিকে আর ইমতিয়াজ চেয়ে আছে ফ্লোরে অযত্নে পড়ে থাকা কার্পেটের দিকে।

“যদি বলি বাবা না উনি, মিথ্যা বলছে।”

শাফিনের কথায় মাথা নাড়লো ইমতিয়াজ। বলল,
“মামা, জানাজানি হলে উনার অবস্থাও খালামনির মতোই হবে।”

মমতাজ বেগম ঘাবড়ে গেলেন। রিপা বেগমের ঘাড় আর হাত-পায়ের অবস্থা উনি দেখেছিলেন। মমতাজ বেগম ইমতিয়াজের হাত ধরে বলল,
“কি করবো, বাবা?”

মমতাজ উনাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে,
“মা, শান্ত হন। আমাদের খুঁজতে হবে, সময় লাগবে। হয়তো এতোটা পারফেক্ট ছেলে পাওয়া যাবে না, তবে অসম্ভব নয় আশা করি। যে বিয়ে করবে, তাকে সবটা বলতেই হবে।”

লুৎফর রহমান সম্মতি জানালেন,
“আমিও ইমতিয়াজের সাথে একমত। সময় লাগবে, তাড়াহুড়ো করা যাবে না।”
“তবে তাই হোক। মৃত্তিকা কি বলো?”

শাফিন সাহেবের প্রশ্নে মৃত্তিকা মাথা হেলিয়ে সম্মতি দিলো। তারপর বলল,
“আমি জব করতে চাচ্ছিলাম।”
“কিছুদিন আপনার বাইরে না যাওয়াই ভালো হবে।”

কেউ কিছু বলার আগেই মাঝ থেকে কথাটা বলে ফেলে ইমতিয়াজ। সবাই ওর দিকে তাকালে বলে,
“ভুল বললাম?”
“না, ঠিকই বলেছো।”

অত:পর সবাই যার‍ যার রুমে যায়। তানজিম এতোক্ষণে হাফ ছেড়ে বাঁচে। বড়দের মাঝে সকলের ওর দিকে এমনভাবে তাকাচ্ছিল যেন সে কয়েকদিন আগেই কথা বলতে শিখেছে, এখন কেবল মাম্মা, পাপা বলে।

ইমতিয়াজ তানজিমের রুমে গেছে। মৃত্তিকা এসে ইমতিয়াজের আইডি কার্ড দেখে। অফিসে বেশ বড় পদে চাকরি করছে সে, পরিচালন অধিকর্তার নির্বাহী সহকারী। কোথায় সেই অফিস সেটাও দেখে নেয় সে।

টা°ন দিয়ে কার্ডটা নিয়ে নেয় ইমতিয়াজ। মৃত্তিকা একটু চমকে উঠে।

“এসব ভালো নয়, মৃত্তিকা।”

“সরি। (একটু থেমে) আমাকে মিউকো কেন ডাকেন না?”
“মিউকো যে আমার বিড়াল।”

মৃত্তিকা ইমতিয়াজের চেহারার দিকে তাকায়। সে শার্টের হাতা গুটাতে ব্যস্ত। মৃত্তিকার সেই স্বপ্নের জবাব। মৃত্তিকার আগ্রহ বাড়লো।

“আর আমি?”

মৃত্তিকার মিষ্টি প্রশ্নে ইমতিয়াজ কপাল কুঁচকে বলে,
“কি আপনি?”
“কিছু না।”

প্রশ্নটা ভে°ঙে করতে পারলো না মৃত্তিকা। আবারো সেই অনুভূতিরা জাগ্রত হচ্ছে। ইমতিয়াজ মমতাজ বেগমের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেল। মৃত্তিকার দিকে একবারের জন্যও তাকালো না। অথচ মৃত্তিকা বারবার ওর দৃষ্টির অপেক্ষায় চেয়ে থাকলো।
______________________________________

পরিবারের সবার সাথে রাতের খাবার শেষে ঘরে এসেছে সারাহ্-আহনাফ। এতোদিন পর পরিবারকে কাছে পেয়ে অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছে সারাহ্-র। তবে উলটো অনুভূতি হলো তাহসিনাকে দেখবে।

আহনাফ বিছানায় শুয়ে পড়েছে। সারাহ্ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়ে নিচ্ছে। আহনাফ একবার ওকে দেখে আবারো চোখ বন্ধ করে। বাসায় আসার পর শাড়ি পড়েছে সে৷ একটা অন্যরকম ভালো লাগা আছে সারাহ্-র আশেপাশে।

“ফয়েজ স্যার?”

সারাহ্-র হঠাৎ ডাকে চমকে উঠে আহনাফ৷ চোখ কুঁচকে বলে,
“কি সমস্যা?”
“কোথায় সমস্যা? আমি তো বললাম ফয়েজ স্যার। আপনাকে ডাকছি।”

আহনাফ উঠে বসে,
“ফয়েজ স্যার কেন? নাম ধরে ডাকবে না।”

সারাহ্ ওর দিকে ফিরে ব্য°ঙ্গসুরে বলে,
“কেন? আপনিও কি ওইসব বিশ্বাস করেন যে স্বামীর নাম ধরে ডাকলে অ°মঙ্গল হয়।”

আহনাফ হাসলো। উঠে বালিশ ঝে°ড়ে আবারো শুয়ে পড়ে। সারাহ্ জবাব না পেয়ে বলল,
“বলেন কি ডাকতে আপনাকে? আহনাফ নাকি ফয়েজ স্যার?”
“এগুলো ছাড়া অন্যকিছু।”

সারাহ্ লাইট নিভিয়ে দিয়ে বিছানায় চলে আসে। শুতে শুতে বলে,
“জান, কলিজা, কিডনি ডাকি?”
“কি?”

আহনাফের ধ°ম°ক শুনে সারাহ্ হেসে অন্যদিকে ফিরে যায়। আহনাফ ওর কোমড়ে হাত দিতেই চমকে উঠে। সারাহ্-কে কাছে এনে ওর পিঠে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বুজে আহনাফ। এদিকে সারাহ্ ভ°য় পাচ্ছে, এবারে সে একে আর ভ°য় বলে সম্মোধন করলো না। এ লজ্জা, ও লজ্জা পায় আহনাফের স্পর্শ।

আহনাফের হাতের উপর হাত রাখতেই আহনাফ বলল,
“হুশ, ঘুমাও।”
“আহনাফ?”

সারাহ্ ঘাড়ের কাছে ঠোঁটের স্পর্শ পেল। হঠাৎ করে উঠে গিয়ে লাইট জ্বা°লালো। আহনাফ অন্যদিকে ফিরে গেছে। সারাহ্ লাইফ নিভিয়ে আবারো এসে শুয়ে পড়লো।

সারাহ্ বলল,
“আপনার সাথে থেকে থেকে আমিও অস্বাভাবিক আচরণ করছি।”

আহনাফ শব্দ করে হেসে ওর কানের কাছে মুখ এনে বলল,
“তুমি যে আগে থেকেই পাগল সেটা জানতে না বুঝি?”
“আমি মোটেও পাগল না।”
“পাগল না, ভুল বলেছি। তুমি আস্ত ছাগল, মাঠে ঘুরেফিরে যে ঘাস খায় ওই ছাগল।”
“খারাপ হবে বলছি, আহনাফ।”
“নাম ধরে ডাকলে তোমার খারাপ হবে।”
“একশবার ডাকবো। আহনাফ, আহনাফ, আহনাফ।”

বারবার “আহনাফ” বলে ডাকতে থাকে সারাহ্ আর সাথে থাকে দুষ্টুমির হাসি।

আহনাফ ওকে কাছে এনে গলায় আবারো চুম্বন করে। এবারে আর সেদিনের কাঠিন্য নেই, যেন কিছু স্নেহ আর অল্প ভালোবাসা মিলেমিশে আছে। আহনাফের চুলগুলোতে হাত রাখে সারাহ্। মেয়েটা যে বড্ড লাজুক, চোখ মেলাতে পারবে তো পরে?
______________________________________

ফজরের নামাজ পড়ে মসজিদেই বসে আছে ইমতিয়াজ। একটা সিদ্ধান্তহীনতা তাকে অসম্ভব পোড়াচ্ছে। শুক্রবার সকাল হওয়ায় আজকে মসজিদে মানুষ কম। যা কয়েকজন ছিল তারাও নামাজ পড়ে চলে গেছে।

ইমতিয়াজ মোনাজাতে ব্যস্ত। নিজের মনের অবস্থা রব ছাড়া আর কাকে বোঝাবে সে। শ°য়°তা°নের প্র°রো°চনা থেকে বাঁচতে হলে তো রবের দিকেই আসতে হয়।

জীবনের এমন এক মুহূর্তে এসে পৌঁছেছে যে না সে একা থাকতে পারছে আর না সে তাহমিনাকে ছাড়া কোনো সঙ্গী কল্পনা করতে পারছে। লোকে তো হাসবে যে স্ত্রীর মৃত্যুর দুইবছর পেরিয়ে গেলেই এখনো সে কেন একা? কিসের খাতিরে?

সাময়িকের জন্য মৃত্তিকাকে ভালো লাগলেও সে এটাকে শ°য়°তা°নের নিছক প্র°রো°চনা বা ন°ফ°সের বি°কৃ°ত চিন্তা মনে করছে। মাথায় ঘুরতে থাকা এসব কথা প্রাণ খুলে রবের দরবারে পেশ করে সে।

এদিকে মৃত্তিকার চিন্তায় মিশে গেছে ইমতিয়াজ। নিজের লজ্জা ভুলে সকলকে সেটা জানাতে চেয়েও জানাতে পারছে না। ইমতিয়াজ তাকে ভালো রাখবে, হয়তো ভালোও বাসবে। এই বিশ্বাস নিয়ে কাকে বলবে সে মনের ভালো লাগার কথা, নিজের স্বপ্নের পুরুষের কথা কাকে শোনাবে সে?

মসজিদ থেকে বেরিয়ে বাসার দিকে যাচ্ছে ইমতিয়াজ। আকাশে আলো ফুটে উঠছে। ফোন বেজে উঠে। পকেট থেকে বের করে মৃত্তিকার নাম্বার দেখে কপাল কুঁচকায়।

কোনো বি°পদের আশঙ্কায় দ্রুত রিসিভ করে,
“জ্বী, মৃত্তিকা।”

মৃত্তিকা কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে বলে,
“একটা সাহায্য করতে পারবেন?”
“কি?”
“মামাকে জানাবেন আমি কাউকে পছন্দ করি, আমি তাকেই বিয়ে করতে চাই।”

ইমতিয়াজ হাঁটা থামিয়ে দেয়। একমুহূর্তের জন্য ওর মনে হলো মৃত্তিকা ওর কথাই বলছে৷

তবুও দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“উনারা এসবকে খুব স্বাভাবিক মনে করে। আপনি সরাসরি বলুন, না হলে তানজিমকে বলুন।”
“তানজিম আমার ছোট, ওকে কিভাবে?”
“তবে আমি কেন বলবো?”
“কারণ আপনি জানেন সে কে?”

ইমতিয়াজ চুপ থাকে। সে কি আদৌতে জানে। বেশ কিছুক্ষণ নিরব থেকে ইমতিয়াজ বলল,
“আপনি যা বলছেন তা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। সরি।”

ইমতিয়াজ কল কে°টে দিলো। রাগটা বাড়তে থাকে। কার উপর রাগ হচ্ছে? নিজের উপর নাকি মৃত্তিকার উপর?
______________________________________

সকাল সাতটায় কাকরাইল গো°র°স্থানে আসে আহনাফ ও সারাহ্। সারাহ্ জানে ওরা তাহসিনার সাথে দেখা করতে এসেছে। গো°র°স্থানে প্রবেশের সময় সারাহ্ আশেপাশে তাকায়। তাহসিনা জীবিত নাকি মৃ°ত এ নিয়ে বি°ভ্রা°ন্তিতে পড়ে সে।

আহনাফ ওর হাত ধরে একটা কবরের সামনে এনে দাঁড় করিয়ে বলে,
“এখানেই আছে আমার তাহসিনা।”

সারাহ্ চমকে উঠে। তাহসিনা নেই এই পৃথিবীতে, অথচ তার ভালোবাসা নিয়ে কেউ বেঁচে আসে।

সারাহ্ আহনাফের দিকে তাকিয়ে দেখে সে মোনাজাত করছে। সারাহ্-ও সূরা ফাতিহা পাঠ করলো। “আমিন” বলার সময় ওর চোখ থেকে একফোঁটা পানি পড়ে। এ পানির কারণটা সে বুঝতে পারলো না।

আহনাফ বলে,
“বিয়ের দিন। পুরো রিসোর্ট সাজানো, গোছানো। সুন্দর করে লাইট লাগানো হয়েছে, ফুলের সুভাসে ভরে গেছে চারপাশ। নিজের পছন্দের সাদা শাড়ি পড়েছিল সে, জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সাজে সজ্জিত হয়েছিল। (একটু থামে) কিন্তু সে সাজ নিয়ে আমার সামনে যখন এসেছিল, তখন তার নিশ্বাস বন্ধ। চোখ বুজেছিল সে।”

আহনাফের কন্ঠ কেঁপে উঠলো। সারাহ্ ওর দিকে একবার তাকায়, তারপর আবারো তাকায় কবরের দিকে।

“ওর সেই শাড়িটা লাল হয়ে গিয়েছিল। সেই বৃষ্টি ভেজা ভার্সিটির দিনগুলো। ওকে নিয়ে পাহাড়ে যাওয়ার দিনগুলো এখন শুধুই আমার স্মৃতি।”

আহনাফ থামে। সারাহ্ এখনো স্ত°ব্ধ হয়ে আছে। বিয়ের দিন প্রেমিকার মৃ°ত্যু যে এই মানুষটা সহ্য করেছে এই অনেক।

“জন্ম, মৃ°ত্যু আর বিয়ে তো আমাদের হাতে নেই। তাইতো সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় সে চলে গেল আর তুমি এলে। হয়তো আমিও চলে যাবো আর তুমি থাকবে।”

আহনাফ বেরিয়ে যায়। সারাহ্ তাকিয়ে থাকে সমান হয়ে থাকা কবরের মাটির দিকে। এই কবর কাউকে ছাড়বে না। যেদিন আল্লাহ্-র হুকুম হবে, সেদিনটা যত গুরুত্বপূর্ণই হোক না কেন যেতে আমাদের হবেই। স্বয়ং আল্লাহ্ ছাড়া নিয়তি কেউ খ°ন্ডা°তে পারবে না।

সারাহ্ বেরিয়ে আসে। আহনাফ আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। সারাহ্ ওর হাত ধরে।

“দুই দুইটা বছর পেরিয়ে গেছে। অথচ আমার মনে হয় সেদিনও তাকে পাশে পেয়েছিলাম।”

আহনাফের চোখ বেয়ে পানি পড়তে নিলে সারাহ্ মুছে দিলো। আহনাফ ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
“তোমার জীবনটা এভাবে ধ্বং°স করার অধিকার আমার নেই, তবুও করেছি।”

সারাহ্ ওর চোখের পানি মুছে দেয়।

“আপনিই তো বলেছেন এই বিয়ে আল্লাহ্-র ইচ্ছায় হয়েছে, তবে এটা ধ্বং°স কেন হবে? হয়তো এটা পরীক্ষা, আমার ধৈর্যের পরীক্ষা।”

কথাগুলো সারাহ্-র মনেই থাকে। আহনাফকে বলে না সে। আহনাফ কিভাবে নিবে বা কি ভাববে?

আহনাফ চুপ করে সারাহ্-র মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। অন্য কেউ হলে প্রতিক্রিয়া কি হতো আহনাফ জানে না তবে সারাহ্ নিরবতাকে বরণ করেছে।

বাসায় ফিরে আসা অব্ধি কোনো কথা বলেনি সারাহ্। আহনাফও কোনো প্রশ্ন করেনি। সারাহ্ নিরব আছে, চুপচাপ, শান্ত।

বাসায় এসে হিজাব খুলছে সারাহ্। আহনাফ পাশে দাঁড়িয়ে বলে,
“ঐশী, তোমার প্রশ্নের উত্তরগুলো পেয়েছো? কেন তাহসিনাকে ভালোবেসেও তোমাকে বিয়ে করেছি?”
“হুম।”

ওর ছোট জবাবটা আহনাফের ঠিক পছন্দ হলো না। আবারো সুধালো,
“আর কোনো প্রশ্ন আছে?”
“না।”

সারাহ্ চলে গেল। আহনাফ ওর হাত ধরে বলে,
“খারাপ লাগছে তোমার আমি জানি। কিন্তু সত্যটা তো জানানোর প্রয়োজনও ছিল।”

সারাহ্ মুচকি হেসে ওর দিকে এগিয়ে এসে বলল,
“আমি অন্য কারণে নিরব।”
“কি?”
আহনাফ কপাল কুঁচকায়।

সারাহ্ সরে যেতে নিয়েও সরতে পারে না। আহনাফ ওর হাত এখনো ধরে রেখেছে। সারাহ্ প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালে আহনাফ বলে,
“কারণ কি?”

সারাহ্ হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
“তাহসিনা আপুর মতো করে আমি আপনাকে বুঝতে পারবো না, তবে যতটুকু বুঝতে পেরেছি তাতে..”

সারাহ্ থেমে যেতেই আহনাফ চোখ ছোট করে। সারাহ্ মুচকি হেসে চলে যায়। আহনাফ তাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে। গতরাতের স্পর্শগুলো সজ্ঞানে করেছে আহনাফ, রাগ কিংবা প্রতি°হিং°সা থেকে নয়।

আহনাফ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় ওর দিকে। পাশাপাশি থাকা দুজন নর-নারীর মনে পবিত্র ভালোবাসা সৃষ্টি করুক মহান সৃষ্টিকর্তা। হালাল সম্পর্কগুলো যে একটু বেশিই সুন্দর।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here