অনুভূতিরা_শব্দহীন লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী ত্রয়োদশ পর্ব

0
246

#অনুভূতিরা_শব্দহীন
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী

ত্রয়োদশ পর্ব

“এসব কি করেছেন, আহনাফ?”
“ডোন্ট কল মি আহনাফ।”

বাসায় ফিরেই আহনাফকে প্রশ্ন করে সারাহ্। পুরো রাস্তা কথা বলার কোনো সুযোগই দেয়নি। আহনাফের ধ°ম°ক খেয়ে একটু থতমত খেয়ে যায়।

আহনাফ ফ্রেশ হতে চলে গেল। সারাহ্ সোফায় বসে পড়ে। লোকটাকে এখনো সে পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারছে না। এমন অদ্ভুত ব্যবহার কেন করে সে? মানসিক সমস্যা আছে কোনো? নাকি শুধুই ওর সাথে এমনটা করে?

আহনাফ ফিরে এসে সারাহ্-র গা ঘে°ষে বসে। সারাহ্ সরে নিলে ওর কোমড় জড়িয়ে ধরে বলল,
“কি বলছিলে?”

সারাহ্ ভয় পায়। সেই অ°প্রীতিকর ঘটনার পুনরাবৃত্তি সে চায় না। আহনাফ উঠে দাঁড়িয়ে ওর হিজাবটা খুলে নেয়। চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“ছেলেটার প্রতি খুব দরদ হচ্ছে?”

আহনাফ আচরণ ভালো ঠেকলো না। সারাহ্ ঢোক গিলে বলে,
“ওর বাবা-মাকে ডাকবে, খুব খারাপ একটা ব্যাপার হবে না?”
“না।”

আহনাফ চলে যেতে নিলে সারাহ্ একটু জোরেই বলে,
“তাহসিনাকে ভালোবাসেন তো আমাকে নিয়ে এতো ভাবেন কেন?”

আহনাফ হাত মু°ষ্টি°ব°দ্ধ করে নিজের পায়েই দুবার আঘাত করে। তারপর দ্রুত সারাহ্-র কাছে এসে ওকে একহাতে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে আরেকহাতের আঙ্গুল উঁচিয়ে ক°ড়া ভাষায় বলে,
“চুপ, গলা উঁচিয়ে কথা বলবে না।”

সারাহ্ কন্ঠ নামিয়ে খুব তাড়াহুড়ো করে বলে,
“মিথ্যা তো বলছিনা আমি? তাহসিনা কে বলছেন না, কোথায় আছে তাও বলছেন না। আবার আমার প্রতি পুরো অধিকার কেন খাটাচ্ছেন? আমি কি…”

আহনাফ ওর ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়। সারাহ্-কে ছেড়ে দিয়ে সরে দাঁড়িয়ে বলে,
“এসব তুমি বুঝবে না, ঐশী।”

আহনাফ গিয়ে সোফায় বসে। সারাহ্ এখনো একই স্থানে স্থির। আহনাফ ওকে পাশে বসতে ইশারা করে। সারাহ্ তাই করলো।

আহনাফ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“আর একটা দিন অপেক্ষা করো, তোমার সব প্রশ্নের জবাব দিবো। (একটু থেমে) কাল বিকেলে ঢাকা যাবো, তৈরি থেকো।”

আহনাফ চলে যেতে নিলে সারাহ্ বলল,
“তাহসিনা কি ঢাকায় থাকে?”

আহনাফ জবাব দিলো না। ফিরেও তাকালো না ওর দিকে। ওর ভাবে মনে হতে পারে সারাহ্-র কথা সে শুনেই নি।

আহনাফ তো জানে তাহসিনা কোথায়। তাহসিনা যে এখন বড্ড একা, আহনাফ এখন সঙ্গী পেতে নিয়েছে। এটা জানলে কি তাহসিনা কষ্ট পাবে না?
______________________________________

বিকাল চারটা, নিজের রুমে অঘোরে ঘুমাচ্ছে মৃত্তিকা। সারাদিন ঘুরাঘুরি করেছে, দুপুরের খাবারও বাইরে খেয়েছে। মমতাজ বেগম আজ বেশ ভালোই কথা বলেছেন৷ হয়তো একটু একটু করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন উনি।

এলোমেলো চুলগুলো মৃত্তিকার চোখমুখের উপর পড়ে আছে। পাশবালিশটা জড়িয়ে ধরে খুব আরামের সাথে ঘুমাচ্ছে।

“মৃত্তিকা?”

চেনা একটা কন্ঠ অচেনাভাবে শুনে মৃত্তিকা। এতো নরম সুরে সে কেন ডাকছে তাকে?

আবারো সেই কন্ঠ,
“মৃত্তিকা?”
“আমাকে মিউকো বলেন না কেন?”
“সে যে আমার বিড়াল।”
“আর আমি?”
“তুমি হয়তো অনেককিছু, নয়তো কিছুই নও।”

মৃত্তিকা চোখ খুলে। উঠে বসে আশেপাশে তাকায়, রুমে কেউ নেই। তবে কি সে স্বপ্ন দেখছিলো?

মৃত্তিকা ফিক করে হেসে দেয়। ইমতিয়াজের কন্ঠ শুনতে ওর এতোই সুখ লাগে যে ঘুমের ঘোরেও সেই কন্ঠ শুনছে।

চুলগুলো খোঁপা করে নেয় মৃত্তিকা। আয়নার দিকে চোখ পড়ে। মৃত্তিকা নিজের চেহারা দেখে হেসে বলে,
“এক বিবাহিত পুরুষের প্রেমে পড়েছিস তুই। পাগল হয়ে গেছিস? সে পুরুষের মনের কোণেও স্থান নেই তোর। ভুলে যা।”

নিজেই নিজেকে ব°কছে। হাসি পায় ওর। ঘুম আর হবে না। স্কার্ফটা মাথায় জড়িয়ে বেরিয়ে যায় মৃত্তিকা। যদিও আজকের আকাশটা একটু অন্ধকার, তবুও সে হাঁটতে বের হলো।

কিছুটা রাস্তা পেরিয়ে যায় গো°র°স্থানের কাছে। বাইরে লাগানো বোর্ডটার দিকে একটু তাকিয়ে লোহার গেইট ঠেলে ভিতরে ঢুকে। সকলে নিশ্চুপ নিরব, মৃত্তিকা গিয়ে রিপা বেগমের কবরের কাছে দাঁড়ায়।

“মাম।”
কণ্ঠনালি চি°ড়ে বের হয় এই ডাক।

সূরা ফাতিহা পড়লো, দোয়া করলো মামের জন্য। চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছে। হঠাৎ গুড়িগুড়ি বৃষ্টি ঝরা শুরু হয়। বৃষ্টির বেগ বাড়ছে৷ তবুও মৃত্তিকা একই স্থানে দাঁড়িয়ে আছে।

ওর মাথার উপর একটা ছাতা আসলো। মৃত্তিকা চমকে উঠে৷ এখন এখানে কে এসে উপস্থিত হলো। পাশে তাকিয়ে বাবাকে দেখে ভয় পেল মৃত্তিকা।

“আপনি এখানে?”

শরীফ মেয়ের গালে হাত দিয়ে স্নেহের পরশ দিতে চাইলেও মৃত্তিকা তা প্র°ত্যা°খ্যা°ন করে। মুখ সরিয়ে নিয়ে বলে,
“এসব আহ্লাদের প্রয়োজন নেই আমার।”

শরীফ বলল,
“বাইরে এসো। এখানে দাঁড়িয়ে থেকে কোনো লাভ নেই। এতো না আগলে রাখতে চেয়েছিল তোমাকে, কোথায় সে?”

মৃত্তিকা কিছু না বলে ঘাড় ঘুরিয়ে নিলো। অ°মানুষের সাথে চিৎকার করে কোনো ফায়দা নেই। এরা পড়াশুনা করে ডাক্তার হয়, কিন্তু নৈতিকতার বড্ড অভাব।

মৃত্তিকা বাইরে চলে আসে। বৃষ্টির আঁচ কিছুটা কমে গেছে। ভিজে ভিজেই হাঁটতে থাকে সে। শরীফ এসে ওর পাশাপাশি হয়ে বলে,
“বাবার সাথে থাকবে এতে কি সমস্যা তোমার?”

মৃত্তিকা দাঁড়িয়ে গিয়ে বলে,
“ওই বাবা কোথায় ছিল আমার ছেলেবেলায়? যখন আমি বাবার স্নেহ খুঁজতাম তখন কোথায় ছিল? আমার শৈশব ধ্বং°স করেও শান্তি হয়নি আপনার?”
“সেসব তোমার মায়ের জন্য হয়েছে।”

শরীফকে ধা°ক্কা দিয়ে সরিয়ে মৃত্তিকা বলে,
“খবরদার আমার মাকে নিয়ে আর একটা শব্দ বলবেন তো আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না।”

শরীফ মেয়ের গালে চ°ড় দিয়ে বলে,
“মায়ের মতোই হয়েছো, বে°প°রোয়া। সময় থাকতে বদলে যাও। নাহলে তোমার মায়ের সংসার জুটেনি আর তোমারও জুটবে না। একা থাকবে, ঠিক আমার মতো।”

একটু থেমে শরীফ নরম কন্ঠে বলে,
“মা, আমার সাথে চলো। আমি ভালোবাসি তোমাকে। আমার ভালোবাসা বোঝো না তুমি?”
“এসব আপনার ভালোবাসা? কথা না শুনলেই মা°র°বেন আর অ°ত্যা°চার করেন, এটা ভালোবাসা?”
“তুমি আজও আমাকে বুঝলে না।”

শরীফ চলে গেল। মৃত্তিকা এখনো দাঁড়িয়ে আছে। কি করবে সে? যাবে কোথায়? কাকে বোঝাবে ওর মনের কথা? কে আছে ওর? উত্তর একটাই, কেউ নেই ওর।
______________________________________

সন্ধ্যা ৭ টা, আহনাফ টেবিলে কিছু একটা পড়ছে। সারাহ্ একবার এসে চা দিয়ে গেল, একবার এসে বিস্কুট দিয়ে গেল। কিন্তু কোনোবারেই আহনাফ কোনো কথা বলল না।

সারাহ্ আরেকবার রুমে উঁকি দিলো। আহনাফকে ব্যস্ত দেখে ও ড্রইংরুমে চলে গেল। কল দিলো সামিহাকে। কাল যে ওরা বাসায় যাবে তা আগেই জানানো হয়েছে। নতুন জামাই বলে কথা, আয়োজন তো হবেই।

“আপু।”
“কি করিস?”
“তেমন কিছু না, আবার অনেক কিছু।”
“মানে?”

সামিহা হেসে বলল,
“পিঠা বানাচ্ছি, মুগপা°ক্কন আর চন্দ্রপুলি। তুমি তো সোয়ামী নিয়ে এসেই খা°লা°শ, য°ন্ত্র°ণা তো সব আমার।”
“ওমা, এসব কেমন কথা? তোর বিয়ের পরও তো এমন হবে।”
“অসম্ভব।”
চেঁচিয়ে বলে সামিহা।

“কেন রে?”
“আমি বিয়ে করে এখান থেকে কোত্থাও যাবো না, দরকার হলে জামাই এখানে থাকবে।”
“দেখা যাবে।”

সারাহ্ হো হো করে হেসে উঠলো। মেয়েরা একটা বয়সে বলে আমি কোথাও যাবো না, বাবা-মায়ের সাথে থাকবো। কিন্তু বাস্তবতা হলো তাদেরকে যেতে হয়, সেদিন আর এসব কথার কোনো মূল্যই থাকে না।

আহনাফ ড্রইংরুমে এসে টিভি ছেড়ে বসে। সারাহ্-র দিকে তাকালে সারাহ্ আর কিছু না বলেই ফোন রেখে দেয়।

“ব্যাগ গুছিয়েছো?”

আহনাফের কথায় সারাহ্ ডানেবামে মাথা নাড়ে। আহনাফ আবারো খেলা দেখতে ব্যস্ত হয়। সারাহ্ টিভির দিকে তাকায়। ক্রিকেট খেলা সে খুব একটা বুঝে না, ফুটবলেই তার যত আগ্রহ।

আহনাফ বলল,
“তুমি ফোনে কথা বলছিলে। বলতে পারো, সমস্যা নেই।”

সারাহ্ জবাব না দিয়ে পালটা প্রশ্ন করে,
“কাল ক্লাস করবেন না?”
“ক্লাস নেই কালকে।”
“কলেজ যাবেন?”
“হুম, ওই ছেলের বাবা আসবে।”

সারাহ্ এসে ওর পাশে বসে বলল,
“ছোটমানুষ ওই ছেলে, বুঝেনি এতোকিছু হবে। আপনাকেও তো এক মেয়ে প্রপোজ করেছিল, আমি কি এতো কাহিনী করেছি?”

আহনাফ পা গু°টিয়ে বসে বলল,
“আমি আর তুমি কি এক?”
“না, আসলে..”

আহনাফ ধ°ম°ক দিয়ে বলে,
“তবে? আমি কি করবো না করবো তা কি তুমি ঠিক করবে?”

রিমোটটা ছু°ড়ে ফেলে আহনাফ চলে যায়। সারাহ্ কিছুই বলে না। এ সম্পর্ক কি এভাবেই চলবে। ঝগড়া, রাগ আর ভ°য়ের মধ্যে কি কোনো সম্পর্ক স্থায়ী হয়?
______________________________________

সকাল ৮ টা, তানজিমকে কল করে সামিহা জানালো সে ভার্সিটিতে যাবে না। কারণ আজ বাসায় সারাহ্ আসবে। তানজিমকে ভার্সিটিতে যেতেই হবে, কারণ আজ গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস। বাদ দিলে নোটগুলো পাবে না।

তানজিম বের হওয়ার সময় মৃত্তিকাকে তৈরি হতে দেখে বলে,
“আপু কোথাও যাবে?”
“হ্যাঁ, যাবো।”
“কোথায়?”
“এক ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যাবো।”
“এত সকালে?”

মৃত্তিকা মাথা নেড়ে “হ্যাঁ” বলে বেরিয়ে যায়।

তানজিমও বের হয়। মৃত্তিকা ওকে জিজ্ঞাসা করে,
“তোমার ইমতিয়াজ ভাইয়া কোথায় থাকে?”
“এইতো কাছেই, মগবাজারের দিকে উনার বাসা।”
“ও” বলে মৃত্তিকা রিকশা ডেকে উঠে পড়ে।

তানজিম নিজের রাস্তায় যায়। আজকে ক্লাসটা বোরিং যাবে। সামিহা নেই, মানে ওর গল্প করার আর দুষ্টুমির সঙ্গিনী নেই।

পান্থপথের কাছে বান্ধুবীর বাসায় আসে মৃত্তিকা। বিশেষ কোনো কারণ নেই, শুধুমাত্র বাংলাদেশের চাকরির অবস্থা জানার জন্যই এখানে আসা। ওর যেকোনো একটা চাকরি হলেই হবে, সে হোক বিশ-বাইশ হাজার টাকার। যার ভবিষ্যৎ নেই, তার টাকারও প্রয়োজন নেই।
______________________________________

বিকাল চারটায় ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় আহনাফ-সারাহ্। সারাহ্ নিষেধ করায় ছেলেটি এবারের যাত্রায় ছেড়ে দেয় আহনাফ, তবে সতর্ক করে দেয়।

বাসে বসে আহনাফ জিজ্ঞাসা করলো,
“ব°মির অভ্যাস আছে?”

সারাহ্ মাথা নেড়ে বলে,
“না।”

আহনাফ অন্যদিকে তাকায়। সারাহ্ বলে,
“একটা প্রশ্ন করি? ভ°য় দেখাবেন না।”

আফনাফ ফিক করে হেসে দেয়।
“আমি কি ভূ°ত যে তোমাকে ভ°য় দেখাবো?”
“আপনা..(একটু থেমে) আপনি তাকালেই আমার ভ°য় করে।”

আহনাফ সরাসরি বলল,
“কি প্রশ্ন করবে তাই করো।”
“ব°কা দিয়েন না, ওকে?”
“আচ্ছা বলো।”
একটু বি°র°ক্ত হয়েই বলে আহনাফ।

“আসলে জানতে চাইছিলাম কালকের ওই ঘটনায় আপনার কি জে°লা°স ফিল হয়েছিল?”

আহনাফ মাথা নেড়ে হাসে।
“জে°লা°স? তাও ওইটুকু একটা বাচ্চার সাথে? কম করে হলেও বারো-তেরো বছরের ছোট হবে আমার থেকে। জে°লা°স বলতে যা বোঝো এটা তা নয়। এটাকে প্রতি°রক্ষামূলক হিং°সা বলে। বোঝো এসব?”

এসব বিষয়ে সারাহ্ নিতান্তই কাঁচা। তাই আর কথা বাড়ালো না চুপচাপ জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকলো।

আহনাফ সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করলো। সারাহ্ আবারো ওর দিকে তাকালো। তাহসিনা নামের কেউ আছে যাকে আহনাফ ভালোবাসে, প্রচন্ড ভালোবাসে। এই একটা ভাবনা সারাহ্-কে বড্ড বেশি পী°ড়া দিচ্ছে। তাহসিনা যে ভালোবাসা পাচ্ছে সেটা ও কেন পেতে পারে না?

ঢাকায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত হয় ওদের। পুরো রাস্তা সারাহ্ নিরব থাকে। আহনাফ যে তাহসিনার সাথে দেখা করাবে ওকে। কিভাবে সহ্য করবে ও?
______________________________________

রাত আটটা, তানজিমদের বাসায় এসেছে মামা শাফিন ও মামী দেলোয়ারা। মৃত্তিকা উনাদেরকে আসতে বলেছে। শরীফের ব্যবহার নিয়ে আবারো সবার সাথে কথা বলছে মৃত্তিকা।

লুৎফর সাহেব ইমতিয়াজকেও খবর দিয়েছেন, যদিও তা মৃত্তিকা জানে না। ইমতিয়াজ মাত্রই এসেছে। মৃত্তিকা ডাইনিং এ বসে কথা বলছিলো ঘরের বড়দের সাথে।

“আসসালামু আলাইকুম।”

ইমতিয়াজ সকলের উদ্দেশ্যে সালাম দেয়, সালামের উত্তর দেন উনারা। মৃত্তিকা আড়চোখে ওর দিকে তাকায়।

দেলোয়ারা বললেন,
“হাতমুখ ধুয়ে আসো বাবা।”
“জি, মামানী।”

পকেট থেকে ফোন আর অফিসের আইডি কার্ড বের করে টি টেবিলের উপর রেখে তানজিমের রুমে চলে যায় ইমতিয়াজ।

ইমতিয়াজ ফ্রেশ হয়ে আসতেই লুৎফর সাহেব ওকে বললেন,
“একটা বড় সমস্যায় আছে মিউকো, সমাধান নেই।”

ইমতিয়াজ সোফায় বসতে বসতে বলল,
“কি হয়েছে আবার বাবা?”

শাফিন সাহেব বললেন,
“মিউকোর বাবা, ওকে প্রতিদিন একই বিষয়ে য°ন্ত্র°ণা দিচ্ছে। গতকালকেও চ°ড় দিয়েছে ওকে, প্রচন্ড খারাপ ব্যবহার করে। এমন অবস্থা চললে কি হয়?”

ইমতিয়াজ তাকালো মৃত্তিকার দিকে, চোখদুটো এখনো ছটফট করছে কান্নার জন্য। মৃত্তিকা ওর দিকে তাকাতেই ও চোখ ফিরিয়ে নিলো।

দেলোয়ারা চায়ের জন্য উঠে গেলেন। মৃত্তিকাও সাথে গেল।

লুৎফর রহমান বলেন,
“এইটুকু বয়সে একটু শান্তিও পাচ্ছে না। কি করা যায়?”

ইমতিয়াজ একটু ভাবে। তারপর বলে,
“ওর বাবার থেকে ওকে দূরে থাকতে হবে। এনি হাউ।”
“এটাই তো সমস্যার, সব জায়গায় হাজির হয়। যদিও মিউকো সাহসী, তবুও কবে কি হয়ে যায় বলা যায় না।”
লুৎফর রহমানের কথায় সবাই সম্মত হলো।

শাফিন সাহেব বলেন,
“মিউকোর বিয়ে দিতে হবে। একমাত্র ওর হাসবেন্ডই পারবে ওকে ওই লোকের কাছ থেকে দূরে রাখতে।”

মৃত্তিকা চা এনে সবাইকে দেয়। ইমতিয়াজের সামনে নিয়ে কাপ রাখতেই ইমতিয়াজ ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
“হ্যাঁ, মৃত্তিকার বিয়েই এটার সমাধান হতে পারে। আপনারা পাত্র দেখেন, আয়োজন দায়িত্ব আমি আর তানজিম নিলাম।”

মৃত্তিকা একটু সরে এসে একটা নিরব দৃষ্টি দেয় ইমতিয়াজের দিকে। চোখদুটো বারবার বলছে,
“আমাকে তোমার করে নাও। আর কাউকে চাই না আমি। আমার জীবনের সেই সৈ°ন্য হয়ে যাও তুমি, যে প্রতিনিয়ত ঢা°ল-ত°লো°য়ার নিয়ে আমাকে রক্ষা করবে।”

ইমতিয়াজ ওর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দেয়। সকলে একমত হলো, মৃত্তিকার বিয়ের প্রয়োজন।

শাফিন সাহেব বললেন,
“মা মিউকো, কিছু মনে করো না। বিষয়গুলো এখন খুবই স্বাভাবিক। কাউকে কি পছন্দ করো বা ইতালিতে কারো সাথে সম্পর্ক ছিল?”

মৃত্তিকা মাথানিচু করে বলে,
“না। আপনারা যা ভালো বুঝেন, তাই করেন।”

মৃত্তিকা বে°প°রো°য়া নয়, যথেষ্ট শান্ত। সে কি করে বলবে আপনাদের বাড়ির জামাইকেই আমি ভালোবেসেছি। তাহমিনার স্বামী ইমতিয়াজ আমার স্বপ্নেও আসে। ছি, এ কথা বলা মানে পরিবারের সামনে ওর মামের সম্মান বিলীন করা। নিজের অনুভূতিকে ঘৃ°ণা করতে থাকে মৃত্তিকা।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here