উধয়রনী #লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ ||পর্ব-১৪||

0
444

#উধয়রনী
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-১৪||

২১।
চারুশিল্পের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আহি। তার চোখ দু’টি ভিজে যাচ্ছে। আজ কতো বছর পর আবার এই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে সে। এই স্থানটি ঘিরে কতো মিষ্টি মুহূর্ত সৃষ্টি হয়েছিল তার জীবনে। সবুজ গেটটি এখন বিভিন্ন রঙে মিশে গেছে। সিমেন্ট খসে পড়া দেয়ালে এখন কারুশিল্পের ছাপ। আহি ভেতরে ঢুকতেই সেই চেনা-পরিচিত অনুভূতিটি তার হৃদয় স্পর্শ করে গেলো। চারুশিল্প প্রতিষ্ঠানটি এখন অনেক উন্নত হয়েছে। পাশে একটা আর্ট গ্যালারি খোলা হয়েছে। শিল্পীদের আঁকা বাছাই করা ছবিগুলো এই আর্ট গ্যালারিতে স্থান পায়। কারো ইচ্ছে করলে কিনে নিয়ে যায়। তবে আহি যখন চারুশিল্পে পড়তো তখন এই জায়গাটি উন্মুক্ত ছিল। প্যান্ডেল বেঁধে এখানে এক্সিভিশনের আয়োজন করা হতো। আহির জন্য সেই দিনটি ছিল সবচেয়ে চমৎকার একটা দিন। সেই দিনটি ছিল আহির জীবনের প্রথম ও শেষ এক্সিভিশন। যদিও সেই এক্সিভিশন তার ছিল। কিন্তু মুহূর্তটা তারই ছিল। আর সেদিনই সে আফিফের কাছ থেকে মিষ্টি একটা সাড়া পেয়েছিল।

…………………………..

আড়াই বছর পার হয়ে গেছে। আহি এখনো আফিফের সামনে এসে দাঁড়ায় নি। লিনাশা বার-বার আহিকে বলছে আফিফকে ভালোবাসার কথা সামনা-সামনি গিয়ে জানাতে। বেশি দেরী হয়ে গেলে হয়তো আহি আফিফকে হারিয়ে ফেলতে পারে। তবে চিরকুট আর ছবি আঁকা এখনো বন্ধ হয় নি। কয়েক মাসে কতো শত চিরকুট সে আফিফকে দিয়েছিল। আহি দূর থেকে দেখতো, আফিফ সেই চিরকুট পড়ে মিষ্টি হাসি হাসছে। কি মনোমুগ্ধকর সেই হাসি! আফিফ নিজেও আহির চিরকুটে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। যদিও সে কখনো ফিরতি চিরকুট লেখে নি। লিখেই বা কাকে দেবে? দেওয়ার তো কোনো ঠিকানা নেই। বেনামী পত্রগুলো সে পড়েই নিজের বুক পকেটে রেখে দিতো। আর আহি দূর থেকে তা দেখে মনে মনে বলতো,
“তুমি মানো বা না মানো, আমি তোমার অন্তরালেই তোমার হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছি। আমি জানি, তুমিও আমাকে ভালোবাসো।”

(***)

পৌষ মাসের শুরুতেই চারুশিল্পে এক্সিভিশনের জন্য হুড়োহুড়ি লেগে গেলো। উচ্চতর বিভাগে যারা পড়ছে, তারা সবাই এক্সিভিশনে ছবি দিচ্ছে। আহি আর আফিফ এখনো মাধ্যমিক বিভাগের শেষ সেশনে। হয়তো তাদের ছবি বাছাই নাও হতে পারে। তবুও আফিফকে স্যার একটু বেশিই পছন্দ করেন। তিনি ক্লাসে এসেই এক্সিভিশনের লিফলেটটি আফিফকে দিয়ে বললেন,
“হাতে এক মাস সময় আছে। একটা ভালো ছবি আঁকো। যদি ছবিটা বাছাই হয়ে যায়, তুমি একটা চমৎকার সুযোগ পেতে পারো। দেশের ভালো ভালো আর্টিস্টদের আমরা ইনভাইট করেছি। তাদের যদি
তোমার আঁকা ছবি পছন্দ হয়ে যায়, মনে করবে তোমার লাইফ সেট হয়ে গেছে।”

আফিফ স্যারের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো। স্যার আফিফের কাঁধে হালকা চাপড় মেরে ক্লাস নেওয়া শুরু করলেন। এদিকে আহি মনোযোগ দিয়ে আফিফকে দেখছে। এতো বড় সুযোগ পেয়েও আফিফ ওতোটা খুশি হয় নি, যতোটা খুশি হওয়া দরকার ছিল। এর পরের সপ্তাহের শুক্রবার ক্লাস শেষ হতেই আফিফ একপাশে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ স্যারের সাথে কথা বললো। আহি দূর থেকে দাঁড়িয়ে তাদের দেখছে। স্যার কিছুক্ষণ পর পর আফিফকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। আফিফও একটু পর পর শার্টের হাতায় চোখ মুছছে। এসব দেখে আহির সবকিছুই কেমন যেন ঘোলাটে মনে হচ্ছিল। আফিফ ধীরে ধীরে তার কাছে একজন রহস্যময় পুরুষে পরিণত হয়ে যাচ্ছিল। যেই রহস্য ভেদ করা আহির কাছে এতোটা সহজ মনে হচ্ছে না।
আফিফ স্যারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যেতেই আহি সেই স্যারের কাছে গেলো। হুট করে আফিফের কি হয়েছে তা জিজ্ঞেস করা সম্ভব না। তাই সে বলল,
“স্যার, আমাদের সেশন থেকে কেউ এক্সিভিশনে ছবি দেবে না?”

স্যার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
“আফিফকে বলেছিলাম। কিন্তু ও তো পারছে না।”

“কেন?”

“কিছু সমস্যা আছে হয়তো!”

আহির খুব ইচ্ছে করছিলো স্যারকে জিজ্ঞেস করতে কি সমস্যা তার এআরের? তাকে একবার বললে সে সব সমস্যার সমাধান করে দেওয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু আহি জানে সে যদি স্যারকে জিজ্ঞেসও করে বসে, তবুও তিনি বলবেন না। উলটো স্যারের কাছে এমন প্রশ্ন বেখাপ্পা মনে হবে। তাই সে আর বিষয়টা নিয়ে ঘাঁটলো না।

(***)

আফিফের প্রতিমূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে আছে আহি। আলতো হাতে মূর্তিটির হাতের মুঠোয় নিজের হাত পুরে দিলো। তারপর সেই মূর্তিটির কপালে নিজের কপালে ঠেকিয়ে বলল,
“এক্সিভিশনে তোমার ছবি আসবে। যদি সত্যিই তুমি আমাকে একটু হলেও অনুভব করো, তাহলে আমি তোমার তুলিতে জায়গা করে নিতে পারবো।”

এরপর আহি লিনাশাকে নিয়ে চলে গেলো শপিংয়ে। দোকান ঘুরে একটা সাদা শাড়ি কিনলো। শাড়ির সাথে মিলিয়ে কালো চুড়ি, কালো ঝুমকো জোড়া কিনে বাসায় চলে এলো। সেদিনই বাবার কাছ থেকে তার দামী ক্যামেরাটা ধার নিলো। তারপর চলে গেলো সবুজ বনানীর ভীড়ে। মোজাম্মেল চাচাকে সে আগেই জানিয়ে দিয়েছিল তার এমন একটা জায়গা লাগবে যেখানে সবুজ জঙ্গল থাকবে আর একটা শক্ত ডাল-পালাযুক্ত গাছ লাগবে। মোজাম্মেল চাচা আহিকে সেখানেই নিয়ে গেলেন। তারপর আহি মোজাম্মেল চাচার সাহায্যে সেই গাছে একটা দোলনা ঝুলিয়ে দিয়ে, সেই দোলনাটির সাথে লতা গাছ পেঁচিয়ে দিলো। ব্যস, আহির প্রাথমিক কাজ শেষ হতেই সে লিনাশার বাসায় গিয়ে সেই সাদা শাড়ির সাথে মিলিয়ে কালো চুড়ি, আর ঝুমকো জোড়া পরে নিলো। তারপর হাতে-পায়ে গাঢ় করে আলতা লাগিয়ে খোলা চুলে কয়েকটা অলকানন্দা ফুল লাগিয়ে নিলো। লিনাশা আহিকে আপাদমস্তক দেখে বলল,
“এআর তো তোকে দেখেই প্রেমে পড়ে যাবে।”

আহি লাজুক হেসে দৃষ্টি নামিয়ে নিলো। লিনাশা আহির হাত ধরে বলল,
“আহি একটা কথা বলি? তুই সত্যিই ওকে না পেলে পাগল হয়ে যাবি। দেরী করিস না দোস্ত। ওকে জানিয়ে দে। তুই ওর জন্য যা যা পাগলামো করছিস, আমার তোর জন্য ভীষণ মায়া লাগছে। যদি দিনশেষে ছেলেটা তোর না হয়ে অন্য কারো হয়ে যায়?”

আহি লিনাশার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালো। আর কাঁপা কন্ঠে বললো,
“এমন দিন আসবে না লিনু। আমি আমার সৃষ্টিকর্তার কাছে তাকে চেয়ে নিচ্ছি। আমার বিশ্বাস ও আমারই হবে। উনি কখনো আমাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেবেন না।”

“প্র‍্যাক্টিকাল কথা বল, আহি। সৃষ্টিকর্তার পরিকল্পনা মাঝে মাঝে আমরা বুঝি না। হয়তো আমাদের ভালোর জন্য তিনি এমন কাউকে আমাদের জীবনে আনবেন, যাকে আমরা চাই নি। তখন মেনে নিতে পারবি তো?”

আহি থমথমে কন্ঠে বলল,
“ও আমার এআর। আমি ছাড়া ওর জীবনে কেউ দীর্ঘস্থায়ী হবে না। এটা যদি আমার আশা হয়, তাহলে তা-ই। মানুষ কিন্তু স্বপ্ন দেখেই বাঁচে।”

“সব স্বপ্ন সত্য হয় না, আহি।”

আহি দৃঢ় কন্ঠে বললো,
“এআরকে আমি শুধু ভালোবাসি নি, ওকে আমি গভীরভাবে ভালোবেসেছি। সূক্ষ্মভাবে অনুভব করেছি। আমার হৃদয়টা যদি ভাগ হয়ে যায় তার এক অংশ জুড়ে সে থাকবে। বাকি অংশেও সে-ই থাকবে। আমার জীবনে তার চেয়ে প্রিয় কেউ নেই। তুই তো জানিস, আমার বাবা-মার সম্পর্ক কতোটা জটিল। তাদের দেখলে ভালোবাসা, অনুভূতি সবকিছুই আমার কাছে কেমন এলোমেলো মনে হয়। আমার এই অনুভূতির সৃষ্টি সেই মানুষটাকে ঘিরেই হয়েছে। আমি ভালোবাসতে শিখেছি তাকে দেখেই। এখন বল, এআরকে না পেলে আমি কেমন থাকবো? তাকে পাওয়ার স্বপ্ন অপূর্ণ থেকে গেলে, আমি স্বপ্ন দেখাই ভুলে যাবো। ও আমার পাশে থাকলে, আমি সব জয় করতে পারবো। ও আমার একমাত্র প্রেরণা।”

(***)

এক সপ্তাহ কেটে গেলো। এক্সিভিশনের জন্য আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি। আহি যদি আজ আফিফকে ছবিটা দিতে না পারে, তাহলে তার পুরো পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে। তাই আজ সে একটু আগেভাগেই চারুশিল্পের জন্য বেরিয়ে পড়লো। ক্লাসে পৌঁছেই আফিফের খাতা খুঁজে বের করে সেখানে ছবি আর চিরকুটটা রেখে বেরিয়ে গেলো। এরপর আফিফ ক্লাসে ঢুকতেই সেও ধীর পায়ে ক্লাসে ঢুকে পড়লো। আফিফ ডেস্ক থেকে তার খাতাটা যত্ন করে বের করলো। সে জানে এই খাতার ফাঁকে আজও কোনো না কোনো চিরকুট থাকবে। খাতাটা নিয়ে নিজের বেঞ্চে বসে পৃষ্ঠা উল্টাতে গিয়েই চমকে উঠলো আফিফ। আজ শুধু চিরকুট নেই, একটা ছবিও আছে। আফিফ ছবিটা দেখেই থমকে গেলো।
ঘন জঙ্গলের মাঝখানে একটা দোলনা ঝুলছে। সেই দোলনায় পা উঠিয়ে সাদা শাড়ি পরা একটা মেয়ে বসে আছে। তার আলতা রাঙা হাত আর চুলের ফাঁকে অলকানন্দা ফুলগুলো আফিফের চোখ ধাঁধিয়ে দিয়েছে। ছবিটা দেখেই আফিফ হুট করে উঠে দাঁড়ালো।
ব্যস্ত হয়ে এদিক-ওদিক সেই আলতা রাঙা হাতটি খুঁজতে লাগলো। আহি আফিফকে কিছু খুঁজতে দেখেই একটা বই খুলে সেটার দিকে তাকিয়ে রইলো। এরপর আফিফকে তার বেঞ্চে বসে যেতে দেখে আহি আবার তার দিকে তাকালো। আফিফ এবার চিরকুটটা হাতে নিলো। চিরকুট খুলতেই আফিফের ঠোঁটে সেই মিষ্টি হাসির রেখা ফুটে উঠলো। চিরকুটে লেখা-
“প্রিয় অলকানন্দ,
ফুলের নামটা তোমার সম্বোধনে বেমানান। তাই তুমি আমার কাছে অলকানন্দ। আমি না হয় তোমার অলকানন্দা হয়েই থাকবো। শোনো না, তোমার পছন্দে নিজেকে সাজাতে ভালো লাগে। তাই আজ প্রথম তোমার পছন্দে সেজেছি। কি ভাবছো, আমি এতোকিছু কীভাবে জানি? আমার মতো করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তোমাকে কেউ ভালোবাসবে না অলকানন্দ। এই প্রিয়, শোনো না, কেন আঁকবে না ছবি? আগামী সপ্তাহে তোমার রং-তুলি ফিঁকে হোক, আমি চাই না। অন্তত আমার এই ছবিটার সৌভাগ্য হোক। কবে তোমার সামনে বসবো, কবে তুমি আমার দিকে তাকিয়ে আমাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখবে, তারপর ছবি আঁকবে, সেই অপেক্ষায় থাকতে পারছি না। আমি আজ তোমার কাছে খোলা প্রচ্ছদ। প্রচ্ছদই তো একটি বই কেনার প্রথম আকর্ষণ হয়, তাই না? আমিও ঠিক তেমনি তোমার শিল্পী হওয়ার প্রথম আকর্ষণ হতে চাই। আমি তোমার মাখানো রঙের ফাঁকে আটকে থাকতে চাই। সাদা শাড়ি, হাত ভর্তি চুড়ি আর আলতা রাঙা হাত এসব ছাড়া না-কি কোনো নারী প্রেয়সী হয় না। আর আজ আমি তোমার প্রেয়সী হয়েছি। এখন আমার প্রেম গল্প কি তোমার ক্যানভাসে তুলবে না, প্রিয়?”

এতো চমৎকার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের সাধ্য কারো নেই। আফিফেরও হয় নি। সে পরের সপ্তাহে এক্সিভিশনের জন্য সেই ছবিটিই আঁকলো।

(***)

এক্সিভিশনের দিন আফিফের আঁকা ছবিটি প্রথম সারিতে রাখা হয়েছিল। আফিফ দূরে বসিয়ে রাখা চেয়ারে বসে তার ছবিটির দিকে তাকিয়ে আছে। সে ভাবছে, আজ অন্তত মেয়েটাকে সে চিনে নিতে পারবে। এতো ছবির মধ্যে নিজের ছবি দেখলে যে কারো অনুভূতি তার চোখে প্রকাশিত হবে। আফিফ সেই মুহূর্তটির অপেক্ষা করছিল। আহি দূর থেকে আফিফকে লক্ষ্য করছে। আফিফ যে তাকে হাতে-নাতে ধরার পরিকল্পনায় আছে, তা সে ভালোভাবেই বুঝে ফেলেছে। আজ অন্তত সে আফিফের মুখোমুখি দাঁড়াতে চায় না। এখন আহি আফিফের চোখের আড়াল হয়ে ছবিটা কীভাবে দেখবে? তাই লিনাশাকে ফোন দিয়ে আসতে বললো আহি। লিনাশা এসেই আহির কথামতো ছবিটির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। ছবিটির দিকে তাকিয়ে লিনাশা হাসলো। আফিফ দূর থেকে লিনাশাকে হাসতে দেখে চমকে উঠলো। সে উঠে দাঁড়াতেই লিনাশা ফোন হাতে নিয়ে আফিফের আঁকা ছবিটি তার ফোনে ধারণ করে নিলো। বাঁধাই করা ছবিটিতে হাত রাখতেই আফিফ লিনাশার সামনে এসে দাঁড়ালো। লিনাশা আফিফকে দেখেই চিনে ফেলেছে। সে ভ্যাবাচেকা খেয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো। আফিফ ভ্রূ কুঁচকে বললো,
“আপনি এই ছবির মেয়ে নন। তাহলে আপনি কি তাকে চেনেন?”

লিনাশা আমতা-আমতা করে বলল, “কার কথা বলছেন?”

“যার ছবি আমি এঁকেছি।”

“কার ছবি এঁকেছেন?”

আফিফ লিনাশার ফোনটা দেখিয়ে দিয়ে বলল,
“ছবি কেন তুললেন?”

“ছবিটা দেখতে সুন্দর তাই।”

“এর চেয়ে সুন্দর ছবি এখানে আছে। নিশ্চয় আপনি তাকে চেনেন?”

লিনাশা আফিফের কথায় ঘাবড়ে গেলো। ছবিটার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি এটা কিনে নিতে চাচ্ছি।”

আফিফ ছোট একটা কাগজ লাগিয়ে দিয়ে বলল,
“এটা বিক্রির জন্য নয়।”

লিনাশা আফিফের গম্ভীর কথাবার্তা শুনে সেখান থেকে পালিয়ে চলে গেলো। আফিফ পিছু নিতে গিয়েও নেয় নি। তার ধারণা সঠিক ছিল। মেয়েটা হয়তো এই ছবির মেয়েটিকে ভালো করেই চিনে। লিনাশাকে আজ আফিফ প্রথম দেখেছে। এই মেয়েটা কখনোই ছবির মেয়েটি হবে না। কারণ যে আফিফকে চিরকুট দেয়, সে চারুশিল্পেই ক্লাস করে।

(***)

লিনাশা আহির দিকে ফোন এগিয়ে দিয়ে বলল,
“আহি, ছেলেটা তোর অপেক্ষায় বসে আছে। ছেলেটা নিশ্চিত তোর সাথে কথা বলতে আগ্রহী। দেরী করিস না। গিয়ে জানিয়ে দে।”

আহি লিনাশার ফোনে আফিফের আঁকা নিজের ছবিটা দেখে মুচকি হাসলো। ছবির নিচে কিছু একটা লেখা আছে। আহি ফোনে তোলা ছবিটি ভালোভাবে খুঁটিয়ে দেখেও বুঝলো না। লেখাটা ফোনে ঝাপসা হয়ে গেছে। লিনাশা আহিকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল,
“বাদ দে। যখন প্রেম শুরু হয়ে যাবে, তখন জিজ্ঞেস করে নিস। হয়তো তোর জন্য কোনো মেসেজ ছিল।”

………………………………..

আহি আর্ট গ্যালারির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। রাদের ঝাঁকুনিতে আহি তার দিকে তাকালো। রাদ আহির চোখে অশ্রু জমতে দেখে বলল,
“যে তোর নেই, তাকে নিয়ে আর কতো ভাববি, আহি?

আহি মলিন মুখে বললো,
“এখান থেকেই তো আমার প্রেমের গল্পটা শুরু হয়েছিল। আমি ভুলে যাওয়া শিখি নি। তাই ভুলতে পারি না। এই জায়গা, ওখানে বসে থাকা, এই পথ ধরে তার হেঁটে যাওয়া, আমি সব অনুভব করতে পারি। শুধু ওকে স্পর্শ করতে পারি না।”

রাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“আজ আমার জন্মদিন, আহি। তুই অন্তত আমাকে কষ্ট দিস না।”

“আমি ওর কথা বললে তুই কেন কষ্ট পাবি?”

রাদ মলিন হাসলো। মনে মনে বলল,
“তোকে ভালোবাসি বলে অন্য কারো প্রতি তোর ভালোবাসা দেখলে কষ্ট পাই। আমাকে যদি এভাবে ভালোবাসতি, সব সুখ তোর নামেই লিখে দিতাম।”

আহি রাদের দিকে কৌতুহলি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রাদ বলল,
“এখানে একটা নতুন রেস্টুরেন্ট খুলেছে। ভেবেছি দেশে আসলে প্রথম জন্মদিনে তোকে আর লাবীবকে সেখানে ট্রিট দেবো। আগে যদি জানতাম রেস্টুরেন্টটার পাশেই সেই তেলাপোকার বাসা, কখনো তোকে এদিকে নিয়ে আসতাম না।”

আহি রাদের হাত ধরে বলল, “সরি।”

রাদ হাত সরিয়ে নিয়ে বলল,
“যা ভাই। তোর সাথে কথাই বলবো না।”

আহি কান ধরে বলল,
“সরি। ওর কথা আর বলবো না। এখান থেকে বেরিয়ে যাই, চল। এখানে থাকলে আমারও কষ্ট বাড়বে, তোরও মন খারাপ হবে।”

রাদ আহির গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
“এই যে আমার কারণে তুই ওই তেলাপোকাকে মাথা থেকে নামিয়ে দিস, ভীষণ ভালো লাগে রে। মনে হয় তোর উপর আমার অধিকার পাকাপোক্ত হচ্ছে।”

আহি রাদের কথায় হাসলো। রাদ আহির হাত ধরে তাকে চারুশিল্পের বাইরের নিয়ে এলো।

২২।

লাবীব আর আহি রাদকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা দিতেই রাদ কেক কাটলো। তারা একসাথে ঠান্ডা পানীয় নিয়ে বসেছে। লাবীব চেয়ার্স বলতেই আহির ঠোঁটের হাসিটা মুহূর্তেই মিলিয়ে গেলো। দেশে আসার পর প্রথম তারা তিনজন কোথাও বসে আড্ডা দিচ্ছে। কয়েক বছর আগে আহির আড্ডা জমতো পদ্ম, লিনাশা আর পুষ্পের সাথে। কিন্তু আজ আহির জীবনে তাদের তিনজনের স্থান ব্লক লিস্টে। হাতের গ্লাসটা টেবিলের উপর রেখে জানালার বাইরে তাকালো।
দু’তলা রেস্টুরেন্ট। কাচের জানালা দিয়ে ব্যস্ত রাস্তা দেখা যাচ্ছে। আহি সেদিকেই তাকিয়ে আছে। পলি আপু গ্রুপটা এখন জীর্ণশীর্ণ হয়ে আছে। কোথায় তারা একসাথে বসে আড্ডা দেওয়ার কথা ছিল, এখন কি হয়ে গেলো! আজকে এমন একটা দিন আসবে তারা হয়তো কখনোই ভাবে নি। হঠাৎ আহি কি মনে করে ফোনটা হাতে নিলো। নতুন একাউন্ট খুলেছে সে। পুরোনোটাতে ঢুকতে ইচ্ছে করে না তার। গত চার বছরে ঢুকেও দেখে নি। কিন্তু পাসওয়ার্ডটা তার এখনো মনে আছে। সেই পাসওয়ার্ডটা টাইপ করতে কষ্ট হবে বলেই ঢুকে নি। কিন্তু আজ একবার সেই ফেইসবুক একাউন্টটাতে ঢুকতে ইচ্ছে করছে। আহি তার এই ইচ্ছেটা অপূর্ণ রাখলো না। পাসওয়ার্ড লিখলো, এআরের অলকানন্দা হতে চাই। সাথে সাথেই লগ ইন হয়ে গেলো। লগ ইন হতেই আহির ভেতরটা হুঁহুঁ করে উঠলো। ইনবক্সে ঢুকতেই সামনে ভেসে উঠলো তিনটা ইনবক্স। উপরেই পুষ্পের মেসেজ। তিন বছর আগে শেষ মেসেজ দিয়েছিল সে। মেসেজগুলো দেখতেই আহির চোখ ভিজে উঠলো। পুষ্প লিখেছিল,
“আহি তুই এভাবে আলাদা হয়ে গেলি কেন? পদ্ম অনেক বার তোর কথা জিজ্ঞেস করেছে। ও নাকি তোকে খুঁজে পায় না। লিনাশার সাথে তোর কি হয়েছে? ওকে কতোবার জিজ্ঞেস করলাম, কিন্তু ভীষণ রেগে আছে তোর উপর। কি করেছিস তুই? সেদিন দেখা হলো, বললো তুই নাকি সব নষ্টের মূল। কেন আহি? তোদের সম্পর্ক তো এমন ছিল না। আহি অন্তত আমার সাথে যোগাযোগ করিস। ভুলে যাস না যেন। লিনাশা বললো, তুই দেশের বাইরে চলে যাচ্ছিস। হঠাৎ কেন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিস?”

আহি মলিন হাসলো। পরের মেসেজটি এসেছিল লিনাশার কাছ থেকে। শেষ মেসেজ দিয়ে সে লিখেছিল,
“তোকে শেষ একটা কথায় বলবো, আফিফকে ভুলে গেলেই তোর জন্য ভালো হবে। এককালে বন্ধু ছিলাম, তাই বলছি। এখন আর তোর সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।”

সেদিন আহিকে উত্তর দেওয়ার সুযোগ দেয় নি লিনাশা। সে নিজেই ব্লক করে দিয়েছিল আহিকে। শেষ মেসেজটি ছিল পদ্মের। সে লিখেছে,
“সেদিন যে চলে গেলি, আর কথাও বললি না। লিনাশা বললো, তুই না-কি সেদিন বৃষ্টিতে ভিজে খুব অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলি। বাড়িতে থেকে যেতে পারতি। মা তো ছিল।”

আহি নিজেই মেসেজটা দেখে পদ্মকে ব্লক করে দিয়েছিল। এরপর আহি ঢুকলো পলি আপু গ্রুপটিতে। তাদের চারজনের গ্রুপ। লিনাশা সবার আগেই সেই গ্রুপ থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। যাওয়ার আগে লিখেছিল,
“এতোটুকুই হয়তো আমাদের বন্ধুত্বের যাত্রা ছিল।”

পুষ্প আর পদ্ম সেই মেসেজের উত্তরে অনেক প্রশ্ন করেছিল। কিন্তু লিনাশা সেই যে গ্রুপ ছাড়লো, আর ঢুকে নি। আহি সেই গ্রুপে কোনো মেসেজ দেয় নি। সেও বেরিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এখনো আর্কাইভে মৃত পড়ে আছে সেই গ্রুপটি। সেদিন তারা কি অদ্ভুত কাজটাই না করেছিল! ফলস্বরূপ তাদের ছোট বেলার বন্ধুত্বটা এখন আধুনিক প্রযুক্তির ব্লক লিস্টে স্থান পেয়েছে। এভাবে কি বন্ধু হারিয়ে যায়?

হঠাৎ আহির কানে ভেসে এলো একটি গান। আহি বুঝতে পারছে না, রেস্টুরেন্টে হঠাৎ এই গানটিই কেন ছাড়লো?

“এক হারিয়ে যাওয়া বন্ধুর সাথে
সকাল-বিকেল বেলা
কত পুরোনো-নতুন পরিচিত গান
গাইতাম খুলে গলা।
কত এলোমলো পথ হেটেছি দু’জন
হাত ছিলো না তো হাতে
ছিল যে যার জীবনে দু’টো মন
ছিল জড়াজড়ি একসাথে।
কত ঝগড়া-বিবাদ, সুখের স্মৃতিতে
ভরে আছে শৈশব
তোকে স্মৃতিতে স্মৃতিতে এখনও তো
ভালোবাসছি অসম্ভব।
কেন বাড়লে বয়স
ছোট্ট বেলার বন্ধু হারিয়ে যায়
কেন হারাচ্ছে সব,
বাড়াচ্ছে ভীড় হারানোর তালিকায়।
আজ কে যে কোথায় আছি
কোনো খবর নেই তো কারও
অথচ তোর ওই দুঃখগুলোতে
অংশ ছিল আমারও।
এই চলতি জীবন ঘটনাবহুল
দু’এক ইঞ্চি ফাঁকে
তুই তো পাবি না আমায়
আর আমিও খুঁজি না তোকে
কত সুখ পাওয়া হয়ে গেল,
তোকে ভুলে গেছি কতবার
তবু শৈশব থেকে তোর গান যেন
ভেসে আসে বারবার।”

গানটি শুনতে চাচ্ছিলো না আহি। তবুও কানে ভেসে আসছে। অসহ্য লাগছে তার। আজ রাদের জন্মদিন, কিন্তু তার কান্না পাচ্ছে। সে কাঁদতে চাচ্ছে না, তবুও বেহায়া অশ্রুগুলোকে থামাতে পারছে না সে। হঠাৎ আহির কানে একটা পরিচিত কণ্ঠের স্বর ভেসে এলো। আহি অশ্রু আড়াল করে রাদের দিকে তাকালো। দেখলো রাদ অবাক দৃষ্টিতে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। আহি রাদের দৃষ্টি অনুসরণ করে পাশ ফিরে তাকাতেই স্তব্ধ হয়ে গেলো।

সেই পরিচিত কণ্ঠে তাকে আবার ডাকলো সেই পরিচিত মুখটি।

“আহি!”

আহি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। রাদ আর লাবীবও উঠে দাঁড়ালো। মেয়েটি আহির দিকে হাত এগিয়ে দিয়ে বলল,
“আহি, তুই!”

আহি অস্ফুটস্বরে বলে উঠল, “পুষ্প!”

(***)

দুই বান্ধবী একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। রেস্টুরেন্ট ম্যানেজার একবার উঁকি দিয়ে দেখে গেলেন। যারাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে তাদেরকেই রাদ উত্তর দিচ্ছে,
“অনেক বছর পর দুই বান্ধবীর দেখা হয়েছে তাই কাঁদছে।”

পুষ্প আহির গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
“কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলি? একটা কলও কি দেওয়া যায় না?”

আহি মলিন মুখে বললো,
“সরি রে। অনেক ভুল করে ফেলেছি।”

“দেশে কবে এসেছিস?”

“এই তো এই মাসেই এসেছি।”

“আবার চলে যাবি?”

“জানি না। বাবা যা ভালো মনে করেন।”

“চল না একটু বসি। কিছুক্ষণ কথা বলি।”

আহি রাদের দিকে তাকালো। রাদ চোখের ইশারায় বললো পুষ্পকে সময় দিতে। পুষ্প রাদের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তোমাকে আমি চিনি মনে হচ্ছে।”

রাদ হেসে বলল,
“রিদমাম, রোল ০৩।”

“আমাদের স্কুলের রিদমাম?”

“হ্যাঁ।”

পুষ্প আহির দিকে তাকিয়ে বলল,
“ওকে কোথায় পেয়েছিস তুই?”

রাদ বলল,
“আমার সাথে ওর কথা হতো। ওর নানার বাড়ির পাশেই আমার বাড়ি। এরপর ইউকে গিয়ে বন্ধুত্বটা আরো জমলো।”

লাবীব পুষ্পের দিকে হাত এগিয়ে দিয়ে বলল,
“আমাকে চিনেছো?”

পুষ্প লাবীবের হাতের দিকে ভ্রূ কুঁচকে তাকিয়ে বলল,
“না, কে আপনি?”

লাবীব বিষ্ময়ভরা কন্ঠে বললো,
“রাদকে তুমি, আর আমাকে আপনি? আমিও সেই স্কুলেই পড়তাম।”

“নিশ্চয় ব্যাকবেঞ্চার। ব্যাকবেঞ্চারদের কেউ মনে রাখে না।”

পুষ্পের কথায় রাদ আর আহি মুখ চেপে হাসলো। আর লাবীবের মুখটা লাল হয়ে গেলো। সে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিতেই পুষ্প আহিকে বলল,
“চল, তোর সাথে অনেক কথা আছে।”

(***)

“লিনাশার সাথে কথা হয় না তোর?”

আহি পুষ্পের প্রশ্নে মাথা নেড়ে বলল, “না।”

“পদ্মকে তুই ব্লক করে দিয়েছিস কেন?”

“এমনিতেই।”

“কিছু একটা তো হয়েছে।”

“জানাতে পারবো না, তাই তো ব্লক করে দিয়েছিলাম।”

“আমাকে তো করিস নি।”

“সবাইকে করে দিলে যদি পরে কাউকে খুঁজেই না পাই!”

“খুঁজে পাওয়ার ইচ্ছে ছিল তাহলে?”

“হুম। তোদের কথা খুব মনে পড়ে। এখন তোর কি অবস্থা বল?”

“ভালো। অনার্স শেষ হলো, এখন মাস্টার্সে ভর্তি হবো।”

“আমিও তো।”

“সত্যিই! চল একসাথে ভর্তি হই। যদিও আমাদের আলাদা সাবজেক্ট, তাও অন্তত এক জায়গায় থাকবো। বিশ্বাস কর, আমি গত চার বছরে মনের মতো একটা বন্ধুও পাই নি। তোদের মতো কেউ হয় না রে। আমার মতো এলোমেলো মেয়েটাকে শুধু তোরাই বুঝেছিস।”

“বিয়ে করবি না?”

“আরেহ ধুর, এসব ঝামেলায় কে যাচ্ছে? বাসা থেকেও ওতো চাপ দেয় না। বাবা চায়, আমি আগে চাকরি ধরি। তারপর বিয়ে দেবে।”

“নিশ্চয় ঠিক করে রেখেছে।”

“হ্যাঁ, ওই, সেই ছেলেটা।”

আহি হেসে বলল, “তোর সেই ফুফাতো ভাই?”

“হ্যাঁ রে। সেই ভ্যাবলাটার সাথেই না-কি বিয়ে দেবে। কেন যে একটা প্রেমে পড়লাম না! অন্তত ভ্যাবলাটার হাত থেকে বাঁচতাম। এখন তো বলতেও পারছি না বিয়ে করবো না। অজুহাত দেওয়ার মতোও কোনো ছেলে হাতে নেই।”

আহি পুষ্পের কথায় নীরবে হাসলো। পুষ্প হঠাৎ ভ্রূ কুঁচকে আহির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“তোর এআরের খবর কি?”

আহি পুষ্পের প্রশ্নে চমকে উঠলো। প্রসঙ্গ পালটে বলল,
“জানি না। এসব কথা বাদ দে। বাকিদের কি খবর? লিনাশা, পদ্ম, কথা হয় ওদের সাথে?”

“হুম, লিনাশার সাথে প্রায়ই কথা হয়। দেখাও হয়। ওর বয়ফ্রেন্ডটা সে-ই স্মার্ট রে। হয়তো কয়েক মাসের মধ্যেই বিয়ের দাওয়াত পাবো।”

আহি মলিন হেসে বলল, “ভালো। পদ্মের কি অবস্থা?”

“বলিস না ভাই। মেয়েটা ঝামেলায় আছে। ওর তো ইন্টারের পরই বিয়ে হয়ে গিয়েছিল, মনে আছে?”

“হুম।”

“সংসার ভালো যাচ্ছে না।”

আহি ভ্রূ কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
“কেন? ওতো প্রেম করে বিয়ে করেছিল।”

“হুম, ছেলেটা ভালো। কিন্তু ছেলের মা ভীষণ খারাপ।”

“কি বলিস!”

“হ্যাঁ রে। পদ্ম মা হতে পারছে না। এতো বছরে একটা বাচ্চাও হয় নি। তাই মহিলাটা ঝামেলা করছে। ছেলেকে না-কি আরেকটা বিয়ে করতে বলছে।”

আহি মলিন মুখে বললো,
“মেয়েটা ভীষণ লক্ষী রে। তিনি হয়তো আসল হীরে চিনতে পারেন নি। সন্তান দিয়ে কি হয়? স্বামী-স্ত্রী সুখে থাকাটাই গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ ভালো মানুষগুলোকে সন্তান কেন দেন না বুঝি না। যারা সন্তানের মূল্য বুঝে না তাদের সন্তান দিয়ে, উলটো সেই সন্তানের জীবনটাও নরক বানিয়ে দেন।”

(***)

বাসায় ঢুকতেই আহি থমকে দাঁড়ালো। লাবণি হাসিমুখে আহির দিকে এগিয়ে এসে বলল,
“আহি, দেখো দেখো কারা এসেছে!”

আহি ভ্রূ কুঁচকে বললো, “ওরা এখানে কি করছে?”

“তোমার বিয়ের কথাবার্তা চলছে। সামনের শুক্রবার তোমার আর তাজওয়ারের আক্দ।”

আহি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। তাহলে কি এবার কল্পনায়ও আর আফিফ জায়গা পাবে না? তার আত্মাও কি তার প্রিয় অলকানন্দকে হারিয়ে ফেলবে?

(🍂আগামীকাল আরেকটা পর্ব আসবে।)

চলবে-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here