এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️ #লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️ — পর্বঃ১৩

0
403

#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১৩

কক্সবাজার থেকে বেশ খানিকটা দূরে এক বিশাল পপি গাছের বাগান রয়েছে ফারিশের। যে পপি উদ্ভিদ থেকে তৈরি হয় আফিমসহ আরো নানা ধরনের নেশাদ্রব্য। বিশাল একটা জমি ভর্তি করে তৈরি হচ্ছে আফিমের গাছ। ফারিশ এই আফিমের গাছ দিয়েই তৈরি করে ঔষধদ্রব্য। প্রতিবছরই আফিমের ফলন বেশ ভালো হয়। কিন্তু এবার বীজ বপন করা হলেও গাছের সংখ্যা হচ্ছে কম। মাটিতে সমস্যা হয়েছে নাকি অন্যকিছু ধরতে পারছে না কেউ। বিষয়টায় বেশ চিন্তিত ফারিশ।

আফিম গাছের বাগান থেকে বেশ খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে ফারিশ। দৃষ্টি তার সামনের বাগানের দিকে। ফারিশের পাশেই দাঁড়ানো আদিব। ফারিশ প্রশ্ন করলো,“আলতাব চাচা এখনও আসে নি আদিব?”

আদিব নড়েচড়ে উঠলো। বিচলিত গলায় বললো,
“বুঝচ্ছি না ভাই।”
“ফোন করো তো।”

আদিব শুনলো। দ্রুত একটু দূরে গিয়ে ফোন করলো আলতাব চাচাকে। আলতাব হলো এই বাগানের কৃষক। উনিসহ আরো অনেকেই আফিমের চাষাবাদ করে থাকেন। আজ সবাইকেই দ্রুত এখানে আসার জন্য বলা হয়েছে কিন্তু কেউই এখনো পৌছাতে পারে নি যার জন্য ফারিশের রাগ লাগছে। কিন্তু সে শান্ত। আদিব কল করার দু’সেকেন্ডের মধ্যেই ফোন তুললো আলতাব। থরথর করে বললেন তিনি,
“আদিব বাবা তোমরা আইয়া পড়ছো?”
“হুম চাচা। আপনারা কই?”
“এই তো আমরা রাস্তায়। প্রায় আইয়া পড়ছি।”

আদিব শুনলো। ফারিশকে এক ঝলক দেখে বললো,“তাড়াতাড়ি আহেন চাচা ভাই কিন্তু রেগে যাবেন নয়তো।”

আলতাবও ঘাবড়ে গিয়ে বললেন,“এই তো আইয়া পড়ছি আমরা।”

ফারিশ আওয়াজ করলো। আদিবকে উদ্দেশ্য করে বললো,“ওনারা কতদূর আদিব?”

আদিবও কান থেকে ফোন সরিয়ে দ্রুত জবাব দিলো,“এই তো ভাই পাঁচ মিনিটের মধ্যেই চলে আসবে।”

ফারিশ কিছু বলে না। পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সামনের বাগানগুলোর দিকে। নভেম্বর মাস চলছে। আফিমের বীজ গত মাসেই দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেই বীজ ভেঙে এখনও গাছ আসার কোনো নামগন্ধ নেই। অথচ আগের বছরগুলো বীজ দেয়ার দু’সপ্তাহের মাঝেই বীজ ভেঙে গাছ দেখা যায়।

সময় গড়ালো। ঠিক চার মিনিটের মাথাতেই আলতাবদের আগমন ঘটলো। তাদের ভয় লাগছে। এবারের ফসলের করুন অবস্থা দেখে তারাও বেশ অবাক হচ্ছে। আদিব এগিয়ে এলো। ফারিশের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,“ভাই আলতাব চাচারা চলে এসেছেন।”

ফারিশ ঘুরে তাকালো। আলতাব এগিয়ে আসলো। ফারিশ শান্ত স্বরে বললো,“কেমন আছেন চাচা?”

আলতাব ধীর স্বরে উত্তর দিলো,
“ভালো বাবা। তুমি?”
“আমিও ভালো। গাছের কি সমস্যা হয়েছে চাচা?”
“আমিও ধরবার পারছি না।”
“ডাক্তার কি ডাকা হয়েছিল?”
“হ কইছে কোনো ভেজাল নাই সপ্তাহ পার হইলেই নাকি গাছ উঠবো।”
“গাছের যত্ন ভালোভাবে নেয়া হচ্ছে তো চাচা?”
“হ বাবা।”
“নতুন কোনো মালি এনেছো এখানে?”
“না সবাই পুরান।”

ফারিশ আর কোনো প্রশ্ন করলো না। এগিয়ে গেল বাকি বাগান পরিচর্যা করা মানুষদের দিকে। কিছুক্ষণ সবাইকে দেখে বললো,“গাছের ফলন ভালো হলে আপনাদের বেতন বারিয়ে দেয়া হবে।”

মালিরা খুশি হলেন। ফারিশ তার চোখে সানগ্লাস পড়লো। আদিবকে উদ্দেশ্য করে বললো,“আদিব চলো।”

আদিব শুনলো সবাইকে বাই জানিয়ে চলে গেল ফারিশের পিছন পিছন। ফারিশ যেতেই সবাই নিশ্বাস নিলো। তারা ভেবেছিল ফারিশ চেচামেচি করবে কিন্তু করলো না ভেবে তাদের শান্তি লাগছে।’
—–
বেলা প্রায় সাড়ে এগারোটা। বেঘোরে ঘুমাচ্ছে আদ্রিতা। তাকে অনেকবার ডাকা হলেও তার ঘুম ভাঙে নি। শেষমেশ তাকে রেখেই বীচে চলে গেল আশরাফ, মুনমুন,মৃদুল, রনি আর চাঁদনী। আদ্রিতার ফোন বাজলো। ফোনের শব্দে আদ্রিতার ঘুম ভাঙলো। ঘুমের মাঝেই সাঁতরে ফোনটা হাতে নিলো। কোনোমতে কানের কাছে ফোনটা রেখে মিনমিনিয়ে বললো,
“হ্যালো কে?”

সঙ্গে সঙ্গে এক বিশ্রী ভাষায় গালি দিয়ে বললো মৃদুল,
“তুই এখনো ঘুমাচ্ছিস হারামি?”

আদ্রিতার ঘুম উড়ে গেল। শক্তপোক্ত কণ্ঠে বললো,
“সকাল সকাল মেতাচ্ছিস কেন?”
“মেতামু না ছ্যামড়ি তোর জন্য এখনো নাইতে নামি নাই আমি?”
“তোর শরম করে না গোসল করতে যাবি আমারে ডাকিস।”
“বদমাশ মাইয়া সমুদ্রে নামু।”

‘সমুদ্র’ কথাটা কানে আসতেই আদ্রিতার মনে পড়লো তারা কক্সবাজার আছে। আদ্রিতা এবার শোয়া থেকে উঠে বসলো। আশেপাশে তাকিয়ে বললো,
“তোরা আমারে রাইখা সমুদ্রে গেছো গা?”
“তোরে এখন ইচ্ছে করে কি জানিস? হোটেল দিয়া তুইল্লা আইন্না পানিতে চুবাইতে।”
“আরে রেগে যাচ্ছিস কেন?”
“তোকে কতবার ডাকা হয়েছিল জানিস?’
“সত্যি ডাকছিলি।”
“মরার মতো ঘুমাইয়া থাকলে টের পাবি কেমনে। এ এখন বেশি কথা না বইলা তাড়াতাড়ি সমুদ্রে আয়। আমরা অপেক্ষায় আছি।”

আদ্রিতা আদুরে স্বরে বললো,
“আমি ব্রেকফাস্ট করমু না দোস্ত।”
“করা লাগবে।’

আদ্রিতা মোবাইল কানে রেখেই মাথা নাড়ালো। মৃদুল বললো,
“লাগলে, ব্রেকফাস্ট করেই আয়।”
“আচ্ছা তোরা চিল কর আমি আধঘন্টার মধ্যে আসছি।”
“আচ্ছা। দ্রুত আসিস। তুই ওয়াশরুমে ঢোক আমি তোর ব্রেকফাস্টের ব্যবস্থা করছি।”

আদ্রিতা শুনলো। মৃদু হেসে দ্রুত ছুুটলো ওয়াশরুমে। ঠিক আধঘন্টার মধ্যেই হাল্কা তৈরি হয়ে হোটেল থেকে দিয়ে যাওয়া খাবার খেয়ে বীচের উদ্দেশ্যে বের হতে নিলো আদ্রিতা। সিঁড়ি বেয়ে খুব দ্রুতই নামতে লাগলো। তিনতলা বেয়ে নিচে নামতেই তার সঙ্গে দেখা হলো ফারিশের। ফারিশ তখন সিঁড়ি বেয়ে নিজ রুমে যাচ্ছিল। আদ্রিতা ফারিশকে দেখেই থমকে গেল বুকটা কেঁপে গেল হুট করে। আচমকা সামনে চলে আসায় পায়ের গতি কমাতে না পেরে হুমড়ি খেয়ে পড়লো ফারিশের উপর। মাথা ঠেকলো ফারিশের বুকে। ফারিশ তাকে ধরলো। চোখাচোখি হলো দুজনের। আদ্রিতার থমথমে মুখ। এই লোকটার সাথে সবসময় তার দূর্ঘটনা কেন ঘটে!’

আদিব তখন কেবলই সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে বললো,“ভা..

পুরো কথা বলার আগেই ফারিশ আর আদ্রিতাকে একসাথে দেখে সে চরমভাবে চমকালো। এই মেয়ে এখানে কি করছে! আদিব কোনো কথা না বলেই নিচে নেমে আসলো। তার পায়ের ধ্বনি পেতেই আদ্রিতা সরে গেল। বিচলিত কণ্ঠে বললো,
“আমি খুব দুঃখিত।”

ফারিশের রাগ হলো। ক্ষিপ্ত মেজাজে বললো,
“আপনি ডাক্তার নাকি ঝামেলা? যখন তখন সামনে এসে খালি ঝামেলা করছেন।”

আদ্রিতার গায়ে লাগলো কথাটা। খানিকটা উচ্চ স্বরেই বললো,
“আমি ইচ্ছে করে কোনো কিছুই ঘটাই না বুঝলেন। আপনি হুট করে চলে আসায় ঘাবড়ে গেছিলাম মাত্র।”

ফারিশ আদ্রিতার চোখের দিকে তাকালো। শীতল স্বরে আওড়ালো,
“আপনার ঘাবড়ানো আমার জন্য কতটা অসস্থিকর ব্যাপার তা কি আপনি জানেন ডাক্তার ম্যাডাম?”

আদ্রিতা চমকালো,ভড়কালো,অবাক হলো খুব। অদ্ভুত কণ্ঠে বললো,
“মানে?”

ফারিশ বিব্রত হলো। কি বলে ফেললো! আজকাল মুখের ওপর কন্ট্রোল হচ্ছে না ফারিশের। যখন তখন কিসব বলে ফেলছে বিশেষ করে আদ্রিতার সামনে। ফারিশ থমথমে গলায় বললো,
“কিছু না। সামনে থেকে সরুন।”
“আপনি তো খুব অদ্ভুত মশাই। আপনাকে সাধে আমি বখাটে বলি।”
“শুনুুন এক শব্দ বার বার ভালো লাগে না। কতবার বলবো আমি বখাটে নই।’
“আপনি কি তা তো দেখতেই পাচ্ছি।”
“এত কথা না বলে সামনে থেকে সরুন তো।”

আদ্রিতা সরে গেল। ফারিশ এগিয়ে গেল যাওয়ার আগে বললো,
“এতবার সামনে এসে আমায় বিব্রত করা বন্ধ করুন ডাক্তার ম্যাডাম। আপনাকে আমার ভালো লাগে না। কেন বুঝচ্ছেন না?”

ফারিশ কথাটা বলেই চলে গেল। আদ্রিতা থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। তাকিয়ে রইলো ফারিশের যাওয়ার পানে। ছেলেটা এমন কেন! আদ্রিতার রাগ হচ্ছে। বার বার ছেলেটা তাকে ভালো লাগে না বলে অপমান করছে। আশ্চর্য! সে কি একবারও বলেছে ফারিশ প্লিজ আমাকে আপনার ভালো লাগান। নয়তো আমি শান্তি পাচ্ছি না। আর একবার এই ভালো লাগে না বললে ঠাটিয়ে একটা চড় বসিয়ে দিবে আদ্রিতা। চট করেই তার খুব রাগ লাগছে। এত রাগ লাগার কথা না তবুও রাগ লাগছে। আদ্রিতা হন হন করে নিচে নেমে এলো। আদিব তখন নিচতলার একটা চেয়ারে বসা। আদ্রিতাকে যেতে দেখেই আদিব উঠে দাঁড়ালো। চললো উপরে। সে হঠাৎ নিচে কেন নেমে এলো বুঝচ্ছে না। নামার তো কথা ছিল না। ভাবটা এমন ছিল ভাইয়া ভাবি কথা বলছে সেখানে না দাঁড়ানোই উত্তম। আদিব আচমকাই নিজের ভাবনার কথা ভেবে হেঁসে উঠলো। ভাইয়া ভাবি। ভাবা যায় ফারিশ ভাই বিয়ে করেছেন! আধও সম্ভব।
—-
নিজের রুমে পায়চারি করছে ফারিশ। তার অসস্থি হচ্ছে। অস্থির লাগছে। কেমন অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে বুকে। আদ্রিতা মেয়েটা সামনে এলেই এই অনুভূতি হয় ফারিশের। যেটা তার মটেও লাগে না তাই তো বার বার বলে ‘আমার সামনে আর আসবেন না।আপনাকে আমার ভালো লাগে না। ফারিশ বুকে হাত দিলো। কেমন করে একটু বললো,
“আপনি আমার সামনে এলে আমার বড্ড অসস্থি হয় ডাক্তার ম্যাডাম। আপনাকে আমার ভালো লাগে না। মটেও ভালো লাগে না। তাহলে কেন বার বার উত্ত্যক্ত করছেন আমায়?’

#চলবে….

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আজকের পার্টটা খুব দ্রুত দ্রুত লিখেছি ভুল থাকলেও থাকতে পারে আশা করি তোমরা বুঝবে।]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here