আঁধারের_তারাবাজি #অভ্রায়ীনি_ঐশি #পর্ব_১১,১২

0
362

#আঁধারের_তারাবাজি
#অভ্রায়ীনি_ঐশি
#পর্ব_১১,১২

গাড়ি জুড়ে নিস্তব্ধতা বিরাজমান।সে চলছে তার আপন গতিতে।আর তাকে চালনা করছে তেজ।,,এই ড্রাইভিং পেশায় নভের মতো খুব একটা দক্ষ না হলেও মোটামুটি আয়ত্ত করেছে সে।,,পাশের সীটেই হেলান দিয়ে বসে নভ।,,মাথায় তার এক অসহনীয় যন্ত্রণা।,,কি চলছে নিজেও জানেনা,,,কি করবে জানে না।মোম জানে কিনা তাও সে জানে না।কিভাবে এসব গোপন রইলো তার থেকে সেটাও জানেনা।শুধু জানে তার মোমকে চাই।নিজের করে চাই,,,ক্ষনিকের জন্য নয়,,সারাটাজীবন মোমের প্রজ্জলনে নিজের ছটপটে জীবন আলোকিত করতে চাই।,,,আর কিচ্ছু চাই না,,কিচ্ছু নাহ।,,,

পাশে থাকা তেজও যে খুব একটা সুখকর অনুভব করছে তা কিন্তু নয়।,,,এই কদিনে মোমের সাথে অনেকবার দেখা হয়েছে তার।মেয়েটা বেশ বাচ্চা স্বভাবের,,কতো সহজেই না তার সাথে মিশে গেলো।,,,ওর মধ্যে আলাদা একটা ব্যপার আছে।নাহলে কি কখনো কেউ নিজের কিডনাপারদের সাথে এতো ইজিলি মিশতে পারে?,,,,আপন বোন না থাকায় মনে মনে মোমকে বোনের জায়গাটা যে দিয়েছে তেজ।৷ এখন কি সেই না বলা বোনের হারিয়ে যাওয়ার কথাটা তার অন্তর সইবে?,,আরো এমনি নয়,,হারানোর আগে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে,,মোম হারাবেই,,,তোমরা কিছুতেই তাকে আটকাতে পারবে না।,,,

তেজ তাকালে নভের দিকে।,,নভের বিক্ষিপ্ত চেহারা যেন তার টনক নড়িয়ে দিলো।একবার তো ভেবেই ফেললো..

“আমার এতোটা কষ্ট হচ্ছে,,,তাহলে নভের কতটা হচ্ছে?সীমাহীন নিশ্চই?,,,সত্যিকারের ভালোবাসে তো নভ মোমকে।,,,এই কঠিন সত্যিটা কিভাবে সইবে নভ?”

তবে উপরে উপরে নিজেকে ধাতস্ত করলো।এখন যে নভের পাশে কেউ নেই সে ছাড়া।সে যদি এখন ভেঙে পড়ে তাহলে তো নভের বুকটা চৌচির হয়ে যাবে।,,,নিজেকে শক্ত রেখে তেজ প্রশ্ন ছুড়লো নভের দিকে।

“আর কতক্ষন এভাবে গাড়ি করে এদিক ওদিক ঘুরবি?,,,কোথাও তো চল।,,”

উত্তর এলো না নভের দিক থেকে,,,তেজ আবারও বললো..

“পার্ক?,,রেস্টুরেন্ট,,এনি হয়ার?রিফ্রেশম্যান্টের জন্য?,,,,বাড়ি যাবি?”

একটু নীরবতা।তারপর হঠাৎ নভের ক্লান্ততায় ভরা রাশ ভারী কন্ঠ ভেসে এলো..

“আমার মোমের কাছে যাবো।”

তেজ আর কথা বাড়ালো না।হয়তো নভের এখন সত্যিই মোমকে প্রয়োজন,,, চোখের পাতায় কল্পনা হয়ে ভাসার চেয়ে নীকট সাক্ষাৎ হওয়াই উত্তম।,,,

গাড়ীর স্পিড বাড়ালো তেজ।এগিয়ে গেলো রিসোর্টের দিকে,,,,,

“”””
ক্লান্ত পায়ে রুমের বেল প্রেস করতেই মোম এসে দরজাটা খুলে দিলো।,,,সাথে সাথেই ভেসে উঠলো নভের নেতিয়ে যাওয়া মুখশ্রী।,,,পেছনে তেজও আছে।,,

নভ অপলক তাকিয়ে আছে মোমের দিকে।,,মাথায় তড়িৎ বেগে একটা কথা বয়ে গেলো..

“এই মেয়ে আর কদিন পর এভাবে আমার সামনে থাকবে না?,,,”

উত্তর আর খুজে পেলো না নভ।পাওয়ার চেষ্টাও করলো না, কারন সম্ভাবনা যে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে।,,,নিজেকে আর সামলাতে পারলো না নভ।,,

দ্রুত দু কদম এগিয়ে ঝাপটে ধরলো মোমকে।মুখটা গুজে দিলো মোমের কাধে।,,

এদিকে হঠাৎ নভের এমন আক্রমণের জন্য একদমই প্রস্তুত ছিলো না মোম।স্ট্যাচুর মতো দাড়িয়ে রইলো।বিষ্ময়ে মুখটা হা হয়ে গেলো,,,,কিছুক্ষন কাটলো ওভাবেই,,,নিজেকে সামলাতে বেশ কিছুক্ষম সময় লাগলো মোমের।,,,নভকে কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে গিয়েও খোলা হলো না।,,,কাধে কিছু একটা পরছে,,,তরল,।কি?,,,

ষষ্ঠ ইন্দ্রীয় জানান দিচ্ছে নভ কাদছে।ভাবতেই এক অজানা কারনে বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো মোমের।,,,,লোকটা কাদছে?,,,কিন্তু কেন?,,,

ভ্রু উচিয়ে তেজকে ইশারায় জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে?,,,তেজ সাবলীলভাবে বললো..

“ওকে আজ একটু সামলে রেখো।আমি কাল সকালে আসবো।”

দাড়ালো না তেজ।কদম ফেলে চলে গেলো।,,

মোম কাপা কাপা হাত দুটো রাখলো নভের পিঠে।,,সাথে সাথে নভ আরেকটু চেপে ধরলো মোমকে।,,একটু পরপর নাক টানার শব্দ আসছে।,,,

মোম নিজেকে ধাতস্ত করলো। মুচকি হেসে বললো…

“আজ বুঝি নাইট স্ট্যান্ডের জন্য কোনো রমণী পাননি?”

নভ মোমের কাধে মাথা গুজেই নাড়ালো,,,

“প্রয়োজন নেই..।”

মোম হাসলো,,কারন সে জানে গত ৩-৪ দিন নভ কোনো নাইট স্ট্যান্ডে যায়নি।তার কাছেই যে ছিলো।

“তাহলে কি প্রয়োজন?কিসের অভাবে এভাবে কাদছেন?”

“একটু খানি সুখ।কোথাও খুজে পাচ্ছি না জানো?,,”

মোম একটু অবাক হলো।কি এমন হয়েছে নভের?কেন তার সুখ প্রয়োজন,,তার কি সত্যিই সুখের অভাব?,মোমের নিজের থেকেও বেশি অভাব?,,

নভ সোজা হয়ে দাড়ালো।শার্টের ফোল্ড করা হাতায় চোখ নাক মুছলো।এরপর দু হাতের আদলে আগলে ধরলো মোমের দুগাল।একটু উচু করে ধরলো..

“আমায় একটু সুখ দেবে মোম?”

কি নিঃসঙ্কোচ আবদার।এমন অনুনয় কিভাবে ফেরাবে মোম?পারবে না তো?,,কিন্তু কোন সুখ চাইছে নভ?,,সেই চাহিদাকৃত সুখ খানি কি আদেও আছে মোমের কাছে?,সে তো জানে না।,,,তবে?এখন কি নভকে ফিরিয়ে দেবে?,,

ভেবে উঠতে পারলো না মোম।নভের বিরল টকটকে লাল চোখ জোড়া দেখে আর না করার সাধ্য হলো না।,,,নিরব রইলো মোম।

“কি হলো বলো?দেবে সুখ?,,,,দেবে না তাই না?,,,ত্ তুমি দেবে না,,,জানতাম আমি,,তুমি আমায় ফিরিয়ে দেবে।,,জানতাম আমি,,,”

হাইপার হয়ে যাচ্ছে নভ।,,,মোম কি করবে বুঝতে পারছে না।,,,নভ মোমকে ছেড়ে দ্রুত পায়ে গিয়ে খাটে গিয়ে বসলো।দু পায়ের উপর হাত ভর করে রেখে মাথা নিচু করে চুল খামছে ধরলো।,,

মোম ঠায় দাড়িয়ে রইলো আগের জায়গায়।,,,কিছু তো করতে হবে।নভের এই ভিন্ন রকম কান্নারত রূপ তার একটুও ভালো লাগছে না।,,নভকে আগের রূপেই মানায়,,ওই যে ছুপারোস্তম।,,,

মোম তাকালো দেয়ালঘড়িটির দিকে।,,,সন্ধ্যা ৭ টা বেজে ৯ মিনিট।,,ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে দরজা লক করে এগিয়ে গেলো নভের সামনে।,,

“কি হয়েছে?,,,ইচ্ছে হলে শেয়ার করতে পারেন।,,তবে জোর করবো না।”

নভ তাকালো মোমের দিকে।,,তা দেখে মোম আবার বললো..

“কিছু,,,হয়েছে??,,,মন খারাপ কেন?”

নভ ক্লান্ত হয়ে দুহাতে মোমের কোমড় জড়িয়ে ধরলো। মাথাটা এগিয়ে তার পেটে মুখ গুজে দিলো।,, সাথে সাথে কেপে উঠলো মোম।নিঃশ্বাসটা তড়িৎ বেগে ধাওয়া করলো।একহাতে খামছে ধরলো নভের চুল।,,,,নভ মুখ চুলকালো মোমের পেটে..

“আমার ভালো লাগছে না মোমরানি।,,কি করলে একটু বেটার ফিল করবো বলো তো,,,,”

মোম কি বলবে বুঝতে পারছে না।,, নভ আবার বললো..

“এই,,,এখন একটু শান্তি লাগছে।,,,ত্ তুমি আজ আমার সামনে থাকবে।,,,বলো থাকবে? বলো?”

বলতে বলতেই দুহাত দিয়ে ঝাকাতে লাগলো মোমকে।,,,

মোম না করতে পারছে না।ইচ্ছেই করছে না না করতে।,,,মাথা ঝাকিয়ে বললো..

“ঠিক আছে,,,থ্ থাকবো।”

()()()()()

সকাল প্রায় ৬ টা।,,,

কারো কোমল কন্ঠের ডাকে পিটপিট করে চোখ খুললো মোম।,,,তাকিয়ে দেখলো নভ তাকে ডাকছে।মুখে আলতো হাসি লেপ্টে আছে।তবে সেই হাসির সত্যতা নিয়ে মোম সন্দিহান।,,তবুও নভকে বুঝতে না দিয়ে আলতো হাসলো সে নিজেও।

“ক্ কোথাও যাচ্ছেন?”

“জ্বি ম্যাডাম।উঠুন এবার।”

“আপনি যান।,,আমি একটু পরেই দরজা লক করবো।”

“উহুম।,,,লক করা লাগবে না তোমায়।তুমি উঠে রেডি হয়ে নাও।”

ভ্রু কুচকে এলো মোমের,, নভ তো তাকে নিয়ে কোথাও যায় না?শুধু ঐ দিন ভাইয়া এসেছিলো বলেই….

এদিক ওদিক তাকিয়ে মোম উৎকন্ঠা হয়ে বললো..

“ভাইয়া এসেছে?”

নভ মুচকি হাসলো…

“উহুম।,,,তুমি উঠো।”

মোম উঠে বসলো।গায়ের আচলটাও একটু ভালো ভাবে জড়িয়ে নিলো।

“গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে এসো।আমি ওয়েট করছি।তুমি আসলে নাস্তা করে নিবো।”

“আ্ আমায় কোথায় নিয়ে যাবেন?”

“গেলেই দেখবে।,,,যাও রেডি হও।আমি ওয়াশরুমে তোমার ড্রেস রেখে এসেছি।ওটা পড়ে নিও।”

মোম আর কথা বাড়ালো না।দ্রুত গিয়ে ফ্রেশ হয়ে শাওয়ার নিয়ে রেডি হয়ে বেরিয়ে এলো।,,,

“এতো দ্রুত এলে যে আজ?”

নভের প্রশ্নে মোম একটু ঘাবড়ালো।এখন কি সে নভকে বলবে?যে সে অপেক্ষা করছে বলেই এতো তারাহুরো?,,,না না,,,নভ কি ভাববে এটা বললে?,, আর সেই বা নভের কথা এতো ভাবছে কেন?,,,জানা নেই।মোম মনে মনে নিজেকেই বুঝ দিলো,,,হয়তো কালরাতে নভের এমন ইনোসেন্ট রূপ দেখেই একটু মায়া কাজ করছে তার।,,,

“এ্ এমনি।নাস্তা করে নিই?”

“এখানে এসে বসো।বের হতে হবে আমাদের।”

মোম গিয়ে বসলো নভের পাশে একটু দূরত্ব রেখে।নভ দেখলো।তবে কিছু বললো না।প্লেটের ঢাকনা উঠিয়ে পাস্তার প্লেট এগিয়ে দিলো মোমের দিকে।,,,,

মোম খেয়াল করলো এক প্লেটই পাস্তা আছে এখানে।কাপাকাপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো…

“আপনি খাবেন না?”

নভ পাশ থেকে ল্যাপটপটা নিয়ে খুললো,,.স্ক্রিনে চোখ রেখেই বললো…

“খাইয়ে দাও?”

মোমের চোখ গোলগোল হয়ে গেলো।কি বলে এই লোক?গতকালের শোকে মাথা খারাপ হয়ে গেলো নাকি?,,,

“আ্ আমিইই??”

“আর কেউ আছে?”

“আপনি খান না?”

নভ শান্ত দৃষ্টিতে চোখ তুলে তাকালো মোমের দিকে। তার এমন শীতল দৃষ্টি দেখে,,মোম কেপেকেপে বললো..

“দ্ দিচ্ছি।”

বলেই ধীরে সুস্থে কাটা চামচচ দিয়ে পাস্তা তুলে পাশে থাকা সসের বাটিতে লাগিয়ে নভের মুখের সামনে ধরলো।,,সাথে সাথেই নভ মুখে তুলে নিলো।,, এভাবে দু তিন বার দিতেই নভ বললো…

“আমাকে খাওয়ানোর সাথে নিজেও খেয়ে নাও মোম।দ্রুত বেরোতে হবে।”

মোম ভ্রু কুচকালো,,, এবার সে শিওর,, লোকটা সত্যিই পাগল হয়ে গেছে। নাহলে এভাবে একই প্লেটে একই চামচে দুজনকে খেতে বলতো?,,,

“আমি পরে খাবো।আপনি খেয়ে নিন আগে।”

নভ শান্ত কন্ঠে একটা ধমক দিলো..

“যা বলছি তাই করো তুমি।”

ব্যস,,,আর কথা বের হলো না মোমের।নভের কথা মতোই খেতে লাগলো।,,,

নভ ল্যাপটপে ভিডিও কল লাগালো তেজকে।রিসিভ হতেই তেজের এলোমেলো চুল আর মুখটা ভেসে উঠলো স্ক্রীনে।ভেসে এলো ঘুমুঘুমু কন্ঠ…

“নভ,,,ঠিক আছিস তুই?,,এতো সকালে ফোন?,,,আমি আসবো?”

“আম ফাইন।,,আর আসার দরকার নেই।আমি আজই রওনা দিচ্ছি। তুই যাবি?”

তেজের চেহারা দেখে মনে হলো একটু অবাকই হয়েছে বটে।

“তুই না বললি,, একেবারে কাল যাবি?,,তো আজ কেন?”

“এমনিই।কাজ নেই,,, ভাবলাম আজই যাই।”

“তুই সত্যি করে বলতো।ঠিক আছিস তুই?”

নভ এক বিষাদময় হাসি দিলো।

“আমি অবয়ব রায়ানিশ,,,তেজ,,,এতো সহজে হেরে যাবো না।,,,গতকাল অনেকটাই ভেঙে পড়েছিলাম।তবে আমি আমার মন ভালো করার মেডিসিন পেয়ে গেছি।তাই হার মানবো না আমি।সবটা দিয়েই চেষ্টা করবো।”

“ওকে বলেছিস কিছু?”

“উহুম।তুই কিছু বলার দরকার নেই।,,ড. সোহানকে বল তার ফেমিলিয়ারদের থেকে এই বিষয়ে ইনফরমেশন নিতে।যদি ভালো কিছু পাওয়া যায়।”

“কি করে নভ?, উনি তো সরাসরিই জানিয়েছেন যে কোনো উপায় নেই..”

“উপায় নেই মানে কি হ্যা?,, উপায় থাকতে হবে।থাকতে হবে উপায়।না হলে সব তছনছ করে দেবো আমি। ”

নভ হাইপার হয়ে উঠেছে।তার এমন চিৎকারে মোম একটু সরে গেলো ভয়ে।,,,নভের দিকে ভয়াতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।,,,নভ তার দিকে তাকাতেই এমন দৃশ্য দেখে শান্ত হয়ে গেলো।,,

“তুই যাবি আজ?”

“নাহ,,,একটু কাজ আছে।কাল সময় মতোই পৌছে যাবো ”

“ওকেয়,,,রাখছি।”

কেটে দিলো নভ।,,,

খাওয়া শেষ করে দুজনই বের হলো রিসোর্ট থেকে।,,মোম একটু অবাক হলো,,কারন তাদের সাথে বড় বড় দুটো সুটকেসও তোলা হয়েছে গাড়িতে।,,,একটু সংকোচ নিয়ে নভকে জিজ্ঞেস করেই ফেললো সে…

“আ্ আমরা কি অনেকদিনের জন্য কোথাও যাচ্ছি?”

ড্রাইভিং করতে করতে পাশে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো নভ।,,,সাথে সাথেই মোম মাথা নাড়িয়ে বলে উঠলো…

“সরি সরি,,,আর কিছু বলবো না।,,,এই মুখে তালা দিলাম।”

হাতের তর্জনী আঙুল দিয়ে ঠোট চেপে ধরলো মোম।,,,নভ কিছুই বললো না।সামনে তাকিয়ে ড্রাইভিংয়ে মনোযোগ দিলো।,,,

প্রায় দের ঘন্টার পথ পেড়িয়ে গাড়ি ঢুকলো একটা মাঝারো আকারের বাংলো বাড়ির গেইট দিয়ে।,,, মোম উৎসাহ নিয়ে চারদিক দেখতে লাগলো,,,ক্যাটারিংয়ের লোকজন বাড়ি ডেকোরেইট করতে ব্যস্ত।,,নভ গাড়ি থামিয়ে বেড়িয়ে এলো। প্রায় সাথে সাথেই মাঝ বয়সী একজন লোক এসে লম্বা করে সালাম দিলো নভ কে।

“আসসালামু আলাইকুম ছোট সাহেব।”

নভ সালামের জবাব দিয়ে বললো…

“গাড়ি থেকে সুটকেস গুলো ভেতরে পাঠানোর ব্যবস্থা করো আলি চাচা।,,,”

বলতে বলতেই মোমের পাশে এসে গাড়ির ডোর ওপেন করলো।,,মোমের হাত ধরে কোমল কন্ঠে বললো…

“নেমে এসো,,”

মোম নামলো,,,কৌতুহল দমাতে না পেরে আবারও বলে ফেললো..

“এটা কোথায়?,,,আমায় এখানে কেন এনেছেন?”

নভ মোমের হাত ধরেই বাড়ির সদর দরজার দিকে হাটতে লাগলো,,,

“এটা আমাদের বাগান বাড়ি,,,,,আমরা কিছুদিন এখানে থাকবো।”

মোম ক্ষানিক অবাক হলো,,,লোকটা তাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে এলো কেন?,,

“আ্ আমাকে এখানে?”

নভ কোনো উত্তরই দিলো না।মোমকে নিয়েই প্রবেশ করলো বাড়ির ভেতরে।,,

সাথে সাথেই একটা মেয়ে এসে লাফাতে লাফাতে সবাইকে ডাকলো..

“আম্মু,,চাচি,,চাচ্চু,,,কোথায় তোমরা,, ভাইয়া এসে গেছে।,,ইয়েএএএ”

বলতে বলতেই এসে জড়িয়ে ধরলো নভকে।,,,,,

“ওওও,,ভাইয়া,,,কতদিন পর,,,,আম সো হ্যাপি।,,”

বলতে বলতেই হুরমুড়িয়ে একটা রুম থেকে বেরিয়ে এলো একঝাক পোলাপাইনস।এসেই ঝাপিয়ে পরলো নভের উপর।,,,আর চিৎকার চেচামেচি তো আছেই।,,,,

বিভিন্ন জায়গা থেকে বেড়িয়ে এলো বিভিন্ন লোকজন।,,,

নিজের রুম থেকে বেড়িয়ে এলো পলি জাহান,,,প্রায় মাস খানেক পর ছেলে বাড়ি ফিরেছে।,,,তাই তো উৎকন্ঠা নিয়ে সেও দেখতে এলো।সাথে এলো রুবি বেগম ও তার স্বামী জহির। সম্পর্কে নভের ছোট চাচা আর চাচি।তাদের মুখেও খুশির ঝলক।,সবাই-ই নভের আগমনে খুশি।,,,,মোমের দিকে কারোরই তেমন খেয়াল নেই।,,,তবে কিছুক্ষণ পর পলির চোখে ধরা পরলো মোম।সাথে সাথেই বলে উঠলেন..

“এই মেয়েটা কে নভ?”

এবার সবার দৃষ্টি পরলো মোমের উপর।,,এতক্ষণ সব ভ্যাবলার মতো চেয়ে চেয়ে দেখলেও এবার একটু ভয় পেলো মোম।কি জবাব দেবে সে?যে তাকে নভ কিডনাপ করে এনেছে?,,কেমন যেন শোনায় না কথাটা?,,,

এসব ভাবনার মাঝেই প্রথমের সেই মেয়েটা মাথায় হাত দিয়ে অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে বললো…

“ওরেএএএ আল্লাহ রেএএএ।এটা কোন হুর রে?,,,এত্তোওও সুন্দর মাইয়া কেমনে হয়?,,,এটা কি মানুষ??”

মেয়েটার কথা শুনে মোমের ঠোট জোরা আপনাআপনিই ছুটে গেলো।,গোলগোল চোখে তাকিয়ে রইলো মেয়েটার দিকে।,,,,,

মেয়েটার কথায় রুবি মুচকি হেসে বললো..

“এভাবে বলে না নোভা,,,,”

বলতে বলতেই এগিয়ে এলো মোমের কাছে।মুচকি হেসে মোমের গালে আদুরে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন..

“মাশাল্লাহ বলতে হয়।,,,এভাবে বললে নজর লেগে যাবে।”

নোভা মাথা চুলকালো..

‘সরি কাকিয়া,,,,কন্ট্রোল করতে পারিনি।আসলে ও এত্তো কিউট,,,কি আর বলবো,,হিহিহি।”

রুবি মোমের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করলো..

“কে তুমি মা?,,,নাম কি তোমার?”

মোম কেপেকেপে উত্তর দিলো..

“জ্বি,,আমি,,ম্ মৌচাক এহসান। ”

জহির হেসে বললো..

“বাহ,,,খুব সুন্দর নাম তো।,,”

আরেকটা মেয়ে হেসে বলে উঠলো..

“দেখ নোভা,,,,কন্ঠটাও জোস,,তাই না?”

নোভা বললো..

“ইয়াহ তিশু বেইব,,,মাস্ত পিজ মাইরি।”

পলি বিরক্ত হলো,,,হালকা ধমন দিয়ে বললো..

“স্যাট আপ নোভা।,,,,এটা কে নভ?,,এখানে কেন নিয়ে এসেছিস?”

এতক্ষণে নভ মুখ খুললো।শান্ত শীতল কন্ঠে বললো…

“ও মোম,,আমার সাথে এসেছে, আমার বাবার বাড়িতেই এসেছে।,,আশা করি ওকে নিয়ে বাবার কোনো সমস্যা থাকবে না।তাই অন্য কারোরই সমস্যা থাকার কথা নয়।,,,আপাতত এটুকুই জেনে রাখ সবাই।,,,,বোন,,,ওকে তোর রুমে নিয়ে যা।ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিবে ও।”

বলতে বলতেই নোভা এগিয়ে এসে লাফাতে লাফাতে মোমের হাত ধরে উল্লাসিত হয়ে বললো…

“চলো কিউটিপাই।,,,”

মুচকি হাসলো মোম।নোভার সাথে এক পা এগোতেই পেছন থেকে পলির রাশভারী কন্ঠ ভেসে এলো..

“এই মেয়ে,,,দাড়াও”

+++চলবে++

(এতদিন মোমের পরিবার সম্পর্কে জেনেছেন।এবার নভের পরিবারকেও চিনে নিন।)

#আঁধারের_তারাবাজি
#অভ্রায়ীনি_ঐশি
#পর্ব_১২

“এই মেয়ে,,দাড়াও।”

ব্যস। থমকে গেলো মোমের পা জোড়া। ঘুরে দাড়ালো পলির দিকে মুখ করে।

“কোন সাহসে তুমি আমার অনুমতি না নিয়ে আমার বাড়িতে থাকতে এসেছো?”

পলির ধমকে হালকা কেপে উঠলো মোম।,,তার দিকে তাকিয়ে নভ বললো..

“বোন,,তুই মোমকে নিয়ে উপরে যা।”

নোভা ঘুরতে নিলে পলি আবারও চেচিয়ে উঠলো…

“নোভা, আমি না করছি,শুনতে পাচ্ছিস না?”

নোভা যেন একটু বিরক্ত হলো।মোমের হাত ধরে টেনে বললো…

“কিউটিপাই।তুমি চলো তো।”

তবে নড়চড় হলো না মোমের।পলির থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তাকালো নভের দিকে।নভ আগের মতোই কোমল কন্ঠে বললো…

“ওর সাথে যাও মোম।,,ফ্রেশ হয়ে একটু রেস্ট নাও।আমি একটু পর আসছি।”

মোম শুনলো না।উলটো নিজে বলতে নিলো..

“আন্টি না করে….”

শেষ করতে পারলো না কথাটা।,,নভের কন্ঠের জোর আরেকটু উচু হলো..

“তোমায় যেতে বলেছি মোম।”

মোম সত্যিই ভয় পেয়েছে।কি করবে মাথায় আসছে না,,,তখনই পলি বললো…

“আমি না করেছি ওকে,,,”

নভ তাকালো না পলির দিকে। মোমের দিকে দৃষ্টি রেখেই বললো…

“যাও মোম।”

মোম আরেকটু সাহস সঞ্চয় করে বললে নিলো..

“কিন্তু আন্টি তো…”

ব্যাস,,,ধৈর্যের বাধ ভেঙে গেলো নভের।চেচিয়ে বললো…

“তুমি আমার সাথে এসেছো এখানে।তাই আমার কথার উপরে আর কারোর কথাই কানে নেবে না।,,,যদি নাও,,তবে আমি এতোদিন যা করিনি,,তা আজ করতে বাধ্য হবো।,,যাও বলছি।”

কেপে উঠলো সকলেই।,,এবাড়ির সকলেই যেমন নভ অন্ত প্রাণ,তেমনি নভের একবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠলে সকলেই থরথর করে কাপে।,,,

তেমনি নোভাও নিজের ভাইয়ের রাগ সম্পর্কে অবগত।তাই সে বুঝে নিলো,,এই মুহূর্তে এই কিউটিপাইকে এখান থেকে না নিয়ে গেলে,,মেয়েটার আর রক্ষে থাকবে না।,,,,,নিজে একা পারবে না বলে চোখের ইশারায় তিশুর ছোট বোন ইশুকে ডাকলো।ইশুও বুঝলো ব্যপারটা।,,তাই তো এগিয়ে গিয়ে মোমের আরেক হাত আকড়ে ধরে নোভার সাহায্যে টানতে লাগলো।

“চলো মৌচাক,,শুধুশুধু বকা খেও না।।লেটস গোওওও”

বলেই টানতে টানতে নিয়ে গেলো মোমকে।,,,মোমও একবার নভের রক্তলাল চক্ষু গুলোর দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে পারলো না।,,তবে সিড়ি বেয়ে উঠার আগে একবার পলির দিকেও তাকালো।সাথে সাথেই তার ক্ষেপা বাহিনীর ন্যয় দৃষ্টির সাথে চোখাচোখি হয়ে গেলো মোমের।,,,,চোখ নামিয়ে নিলো মোম।,,,নির্জীব সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো নোভা আর ইশুর সাথে।,,

নভ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মোমের যাওয়ার দিকে।,,,যেই না মোমরা নোভার রুমে প্রবেশ করলো,,,তখনই নভ দৃষ্টি সরিয়ে তাকালো পলির দিকে।,,,, মিনিট খানেক পর দৃষ্টি স্থির রেখেই বললো…

“কাকিয়া,, এক গ্লাস পানি দেবে?”

সাথে সাথেই রুবি ডায়নিং টেবিলের দিকে ছুটলো,,,

“দিচ্ছি নভ বাবা।”

পানি এনে দাড়াতেই নভ গ্লাসটা নিতে চাইলো। তবে সরিয়ে ফেললো রুবি।

“আগে বস,,তারপর দিচ্ছি। ”

নভ জানে,,তার এই মা তুল্য কাকিয়াটা তাকে দাড়িয়ে পানি খেতে দেয় না।,,তাই সে আর না করলো না।গিয়ে বসলো সোফায়।,,রুবি পানির গ্লাসটা হাতে দিলো তার।,,

“ঐ মেয়েটাকে আমাদের বাড়িতে কেন নিয়ে এসেছিস?”

মুখের সামনে তুলে ধরা পানিটা থেমে গেলো পলির কথায়।,,,রুবি তাকালো নিজের বড় জায়ের দিকে।আবার চোখ ফিরিয়ে কোমল কন্ঠে নভকে বললো…

“পানিটা খেয়ে নে বাবা,,,তারপর কথা বলিস।”

নভ শুনলো।ঢকঢক করে পানিটা শেষ করলো। গ্লাসটা সামনে থাকা টেবিলের উপর রেখে সেই টেবিলেই পায়ের উপর পা তুলে বসলো।,,দৃষ্টি দিলো পলির দিকে।,,,পলি জ্বলে উঠে আবারও বলে উঠলো..

“নিজে তো ঠিক মতো বাড়িতে ফিরিস না।এখন আসলি তো আসলি সাথে কোন একটা রাস্তার মেয়েকে তুলে আন…”

আর বলতে পারলো না পলি।সাথে সাথেই টেবিলে থাকা কাচের গ্লাসটা ছুড়ে ফেললো নভ।,,,,উঠে দাড়িয়ে গজগজ করতে করতে চেচিয়ে বললো…

“ও রাস্তার মেয়ে নয়,,,,বুঝেছো?ও রাস্তার মেয়ে নয়।,,,ওরও একটা ফ্যামেলি আছে।একটা স্ট্যাটাস আছে,,, পরের বার থেকে ওকে রাস্তার মেয়ে বলার আগে কমপক্ষে হাজার বার ভেবে নিবে তুমি।,,,”

বলেই নিচের দিকে তাকিয়ে বড়বড় নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলো নভ।,,,,কিছু সময় পর পকেট থেকে ফোন বের করে ফোন লাগালো তার বাবা অবন রায়ানিশকে।

“ড্যাড,,,?”

“হ্যা,,নভ?,,বল,, কি খবর তোর,,,বাড়ি আসবি কবে?”

“ড্যাড,,আমি যদি একটা মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে আসি তাহলে কি তুমি তাকে থাকতে দিবে?”

“হঠাৎ এমন কথা?”

“আন্সার মি ড্যাড।”

“বাড়িটায় আমার পরে তোরও অধিকার আছে।তুই যাকে ইচ্ছে আনতে পারিস।এতে আমি না করার কি আছে?”

“এই বাড়িটা কার ড্যাড?”

“নভ,,,,এই বাড়িতে প্রত্যেকেরই সমান অধিকার আছে।”

“ওকেয় ড্যাড,,,,আমি আমার অধিকারের আওতায় পরে একটি মেয়েকে আমার গেস্ট হিসেবে বাড়িতে নিয়ে এসেছি।,,,আমি যতদিন এই বাড়িতে থাকবো,,সেও ততদিন থাকবে।,,,,,এখন তুমি তোমার ওয়াইফকে ফোন করে বলে দাও,, যাতে নেক্সটাইম আমার গেস্টের এই বাড়িতে থাকা নিয়ে আর একটাও সিঙ্গেল ওয়ার্ড উচ্চারণ না করে।,,,না হলে কিন্তু আমি আমার গেস্টকে নিয়ে এই বাড়ি ছারবো।এন্ড ইউ নোট ইট,,,,ইট উইল ফর পরেভার।,,”

কেটে দিলো সব।,,,ওদিকে অবন খুশি হয়ে বলতে নিচ্ছিলো..

“তুই বাড়ি ফিরেছিস?”

তবে সে কথা আর শোনা হলো না নভের।,,

নভ এবার সবার উদ্দেশ্যে বললো…

“মোমকে যেন এমন কোনো প্রশ্ন না করা হয় যাতে ওর উপর প্রেশার ক্রিয়েট হয়।,,এটা সকলেই মাথায় ঢুকিয়ে নাও।,,,,আর যার ইচ্ছে হবে,,পারলে ওর সাথে একটু ফ্রী ভাবে মিশতে চেষ্টা করো।,,অনেকদিন একা একা বন্ধি হয়ে ছিলো,, সঙ্গ পেলে হয়তো বেটার ফিল করবে ও।,,,আর ইচ্ছে না হলেও প্রবলেম নেই।,,আমি একাই যথেষ্ট ওর জন্য। ”

বলেই গটগট পা ফেলে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো নিজের নির্ধারিত রুমে।,,,পলিও রাগে ফুসতে ফুসতে রুমে চলে গেলো।

()()()

“আপু,,,রোমিওটা কি খুব ক্ষেপেছে?”

মোমের এমন কন্ঠে ভ্রু কুচকালো নোভা আর ইশু।,,,

“কে রোমিও?”

“ঐ যে আমাকে যে নিয়ে এলো?”

ইশু নোভা একে অপরের দিকে তাকালো..

“ভাইয়ার কথা বলছো?”

“হুম,,,দেখলে না?কেমন ধমকালো তখন।”

হেসে দিলো ইশু আর নোভা।,,,মুখোমুখি হয়ে বসলো তিনজন খাটের উপরে।,,,ইশু উৎসাহ নিয়ে বললো..

“আচ্ছা,,,এখন ওসব ছাড়ো তো। আগে আমরা পরিচিত তো হই?”

নোভা বললো..

“হ্যা হ্যা,,,তো কিউটিপাই,,,বলো?”

ইশু বললো..

“তোমার নাম মৌচাক তাই না?,,,খুব ইউনিক নেইম।আই লাইক দিস। ”

মোম হেসে দিলো।

“হ্যা,,,আমার নাম মৌচাক।তবে সবাই ছোট করে মোম বলে ডাকে।চাইলে আপনারাও ডাকতে পারেন।”

নোভা বললো..

“তবে আমি তোমায় কিউটিপাই বলেই ডাকবো। নাহলে মিল খুজে পাবো না তো।,,”

হাসলো মোম…

“আপনাদের নাম কি?”

“আমি অভয়া রায়ানিশ৷ ছোট নাম নোভা।ঐযে ভাইয়ার সাথে মিলিয়ে।”

“আর আমি ইয়াশিয়া রায়ানিশ,,, সবাই ডাকে ইশু বলে।”

হাবিজাবি অনেক কথা হলো তিন জনের মাঝে। এরই মাঝে যোগ হলো আরো অনেকেই।৷ ইশুর বড় বোন তিশু।তাদের দুজনের বড় ভাই নিশান।কোলে তার ৬-৭ মাসের বাচ্চা মেয়ে নীলাশা।,,ওহ,,আরো একজন আছে।নভদের সবার একমাত্র ফুফাতো ভাই নোয়ান।

এদের মধ্যে নিশান ন্যাশনাল ব্যাংকে ম্যানেজিং পোস্টে আছে।তিশুর মাস্টার্স শেস।আপাতত সে একটা ব্রাক অফিসে জব করে,,।দুদিন পর তারই বিয়ে।।।এরপর ইশু,,,যে সবে মাত্র অনার্স ফাস্ট ইয়ার।,,নোভা অনার্স থার্ড ইয়ার,,,,,নোয়ান ডিপ্লোমা ইন্জিনিয়ারিং পড়ছে।,,,,সবার বর্ননা শুনে মোম মুখ বেজার করে বললো.

“যাহ,,,আমি তাহলে সবার ছোট?”

মোমের কথায় সবাই হেসে দিলো।,,,মোম সবে সবে এইস এস সি দিয়েছে।এখনো রেজাল্ট দেয়নি।,,,

নিশান হেসে বললো…

“তুমি ছোট কোথায় মোম?,, তোমার থেকেও ছোট আছে তো?,,,এই যে আমার নীল সোনা।”

তার কথা শুনে মোম কিটকিটিয়ে হেসে দিলো।,,, অনেকক্ষণ কথা বলার কারনে মোম সবার সাথেই ফ্রী হয়ে গেলো নিমেসে।,,মুহুর্তে নভের কথা ভুলেই গেলো প্রায়।,,,মশগুল হলো আড্ডায়।,,

বেশ অনেকক্ষন পর রুমে ঢুকলো রুবি।মুখে মুচকি হাসি,,আর হাতে ট্রে ভরতি নাস্তা।,,এসেই বসলো মোমের কাছে।,,,এতক্ষণে নীল নিশান থেকে মোমের কোলে ট্রান্সফার হয়ে গেছে।,,,কোলে বসে হূত নাড়াচ্ছে,,পা নাড়াচ্ছে। আবার কখনো কখনো খিল খিল করে হেসেও উঠছে।,,,,

মোম তাকালো রুবির দিকে,,,

“কিরে মেয়ে?এমন কি দেখছিস?,,,এখন থেকে তো রোজ দেখবি।এবার খেয়ে নে দেখিনি,,,কতটা পথ পাড়ি দিয়ে এসেছিস কে জানে?”

পরক্ষণেই তার খেয়াল হলো নীল মোমের কোলে।হেসে বললো…

“আরে,,,নীল মনি যে নতুন বন্ধু পেয়ে গেলো।,,কোলেও চরে গেলো।এখন এই বন্ধু খাবে কি করে??,,,,আচ্ছা আমিই খাইয়ে দিচ্ছি না হয়।”

বলতে বলতেই চামচে নুডলস তুলে মোমের মুখের সামনে ধরলো।মোম হাসলো।মুখে তুলে নিলো খাবারটুকু।,,রুবিও খুশি হলেন।একটু খানি বুঝেও নিলেন,এই মেয়ে সহজেই মিশতে পারে।,, মনে মনে খুশিই হলেন।যাক নভ কোনো গোমড়ামুখো নিয়ে আসে নি।,,,

হালকা চিবোতেই মোমের মুখের ভঙ্গি পরিবর্তন হয়ে গেলো।,,,তা দেখে রুবি বললো…

“কিরে মেয়ে,,,খাবারটা ভালো হয়নি?”

মোম চোখ বড়বড় করে বললো..

“কি যে বলো না কাকিয়া,,,,খুব ভালো হয়েছে।এতোদিন তো ঐ রিসোর্টের নুন ছাড়া, ঝাল ছাড়া সাদা সাদা খাবারগুলো খেতে খেতে জ্বীভটাই ক্ষয়ে যাচ্ছিলো আমার।,,অনেকদিন পর এমন মসলাদার খাবার খেলাম বুঝলে? ”

মোমের কথা শুনে হেসে দিলো সবাই।,,,রুবিও তাকে খাইয়ে দিতে দিতে বললো…

“তা মেয়ে,,এতোদিন বুঝি নভের রিসোর্টে ছিলি?”

মোমের সাবলীল উত্তর..

“হুম তো,,তোমাদের আদরের নভ,,প্রায় এক মাস আগে আমায় তুলে এনে যে ঐ রিসোর্টে রাখলো,,আর তো কোথাও যেতেও দেয়নি।”

“কিহ?ভাইয়া তোকে তুলে এনেছে?”

নোভার চোখ বড়বড় করা প্রশ্নে ততটাও অবাক হলো না মোম,,,

“হুম তো।তোমরা জানো না?তোমাদের ভাই যেই একটা লেভেলের রোমিও,,,কি বলবো।উপহ।”

মোমের কথা বলার ধরন দেখে ফিক করে হেসে দিলো সবাই।তিশু বললো…

“তবে যাই বলো।ভাইয়া কিন্তু জাবারদাস্ত একটা পিস তুলে এনেছে।একদম হুর।,,,”

ইশুর উৎসাহ বাড়লো,,,

“এই মোম,,,ভাইয়া তোকে কেন তুললো রে?তোরা কি লাভার?”

মুখ কুচকে এলো মোমের,,,

“ধুরর,,এসব কিচ্ছু না বুঝলে?,,আমার আব্বুর সাথে দেনা পাওনা নিয়ে ঝামেলা চলছে।,,তাই প্রতিশোধ নিতে আমায় তুলে আনলো তোমার ভাইয়া।,,”

মুখ কালো হয়ে গেলো প্রায় সবার।এই উত্তরটা যেন একদমই আশা করে নি।,,,নোয়ান বিরক্ত হয়ে বললো…

“ধুরর,,আমরা তো ভাবলাম কি না কি কেমিস্ট্রি।,,”

রুবি বললো…

“তোদের ভাবনা চিন্তা রাখ।,,পরে হবে এসব।এখন তো এই হুর টা কিছুদিন আমাদের কাছেই থাকবে।,,তা মোম,, তুই রেস্ট নিবি এখন?”

মোমের এমনিতে ঘুম পাচ্ছে। তবে আড্ডাও ছাড়তে ইচ্ছে করছে না।তাই বললো..

”না না,,এমনিতেই ঠিক আছি।কথা বলি?”

হাসলো রুবি।,,,তখনই রুমে ঢুকলো নভ,,,

“মোম তুমি ফ্রেশ হয়ে…ওহ,,কাকিয়া তুমিও আছো?,,কাউকে দিয়ে ওর জন্য একটু খাবারের ব্যবস্থা করবে প্লিজ?”

রুবি হাসলো।একটু অবাকও হলো।নভকে আগে কখনো কারোর জন্য এতে উতলা হতে দেখেনি তিনি।তবে তার এই পরিবর্তন সবারই ভালো লাগছে আজ।,,,

“বলতে হবে না নভ।,,,আমি খাইয়ে দিয়েছি ওকে।,,”

“ওহ,,,আমি আরো বলতে আসলাম।,,,মোম তোমার সুটকেস কোথায় রাখলে?”

মোম নীলের সাথে খেলতে খেলতেই বললো…

“ঐ যে কাবার্ডের পেছনে আছে,,,।কেন?”

নভ কিছু বললো না।গিয়ে সুটকেস থেকে মেডিসিন বক্সটা বের করে নির্ধারিত ঔষধ খুলে নিলো।তিনটা টেবলেট,,, আর জগ থেকে পানি এনে ধরলো মোমের মুখের সামনে…

“নাও হা করো।,,”

মোম নীলকে কোলে বসিয়ে একহাত এগিয়ে নিলো..

“আমায় দিন,,,,আমি খেয়ে নিচ্ছি।”

“নো,,,হা করে বলছি,,, কুইক।”

মোম আর কথা বাড়ালো না,, নীলও খুব নরাচরা করছে।তাই নভের হাতেই খেয়ে নিলো ঔষধ গুলো।,,,তবে এই সময় এতোগুলো ঔষধ দেখে অবাক হলো বাকিরা।রুবি তো জিজ্ঞেস করেই ফেললো…

” এতোগুলো ঔষধ কিসের নভ?,,ও কেন খায় এগুলো?”

এতোক্ষণ হাসি খুশি থাকলেও এবার চুপসে গেলো মোম।সে তো ভুলেই গেছিলো তার পরিনতির কথা।,,,সে জানে এগুলো কিসের ঔষধ। কিন্তু নভ তো জানে না।,,এখন কি হবে?,,,এতোদিন তো এসব নিয়ে ভাবে নি মোম।হয়তো ভাইয়া নভকে দিয়েছে ঔষধ গুলো।তবে নভ কি কখনোই জানতে চাইবে না এগুলো কিসের ঔষধ? নাহ,,,নভ তো এতো সরল সিধা নয়।,,,,

সেসব নাহয় বাদ।এখন সবাইকে কি উত্তর দিবে মোম?,,আর এখন যদি নভই ওকে জিজ্ঞেস করে যে ঔষধ গুলো কিসের,,তাহলে কি বলবে মোম?,,তার মৃত্যুটা কয়েকদিনের জন্য ঠেকানোর ঔষধ.?,,নাহ,,,এটা তো বলবে না মোম।সে তো চায় না তার এই কঠিন সত্যিটা নিজের লোক ছাড়া অন্যকেউ জানুক।,,,জানলে যে কেউ দয়া দেখাবে।আর কেউ বা হয়তো মোমকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবে।কিন্তু তাতো মেনে নিতে চায়না মোম।নিজের জীবনের অন্তিমদশায় সে সবার সামনে একজন সাধারণ মানুষের মতোই থাকতে চায়।,,,,

এসব চিন্তার মাঝেই নভ স্বাভাবিক ভাবে বললো…

“এমনিই,,,দেখছো না কেমন প্যাকাটির মতো শরীর।এই প্যাকাটিকে ঠিক করার জন্যই এতোগুলা মেডিসিন। ”

++++চলবে++++

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here