#ফুলকৌড়ি
(৩৫)
#লেখনীতে_শারমীন_ইসলাম
গভীর রাতের প্রহরের ন্যায় এই মধ্যে দুপুরেও বাড়িটা শুনশান বিরাজ করছে।নিস্তব্ধ, নীরব!মানুষের অভাবে খা-খা করছে-ও বৈকি।এতোবড় বাড়িটার কোথাও কেউ নেই যেনো।অথচ বাড়িতে কম মানুষও নয়।অসুস্থ
জাহিদ সাহেব নিয়মানুযায়ী দুপুরের খাবার খেয়ে একটা ভাতঘুম দেন।আজও তার অন্যথা হয়নি।দুপুরে খেয়েই ঘুমিয়েছ।যারকারনে বাড়িতে এতোবড় একটা দূর্ঘটনার ঘটনায় সবাই যে মূর্ছা পড়েছে।এটা তিনি জানেনও না।নাফিমও ঘুমে।জ্বরে অসুস্থ দীবাও গভীর ঘুমে পড়ে আছে বিছানায়।বাড়িতে আপতত তিনজন মানুষের আনাগোনা চলছে।তবুও সেই মানুষগুলোর আনাগোনা ঘুমিয়ে থাকা মানুষগুলোর থেকেও খুব একটা পার্থক্য নেই।সেই রক্তে মাখামাখি অবস্থায় আবারও বাড়ির সদস্যগুলো নিয়ে হসপিটালে ছুটতে হলো ইভানকে।বাদ গেলেন না বৃদ্ধা ফাতেমা বেগমও।স্বান্তনা রহমানও যাবার প্রস্তুতি নিতেই,বাড়ির অসুস্থ মানুষগুলোর কথা ভেবে ফের রয়ে গেলেন।নাহলে নিভানকে যে তিনি নাফিমের থেকে কোনো অংশেও আলাদা নজরে দেখেন না।আপন সন্তানের মতোই মনে করেন।সেই ছেলেটা অসুস্থ!তিনি না গিয়ে বাড়িতে থাকতে পারেন!তবে বাড়ির মানুষগুলোর কথা না ভাবলেও যে নয়।তাই বাধ্য হয়ে শ্বাশুড়ি মায়ের কথায় তিনি রয়ে গেলেন।তবে মন ছটফটিয়ে চলেছে,ওই মারাত্মক অসুস্থ ছেলেটাকে একপলক দেখার জন্য।সোফার একপাশে দু’হাতে মাথা চেপে মনেমনে শত প্রার্থনা করে চলেছেন তিনি।যেনো ছেলেটার মহাবিপদ কেটে যায়,দ্রুত সুস্থ হয়ে ফিরে আসে।
স্বান্তনা রহমানের অপর পাশের সোফায় বসে আছে তন্ময়ী আর কৌড়ি।দুজনেই চুপচাপ।তন্ময়ী ক্ষনে ক্ষনে চোখ মুছলেও,তার কান্নার শব্দ নেই।কৌড়িও নীরব।স্বান্তনা রহমানের মতো মাথায় দুহাত চেপে বসে আছে।
নিজের ভিতরে কি চলছে,সেটা শুধু সেইই জানে।সকালের ফোন কলের কথাগুলো বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে, আর বুকব্যথাটা জ্বলনে রুপান্তরিত হচ্ছে।সেই জ্বলনের বহিঃপ্রকাশ না কান্নার জ্বলে নিভিয়ে ফেলতে পারছে,না ভিতরটাকে কোনোপ্রকার স্বস্তি দিতে পারছে।তবে মনেমনে প্রার্থনা করে চলেছে।–মানুষটা সুস্থ সমেত তারকাছে ফিরে আসুক।হ্যাঁ তারকাছে ফিরে আসুক।
‘জানো কৌড়ি,পৃথিবীতে মানুষের বাঁচার অনেক শখ।আমারও বাঁচার অনেক ইচ্ছে,শখ।তবে এই মূহুর্তে আমি আমার নিঃশ্বাসের বিনিময় হলেও,ওই মানুষটা সুস্থ হয়ে ফিরে আসার প্রার্থনা করছি।আমার এই দোয়ার কারন শুনবে না তুমি?
দু’হাতে চেপে রাখা মাথাটা একটুখানি তুললো কৌড়ি।হরিণী বড়োবড়ো কালোমনির শান্ত চোখজোড়া মূহুর্তেই জ্বলজ্বল করে উঠলো।চোখের কালোমনির পাশের সাদা অংশটুকুও মৃদু লালচেবর্ণে ছেয়ে আছে।সেদিকে বিশেষ খেয়াল করলোনা তন্ময়ী।ফের বলতে শুনতে করলো।
‘নিভান ভাইয়া আমার জীবনের এমন একটা সম্মান শ্রদ্ধার স্থান।আমি উনাকে ভাইয়ের বন্ধু কম,উনার আচার আচারণে নিজের ভাইয়ের মতো জেনেছি বেশি। পাশে পেয়েছিও সবসময় তেমনটা রূপে।উনি আমার জীবনে মা ভাইয়ার পরপরই এমন একটা শ্রদ্ধীয় মানুষ।
যেখানে উনার অবদান একটা একটা বলে শেষ করার নয়।নিজের বোনের মতো দায়িত্ব পালন করেছে।যেভাবে একটা ভাই পালন করে,উনি আমার প্রতি করেছেন।দাদাভাই বিদেশ থাকাকালীন আমাদের সমস্ত দায়দায়িত্ব নিজগুণে নিপুনভাবে সামলিয়েছেন।তখন ভাবতাম,দূরসম্পর্কের জন্য কেউ কিভাবে এতেটা করে!সেখান থেকেই শ্রদ্ধাটা আরও বেড়ে গেলো।যদিও দাদাভাইয়ের সাথে বন্ধুত্ব হওয়ার পর থেকে,আমার আর দাদাভাইয়ের জীবনে অর্থাৎ আমাদের জীবনে উনার অনেক অবদান।শুধু অর্থ দিয়ে নয়,আমাকে নিজের বোনের মতো স্নেহ করা,আমার দাদাভাইকে বন্ধু কম নিজের ভাইয়ের মতো ভালোবাসা,মা’কে মায়ের মতো সম্মান শ্রদ্ধা করা।খেয়াল রাখা।আমাদের মধ্যে যে দূরসম্পর্ক।সেই সম্পর্কের প্রতি যত্নশীল হওয়া।কে করে এই জামানায়? সত্যিই আমি উনার মতো,ছেলে, বন্ধু, ভাই,খুব কমই দেখেছি।আর ওরকম মানুষের বেচে থাকা,সুস্থ থাকা পৃথিবীতে খুব দরকার।আমার চেয়েও বেঁচে থাকা দরকার।
চেনা পরিচিত মানুষগুলো মানুষটাকে কতোটা সম্মান কতোটা শ্রদ্ধা করে।ভালোবাসে।অথচ তারকাছেই সেই মানুষটা ভালোবাসার কাঙাল।আর সেই মানুষটার হতে পারছেনা সে।উফফ! নিজের আলাদা ভাবনায় মশগুল হলো কৌড়ি।স্বান্তনা রহমান এতোসময় মাথা হাত চেপে বসে থাকলে-ও তন্ময়ী কথা শুরু করতেই,ওর মুখের তাকিয়ে নীরবে কথাগুলো শুনে গেলেন।তন্ময়ী কথা শেষ করতেই উঠে দু-জনের মধ্যর ফাঁকা জায়গায় গিয়ে বসলেন তিনি।দু’জনেই উনার দিকে তাকালো।সেটা দেখে দূর্বল হেসে তন্ময়ীর মাথায় হাত রেখে বললেন।
‘মন খারাপ করো না।সব ঠিক হয়ে যাবে।দেখবে নিভান এই সুস্থ হয়ে ফিরলো বলে কথা।এতো মানুষের প্রার্থনা বিফলে যেতে পারে!পারে না।
মাথা নাড়ালো তন্ময়ী।স্বান্তনা রহমানের হাত জড়িয়ে কাঁধে মাথা রেখে বললো–এই প্রার্থনাই তো করে চলেছি বারংবার।ভাইয়া সুস্থ হয়ে দ্রুত ফিরুক।
তন্ময়ী ভরসার কাঁধ খুঁজে নিয়ে সেখানে মাথা রাখলো।কৌড়িও যেনো ভরসার কোল খুঁজে পেলো।দ্বিধাহীন নীরবে মাথাটা এলিয়ে দিলো স্বান্তনা রহমানের কোলে।তড়িৎ কৌড়ির মুখের দিকে তাকালেন তিনি।তার আগেই কৌড়ি মুখ লুকিয়ে নিয়েছে স্বান্তনা রহমানের পেটের শাড়ির ভাঁজে।চিবুকের একপাশ আর মাথার চুলের অংশ ছাড়া নজরের আড়ালে চলে গেলো সব।তবুও সেদিকে নিষ্পলক তাকিয়ে থেকে কৌড়ির মাথায় স্নেহের হাত রাখলেন তিনি। ইদানীং একটা বিষয় তিনি খুবই সুক্ষ ভাবে লক্ষ্য করেছেন,যা সহজে সবার নজরে পড়ার কথা নয়।কৌড়ির প্রতি নিভানের মায়াময় শান্ত নরম চাহুনি।একদিন খেয়াল করার পরে গুরুত্ব দেননি তিনি।তবে বিয়ে বাড়ির এতো মেয়েদের উজ্জ্বল সাজগোজ ছাড়িয়ে,সাধারণভাবে ঘুরতে থাকা কৌড়ির পানে সেই একই মায়াময় মুগ্ধ নজর আবদ্ধিত হওয়া।বিষয়টা সাধারণ বলে মনে হয়নি উনার।নিভান যে চরিত্রের ছেলে,তারসাথে মিলিয়ে তিনি যে উত্তর পেলেন।সেটাও অবিশ্বাস্য লেগেছে।বিষয়টা নিয়ে তিনি নীহারিকা বেগমের সাথে আলাপ করতে চেয়েছিলেন।কিন্তু বিয়ের হাজার তাল-ঝামেলায় আর হয়ে উঠে-নি।
কৌড়ির চুলের ভাঁজে আঙুল বিচরণ করলেন তিনি।মুগ্ধ হয়ে ফর্সা কান,গলা এগুলো পর্যবেক্ষণ করলেন।মেয়েটার সৌন্দর্যের কমতি নেই।যে কার-ও নজরের মুগ্ধতা ছড়াবে।তবে নিভান শুধু সৌন্দর্যের পাগল নয়।ও ছেলে আলাদা ধাতুর।যা দীবার বিষয়েসহ,আরও অনেক সৌন্দর্যময়ী মেয়ের বিষয়ে তিনিসহ পরিবারের সবাই ঢেড় টের পেয়েছেন।তবে কৌড়ি!বিষয়টা ভাবিয়েছে উনাকে।যদিও ছেলেমেয়ে দু’টোই চাপা স্বভাবের।একজন পড়াশোনা নিয়ে যেমন ব্যস্ত।অন্যজন বিজনেস নিয়ে তার দ্বিগুণ ব্যস্ত। দু’জনের কাউকে সেভাবে ফোনেও দেখা যায় না।আর না কখনো কথা বলতে শুনেছেন।বিধায় কৌড়ির দিক থেকে কিছু না থাকলেও,নিভানের দিক থেকে কিছু একটা চলছে।তবে তাই যদি হয়,বউমা হিসাবে কৌড়ি মোটেও মন্দ হবেনা।শুধু ছেলেটা সুস্থ হয়ে ফিরলেই শুকরিয়া।
★
আজ হসপিটালে নিভানের অসুস্থতার চারদিন চলছে।মারাত্মক এক্সিডেন্টে বেঁচে ফিরার কথা নয়।তবুও বেঁচে ফিরেছে সে।হয়তো জীবন এখানেই শেষ নয় তার।জীবনের এগিয়ে যাওয়ার পাতা এখনো বাকি।তাই হয়তো ফিরে এসেছে।রহম করেছেন আল্লাহ।হসপিটালের স্পেশাল কেবিনের রুগী বেডটায় হেলান দিয়ে পা মেলিয়ে বসে আছে নিভান।গায়ের হালকা শীততাপনিয়ন্ত্রক বস্ত্রটা কোমর পর্যন্ত দেওয়া।চোখ বুঁজে আপনমনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো সে।এক্সিডেন্ট হওয়ার প্রায় চব্বিশ ঘন্টা পরে তার নাকি জ্ঞান ফিরেছে।জ্ঞান ফেরার পর অনেককেই দেখেছে হসপিটালে।মাকে হাওমাও করে কাঁদতে দেখেছে,বাড়ির প্রতিটি সদস্যকে তারজন্য মলিন রূপে দেখেছে সে।যে ফুপুর সাথে তার কখনো আদর আহ্লাদিত সম্পর্ক গড়ে উঠেনি,সেই ফুপু তাই মায়ামায়া করে কথা বললো।দাদুমা।তিনি তো কেঁদেই দিয়ে কতো আদূরী কন্ঠে এটা ওটা বললেন।এই চারদিনে নিজের আপনজন, আত্মীয় স্বজন বলতে কেউ বাকি নেই,তাকে দেখতে আসতে।অথচ যাকে দেখে মন শান্ত হতে চাইছে। নজর খুঁজেছে। আজ চারদিনেও তার দেখা মেলেনি।কি-করে মেয়েটা এতো নিষ্ঠুর হতে পারে!তার কি একটুও মায়া হয়নি তার প্রতি।আর মারাত্মক এক্সিডেন্টের কথা শুনেও কি একটুও কষ্ট, খারাপ লাগিনি মেয়েটার!অদ্ভুত হাসলো নিভান।সে হাসি যেনো বর্ণনা দিলো নিজের প্রতি তাচ্ছিল্যতা।
‘আসবো দাদুভাই?
পুরানো বৃদ্ধা কাঁপা কন্ঠস্বর কানে ভেসে আসতেই মৃদু কেঁপে উঠলেন নীহারিকা বেগম।কতোগুলো দিনপর দেখা।কতোগুলো দিন কোথায়,প্রায় দুই যুগেরও বেশি।এরমধ্যে নিভানের সাথে টুকিটাকি সম্পর্কের আদান-প্রদান থাকলেও, উনার সাথে দেখা সাক্ষাৎ হয়নি ওবাড়ির ছাড়ার পর আর।হয়তো নাতীর অসুস্থতার কথা শুনে এসেছেন।ভদ্রমহিলা অনুমতি চাইলেও অনুমতি পাওয়ার আশা করলেন না।ভিতরে ঢুকেই নিভানের কাছাকাছি গিয়ে বসলেন।নিভানকে এই অবস্থায় দেখে কেদেও ফেললেন।ফের নিভানের মাথায় হাতে জড়ানো ব্যান্ডেজে হাত ছুঁইয়ে আদূরে গলায় বললেন।
‘এখন কেমন আছো দাদুভাই?আমি তোমার এক্সিডেন্টের কথা কাল সন্ধ্যায় শুনেছি,নাহলে আসতে কি আমার দেরি হয়!
শ্যামবর্ণের জৌলুশ একটা বৃদ্ধা আবায়ব।জিনগতভাবে হয়তো এই একই বর্নের একোই মুখাবয়ব পেয়েছিলেন বাবা আওসাফ আহমেদ।আর সেই একোই জিনগতভাবে বাবার কাঠামো বর্ন পেয়েছে সে।বিধায় এই মুখটার দিকে তাকিয়ে শক্তপোক্তভাবে কোনো কথা বলতে পারে-না নিভান।পারেনা বলতে ভুল।ওবাড়ি ছাড়ার পর,প্রায় বারো বছর পর এই দাদুমার অসুস্থতার কথা শুনে উনাকে দেখতে গিয়েছিলো নিভান।তখন কম কথা শুনিয়ে আসিনি।যদিও সে যেতে চায়নি ওবাড়ি।তবে মরণাপন্ন একজন মানুষ তাকে দেখতে চেয়েছে, তাই মায়ের কথা মেনে ওবাড়িতে যেতে বাধ্য হয়েছিলো সে।হয়তো ওবাড়ি ছাড়ার ক্ষেত্রে দাদুমার কোনো দোষ ছিলো-না।তবে তিনি যে ধরনের শক্তপোক্ত মহিলা,তিনি চাইলেই ছেলেদের মুখের উপর কথা বলে নিজের জোর দেখাতে পারতেন।এবং তাদেরকে ওবাড়িতে রাখার সুব্যবস্থা-ও করতে পারতেন।তবে তিনি সেটা করেননি।নীরব ছিলেন।মায়ের ভাস্যনুযায়ী হয়তো এটা-ও ঠিক।ভাগ্য চেয়েছিলো অন্যরকম,তাই আজ তারা এখানে।ভাগ্য ভিন্ন।ভাবনা ছেড়ে কিছুটা দূরে দাঁড়ানো মায়ের দিকে একপলক চেয়ে মৃদুস্বরে বললো।
‘কান্নাকাটি করবেন না।আমি এখন ঠিক আছি।আপনি কেমন আছেন?শরীর ঠিক আছে আপনার?
‘কান্নাকাটি করবো না বলছো?ওই একইভাবে তো তোমার বাবাও চলে গেলেন।আমার প্রথম সন্তান ছিলো আওসাফ।সেই সন্তান আমার আগে চলে গেলো!আমার অবস্থা বুঝতে পারছো?সেই ঘরপোড়া গোয়ালিনী আমি।আমার নিজের কারও এক্সিডেন্টের কথা শুনলে যে আমার পরাণ যায়!আর তুমি আমার সেই সন্তানের সন্তান।তোমাকে সেই আদর আহ্লাদে এই দুহাতে মানুষ করতে পারিনি হয়তো।কাছেও রাখতে পারিনি বলে মনে করো,আমি তোমার মন্দে ব্যথিত হইনা?আমার আফসোস তুমি বুঝবেনা দাদু।তবে তোমার মন্দেও একইভাবে ছটফটায় আমি।কষ্ট পাই,ব্যাথা পাই।যেমনটা আমার আওসাফের মন্দে ব্যথা কষ্ট অনুভব করতাম।আমার বংশের প্রথম নাতী তুমি আমার।অথচ তোমাকে না নিজের কাছে রাখতে পারলাম আর না,নিজের বড় সন্তানের আদরের সন্তান হিসাবে যোগ্য সম্মান দিয়ে আদর আহ্লাদে নিজ হাতে বড় করে পারলাম।না-হলে কি তোমাকে অন্যের দারস্থ হয়ে থাকতে হয়,আর না তোমার এই মহাবিপদের তিনদিনের মাথায় এসে আমাকে দেখতে হয় তোমাকে!
ভদ্রমহিলা কাঁদলেন।বেড থেকে কিছুটা দূর দাড়িয়ে সেই নীরবে কান্না নীহারিকা বেগম-ও দেখলেন,এবং নিজেও উপলব্ধি করলেন।ভদ্রমহিলার প্রতি এতোদিনের অভিযোগ বুঝি তরতর করে কমে যেতে থাকলো উনার।আজ নিজেও সেই একই পরিস্থিতির মোকাবেলা করছেন।উনার সন্তান করুনাময়ের অশেষ রহমতে এখনো বেঁচে আছে।কিন্তু ওই বৃদ্ধা মহিলার সন্তানের লাশতো উনার দুচোখের সামনে দিয়ে কবরে নিয়ে শায়িত করা হয়েছিলো।তবে কি পরিস্থিতি হয়েছিলো উনার!কিভাবে সামলিয়ে ছিলো নিজেকে!আজ তা বেশ ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারলেন।সেদিন নীহারিকা বেগমের উপরে দেখানো রাগ ক্ষোভে বলা কথাগুলো হয়তো যথার্থ না থাকলেও,একেবারে অনর্থ ছিলোনা।আর স্বামীর বাড়িছাড়া সেটাতো নিতান্তই ভাগ্যে ছিলো।নয়তো ওই অল্প বয়সে একটা বাচ্চা নিয়ে ওই সংসারে টিকে থাকা দীর্ঘস্থায়ী কখনো সম্ভব হতোনা।যেখানে নিজের দেবরের নজর পড়েছিলো উনার উপর।যার ঘরসংসারও ছিলো।সেই ঘর ভাঙতে চায়নি বলেই নিজ থেকে ওই সংসার ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন তিনি।ইজ্জত নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলেন,স্বামীর সম্পদ নিয়ে নয়।
বাবার নামটা বারবার আসতেই চোখ বুঁজে নিলো নিভান।ববা নামক মানুষটাকে সে প্রচন্ড ভালোবাসতো, এমনকি ওই মানুষাটও তাকে প্রচন্ড ভালোবাসতো।নিভানের যেটুকু স্মৃতিতে স্মরণ আছে,বাবা সবসময় তার সাথে আদুরে গলায় কথা বলতো।মানুষটা তাকে এতো ভালোবাসতো,সেই ছোট্টো সময়ের ভালোবাসা স্মৃতিতে স্মরণে না থাকার কথা থাকলেও,স্পষ্ট স্মরণে আছে নিভানের।তাই তো সেই একই আদর পিতৃস্নেহ পাওয়া সত্ত্বেও,জাহিদ সাহেবকে কখনো বাবা ডাকটা ডাকা হয়নি।চোখ বুঁজে থাকা নিভানের মুখের দিকে অনড় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন ভদ্রমহিলা।একদম ছেলের কপি।নিভান ছোটো থাকতে ততোটা অনুরূপ না মনে হলেও এখন পুরো অনুরূপ মনে হয়।সেই চোখ, ঠোঁট, গড়ন। এমনকি উঁচু লম্বা,গায়ের বর্ন।ভদ্রমহিলা উঠে দাঁড়ালেন। নিভানের কপালে ব্যান্ডেজ জড়ানো সাদা পট্রির উপর প্রগাঢ় চুমু একে দিলেন।মনহলো নিজের ছেলেকেই আদর করছেন।এই উপলব্ধি উনার এখান থেকে অনেকগুলো বছর আগে নিভান যখন দেখা করতে গিয়েছিলো উনার সাথে তখনই অনুভব করেছিলেন।তরপর প্রতিটা রাত উনার আফসোস আর দীর্ঘ নিঃশ্বাসে কেটেছে,নিজের ছেলের অংশকে কাছে ধরে রাখতে না পারার।নিজের আদূরের বড় সন্তানের অস্তিত্ব, রক্ত অন্যের দারস্থ হয়ে মানুষ হওয়ার।উফফ সেই আফসোস কি কখনো মিটবে!মিটবে না।প্রগাঢ় চুমু একে সরে আসলেন ভদ্রমহিলা। ফের আবার নিভানের কপালের ব্যান্ডেজ ছুয়ে আদুরে গলায় অপরাধী মুখ করে বললেন।
‘দাদুমাকে ক্ষমা করো দাদুভাই।তার আদর ভালোবাসা থেকে তোমাকে বঞ্চিত রাখার জন্য ক্ষমা করো।তোমার সাথে হওয়া সকল অবিচার অন্যায়ের জন্য ক্ষমা করো তোমার এই হতভাগা দাদুমাকে।
নিজ রক্ত যতোই দূরে থসক।আর নিজের প্রতি যতোই অন্যায় অবিচার করুক,এই বংশীয় রক্তের টান মায়া যেনো অন্যরকম।দাদুমার আদর ছোঁয়া,বাবার ছোঁয়ার মতো যেনো উপলব্ধি করলো নিভান।সেই প্রেক্ষিতেই মুখে আওড়ালো।
‘এমনভাবে বলবেন না দাদুমা,বাবা কষ্ট পাবেন।উনার মা উনার সন্তানের কাছে এভাবে ছোটো হয়ে কথা বলছে!উনি বেঁচে থাকলে হয়তো এই দৃশ্যটা কখনো মানতেন না।আর আমিও চাইনা,আমার মৃত্যু বাবার মা অসম্মতি হোক।
দাদির ভালোবাসা পেয়েও চোখ মেললো-না নিভান।সেভাবে চোখ বুঁজে রেখে বললো কতগুলো।
‘আর আমার আওসাফের আমানত।তার কলিজার টুকরো যে আমি আগলে রাখতে পারিনি,তারজন্য ও কি আমার উপর মনোক্ষুণ্ণ হবেনা!কষ্ট পাবেনা!
এতোদিন পর এই কথাগুলো মনেহলো!মনে কথাগুলো আসলেও,কথা বাড়ালোনা নিভান।চুপ রইলো।নিভানের থেকে সরতেই ভদ্রমহিলার নজর পড়লো পাশে।নীহারিকা বেগম-কে দেখেই পরাণ কেঁদে উঠলো।নীরবে কিছু সময় তাকিয়ে কাঁপা স্বরে আওড়ালেন।
‘কেমন আছো নীহারিকা?
গলা কাঁপলো নীহারিকা বেগমের।গত হওয়া স্বামী না থাকলেও উনাকে তিনি ভুলে যাননি।আর না তার পরিবারকে।আর না কয়েক বছরের সংসারকে।যখন একাকি সময় পার করেন,মনে পড়ে ফেলে আসা দিনগুলো। সবকিছু।আবার দীর্ঘশ্বাসের সাথে মিলিয়ে যায় মনে পড়া অতিত।ভদ্রমহিলা প্রশ্ন জবতেই, সময় নিয়ে নীহারিকা বেগম উত্তর দিলেন।—ভালো আছি।আপনি কেমন আছেন মা?
‘এইতো আছি ভালো।তবে মা না-হয় সন্তানের ভালোর জন্য তাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলো,তুমি সেটা বুঝেও অবুঝ রইলে কিকরে?এই মা-টা কেমন আছে একটু খোঁজখবর নিলে না?জানতে চাইলেনা?আমার অসুস্থতা মৃত্যুশয্যা পর্যন্ত গড়িয়েছিলো।শুধু নাতিকে দেখতে চায়নি আমি,তোমাকেও চেয়েছিলাম।কৈ মা’কে তো একবার দেখতে গেলেনা?মা’কে বুঝি এখনো ক্ষমা করতে পারোনি?
খোঁজ নিয়েছিলো নীহারিকা বেগম।ওই বাড়ির একটা সদস্যর সাথে এখনো যোগাযোগ আছে উনার।তার কাছেই খোঁজ নিয়েছিলো।তবে ভদ্রমহিলা হয়তো জানেন না।জানাতে চাইলোওনা নীহারিকা বেগম। ধীর পায়ে এগিয়ে শ্বাশুড়ি মায়ের কাছে গিয়ে বসলেন।আলতো স্পর্শে উনার হাতটা ধরে বললেন—আপনি তো জানেন সবকিছু। পরিস্থিতি যেটা দাড়িয়েছিলো,ওই বাড়িতে পা রাখার ইচ্ছে আর কখনো হয়নি মা।তবে আপনাদের আমি ভুলিনি মা।আর আপনি এমন কোনো অন্যায় আমার সাথে করেননি যে আপনাকে আমার ক্ষমার নজরে দেখতে হবে।
দীর্ঘশ্বাস ফেললেন ভদ্রমহিলা।ফের রয়েসয়ে বললেন–তুমি যারজন্য ওবাড়িতে পা মাড়াতে চাওনা,সে এখন আর ওই বাসভবনে থাকেনা।সবকিছু বেঁচেকিনে মা-ভাইদের ফেলে পর শহরকে আপন করে নিয়েছে।স্ত্রী সন্তান নিয়ে বিদেশে স্থায়িত্ব হয়েছে।এক সন্তানকে চোখের সামনে দিয়ে কবরে শায়িত করা হলো।অন্য সন্তানকে পরের বাড়ির মেয়ের জন্য কাছছাড়া করতে চায়নি আমি।তাই সেদিন আমার আওসাফের কাছে জবাবদিহিতা করা লাগবে জেনেও আমি তোমাদের প্রতি অবিচার করলাম।সেদিন নীরব থেকে বাড়িছাড়া হতে বাধ্য করলাম।অথচ সেই তাই হলো।সেই সন্তান নিজের ভালোর জন্য,নিজের সুখের জন্য আমার কাছছাড়া হয়েই গেলো।অথচ আমি তোমাদের কাছে আমার মৃত সন্তানের কাছে কতোবড় দ্বায়ী হয়ে রইলাম।আমাকে ক্ষমা করে দিও নীহারিকা!ক্ষমা করে দিও!
মনেমনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভদ্রমহিলাকে স্বান্তনা দিতে থাকলেন নীহারিকা বেগম।সেখান থেকে কিছুক্ষণ পর নিভানের আরও ছোটো চাচা ঢুকলো কেবিনে।যিনি নিভানের দাদুমাকে সাথে করে নিয়ে এসেছেন।তবে নিভানের জন্য ফলমূল নিয়ে আসতে, মাকে এগিয়ে দিয়ে চলে গিয়েছিলেন।ভদ্রমহিলা অসুস্থ নাতীকে দেখার জন্য উনাকে পথে কোথাও দাঁড়াতে দেয়নি।বিধায় উনাকে হসপিটালে পৌঁছে দিয়ে উনি পুনরায় ফলমূল আনতে গিয়েছিলেন।নীহারিকা বেগম যখন বাড়ি ছেড়েছিলেন ছেলেটা ছোটো ছিলো।কেবল ইন্টারমিডিয়েট পড়ে।সেই ছেলের এখন ভরা সংসার।ভালোমন্দ আলাপন সেরে,সাংসারিক ভালোমন্দ কথায় মত্ত হলো তিনজনে।সেখানে নিভান শুধু নীরব দর্শক।
সবার কথা শুনে যাচ্ছে।যদিও ছোটো চাচার সাথে তার মোটামুটি সম্পর্ক।যোগাযোগ ও আছে।চলতো মাঝেমধ্যে।তবে ওবাড়িতে আসা যাওয়া ছিলো-না।সেই সম্পর্কে উনি নিভানের সাথেও মাঝেমধ্যে টুকটাক কথা সারছেন।তবে নিভানের মন অন্য কোথাও।নজর আবদ্ধ কেবিনের দরজায়।এই বুঝি সেই কাঙ্ক্ষিত মুখটা দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো।কিন্তু নসহ!সময় অপেক্ষার গড়াচ্ছে।অপেক্ষা করতে করতে আজ চারটা দিন।অথচ সেই মুখটার দেখা নেই।মাথা সোজা করে চোখ বুঁজে নিলো নিভান।শক্তমনে হঠাৎই অভিমানেরা জায়গা করে নিলো,যেখানে যুক্ত হলো অভিযোগেরাও।সে মনেমনে আওড়ালো।
‘তুমি এতো নিষ্ঠুর নির্দয়া কি-করে হতে পারো কৌড়ি?
কি করে?তবে কি আমি তোমাকে কোমল ফুলটা ভেবে মারাত্মক ভুল করে ফেললাম?
★
শীতের দক্ষিণা হিমেল হাওয়া বইছে এলোমেলো ভাবে।প্রচুর ঠান্ডাভাব।সেই ঠান্ডাভাব ছাড়িয়ে যাচ্ছে নিভানের হালকা ফুলসিল্ভ সাদা টিশার্টটা ভেদ করে।তবুও অনড় ছেলেটা।যেনো শীতল বাতাসটা তার শরীর ছুঁয়ে গেলেও ভিতরটা ছুঁয়ে দিতে পারছেনা।যে ঠান্ডা ভাবটায় শরীর হিম হয়ে আসছে,তা কিছুতেই ভিতরের জ্বলন’টা নিভাতে পারছেনা।বাড়িতে এসেছে কাল বিকালে তবুও মেয়েটার দেখা নেই।দুর প্রান্তে স্থির হয়ে থাকা বাদামিবর্ন নজরজোড়া এবার আপনমনে বুঁজে নিলো নিভান।হঠাৎ সেই শান্ত পায়ের কদমধ্বনি। হৃদপিণ্ড কেঁপে উঠলো নিভানের।কৌড়ি এসেছে।মেয়েটার পায়ের নিঃশব্দতাও তার চেনা।সে শতভাগ সিওর কৌড়ি এসেছে।ভিতরের জ্বলনটা কমার বদৌলে বেড়ে গেলো দ্বিগুণ।তবে ভুলেও পিছু ফিরলো না নিভান।প্রগাঢ় এক অভিমানে সেভাবেই চোখবুঁজে অনড় দাঁড়িয়ে রইলো।মনেমনে অভিমানী মন প্রশ্ন যাপলো, সত্যিই কি মেয়েটা তারজন্য এসেছে?মরে যাচ্ছিলো তাই মেয়েটা দেখতে যায়নি,আর এখন তো সে সুস্থ।
দুরুদুরু বুকে নিভানের কয়েক কদম পিছে এসে দাড়ালো কৌড়ি।সেদিনের পর এই মানুষটাকে একটাবার দেখার জন্য কতোটা উতলা হয়ে ছিলো তার মন।সেটা শুধু সেই জানে। হসপিটালে যাওয়ার জন্যও মুখিয়ে ছিলো।অথচ সবার হসপিটালে অবাধ যাওয়া আসা চললেও, তাকে যেনো সেখানে নিয়ে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।এমনটা ভেবে বসেছিলো সবাই।দ্বিধায়,লজ্জায় সেও আর বলতে পারিনি, মানুষটাকে একটু দেখতে সেও হসপিটালে যেতে চায়।কাল বিকালে যখন মানুষটাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হলো।কৌড়ি সামনাসামনি না যেতে পারলেও,দরজার আড়াল থেকে অসুস্থ মানুষটাকে খুব খেয়াল করে দেখেছিলো।শ্যামবর্ণ মুখটা সেই গম্ভীর্য।কপালে মোটা করে ব্যান্ডেজ জড়ানো।হাতেও সেই একই অবস্থা।ইশ,ওই অবস্থায় মানুষটাকে দেখে পরানটা কিভাবে ছলকে উঠেছিলো!আজ সকাল থেকেও সুযোগ পায়নি মানুষটাকে দেখার, আর কাছে যাওয়া তো অপ্রকাশ্যভাবে বারণ।এই নিষেধ বারণ কেউ না করলেও,কুন্ঠায় এই নিষেধ যেনো সম্পর্কের অধিকারের।তবে বারবার খেয়াল রেখেছে,মানুষটা ড্রয়িংরুমে আসলো কি-না?রুম থেকে বের হলো কি-না? কিন্তু না আজ সারাদিনে মানুষটা সকাল থেকে রুম থেকে বের হয়নি।তার সকল প্রয়োজন অপ্রয়োজন রুমে মেটানো হয়েছে।সেখানেও বাড়ির সবার অবাধ যাতায়াত থাকলেও,সম্পর্কের খাতিরে তার যাওয়া প্রশ্নেবিদ্ধের!
‘কিজন্য এসেছো?
ভারী গলায় চমকে উঠলো কৌড়ি।মুখ উঁচু থাকলেও,খেয়ালি নজর ভাবনায় ডুবে ছিলো।গম্ভীর স্বরের বার্তা কানে আসতেই নজট খেয়ালি হয়ে উঠলো।
উচুলম্বা মানুষটার পিছন দেখা গেলেও,সামনে দেখার উপায় নেই।তবে মানুষটার গম্ভীর গলাটা আজ আরও দৃঢ়।কিন্তু তারসাথে তো কখনো এতো কঠিন গলায় কথা বলেনা।তবে কি?ভাবনা না এগিয়ে কিছু বলতে গিয়েও দ্বিধায় পড়লো কৌড়ি।কি বলবে?কি জিজ্ঞেস করবে সে?কখনো নিজ ইচ্ছেতে মানুষটার সাথে কথা হয়নি তার!তবে কি জানতে চাইবে?আর জানতে চাওয়াতে আসছে যাচ্ছেই বা কি?কৌড়ির নীরবতা আরও জ্বালিয়ে দিলো নিভানকে।মূহুর্তেই ঘুরে কৌড়ির মুখোমুখি দাঁড়ালো সে।ক্ষোভিত গলা শুধালো।
‘বাড়িতে কুকুর বিড়াল পুষলেও মানুষের তারপ্রতি একটু মায়া জন্মায়।টান হয়।সেখানে আমিতো মানুষ।আমার দূর্বলতা তুমি।জেনেও তোমার কি একটুও আমার জন্য মায়া হয়নি কৌড়ি?আমি মরে যেতে পারতাম,সেটা জেনেও কি আমাকে একটু দেখতে ইচ্ছে হয়নি তোমার?
তীব্র অভিযোগে বুক কেঁপে উঠলো। হৃদপিণ্ডে বিধলো যেনো সূচালো তীর।সেই যন্ত্রণায় চোখে ভিড় করলো নোনাজল।তবে সেই নোনাজল দাঁতে দাঁত চেপে রোধ করলো কার্নিশ বেয়ে গড়ানো থেকে।গলা কাঁপলো কথা বলতে গিয়ে।তবুও বললো।
‘আমি যেতে চেয়েছিলাম।
‘আমি অপেক্ষাতে ছিলাম।কিন্তু তুমি যাওনি।কেনো?
এই কেনোর জবাবদিহিতা দিতে গিয়েও দিতে পারলোনা কৌড়ি।শুধু অনিমেষ চেয়ে রইলো নিভানের ক্ষোভিত শ্যামবর্ণ মুখে।কৌড়িকে চুপ থাকতে দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো নিভান।যেনো সেই হাসি নিজের উপর তাচ্ছিল্য করা।মুখে বললোও সেরকম তাচ্ছিল্যময় কথা।আগের সেই ক্ষোভ নেই গলায়।গলার স্বর এবার শীতল হলো।সেই শীতল গলার শিথিল বাক্যে কৌড়ির স্পন্দন থমকে গেলো।
‘বিগত চারদিন আমি হসপিটালে শুয়েবসে এটা রিয়েলাইজড্ করলাম,আমি সত্যিই তোমার উপর জোরাবাদী করছি।তুমি ঠিকই বলেছো।আমার,তোমার উপর অনুভূতি জন্মাতেই পারে,সেটা আমার অনুভূতি আর মনের ব্যাপার।তাই বলে তোমার তো বাধ্যবাধকতা নেই,যে সেই একই অনুভূতি তুমি আমাতেও অনুভব করবে।সেই ক্ষেত্রে আমি সত্যিই তোমার উপর জোরাবাদী করছি।দুঃখিত।খুব খুব দুঃখিত।
চোখ বুঁজে ফেললো কৌড়ি। মূহুর্তেই চোখের কার্নিশ বেয়ে অর্নগল নোনাজল গড়ালো। সেটা দেখে ভিতরটা আরও জ্বলে উঠলো নিভানের।তীব্র আক্রোশ নিয়ে কৌড়ির মুখের কাছাকাছি গিয়ে দাড়ালো সে।ফের নিজের ভিতরে জমা সকল অভিমান অভিযোগ মিশিয়ে রাগমিশ্রিত কন্ঠে বললো।
‘তুমি প্রার্থনা করতে আমার ফিরে না আসার।তোমাকে জোরাবাদী করার মানুষটা একেবারে মিলিয়ে যেতো তোমার জীবন থেকে,সেই সুখে তুমি মুক্ত পাখির মতো ডানা মেলে বেড়াতে।প্রার্থনা করতে তুমি আমি না ফিরে আসতাম,তোমার কাছে।
চলবে….