পূর্ণতা ” #নন্দিনী_নীলা ৩.

0
107

#পূর্ণতা ”
#নন্দিনী_নীলা
৩.
(কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ) ❌

ভোর সকালেই বাসায় লঙ্কা কাণ্ড ঘটে গেল। ভোর সকালেই শশী রাগ করে বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে। রাগের সঠিক কারণ বাসার কেউই জানে না। শুধু দেখা গেছে শশী রেগে ব্যাগ নিয়ে চলে যাচ্ছে আর তাকে থামানোর বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে দিদান। পূর্ণতা সহ সবাই তাদের কান্ড কারখানা দেখছিল।
আয়রা ফিসফিস করে পূর্ণতা কে বলে,,” মামি কি হলো ব্যাপার টা?”
পূর্ণতা বলল,,” তোমার নতুন মামি হয়ত তোমার মামার উপর রাগ করে বাসা থেকে চলে গেল‌।”
” এখন কি হবে?”
” কি আর হবে একটু পর‌ই দেখবে তোমার মামা তাকে হাতে পায়ে ধরে বাসায় নিয়ে আসছে।”
” তোমার কষ্ট লাগছে না এসব দেখে?”
পূর্ণতা আয়রার দিকে সরাসরি তাকিয়ে বলল,,” কষ্ট লাগবে কেন?”
” তোমার হাজব্যান্ড তোমাকে রেখে আরেকজন কে আহ্লাদ করছে। তা দেখে কি খারাপ লাগছে না?” অবাক স্বরে বলল আয়রা।
” নাহ উল্টো তাদের আদ্যিখেতা দেখে মজা পাচ্ছি। তোমার মামার প্রেমে আমি দেওয়ানা না তার কিছুতেই আমার কিছুই যায় আসে না।”
আয়রা আর কিছু বলল না।
আশালতা বিড়বিড় করে বলছেন,” ভালো হয়েছে আপদ নিজে থেকে বিদায় হয়েছে।”
পূর্ণতা আশালতা এর দিকে তাকিয়ে বলল,,” মা বাড়ির ব‌উকে আপদ বলছো? তুমি কি এখন দর্জাল শাশুড়ি হবার ট্রেনিং নিচ্ছ?”
” তাই নিতে হবে।”
আশালতার কথা শুনে পূর্ণতা খিলখিলিয়ে হেসে উঠল।

দিদান শশীর পিছু এসে বলল,,,” তুমি কিন্তু এখন বেশি করছো শশী।”
“তুমি রাতে আমাকে টাচ করলে কেন? বলেছিলাম না বিয়ের আগে এসব করবে না?”
” একটা চুমুই তো খেয়েছি এতো রাগ করছো কেন?”
” এখন আমি এখানে থাকলে তুমি আর অনেক কিছু করতে চাইবে। বিয়েটা এখনো হয়নি মাথায় রেখো। আর তোমার মাকে নিয়ে আমাদের বাসায় আসবে প্রস্তাব নিয়ে। বিয়ের পর ই আর এই বাসায় আসবো।”
” কি বলছো? আমরা চলো কাজী অফিস এ গিয়ে বিয়ে করে আসি। ওসব করতে গেলে বাসায় জেনে যাবে বিয়ে না করেই মিথ্যা বলেছি। তখন কি হবে ভাবো মায়ের চোখে আর ছোটো হতে চাই না।”
” আমি কোন রাস্তার মেয়ে না দিদান।”
” তুমি আমাকে একটু ও বিশ্বাস করো না শশী। এতো দিন ধরে বিয়ে নিয়ে ঘ্যান ঘ্যান করেছি তুমি শুনো নি বাসায় আসলে মিথ্যা বলালে এখন আবার আয়োজন করে প্রস্তাব দিয়ে বিয়ের কথা বলছো।”
” বিশ্বাস করতে পারি না কারন আছে তুমি সেটা জানো। তুমি আমার বিশ্বাস ভেঙেছ। এবার যা বললাম তাই করবে। আসছি।”
বলেই শশী অটোতে উঠে চলে গেল। দিদান অটোর দিকে তাকিয়ে থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে।
পূর্ণতা দেখল দিদান একাই বাসায় আসছে। ওর কপাল কুঁচকে এলো। ও ধীর পায়ে দিদানের দিকে এগিয়ে এলো‌।
” আপনার ব‌উ ক‌ই?”
দিদান পূর্ণতার দিকে তাকাল। পূর্ণতার চোখে মুখে তাচ্ছিল্য ফুটে উঠেছে খুব লজ্জা পেল দিদান।‌পরিস্থিতি সামলাতে মাকে ডেকে বলল,,” মা শশী ওর মাকে দেখতে গেছে।”
পূর্ণতা বলল,,” দেখে মনে হলো আপনার সাথে রাগ‌ করে গেছে।”
দিদান কাঁচুমাচু মুখ করে বলল,,”আরে না তোমার ভুল ধারণা হয়েছে।”
” হয়তো।”
দিদান নিজের রুমে চলে এলো‌। শশীর উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে এভাবে ওকে নিয়ে খেলছে? যখন যা মন চাচ্ছে তাই করছে। কেমন বিপদে ফেলে ও চলে গেল। এখন আবার আয়োজন করে সমন্ধ নিয়ে বিয়ে করতে হবে। সব কিছু কি খেলা পেয়েছে। নিজের মনে নানান কথা বলে দিদান রাগে ফুঁসছে। রাগে কি করবে বুঝতে পারছে না। রুমেই পায়চারি করছে।

হঠাৎ চিকন মেয়েলি কন্ঠস্বর ভেসে আসতেই দিদান পায়চারি থামিয়ে স্থির হয়ে দরজার দিকে তাকালো। পূর্ণতা দরজা একটু ফাঁক করে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,,” আসতে পারি?”
” আসো।” থমকানো কন্ঠে বলল দিদান।
পূর্ণতা ভেতরে ঢুকে চারপাশে চেক করে বলল,,” একি ভাবির সব জিনিস নিয়ে কি একেবারে চলে গেল নাকি?”
দিদান তো খেয়াল ই করেনি এসব ও খেয়াল করে দেখল আসলেই শশী সব নিয়ে গেছে।
দিদান নিশ্চুপ হয়ে আছে তাই পূর্ণতা বলল,,” মা আপনাকে ডাকছে আসুন।”
পূর্ণতা চলে গেল। দিদান শশীর নাম্বারে কল দিয়ে ওকে জিজ্ঞাসা করতে চাইল সবকিছু নিয়ে যাওয়ার কি প্রয়োজন ছিল?
কিন্তু করল না ফোন রাগে ওর মাথা ফেটে যাচ্ছে ও মায়ের কাছে আসলো। আশালতা ওকে বলল সবার সাথে শপিং এ যেতে।

দিদানের মন মেজাজ খারাপ হয়ে আছে কিন্তু মায়ের কথার অমান্য করতে ইচ্ছে করল না। বাসায় আসার পর যখন থেকে জানতে পারছে শশী ওর ব‌উ তখন থেকে বাসায় কেউ তেমন কথা বলছে না ওর সাথে। ও ব্যাগ করে কি আনছে সেটাও কেউ দেখল না আগ্রহ করে। অথচ আসার খবর পেতেই সবাই কত কিছুর আবদার করেছিল।
দিদান বিকেলে সবার সাথে মার্কেট এ গেল। আয়রা কে পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে আর সায়মনের জন্মদিন তাই মোটামুটি কেনাকাটা করা হলো। সন্ধ্যায় ছোটো সায়মনের জন্মদিন উপলক্ষে বাড়ি সাজানো হলো সব কিছু রেডি করা হলো। সব কিছু এক হাতে পূর্ণতা করল। সবার সাথে পূর্ণতার এতো সুন্দর বন্ডিং দেখে দিদান ও চমকালো। মেয়েটা ভালোই বিড়বিড় করে বলল। ও প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে শুধু ঘুরে সব কিছু দেখছে।
সায়মন কেক কেটে সবার আগে পূর্ণতা কে খাইয়ে দিল। পূর্ণতা হেঁসে ওকে ও খাইয়ে দিল তারপর ওর জন্য আনা গিফট দিল ওর হাতে।
গিফটের কথা ভুলেই গিয়েছিল দিদান তাড়াতাড়ি রুমে গিয়ে ল্যাকেজ নিয়ে আসলো। তারপর সব বের করল সবার জন্য যা যা এনেছে। শশী চলে গেছে তাই সবই একটু সন্তুষ্ট তাই সবাই কার জন্য কি এনেছে নিতে আসলো। পূর্ণতা ও দাঁড়িয়ে আছে। সবাইকে সব দিয়ে দিল কিন্তু পূর্ণতার জন্য কিছুই আনেনি এটাতো স্বাভাবিক। ও এই বাসায় আছে এটাই তো দিদান জানতো না জানলেও আনতো না। পূর্ণতা হাসিমুখেই দাঁড়িয়ে আছে। আশালতা নিজের শাড়ি ফেরত দিয়ে বললেন,,” লাগবে না আমার তোর জিনিস। তোর জিনিস তোর ব‌উ কে দিস।”
বলেই তিনি চলে গেলে গম্ভীর মুখে নিজের রুমে।
আয়রা বলল,,” মামু তুমি মামির জন্য কিচ্ছু আনো নি এটা কি তুমি ঠিক করেছ? একটা জিনিস আনলে কি এমন হতো? তোমার জিনিস আমার ও নিতে ইচ্ছে করছে না।”
বলে আয়রা ফেরত দিয়ে দিল ওকে দেওয়া আই ফোন। পেছনে থেকে আয়রার মা মেয়েকে টেনে বলল,,” মামা এতো ভালোবেসে দিয়েছে নে।”
আয়রার মা একটু লোভী টাইপের। ভাইয়ের না জানিয়ে ব‌উ নিয়ে আসায় রাগ করেছিল কিন্তু দামি দামি জিনিস পেয়ে তিনি গলে গেছে। শুধু আশালতার মনকেই গলাতে পারল না। দিদানের হাত থেকে ফোন নিয়ে তিনি মেয়ের হাতে দিলেন।
সবাই এখন আহ্লাদ করছে দিদান কে। পূর্ণতা ধীর পায়ে জায়গা ত্যাগ করল। আশালতা রুমে এসে কাঁদছে ছেলের কাজে। এতো কষ্ট করে ছেলে মানুষ করেছে কিন্তু ছেলেটা অমানুষ তৈরি হয়েছে। পূর্ণতা এসে তাকে কাঁদতে মানা করল।

তিনি থামলেন না পূর্ণতা নিজের প্রয়োজনীয় সব গোছগাছ করতে লেগে পড়ল। আয়রা তখনি রুমে এসে বলল,,” মামি তুমি যেও না প্লিজ. আমাকে আগামীকাল দেখতে আসবে তুমি এখন যেও না।”
পূর্ণতা বলল,,” আজ জন্মদিন তাই আটকে দিলে। আগামী পাত্র আসবে তাই থাকতে বলছো। দুইদিন পর বিয়ে ঠিক হতে পারে তার জন্য আবার থাকতে বলবে আমার মন আর টিকছে না। বিলিভ মি।”
” তোমার কষ্টটা বুঝতে পারছি মামি কিন্তু তাও থাকো না।”
আয়রা আর আশালতা জোর করায় আবার পূর্ণতা কে রাজি হতে হলো। পরদিন আয়রা কে দেখতে আসলো। ছেলে ছেলের মা, বাবা এসেছে। ছেলে হাই স্কুল টিচার। নাম স্মরণ।
সবাইকে বসার ঘরে বসতে দেওয়া হয়েছে। ভেতরে বসে পূর্ণতা সব সাজাচ্ছে। আয়রা সুন্দর করে শাড়ি পরে রেডি হয়েছে। পূর্ণতা ফলের ট্রে এনে রাখল তাদের সামনে তার একটু পর আয়রাকে নিয়ে আসলো। পাত্র পক্ষের সাথে আশালতা, দিদান ও আয়রার বাবা বসে আছে। আয়রাকেও ওদের সামনে এনে বসানো হলো‌। আয়রা সালাম দিয়ে লজ্জা লাল টুকটুকে হচ্ছে। দুই একটা কথা বলেই তারা আয়রা কে যেতে বলল। আয়রা কে নিয়ে চলে গেল পূর্ণতা।
তারপর খবর আসলো ছেলে নাকি আয়রার সাথে একাকী কথা বলতে চায়।
পূর্ণতা এসে স্মরণ কে নিয়ে গেল। স্মরণ মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়ল।
পূর্ণতা বলল,,” আসুন। থামালেন কেন?”
স্মরণ বলল,,” আপনি কি বিবাহিত?”
পূর্ণতা কপাল কুঁচকে বলল,,’ কেন?”
” না এমনি জানতে মন চাইল। কিছু মনে করবেন না।”
পূর্ণতা ভাবল ওর দুইদিন পর ডিভোর্স হয়ে যাবে। তাহলে আর বিবাহিত বলার প্রয়োজন কি?
পূর্ণতা বলল,,” আমি বিবাহিত না।”
বিবাহিত না কথাটা শুনেই কেমন জানি উৎফুল্ল হয়ে উঠল স্মরণ। পূর্ণতা অবাক হয়ে দেখল।
স্মরণ কে আয়রার রুমের সামনে এনে বলল,,,” যান এটা আয়রার রুম।”
স্মরণ বলল,,” ধন্যবাদ।”
বলেই স্মরণ আয়রার রুমের না ঢুকে বসার ঘরে চলে আসলো। পিছনে থেকে চেঁচিয়ে ডাকল পূর্ণতা কিন্তু থামল না স্মরণ। পূর্ণতা হতবুদ্ধি চোখে তাকিয়ে আছে। এটা কি হলো পাত্রীর সাথে দেখা না করেই পাত্র চলে গেল? পাগল নাকি!
#চলবে…..

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here