পূর্ণতা ” #নন্দিনী_নীলা ২.

0
114

#পূর্ণতা ”
#নন্দিনী_নীলা
২.
(কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ) ❌

পূর্ণতা শাশুড়ির সাথে শুয়েছে। এই বাসায় ওর দম আটকে আসছে। স্বামীকে খুব ভালোবাসে এমনটাও নয়। ভালোবাসার তেমন সুযোগ ও পায়নি। বিয়ের পর তাকে চেনার আগেই উধাও।‌তারপর একাই কাটল পাঁচটা বছর‌। পাঁচবছর পর আবার স্বামী নামক মানুষটার সাথে দেখা হলো কিন্তু সেই আগের মতোই। আগের দূরত্বে তৃতীয় জন ছিল না কিন্তু এবার কার দূরত্বে তৃতীয় জন আছে। আচ্ছা ওর তৃতীয় জন কাকে বলা উচিত? যাকে ওর স্বামী বিয়ে করে নিয়ে এসেছে তাকে নাকি নিজেকে?
ভেতরে থেকে তাচ্ছিল্য হাসি বেরিয়ে আসতে চাইল। ও নিজেই তাদের জীবনের তৃতীয় জন। এটা কেন ও ভুলে যায়? পূর্ণতা আস্তে করে উঠে বসল। নিঃশ্বাস আটকে রেখেছে। মনে হচ্ছে নিঃশ্বাসের শব্দ ও অতিরিক্ত শোনা যাচ্ছে আর এই শব্দে যদি শাশুড়ি মার ঘুম ভেঙ্গে যায়! সেই ভয়েই ও শ্বাস আটকে উঠে দাঁড়াল তারপর পা টিপে দরজা খুলে বেরিয়ে এলো রুম থেকে। ও ঘুমাতে পারছে না একেতে মনটা অশান্ত হয়ে আছে। তার মধ্যে আশালতা ঘুমের মধ্যে জোরে জোরে নাক ডাকে তার পাশে কেউ ঘুমাতে পারে না। কিন্তু শাশুড়ি এতো আদর করে ওকে নিয়ে শুয়েছে ও মানা করতে পারেনি।
পূর্ণতা কি করবে ভাবতে ভাবতে কিচেনের দিকে হাঁটা ধরল। ড্রয়িং রুম পেরিয়ে কিচেনে যেতে হয়। রাতের খাবারটা ও পূর্ণতা খেতে পারেনি ঠিকমতো। এখন কিছু খাবে ভাবল। না খেয়ে কেন থাকবে ও? খুব বাজে কিছু কি ঘটেছে ক‌ই না তো‌। ও কেন শোক পালন করবে? হাঁটতে হাঁটতে পূর্ণতা ড্রয়িংরুমে চলে আসলো। এসেই ওর চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। ও থমকে দাড়িয়ে পড়ল চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে সামনে। দিদান সোফায় শুয়ে আছে। রাতে হালকা শীত শীত পড়ে দিদান ঘুমের মধ্যে জড়োসড়ো হয়ে আছে। পূর্ণতা কিংকতৃব্যবিমূঢ় হয়ে এগিয়ে এলো খুব সাবধানে তারপর দিদানের দিকে ভালো করে তাকাল। কি ব্যাপার উনি ব‌উ ফেলে একা এখানে ঘুমাচ্ছে কেন? দুজনে কি ঝগড়া করে আলাদা ঘুমিয়েছে নাকি? কপাল কুঁচকে পূর্ণতা দিদানের দিকে তাকিয়ে আছে। ঘুমের মধ্যে মশার কামড় খেয়ে দিদান নড়ে উঠতেই চমকে পূর্ণতা সোফার পেছনে নিজেকে আড়ালে করে লুকিয়ে পড়ল বসে। দিদান নড়েচড়ে আবার ঘুমিয়ে গেছে। এইটুকু সোফায় লম্বা চ‌ওড়া মানুষটাকে ঘুমাতে ভালোই যুদ্ধ করতে হচ্ছে। দিদানের এই অবস্থা দেখে কেন জানি পূর্ণতার খুব বেশিই মজা লাগল। ও মুখ চেপে ধরে ড্রয়িংরুম পেরিয়ে কিচেনে চলে এলো। কিচেনে এসে আর পূর্ণতা হাসি ধরিয়ে রাখতে পারল না। ও খিলখিলিয়ে হাসছে ওর হাসির শব্দে এদিকে ঘুমিয়ে থাকা দিদানের ঘুম ভেঙে গেল। দিদান কপাল কুঁচকে হাসির শব্দ কোথা থেকে আসছে খুঁজছে। ঘুমঘুম চোখে উঠে বসল দিদান। তারপর হাসির আওয়াজ অনুসরণ করে কিচেনের কাছে আসতেই ও নিশ্চিত হয়ে গেল কেউ ওখানে থেকে হাসছে। ও কিছুটা ভয় পেল কারণ ও সোফায় শুয়েছে এটা কি কেউ দেখে ফেলেছে। লজ্জা ও ভয় মিশ্রিত করে দিদান কিচেনে প্রবেশ করতেই দেখল পূর্ণতা মুখ চেপে ধরে হাসছে।
আচমকাই দিদান কে কিচেনে দেখে থমকে পূর্ণতা হাসি থামিয়ে দেয়। কিন্তু এখনো রেশ যায় নি। ও সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল।
দিদান পূর্ণতা কে দেখে কপাল কুঁচকে বলল,,” হাসছো কেন?”
পূর্ণতা হেঁসে বলল,,” আপনাকে বলব কেন? আমার হাসি পেয়েছে আমি হেসেছি আপনার প্রবলেম কি?”
দিদান পূর্ণতার কথা শুনে রাগান্বিত স্বরে বলল,,” তুমি আমাকে সোফায় শোয়া দেখেছ তাই না? এজন্য হাসছো?”
” আপনার ধারণা ওতোটাও ভুল নয়।” বলেই আবার হেসে উঠল পূর্ণতা।
দিদান লজ্জায় মাটির সাথে মিশে গেল। কি বলে পরিস্থিতি ম্যানেজ করবে ভাবতে লাগল। পূর্ণতা দিদান কে পাশ কাটিয়ে ফ্রিজে থেকে খাবার বের করে এনে গরম করতে লাগল আর দিদান থম মেরে সেখানে দাঁড়িয়ে আছে।
পূর্ণতা বলল,,” দাঁড়িয়ে আছেন কেন? যান ঘুমান।”
দিদান বলল,,” আমাদের মধ্যে কিন্তু তোমার জন্যে ঝগড়া হয়েছে। আমাকে তোমার জন্যে বাইরে ঘুমাতে হয়েছে।”
পূর্ণতা কপাল কুঁচকে আশ্চর্য গলায় বলল,,”আমার জন্য কেন ঝগড়া হবে? আমি কি করলাম?”
দিদান বলল,,” তোমার সবকিছু আমার রুমে ছিল তাই শশী সন্দেহ করেছে।”
” তো এখানে আমার কি দোষ? বিয়ের পর থেকে তো আমি ওখানেই থাকি।”
থেমে ফের বলল,,” আপনি কি জানিয়ে এসেছে যে নতুন বউ নিয়ে আসবেন পুরাতন ব‌উকে রুম ত্যাগ করতে হবে?”
দিদান বলল,,” আমি তো জানতাম তুমি চলে গেছো। এতো কিছুর পর ও যে মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকবে কে জানতো?”
” দেখুন আমি চলে যেতেই চেয়েছিলাম। কিন্তু আপনার আম্মা আমাকে যেতে দেয় নি। তার নাকি আপনার উপর অনেক বিশ্বাস আপনি নাকি ফিরে এসে আমাকে মেনে নিবেন। তার জন্যে আমাকে পড়ে থাকতে হয়েছে। আর আপনি তো তখন ছিলেন না থাকলে হয়তো সব কিছু মিমাংসা করে আগেই চলে যেতে পারতাম। থাক চিন্তা করবেন না আমি আপনার ঘাড়ে চেপে বসব না। আমাদের বিয়ের কথাটা ও আপনার ব‌উ জানতে পারবে না। আমি খুব শীঘ্রই চলে যাব। আর ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিবেন।”
এক দমে কথাটা বলে পূর্ণতা থামল‌। কথাগুলো বলে কেন জানি ওর অদ্ভুত রকমের শান্তি লাগতে শুরু করল। বিয়ের পাঁচবছর পাঁচটা কথাও স্বামীর সাথে বলতে পারে নি কিন্তু আজকে পেরেছে।
কথাগুলো হয়ত প্রেমের নয় কিন্তু প্রশান্তির।

দিদান হা করে পূর্ণতার কথা গিলল। ও ভাবেনি এতো তাড়াতাড়ি পূর্ণতা ওকে ছাড়বে। ও ভাবছিল কীভাবে ওকে দিয়ে ডিভোর্স দেওয়াবে কিন্তু এতো সুন্দর ভাবে পূর্ণতা রাজি হয়ে যাবে। আর ওর পথ সহজ করে দেবে ও কল্পনা করেনি। কল্পনার বাইরে কিছু ঘটলে মানুষ থমকায়, চমকায়। দিদান ও থমকালো। পূর্ণতা খাবার প্লেটে নিয়ে খাচ্ছে।
পেছনে থেকে ককর্শ কন্ঠে কেউ একজন বলে উঠল,,” তোমরা এখানে কি করছো?”
শশীর কন্ঠ স্বর শুনতেই দিদান চমকে উঠল। লাফিয়ে পিছনে তাকাতেই দেখল শশী রাগী চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
পূর্ণতা খাবার উঁচু করে দেখিয়ে বলল,,” ভাবি খাচ্ছিলাম। তখন খেতে পারিনি। কিন্তু ঘুমের মধ্যে অনুভব করলাম না খেলে আমি ঘুমাতে পারব না। তাই খেতে এসেছি। আমি আসলে এমনি খিদে সহ্য করতে পারি না। ছোটো থেকেই রাগ করলেও খাবার খেয়ে নিতাম। কখনো খাবার থেকে নিজেকে সরিয়ে রাগ অভিমান করতে পারি না। আর রাতে খাবার খাওয়া আগে থেকেই অভ্যাস। মাঝরাতে উঠে ভূতের মতো খাবার খাই।”
দাঁত কেলিয়ে বলল পূর্ণতা। শশী পূর্ণতার রচনা কথা না গিলে দিদান কে উদ্দেশ্য করে বলল,,” এই মেয়েটার সাথে তুমি কি করছিলে দিদান?”
দিদান শশীর হাত ধরে বলল,,” বাইরে চলো বলছি। তুমি কি খালি ভুল জায়গা এসে ভুল বুঝবে নাকি।”
” হাত ছাড়ো। এতো রাতে তুমি এই মেয়ের সাথে কি করছিলে স্পষ্ট ভাবে বলো।”
দিদান পূর্ণতার সামনে শশীর এমন ধমক খেয়ে লজ্জায় লাল হয়ে উঠল। পূর্ণতা খাচ্ছে আর হা করে ড্রামা দেখছে যেন এমন করে দুজনের দিকে
তাকিয়ে আছে।
” আমি তো সোফায় ঘুমিয়ে ছিলাম হঠাৎ কিচেনে থেকে আওয়াজ পাই আর নিজের ও পানির পিপাসা পায় তাই এসেছিলাম। এসে দেখি ও খাচ্ছে। ও আমার বোন শশী তুমি ভুল বুঝো কেন?”
শশী রাগী গলায় বলল,,” মায়ের পেটের বোন তো না। বোন ব‌উ হতে কতক্ষণ? মাঝরাতে তুমি এই মেয়ের সাথে দাঁড়িয়ে কি এমন কথা বলছিলে বুঝি না আমি! আমাকে বোকা পেয়েছ?”
দিদান শশীর হাত ধরে টেনে ওকে বাইরে নিয়ে এলো। দুজনের ঝগড়া দেখতে দেখতে খাচ্ছিল পূর্ণতা দু’জনে চলে যেতেই আফসোস করে বলল,, ইশ কি সুন্দর নাটক দেখতে দেখতে খাচ্ছিলাম। আমার খাওয়া শেষ হ‌ওয়ার আগেই কেন চলে গেল?”

শশীকে দিদান রুমে এনে বলল,,” তোমার জন্য ওর সামনে আমাকে লজ্জায় পড়তে হয়েছে। আমি সোফায় ঘুমিয়েছি ওটা ও দেখে ফেলেছে।”
” কথা ঘুরাবে না তুমি। ওই মেয়ের সাথে কি কথা বলেছিলে? আচ্ছা তোমাদের মধ্যে কোন সম্পর্ক ছিল না তো‌। আসতেই ওকে ব‌উ বলে পরিচয় দিল আচ্ছা দুজনের বিয়ে ঠিক ছিল না তো? চাচাতো, মামাতো ভাই বোনদের মধ্যে এসব হয়ে থাকে আমি জানি।”
” পাগল তুমি আমি ওকে পছন্দ করলে তোমাকে কেন বিয়ে করতে চাই। আমি তোমাকে ভালোবাসি বুঝো না কেন? রুমে থাকা নিয়ে ঝামেলা না করলে কি এসব হতো?”
শশী রাগে দুঃখে বলল,,” রুমেই থাকো‌। আমার কাছাকাছি আসার চেষ্টা করলে ফলাফল ভালো হবে না মনে রেখো।”
বলেই শশী রাগে বিছানায় শুয়ে পড়ল। আর দিদান চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। বেলকনিতে গিয়ে বসে র‌ইল।

পূর্ণতা খাওয়া দাওয়া শেষ করে এসে দেখল দিদান নেই‌ কিন্তু তার বালিশ এখানেই পড়ে আছে। ও বালিশ হাতে নিয়ে হাঁটা ধরল। দিদানের রুমে নক করতে লাগল। শশী উঠে দরজা খুলল বিরক্ত হয়ে এই বাসায় এতো ঝামেলা কেন অসহ্য হয়ে গেল একদিনেই। এদিকে দিদান ও বেলকনিতে থেকে এগিয়ে এসেছে এখন আবার দরজা নক করে কে দেখতে।
পূর্ণতা বালিশ এগিয়ে দিয়ে বলল,,” এটা ড্রয়িংরুমেই ফেলে এসেছেন। সকালে উঠে এটা দেখলে তো সবাই কি না কি ভাববে তাই আমি দিতে এলাম।”
শশী এক টানে বালিশ নিয়ে বলল,,” থ্যাংকিউ।”
বলেই মুখের উপর দরজা আটকে দিল। পূর্ণতা শক্ত হয়ে বন্ধ দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে র‌ইল।
#চলবে….

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here