পূর্ণতা #সূচনা_পর্ব #নন্দিনী_নীলা

0
171

বিয়ের তিনদিনের মাথায় পূর্ণতার স্বামী বিদেশে পারি জমায়। আজ ঠিক দীর্ঘ পাঁচ বছর পর পূর্ণতার স্বামী বিদেশে থেকে বাড়ি আসছে। ঘরের ছেলে এতো বছর পর ঘরে আসছে। এজন্য বাড়িতে আনন্দের জোয়ার নেমে এসেছে। সবাই আনন্দে ছোটাছুটি করলেও এখানে পূর্ণতার মাঝে কোন আনন্দ বিরাজ করছে না।
পূর্ণতা খুব ভালো করেই জানে ওর স্বামী ওকে পছন্দ করে না। এমনকি ওকে ব‌উয়ের অধিকার অবধি দেয়নি। বিদেশে গেছে পাঁচ বছর হয়েছে তাদের বিয়ের ও পাঁচ বছর হলো। এতোটা সময় গিয়েছে কিন্তু ওর স্বামীর ওর সাথে যোগাযোগ খুব সীমিত হয়েছে।
প্রথম প্রথম স্বামীর জন্য কাঁদতো‌। কেন তাকে এইভাবে ফেলে গেল বিয়েতে রাজি না থাকলে বিয়েটা করে তার জীবন নষ্ট করার কি দরকার ছিল? শুধু শুধু বিয়ের তকমা লাগিয়ে ওকে সবার কাছে অপয়া করে দিয়েছিল। স্বামী ধরে রাখতে পারেনি। এসব বলে মানুষের কম কটু কথা তো ওকে হজম করতে হয়নি। পূর্ণতা রান্না ঘরে ঢুকে দেখল ওর শাশুড়ি খুব যত্ন সহকারে খাবার রান্না করছে।
ওকে দেখে এক গাল হেসে বললেন,” যাও সুন্দর করে রেডি হয়ে থাকো। সুন্দর করে সাজগোজ করিও। কত দিন পর ছেলেটা আসছে। আজ আর রান্না ঘরে এসে নিজের সুন্দর মুখটা কালসেটে করে ফেলো না।”
পূর্ণতা কিছু বলতে চাইল। কিন্তু তিনি হাত দিয়ে থামিয়ে তৈরি হতে বলল।
পূর্ণতা তাকে মায়ের মতো সম্মান করে তার জন্যেই স্বামীর অবহেলা পেয়েও শশুর বাড়ি ছেড়ে যেতে পারেনি।পূর্ণতা তার কথা অমান্য করতে পারবে না। ও শুধু ভাবে এতো ভালো একজন মায়ের এমন ছেলে কিভাবে হলো! পূর্ণতা রুমে এসে বসে র‌ইলো কিসের সাজগোজ কিসের কি কিচ্ছু করবে না। করলেও কি তিনি দেখবে? কখনোই না। পাঁচবছর আগেই যে তার বাসর ঘরে থাকা ব‌উয়ের দিকে ফিরে তাকায় নি। আজ এতো বছর পর এসে সে ওর দিকে তাকাবে অসম্ভব।

পূর্ণতা সাজতে না চাইলে কি হবে ওর ননাসের বড়ো মেয়ে আয়রা জোর করে ওকে শাড়ি পড়িয়ে সাজিয়ে দিলো। ও দাঁতে দাঁত চেপে ছিল কিন্তু কিছু বলার সাহস পায়নি।
দুপুর তিনটায় পরপর গাড়ি এসে হর্ন বাজিয়ে জানান দিলো তিনি এসেছেন। মানুষটা চলে এসেছে পূর্ণতার বুক টিপটিপ করছে। দুই বছর আগে তার সাথে ওর কথা হয়েছিল শেষ বার। শাশুড়ি মা জোর করে কথা বলতে দিয়েছিল। সে ঝগড়া করে বলেছিল আমার কাছে আর কোনদিন ফোন দিলে সে নাকি আর কোনদিন তার বাবা মায়ের সাথেও যোগাযোগ করবে না। সেদিনের পর আর কেউ আমার কাছে ফোন দিতো না। আমিও নিজের মতো চলতে ছিলাম তার আশা আমি ছেড়ে দিয়েছি সেইদিন ই‌।
মামি মামি বলে আমার সেই ভাগ্নি ডাকতে এলো। আমাকে জোর করে টেনে নিয়ে এলো ড্রাইনিং রুমে‌।
সোফায় বসে আছে আমার সেই পাঁচবছর আগে বিবাহ করা স্বামী। পাঁচবছরে তার শরীরের গঠন অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আগের থেকে স্বাস্থ্য হয়েছে। গায়ের রং যেন ফর্সা হয়েছে আরেকটু। তাকে দেখতে দেখতে পূর্ণতা পাশে তাকালো একটা মেয়ে বসে আছে। কে এই মেয়েটি উনার সাথে এসেছে?

পূর্ণতার‌ শাশুড়ি পূর্ণতা কে টেনে ছেলের সামনে নিয়ে বলল,” দিদান ওকে চিনতে পারছিস?”
দিদান পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে কিছু মনে করার চেষ্টা করে বলল,” এটা কে মা? ও কি বড় আপুর মেয়ে আয়রা?”
দিদানের কথা শুনে সবাই খিলখিলিয়ে হেঁসে উঠলো। পূর্ণতা মনে মনে হাসছে। পূর্ণতার মনের হাসির সাথে বাস্তবেও হাসির রেশ পাওয়া গেল। আয়রা হাসি মুখে এগিয়ে এসে বলল,” মামু এই যে আমি তুমি মামি কে ভাগ্নি ভাবছো!”
বলেই হেসে দিল। দিদান কপাল কুঁচকে বলল,” এটা আবার কোন মামি তোর?”
” মামু কি যে বলো না এটা আমার দিদান মামার ব‌‌উ পূর্ণতা মামি। তোমার ব‌উ‌।”
দিদান অবাক চোখে পূর্ণতার দিকে তাকালো।

দিদানের পাশে বসা মেয়েটি অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। দিদান ঢোক গিলে বলল,” কি সব বলছে মা। মজা করছো কেন তোমরা? ও তো আমার চাচাতো বোন। ব‌উ বলে মজা করার অভ্যাস আর তোমাদের গেল না। যাইহোক পরিচয় করিয়ে দেই এই হচ্ছে তোমার ছেলের ব‌উ শশী।”
সবাই চোখ কপালে তুলে তাকিয়ে আছে পাশে বসে থাকা মেয়েটির দিকে। মেয়েটি বসা থেকে উঠে দিদানের মাকে সালাম করতে চাইল। পূর্ণতা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিল। ব‌উ কথাটা শুনতেই চমকে তাকাল। এই মানুষটা ওর নয় ও জানে তাকে নিয়ে ওর কোন আশা প্রত্যাশাও ছিল না তবুও কেন আরেকজন কে ব‌উ বলে পরিচয় করিয়ে দেওয়াতে ওর বুকটা কেঁপে উঠলো। ওর চোখে কেন জল চিকচিক করে উঠলো। পূর্ণতা শশীকে এগিয়ে আসতে দেখে পিছিয়ে যায়। শশী পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে দিদানের মা আশালতা কে। আশালতা ছেলের দিকে বিষ্ময়কর চাহনি দিয়ে তাকিয়ে আছে। উনি পূর্ণতার দিকে তাকাবে কি করে? মেয়েটা তো সব আশা ছেড়েই দিয়েছিল তবু জোর করেছে তারা। তাদের নিজের ছেলের উপর বিশ্বাস ছিল। ভেবেছিল এতদিন পর এসে হয়তো স্ত্রী কে মেনে নিবে কিন্তু ছেলে এটা কি করে নিয়ে এলো। এক স্ত্রী থাকতে আরেকটা বিয়ে করে নিয়ে আসছে।
কেউ আর এগিয়ে এসে কথা বলল না দিদানের সাথে। সবাই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তারপর সবাই যে যার কাজে চলে যায়। থমকে দাঁড়িয়ে থাকে আশালতা বেগম। ছেলের থেকে এমনটা কোনদিন আশা করে নি। এই ভাবে ছেলে তার নাক কাটবে ভাবতে পারে নি। দিদান আর শশী। দিদানের রুমে চলে যায়।
আশালতা পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে বলে,” আমায় ক্ষমা করে দিস মা। দিদান এমন করবে আমি কল্পনাতে ও ভাবিনি। নিজের ছেলেকে আমি চিনতে পারিনি।”
” আমি তোমায় মায়ের জায়গা দিয়েছি। মা হয়ে মেয়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে সেই জায়গাটা কেড়ে নিও না। উনার প্রতি আমার চাওয়া অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। তোমাদের মিথ্যে আশা নিয়ে থাকাটা এবার অন্তত বন্ধ হোক। উনি এই কাজটা করে ভালোই করেছেন।”
” তোর কি হবে? আমরা যে তোর কাছে অপরাধী হয়ে গেলাম রে।”
” আমার আবার কি হবে? তোমার ছেলে আমায় মেনে নেয়নি বলে কি আমার আর কোন গতি হবে না। আমি একজন স্বনির্ভর মেয়ে নিজের দায়িত্ব আমি নিজেই নিতে পারি।”
” তুই আমাদের কাজ থেকে চলে যাবি কিভাবে থাকবো আমরা তোকে ছাড়া? তুই ছাড়া এই বাড়িটা যে খুব ফাঁকা রে। তুই তো আমার মেয়ে বল না তাই না। মাকে ছেড়ে চলে যাস না। মেয়ে হয়েই থাক না আমাদের সাথে।”
” এটা সম্ভব না মা। তুমি নিজেও জানো স্বামীর বাড়ি মেয়ে হয়ে থাকা যায় না। এখানে থাকলে আমাকে অনেক বিব্রত কর অবস্থায় পরতে হবে। আমি এখানে থাকতে পারব না। ক্ষমা করো আমায়। আমাকে চলে যেতেই হবে।”
” আমার ছেলেটা খুব বোকা রে। খাঁটি সোনা রেখে সে কি ধরে আনলো আমি জানি না। তোকে ও আমি আটকাবো না। সেই অধিকার ও আমার নাই‌। আমাদের জন্য এমনিতেই অনেক সহ্য করেছিস আর না। এবার তুই সুখে থাক। চলেই তো যাবি আর দুইটা দিন পর যা। সায়মন এর জন্মদিনের দিনটা আমাদের সাথে কাটিয়ে যা।”
পূর্ণতা রাজি হয়।
শশী দিদানের রুমে এসে জহুরী নজরে রুমটা দেখছে। দিদান ঘামছে অনবরত। শশী কোন ভাবে আগের বিয়ের কথা জানতে পারলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।
শশী আলমারির খুলে মেয়েদের পোশাক দেখে। ড্রেসিং টেবিলের সামনেও মেয়েদের কসমেটিক।
” এসব কি দিদান! এতো মেয়েলি জিনিস কেন তোমার রুমে? এটা তোমার রুম‌ই তো?”
দিদান উত্তর দিতে পারছে না।
ভয়ে ভীত হয়ে আছে। পূর্ণতা প্রবেশ করে তখন রুমে।
” আসলে ভাবি আপনার স্বামীর রুমে আমি কয়দিন ধরে ছিলাম। এজন্য আমার জিনিস পত্র এখানে রয়ে গেছে।”
শশী অবাক সুরে বলল,” তুমি এখানে থাকতে।”
” হ্যা মানে উনি তো বিদেশ থাকতো রুমটা খালিই ছিল তাই আরকি থাকতাম। আপনারা চলে আসছেন এবার আপনারাই থাকবেন একটু বসেন আমি সব নিয়ে যাচ্ছি।”
বলেই পূর্ণতা আলমারির থেকে সব ড্রেস বের করে আনে। নিজের সমস্ত জিনিস নিয়ে বেরিয়ে আসে। দিদান হা করে তাকিয়ে ছিল পূর্ণতার দিকে। এই মেয়েটা ওর ব‌উ ছিল সে এতো সব জানার পর ও এতোটা স্বাভাবিক আছে ভাবতেই পারছে না।
শশী সন্দেহ চোখে তাকিয়ে বলল,” দিদান মেয়েটার কথা আমার পছন্দ হলো না। ও তোমায় আমার স্বামী বলে সম্বোধন করলো কেন? চাচাতো বোনরা কি এইভাবে সম্বোধন করে? তুমি আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছো তো?”

#পূর্ণতা
#সূচনা_পর্ব
#নন্দিনী_নীলা

( একটা ভিন্ন রকমের কাহিনী। আমার মনে হয় আপনাদের ভালো লাগবে।)

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here