পূর্ণতা ” #নন্দিনী_নীলা ৭.

0
89

“ #পূর্ণতা ”
#নন্দিনী_নীলা
৭.

খাবার টেবিলে এসে পূর্ণতার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। খাওয়ার মুডটাই নষ্ট হয়ে গেল। ওর মা প্রভাতকে জামাই আদর করে খাওয়াচ্ছে। এমন আপ্যায়ন করছে যেন কত আপনের আপন। ক‌‌ই মেয়েকে তো কখনো এতো আদর যত্ন করে খাওয়ায় না।

ও ছাড়া পৃথিবীর সবাইকে নিয়ে আদিখ্যেতা করতে পারে ওর মা, খালি ওর বেলায় করে না। ও এসে শব্দ করে চেয়ার টেনে ঠাস করে বসল। নিজের রাগটা প্রকাশ করল চেয়ারের উপর। প্রভাত খাওয়া থামিয়ে ওর দিকে তাকাল এক পলক। রোজিনা বেগম রাগী চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বললেন,,”ভদ্রতা শেখোনি এভাবে শব্দ করে কেউ? মেয়েটাকে আর ভদ্র বানাতে পারলাম না!”

পূর্ণতা নাক কুঁচকে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,”আম্মু তুমি কি এই বাইরের লোকটার সামনে আমাকে অপমান করা বাদ দেবে না? এখন মনে হচ্ছে এই বাড়ির মেয়ে আমি নই। উনি এই বাড়ির ছেলে আর আমি উড়ে এসে জুড়ে বসেছি।”

রোজিনা বেগম প্রভাতের দিকে তাকিয়ে বললেন,,”দেখেছো দেখেছো কেমন বেয়াদবের মতো মায়ের সাথে চিল্লিয়ে কথা বলছে। আমার পক্ষে আর এই মেয়েকে ভদ্র বানানোর সম্ভব নয়।”
“থাক আন্টি বাদ দেন। ছোট মানুষ তো বুঝেনা আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।”

পূর্ণতা খাবারের প্লেট রেখে চেয়ার থেকে লাফ দিয়ে উঠে বলল,,”ধুর খাবোই না। যাকে পায় তার কাছে আমার বদনাম শুরু করে দেয়।”
তারপর প্রভাতের দিকে কটমট দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রুমে চলে আসলো। মায়ের বাড়াবাড়ি জাস্ট নেওয়া যাচ্ছে না। বারবার একটা বাইরে ছেলেকে বেশি প্রায়োরিটি দিচ্ছে মা। মনে হচ্ছে ও তার সৎ মেয়ে।

রাগ নিয়েই বা কতক্ষণ থাকবে? ওর মা এমনই মানুষ যে ও রাগ করলে একটু খাওয়ার জন্য ডাকে।
অন্যদের মা রাগ করলে কত আদর করে আহ্লাদ করে। কিন্তু ওর বেলায় তেমন কিছুই ঘটে না। রাগ করলে ওর‌ই কষ্ট না খেয়ে থাকতে হবে‌। ও পৃথিবীর সব কষ্ট সহ্য করতে পারবে কিন্তু এই খিদে জিনিসটা সহ্য করতে পারবে না ওর রাগ উঠলে খিদা আরো বেশি লাগে। ১০ মিনিট রাগ জেদ নিয়ে রুমে বসে থাকল। তারপর নিজের রাগ জেদ একপাশে ফেলে খাওয়ার জন্য বেরিয়ে আসলো। ততক্ষণে প্রভাতের খাওয়া শেষ সে ব্যক্তিটা নাই। প্রভাত নাই দেখে প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেলে খাবার টেবিলে বসে নিজেই মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,”একটা বাইরের ছেলের জন্য তোমার মেয়ে রাগ করে চলে গেল আর তুমি তাকে একটু আটকালে না আর একবার খাওয়ার জন্য ডাকতেও গেলে না।

আম্মু সত্যি করে বলতো আমি কি তোমার নিজেরই মেয়ে?”

রোজিনা বেগম মেয়ের সামনে খাবারে প্লেট দিয়ে বললেন,,”তোর ন্যাকামি আর কত দেখব যে। আমি জানি তো দুই মিনিট বাদে নিজেই খেতে চলে আসবি। তুই কি রাগ করে কোনদিন না খেয়ে থেকেছিস! যে আজকে তোকে আমার আহ্লাদ করে খেতে আনতে হবে?”

পূর্ণতা খাবার খেতে খেতে অভিমানী কন্ঠে বলল,,”কোনদিন একটুও আহ্লাদ করেছো আমাকে? সব সময়ই চড়াও হয়ে আমার সাথে কথা বলো। তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসো না।”

“বাসায় কেউ আসলে তার সাথে মানুষ এমন বাজে ব্যবহার করে? কথায় কথায় অপমান করছিস। ছেলেটা ভদ্র বলে এখনো কোনো অভিযোগ করল না তোর নামে। আসার পর থেকেই দেখছি ছেলেটার পিছনে লেগেছিস। তোর মামার বন্ধুর ভাইগ্না হয়। এই ছেলে চলে গেলে মান-ইজ্জত থাকবে তোর মামার? আত্নীয় মানুষকে এভাবে অপমান করবি? কত ভালো স্টুডেন্ট জানিস। থাকলে তো আমাদেরই ভালো হবে। তোকে ও একটু পড়া দেখিয়ে দিতে পারবে। শুনেছি গণিতে নাকি অনেক ভালো। গণিত নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে। হলে সিট পাচ্ছে না বলে আমাদের এখানে বিপদে পড়ে থাকতে এসেছে। আত্মসম্মান অনেক ফ্রীতে থাকতে বলেছিল তোর মামা। কিন্তু বলেছে ভাড়া না দিয়ে থাকবে না। জোরজবরদস্তি করেই এখানে পাঠিয়েছে তোর মামার সম্মান রক্ষা করতে এসেছে না হলে ঢাকা শহরে কি থাকার জন্য বাসার অভাব যে এখানে এসে থাকবে?”

পূর্ণতা নিজের ভুল কিছুই বুঝতে পারল কিন্তু অহংকারে নিজের ভুল নিজে স্বীকার করতে চাইলো না।
পূর্ণতা বলল,,”উনি যতই ভালো স্টুডেন্ট হোক না কেন মনে রেখো ওনার কাছে আমি পড়বো না।”
” আচ্ছা না পড়লি। ছেলেটার পেছনে আর লেগে থাকিস না।”
পূর্ণতা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,” আমার বয়েই গেছে উনার পেছনে লেগে থাকতে। আমার কি আর কোন কাজ নেই। যতসব।”

পরদিন পূর্ণতা স্কুলে কদম ফুল ছাড়া আসে। এদিকে সবাই চকলেট এনেছে এখন ফুল না পাওয়ায় কেউ ওকে চকলেট দিচ্ছে না। ও নিজের টাকা দিয়ে চকলেট কিনে খেতে খেতে সবাইকে নিয়ে গোল মিটিং বসালো। তারপর প্রভাতের ঘটনা খুলে বলল। সবাই খুব দুঃখ প্রকাশ করল আর ও এই সুযোগে সবার থেকে চকলেট আদায় করে নিল। পূর্ণতা ওদের কাছে জিজ্ঞেস করল,” বলতো ওই প্রভাত কে আমি কীভাবে শিক্ষা দেব। আমার বাসায় থেকে আমাকে অপমান করে ওকে শিক্ষা দিতে না পারলে আমি শান্তিতে থাকতে পারছি না।”

সবাই ওকে একটা দুর্দান্ত বুদ্ধি দিয়ে দিল। পূর্ণতা খুশিতেই বলল,,” তোদের বুদ্ধি কাছে লাগলে সবাই দুইটা করে ফুল পাবি।”
পূর্ণতা ক্লাসে এসে বিপাকে পড়ল প্রভাত কে নিয়ে ভাবতে ভাবতে ও ভুলেই গিয়েছিল আজকে ম্যাথ ম্যাম ক্লাস পরীক্ষা রেখেছে। ওতো কোন প্রিপারেশনই নেয় নি। এমনিতেই ও ম্যাথে টেনেটুনে ৩৩/ ৪০ পেয়ে পাশ করে। প্রশ্ন নিয়ে পূর্ণতা নখ কাটছে দাঁত দিয়ে। কারোটা দেখার ও সুযোগ পাচ্ছে না। পুরো প্রশ্ন ঘেটে ওর একটা প্রশ্ন কমন পড়ল ও সেটাই লিখে চুপ করে বসে আছে।
ম্যাম একবার ওকে জিজ্ঞেস ও করলেন,,” অংক না করে কলম কামড়াচ্ছ কেন?”

পূর্ণতা বেক্কেল হাসি দিয়ে বলল,,” করছি তো ম্যাম।”
সবাই যখন খাতা জমা দিল পূর্ণতা খাতা জমা দিল না। কিন্তু ওর পেছনে এক ডাইনি মেয়ে বসেছিল যার সাথে ওর বন্ধুত্ব নেই। সব সময় ঝগড়া লাগে। সেই মেয়েটা বলে দিল পূর্ণতা খাতা জমা দেয়নি। এজন্য ম্যাম নিজে এসে পূর্ণতার খাতা টেনে নিয়ে গেল। পূর্ণতার খাতা দেখলে ম্যামের ৪৪০ ডিগ্রি রাগ উঠবে।

তাই পূর্ণতা খাতা লুকিয়ে রেখেছিল কিন্তু দিতেই হলো। ম্যাম চলে যেতেই ও ঝগড়াটে মুড নিয়ে পেছনে তাকালো।

সীমা শয়তানি হাসিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
পূর্ণতা বলল,,”তোকে আমি দেখে নেব শনির দশা।”
সীমা কে শনির দশা বলে ডাকে পূর্ণতা আর ওর ফ্রেন্ডরা।

সীমা বলল,,” আগামীকাল ম্যাম তোর ব্যান্ড বাজাবে। আমরাও দেখব।”
বলেই সীমা ও ওর ফ্রেন্ডরা গলা ফাটিয়ে হাসতে লাগল।
“নিজে মনে হয় কত পারে দেখব নি কত পাস। নিজেকে ব্রিলিয়ান্ট মনে করে।” মুখ ভেংচি দিয়ে বলল পূর্ণতা।
“ব্রিলিয়ান না হলেও তোর মত পচা স্টুডেন্ট না। এই ক্লাসে একমাত্র তুই সবচাইতে পচা স্টুডেন্ট প্রতি বছর টেনেটুনে পাস করিস। আল্লায় জানে এসএসসি কয়বারে পাস করবি। আমরা তো সবাই একবারেই পাশ করব তুই মনে হয় দুই তিন বারেও পাশ করতে পারবি না।”

রাগে পূর্ণতা সীমার গালে একটা থাপ্পর মারল। সীমা ও কম না মারতে আসবে পূর্ণতার বন্ধুরা ওকে টেনে সরিয়ে নিল। সীমাকে ও ওর ফ্রেন্ড রা টেনে নিয়েছে। বাংলা স্যার আসতেই সবাই শান্ত হয়ে যায়।
পরদিন পূর্ণতা ক্লাসে আসে না। ম্যামের ধমক ও ক্লাসের সবার সামনে লজ্জায় যেতে চায় না। বিশেষ করে সীমার সামনে। সব সময় ওকে টিচ করে কথা বলবে। পূর্ণতা সারাদিন রুমে শুয়ে পেট ব্যথার অভিনয় করল।

ওর মা ওকে হসপিটালে নিয়ে যেতে চাইল ডক্টর দেখাতে কিন্তু পূর্ণতা বলল শুয়ে থাকলে ঠিক হয়ে যাবে। এই নাটক করার কারণ হচ্ছে গতকাল স্কুলে যাওয়ার পরে ম্যাম যখন ধরবে,,ক্লাসে আসোনি কেন?

তখনো ও পেট ব্যথা ছিল বলবে। ম্যাম তো ওর কথা বিশ্বাস করবে না। নিশ্চিত হওয়ার জন্য মাকে কল করবে আর মায়ের চোখে আজকে অসুস্থ না হলে কাল তো ম্যামকে বিশ্বাস করানো যাবে না।

এজন্য মায়ের সামনে ভালো অ্যাক্টিং করে শুয়ে রইল সারাদিন। সন্ধ্যার আগ দিয়ে পূর্ণতা শোয়া থেকে উঠে বসল। সারাদিন শুয়ে থেকে শরীর ব্যথা হয়ে গেছে এখন একটু ছাদে গিয়ে হাঁটাহাঁটি করে আসি যাই।

ছাদে এসে ওর মাথা গরম হয়ে গেল ওর দোলনায় দোল খাচ্ছে প্রভাত। আর তার হাতে একটা ব‌ই। পূর্ণতা নাকের পাটা ফুলিয়ে চিৎকার করে উঠল।

#চলবে…

রেসপন্স করবেন সবাই ❤️

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here