গল্পঃ_একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় #পর্বঃ_১৪ #লেখাঃ_ইয়াসমিন_খন্দকার

0
203

#গল্পঃ_একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#পর্বঃ_১৪
#লেখাঃ_ইয়াসমিন_খন্দকার
—-

বর্তমানে,

প্রভা হাতে একটা কফি মাগ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাদের বাসার বেলকনিতে। কাল সারারাত জেগে সে অতীতের স্মৃতিচারণ করছিল। মনে করছিল রায়ানকে। তার সঙ্গে উপভোগ করা সুন্দর সময়গুলো। সাথে মনে পড়ছিল কিছু বেদনাদায়ক স্মৃতিও। যা তাকে দুঃখের উপলব্ধি করিয়েছে। প্রভা ভাবতে থাকে রায়ানের মৃত্যুর পরের ঘটনাগুলো। সেদিন আবির আত্মহ**ত্যার চেষ্টা করলেও সৌভিক তাকে রক্ষা করে। কিন্তু আবিরের মানসিক অবস্থা ভীষণ খারাপ হয়ে যায়৷ রুহুল আমিন আবিরের এই অবস্থায় তার পাশে এসে দাঁড়ায়। আবিরের মা-বাবা কেউ বেচে ছিলেন না। সে নিজের মামার বাড়িতে থাকত। রুহুল আমিনও রায়ানকে হারিয়ে একা হয়ে পড়েছিলেন। তাই তিনি আবিরকে দত্তক দেন। এরপর থেকে রায়ানের যায়গাটা আবিরকেই দিয়েছেন। নিজের ছেলের মতোন দেখেছেন আবিরকে। সমাজে সবাই আবিরকেই রুহুল আমিনের ছেলে বলে জানে। এমনকি রুহুল আমিন আবিরকেই তার পরবর্তীতে অত্র এলাকার এমপি করতে চেয়েছিলেন। এইজন্য নিজে না লড়ে বয়সের কথা বলে পিছিয়ে যান। আর নিজের বদলে আবিরকে ভোটে দাড় করান। রুহুল আমিনের এলাকায় অনেক সুনাম ছিল। তার দীর্ঘ শাসনামলে এলাকার অনেক উন্নয়ন হয়েছিল এইজন্য সবাই তাকে অনেক শ্রদ্ধা থাকে। যেই কারণে তিনি যখন আবিরকে মনোনিত করেন তখন আবির ব্যাপক জনসমর্থন পায়। যেই কারণে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে সে এমপি হয়।

প্রভা এসব ভেবেই একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। রুহুল আমিনের ছেলের যায়গা হয়তো আবির নিতে পেরেছে কিন্তু তার মনে আবির কোন যায়গা দখল করতে পারে না। প্রভা আজও শুধু আর শুধুমাত্র রায়ানকেই ভালোবাসে। রায়ানের মৃত্যুর পর ১২ বছর অতিবাহিত হয়েছে৷ এখনো প্রভার মনে অন্য কেউ রায়ানের যায়গা নিতে পারেনি। রায়ানের মৃত্যুর পর প্রভা অনেক ভেঙে পড়েছিল৷ তবে সে বেশ ভালো রেজাল্ট করেছিল এইচএসসি পরীক্ষায়। কিন্তু সে সরকারি মেডিকেলে চান্স পায়নি৷ এরপর প্রভা কিরগিজস্তানে যায় এবং সেখানকার মেডিকেলেই অধ্যয়ন করে। সেখান থেকে মেডিকেলের পড়াশোনা শেষ করে সেখানেই চাকরি নিয়েছিল প্রভা। সে আর চায়নি কখনো দেশে ফিরতে। রায়ানের স্মৃতি যে তাকে কষ্ট দিত। তবে নিজের মা-বাবার আকুল আবেদন সে ফেরাতে পারেনি। তাই একসময় দেশে ফিরতে হয়। কিন্তু দেশে ফেরার পর থেকে তারা যেভাবে বিয়ের জন্য বলছে আবার এখন আবির তাকে বিয়ে করার জন্য তার পেছনে পড়ে আছে এটা প্রভার ভালো লাগছে না। এইজন্য প্রভা আবার একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে আর দেশে থাকবে না। প্রভা কানাডার একটা মেডিকেলে এপ্লাই করেছে। এখন যদি সেখান থেকে ডাক আসে তো সে আবার কানাডায় চলে যাবে।

“ভেতরে আসব?”

নিজের মায়ের ডাকে সম্বিত ফিরে পায় প্রভা। প্রজ্ঞা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে,
“হ্যাঁ, মা আসো। কিছু বলবা?”

“তুই নাকি কানাডায় যেতে চাইছিস?”

“কে বললো তোমায়? অনু?”

“সেটা বড় কথা নয় যে কে বলেছে। তুই কি মনে করেছিস বল তো?”

“আমি এটা করতে বাধ্য হয়েছি। তোমরা যেভাবে আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছ তাতে এছাড়া আমার আর কিছু করার ছিল না।”

“তুই কেন বুঝতে পারছিস না?”

“আমি সবটাই বুঝতে পারছি। তোমরা আমার সুখের কথা ভেবেই এমন করছ। কিন্তু বিশ্বাস করো এতে আমার দুঃখ আরো বাড়ছে। কেন তোমরা আবার আমার অতীতকে আমাকে মনে করিয়ে দিলে? জানো ঐ আবিরকে দেখলে আমি নিজেকে সামলাতে পারিনা। আমি জানি আবির রায়ানকে খু** ন করেনি তবু আমার ওকে দেখলে মনে হয় ও রায়ানের মৃত্যুর জন্য দায়ী। আর আমার এই ভাবিনা ভুলও নয়। আর এমনিতেও আমি শুধু আবির জন্য বলছি না, অন্য কাউকেই আমি নিজের জীবনের সাথে জড়াতে পারব না।”

“তাই বলে আজীবন একা থাকবি?”

“৩০ টা বসন্ত তো একাই পার করলাম। বাকি জীবনটাও এভাবে চলে যাবে। তুমি ভেবো না। আমি একা থাকতে পারব।”

“ঠিক আছে। তোর যা ইচ্ছা তুই তাই কর। আমার বা তোর বাবার কথার তো কোন দাম নেই তোর কাছে। তাই আমরাও আর তোকে কিছু বলব না।”

প্রভা বুঝতে পারে তার মায়ের অভিমানটা। তবে সে কিছু বলে না। কখনো কখনো পরিস্থিতি মানুষকে অনেক স্বার্থপর বানিয়ে দেয়। প্রভাকেও হয়তো এভাবেই পরিস্থিতি একদম পরিবর্তন করে দিয়েছে। ১২ বছর আগের প্রভার সাথে বর্তমানের প্রভার তাই যেন কোন মিলও নেই।

~~~~~~
হোস্টেলে মুখোমুখি বসে আছে আবির ও প্রভা৷ মূলত আবিরের ডাকেই প্রভা আজ এখানে এসেছে। আবির প্রভার সাথে শেষবারের মতো দেখা করতে চেয়েছিল আজ। আবির কিছু বলছেনা দেখে প্রভাই বলে,”কি জন্য আমায় ডেকেছিলেন বললেন না তো।”

“তুমি নাকি কানাডা যাচ্ছ?”

“আপনার কাছেও এই খবর চলে গেছে?”

“হ্যাঁ, শুনলাম। দেখো প্রভা তোমাকে আমি একটা কথা জানাতে চাই। তুমি হয়তো রায়ানের মৃত্যুর জন্য আমাকে দায়ী ভাবো এমনকি আমি নিজেও এই ব্যাপারটা নিয়ে হীন্যমনতায় ভুগি। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি যদি জানতাম এমন কিছু হবে তাহলে সেদিন রায়ানের সাথে..”

“অতীত ঘেটে তো কোন লাভ নেই তাইনা? এখন এসব বলে আর কিছুই ঠিক হবে না।”

“তুমি অনেক বদলে গেছ প্রভা।”

“প্রত্যেকটা মানুষই সময়ের সাথে বদলায়।”

“এতটা না বদলালেও পারতে।”

“যদি কোন কাজের কথা থাকে তো বলুন আর নাহলে আমায় যেতে দিন।”

“তুমি এই বিয়েটায় রাজি হয়ে যাও প্লিজ।”

“সম্ভব নয়।”

“আমি এটা নিজের জন্য বলছি না প্রভা। বলছি রুহুল আমিন আঙ্কেলের জন্য। তুমি হয়তো জানো না উনি কতোটা অসুস্থ। ডাক্তার বলেছেন ওনার হাতে আর বেশিদিন সময় নেই। আর উনি যবে থেকে এটা জেনেছেন যে রায়ান মৃত্যুর আগে তোমাকে আর আমাকে সুখী দেখতে চেয়েছিল তখন থেকেই উনি আমাদের বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন নিজের ছেলের শেষ ইচ্ছা পূরণের জন্য। ইভেন বিশ্বাস করো আমিও শুরুতে এই বিয়েতে রাজি ছিলাম না। কিন্তু ওনার শারীরিক অবস্থার কথা ভেবেই রাজি হয়েছি।”

“তাহলে আপনি এখন কি চান? আমিও এই বিয়েতে রাজি হয়ে যাই?”

“তুমি তো রায়ানকে ভালোবাসতে প্রভা৷ তাই রায়ানের শেষ ইচ্ছার দাম তো তোমারও দেওয়া উচিৎ। তাছাড়া রায়ানের বাবার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে তুমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে তো? একেই তো রায়ানের মৃত্যুর গ্লানি নিয়ে এত গুলো দিন বেঁচে আছ। এরপর যদি আঙ্কেলের কিছু হয় তাহলে তো…”

প্রভা একদম বরফের মতো জমে যায়। আবিরের একটা কথাও অযৌক্তিক নয়। প্রভা এই মুহুর্তে ভীষণ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। আদতে কি করবে সে? প্রভা ভাবল, এখন তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। তাই সে আবিরকে বলল,”আমি ভেবে আপনাকে আমার সিদ্ধান্তটা জানাচ্ছি।”

এটুকু বলেই প্রভা উঠে চলে যায়৷ প্রভা যাওয়ার পর আবির হেসে বলে,”আমি জানি এবার তুমি রাজি হবেই। কারণ আমি তোমার দূর্বল যায়গাটায় আঘাত করেছি। তোমাকে পাওয়ার যুদ্ধে তাহলে আমি জিতেই গেলাম। রায়ান, তুই মরে গিয়ে আমার অনেক উপকার করে দিয়ে গেছিস দোস্ত। তুই মরেছিস জন্য তো আমি তোর যায়গায় স্থান পেয়েছি, রাজপুত্রর মতো জীবন অতিবাহিত করেছি, আজ এমপি হতে পেরেছি আর খুব শীঘ্রই প্রভাকেও পাব। তুই মরে আমার লাভই হয়েছে বল?”

বলেই অদ্ভুত ভাবে হাসতে লাগল আবির।

(চলবে)…
#গল্পঃএকই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়

(সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন, ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here