গল্পঃ_একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় #পর্বঃ_১৫ (বোনাস পর্ব) #লেখাঃ_ইয়াসমিন_খন্দকার

0
428

#গল্পঃ_একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#পর্বঃ_১৫ (বোনাস পর্ব)
#লেখাঃ_ইয়াসমিন_খন্দকার
—-
প্রভা বাড়িতে এসে দরজা বন্ধ করে দিয়ে শুয়ে আছে। আজ অনেক সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে সে। এতদিন নিজ সিদ্ধান্তে অটল ছিল যে রায়ানের স্মৃতি নিয়েই বাকি জীবন কা’টাবে। কিন্তু আজ আবিরের সাথে কথা বলার পর তার মধ্যে অন্যরকম ভাবনা কাজ করছে। রুহুল আমিনের কথাও ভাবাচ্ছে তাকে। লোকটা সত্যি তাকে অনেক ভালোবাসে। প্রভা যখন সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে তখন সে তার একজন ফেসবুক ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলে। এই ফেসবুক ফ্রেন্ডের সাথে তার ২ বছর আগে প্রথম কথা হয় কিরগিজস্তানে থাকাকালীন। লোকটাই প্রথমে ম্যাসেজ দেয়। তিনি নাকি কানাডায় থাকেন। এই লোকটা কে সেটা প্রভা জানে না। কিন্তু লোকটা প্রভার অচেনা হয়েও যেন খুব চেনা হয়ে গেছে। প্রভার সব সমস্যা লোকটার সাথে শেয়ার করে সে। যদিও রায়ানের কথা কখনো বলে নি। কারণ এই কথা সে কারো সাথে সহজে শেয়ার করতে চায়না।

আজও লোকটাকে ম্যাসেজ দিল কিন্তু লোকটা এখন অফলাইনে৷ তাই প্রভা তার অনলাইনে আসার জন্য অপেক্ষা করল। এমন সময় হঠাৎ করে কেউ তার দরজায় নক করে বলল,”ভেতরে আসবো?”

প্রভা চোখ তুলে তাকিয়ে অনুরাধাকে দেখল। অতঃপর বলল,”অনু তুই! আয় ভেতরে আয়।”

অনুরাধা ভিতরে আসল। মেয়েটা আগে অনেক চিকন ছিল কিন্তু বিয়ের পর কেমন যেন মুটিয়ে গেছে। অনুরাধা হাফাতে হাফাতে প্রভাকে বলল,”তুই কি ডিশিসন নিলি প্রভা? এদেশেই থেকে আবির ভাইয়াকে বিয়ে করবি নাকি কানাডায় যাবি?”

“একটু আগেও যদি তুই আমাকে প্রশ্নটা করতি তাহলে আমি নিঃসংকোচে উত্তর দিতাম যে আমি কানাডায় যাব। কিন্তু এখন পরিস্থিতি আলাদা। এখন আমি কনফিউশনে আছি।”

অনুরাধা বলল,”আমি আবির ভাইয়ার থেকে সবই শুনেছি। আমি এখন তোকে কিছু কথা বলব, তুই একটু চিন্তা করে দেখিস।”

“হ্যাঁ, বল।”

” তুই তো কলেজ লাইফে প্রথমে আবির ভাইয়াকেই পছন্দ করেছিলি তাইনা?”

“এসব তো পুরোনো কথা অনু। এখন আবার কেন নতুন করে এগুলো বলছিস?”

“বলছি তার কারণ আছে। আচ্ছা তুই নিজেই ভেবে দেখ, আবির ভাইয়ার প্রতি কোন ফিলিংস ছিল কিন্তু এরপরও তুই রায়ান ভাইয়াকে ভালোবাসতে পেরেছিস। কি তাইনা?”

“তুই তো সবটাই জানিস যে, আমার সাথে কি কি হয়েছিল। সব জেনেও তুই এই কথা বলবি? আবির ভাইয়ার তো আমার প্রতি কোন ফিলিংস ছিল না। উনি আমার সাথে অনেক খারাপ আচরণ করেছিলেন। কিন্তু রায়ান সে তো আমায় ভালোবাসত, আমায় কখনো অসম্মান করেনি, সবসময় আমার কেয়ার করত ও আমায় বুঝত। ওর এসব গুণের জন্যই তো আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। আর আবির ভাইয়ার প্র‍তি যা ছিল তা শুধুই ভালো লাগা। তাছাড়া রায়ান আমাকে যতোটা ভালোবাসত ততোটা ভালো আমার আর কেউ কোনদিন বাসতে পারবে না।”

অনুরাধা প্রভার কাধে হাত রেখে বলে,”এবার আমি যা বলছি সেটা মন দিয়ে শোন। তুই আসল সত্য জানিস না। ইনফ্যাক্ট আমি নিজেও জানতাম না। একদিন সৌভিক আর আবির ভাইয়ার কথোপকথন থেকেই আমি সব জানতে পারি। আবির ভাইয়াও তোকে সেই সময় ভালোবাসত। কিন্তু ও কোনভাবে জেনে গিয়েছিল যে রায়ান তোকে ভালোবাসে। তাই নিঃস্বার্থ ভাবে সরে গিয়েছিল তোদের মাঝ থেকে।”

প্রভা বাকা হেসে বলে,”বাহ, কি নিদারুণ নিঃস্বার্থতা দেখিয়েছেন উনি। এইজন্যই তো রায়ান আর আমার মাঝে আবার ফিরে এসেছিলেন তাইনা?”

“প্রভা তুই বুঝিস না কেন? মানুষ তো এমনই। নিজের আবেগ কি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তাছাড়া সেই সময় উনি তো টিন এজার ছিলেন। আবেগ টা একটু বেশিই ছিল। কিন্তু তোর প্রতি ওনার ভালোবাসাটা তো মিথ্যা না। এটা ঠিক যে রায়ান ভাইয়া তোকে ভালোবাসত কিন্তু তার মানে তো এই না যে আর কেউ তোকে ভালোবাসতে পারবে না। তুই তো আর কাউকে সেই সুযোগই দিতে চাসনা।”

“না,চাইনা আমি।”

“তোকে একটা কথা আমি বলে দিচ্ছি, তুই অনেক বড় ভুল করেছিস। তোর অনেক আগেই মুভ অন করা উচিৎ ছিল। ভাগ্য কিন্তু কেউ পরিবর্তন করতে পারে না। রায়ান ভাই তোর ভাগ্যে ছিল না তাই ও মরেছে। কিন্তু তাই বলে এই না যে তোকে আজীবন একা থাকতে হবে। তুই আবির ভাইয়াকে বিয়ে কর। উনি তোকে অনেক সুখী রাখবে।”

প্রভা হালকা হেসে বলে,”তুই আগেও এভাবে আমাকে আবিরের দিকে ঠেলে দিয়েছিলি ১২ বছর আগে। আজ আবারও তুই আগের কাজটাই করছি। তবে এখন আমি আর আগের মতো বোকা নই তাই আমি নিজের মনের কথা শুনব।”

“আমি সেই সময়ও তোর ভালো চাইতাম আর আজও তোর ভালো ভাই প্রভা। তাই আমি যা বলছি তোর ভালোর জন্যই বলছি। তাছাড়া এই বিয়েতে শুধু তোর একার ভালো না। রুহুল আমিন আঙ্কেল, আবির ভাইয়া, তোর বাবা-মা সবার ভালো লুকিয়ে আছে এর মাঝে। তুই একটু ভেবে দেখ তুই তোর মা-বাবার একমাত্র সন্তান। তোর কথা ভেবে তো আংকেল আন্টিও ডিপ্রেশনে থাকে। তাই তুই যা করবি ভেবে চিন্তেই সিদ্ধান্ত নিস।”

এটা বলে অনুরাধা উঠে বসে অতঃপর প্রভার হাতের মুঠো শক্ত করে ধরে বলে,”এই বিয়েতে মত দিয়ে দে। দেখবি তারপর সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। আস্তে আস্তে একসময় তুই রায়ান ভাইয়াকে ভুলে আবির ভাইয়ার সাথে সুখে সংসার করতে পারবি। তোর মা-বাবাও সুখী হবে। রুহুল আমিন আংকেলও সুখী হবে আর রায়ান ভাইয়া সেও যেখানে আসে খুশিই হবে। তুই নিজেই ভেবে দেখ না, রায়ান ভাইয়া তো তোকে ভালোবাসত। তোকে অসুখী দেখলে কি সে সুখী হবে? তাই তোর নিজের জন্য না হোক রায়ান ভাইয়ার কথা ভেবে হলেও বিয়েটা কর।”

এই বলে অনুরাধা বেরিয়ে আসে। অনুরাধা চলে আসার পর প্রভা তার বলা কথাগুলোই ভাবতে থাকে।

অনুরাধা বাইরে আসার পর সৌভিক অনুরাধাকে কল করে। অনুরাধা ফোনটা রিসিভ করতেই সৌভিক বলে,”কি হলো? প্রভাকে ম্যানেজ করতে পেরেছ?”

“আমি নিজের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। যতভাবে ইমোশনাল গেইম খেলা যায় খেলেছি। এর থেকে বেশি কিছু করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”

সৌভিক রাগী গলায় বলে,”কি পারো টা কি তুমি? শোনো, প্রভা যদি এই বিয়েটা না করে তাহলে তোমার আমার সম্পর্কও কি শেষ!”

“সৌভিক!”

“একদম গলা নামিয়ে কথা বলো। তুমি তো সবটাই জানো, বর্তমানে আমার কোন কাজ নেই। বেকার হয়ে বসে আছি। এই সময় আমার টাকার প্রয়োজন যাতে আমি নতুন করে বিজনেস শুরু করতে পারি। আর সেই টাকা আমায় কে দেবে? আবির। কিন্তু এর বিনিময়ে ও কি বেশি কিছু চেয়েছে? না চায়নি শুধু চেয়েছে যাতে তুমি প্রভাকে যে করেই হোক এই বিয়েতে রাজি করাও। আর অর্ধেক কাজ তো আবির নিজেই করেছে। তোমার কাজ ছিল শুধু যে ভাবেই হোক ওকে কনভিন্স করা সেটাও করতে পারবা না? তাহলে কেমন বেস্ট ফ্রেন্ড তুমি?”

অনুরাধা এবার পাল্টা প্রশ্ন করে,”তাহলে আবিরই বা তোমার কেমন ফ্রেন্ড? যে তোমায় সাহায্য করার জন্য এমন শর্ত দেয়?”

“মুখ সামলে কথা বলো অনু। এমনি তোমার জন্য আমার জীবন নষ্ট হয়ে গেছে। আমার পরিবার তো তোমায় এখনো মেনে নেয়নি। তোমার জন্য তো কম অশান্তি হয়নি। তার উপর যেই রূপ দেখে তোমার প্রেমে পড়েছিলাম সেই রূপও আর নেই। আর এখন যদি তুমি আমার এইটুকু কাজ করতে না পারো তাহলে তোমার সাথে সম্পর্ক রেখে কি লাভ?”

“তুমি এই কথাটা বলতে পারলে সৌভিক? একবারো আমাদের মেয়েটার কথা ভাবলে না?”

“আমায় এসব বলতে তুমি বাধ্য করেছ। যাইহোক আমি আর কথা বাড়াতে চাই না। রাখছি।”

সৌভিক ফোনটা রেখে দিতেই অনুরাধার চোখ অশ্রুসিক্ত হয়। সময় কি মানুষকে এতটাই বদলে দেয়? ভালোবাসাটা কি এতটাই রং বদলায়? কই রায়ানের প্রতি প্রভার ভালোবাসা তো এতদিন পরেও কমেনি। বরং রায়ানের মৃত্যুর এতগুলো বছর পরেও প্রভা তাকে কতোটা ভালোবাসে। তাহলে অনুরাধার সাথে এমন কেন হলো? সৌভিক কেন এতোটা বদলে গেল? তাহলে কি তার ভালোবাসায় কোন খাদ ছিল.

(চলবে)…
#গল্পঃএকই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়

(সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন, ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here