#গল্পঃ_একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#পর্বঃ_১০
#লেখাঃ_ইয়াসমিন_খন্দকার
—-
প্রভা আজ একাই কলেজে এসেছে কারণ অনুরাধা তার এক আত্মীয়র বিয়ের জন্য আজ কলেজে আসেনি। প্রভার অনুরাধা ছাড়া আর তেমন কোন বন্ধুবান্ধব না থাকায় সে আজ অনেক চুপচাপ ছিল। কলেজ ছুটির পর প্রভা যখন একা যাচ্ছিল তখন রায়ান তাকে দেখে ফেলে। প্রভাকে একা যেতে দেখে সে এগিয়ে এসে বলে,”কি হয়েছে সাধাসিধা মেয়ে? তুমি একা কেন? আজ তোমার বান্ধবী আসেনি?”
প্রভা সংক্ষিপ্ত জবাব দেয়,”না, আসে নি।”
“তুমি একা যেতে পারবে তো?”
রায়ানের এমন প্রশ্নে প্রভা অবাক হয়। সে একটু সাধাসিধা হতে পারে কিন্তু তার মানে তো এই নয় যে সে ছোট বাচ্চা যে সে একা কলেজে যেতে পারবে না। রায়ান প্রভাকে বলে,”তোমার সমস্যা হলে বলতে পারো। আমি তোমাকে গিয়ে পৌঁছে দিয়ে আসি।”
প্রভা বলে,”আমি একাই যেতে পারব ভাইয়া। আপনাকে কষ্ট করে আমায় পৌঁছে দিতে হবে না।”
রায়ান আর কিছু বলে না। কিন্তু প্রভার জন্য তার চিন্তা হতে থাকে। তাই সে প্রভা বারণ করার পরও গোপনে প্রভার পিছু নেয়। প্রভা সেটা বুঝতে পারে না। রায়ানের সন্দেহই আজ সত্য হলো। প্রভাকে আজ কিছু শ*য়তান ছেলে ঘিরে ধরল মাঝ রাস্তায়। তারা প্রভাকে টিটকারি মে*রে বলল,”কোথায় যাচ্ছ সুন্দরী?”
প্রভা হঠাৎ করে খুব ভয় পেয়ে যায়। কয়েকটা ছেলে তার কাছে আসতে যাবে তখনই রায়ান সেখানে চলে আসে৷ সবাইকে হুংকার দিয়ে বলে,”যদি কেউ ওকে স্পর্শ করে তাহলে তার হাত আমি ভেঙে ফেলবো।”
প্রভা হতবাক হয়ে যায়। রায়ান সেই সব ছেলেকে মে*রে তাড়িয়ে দেয়। মা**রামারি করতে গিয়ে রায়ানের হাতে আঘাতের সৃষ্টি হয়। প্রভা সেটা লক্ষ্য করে বলে,”ভাইয়া আপনার হাতে ক্ষত তৈরি হয়েছে। আমার ব্যাগে ফাস্ট এইড আছে। আপনি একটু বসুন।”
রায়ান চুপচাপ প্রভার কথা শোনে। প্রভা রায়ানের হাতে ব্যান্ডেজ করার পর রায়ান প্রভাকে রাগী সুরে ধমকে বলে,”এইজন্য আমি তোমার সাথে আসতে চেয়েছিলাম। তুমি তো আমার কথা শুনলে না। দেখলে তো কত বড় বিপদ হতে যাচ্ছিল।”
প্রভা বলল,”তবুও তো আপনি আমাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলেন। আপনাকে ধন্যবাদ।”
“আমি আসলে এই পথ দিয়েই যাচ্ছিস। ভাগ্যটা ভালো। নাহলে কি হতো বলো তো?”
“আমিও সেটাই ভাবছি।”
প্রভার কথা শুনে রায়ান বলে,”বাকি পথ আর তোমায় একা যেতে হবে না। চলো আমি তোমায় পৌঁছে দেব।”
“আচ্ছা ভাইয়া।”
~~~~~~~~~~~~~~~~
অনুরাধা আজ এসেছে তার খালাতো বোনের বিয়েতে। সে আজ বেশ খুশি। অনুরাধা তার কিছু কাজিনের সাথে আড্ডা দিচ্ছিল। তাদেরই মাঝে একজন বলে ওঠে,”আজ বিয়েতে নিশ্চয়ই অনেক সুন্দর সুন্দর ছেলে আসবে। আমরা সেখান থেকে নিজেদের বয়ফ্রেন্ড খুঁজে নিতে পারব।”
আরো কিছু কাজিন তাদের তালে তাল মেলায়। কিন্তু অনুরাধা নিশ্চুপ ছিল। আজ হঠাৎ কেন জানি তার সৌভিকের কথা খুব মনে পড়ছে। অনুরাধা নিজেও বুঝতে পারছে না তার সাথে এসব কি হচ্ছে। তার কেন মনে পড়ছে সৌভিকের কথা? এরমাঝে অনুরাধার এক কাজিন তাকে অন্যমনস্ক দেখে বলে,”কিরে অনু? তুই এত চুপচাপ কেন?”
অনুরাধা বলে,”এমনি। আমার আসলে একটু রেস্ট দরকার। আমি রুমে যাচ্ছি।”
রাতের দিকে বিয়ের সময় পাত্রপক্ষ এসে হাজির হয়। অনুরাধা তখনো ঘুমাচ্ছিল। অনুরাধার ছোট বোন অনুস্কা এসে তার ঘুম ভাঙায়। অনুরাধাকে বলে,”দিদি, তুমি এখনো ঘুমাচ্ছ কেন? বর এসে গেছে তো। চলো গিয়ে দেখি।”
অনুরাধা দ্রুত উঠে বসে এবং নিজের বোনের সাথে বর দেখতে যায়। বর দেখতে গিয়ে তো অনুরাধা ভীষণ অবাক হয়। কারণ বরপত্রের মাঝে সৌভিকও ছিল। সৌভিকও অনুরাধাকে দেখে অনেক অবাক হয়। আসলে বর হলো সৌভিকের মামাতো ভাই। দুজনে একে অপরের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল।
~~~~
অনুরাধার এক কাজিনের কথায় সে অনেক বিরক্ত হচ্ছিল। কারণ সে তাকে বিয়েতে উপস্থিত বিভিন্ন ছেলের রূপের বর্ণনা দিচ্ছে। একটু পরেই সে সৌভিককে দেখিয়ে দেখিয়ে বলে,”ঐ দেখ ছেলেটা কি হ্যান্ডসাম। দেখে তো মনে হচ্ছে দারুণ।”
অনুরাধা মুখ বাকিয়ে বলে,”তোর রুচির তারিফ না করে পারছি না। এই ছেলের মধ্যে এমন কি পেলি? কেমন পাঠকাঠির মতো চেহারা।”
“আরে তুই অন্ধ নাকি? ভালো করে দেখ ছেলেটা কি সুদর্শন। আমি তো একেই প্রপোজ করব আজ।”
অনুরাধা খুব জেলাস হতে থাকে তার কাজিনের মুখে এমন কথা শুনে।
অন্যদিকে সৌভিককে তার চাচাতো ভাই অনুস্কাকে দেখিয়ে বলল,”দেখ সৌভিক ঐ মেয়েটা অনেক সুন্দরী না? আমার পাশে খুব মানাবে বল?”
সৌভিক অনুস্কাকে দেখে বলে,”কোথায় সুন্দরী? ঐ মেয়েটা তো একদম ভালো না। দেখেই কেমন ঝগড়ুটে ঝগড়ুটে লাগছে। তোর চয়েজ খুব খারাপ।”
“তুই কচু জানিস? মেয়েটাকে ভালো করে দেখ অনেক মিষ্টি দেখতে। আমার মা তো এমন মিষ্টি একটা মেয়েকেই তার বৌমা হিসেবে দেখতে চায়। তাই আমি ভাবছি মেয়েটার সাথে গিয়ে কথা বলব। ওর ফোন নম্বর নেব। তারপর…”
“এই থাম। বেশি আগানোর দরকার নেই। নাহলে আমি কাকাকে কিন্তু সব বলে দেব।”
“তুই এমন কেন রে?”
“আমি এমনই।”
“দেখবি তোর কপালে ডাইনি বউ জুটবে সৌভিক। যে তোকে জ্বালিয়ে মারবে, তোর রক্ত চুষে খাবে।”
সৌভিক অনুরাধার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলে,”তথাস্তু।”
বিয়ে সমাপ্ত হওয়ার পর সৌভিক অনুরাধার কাছে যায়। অনুরাধা একাই দাঁড়িয়ে ছিল। সৌভিককে নিজের দিকে আসতে দেখে হঠাৎ করেই অনুরাধার হৃদস্পন্দন আগের তুলনায় অনেক বেড়ে যায়। সে নিঃশ্বাস নিতে পর্যন্ত ভুলে যায়। সৌভিক অনুরাধার পাশে এসে বলে,”হ্যালো।”
“হ্যাঁ, দাদা কিছু বলবে?”
সৌভিক অনুরাধার মুখে দাদা ডাক শুনে খুব রেগে যায়। বলে,”তুমি আমাকে দাদা বলছ কেন? আমি তোমার কোন জন্মের দাদা?”
“এভাবে বিয়ে বাড়িতে আমি ঝগড়া করতে চাই না। আমার কোন জন্মের দাদা না হলেও তো তুমি আমার এই জন্মের সিনিয়র।”
“আগে তো কখনো সম্মান দেখিয়ে দাদা বলো নি। তাহলে আজ এমন কেন বলছ?”
অনুরাধা কি বলবে কিছু বুঝতে পারে না। সৌভিক অনুরাধাকে বলে,”আমি তো এখানে কিছুই চিনি না। আমাকে একটু ওয়াশরুমটা দেখিয়ে দেবে?”
অনুরাধা বলে,”আমার সাথে আসুন।”
সৌভিক অনুরাধার পেছন পেছন যায়। একটু দূরে যেতেই সৌভিক হঠাৎ করে নিজের পেছন থেকে একটা গোপাল ফুল বের করে। অনুরাধার সামনে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে পড়ে। আর বলে,”আমি তোমায় ভালোবাসি অনুরাধা। তোমার এটা শুনে অদ্ভুত লাগতে পারে যে যেই ছেলেটা সবসময় তোমার সাথে ঝগড়া করে সে কিভাবে তোমার প্রেমে পড়ল। বিশ্বাস করো এই প্রশ্নের উত্তর আমি নিজেও জানি না। কখন কিভাবে তোমার প্রেমে পড়লাম এটা আমি বলতে পারব না। শুধু এটাই বলতে পারব যে আমি তোমায় অনেক অনেক ভালোবাসি। তুমি আমায় ভালোবাসো তো?”
অনুরাধা অনেক দুঃসাহসিক একটা কাজ করে ফেলে। সৌভিকের প্রশ্নের কোন জবাব না দিয়ে সে সরাসরি সৌভিককে কিস করতে শুরু করে। তাও আবার ঠোঁটে। সৌভিক অনুরাধার এমন আচরণে হতবাক হয়ে যায়। অনুরাধা সৌভিককে বলে,”তোমার ঠোঁটের স্বাদ অনেক মিষ্টি। আমি শুনেছিলাম, যখন আমরা কাউকে কিস পড়ার পর আমাদের হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় তার মানে আমরা তাকে ভালোবাসি। এই জন্যই তোমাকে ভালোবাসি কিনা সেটা পরীক্ষা করে নিলাম। আর এর উত্তর হলো আমিও তোমায় ভালোবাসি।”
সৌভিক অনেক খুশি হয়। সে অনুরাধাকে নিজের অনেক কাছে টেনে নিয়ে কিস করতে থাকে। আর বলে,”আজ থেকে তুমি শুধু আমার।”
(চলবে)…
#গল্পঃএকই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
(সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন, ধন্যবাদ)