#তপ্ত ভালোবাসা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ২৪
.
🍁
হসপিটাল থেকে এসেছি কাল সকালই, আমার তেমন কোনো সমস্যা ছিল না বলে একটা রাত রেখেই রিলিজ করা হয়েছে আমাকে, কাল একটু বেট রেস্ট নিলেও আজকে বেশ ফুরফুরে আছি আমি, সকাল থেকেই চঞ্চল সহিত এদিক ওদিক ঘুরঘুর করছি আমি, নিশ্চিতে ঘুরঘুর করছি এমন কিন্তুু মোটেও নয় সাথে কথা এক ঝুলি সমান চিন্তা নিয়ে ঘুরছি আর আমার এত শত চিন্তা কারণ দুটো একটা হল যে কাল রাতে হসপিটালের কে বসে ছিল আমার পাশে তা এখনো পর্যন্ত জানা হয়নি আমার, দুই আমার বিয়েটা এগিয়ে আসছে দিন বা দিন আর অল্প কিছু দিন পরই আমার আবার বিয়ে অথচ রিদ খানের সাথে আমার ডিভোর্স হয়নি এখনো, এই বিষয় উনার সাথে কথা বলার দরকার কিন্তু উনি (রিদ) নাকি বাংলাদেশে নেই লন্ডনে আছে কাজের সুবাদে, আমাকে যেদিন হসপিটালে নেওয়া হয়েছিল সেদিন নাকি উনিও লন্ডনে চলে যায় আর এখনো আসিনি বাংলাদেশে কবে আসবে সেটাও জানি না,,,,,
.
আচ্ছা আমি কি বিয়ে বিষয়টা নিয়ে কথা বলবো রুদ্র সাথে, রুদ্র কি বুঝবে আমাকে, নিজের ভাইয়ে বিরুদ্ধে গিয়ে আমাকে বিশ্বাস করবে কি,, এমন চিন্তা ভাবনায় নিয়ে বেটে ওপর পা ঝুলিয়ে বসে আছি,,, এই মূহুর্তে কি করা উচিত কিছুই জানিনা আমি, রিদ খান আমার জীবন আসার পর থেকে আমার জীবনটা একটা চক্র আকারে ঘুরছে চারপাশে কখন গিয়ে যে কিসের মধ্যে আটকে যায় আর আমাকে সেটাই করতে হয় কিছু জানি না আমি,,, রিদ খানজে ঐ দিনের পর থেকে উনার জন্য শুধু ঘৃণাটাই আসে মনের মধ্যে অন্য কিছুই না উনার কথা ভাবতে ইচ্ছে করে না আমার,,, উনাকে নিজের লাইফ থেকে শুধু দূরে রাখতে চাই আমি যেন উনার কোনো কালো ছায়াও আমি অবধি পৌঁছাতে না পারে কিন্তু তাও পারি না অদ্ভুত টান ফিল করি উনার জন্য আর সেটা কি জন্য সেটাও বুঝে উঠতে পারছি না আমি……..
.
কথা গুলো বসে বসে এক মনে ভাবছিলাম কিন্তু হঠাৎ করেই কারও ডাকে মনোযোগ ভস্ম হলো আমার, মনোযোগ ভস্ম হওয়াতে আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় আমি তখনই চোখে পড়ল আমার গীতিবাচক আম্মুকে, গীতিবাচক আম্মু কেন বলছি তাই তো তাহলে শুনুন আম্মু আমার কথা কথা শুধু শাসন করে গীত গাওয়া টাইপ, মায়া এটা কর, ওটা কর, এখানে যাবিনা, ওটা ধরবি না, এমন সব কথা বলে আমাকে নিষেধাজ্ঞা জারি করে রাখে সবসময় তাই আমি আম্মুকে গীতিকার বলে থাকি সবকিছুতেই,,,
.
আমার এমন সব চিন্তা ভাবনায় মাঝে আম্মু আমার সামনে এসে দাড়িয়ে হাসি মুখে স্বাভাবিক কন্ঠে বলে উঠে…….
.
—” মায়ু রেডি হয়ে নিচে আয় তো রুদ্র এসেছে আমাদের বাসায় তোকে সাথে করে নিয়ে যেতে আর রুদ্র নিচেই বসে আছে তোর বাবার সাথে , আমার রুদ্রের পরিবারের বড়দের সাথে কথা হয়েছে তোকে নিয়ে তাই তাড়াতাড়ি করে কিছু একটা ভালো দেখে পরে নিয়ে নিচে আয়তো মায়ু,,,,,
.
আম্মুর এমন আদেশ জারির কথায় আমি ভ্রুঁ কুঁচকে বলে উঠি…….
.
—” হঠাৎ…..
.
—” হুমমম হঠাৎই, তোকে ওদের বাসায় যেতে হবে রুদ্র সাথে ওর আম্মু বলেছে দেখা করতে…….
.
—” কেন……
.
—“তুই এত প্রশ্ন কেন করছি….
.
—” তুমি উত্তর দিচ্ছো না তাই…….
.
আমার এমন কথায় আম্মু খানিকটা থমথমে খেয়ে যায় পরে আমার দিকে কিছুক্ষণ চুপ করে তাকিয়ে থেকে আমার কাট কাট গলায় বলে উঠে……..
.
—” তোর এত উত্তর প্রয়োজন কেন হয় সেটাই বুঝিনা আমি, আর কোনো কথা না বলে চুপচাপ রেডি হয়ে নিচে আয়……
.
আম্মু কথা গুলো শেষ করেই আমাকে কোনো রকম কথা বলতে না দিয়ে হনহন করে হেটে নিচে চলে যায়,
আম্মুর এমন হঠাৎ মনোভাবটা বুঝতে পারিনি আমি তাই আম্মুর যাওয়ার দিকে ঠোঁট উলটিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আস্তে করে উঠে রেডি হয়ে নেয়,,,,,
.
আমি রেডি হয়ে গুচগাচ করে নিচে ড্রয়িংরুমে আসি আমাকে আসতে দেখে ভাবি হাসি মুখে আমার দিকে এগিয়ে আসে আমার একপাশে ধরে সবার সামনে নিয়ে যায়,, ড্রয়িংরুমে সোফায় রুদ্রের সাথে আমার আব্বু আর ভাইয়াও বসে আছে, আমাকে আসতে দেখে রুদ্র আমার দিকে কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে পরে ভাবি আমাকে রুদ্রের পাশে বসিয়ে হালকা কেশে রুদ্রকে খুচা মারতেই রুদ্র নড়েচড়ে ওঠে ঠিক করে বসে লাজুক হেসে,,,
.
আমি বসতেই রুদ্র উঠে দাঁড়িয়ে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দ্রুত, কোথায় যাওয়ার জন্য তাড়া দিতেই আমার পরিবারের কেউ আর অমত করেনি এতে, আমিও বিনা বাক বয়ে চুপচাপ রুদ্র পিছন পিছন হেটে গাড়িতে উঠে বসি নিরবে, আমাকে বসতে দেখে রুদ্রও ডাইভিং সিটে বসে পরে,,,,,,,
.
রুদ্রের সাথে গাড়িতে বসে আমি চুপচাপ থাকার কারণে রুদ্র বেশ কয়েক বার আমার দিকে তাকায়, রুদ্রের এমন করে তাকানোতেও আমার কোনো হেলদোল না দেখতে পেয়ে রুদ্র ভ্রুঁ কুঁচকে বলে উঠে…..
.
—” তোমার কি আমার সাথে কোথাও যেতে সমস্যা আছে থাকলে বলতে পারো নিরদ্বিধায়…..
.
রুদ্রের কথায় আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় রুদ্রের দিকে পরে স্বাভাবিক কন্ঠে বলে উঠি……
.
—” নাতো কোনো সমস্যা নেই, আপনার এমনটা কেন মনে হচ্ছে,,,,,
.
—” না তুমি চুপচাপ তো থাকো না সচারাচর কখনোই কিন্তু এখন আছো তাই আকস করলাম আরকি, আর সত্যিই সমস্যা হচ্ছে না তো তোমার…..
.
রুদ্রের এমন কথায় সত্যিটা লুকিয়ে হালকা হেসে ওঠে স্বাভাবিক কন্ঠে বলে উঠি……..
.
—” সত্যি হচ্ছে না কোনো সমস্যা আর আমি কিন্তু সবসময়ই বিন্দাস থাকি জানেন সেটা আপনি তাই না…….
.
আমাকে হাসতে দেখে রুদ্র আহত সুরে বলে উঠে….
.
—” উফফ এইতো এটাই আমার মায়ুপাখি, এতক্ষণ চুপচাপ থাকার কারণে হারিয়ে গিয়েছিল কিন্তু এখন আবার ফিরে এসেছে আমার কাছে, তুমি জানো তোমার এই চঞ্চলতাটা কতটা মন কারে আমার, তোমার এই চঞ্চলতায় আমি প্রথম দেখায় তোমার প্রেমে পরে যায় আর এক বছর আগে, তোমার পছন্দ করার সাথে সাথে এসে রিদকে বলি তোমার কথা, ওহ তখন আমাকে কিছুই বলেনি চুপচাপ আমার কথা গুলো শুনে গিয়েছিল, আর আমি বলে গিয়েছিলাম তোমার কথা, তুমি জানো সেই মূহুর্তেটা আমার কাছে কতটা শুভনীয় ছিল,,,,
.
রুদ্রের এমন কথায় আমি চমকে উঠে সাথে সাথে প্রশ্ন করে বলি…….
.
—” মানে…….
.
—” মানে টাই তো বলবো আজ একটু অপেক্ষার করো তুমি আমার না বলা কথা গুলো সবটা বলতে চাই তোমাকে……
.
—-” হুমম আমিও বলতে চাই না বলা কথা গুলো….
.
—” তাই ম্যাডাম কি বলতে চাই শুনি, ম্যাডাম কি আমার প্রেমে পরা টাইপ কোনো কিছু হুমমম,,,, (দুষ্টমী করে হেসে)
.
—” যদি বলি তার থেকেও বেশি কিছু……..
.
—” তাই, তোমাকে পাওয়ার থেকে বেশি কিছু আমার লাইফে কোনো কিছুই নেই তুমিটা আমার কাছে বেস্ট, তারপরও যদি তুমি বলো আমি শুনবো সেটা….
.
—” হুমমম
কথাটা বলে আমি আস্তে করে ঘাড় ঘুরিয়ে বাহিরের দিকে তাকায় অনুভূতি শূন্য চোখে, কিছু ভালো লাগছে না আমার সবকিছু কেমন ধোঁয়াসা ধোঁয়াসা লাগছে আমার কাছে মনে হচ্ছে আমি কোথায় গোলক ধাঁধাঁর ফেঁসে আছি বাজে ভাবে, আর এখন যেটা হচ্ছে সেটা ঠিক না সবকিছু পিছনে বড় কিছু সত্যি লুকিয়ে সেটা যেটা আমার চোখের সামনে হচ্ছে না বাহিরের হচ্ছে,,,,,
.
(কাল নেক্সট পার্ট দিব)
.
চলবে……..
.
.