#তপ্ত ভালোবাসা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_৬৪
.
🍁
মেহেদী স্টেজে বসে আছি আমি। চারপাশে বন্ধ মহল থেকে শুরু করে মেহমান মহল পযন্ত ভরপুর হয়ে আছে আমার চারপাশে। কাল দুই দুইবার নিজের হলুদ পর্বটা চুকিয়ে আজ মেহেদী স্টেজে বসেছি আমি মেহেদী লাগাতে। মেহদী, হলুদ, সংগীত অনুষ্ঠান, তিন দিনে রাখা হয়েছে কারণ রুদ্রের পরিবার চাই তিনটা আলাদা ভাবে হোক আর ঝাঁকঝঁমকপূণ ভাবে হোক। তাদের কথা অনুযায়ী সাজানো হয়েছে সবকিছু সেই সাথে বিয়ে বাড়ি ডেকোরেশনও। আর আমি কার রঙ্গে সেজেছি তা সঠিক বলতে পারবো না তবে খুব সম্ভবত রিদ খানেই দেখা হবে আজকে এই সাজটা। কারণ কালকের মতো আজকেও আমাকে সিম্পল ভাবে সাজানো হয়েছে। বাঙালী স্টাইলে ডালা ভাবে একটা সবুজ শাড়ী পড়ানো হয়েছে আমাকে আজ সবুজ গহনা সাথে। আমার দুহাত ভরপুরে মেহেদী পুড়িছে মেহেদীমেয়ে। আমি দু-হাতে ভরপিন্ড করে মেহেদী পড়ে স্টেজে বসে আছি আর গোল গোল চোখে সবার ব্যস্ততা লক্ষ করছি। রাত প্রায় তিনটা ছুঁই ছুঁই বাচ্চা পাটি সবাই ঘুমিয়ে পরছে এতক্ষণে, তেমন একটা জেগে নেই কেউ হাতে গুনা দুই একটা ছাড়া। বাকিরা সবাই বড়জন জেগে রয়েছে। আরিফ ভাইয়া, আব্বু সাথে সাব্বির ভাই মিলে আত্মীয় স্বজনদের দেখা শুনা করছে কার কি লাগবে সেটা নিয়ে। আর ভাবি কিছুক্ষণ পর পর এসে ভাইয়াকে দেখা শুনা করছে সাথে ওদের সবাইকে খাবার দিয়ে যাচ্ছে। আর বাকি রইলো আমার আম্মু আম্মু কথা কি বলবো। আমার আম্মু হলো এই বিয়ে বাড়িতে মহা ব্যস্ত মানুষ উনি সবাইকে নিজেদের কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছে আর বকবক করেই যাচ্ছে। এটা ঠিক হচ্ছে না, ওঠা ঠিক হচ্ছে না। উনার মেয়ে বিয়েতে সবাই ঝামেলা করতে চাচ্ছে কেউ মন দিয়ে কাজ করছে না ইত্যাদি। আম্মু এতো সব বকবকানির মধ্যে আব্বু বেচারা একটা কথাই বলে থাকে,,, “হবে তো আরিফের আম্মু এতো চিন্তা করো না ”
.
আব্বুর এমন উক্তিতে আম্মু যেন আরও তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে,, আম্মু একটাই কথা উনার মেয়ের বিয়েতে কি একা আম্মুর সব দ্বায়িত্ব আব্বুর কি কোনো দ্বায়িত্ব নেই? আব্বু নম্রতার জন্য সবাই কাজে এতো এতো ভুল করছে, আর এখন কি ভুল করার সময়? আর সবসময় কি এতো নরম হয়ে চলতে হবে আব্বু? কিছু সময় কঠোর হলেতো পারে তাই না? আম্মুর এমন সব কথায় আব্বু একগাল হেঁসে বলে,,, হবো তো কঠিন! এইতো এক্ষুনি হচ্ছি কঠিন আমি তুমি দেখো! কথা গুলো বলেই আব্বু আমার পাশ কেটে চলে যায় অন্য দিকে। আর এতে করে আম্মু আরও রাগে ফেটে পড়ে কারণ আম্মু বুঝতে পারে আব্বু আম্মুকে এড়িয়ে চলে গেছে,,,,
.
আমি আব্বু আম্মু খুনসুটি রাগ দেখে মূহুর্তে মিষ্টি হেসে উঠি। স্বামী স্ত্রী মধ্যে ভালোবাসাটাই এমন হয় আমার হবে রিদ খানে সাথে। আমি ঝগড়া করছো রিদ খানের সাথে! উনি আমাকে মিষ্টি করে ভালোবেসে মানাবে। আমাদের মধ্যেও ভরপুর ভালোবাসা থাকবে। কথা গুলো ভেবেই মূহুর্তে আমি লাজুক হাসি। উনাকে (রিদ) নিয়ে ভাবতে ভালো লাগছে আজ কাল আমার। নিজের এমন চিন্তা ভাবনা মাঝেই তাৎক্ষনিক চমকে উঠি আমি নিজেকে নিয়ে। কারণ আর একদিন পর আমার বিয়ে রুদ্রের সাথে আর আমি রিদ খানকে নিয়ে সুন্দর একটা সংসার সাজানো স্বপ্ন দেখছি। কিন্তু কেন? আমার মন কি তাহলে রিদ খানকে স্বামী হিসাবে মেনে নিয়েছে? আমি তো রিদ খানের বিয়ে করা বউ! তাহলে আমি কোন আশায় রুদ্রের নামের মেহেদী নিজের হাতে লাগাচ্ছি? এটা আমি কেন করছি? বিয়েটা কোনো ছেলে খেলা নয়! আমার যেই ভাবেই রিদ খানের সাথে বিয়ে হয়ে থাকুক না কেন বিয়েটা হয়ে উনার সাথেই তাই না। আমি তো উনার বিয়ে করা বউ তাই না। আমি কথা গুলো ভেবে সাথে সাথে নিজের হাতে দিকে ঘাড় দৃষ্টি ফেলে নিজেই নিজের বলি……
.
—” না আমি রুদ্রে নামের মেহেদী রাখবো না আমার হাতে। এক্ষুনি ধুয়ে ফলবো এইসব মেহেদী।
.
কথা গুলো বলেই কাউকে কিছু না বলে উঠে দাড়িয়ে মেহেদী হাত দুটো নিয়ে হনহনিয়ে হেঁটে চলে আসি নিজের রুমের দিকে। উদ্দেশ্য রুদ্র নামের সব মেহেদী ধুয়ে ফলবো নিজের হাত থেকে। আমাকে স্টেজ থেকে নামতে দেখে, সাথে কাউকে কিছু না বলে রুমের দিকে যেতে দেখে পিছন থেকে শিলা ডাকতে থাকে কোথায় যাচ্ছি জানার জন্য। আমি শিলাকে কোনো রুপ উত্তর না দেওয়ায় শিলাও আমার পিছন পিছন আসতে থাকে ডাকতে ডাকতে। আমি রুমে ঢুকেই সোজা নিজের বাথরুমে চলে যায় মেহেদী ধুয়ে ফেলার জন্য। বাথরুমে ঢুকে ঠাস করে বাথরুমের দরজা বন্ধ করে দেয় শিলার মুখের ওপর। আমার এমন হঠাৎ অথহীন আচরণে চমকিত হয় শিলা। তাই হতাশ জনক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে বাথরুমের বন্ধ দরজা দিকে। আর আমি বাথরুমের পানির টেপ ছেড়ে দিয়ে নিজের হাত দুটো ধুয়ার জন্য ওপরে তুলে ধরি চোখে সামনে। এক পলক সম্পূণ মেহেদী দিকে তাকিয়ে থেকে ধুতে যাবো তার আগেই চোখে পড়লো বিশেষ একটা লেখা। লেখাটি চোখে পড়তেই চোখে সামনে তুলে ধরে ভালো করে দেখতে থাকি। লেখাটি ওপর ঘাড় দৃষ্টিতে তাকাতেই হকচকিয়ে গেলাম আমি। কারণ আজ আমি রুদ্রের নামের নয় উনার(রিদ) নামের মেহেদী পড়েছি হাতে। আমার দুই হাতেই মেহেদী ভিতর খুব সুন্দর করে রিদ খানের নাম লেখা আর এটা হয়তো উনি নিজেই মেয়েদের দিয়ে লিখিয়েছেন। এক চিত্তের প্রশান্তির হাসি ফুটে ওঠে আমার ঠোঁটে। আমি মূহুর্তেই তৃপ্তির হাসি হেসে কিছু একটা চিন্তা করে বেড় হয়ে যায় বাথরুম থেকে মেহেদীটা আর না ধুয়ে। আমি বাথরুম থেকে বেড় হতেই মূহুর্তে কপাল কুঁচকে এলো চোখে সামনে পঞ্চ বান্ধবীকে দেখে। পর পর পঞ্চ বান্ধবীর ঘাড় দৃষ্টি আমার ওপর দেখে আমি কপাল কুঁচকে প্রশ্ন করে বলি……
.
—” কি সমস্যা তোদের? এইভাবে তাকিয়ে আসিস কেন তোরা? আমার ঘাড়ে কি নতুন কোনো মাথা গজিয়েছে নাকি হুমম?
.
আমাকে তেড়া প্রশ্ন করতে দেখে মূহুর্তেই বোকা বনে গেল শিলা। অকারণে আমার অজেপাড়া টাইপ কথার মানে বুঝতে না পেরে পাল্টা প্রশ্ন করে বললো……
.
—” আমাদের সমস্যা হতে যাবে কেন? সমস্যা তো তোর? তুই কাউকে কিছু না বলে হুট করে রুমে চলে আসলি। তারপর আবার আমি পিছন থেকে এতোবার ডাকলাম একটাবার শুনার প্রয়োজন বোধও করলি না!
.
শিলার মুখে দিকে এক পলক তাকিয়ে আমি আস্তে করে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে বসতে বসতে বলে উঠি………
.
—” ওহ! না প্রয়োজন মনে করেনি তাই উত্তর দেয়নি তোকে। এখন বল কেন ডেকেছিস? আর তোরা সবাই একসাথে আমার রুমে হঠাৎ হামলে পড়ার কারণটা কি সেটা বল?
.
আমার ধাঁজ পূণ কথায় মূহুর্তে চুপ করে যায় শিলা। এরপর আমাকে আর কি বলবে সেটা না ভেবে না পেয়ে বোকার মতো তাকিয়ে থাকে। আমার হঠাৎ বিগড়ে যাওয়া মেজাজটা বুঝতে পেরে রুপা এগিয়ে আসে আমার দিকে চোখে ইশারায় সবাইকে চুপ করতে বলে পিছন থেকে নিজের দুহাত রাখে আমার কাঁধে। পরে আয়নায় আমার মুখে দিকে তাকিয়ে নরম সুরে বলে উঠে…….
.
—” কি হয়েছে তোর? কোনো সমস্যা হচ্ছে কি তোর? আমাদের না বললে বুঝবো কিভাবে কি হয়েছে তোর? সবকিছু না বলিস অন্তত রাগের কারণটা বল? এমন করছিস কেন সেটা?
.
রুপার নরম সুরের কথা গুলোর সাথে সাথে আমি নিজের হাতে কানের দুল গুলো খুলতে খুলতে স্বাভাবিক বগিতে শক্ত কণ্ঠে বলে উঠি…..
.
—” আমার আসিফকে চাই। তাও আজকে রাতের মধ্যেই যেকোনো মূল্যে। তোরা আসিফকে এনে দেওয়ার ব্যবস্হা কর।
.
আমার কথা গুলো যতটা স্বাভাবিক ছিল আমার কাছে। ততটাই অস্বাভাবিক ছিল আমার পঞ্চ বান্ধবীদের কাছে। আমার কথা গুলো শেষ করার সাথে সাথেই কানে প্রতি ধ্বনি তোলে আমার পঞ্চ বান্ধবীরা এক সাথে। উচ্চ স্বরে চিৎকারে বলে উঠে…….
.
—” কিহ….?
.
ওদের অনাকাঙ্ক্ষিত চিৎকারে বিরক্তি প্রকাশ পাই আমার ফেসে। আমি বিরক্তি নিয়ে তাকাই আয়না দিয়ে সবার দিকে। তখনো আমার পঞ্চ বান্ধবীদের আশ্চর্য হওয়ার ধাপটা ছিল সবোচ্চ দেখে মনে হচ্ছে এক একটা শকটের কারণে কোমায় চলে যাবে এক্ষুনি। আমি বিরক্তি নিয়ে ওদের দিকে তাকাতেই শিলা, সাজি,মাহি, রাঁখি বাকিরা সবাই দ্রুত এগিয়ে আসে আমার দিকে। রুপার বরাবর দাঁড়িয়ে আয়নায় আমার ফেঁসে দিকে তাকিয়ে থেকে উত্তেজিত হয়ে সাজি আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে……
.
—” দোস্ত তুই কি রুদ্র ভাইয়াকে ছেলে আসিফকে ভালোবাসতে শুরু করেছিস?
.
সাজি কথাটা শেষ করতে না করতেই পাশ থেকে মাহি পাল্টা প্রশ্ন করে বলে উঠে……..
.
—” দোস্ত তুই কি বাই এনি চান্স আসিফ নিয়ে পালাতে চাস বিয়ে থেকে তাও আজকে?
.
মাহির সাথে পাল্লা দিয়ে রাখি বলে উঠে…..
.
—” দোস্ত তোরা কি একে অপরের সাথে রিলেশনশিপে আছিস নাকি?
.
প্রত্যেকে এমন গাঁজাখোরী টাইপ কথা বাতা শুনে মূহুর্তে বিরক্তি সাথে সাথে অসয্য লাগে আমার। আমি জানি এদেকে কিছু বললে সেটা ওরা অনেক বড় আকারে ধারণ করায় সবসময়। আর এই কারণেই কখনো কিছু শেয়ার করতে চাই না। আমি কি এমন বললাম ওদের যার কারণে আমাকে আসিফে সাথে বিয়েটা পযন্ত করিয়ে দিচ্ছে। এক কথা সবসময় দুটো দিক হয়। একটা পজিটিভ একটা নেগেটিভ দিক। ওরা আমার কথাটার নেগেটিভটা চিন্তা করছে যেটা সম্পূর্ণটা মিথ্যা। আমি ওদের কথায় রিয়াকশন আকারের নাক মুখ হিচকে তাকায় সবার দিকে যার অর্থ আমার মোটেও পছন্দ হচ্ছে না ওদের কথা গুলো। আমি রেগে নাক মুখ শক্ত করে বলে উঠি……
.
—” চুপ করবি তোরা সবাই। আমার আসিফের সাথে কিছুই নেই। আমার আসিফকে চাই অন্য একটা কারণে তাও রিদ খানের অগোচরে।
.
আমার এমন কথায় স্বস্থির নিশ্বাস ফেলে সবাই। এতক্ষণে দমটা যেন আটকিয়ে ছিল সবার। আমার কথায় স্বস্থির হয়ে মাহি বলে উঠে……
.
—” যাক বাবা আল্লাহ সহায় ছিল! আমিতো মনে কিনা কি মনে করেছি? তোর কথায় এমন ছিল। আমার আসিফ চাই তাও আজকের রাতের মধ্যে। এইভাবে কেউ বলে নাকি উফ! আচ্ছা শুন আসিফের নাম্বারটা এক্ষুনি এনে দিচ্ছি আরিফ ভাইয়া থেকে তুই কথা বলে নিস এখানে আসার জন্য….
.
মাহির কথায় আমি গলার থেকে গহনা গুলো খুলতে খুলতে স্বাভাবিক বগিতে বলে উঠি…..
.
—” আমার ফোনে আছে আসিফের নাম্বারটা।
.
পাশ থেকে রুপা বলে উঠে….
.
—” তাহলে বসে আছিস কেন কল করলেই তো পারিস আসিফকে।
.
কথাটা বলে আমার ফোনটা হাতে তুলে নেই রুপা আসিফকে কল করার জন্য। রুপাকে ফোন হাতে নিতে দেখে আগের নেয় বলে উঠি……
.
—” আসিফকে কল করলেও কোনো কাজ হবে না। কারণ রিদ খান আসিফকে আসতে দিবে না কোনো ভাবেই।
.
—” কেন আসিফের এখানে আসার সাথে রিদ খানের কি সম্পর্ক? (কৌতুহলী হয়ে রাঁখি)
.
রাঁখি কথায় আমি উঠে দাড়িয়ে আমি নিজের বিছানা ওপর পা ঝুলিয়ে বসতে বসতে বলে উঠি…..
.
—” কারণটা খুবই সিম্পল। আমি রিদ খান খানকে ভালোবাসি। তাই রিদ খান আমার কাছে আসিফকে আসতে দিতে চাই না। রিদ খানের ধারণা আমি আসিফকে পটিয়ে রিদ খান অবধি পৌঁছাবো। আর সেটাই সত্য আমার আসিফকে রিদ খানের সম্পর্কে জানতেই চাই এখন…….
.
.
( আমার দেরী করা গল্প নিয়ে সবাই হতাশ জানি। কিন্তু ব্যবস্তাটা ও প্রচুর। রোজ দেয়ার চেষ্টা করবো গল্পটা শেষ না করা পযন্ত। নেক্সট পাট আজ রাতে দিব)
.
.
.
চলবে……….