তপ্ত ভালোবাসা #লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া #পর্বঃ_৭০

0
137

#তপ্ত ভালোবাসা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_৭০

🍁
ঠাসসসস, থাপ্পড়ে উচ্চ স্বরে মূহুর্তেই কেঁপে ওঠে ভরা সদস্য ঘরময়। চারপাশে রাগে ফেটে পড়া সদস্যরাও মূহুর্তে স্তব্ধ হয়ে যায় হঠাৎই উচ্চ স্বরে থাপ্পড়ের কারণে। থাপ্পড় দেয়ার যথেষ্ট কারণ থাকলেও এই মূহুর্তে কেউ হঠাৎ এই থাপ্পড়ে আশায় ছিল না। অবাঞ্চিত এই থাপ্পড়টি খেয়ে মূহুর্তে মুখ থুবড়ে পড়ে রিদের বুকের ওপর মায়া। মায়ের হাতে জীবনের প্রথমবারের মতো থাপ্পড় খেয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠে রিদের বুকেই মায়া। মিসেস আয়েশা (মায়ার মা) যেন রাগে ফেটে পড়ছেন কিছুক্ষণ আগের মায়ার করা কান্ড ও কথা গুলো মনে করে। রাগে রি রি করছে সমস্ত শরীর উনার এই মূহুর্তে ইচ্ছা করছে মায়াকে আরও দশটা থাপ্পড় কষে গালে দিতে আর জিগ্যেসা করতে যে কি করে এমন একটা কাজ করতে পারলো সবার সাথে? কিছু কি কমতি রেখেছিল কোনো কিছুতে? তাহলে কিসের জন্য এতোসব কুৎসিত কান্ড ঘটালো? উনার এই মূহুর্তে নিজেকেও দোষী মনে হচ্ছে যে উনি এমন একটা মেয়ের মা। তিনি মায়ার মতো একটা মেয়েকে পেটে ধরেছে। যদি তিনি জানতো মেয়ে বড় হয়ে এমন কিছু করবে তাহলে হয়তো তিনি কখনোই মায়াকে জম্ম দেওয়ার চিন্তা ভাবনাও করতেন না। মায়া রিদের বুকের ওপর পড়তেই রিদ দু’হাতে মায়াকে আঁকড়ে ধরে শক্ত হয়ে দাড়িয়ে থাকে জায়গায়। রিদের মোটেও পছন্দ না কেউ মায়ার গায়ে হাত তুলুক হোক সে তার আপন মা-ই না কেন? কিন্তু পরিস্থিতি দায়ে পড়ে বাধ্য হয়ে চুপ থাকতে হচ্ছে রিদকে। কারণ এই মূহুর্তে রিদের চুপ থাকাটায় হয়তো রিদের স্বাথ হাছিল হবে। কারণ মায়া ও রিদ সমান ভাবে অপরাধী এই মূহুর্তে পরিবারের প্রত্যেকটা মানুষের কাছে বিশেষ করে রুদ্র কাছে। রুদ্র প্রাণীহীন প্রাণীর মতো করে হাঁটু গেড়ে ফ্লোরে বসে আছে ভাবলেন্স হয়ে। কিছুক্ষণ আগে ঘটনা নিয়ে পাথর মূতি মতো বসে আছে………..

.
কিছুক্ষণ আগে……….
.
লাল বেনারসি পরিহিতা হয়ে লাল টকটকে বউ সেজে বসে আছে মায়া। উচ্চ সাজগোজ এর সাথে বেশ অলংকার পরিয়ে রাজকীয় ভাবে সাজিয়েছে মায়াকে। মায়া মন্ত হয়ে পাথর মূতির মতো নিজের রুমে বসে আছে বর যাত্রীর অপেক্ষায় অনূভুতি শূন্য হয়ে কৌটায় তার। বাড়িবর্তী মেহমানরা হুইছই আর ডোল পটাচ্ছে আনন্দে বিয়ে বাড়ি বলে কথা। এই সব আনন্দের সাথে পাল্লা দিয়ে মায়ার পঞ্চ বান্ধবীরাও মেতে উঠেছে নানান সব ব্যস্তায়। মায়ার কষ্টটা যেন হঠাৎ করেই তাদের চোখে পড়েও পরছে না ব্যস্ততার তাগিদে। তাদের ধারণা হয়তো মায়ার সাময়িক সময়ের জন্য মন খারাপ বিয়ের জন্য যেমনটা প্রতিটা মেয়েরই হয়ে থাকে বিয়ে সময়। ভুল ধারণা পোষণ করে মায়ার পঞ্চ বান্ধবীরা ব্যস্ত হয়ে ওঠে মায়ার মাকে অন্য সব কাজে সাহায্য করতে। মায়ার প্রতি কারও লক্ষ না তাকায় একাই বসে থাকে রুমের ভিতর মায়া। একটা সময় সবার উচ্চ চিৎকার ধ্যান ভাঙ্গে মায়ার। বর এসে, বর এসে, কড়া চিৎকারে হঠাৎ মায়ার ভিতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে ভয়ে। আর কিছুক্ষণ বাদেই রুদ্রের সাথে বিয়ে। কিভাবে কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না মায়া। কিভাবে সবার সামনে নিজের মুখ খুলবে সেই ভয়ে এখনো মায়া সিটিয়ে আছে। আর যদি চুপ থাকে তো রুদ্রকে বিয়ে করতে হবে কিন্তু সে তো বিবাহিত! রিদকে তো সে ভালোবাসে রিদকে ছাড়া কি সে থাকতে পারবে? আজ তার সাথে রুদ্র বিয়েটা হওয়ার পর পরই তো রিদ খানের সাথে নিধি আপুর বিয়েটা হয়ে যাবে। তারপর সারাজীবনের মতো তাঁকে রিদ খানকে ভুলে থাকতে হবে চাইলেও সে কিছু করতে পারবে না। এখনো বা কি করবে তার হাত যে বাঁধা তার পরিবারের জন্য? যদি মায়া এখন কিছু করতে চাই তো তার বাবা- মা ভাইয়ের সম্মান নষ্ট হবে সমাজের সামনে। সমাজের মানুষ আঙ্গুল তুলবে তার পরিবারের ওপর সে মেয়ে হয়ে সেটা কিভাবে করবে? সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে তার মা! মায়ার মা তো এই বিয়েটা নিয়ে অনেক স্বপ্ন সাজিয়েছে অনেক আশাও তাহলে সে কি করে বলবে, মা আমি এই বিয়ে করতে পারবো না। আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি। না সে কখনোই পারবে না নিজের মাকে এমনটা বলতে। কথা গুলো ভেবেই মায়া ডুকরে কেঁদে ওঠে শব্দ বিহীন। নিজের ভালোবাসার মানুষটার জন্য বাঁধ ভাঙ্গা চাপা কান্না বেড়িয়ে আসছে ভিতর থেকে। বুক ফাটা আতৎনাত নিয়ে আস্তে করে উঠে চলে যায় নিজের রুমের জ্বালানার পাশে। আড়ালে দাঁড়িয়ে জ্বালানা দিয়ে এক পলক দেখে নেই বর যাত্রীদের। রুদ্র ঠোঁটে লেগে থাকা মুক্ত হাসিটা দেখে ঠোঁটে কামড়িয়ে কেঁদে ওঠে মায়ার। রুদ্র তো কোনো দোষ নেই এখানে তারপর রুদ্র শাস্তি পাবে বিনা অপরাধে যেটা মৃত্যুদণ্ড চেয়েও ভয়াবহক। মানুষকে একেবারে মারাটা সহজ কিন্তু বাঁচিয়ে রেখে তিলে তিলে মারাটা দুনিয়ার ভয়ানক মৃত্যুদন্ড। কিন্তু তারপরও রুদ্রকে সেই সত্যিটা জানতে হবে। তার আগে রিদ খানের সাথে শেষ একটা বার দেখা করে তারপর না হয় রুদ্র সাথে কথা বলবে। মায়া এমন সব চিন্তা ভাবনা করে চারপাশে অস্থির চোখ বুলাই রিদ খানকে খুঁজার জন্য। কিছুক্ষণ অস্থির চোখে বুলিয়ে অবশেষে দেখতে পাই রিদ খানকে। নীল সুট পরিহিত সাদা দিয়ে দেখতে যেন আজ একটু বেশিই সুন্দর লাগছে, এক দৃষ্টিতে সেই দিকে তাকিয়ে থাকে মায়া আড়াল থেকে। রিদ এর পাশে নিধি নামের মেয়েটিও হাঁটছে পাশাপাশি। মায়া সেটি দেখে নিরবে চোখের এক ফোটা জল গরিয়ে পরে। রিদ বাড়ি ভিতর ঢুকতে ঢুকতে আস্তে করে চোখ তুলে তাকাই মায়ার রুমের জ্বালানা দিয়ে। জালানার পাশে হালকা আবছায়া লাল শাড়ি পড়া মেয়ে দেখে মূহুর্তে থেমে যায় রিদ। দুইজনে চোখাচোখি হতেই মায়া আস্তে করে আড়ালে চলে যায়। মায়াকে আড়ালে যেতে দেখে রিদও চুপচাপ সেখান থেকে চলে যায় মানুষের ভিড়ে। মায়া রুমে এসে কিছু একটা ভেবে নিয়ে ছোট একটা পিচ্চিকে ডেকে এনে বুঝিয়ে ছোট একটা কাগজে লিখে সেটা দিতে বলে রিদকে চুপিসারে। সেই কাগজ হাতে বাচ্চাটি পৌঁছায় রিদের সামনে পরে হাতে থাকা কাগজটি রিদের হাতে তুলে দিয়েই দৌড়ে চলে যায় সেখান থেকে রিদকে কিছু বলতে না দিয়ে। কপাল কুঁচকে কাগজ কিছুক্ষণ দেখে উল্টিয়ে পড়ে বুঝতে পারে এটি মায়া পাঠিয়েছে তাঁকে। মায়ার সাথে দেখা করার জন্য। রিদ কাগজটি হাতে নিয়ে সোজাসুজি চলে যায় মায়ার রুমের দিকে রিদের মাথায় কি চলছে? সেটা মায়ার অজানা থাকলেও! রিদের পূব প্রস্ততি ছিল সবটাই । রিদ রুমের ঢুকতেই চমকে উঠে মায়া দ্রুততার সঙ্গে রুমের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে পিছন ফিরে তাকায় রিদের দিকে। রিদ কপাল কুঁচকে মায়ার দিকে তাকিয়ে থাকে আসলে মায়া কি করতে চাইছে সেটা বুঝার চেষ্টা করে। মায়া রিদের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিজের মধ্যে ভয় সংযম রেখে বলে উঠে……..

.
—” আপনি এখানে এসেছেন যে কেউ দেখেনি তো?

.
মায়ার এমন উক্তিতে বিরক্তি প্রকাশ পাই রিদের মধ্যে। রিদ বিরক্তি নিয়ে বলে উঠে…….
.

—” দেখার ভয় থাকলে ডেকেছো কেন?

.
রিদের কথায় পিষ্টে দুই কদম এগিয়ে সাথে সাথে বলে উঠে…….
.
—” কথা ছিল আপনার সাথে তাই….

.
মায়ার এমন কথায় মূহুর্তে একটা ভ্রুঁ কুচকে রিদ বলে….
.
—” তা কি এমন কথা যে নিজের বিয়ের থেকেও জরুরী?

.
রিদের দায়সারা ভাব উত্তরে মন খুন্ন হয় মায়ার। তাই রিদকে উদ্দেশ্য করে নরম সুর বলে উঠে…..
.

—” আপনি আমার সাথে এমন করে কথা বলছেন কেন?

.
মায়ার কথায় এবারও রিদ সোজাসাপ্টা উত্তরের বললো…..
.

—” তুমি করতে বাধ্য করছো তাই……
.

রিদের কথার মানে বুঝতে পেরে মায়া অসহায়ত্ব নিয়ে বলে উঠে……
.

—” আমি কি করবো আমি যে অসহায় হয়ে পড়েছি পরিবারের কাছে। তাদের জন্য হলেও রুদ্রকে বিয়েটা করতে হবে।

.
মায়ার এমন কথায় মূহুর্তে মেজাজ খারাপ হয় রিদের। এখানে তিন তিনটা জীবন নষ্ট হয়ে যাবে। আর সে বলছে সে অসহায় পাগলামি একটা লিমিট থাকে। সবকিছু কি পাগলামি চলে? তাই সেও রাগে দাঁতে দাঁত পিষে বললো….

.
—” তো করো বিয়ে! আমাকে কেন বলছো এসব?

.
রিদকে রাগতে দেখে মূহুর্তে চুপ করে যায় মায়া। নিজের কথাটা ঘুরিয়ে নিয়ে প্রশ্ন সিক্ত কন্ঠে আস্তে করে আবারও বলে উঠে…..
.

—” এমনি! একটা কথা বলবো উত্তর দিবেন সত্যি করে……

.
রিদ মায়াকে কথা ঘুরাতে দেখে সেও চুপ করে যায়। রিদ দেখতে চাই মায়া আর কি কি করতে চাই? তাই সেও কোনো রকম বনিতা ছাড়াই আস্তে করে বললো….

.
—” হুমমম?
.
রিদের সুমতি পেয়ে মায়া সোজাসাপ্টা ভাবে বলে উঠে…..
.

—” ভালোবাসেন আমাকে এখনো আগের মতো?

.
মায়ার এমন কথায় বিন্দু মাত্র ভাবান্তর ঘটেনা না রিদের মাঝে। রিদকে দেখে মনের হচ্ছে আগের থেকে জানতো মায়া এমন কিছু বলতে পারে। তাই রিদ কি না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে জায়গায়….
.
.
—” (নিস্বচুপপপপ)
.
রিদকে চুপ থাকতে দেখে মায়া আবারও বলে উঠে…..
.
—” বলুন না…..
.
মায়ার আপেক্ষিক কন্ঠে রিদ নাহুচ সুরে বললো…..
.

—” না….
.

রিদকে না করতে দেখে মায়াও জেদ্দি সুরে বললো….

.
—” মিথ্যা কেন বলছেন আমাকে?
.
মায়ার এমন কথায় রিদ নিজেকে সংযম রেখে মায়াকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে…….

.
—” সত্যিটা কোনটা এই মূহুর্তে আমার জানা নেই রিত! নিজের বউকে দ্বিতীয় বার বিয়ে দেওয়াটাকে মানুষ কি বলে বা কি বলতে পারে তাও জানা নেই? এই মূহুর্তে যে মেয়েটি আমার সামনে দাড়িয়ে আছে সে কি আমার বিয়ে করা বউ? নাকি ছোটে ভাইয়ে হবু বউ? তাও জানা নেই আমার। আমি কি আমার বউকে বলবো, বউ ভালোবাসি তোমায় নাকি অন্যের হবু বউকে বলবো সেটাও বুঝতে পারছি না। সবকিছু তোমার হাতে ছেড়ে ছিলাম আমি যে সবাইকে আমাদের বিয়েটা কথা বলতে না পারলেও অন্তত আমাকে বলতে দাও। কিন্তু তুমি তাও করতে দিলে না। এখন বলছো আমি তোমাকে ভালোবাসি কিনা সেটা বলতে রিত? আমার ভালোবাসার কি কোনো মূল্য নেই তোমার কাছে রিত? সবকিছু এতোই ছেলে খেলা তোমার কাছে?

.
উনার এমন হৃদয় কাঁপানো কথায় ভিতর থেকে নাড়িয়ে তুলে আমাকে। আমি হু হু শব্দ করে কেঁদে ওঠে দৌড়ে গিয়ে দু’হাতে শক্ত করে গলা জরিয়ে ধরি উনার। আমি উনাকে জরিয়ে ধরলেও উনি চুপচাপ ছিল আমাকে জরিয়ে না ধরে। আমি উনাকে আঁকড়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠি……
.
—” আমি কি করবো বলুন না। আমিও যে বড্ড ভালোবাসি আপনাকে। আপনাকে ছাড়া আমি নিজের নিশ্বাসটাও নিতে পারি না। আমি আপনার সাথে আপনার বউ হয়ে থাকতে চাই সারাজীবন। আপনি কিছু একটা করুন না আমি রুদ্রকে বিয়ে করতে চাই না। সবাইকে বলুন না আমি আপনার সাথে থাকতে চাই। আপনার কথা তো সবাই শুনে এবারও শুনবে, আপনি বলুন না সবাইকে আমি যে আপনার বিয়ে করা বউ সেটা। প্লিজ কিছু একটা করুন না প্লিজ প্লিজ……

.
—” যা হওয়ার তা অলরেডি হয়ে গেছে আমার আর কিছুই করার নেই।

.
—” প্লিজ এমনটা বলুন না আমি মরে যাবো আপনি হীনা। প্লিজ কিছু একটা করুন…….

.
মায়ার এমন আহাজারি কান্নায় রিদ আস্তে করে মায়াকে দু’হাতে জরিয়ে ধরে কানের কাছে ফিস ফিস করে বলে উঠে……

.
—” অলরেডি জেনে গেছে তুমি আমার বউ সেটা। আর কিছুই করার দরকার নেই আমার…..

.
রিদের এমন রহস্য মূলক কথায় চমকে মায়া। চোখে তুলে রিদের দিকে তাকাতেই দরজা উচ্চ শব্দ কানে আসে। মনে হচ্ছে কয়েক জন মানুষ মিলে দরজা ভাঙ্গার চেষ্টায় আছে সমান ভাবে। এতোটা উচ্চ শব্দে মূহুর্তেই ভয় পেয়ে যায় মায়া। এক পলক দরজার দিকে তাকিয়ে থেকে চোখে তুলে তাকাই রিদের দিকে ভিতু দৃষ্টিতে। ভয়াৎ কন্ঠে বলে উঠে…….

.
—” ওরা কি আমাদের সম্পর্কে জেনে এসেছে?

.
—-” হুমমমমম……

.

.

.
চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here