আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে #পর্ব_১৫ #লেখনীতে_প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

0
97

#আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে
#পর্ব_১৫
#লেখনীতে_প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

দেয়ালে মেরুদন্ড ঠেকিয়ে একদৃষ্টে জানালার বাইরে তাকিয়ে ছিল সুজানা। কোলের উপর সাইফের ল্যাপটপটা। অনেকগুলো ডিজাইন শেষ করে সাইফকে দেখাতে হবে আজ। পোর্টফলিও বিল্ড করতে হচ্ছে। সিবিতে পোর্টফলিওসহ দিতে হবে। আজ ক্যাম্পাসেও যায়নি সে। গতরাতের ঝড়ের কবলে পরিবেশ আজ শান্ত। জানালার ফাঁক গলে একমুঠো শান্ত রোদ এসে আঁছড়ে পড়েছে মেঝেতে। অদূরে দূর আকাশে পাখিরা যেন দলছুট খেলছে। ঘরের পর্দাটার দিকে চোখ যেতেই খেয়াল হলো পর্দা ঠেলে ঘরে ঢুকে পড়া ছেলেটিকে। একলাফে পালঙ্কে উঠে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো সুজানার পাশে। সুজানা ভুরু কুঁচকে চেয়ে রইলো।

কি হয়েছে তোর?

সায়েম ফিসফিস করে বলল

চুপ চুপ। আম্মা বেরোনোর সময় দেখে ফেলেছে।

তো এখন।

আমাকে বাঁচাবি।

মানেটা কি?

উফফ চুপ কর না।

সুজানা ল্যাপটপে মনোযোগ দিল। সাজিয়া বেগম নারিকেল শলাকার ঝাড়ুটি নিয়ে দাঁড়ালেন ঘরের পর্দা ঠেলে। বললেন

এই ভরদুপুরে টই টই করার জন্য তোর ভাই বেরিয়ে পড়ছে। ওকে সাবধান করে দে সুজানা। আমি ওকে গার্মেন্টসের চাকরিতে ঢুকিয়ে দেব। বোনে কষ্ট করছে রাতদিন আর ভাই সারাদিন বান্দরগিরি।

সুজানা সায়েমের দিকে তাকালো। বলল

ওটা আমাকে দাও। আজ থেকে মাইর আমি দেব। দেখি কি করে ঘর থেকে বের হয়।

ঝাড়ুটি ছুঁড়ে মেরে চলে গেলেন সাজিয়া বেগম। সুজানা ঝাড়ুটি দিয়ে কাঁথার উপর কয়েক বেত মেরে বলল

তুই কি শান্তিতে থাকতে দিবিনা আমাদের?

সায়েম লাফ দিয়ে বসে পড়লো। বলল

আমি কি ছোট বাচ্চা আপা? এত শাসন ভালো লাগেনা।

আশেপাশে তো শত্রুর অভাব নেই। আম্মা তাই ভয় পায়। তোর বুঝা উচিত ভাই।

আমি তো বলছি সন্ধ্যার আগেই বাসায় ফিরব। তাও কথা শোনে না। বন্ধুরা আমাকে মাম্মিস বয় ডাকে।

সুজানা ফিক করে হেসে উঠে তার চুল টেনে দিয়ে বলল

আম্মার একটাই মেয়ে আর একটাই ছেলে। তাই তো এমন করে।

সায়েম বিজ্ঞদের মতো করে বললো

হ্যা যেদিন মা হবি সেদিন বুঝবি মায়ের কেন এত চিন্তা হয়।

বলেই ভাইবোন দু’জনেই একসাথে হেসে উঠলো। পাশের ঘর থেকে আওয়াজ এল

আমি ঘুমোচ্ছি কিন্তু।

দুজনেই ঠোঁটের উপর আঙুল চেপে রাখলো। সায়েম ফিসফিস করে বলল

আপা বিয়ে খাব তোর।

সুজানা ধমকে বলল

চুপ।

আরেহ সত্যি। আম্মা মামাকে বলল তোকে বিয়ে দেয়ার পর আমরা পটিয়া চলে যাব।

ফালতু কথা। মাথা খারাপ করিস না তো।

সায়েম গলায় হাত দিয়ে বলল

তিন সত্যি। আম্মাকে বলতে শুনছি।

আম্মাকে জিজ্ঞেস করব?

না না আমাকে মেরেই ফেলবে। তোকে বলেছি বলে আমাকে মাইর খাওয়াতে হবে?

সুজানা পিঠ ঠেকিয়ে মাথা এলিয়ে দিল। আম্মাটা আজকাল তাকে না জানিয়ে অনেক কিছু করছে।

_______________

বুনো শালিকের দল উড়ে গিয়ে ইউক্যালিপটাস গাছটায় বসলো। কিচিরমিচির কলতানে মুখোরিত হয়ে উঠলো বাড়ির প্রাঙ্গন। পাখির কলতানের সাথে বাচ্চাদের হৈচৈ ও রয়েছে। মালি আর মর্জিনার সাথে কানামাছি খেলছে তারা। ড্রয়িংরুমে সীমাবদ্ধ ছিল এতক্ষণ কিন্তু খেলা জমে না উঠায় তারা বাইরে বেরিয়ে এসেছে।
খেলায় মেতে থাকা অবস্থায় গেইট ঠেলে সুজানাকে আসতে দেখে দুজনেই হৈহৈ উঠলো।

টিচার চলে ইসেছে।

দুজনেই ছুটে এল সুজানার দিকে।

সুজান সুজান আসসালামু আলাইকুম।

সুজানা মিষ্টি হেসে গাল টেনে দিয়ে বলল

ওয়ালাইকুমুস সালাম। খেলছিলেন? হাত পা ময়লা হয়ে গেছে। যান দ্রুত ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসুন।

অনা বলল

ওকে ওকে সুজান। তুমি আসো।

দুজনেই ছুটতে ছুটতে বাড়ির ভেতর চলে গেল। তাদের পেছন পেছন সুজানা। সোফায় মমতাজ বেগম বসা ছিলেন। মর্জিনা পান ধুঁকে দিচ্ছিলো হামান দিস্তায়। সুজানা বৃদ্ধাকে সালাম দিতেই উনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন

এসেছ বোন? তোমার মা ভাই ভালো আছে তো?

জ্বি দাদু। আপনি ভালো আছেন?

এইতো আল্লাহ রেখেছে। যাও আমি বড় নাতবৌকে বলছি।

সুজানা মাথা দুলিয়ে সিঁড়ি ধরতে যাবে তখনি অভিককে দ্রুত পায়ে নেমে আসতে দেখা গেল। সুজানা ওকে নামতে দেখে একপাশে গুটিসুটি মেরে দাঁড়ালো। সে সাদা ভি নেক টি শার্টের লং হাতা গুটিয়ে নামতে নামতে জিজ্ঞেস করলো

কেমন আছেন সুজানা? আপনি ক্যাম্পাসে যাননি আজ।

কেমন আছে জানতে চাইলো কিন্তু উত্তর শোনার প্রয়োজন মনে করলো না। সদর দরজা পার হয়ে গেল। সুজানা মুখ ফিরিয়ে সিঁড়িতে পা রাখতে যাবে তখনি পেছন থেকে সালমা বেগম বলে উঠলেন

এই মেয়ে দাঁড়াও। শোনো।

সুজানা উনার দিকে ফিরে তাকালেন। মমতাজ বেগমও উৎসুক হয়ে তাকালেন।

অভি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করলো না?

সুজানা মাথা দুলালো।

জ্বি।

ও তোমার স্যার লাগে না?

জ্বি।

তাহলে? স্যারকে যে সালাম দিতে হয় সেটা কি তুমি জানো না?

তন্মধ্যে আনিকা আর আনজুমা বেগম এসে হাজির।

সুজানা বোকাচোখে তাদের দিকে তাকালো।

তুমি সালাম দিলে না সেটা বাদ দিলাম। কিন্তু তুমি উল্টো ওকে কেমন আছেন সেটা জিজ্ঞেস করবে তো দূর কেমন আছেন জিজ্ঞেস করলো সেটার উত্তর দেয়ার প্রয়োজন মনে করলে না? তুমি তো দেখছি কোনো আদবকায়দা জানো না মেয়ে।

সুজানা এবার লজ্জা পেল। মমতাজ বেগম বললেন

আহা বৌমা কেন মেয়েটার পেছনে লেগেছ?

আনজুমা বেগম বললেন

ছোট মেয়েটা হয়ত অভিকে লজ্জা পায়। অনেকে স্যারের সাথে ফ্রি হয়ে কথা বলতে পারেনা। সুজানা মা তুমি যাও। আন্টির কথায় কিছু মনে করোনা।

সুজানা জোরপূর্বক মাথা দুলিয়ে চলে গেল।

সে যেতেই সালমা বেগম বললেন

আমি মেয়েটাকে ভুল কিছু বলেছি মা? আপনি আর আপনার ছেলে সারাক্ষণ আমার ভুল ধরেন কেন আমি বুঝিনা। আমি তো ভালোর জন্যই বলছি। এসব আদবকায়দা শিখিয়ে রাখা ভালো। বিয়ের পর আপনি তো আমার কম ভুল ধরেননি। বিয়েশাদি ওই মেয়েরও হবে তখন বুঝবে আমি এসব ভালোর জন্য বলেছি নাকি খারাপের জন্য বলেছি।

বৃদ্ধা চোখের চশমা মুছতে মুছতে মুচকি হাসলেন। বললেন

ওর শ্বাশুড়ি ওকে শিখিয়ে পড়িয়ে নেবে বৌমা। তুমি বরং অভি দাদুভাইয়ের বউয়ের কথা ভাবো। তাকে শিখিয়ে পড়িয়ে নিতে পারলে ভালো। সবাই তো আনিকা হয় না কিংবা সুজানা।

ওসব আপনাকে ভাবতে হবে না। আমার ছেলের বউ আমি বুঝে নেব।

বৃদ্ধার সাথে সাথে আনিকা আর আনজুমা বেগমও মুচকি হাসলেন।

________________

সুজানা রিডিংরুমের জানালা মেলে চেয়ারে এসে বসলো। ঘেমে উঠেছে সে। উফফ স্যারের সাথে উনার মায়ের কোনোদিকেই মিল নেই। কেমন কাঠখোট্টা মানুষ বাবারে। স্যারের সাথে উনার বাবার মিল আছে।

সুজান চলি আসিছি।

অনা আবিদের গলা শুনে সুজানা তাদের সাথে মিষ্টি হাসলো। দু’জনই দৌড়ে এসে চেয়ারে বসলো। চেয়ারটাতে বসে তাদের লিখতে কষ্ট হয়। তাই তাদের বসার জায়গায় ফোম দেয়া হয়েছে। সেটাতে বসে দুজনেই লাফাতে লাফাতে বলল

সুজান সুজান হোমওয়ার্ক কচচি সুন্দুল করে।

সুজানা মিষ্টি হলে গাল টেনে দিয়ে বলল

ভেরি গুড। আচ্ছা সুজান যদি আর না আসে মন খারাপ হবে?

দুজনেই পিটপিট করে চাইলো তার দিকে। খুশি হলো নাকি নারাজ বুঝা গেল না। সুজানা হেসে কিছু বলতে যাবে তখনি দরজার কাছ থেকে কেউ অনুমতি চাইলো

আসতে পারি?

সুজানা চমকে ঘাড় ঘুরালো। অভিককে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো। এইমাত্র কোথায় গেল না? এরমধ্যে চলে এল। উফফ সুজানাকে জ্বালাতে কি বেশি ভালো লাগে উনার। কোথায় ভেবেছে শান্তিতে পড়িয়ে কেটে পড়বে সে। উফফ জ্বালা!

অভিকের হাতে মোটা মোটা দুটো বই। বইদুটো টেবিলে রেখে বলল পাশের চেয়ার টেনে বসে বলল

জুনিয়র আপনারা পড়তে থাকুন। নো হাংকিপাংকি। ওকে?

দুজনেই সমস্বরে বলল

ওকে ওকে।

অভিক একটা বই সুজানার দিকে বাড়িয়ে দিল। বলল

আপনি আজ ক্যাম্পাসে যাননি। কেন?

সুজানা মাথা নেড়ে বলল

কাজ ছিল।

সে যাইহোক। আপনি দেবদাস বইটা পড়েছেন সুজানা?

হুমম।

কার জন্য বেশি খারাপ লেগেছে?

পার্বতীর জন্য।

আর দেবদাস্?

আপনি ইংলিশ ব্যাকগ্রাউন্ডের হয়েও উপন্যাস পড়েন?

হুমম। হলুদ বসন্ত পড়েছিলেন?

সুজানার চোখমুখ প্রফুল্প দেখালো।

হ্যা। ঋজু আমার খুব প্রিয় চরিত্র।

ওই উপন্যাসের কোনো উদ্ধৃতি মনে আছে?

খুব স্পষ্ট মনে আছে।

বলুন।

সুজানা নিসংকোচে বলল,

” ভালোলাগা আর ভালোবাসার পার্থক্য টা কোথায়? ভালো লাগলে মানুষ সেই ভালো লাগাকে তার ইচ্ছাধীন করে রাখতে পারে, কিন্তু ভালবাসলে মানুষ নিজেই সেই ভালোবাসার ইচ্ছাধীন হয়ে থাকে। তার নিজের কোনো নিজস্ব সত্তা থাকে না। ভালোবাসা তাকে যাই বলে পোষা পুষ্যির মতো সে তাই করে।”

অভিক তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে বলল

আপনি পুরো উদ্ধৃতিটাই মুখস্ত করে রাখলেন।

না। ওটা তো একদম সত্যি কথা। মুখস্ত করতে হয়নি।

গুড। তাহলে আমি আপনাকে যা বলব আপনি ঠিক তাই তাই করবেন আজ থেকে।

সুজানা তালে তাল মিলিয়ে বলল

আচ্ছা।

অভিক হেসে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।

সুজানা তৎক্ষনাৎ চোখতুলে পূর্ণদৃষ্টি মেলে অভিকের দিকে তাকালো বিস্ময় নিয়ে। দরজা ঠেলে তখনি মর্জিনা ঢুকে এল। টেবিলের উপর ট্রে রেখে বলল

বাবু কফি দু মগ দিছি। বাচ্চাদের জন্য চা দিছি।

থ্যাংকস আন্টি।

মর্জিনা হেসে চলে গেল।
সুজানা অপলক অনঢ় হয়ে তাকাতে দেখে অভিক হাসলো। হাত দিয়ে চেয়ার ঘুরিয়ে চায়ের মগ অনা আবিদের দিকে বাড়িয়ে বলল

আজ টিচারের সাথে চা হবে। বই খাতা বন্ধ করুন।

দুজনেই খুশিতে বাকুমবাকুম করে উঠলো। সুজানার দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচালো অভিক। মগ বাড়িয়ে দিয়ে বলল

বইপ্রেমীদের চা কফির প্রেমে পড়তে হয় সুজানা। বর্ষা বিকেলে ধোঁয়া উঠা গরম চা কিংবা কফির সাথে একটা বই। ব্যাপারটা দারুণ না? কালাম স্যারের একটা কথা আছে না? একটি ভালো বই বই যেন কিসের সমান?

সুজানা ছোট্ট করে আওয়াজ করলো।

বন্ধুর।

অভিক চেয়ার টেনে চট করে বসে গেল। বলল

ইয়েস। আর একটা ভালো বন্ধু একটা লাইব্রেরির সমান। আমার প্রশ্নের উত্তর কখন দেবেন?

কোন প্রশ্ন?

এই যাহ ভুলে গেলেন?

সুজানার মনে পড়তেই সে বলল

হ্যা মনে আছে। কিন্তু..

কোনো কিন্তু না সুজানা। আপনি প্রশ্নের উত্তরটা না দিলে তার বদৌলতে একটি লাইব্রেরি দিতে হবে। আমার লাইব্রেরী অথবা উত্তর যেকোনো একটা চাই। আপনার নিস্তার নেই। উত্তর কিংবা লাইব্রেরি দুটোর একটার বিনিময়ে আপনি বাগান পেয়ে যাবেন। একটা পেয়ে গেলে অপরটি পেতে আমার কষ্ট হবে না।

সুজানা কফির মগে ছোট্ট করে চুমুক দিয়ে হাতের উল্টোপিঠে মুখ মুছে নিয়ে ছোট্ট করে বলল

এর চাইতে ফিন্যান্স থিওরিগুলোও অনেক সোজা।

অভিক হেসে ফেলল তার কথায়। বলল

আমি যাচ্ছি আর আসছি। আপনি তারমধ্যেই আঁকিবুঁকি করে হলেও বের করুন তো আমি ঠিক কি চাইছি।

অভিক চলে যেতে উদ্যত হতেই সুজানা বলল

কিন্তু আমাকে এরকম পরীক্ষায় ফেলে লাভটা কি?

অভিক ভাবুক হলো এবার। তারপরেই চমৎকার করে হেসে হালকা ঝুঁকে ফিসফিস করে বলল

লাইফের পুরো লসপ্রফিট হিসাবের ব্যাপারটা ছোটখাটো বিষয়ের সাথে জড়িত থাকে সুজানা । মেয়েদের সিক্সথ সেন্স অনেকটা প্রখর। আপনি অযথা নিজেকে বোকা সাজাবেন না আমার সামনে। আমি খানিকটা হলেও আমাকে পড়তে পারি সুজানা আফরিদা।

সুজানা শুকনো ঢোক গিলে চেয়ে রইলো। অভিক যেতে যেতে আবার থামলো। বলল

আমি আপনাকে প্রথম দিন বলেছিলাম না? পড়া ভালো হলে আরও একজন স্টুডেন্ট পাবেন। আপনি পেয়ে গেছেন। আপনার স্যালারি আরও বাড়বে এন্ড আপনার নিউ স্টুডেন্টটাও আপনার চাইতে বড়। একটু হোমওয়ার্ক করে আসবেন বাসা থেকে। অনেক থিওরি সলভ করতে হবে তো।

সুজানা কাঁদোকাঁদো মুখ করে বসে থাকলো। কারণ ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় খুবই ভয়ানক কিছু সংকেত দিচ্ছে। খাতা কলমগুলো তার দিকে তাকিয়ে খিকখিক করে যেন হাসছে। সে কিছু আঁকিবুঁকি করতে গেলেই তারা হেসে বলবে সুজানা তুই ফেঁসে গিয়েছিস। বড্ড বাজেভাবে ফেঁসে গিয়েছিস। তোর নিস্তার নেই।

সুজানা বিড়বিড়িয়ে বলল

আমি আর আসবোই না টিউশনি পড়াতে।

কিন্তু অভিকের কথাটা মনে পড়লো।

আপনার নিস্তার নেই সুজানা।

তাই সে ভয়ে ভয়ে খাতা কলম নিল। তাতে লিখলো বাগান, লাইব্রেরী। অন্যটার নাম কি হতে পারে। যেটা উনার কাছে আছে কিন্তু উনি শুধুই সেটা সুজানাকে দেবেন।

লাইব্রেরী – বাগান – ০০

পরক্ষণেই মাথায় বুদ্ধি এল। সে খাতায় এলোমেলো কলম এঁকে বলল

উত্তর দিতে হবেই বা কেন? আমার বাগানটাই চাই না। তাহলে উত্তর কেন দেব?

অভিক কিছুক্ষণ পর এল। বলল

দেখি কি এঁকেছেন?

সুজানা লজ্জিত মুখে খাতাটা দেখালো। অভিক চেয়ার টেনে বসলো। পকেট থেকে দুটো ছবি বের করলো। দুটো মেয়ের ছবি। যথেষ্ট সুন্দরী এবং শিক্ষিতা মনে হচ্ছে।

এরা দুজনেই উত্তরটা জানে সুজানা। কিন্তু ওই জিনিসটাতো শুধু আপনার ওদেরকে কি করে দিই বলুন তো?

সুজানাও এবার চিন্তায় পড়ে গেল। সত্যিই তো তার জিনিস সে অন্যকে দেবে কেন?

সে অভিকের দিকে বোকা চোখে তাকিয়ে থাকলো। বলল

আপনি অন্য কাউকে দেবেন না কেন?

উফফ বললাম না। ওটা শুধুমাত্র আপনাকেই দেওয়া যায় সুজানা।

সুজানা মাথার একপাশে চেপে বলল

আমার মাথায় আসছে আর যাচ্ছে।

খুব দেরী হলে আমি এদের মধ্যে কাউকে দিয়ে দিতে পারি।

না না। আমি পারি ওটা। মুখ দিয়ে আসছেনা। মনে হচ্ছে ওটা আমি জানি। সময় তো লাগবে না?

অভিক গালে হাত ঠেকিয়ে হেসে চেয়ে রইলো ওর দোনোমনা।

চলবে…
🙂🙂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here