আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে #পর্ব_২৯ Writer #প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

0
85

#আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে
#পর্ব_২৯
Writer #প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

কিছু আগের সেই মর্মান্তিক ঘটনা সুজানাকে দুর্বল করে দিয়েছে। ভেতরটা এখনো ধুকপুক করে কাঁপছে। কুকুরটা কাল থেকে আর তার পিছু লাগবেনা ভাবতে গেলেও কেমন অপরাধবোধ কাজ করছে। এখনো সে উষ্ণ রক্তের গন্ধ পাচ্ছে। কান দুটো দিয়ে বোলতার আওয়াজ বেরোচ্ছে। কমছে আবার বাড়ছে। চোখ বন্ধ করে চুপটি করে রইলো সে। পাশ দিয়ে চলে যাওয়া মোটর সাইকেল থেকে পেট্রোলের গন্ধ এসে নাকে ঠেকতেই গলগল করে বমি করে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এল সে। অভিক তার ছটপটানি দেখে গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে ঠান্ডা জাতীয় কিছু আনতে গিয়েছে। একটা জুস তার হাতে। সুজানাকে আবারও বমি করতে দেখে সে জুসের বোতল রেখে পানির বোতল নিয়ে এল। বলল

এদিকে আসুন। এখানে বমির কি হলো আমি বুঝে পাচ্ছি না। আপনার শরীর বেশি খারাপ লাগছে?

সুজানার বমি থামতেই সে দুর্বল, অবসন্ন চোখে চাইলো। গাড়ির দরজা শক্ত করে ধরে নিভে আসা গলায় বলল

আপনার সাথে আমি কথা বলিনা কাল থেকে।

অভিক চোখ পাকিয়ে চাইলো।

এই অবস্থায় ও এসব কথা বলার হুশ আছে?

সুজানা গাড়ির দরজা খুলে কোনোমতে বসে পড়লো।

অভিক গাড়িতে বসে জুসের বোতল বাড়িয়ে দিয়ে বলল

ঠান্ডা আছে। খান। ভালো লাগবে।

সুজানা নিল। বোতলের ছিপি খুলতে গিয়ে দেখলো হাতে নূন্যতম শক্তিটুকু সে পাচ্ছে না। অভিক সিটবেল্ট টেনে পড়ার সময় দেখলো সুজানার ছিপিটা চেপে ধরে মাথা এলিয়ে বসে আছে। সে বেল্ট পড়ে নিয়ে বোতল নিয়ে বলল

কুকুরটা মারা গিয়েছে। আপনি এত চিন্তা করে কি করবেন? বরঞ্চ অন্য প্রাণীদের দিকে নজর দিন সময় থাকতে।

সুজানা চোখ বন্ধ করে রইলো। অভিক ছিপি খুলতে খুলতে বলল

সিটবেল্ট পড়ুন। পড়ে যাবেন।

সুজানার নড়াচড়া নেই। অভিক বলল

সু–জা–না?

সুজানা চোখ মেলে তার দিকে চেয়ে আওয়াজ করলো।

হুহ?

অভিক ছিপি খুলে তাকে ধরিয়ে দিল। সিটবেল্ট টেনে পড়িয়ে সরে পড়ার সময় ভুরু উঁচিয়ে সুজানাকে বলল

মনে মনে ভাবছেন এই ষ্টুপিড স্যারটাকে বমি করে বরবাদ করে দিলে কেমন হয়? তাই তো?

সুজানা সুস্থসবল থাকলে হয়ত হেসে উঠতো। কিন্তু এখন সে ভুরু কুঁচকে চেয়ে আছে। অভিক হেসে বলল

ওসব চিন্তা করে লাভ নেই। আমি অলরেডি বরবাদ হয়ে গেছি। আপনি আমাকে জাস্ট বরবাদ করে দিয়েছেন। আর বরবাদ করার কোনো ওয়ে নেই।

সুজানার কপালের ভাঁজ আরও দ্বিগুণ হলো।

বলল

আমি কিছু করিনি। আপনি আমার সাথে এত বকবক কেন করছেন? আমি আপনার কথা বলিনা বলছিলাম না? যেচে কেন কথা বলছেন?

আপনার কারণে যেচেপড়ে আমাকে কথা বলতে হচ্ছে। আপনি যেচেপড়ে কথা বলুন আমি আপনার মতো শুধু ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে থাকব।

সুজানা বলল

উফ।

আচ্ছা ঠিক আছে গাড়ি ছাড়ছি। আমার মনে একটা প্রশ্ন আছে সেটা হচ্ছে আপনি সেদিন গিয়েছিলেন মেহুলের সাথে আমার বিয়ের সম্বন্ধ ভাঙতে। তাহলে অত সেজেগুজে গিয়েছিলেন কেন?

সুজানা জুস খেতে খেতে হা করে তাকালো। অভিক ভুরু নাচিয়ে বলল

কঠিন প্রশ্ন করলাম না?

ফকির সেজে গেলে কেউ পছন্দ করে নাকি?

অভিক গাড়ি ছাড়তে গিয়েও ছাড়লো না।

আঙুল দেখিয়ে বলল,

ওয়েট ওয়েট। আপনি সেজেগুজে গিয়েছিলেন মেহুলের বদৌলতে আপনাকে পছন্দ করার জন্য?

সুজানা চোখ বড় বড় করে তাকালো। সামনাসামনি মানুষ মানুষকে এভাবে বলতে পারে? নাকি উনি সারাক্ষণ সুজানাকে চেতানোর তালে থাকে।

বলুন? চুপ করে গেলেন কেন? নিশ্চয়ই আমি সত্যি বলেছি। যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে এটাও সত্যি আপনার উদ্দেশ্য সফল হয়েছে।

সুজানা এবার ভান ধরলো। বলল

বাড়ি যাব।

হ্যা অবশ্যই বাড়ি যাব। আপনাকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান আপাতত করছিনা।

সুজানা জুসটা খেতেই থাকলো। এত ভালো লাগছে খেতে। বমি বমি ভাবটা চলে গিয়েছে। পেটে ঠান্ডা পড়েছে। এখন পাশে বসা লোকটার বকরবকর গুলোও ভালো লাগছে।

অভিক গাড়ি ছেড়ে দিল। বলল

আপনাকে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি।

হুম।

গাড়ি অন্য রাস্তায় ঢুকে পড়ায় সুজানা বলল

এই রাস্তা কেন? এই রাস্তা দিয়ে যাব না।

আমি তিন নম্বর গেইট যাচ্ছি।

কেন?

আপনি বাড়ি যাবেন বলেছেন তাই।

আমার বাড়ি বলেছি। আপনার বাড়ি না। দোহাই লাগে আমাকে নামিয়ে দিন স্যাররররর।

অভিক সাথে-সাথেই বলল

আমাকে স্যার ডেকে অপমান করবেন না।

সুজানা হা করে চাইলো।

স্যার ডাকা মানে অপমান?

আপনি স্যার ডাকা মানে অপমান।

সুজানা বলল

আমি যাব না ওই বাড়িতে। কার সাথে না কার সাথে আবার তর্ক করে বসি। যাব না মানে যাব না। কাল আমাকে মিথ্যে অপবাদ দিয়ে আবার কেন নিয়ে যাচ্ছেন। এখন নামিয়ে দিন।

অভিক বলল

মেহুলের বদৌলতে যে আপনি ওইদিন সেগুন বাগিচায় এসেছিলেন সেটা কিন্তু এখনো কেউ জানেনা।

সুজানা মুখ ছোট করে চাইলো।

অভিক ভয় দেখিয়ে বলল

আমি সবাইকে বলে দিতে পারি। হুমম।

সুজানা গাল ফুলিয়ে গাড়ির স্টিয়ারিং ধরে মোচড়ে ধরতেই অভিক বলল

আরেহ করছেনটা কি?

আমার বাড়ির দিক যান।

ননসেন্স এরকম করে কেউ?

সুজানা সিটবেল্ট খুলতে খুলতে বলল

আমি দরকার হলে লাফ দেব তারপরও আপনার বাড়িতে যাব না। অভিক বলল

এসেই পড়েছি। আর ঝাপটাঝাপটি করে লাভ নেই।

সুজানা স্টিয়ারিং ধরতে যেতেই অভিক ওর হাত চেপে ধরলো স্টিয়ারিং সহ। ফিসফিসিয়ে বলল

আপনি চাইলে আপনাকে আমি গাড়ি চালানোটাও শিখিয়ে দিতে পারি। কিন্তু আমাকে যদি কথা দেন আপনি আর কারো বিয়ের সম্বন্ধ ভাঙতে যাবেন না। কারণ শুনেছি সেগুন বাগিচায় গেলেই মানুষ বরবাদ হয়ে যায়।

সুজানা হাত টা নিয়ে নিতে চাইলো। তবে নিতে পারলো না। বলল

একমুহূর্তও থাকব না আমি ওই বাড়িতে। কথা শুনিয়েছেন বেশ মনে আছে আমার।

সরি বলেছি বেশ মনে আছে আমার।

মেইলের নাম পাল্টালে সরি বলা হয়না।

আচ্ছা বলব।

কখন?

সব কথা চুপিচুপি বলা যায় নাকি?

মানে?

মানে পুরো পৃথিবীকে শুনিয়ে আপনাকে সরি বলব।

দরকার নেই।

আমার দরকার আছে।

গাড়ি বাড়ির গেইট পেরিয়ে ঢুকে পড়লো। অভিক গাড়ি থেকে নেমে সুজানার দরজার পাশে এসে ঝুঁকে বলল

মাকে বলব বরণ ঢালা নিয়ে আসার জন্য?

সুজানা ফুলতে ফুলতে বলল,

আপনি খুব খারাপ।

অভিক জোরে জুসের বোতলটা দিয়ে সুজানার নাকে বাড়ি মারলো। বলল

আপনার রাগটাগ থাকতেই পারে। কিন্তু আমার সাথে না ঠিক আছে? নাকের ডগায় এত রাগ রাখা যাবে না। নাক পুরো কেটে ফেলে দেব।

সুজানা বলল

তো মানুষে তখন আপনাকে কি বলবে? বলবে নাক কাটার………..

বলেই লজ্জা পেয়ে হেসে গালে হাত চেপে অপরদিকে ফিরে গেল সুজানা। অভিকও হেসে উঠলো।

চলবে…

খুব ব্যস্ত তারপরও ছোট করে লিখেছি। রিচেক করা হয়নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here