আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে #পর্ব_৩০ Writer #প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

0
93

#আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে
#পর্ব_৩০
Writer #প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

সুজানা লজ্জায় অন্যদিকে ফিরে যাওয়ায় অভিক তার অমনোযোগী হওয়ার সুযোগ লুফে নিল।
চট করে ফোনটা কেড়ে নিয়ে বলল

দ্রুত চলে আসুন। দেরী হলে মার একটাও মাটিতে পড়বেনা সু–জা–না।

সুজানা চমকে তাকালো। অভিক ততক্ষণে বাড়ির ভেতরে চলে গিয়েছে।

ফোনটা ছাড়া সুজানা যেতে পারবে না।
তাছাড়া সুজানার ফোনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার আছে তার। পঁচা মেয়েটা ওখানে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকুক। তার কি?

অভিককে বাড়ি ফিরতে দেখে আনিকা বলল

এই তো অভি চলে এসেছে। হ্যা রে কোথায় গিয়েছিস? ছোটমাকে নাকি বলেছিস সুজানা আসবে আজ? কখন আসবে?

অভিক দোতলার ঘরের উদ্দেশ্য পা বাড়িয়ে বলল

বাইরে। নিয়ে এসো।

হাহ? বাইরে? তুই ওকে বাইরে দাঁড় করিয়ে চলে এসেছিস?

অভিকের শেষ কথাটা শোনা গেল।

আসতে না চাইলে আমি কি করব?

মমতাজ বেগম ভুরু কুঁচকে এতক্ষণ চুপচাপ কথা শুনছিলেন। অভিকের কথাটা শোনার পর বললেন

আহ কি করে ভাইটা! বড় নাতবৌ দেখো কোথায় সুজানা।

হ্যা দেখছি দাদু । অনা আবিদ অভিকের মুখে শুনে সুজানাকে দেখার জন্য পড়ার ঘর থেকে চলে এসেছে নীচে।

বমির গন্ধ যেন যাচ্ছে না। সুজানা নাকের কাছে ওড়না শুকলো । উহু কোথাও গন্ধ নেই। কিন্তু তারপর কেমন আঁশটে গন্ধ নাকে। রক্তের গন্ধ।কুকুরটার কথা মনে পড়ায় আবারও মন কেমন করে উঠলো সুজানার। বেচারা সুজানাকে মনিব মানতে গিয়ে নিজের জীবনটাই দিয়ে দিল।

সুজানা বিমর্ষ মুখে দাঁড়িয়ে চারপাশে তাকালো। বাগান থেকে ফুলের সুগন্ধ ভেসে আসছে। এখানে দাঁড়িতে থাকতে খারাপ লাগছেনা। চারদিকে কৃত্রিম আলোয় ফকফকা। কিছুদূরেই গাড়িটা দাঁড় করানো। সুজানা বাড়ির ভেতরে যাবেনা নিজ থেকে। তার ফোনটাও নিয়ে চলে গেল। এখন সে আম্মাকে কি করে ফোন করবে। আম্মা তো চিন্তা করবে।

তার ভাবনার সুঁতো ছিঁড়ে গেল দুটো বাচ্চার ঝাপটে ধরায়। তারা দুজন হাঁটু জড়িয়ে ধরে মুখ তুলে হেসে সুজানার দিকে তাকালো।

সুজান!

সুজানা ওদের সাথে মিষ্টি হাসলো। গালে হাত বুলিয়ে দূরে সরে বলল

আচ্ছা এখন জড়িয়ে ধরা যাবেনা। আমার মুখহাত ধোঁয়া লাগবে।

আনিকা এসে বলল

সুজানা!

সুজানা ঘাড় ফিরিয়ে গলা কাত করে তাকালো। বলল

আপনার দেওর পাগল হয়ে গেছে। জানেন?

আনিকা চোখ বড় বড় করে চাইলো। সুজানা কখনও অভিকে তার দেওর বলে সম্বোধন করেনি। এটা সত্যি সুজানা তো? নাকি অভি রাত্রিরে কোথা থেকে ভূতটুত খুঁজে নিয়ে এসেছে?

এভাবে তাকিয়ে দেখছেন কি? আমার ফোনটা এনে দিন স্যারের কাছ থেকে। আমাকে দ্রুত বাড়ি ফিরতে হবে।

না আমিই ভুল। স্যার বলেছেন যখন আপনি সত্যিই সুজানা।

কি বলছেন?

কিছু না। ভেতরে চলুন। কোথাও যাওয়া চলবে না যতক্ষণ না আমার দেওর কেন পাগল হয়েছে সেটা জানতে পারছি ।

সুজানা দু পা পিছিয়ে গিয়ে বলল

প্লিজ ম্যাডাম জোর করবেন না। আমি সত্যিই যেতে পারব না।

একদম না। আপনি আজকে আমাদের সাথে ডিনার করেই বাড়ি ফিরবেন।

সুজানা আর্ত চোখে তাকালো। শব্দ বেরুলো

উহু।

কোনো উহুটুহু চলছেনা চলুন।

অনা বলল

সুজান চলো চলো।

দরজার কাছে শাড়ি পড়া কাউকে দেখতেই সুজানা শুকনো ঢোক গিললো। আর বেশি বাড়াবাড়ি করলো না। সালমা বেগম সরু চোখে সুজানার দিকে চেয়ে রইলো। সুজানা আনিকার পেছন পেছন গেল। আনিকা বলল

ছোটমা সুজানা চলে যেতে চাচ্ছে। আমি জোর করে নিয়ে আসছি।

সুজানা গলা নিচু করে সালাম দিয়ে চোখ নিচে নামিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো চুপচাপ।

হুম, নিয়ে যাও ওকে।

সুজানা বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতেই মমতাজ বেগম বললেন

তুমি নাকি আসতে চাইছোনা বোন? কি হয়েছে? তুমি কি এই বাড়িতে কুটুম? এই বাড়ি তো তোমার পরিচিত। এত দ্বিধা কেন করো?

সরি দাদু। আপনি ভালো আছেন তো?

আল্লাহ ভালো রেখেছে।

আনজুমা বেগম এসে বললেন

সুজানা এসেছ শেষমেশ?

জ্বি আন্টি। ভালো আছেন?

হ্যা। তোমার বাড়িতে সবাই ভালো আছে?

জ্বি।

বৃদ্ধা বললেন

তুমি দূরে দাঁড়িয়ে কেন বোন ? কাছে এসো।

সুজানা আনিকার দিকে তাকালো।

আনিকা জানতে চাইলো। কি হয়েছে আপনার আজকে?

কুকুরের ঘটনাটা খুলে বলতেই সবাই আশ্চর্যান্বিত চোখে তাকালো। আবিদ বলল

ডগ আন নাই?

সুজানা মাথা নেড়ে বলল

উহু। নাই।

আনিকা বলল

কুকুরটার জন্য খারাপ লাগছে। আপনি বমি করেছেন তাই তো এত দুর্বল লাগছে।

আনজুমা বেগম বললেন

ওকে ঘরে নিয়ে যাও তো বৌমা। সুজানা মুখ হাত ধুঁয়ে ফেলো মা।

সুজানা মাথা নাড়ালো। আনিকা তার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলল

এসবের জন্য এমন করতে হয়? বমি কি আর কারো হয় না? আজব মেয়ে আপনি।

কিন্তু আমার গন্ধ গন্ধ লাগছে সবকিছু।

আরেহ কাপড় চেঞ্জ করে ফেলবেন। ব্যস।

এখানে? উহু।

আমি এখন আমার দেওরকে ডাক দেব কিন্তু।

ধুরর আপনিও উনার মতো শুরু করছেন।

আনিকা হেসে উঠলো।

_________________

দরজায় ঠকঠক শব্দ হওয়ায় আনিকা দরজা খুললো। দেখলো আবিদ দাঁড়িয়ে আছে। আনিকা বলল

কি চায় আপনার?

সুজান। সুজানকে অভি ডাকে। এখুন।

সুজান বসে নেই।

সুজান কাজ আচে।

কোনো কাজ নেই। অভিকে গিয়ে বলেন সুজানা কোনো কাজ করবে না।

সুজানা তোয়ালে হাতে ছুটে এল। বলল

ওকে দিয়ে আমার ফোনটা নিয়ে আসতে পারেন কিনা দেখুন না।

আবিসোনা।

উম।

অভি সুজানের ফোন নিয়ে গেছে। আপনি ওটা নিয়ে আসুন।

আচচা।

আবিদ মাথা দুলিয়ে দৌড়ে দৌড়ে যেতে যেতে বলল

অভি অভি সুজানের ফুন দাও।

সুজানার সাথে হাসলো আনিকা। সুজানাকে আগাগোড়া পরখ করে বলল

ওমা শাড়িতে আপনাকে ভীষণ ভালো লাগছে। নাহিদের গায়ে হলুদের শাড়ি পড়া ছবিটা আমার কাছে আছে।

সুজানা বলল

গোসল করে ফেলেছি কিন্তু আম্মাকে এখনও ফোন দিতে পারিনি।

আমার ফোন থেকে বলে দেন। তার আগে আপনাকে শাড়িটা ঠিক করে পড়িয়ে দেই। দরজা বন্ধ করে সুজানার শাড়ির কুঁচি ঠিক করে দিতে যেতেই দরজায় আবারও ঠোকা পড়লো। সুজানা বলল

আবিদ সাহেব এসেছেন বোধহয়।

আনিকা গিয়ে দরজা খুলে বলল

অভি ফোন দিয়েছে?

পরক্ষণে অভিককে দেখে চমকালো সে। অভিক ঘরে উঁকি দিয়ে বলল

আমার ছাত্রী কোথায়?

তোমার ছাত্রী এখন কোথাও যেতে পারবেনা বাছাধন।

সুজানা ওর গলার আওয়াজ শুনে চমকে উঠে শাড়ি আঁচল টেনে নিয়ে আনিকার পেছনে লুকিয়ে পড়লো। অভিক চোখ সরু করে তাকাতেই সুজানা আরও সিঁটিয়ে গেল।

আমি আপনাকে এনেছি কাজের জন্য। আপনি দেখছি সেজেগুজে লন্ডভন্ড হয়ে গেছেন । কি ব্যাপার?

সুজানা মিনমিন করে বলল

অ্যাহ কোথায় সেজেছি? চোখে সবসময় বেশি দেখে। মুখে কিছু আটকায় না।

আনিকা বলল

তোমার ছাত্রী আজ কোথাও যাবেনা। সো তুমি আসতে পারো।

অভিক সাইডে সরে সুজানাকে দেখার চেষ্টা করলো। বলল

আমার কথা আছে।

আনিকা সেদিকে হাত বাড়িয়ে বলল

কোনো কথা নেই।

সুজানা সরে গেল পুরোপুরি। অভিক বলল

আমার ছাত্রীকে আমার ঘরে আসতে বলো। প্রচুর কাজ পড়ে আছে।

তোমার কাজ করার জন্য বউ আনো। ছাত্রী নয়।

বউটউ ওসব পরের কথা। পাঠিয়ে দাও। ঠিক আছে?

অভিক চলেই যাচ্ছিল। আনিকা বলল

সুজানা বলেছে আমার দেওরের নাকি মাথা খারাপ হয়ে গেছে?

অভিক ঘাড় ফিরিয়ে বলল

তো আমি কি করব? ওসব দেওরটেওরের খবর আমি রাখি নাকি? দেওর মানে,

তাকে থামতে দেখে আনিকা মুচকি হাসলো। ভুরু নাঁচালো। অভিক স্তব্ধ হয়ে বলল

কে বলেছে?

আপনার ছাত্রীই বলেছে আমার দেওরটেওরের নাকি মাথা গেছে।

সুজানা লুকিয়ে থাকলো।

অভিক বলল

হুম, তাকে পরে দেখে নিচ্ছি।

বলেই চলে গেল সে ।

সুজানা বলল

কি বললেন উনাকে? এখন আমাকে কত কি বলবে?

আরেহ ও কি বলবে? আচ্ছা একটা কথা বলুন। ও সবার সাথে এমন মজা করে নাকি আপনার সাথেই করে?

উনি সবার সাথেই গুণে গুণে কথা বলে। শুধু আমার সামনে এলে বকবকানি বেড়ে যায়। আমিও জানতাম উনি চুপচাপ। কিন্তু,

কি ভাবছেন?

আনিকা মৃদু হেসে বলল,

আমি যখন প্রথম এই বাড়িতে আসি সেদিন অভি আমার সাথে একটা কথাও বলেনি। বউ হয়ে আসার পরদিন দেখলাম নিজ থেকে এসে ভালো মন্দ জানতে চাচ্ছে। হেসেমেতে কথা বলছে। আমি জানতে চাইলাম ওইদিন কথা বললি না কেন?আমাকে বললো, আমি ভাইয়ের বউকে আপু ডাকব ভেবে রেখেছিলাম। তুমি সেদিন বউ ছিলেনা তাই ডাকিনি, কথাও বলিনি।
আর ও তো এখন আমার ছোট ভাই। সেজন্য দেওর শব্দটা চিনতে ওর দেরী হয়েছে।

আপনাদের সম্পর্কগুলো খুব সুন্দর।

আপনার সত্যি ভালো লাগে সুজানা?

হুম।

আপনার বান্ধবীকে আপনি কিছু বলেননি?

কোন বান্ধবী?

মেহুল আর কি?

সুজানা ধীর কন্ঠে বলল

ওহহ। নাহ বলিনি। কারণ ওকে আমি আমার ভাইয়ের বউ করব।

আচ্ছা? সাইফ ওয়াহিদ?

হুম।

বাহ। তাহলে তো ভালোই। যাইহোক আপনি তো আমার ভাইয়ের বউ হতে যাচ্ছেন। আমিও খুব খুশি। আপনি সুন্দর করে দাঁড়ান। কয়েকটা ছবি তুলি। একদম গোলাপী রঙে গোলাপের মতো লাগছে।

সুজানা বলল

হয়েছে। আর না। এসব ছবি কাউকে দেবেন না।

ওটা পর কেউ না। আপনার হবু শ্বাশুড়ি। আপনি কেমন মানুষ একটু কথাও বলতে চান না। আপনি কথা বললে মামি অনেক খুশি হবে।

আসলে আমি পড়ালেখা শেষ করে এসব ভাববো। আম্মাকে রোজ বলি। ওসব সিরিয়াসলি নেবেন না প্লিজ।

আরেহ আপনাকে পড়ালেখা করতে বারণ করছে কে? শেষ করুন তারপর বিয়ে। তার আগে আপনার স্যারের জন্য একটা ঠিক করে দিয়ে যাবেন। বেচারার বউ মিলছেনা কোনোমতে। নীচে চলে আসুন।

সুজানা মাথা দুলালো। আনিকা যাওয়ার সময় আরও একবার ঘুরে সুজানাকে দেখলো।

_________________

সাজিয়া বেগমকে ফোন করে জানানো হয়েছে শুনে সুজানা স্বস্তি পেল। নীচে যেতেই
ওকে দেখে বৃদ্ধা বলে উঠলেন

ওমা তোমাকে কি যে ভালো লাগছে বোন।

আনিকা বলল

আমার সব থ্রিপিছগুলো অনেক লুজ। সুজানার আগেই হাঁটবে ওগুলো। তাই শাড়ি দিয়েছি। আনজুমা বেগম বললেন

হ্যা, সুজানা তো প্রথম দিন শাড়ি পড়েই এসেছিল। শাড়িতে ওকে ভালো লাগে।

সুজানা মিষ্টি হেসে বৃদ্ধার পাশে গিয়ে বসলো। বলল

আপনার জর্দাগুলোর খুব সুগন্ধি।

বৃদ্ধা হেসে বলল

তুমি খেলে বসো। আমি পান বানিয়ে দেই।

সালমা বেগম দূর থেকে ওকে গোমড়ামুখে চেয়ে আছে অনেকক্ষণ ।

__________

খাওয়ার সময় হতেই সবাই খেতে বসলো। টেবিলে বাবা জেঠু আর বড় ভাইকে দেখে অভিকের কপালে ভাঁজ পড়লো। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো যে আর কেউ নেই। আনিকাকে ডেকে বলল

আর কেউ খাবে না?

আর কে? তোরা বসে যাহ। বাচ্চাদের খাইয়ে দিয়েছি জোর করে।

আজাদ সাহেব ডাকলেন

অভি খেতে আয়।

আসছি জেঠু। আজীম সাহেব বললেন

টেবিল ফাঁকা কেন আজকে?

আনিকা বলল

আমরা সবাই পরে খাব তাই।

সবাই বসে যাও। এত বড় টেবিল ফাঁকা কেমন দেখাচ্ছে না?

আহনাফ বলল

দাদু, মা আর ছোটমাকে নিয়ে তুমিও বসে যাও।

আরেহ না। আজকে সুজানা আছে না? আমরা সবাই একসাথে খাব।

সুজানা এসেছে। কই আমরা তো দেখিনি।

উনি উপরে আছেন। বাচ্চাদের সাথে।

বৃদ্ধা এল ধীরপায়ে হেঁটে বলল

আরও পাঁচটা চেয়ার খালি আছে। আমরা সবাই মিলে বসে যাই। বৌমা তোমরাও চলে আসো। নাতবৌ সুজানাকে ডেকে নিয়ে এসো।

আনিকা বলল

আচ্ছা।

সুজানা আসতেই আজীম আর আজাদ সাহেবের সাথে টুকটাক কথা বললো। অভিক গোল গোল করে কাটা গাজরে দাঁত দিয়ে কাঁটতে কাঁটতে সুজানার দিকে তাকালো। সুজানা দেখার আগেই চোখ সরিয়ে নিল। আজকে তার পেটের ক্ষুধার মতো চোখেরও ভারী তেষ্টা পেয়েছে!

আনজুমা বেগম টেবিলের সব কিছুর উপর একবার চোখ বুলিয়ে বলল

আর কিছু কি বাদ পড়েছে? ছোট তুই বসে যাহ।

সালমা বেগম মুখ খুললেন অনেক্ক্ষণ পর।

তুমি বসো। বাকীটা আমি আনছি। তুমি এই চেয়ারে এসে বসো মেয়ে।

বৃদ্ধার পাশের চেয়ারটা দেখলো সুজানা। চেয়ারে বসার পরেই সে ডান পাশের জনকে খেয়াল করলো। ইঁদুরের মতো গাজর কেটে যাচ্ছে কুটকুট করে।

সালমা বেগম আর আনিকা সবাইকে বেড়ে দিয়ে নিজেরাও খেতে বসে গেল।
সুজানার পাত ভরে গিয়েছে। অভিক যা পেরেছে তা দিয়ে তার প্লেট ভর্তি করে দিয়েছে। সালমা বেগম চোখ তুলে ঘনঘন ছেলের কান্ড দেখছেন। সুজানা মিনমিন করে বলল

আর না।

অভিক সবাইকে শুনিয়ে বলল

আর কি লাগবে?

সুজানা আহত চোখে তাকালো। সবাই দেখলো অলরেডি তার প্লেট ভর্তি। আজীম সাহেব বললেন

অভি স্টুডেন্টকে খাওয়ার টেবিলে ছাড় দিতে হয়।

সবাই হাসলো মৃদু।

বৃদ্ধা বললেন

আমার ভাইয়ের মতো এমন শিক্ষক আজকাল খুবই বিরল বোন।

সুজানা মনে মনে বলল

ভালো না ছাই।

সুজানা যে চেনে তার আসলরূপ কেউ কি জানে? অবশ্য চেনারই কথা। সে তো শুধুই সুজানার কাছে একটা খোলাখাতা আর উড়োপাতার মতো। যখন ইচ্ছে খুলে পড়াও যায়, আবারও যখন ইচ্ছে তখন উড়োপাতা হয়ে ছোঁয়া যায়।

সুজানা খাওয়া শেষ করে উঠতে না উঠতেই আনিকা আবদার করে বসলো সুজানাকে থেকে যাওয়ার জন্য। যদিও সাজিয়া বেগমের কাছ থেকে বহুকষ্টে সে অনুমতি নিয়েছে।

সুজানাও অনেক কাহিনির পর থাকতে রাজী হলো। আনিকা ভীষণ খুশি। আজ সারারাত গল্প করবে সুজানার সাথে। বরবাবুকে টা টা বলে দিয়েছে সে। আজ সে বউ ছাড়া থাকুক।

*****-

অভিককে ঘরেও দেখলো না সুজানা। বারান্দায় উঁকি দিল। হালকা আলোয় বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশ দেখাটা ভারী সুন্দর এই জায়গা থেকে। সুজানা ভাবলো এখানেই অপেক্ষা করবে। তাকে বিরতিহীন ডাকার পর কোথায় চলে গেল?

সুজানা যখন আকাশ দেখতে মগ্ন হলো ঠিক তখনি আবির্ভাব হলো তার। সুজানা ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে সে গলা খাঁকাড়ি দিল।

আমার আকাশ বাতাসও দখল করা হয়ে গেছে।

সুজানা তার দিকে ফিরে চাইলো। বলল

কারো নিজস্ব আকাশ থাকে বুঝি ?

থাকে। আমার নিজের একটা আকাশ আছে, নিজের একটা পাহাড়, একটা নদী, একটা সমুদ্র, একটা পৃথিবী আছে নিজের। ওসব দেখার জন্য খুবই পরিচ্ছন্ন একটা মনও ছিল আমার। তখন আমি দেখতাম। এখন সেগুলো অন্য কেউ দেখে।

কেন?

কারণ আমি যেটা দিয়ে সেসব দেখতাম সেটাই দিয়ে ফেলেছি।

সুজানা তার দিকে অপলক তাকালো বিস্মিত নয়নজোড়া নিক্ষেপ করে। পিনপিনে বাতাসের সাথে মিনমিন করে বলে উঠলো

মাস্টারমশাই আমি আপনার প্রথম প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গিয়েছি।

চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here