একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় #Part_31 #ইয়াসমিন_খন্দকার

0
104

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_31
#ইয়াসমিন_খন্দকার

প্রভাকে নিয়ে দ্রুত বাড়িতে ফিরে আসে রায়ান। অত:পর প্রভাকে বিশ্রাম নিতে বলে। আজ সে ঠিক করেছে প্রভার খেয়াল রাখবে সারাদিন। তাই খাওয়া দাওয়া করে এসে প্রভার পাশেই বসে। প্রভা রায়ানের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছিল। রায়ান প্রভার হাসা দেখে সন্দিহান হয়ে পড়ে। অদ্ভুত ভাবে তাকায় প্রভার দিকে এবং তাকে জিজ্ঞেস করে,”তুমি এভাবে হাসছ কেন প্রভা?”

প্রভা আচমকা রায়ানের কোলে মাথা রেখে দেয়। রায়ান প্রভার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। প্রভা এবার রায়ানের উদ্দ্যেশ্যে বলতে শুরু করে,”দুদিন নেই আমার মাথা ব্যাথা করছিল, সাথে বমি বমি ভাব। প্রথম দিকে আমি এটাকে এসিডিটি ভেবেছিলাম কিন্তু পরবর্তীতে বুঝলাম এটা সাধারণ এসিডিটি নয়। আজ জনসভায় অজ্ঞান হয়ে যাবার পরই আমি শতভাগ নিশ্চিত হয়ে গেছিলাম। তাও ঘরে এসে প্রেগ্ন্যাসি কিট দিয়ে টেস্ট করলাম। প্রত্যাশিত ফলাফলই পেলাম। আমি মা হতে চলেছি। আর আপনি বাবা হতে চলেছেন রায়ান।”

প্রভার মুখে এই কথা শুনে আনন্দে লাফিয়ে ওঠে রায়ান। প্রভার উদোম পেটে হাত বুলিয়ে বলতে থাকে,”আমি ভাবতেই পারিনি এত বড় একটা সুখবর পাবো। আমি আজ কত খুশি বলে বোঝাতে পারব না। আমি বাবা…প্রভা আমি…”

রায়ানের এই উত্তেজনা দেখে প্রভাও খুশি হয়। মা-বাবা হওয়ার মতো সুন্দর অনুভূতির কোন তুলনাই হয় না।

~~~~~~~~~~~~~~~~~
কয়েক দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে নির্বিঘ্নে। এই ক’দিনে রায়ানের খুশির মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। নির্বাচনের দিনক্ষণ এগিয়ে এসেছে। আজই নির্বাচন অনু্ষ্ঠিত হলো। রায়ান নিজের জয় নিয়ে আশাবাদী। এমনিতেই চট্টগ্রাম শহরে রুহুল আমিনের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। আর রুহুল আমিনের উপর ভরসা রেখে তাই তার ছেলে রায়ানও ভালোই ভোট পাবে নিঃসন্দেহে। তার উপর রায়ান নিজেও ভোটে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জনগণকে৷ এবং বিভিন্ন সমীক্ষাতেও জনগণ তার পক্ষেই রায় দিয়েছে। শেষমেশ ভোটের ফল বেড়িয়ে এলো। এই ভোটে নিরঙ্কুশ বিজয়ী হলো রায়ান। প্রতিদ্বন্দী প্রার্থীকে প্রায় আড়াই লাখ ভোটে হারিয়েছে সে। পুরো শহর জুড়ে বিজয় মিছিল বের করা হয়। চট্টগ্রামবাসী এখন উন্নয়নের স্বপ্নে বিভোর।

এদিকে এমপি হওয়ার দরুণ রায়ানের ঘাড়ে অনেক দায়িত্ব পড়লেও নিজের স্ত্রীর যত্নে সে কোন অবহেলা করতে ইচ্ছুক নয়। প্রভার এই সময় অনেক খেয়াল রাখতে হবে। তাই রায়ান প্রভাকে হাসপাতালে যেতে বারণ করেছিল যাতে তার উপর স্ট্রেস কম পড়ে কিন্তু প্রভা তো প্রভাই। নিজের দায়িত্বে সে কিছুতেই অবহেলা করবে না। তবে অনেক বলে কয়ে প্রভার ওয়ার্কিং টাইম কমিয়ে এনেছে সে। তাছাড়া বাড়িতে যতক্ষণই থাকে সে প্রভার যত্ন নেয়ার চেষ্টা করে।

প্রভাকে নিজের হাতে খাইয়ে দেওয়া, তার খুটিনাটি সব কাজ করে দেওয়া সহ সব দিকেই খেয়াল রাখছে সে। অনুরাধাও প্রভার খবরটা পেয়ে তার সাথে দেখা করতে এসেছে। সাথে এনেছে নিজের মেয়ে স্নেহাকেও। অনুরাধা প্রভাকে বলে,”আমি খুব খুশি হয়েছি তোর খবরটা পেয়ে।”

দুই বান্ধবী মিলে অনেক গল্প করে। অনুরাধা নিজের প্রেগ্ন্যাসির এক্সপেরিয়েন্স শেয়ার করে প্রভার সাথে। যদিও একজন ডাক্তার হিসেবে তার এসব সম্পর্কে ধারণা আছে তবে তবুও নতুন করে এসব জেনে তার ভালোই লাগছে। আসলে প্রথমবার মা হচ্ছে তো তাই অনুভূতিটা অনেক সুন্দর।

৯ মাস পর,
প্রভা ও রায়ান একসাথে সময় পার করছিল। রায়ান এতদিন ঢাকায় ছিল। আজ চট্টগ্রামে ফিরেই প্রভার খেয়াল রাখছে পুরোদমে। আর কিছুদিন পরেই প্রভার ডেলিভারি ডেট। তাই বর্তমানে সে বেড রেস্টেই থাকে সবসময়। আজ কথায় কথায় প্রভা হঠাৎ বলে,”আচ্ছা তোমার কি মনে হয়? আমাদের ছেলে হবে না মেয়ে?”

রায়ান হেসে বলে,”ছেলে-মেয়ে নিয়ে আমার কোন মাথাব্যথা নেই। আমি তো চাই যেই আসুক সে সুস্থভাবে পৃথিবীতে আসুক। তবে আমি শুনেছি মেয়েরা বাবার অনেক আদরের হয়। তাছাড়া আমি নিজের মাকে কখনো পাশে পাই নি। তাই মেয়ে হলে আমি একটু বেশিই খুশি হবো। আমার মনে হবে আমার মেয়ে নয় মা এসেছে আমার কাছে।”

প্রভা স্মিত হাসে। নিজের পেটে হাত বুলিয়ে বলে,”আমিও খুশি হবো যদি আপনার এই চাওয়া পূর্ণ হয়।”

রায়ান বলে,”তবে ছেলে হলেও কোন ব্যাপার না। আমার রাজপুত্র, রাজকন্যা যেই আসুক তাকে আমি আগলে রাখবো সাথে আমার রাণীকেও।”

প্রভা রায়ানের উপর ভীষণ মুগ্ধ হয়। এত অসাধারণ ব্যক্তিত্ব রায়ানের যা তাকে সবসময় মুগ্ধ করে। প্রভার নিজেকে অনেক ভাগ্যবতী মনে হয় রায়ানের স্ত্রী হতে পেরে। সে এটাও জানে তাদের সন্তানও অনেক ভাগ্যবান/ভাগ্যবতী হবে রায়ানকে বাবা হিসেবে পেয়ে।

দিন গুলো ভালো ভাবেই চলতে থাকে। তখনো প্রভার ডেলিভারি ডেটের এক সপ্তাহ বাকি ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই প্রভার লেবার পেইন শুরু হয়। রায়ান সেইসময় বাড়িতেই ছিল। সে দ্রুত প্রভাকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করে। প্রভাকে এডমিট করা হয় হসপিটালে। অত:পর অটির বাইরে পায়চারি করতে থাকে। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে থাকে নিজের স্ত্রীর সুস্থতার। রায়ান অনেকক্ষণ ধরে পায়চারি করছিল। কিন্তু ভেতর থেকে কোন খবর আসে নি৷ রায়ানের চিন্তা বাড়ছিল। সৌভিক, অনুরাধা ওরাও ছুটে আসে হসপিটালে। সৌভিক রায়ানের কাঁধে হাত রেখে বলে,”তুই চিন্তা করিস না, সব ঠিক হয়ে যাবে।”

এমন সময় একজন নার্স একটি শিশুকে কোলে করে নিয়ে বাইরে আসে৷ রায়ানের হৃদস্পন্দন বাড়ছিল। নার্স রায়ানের কোলে বাচ্চাটিকে তুলে দিয়ে বলে,”অভিনন্দন স্যার, আপনার মেয়ে হয়েছে। মা-মেয়ে দুজনেই ভালো আছেন। এই নিন আপনার মেয়েকে কোলে নিন।”

রায়ান তার মেয়েটিকে কোলে তুলে নেয়। আবেগাপ্লুত হয়ে বলে,”আমার রাজকন্যা! আমার মা!”

সৌভিক, অনুরাধা ওরা দুজনেও অনেক খুশি হয়।

প্রভা ও রায়ানের দিনগুলো এরপর অনেক সুখেই অতিবাহিত হয়। কিছুদিনের মধ্যেই রায়ান ও প্রভা তাদের মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে ফেরে। রুহুল আমিন ধুমধাম করে তার নাতনিকে ঘরে তোলেন।

বাবা হওয়ার পর থেকে রায়ান আরো অনেক বেশি দায়িত্ববান হয়ে গেছে। সবসময় মেয়েকে কোলে রাখছে। রায়ান তার কন্যাশিশুকে মেয়ে কম মা হিসেবে বেশি ভালোবাসছে। আর কাকতালীয়ভাবে রায়ানের মেয়ের সাথে তার দাদীর চেহারার অনেক মিলও আছে। রুহুল আমিন তো নিজের নাতনিকে কোলে তুলে নিয়েই বলেন,”একদম সেই টানাটানা চোখ, নাক সবকিছুই ওর মতোনই।”

রায়ান ও প্রভার মেয়ে কিন্তু অনেক রূপবতীও হয়েছে। এই বয়সেই এত সুন্দরী বোঝা যাচ্ছে বড় হলে অনেক বেশি সুন্দরী হবে সে।

~~~~~
প্রভা ও রায়ানের মেয়ের আকিকার দিন চলে আসে। রায়ান নিজের মেয়ের জন্য আগে থেকেই নাম ঠিক করে রেখেছিল। আকিকার দিন সে বলে,”আমার ও প্রভার মেয়ের নাম আমি রাখলাম রুকাইয়া জাহান প্রণালী।”

রুকাইয়া ছিল রায়ানের মায়ের নাম। নিজের মায়ের স্মৃতি রেখেই এই নাম দিয়েছে সে। প্রণালী নামটা মূলত প্রভাই ভেবেছিল। দুজনেই মতামত দিয়ে এই নাম রেখেছে। রায়ান নিজের মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”আমার প্রণালী মা অনেক বড় হবে। নিজের বাবা-মায়ের মুখ অনেক উজ্জ্বল করবে তাই না মা?”

ছোট্ট প্রণালী তখন খিলখিল করে হেসে ওঠে। প্রভাও নিজের মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”আমি জানি আমার মেয়ে অনেক সফল হবে জীবনে। আমাদের গোটা পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করবে। আমি দোয়া করি, ওর ভবিষ্যৎ জীবন অনেক সুখের হোক।”

প্রণালীর ভবিষ্যৎ জীবন সুখের হবে না দুঃখের তা তো জানা যাবে সামনেই। দেখা যাক, ভাগ্য কোন খেলা খেলে।

to be continue…
[আমি গ্রামে এসেছি। অনেক ব্যস্ততার মধ্যেই দিলাম পর্বটা। ঈদ উপলক্ষে বছরে একবারই সব কাজিনরা একসাথে হই। এবারও ব্যতিক্রম নয়। তাই ঈদের সময় গল্প দেওয়া সম্ভব নয়। ঈদে তো সবাই ছুটি পায় তাও আমিও ঈদেরর জন্য আপাতত আপনাদের থেকে ২-৩ দিনের ছুটি নিলাম। আশা করি আপনারা ছুটি মঞ্জুর করবেন৷ ঈদের পর আবারো গল্পটা শুরু করে। তবে এবার আর রায়ান প্রভার নয় গল্পটা হবে প্রণালীর। বাকিটা ঈদের পরই জানতে পারবেন। সবাইকে জানাই ঈদের অগ্রীম শুভেচ্ছা।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here