#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_39
#ইয়াসমিন_খন্দকার
“কাল তোমার বিয়ে। তৈরি হয়ে থাকো।”
প্রণালী হতবাক হয়ে গেলো রায়ান সাহেবের মুখে এমন কথা শুনে। প্রতিবাদের সুরে বলল,”আমি শান্ত ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবো না বাবা। তোমার ঠিক করা পাত্রকে তো নয়ই।”
রায়ান প্রণালীকে হুংকার দিয়ে বলে,”আমার অবাধ্য হওয়ার চেষ্টা করো না প্রণালী। এতে কোন লাভ হবে না। এতদিন তোমার অনেক বাত্তামিজি আমি বরদাস্ত করেছি কিন্তু আর না। এবার আমি তোমাকে উচিৎ শিক্ষা দেব।”
“তুমি অনেক খারাপা বাবা। তুমি কারো কথা গ্রাহ্য করো না। এখন আমি বুঝতে পারছি মা কেন তোমাকে ছেড়ে চলে গেছে। আসলে তুমি এটারই যোগ্য। আমিও যখন তোমাকে ছেড়ে চলে যাব তখন তুমি যোগ্য শিক্ষা পাবে।”
রায়ান সাহেব আজ আর নিজেকে সামলাতে পারলেন না। প্রণালীর গালে ঠা**স করে চ**-ড় বসিয়ে দিলেন। আজ তার সব সহ্যের সীমা পেরিয়ে গেছে। প্রণালী এতেও দমল না। ঘরের সব জিনিসপত্র এলোপাতাড়ি এদিকে ওদিকে ছু**ড়ে দিয়ে বলল,”এই দিন দেখার জন্য আমি তোমাকে এত কষ্ট করলাম। আসলে তুমি কারো ভালোবাসা ডিজার্ভ করো না। তোমার যেখানে যাওয়ার ইচ্ছা তুমি যাও। কিন্তু যাওয়ার আগে আমার জানাজা করে যেও।”
“বাবা! তুমি কিন্তু ইমোশনাল গেইম খেলছ। এতে কোন লাভ হবে না। শান্ত ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে হলে আমার লাশ করবে আমি না।”
রায়ান সাহেবের ইচ্ছা করছিল প্রণালীকে মাটিতে পু্ঁতে ফেলতে। শান্তর বাবার ব্যাপারে সবটা জেনেও কিরকম নির্লজ্জ, অভদ্রের মতো আচরণ করছে।
রায়ান সাহেব শেষবারের মতো নিজের মেয়েকে বললেন,”তুমি নিজের ভালোটা এখনো বোঝো। আমি তোমায় বিশ্বাস করলাম। তুমিও আমার উপর বিশ্বাস করে আমার ঠিক করা পাত্রকে বিয়ে করে নাও। যদি নিজের পছন্দ করা পাত্রকে বিয়ে করো তাহলে কিন্তু তোমায় আজীবনের জন্যই পস্তাতে হবে।”
প্রণালী এবার উত্তরে কিছু বলল না। মাথাটা যথাসম্ভব ঠান্ডা রাখল সে। রায়ান সাহেব তার রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই সে বলে উঠল,”পস্তাবো তো তখন যখন আমি তোমার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করব। আমার সুখ আমি শান্তর মাঝেই খুঁজে নিয়েছি। তাই আমি বিয়ে করলেও ওকেই করব। আর অন্য কাউকে নয়।”
~~~~~~~~~~~~~
অনুরাধা দেবী ও সোহিনী আজ এলো প্রণালীর সাথে দেখা করতে। সৌভিক বাবুই তাদের আজ এখানে পাঠিয়েছেন। তাদের দায়িত্ব হলো প্রণালীকে বোঝানো।
আজ সোহিনী ও অনুরাধা দেবীকে দেখে প্রণালী একটুও খুশি হলো না৷ অনুরাধা দেবী প্রণালীর কাছে এসে বললেন,”তুমি তোমার বাবার সিদ্ধান্তটা মেনে নাও প্রণালী। শান্ত ঐ আবিরের ছেলে। তুমি তো সবটাই জানো আবিরের জন্য তোমার মা-বাবার জীবনে কি দূর্গতি নেমে এসেছিল। তারপরও তুমি কিভাবে ওর ছেলেকে বিয়ে চাইছ?”
প্রণালী নিস্তেজ গলাতেই বলল,”শান্তর বাবা দোষ করেছে শান্ত তো কিছু করেনি। তাই না? তাহলে কেন শুধু শুধু আমি আর শান্ত সাফার করব? আমরা তো একে অপরকে ভালোবাসি তাইনা?”
সোহিনী এসে প্রণালীর মাথায় হাত রেখে বলল,”আমি তোকে নিজের ছোট বোনের মতোই দেখি প্রণালী। এই দিদির একটা অনুরোধ রাখ। রায়ান আঙ্কেলের কথাটা মেনে নে। উনি তোর ভালোই চান। এই বিয়েটা করলে তুই সুখী হবি। ছেলেমানুষী করিস না একদম।”
প্রণালী তাচ্ছিল্য হেসে বলল,”নিজের ভালোবাসার মানুষকে না পেয়ে আমি কিভাবে সুখী হবো সোহিনী দিদি?”
সোহিনী প্রণালীকে বোঝানোর জন্য বলে,”তোমার ভালোবাসার মানুষটা যে সঠিক নয় প্রণালী। আর দেখ মা-বাবার আশীর্বাদ ছাড়া কোন কিছুই সুখকর হয় না। আর সমুদ্র ভাইয়াকে বিয়ে করলে তুমি সুখীই হবে।”
প্রণালী অবাক হয়ে গেল। বলল,”সমুদ্র ভাইয়া মানে? সজল আঙ্কেলের ছেলে?”
“হ্যাঁ, ওনার সাথেই তো তোমার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে। কেন তুমি জানো না?”
প্রণালী ধাক্কা খেলো ভীষণ। মনে করল সমুদ্রের সাথে তার প্রথম দেখার কথা। ঐ অহংকারী, নিম্ন মানসিকতার ছেলেকে তাকে বিয়ে করতে হবে! প্রণালী বিড়বিড় করে বলল,”কক্ষনো না।”
বলেই সে দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে এলো। অত:পর বলল,”তোমার চয়েজের উপর আমার ভরসা উঠে গেছে বাবা। আমি ১০০% শিওর আমার চয়েজই সেরা।”
এই বলে সে ছুটে বাড়ি থেকে বেরোতে যাবে এমন সময় রায়ান সাহেব তাকে আটকে দিলেন। বললেন,”কোথায় যাচ্ছ তুমি? বিয়ের আগে পর্যন্ত কোথাও যাওয়া হবে না তোমার।”
“বাবা, আমায় যেতে দাও। তুমি আমার সাথে এত বড় জুলুম করতে পারো না।”
“আমি কি করতে পারি আর কি পারি না সেটা এবার তুমি টের পাবে।”
বলেই প্রণালীকে টানতে টানতে তার ঘরে নিয়ে গেলেন রায়ান সাহেব। প্রণালীকে ঘরে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন। নিজের মেয়ের সাথে এমন করে তিনিও অনেক কষ্ট পেলেন। কিন্তু মেয়ের ভালোর জন্য যে এটা করতেই হতো।
এদিকে প্রণালী সমানে চিৎকার করতে লাগল। সেখান থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য। কিন্তু রায়ান নিষ্ঠুর হলো ভীষণ। এতদিন মেয়ের সব জেদ মেনে নিয়ে তাকে বড্ড প্রশ্রয় দিয়েছিলেন। সেই প্রশ্রয়েই মেয়ে মাথায় উঠেছে। এখন তাকে যে মাথা থেকে নামাতেই হতো। নাহলে অপেক্ষা করছে সমূহ বিপদ!
~~~~~~~
সমুদ্র যখন থেকে তার বিয়ের কথা জানতে পেরেছে তখন থেকে না, না করেই চলেছে। তার এখন মোটেই বিয়ে করার কোন ইচ্ছা নেই। কিন্তু সজল চৌধুরীও নাছোড়বান্দা। তিনি যখন একবার সুযোগ পেয়েছেন তখন সেই সুযোগের সদব্যবহার করবেনই। নিজের ছেলেকে এবার সাংসারিক দায়বদ্ধতার জালে বাধবেন সেটা একদম ঠিক করে রেখেছেন। সমুদ্র তার বাবার সামনে চিৎকার করে বলল,”মম না থাকায় এই সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছ তাই না? তাহলে শুনে রাখো ড্যাড, আমি এখন কিছুতেই বিয়ে করবো না। নো, নেভার।”
সজল চৌধুরী বললেন,”এসব কথায় কাজ হবে। আমি মিস্টার রায়ানকে কথা দিয়েছি যে ওনার মেয়ে প্রণালীকেই আমার ঘরের বউ করে আনব। তাই এই কথা আমি রাখবোই।”
সমুদ্র একটু স্থির হলো। বলল,”প্রণালী!”
“হ্যাঁ, সেদিন পার্টিতে যেই মেয়েটাকে দেখলে তুমি। মেয়েটা কিন্তু দারুণ সুন্দরী। ফর্সা, লম্বা, সুন্দর মুখশ্রী। তোমার সাথে দারুণ মানাবে।”
হঠাৎ করেই সমুদ্র ৩৬০° ঘুরে গিয়ে বলে,”আমি বিয়েতে রাজি। তুমি দ্রুত সব এরেঞ্জমেন্ট করো।”
“তোমার সুমতি হলো তাহলে? মেয়েটাকে তাহলে মনে ধরেছে?”
সমুদ্র মুচকি হাসলো। মনে মনে বললো,”ঐ মেয়েটা সেদিন আমাকে অনেক অপমান করেছিল। আমার গায়ে হাত অব্দি তুলেছিল। এবার আমি তার সব কিছুই সুদে আসলে উসুল করব। একবার আসুক আমার বউ হয়ে। তারপর আমি ওকে মজা দেখাবো।”
~~~~~~~
প্রণালী কাঁদতে কাঁদতে নিজের চোখের জল শুকিয়ে ফেলেছে। আর কাঁদতেও পারছে না বেচারি মেয়েটা। নিজের ভালোবাসার মানুষটার সাথে চির বিচ্ছেদ আর ঘৃণিত ব্যক্তিকে নিজের স্বামী হিসেবে বরণ করে নেয়া! ভীষণ জঘন্য এসব অনুভূতি। প্রণালী দেখতে লাগল সিলিং ফ্যানের দিকে। চোখের জল মুছে বলল,”শান্তকেই যদি না পাই তাহলে আমি আর বেঁচে কি করবো? এর থেকে ভালো আমি নিজেকেই শেষ করে দেই। ঐ সমুদ্রর মতো জঘন্য মানুষকে বিয়ে করার থেকে মরে যাবাই তো ভালো।”
বলেই সে এগিয়ে গেলো সিলিং ফ্যানের দিকে। উদ্দ্যেশ্য নিজেকে শেষ করে দেওয়া। এই সকল কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া। নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে না পাওয়ার বেদনা নিয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে তার কাছে যেন মৃত্যুই শ্রেয় মনে হলো। অনুভূতির মায়ের জালে বদ্ধ হলো। প্রেম তাকে কাঁদিয়েছে! প্রেমের বিরহ তাকে ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে। তাইতো এমন আত্মবিধ্বংসী সিদ্ধান্ত নিলো রায়ান সাহেবের জেদী, চঞ্চল মেয়েটা।
to be continue…