একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় #Part_40(ধামাকা) #ইয়াসমিন_খন্দকার

0
48

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_40(ধামাকা)
#ইয়াসমিন_খন্দকার

প্রণালী নিজের কোন বড় ক্ষতি করতে যাবে তার আগেই প্রত্যুষ তার ঘরের দরজা খুলে দিলো। প্রণালীর উদ্দ্যেশ্যে বলল,”আপু, তুমি এটা কি করছ?”

প্রণালী প্রত্যুষের দিকে তাকায়। প্রত্যুষ এগিয়ে এসে বলে,”আমি জানি তুমি শান্ত ভাইয়াকে ভালোবাসো এবং তাকেই বিয়ে করতে চাও। তাই তো আমি তোমাদের এক করার জন্যই এখানে এসেছি। এখন বাড়িতে কেউ নেই। বাবা আমাকে তোমার খেয়াল রাখতে বলে বাইরে গেছে। এই সুযোগ তুমি পালিয়ে যাও। নিজের জীবনটা নিজের মতো গুছিয়ে নাও।”

প্রণালী খুশিতে আপ্লুত হয়ে যায়। তার বাবা তাকে না বুঝলেও তার ভাই তাকে বুঝেছে। প্রণালী এগিয়ে এসে প্রত্যুষের গালে কয়েকটা চুমু খায়। ভাইয়ের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে,”তোকে অনেক ধন্যবাদ ভাই। তুই আমাকে বুঝলি।”

“বাবা যেকোন সময় চলে আসবে আপি। তুই যা তাড়াতাড়ি।”

প্রণালী মাথা নাড়ায়। যাওয়ার জন্য পা বাড়ানোর সাথে সাথেই প্রত্যুষ প্রণালীর হাতে তার ফোন তুলে দিয়ে বলল,”বাবা তো তোমার ফোন নিজের কাছে রেখে দিয়েছে। তাই তুমি আমার ফোনটা নিজের সাথে করে নিয়ে যাও আপি। এর মাধ্যমে শান্ত ভাইয়ার যোগাযোগ করো।”

প্রণালীর আবারো নিজের ভাইকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বিদায় নেয়। এখন তার গন্তব্য শান্ত। শান্তর সাথে নতুন করে সে সব শুরু করবে। একসময় রায়ান সাহেবও সব মেনে নিবে এটাই তার বিশ্বাস।

~~~~~~~~~~~~
প্রণালী শান্তর সাথে ফোনে কথা বলেছে। শান্ত প্রণালীকে বলেছে কাজি অফিসের সামনে এসে বসে থাকতে। প্রণালীও তাই কাজি অফিসের দিকে পা বাড়িয়েছে। কাজি অফিসের সামনে এসে শান্তকে ফোন দিলো প্রণালী। কিন্তু শান্ত ফোনটা রিসিভ করল না। প্রণালী বারবার ফোন করতে লাগল। এক সময় শান্ত ফোনটা রিসিভ করে বলে,”আমি কিছু কারণে ঢাকার বাইরে আছি। তুমি কমলাপুর রেলস্টেশনে এসে অপেক্ষা করো। আমি যথাসময়ে পৌঁছে যাব।”

“আমি তাই করবো।”

বলে প্রণালী ফোনটা রেখে দেয়। আর অপেক্ষা করতে থাকে শান্তর জন্য। তবে তার অপেক্ষার প্রহরের কোন শেষ হয়না।
~~~~~~
রায়ান সাহেব বাড়িতে ফিরে প্রণালীকে তার রুমে না দেখে ভড়কে যান। প্রত্যুষকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকেন কিন্তু প্রত্যুষ মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকে। রায়ান সাহেব অধৈর্য হয়ে বলেন,”তুমি বুঝতে পারছ না নিজের বোনকে কি বিপদের দিকে ঠেলে দিয়েছ। ভালো চাইলে এখনই আমাকে সব সত্য বলে দাও। নাহলে নিজের বোনের দূর্ভাগ্যের দায় তোমাকে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে।”

প্রত্যুষ তবুও যখন চুপ থাকে তখন রায়ান সাহেব শান্তর বাবা রায়ানের ব্যাপারে রায়ান সাহেবকে সব খুলে বলেন। সব শুনে প্রত্যুষ বুঝতে পারে সে কত বড় ভুল করে ফেলেছে। তাই রায়ান সাহেবকে সব খুলে বলেন। সাথে এও বলেন প্রণালী তার ফোনটা সাথে নিয়ে গেছে। এ শুনে রায়ান বলে,”তুমি অনেক বড় ভুল করেছ৷ আশা করি, তোমার বোনের বড় কোন ক্ষতি হয়ে যাবার আগেই আমরা ওকে পেয়ে যাব। যাইহোক, আমি সৌভিকের সাথে কথা বলি। ও এখন নাম্বার ট্রেস করে প্রণালীর লোকেশন বের করবে।”

.
রায়ান সাহেব অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলেন। সৌভিক বাবুর ফোনে তার ধ্যান ভাঙে। ফোনটা রিসিভ করতেই সৌভিক বাবু বলেন,”প্রণালীর লোকেশন কমলাপুর রেলস্টেশনে দেখাচ্ছে।”

“ধন্যবাদ তোকে।”

এই বলে রায়ান প্রত্যুষকে সাথে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। দুজনে কমলাপুর রেলস্টেশনে পৌঁছে যায়। কিন্তু সেখানে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও প্রণালীকে পাওয়া যায়না। এদিকে লোকেশনও এইটাই দেখাচ্ছে। এরমধ্যেই হঠাৎ প্রত্যুষ রেলস্টেশনেই নিজের ফোনটা কুড়িয়ে পায়। রায়ান সাহেবকে এই ব্যাপারে বলতেই তার যা বোঝার বোঝা হয়ে যায়। রায়ান সাহেব বিমর্ষ হয়ে বলে ওঠেন,”মেয়েটাকে বুঝি আর বাঁচাতে পারলাম না!”

এক অসহায় পিতার কন্ঠে এমন কথা শুনে প্রত্যুষ ভীষণ কষ্ট পেলো। তার নিজেরও ভীষণ অনুশোচনা হতে লাগল। বারবার মনে হলো তার জন্যই আজ এত কিছু হয়ে যাচ্ছে। সে নিজের বাবাকে শান্তনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পেল না।

~~~~~~~
প্রণালীর চোখ খুলতেই সে নিজেকে আবিষ্কার করলো একটা অন্ধকার ঘরে। বিছানায় শুয়ে ছিল সে। দ্রুত আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে। তারপর শান্তর নাম নিয়ে ডাকতে থাকে। কিছুক্ষণ পর একটা মেয়ে বধুবেশে প্রণালীর রুমে প্রবেশ করল এবং লাইট জ্বালিয়ে দিলো। প্রণালী তাকে দেখে অবাক হয়ে বলল,”তুমি কে? আর শান্ত কোথায়?”

মেয়েটি বাকা হেসে বললো,”আমি লারা, আমি হলাম শান্তর হবু বউ।”

প্রণালী বড়সড় ধাক্কা খায়। হতবাক স্বরে বলে,”শান্তর হবু বউ মানে? শান্ত আর আমি একে অপরকে ভালোবাসি। তাহলে তুমি কিভাবে শান্তর হবু বউ হতে পারো?”

তখনই শান্ত সেই রুমে প্রবেশ করে বলে,”ভালোবাসা মাই ফুট। তুমি ভাবলে কি করে আমি তোমাকে ভালোবাসি?”

প্রণালী অবিশ্বাস্য কন্ঠে বললো,”শান্ত! তুমি কি বলছ? আর এই মেয়েটাই বা কি বলছে? ওর সাথে তোমার বিয়ে মানে?”

শান্ত বাকা হেসে বলে,”সবকিছু মানে তুমি এবার বুঝতে পারবে। লারা ডার্লিং, তুমি আমার পাশে আসো।”

লারা শান্তর সামনে আসতেই তার কপালে চুমু খায়। গভীর আলিঙ্গন করে। প্রণালীর বুকে বা পাশে তীব্র ব্যাথা হতে থাকে এই দৃশ্য দেখে। সে চিৎকার করে বলে ওঠে,”এসব তুমি কি করছ শান্ত? তুমি তো আমায় ভালোবাসো তাহলে এই মেয়েটার এত ঘনিষ্ঠ কেন হচ্ছ?”

শান্ত প্রণালীর সামনেই লারাকে লিপ কিস করে। প্রণালী এসব আর সহ্য করতে না পেরে চোখ বন্ধ করে নেয়। ডুকরে কাঁদতে থাকে। প্রণালীকে এভাবে কাঁদতে দেখে শান্ত পৈশাচিক আনন্দ লাভ করে। পৈশাচিক হেসে বলে,”কাঁদো, কাঁদো আরো কাঁদো। তুমি যত কাঁদবে আমি ততই পরিতৃপ্তি পাবো। শুধুমাত্র তোমার বাবা-মায়ের জন্য আমি আমার বাবাকে পাইনি কখনো। আমার বাবাকে এখনো জেলে থাকতে হচ্ছে। তার তুলনায় তো এটা কিছুই না।”

প্রণালী কাঁদতে কাঁদতে বলে,”তাহলে বাবাই ঠিক বলেছিল। তুমি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই…”

“হ্যাঁ, তবে তুমি বুঝতে একটু দেরি করে দিলে বোকা মেয়ে।”

প্রণালী এই ধাক্কা সামলাতে পারে না। তার মধ্যেই কয়েকজন মেয়ে ভেতরে চলে আসে। শান্ত তাদেরকে বলে,”একে নিয়ে বাইরে চলো তোমরা। ও আমার বিয়ে নিজের চোখের সামনে দেখুক।”

প্রণালী বারবার বলতে থাকে,”প্লিজ শান্ত, তুমি এমন করো না। আমাকে এভাবে ঠকিও না তুমি। এত কষ্ট আমি মেনে নিতে পারবো না।”

শান্তর মন একটুও গলে না। মেয়েগুলো শান্তর নির্দেশমতো কাজ করতে থাকে। প্রণালীকে নিয়ে বাইরে আসে। বাইরে একজন কাজি এসেছে। শান্ত প্রণালীর সামনেই লারার হাত ধরে কাজির সামনে বসে পড়ে। কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করে। প্রণালী ছলছল নয়নে এসব দেখতে থাকে। একসময় কাজি লারাকে কবুল বলতে বলতেই সে কবুল বলে দেয়। এরপর তিনি শান্তকে কবুল বলতে বললে শান্ত চুপ থাকে। প্রণালীর মধ্যে আশার সঞ্চার ঘটে। সে শান্তকে বলে,”আমি জানি তুমি আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে নিজের স্ত্রী হিসেবে মানতে পারবে না শান্ত। এখনই এই মেয়েটাকে ছেড়ে দাও। আমাকে বিয়ে..”

অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে শান্ত। হাসতে হাসতে বলে,”এটা শোনার জন্যই আমি চুপ ছিলাম। তুমি ভাবছ যে আমি তোমায় ভালোবাসি? সব ছিল ড্রামা। এখনো বোঝো নি গবেট।”

প্রণালী কোন প্রতিক্রিয়া দেখানোর আগেই শান্ত কবুল বলে দেয়। প্রণালী নিজের চোখের সামনেই তার ভালোবাসার মানু্ষটাকে চিরতরে হারিয়ে ফেলে। ঠকে যায় বাজেভাবে। তার প্রেমিক এখন আর তার নেই। সে এখন অন্য কারো স্বামী। প্রণালীর চোখের জল বাঁধ মানতে চাইছে না। এর মধ্যেই শান্ত বিদঘুটে হাসি দিয়ে বলে,”সবকিছু তো লাইভ দেখে নিলে। এখন কি আমাদের বাসরটাও লাইভ দেখবে?”

প্রণালী নিশ্চুপ, ভালোবাসা এখন ঘৃণায় পরিণত যেন। প্রণালী হাত তালি দেয়। শান্তকে বলে,”তুমি আজ বুঝতে পারবে না শান্ত তুমি কি হারালে। নারীর ভালোবাসা যতটা তীব্র, ঘৃণা তার দ্বিগুণ। এখন থেকে আমি শুধু তোমায় ঘৃণাই করি। ভালোবাসা বিন্দুমাত্র অবশিষ্ট নেই।”

বলেই সে এগিয়ে চলে। শান্ত বলে,”এখনই চলে যাবে? আমাদের লাইভ বাসর দেখবে না?”

প্রণালী এগিয়ে এসে শান্তকে ঠাস ঠাস করে থা*প্পড় মে*রে চলে যায়। লারা এগিয়ে এসে বলে,”তুমি ওকে কিছু বললে না কেন শান্ত?”

“আরে, ওর কথা বাদ দাও। ও এখন একটা লেজকাটা শেয়াল। কিছু করতে পারবে না।”

to be continue…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here