অলিখিত_অধ্যায় #জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা ৫২।

0
96

#অলিখিত_অধ্যায়
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৫২।

এয়ারপোর্টে এসেছে সবাই। এখনই ভেতরে চলে যাবে নীহাল আর প্রিয়তা। মৌমি কাঁদছে। দিলরুবা বেগমেরও চোখ মুখ আরক্তিম। প্রিয়তা অনেক কষ্টে সংযত করে রেখেছে নিজেকে। সে মৌমির চোখ মুছে দিয়ে বলল,

‘আর কত কাঁদবে, মেয়ে? আমি আবার আসব, বললাম তো। এবার থামো, নয়তো আমি কিন্তু রাগ করব।’

মৌমির কান্না তো থামলই না, উল্টো বাড়ল বরং। প্রিয়তারও কান্না পাচ্ছে খুব। সে দিলরুবা বেগমের দিকে চেয়ে বলল,

‘আন্টি, আপনার মেয়েটাকে থামতে বলুন তো।’

দিলরুবা বেগম কষ্ট নিয়ে বললেন,

‘কী করে থামবে, মা? তোমাকে বিদায় দিতে যে আমাদের বড্ড কষ্ট হচ্ছে।’

প্রিয়তা ভ্রু যুগলে ভাঁজ ফেলে ঠোঁট চেপে বলল,

‘এমন করলে কিন্তু এবার আমিও কান্না শুরু করব।’

ফারজাদ তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বলল,

‘আম্মি, আপনারা কী শুরু করলেন? উনারা নিজেদের দেশে ফিরছেন, এতদিন পর প্রিয়তা নিজের পরিবারের কাছে ফিরছে, আর আপনারা এভাবে কেঁদে কেটে মেয়েটার মন খারাপ করে দিচ্ছেন? আর এই মৌমি, এবার তুই থাম তো।’

মৌমি নাক টেনে অভিমানের সুরে বলল,

‘তুমি কী বুঝবে, ভাইয়া? এই কষ্ট তুমি বুঝবে না।’

ফারজাদ তার কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। কষ্ট? বুকের কোনো এক অংশে এই অদ্ভুত অনুভূতিটা যে তারও হচ্ছে। তবে সে সেসবের তোয়াক্কা না করে বিরক্ত গলায় বলল,

‘আপাতত তোর কষ্ট সাইডে রেখে মেয়েটাকে যেতে দে। নয়তো তোদের কান্নাকাটির রোল থামতে থামতে উনারা না আবার ফ্লাইট মিস করে বসেন।’

নীহাল তখন ঘড়ির দিকে চেয়ে বলল,

‘হ্যাঁ, আমাদের এখন ভেতরে যাওয়া উচিত। সময় হয়ে এসেছে।’

প্রিয়তা এবার মৌমিকে জড়িয়ে ধরল। বলল,

‘কেঁদো না, আমি আবার আসব।’

‘আমি তোমায় ভীষণ মিস করব, আপু।’

‘আমিও।’

মৌমিকে ছেড়ে সে দিলরুবা বেগমের সম্মুখে গিয়ে দাঁড়াল। বলল,

‘আন্টি, আপনাকে বলার মতো আর কোনো কথা নেই আমার কাছে। আপনি আমার দ্বিতীয় মা। আপনি আমার অনূপ্রেরণা হয়ে থেকে যাবেন আজীবন। আপনার এই ছোট্ট মেয়েটার জন্য দোয়া করবেন, বাকি জীবনে যেন আর মানুষ চিনতে ভুল না করে সে।’

দিলরুবা বেগম ঠোঁট চেপে কান্না আটকে প্রিয়তার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

‘পৃথিবীর সব সুখ তোমার হোক, মা। ভালো থেকো।’

‘আপনিও ভালো থাকবেন।’

তিনি চুমু খেলেন প্রিয়তার কপালে। প্রিয়তা প্রসন্ন হেসে ফারজাদের কাছে গেল। বলল,

‘বাবা আর ভাইয়ের পর আমার জীবনে তৃতীয় পুরুষ আপনি, যাকে আমি বিনা দ্বিধায় এখন বিশ্বাস করে নিতে পারব। আপনার দেখা পেয়েছি বলেই হয়তো এখনো পুরুষ জাতির উপর বিশ্বাসটা আমি ধরে রাখতে পেরেছি, নয়তো ওয়াদির জন্য তো সেই বিশ্বাস আমি কবেই খুইয়ে বসতাম। ধন্যবাদ আপনাকে। যদিও সামান্য ধন্যবাদে কিছুই হবে না, তাও আপনাকে দেওয়ার মতো আমার কাছে এছাড়া আর কিছুই নেই। ভালো থাকবেন। জারার কাছ থেকে দূরে থাকবেন। বিপদে পড়লে আল্লাহকে স্মরণ করবেন। আর অবশ্যই প্রতি রাতে দোয়া দুরূদ পড়ে ঘুমাবেন। আবারও একটা কথা, আমি আপনাকে কখনোই ভুলব না। আমার এই পুরো যুদ্ধে আপনি ছিলেন আমার সহযোদ্ধা। যদি কখনো কোথাও কোনোভাবে আমি আপনার সাহায্যে আসতে পারি বলে মনে করেন, তবে সঙ্গে সঙ্গেই জানাবেন আমায়। আমি আপনার পাশে দাঁড়াতে দুবার ভাবব না।’

ফারজাদ নির্বাক, নিষ্পলক শুনল সব। গভীর থেকে গভীরতর স্রোত এসে আছড়ে পড়ল তার বালুকাময় অন্তঃস্থলে। প্রিয়তা দু সেকেন্ড অপেক্ষা করল, ফারজাদ কিছু বলে কি-না। তবে তাকে নীরব দেখে ম্লান হাসল সে। ফিরে দাঁড়াতেই ফারজাদ ডাকল।

‘প্রিয়তা!’

ঘুরে তাকাল আবার প্রিয়তা। ফারজাদ অতি ক্ষীণ সুরে বলল,

‘আমার স্মৃতি এতটাও দূর্বল নয় যে, আমি আপনাকে ভুলে যাব। বরং আমার মনে হচ্ছে আপনি হয়তো আমার মস্তিষ্কে শক্ত পোক্ত এক জায়গা করে নিয়েছেন। মনে হচ্ছে না, সহজে আর এই জায়গা ছাড়বেন বলে।’

প্রিয়তা হাসল তার কথা শুনে। জিজ্ঞেস করল,

‘ভয় পাচ্ছেন?’

‘খানিকটা।’

‘কেন?’

‘মস্তিষ্ক আমার বড়ো উদার, সে যদি নিজের উদারতার প্রমাণ দিতে গিয়ে আপনার জায়গা আমার মনকেও দিয়ে বসে। তখন তো বিপদে আমাকেই পড়তে হবে, তাই না?’

এই প্রথম ফারজাদের কোনো কথায় অন্যরকম অনুভূতি হলো প্রিয়তার। ফারজাদ কী বুঝাতে চাইছে? সে বিপরীতে কিছু বলার আগেই নীহালের ডাক পড়ল। বলল,

‘প্রিয়তা আয় এবার, লেইট হয়ে যাচ্ছে যে।’

প্রিয়তা কথা বাড়াল না আর। ভাইয়ের ডাকে সাড়া দিয়ে ভেতরে গেল সে। বাইরে মৌমি হাত নাড়িয়ে বিদায় জানাচ্ছে। দিলরুবা বেগম চেয়ে আছেন ছলছল চোখে। অথচ ফারজাদের ঠোঁটের কোণে সপ্রতিভ হাসির রেশ। সবটাই প্রিয়তার নজরে পড়ল। তবে ভাবার সময় পেল না আর খুব একটা। ব্যস্ত হয়ে পড়ল প্রাসঙ্গিক কাজে।

______________

বাসাটা আজ নীরব, নিস্তব্ধ। মৌমি নিজের ঘরে। কাঁদতে কাঁদতে এখন ঘুমিয়ে পড়েছে সে। দিলরুবা বেগমও শুয়ে আছেন। ফারজাদ ঘরে নেই। সে ছাদে উঠেছে। আজ ঠিক কতদিন পর সে এই বাড়ির ছাদে এসেছে তার কোনো হিসাব নেই। এখন বিকেল। অন্তরীক্ষের প্রতীচী বরাবর রক্তিম আলো বিছানো। ভানু মহাশয় এই ক্ষণে লালে মজেছে। গগনের এক পাশে দেখা যায় কিছু বিহঙ্গের চঞ্চলতা। প্রকৃতি আজ শান্ত, নীরব। সবাই যেন আজ প্রিয়তার বিদায়ের শোকে শোকাহত। ফারজাদ রেলিং ঘেঁষে দাঁড়াল। ফোন হাতে বৃদ্ধা আঙ্গুল নাড়িয়ে যাচ্ছে সে। মাঝে মাঝে আবার দুই আঙ্গুল দিয়ে ফোনের স্ক্রিনের উপর টেনে ধরছে। অনেকক্ষণ ধরেই একই কাজ বারংবার চর্চা করে যাওয়ার পর সে ভাবল, না, এটা একটু বেশিই বাড়াবাড়ি হচ্ছে বোধ হয়। মেয়েটার ছবি এত নিখুঁত ভাবে কাছে এনে এনে দেখার কোনো মানে হয় না। তাতে মন আর মস্তিষ্ক আরো সায় পেয়ে বসবে। পরে বিপদ বাড়বে তারই।

________________

ফোন বাজছে। রিসিভ করে কানে লাগাল জারা। ওপাশ থেকে একজন বলল,

‘বাবা বলেছেন ফুল টাকা এসে যেন দিয়ে যান।’

ক্ষিপ্ত সুরে জারা জবাব দিল,

‘একটা টাকাও আর দিব না আমি। আপনার ঐ জালিয়াত বাবাকে বলে দিবেন এসব জালিয়াতি বন্ধ করতে। কোনো কালো জাদু টাদু পারেন না উনি। এসব মিথ্যে। আমার কোনো কাজই হয়নি। আর একবার ফোন দিয়ে টাকা চেয়েছেন তো, আমি মামলা করব আপনাদের নামে।’

রাগ দেখিয়ে ফোন কাটল জারা। রাগে শরীর যেন জ্বলে যাচ্ছে তার। কিছুই করতে পারছে না সে। ফারজাদকে নিজের করে পাওয়ার সব রাস্তা যেন সে খুইয়ে বসেছে।

___________

লোকটা রাগে চেঁচিয়ে উঠলেন। কী যেন একটা দিলেন আগুনের উপর। ধাউ ধাউ করে জ্বলে উঠল সেটা। চোখ দুটো লাল হয়ে উঠেছে তার। রাগে শরীর কাঁপছে। হুংকার ছেড়ে বলে উঠলেন,

‘আমার সাথে ধোঁকাবাজি? আমার জাদু নিয়ে সন্দেহ? এবার এই মেয়ে বুঝবে, কালো জাদু কী ভয়ানক জিনিস। এবার ওর চালে ওকেই মা রব আমি।’

বলেই গগন কাঁপিয়ে হেসে উঠলেন তিনি। পরক্ষণেই আবার চোখ বুজে দুলতে দুলতে কী কী যেন পড়তে আরম্ভ করলেন।

চলবে…..

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here