আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে #পর্ব_৪৬ #লেখনীতে_প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

0
80

#আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে
#পর্ব_৪৬
#লেখনীতে_প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

সুজানা বাসায় পৌঁছে দেখলো সবাই ড্রয়িংরুমে বসে সাজিয়া বেগম আর রাশেদা বেগমের সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছে।

সুজানাকে ফিরতে দেখে সবাই দাঁড়িয়ে পড়লো। ঈদ মোবারক বলে কুশল বিনিময় আদানপ্রদান শেষে সুজানা বলল

আমি খুব খুশি হয়েছি সবাই এসেছেন বলে। তরী খড়ি কখন এল?

চারটের দিকে এসেছি আপু। আম্মু ও এসেছে। মামীও এসেছে। আর বলেছে যাওয়ার সময় তোমাকে নিয়ে যেতে।

সুজানা অভিকের দিকে ফিরে তাকালো। অভিক মাথা দুলিয়ে তরীর কথায় সম্মতি জানালো।

সাজিয়া বেগম বললেন

সবাই বসো। আমি চা টা নিয়ে আসি।

সাইফের সাথে সিজান আর রিছান প্রবেশ করলো। সুজানা বলল

আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।

ওয়ালাইকুমুস সালাম। বেড়ানো শেষ?

চলে এসেছি আপনারা এসেছেন শুনে।

রেডি হয়ে নাও। বেরোতে হবে তো।

সুজানা আমতাআমতা করে বলল

কিন্তু…

অভিক সোফায় বসে পড়ে বলল

আমরা কোনো কিন্তু শুনতে আসিনি।

অনা আবিদ এসে সুজানার হাঁটু জড়িয়ে ধরলো।

সুজান আম্মু ভালো।

সুজানা তাদের চুলে হাত বুলিয়ে হাসলো। নীচু হয়ে আদর করে দিল। বলল

তাই? আপনাদের ঈদের ড্রেস তো সুন্দর হয়েছে। দুটো পুতুল।

জিনিয়া বলল

আপু তুমি রেডি হয়ে নাও। আমরা বেরোবো।

সুজানা বলল

আচ্ছা আম্মার সাথে কথা বলি।

ওকে।

*******

সাজিয়া বেগম চায়ে চিনি হয়েছে কিনা চেক করতে করতে সুজানাকে বললেন

হাত মুখ ধুঁয়ে নে। ওরা যে ড্রেসটা দিয়েছে ওটা পড়ে নে। ওটা না পড়লে আবার অন্য কিছু মনে করবে।

সুজানা মাথা নাড়ালো। সাজিয়া বেগম ট্রে হাতে তুলে নিলেন। বললেন

আর ওইরকম কিছু জানতে চাইলে যেটা বলেছি সেটা বলবি।

আমি কি ছোট। কি বলতে হবে আমি জানি আম্মা।

ঠিক আছে। রেডি হয়ে নে।

সাজিয়া বেগম চায়ের ট্রে নিয়ে রান্নাঘর পার হতে যাবে তখনি অভিককে দেখতে পেল। সে এসে চায়ের ট্রে হাতে নিয়ে নিল। বলল

শুনতে চলে এসেছি কি শলাপরামর্শ চলছে। সুজানা যাচ্ছে?

সাজিয়া বেগম হাসলেন। বললেন

হ্যা।

গুড। না গেলে কিন্তু সুজানারই লস।

কিসের লস?

সালামি পাবে না।

সাজিয়া বেগম হেসে বললেন

ওহহ।

অভিক সুজানার দিকে তাকালো। বলল

তাহলে রেডি হয়ে নিন?

সুজানা মাথা নাড়ালো। বলল

আপনি চা খান?

সাজিয়া বেগম বললেন

ওমা চা খায় না? তো কি খায়? কফি ? জানা ছিল না তো।

অভিক বলল

কে বলেছে খায় না। যেটা যেখানে ভালো। হতে পারে করিমের আন্টি চা খুব ভালো বানায়। না খেলে তো লস খাব। তাই না?

সাজিয়া বেগম হেসে উঠলেন।
সুজানাও হাসলো। কাকে কিভাবে বুঝ দিতে হয় তাতে একদম ওস্তাদ।

——–

সুজানা অভিকের দেয়া সেলোয়ার-কামিজটা পড়ে নিল। ড্রেসটা মেরুন আর সোনালী রঙের। ওড়নায় ভারী কাজ। কামিজের বুকে আর নীচে হাতে কাজ। সুজানার ভারী পছন্দ হয়েছে। মাস্টারমশাইয়ের পছন্দ তার অপছন্দ হবে না কভু।
সে ওড়না দিয়ে মাথা ঢেকে খানিকটা সাজুগুজু করে ঘর থেকে বেরুতে যাবে তখনি জিনিয়া আর তরী চলে এল। বলল

রেডি?

সুজানা মাথা নাড়ালো।

**

সাজিয়া বেগম সবাইকে সালামি দিলেন। সবাই নিতে না চাইলেও জোর করে দিলেন। অনা আবিদ বখশিশ পেয়ে সে কি খুশি।

অভিককে বলল, সুজান আম্মু বখশিশ দিচে।

অভিক রিছান আর সিজানকে রুমালের ভেতরে করে বখশিশ দিলেন। অভিক বলল

কি এগুলো?

সামান্য বখশিশ। এসব নিতে হয়। খুশি হয়ে দেয় তাই খুশি হয়ে নিতে হয়।

অভিক তাই আর কিছু বলল না।

তারপর সবাই একসাথে বেরিয়ে পড়লো।

______________

নবকুঠিরে পৌঁছুতেই গাড়ি থেকে নেমে সবাই সুজানাকে রেখে বাড়ির ভেতরে চলে গেল। জিনিয়া সবাইকে ডেকে বলল

বউ চলে এসেছে। বড় মামী ছোট মামী মিষ্টি নিয়ে আসো।

আনিকা চলে গেল সুজানার কাছে। সালমা বেগমের পেছন পেছন আনজুমা বেগম আর অভিকের ফুপী মামী খালামণি সবাই গেল। সুজানাকে তখনো দরজার কাছে দাঁড় করিয়ে রেখেছে সবাই।

সবার সাথে কুশল বিনিময় পর্ব শেষ হলো। সবার সাথে সুজানার পরিচয় করিয়ে দিলেন সালমা বেগম। প্রথম দেখা হওয়ায় সবাই মিষ্টিমুখ করিয়ে ঘরে নিয়ে এল।

আজীম সাহেব এসে বলল

সুজানা চলে এসেছে?

সুজানা সালাম করতেই উনি মাথায় হাত রেখে দোয়া করে দিয়ে বললেন

ঈদ মোবারক সুইটি।

সুজানা হেসে বলল,

ঈদ মোবারক আঙ্কেল।

অভিক ফারদিন আজকাল কাজের কাজ করছে সব। গুড জব মিস্টার।

অভিক মাথার পেছনে চুলকে বলল

থ্যাংকস বাবা।

তারপরেই দাদু এলেন। বললেন

আমার নাতিবউ এসেছে?

সুজানা উনাকে সালাম করে বলল

ঈদ মোবারক দাদু।

ঈদ মোবারক বোন আমার। তুমি ভালো আছ তো? তোমার মা ভাই ভালো আছে?

আলহামদুলিল্লাহ সবাই ভালো।

এই দেখ আমার ভাইয়ের পছন্দ কত সুন্দর। যেমন পোশাক তেমন মানুষ।

একথা শুনে ভরা মজলিশে সুজানা ভারী লজ্জা পেল। অভিক বলল

ওকে আমি এখন ঘরে যাই। প্রচুর টায়ার্ড।

সে চলে গেল।

সুজানা সবার সাথে বসে কিছু সেমাই মিষ্টি খেল। মামী আর খালামণিদের সাথে কথা বলতে অনেকটা সময় পার হয়ে গেল।

আবিদ এসে বলল

সুজান অভি ডাকে।

সুজানা সবার দিকে তাকালো। অভিকের খালামণি বললেন

যাও।

সুজানা চলে গেল। অভিকের ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ভেতরে উঁকি দিতেই অভিকও উঁকি দিয়ে তাকালো। বলল

আমার ঘরে কি?

সুজানা হাসলো। বলল

তাহলে চলে যাই?

কি আজব! বলবেন এটা আমার ঘর। এটাও শিখিয়ে দিতে হবে?

সুজানা মাথা নামিয়ে হাসলো। ঘরে ঢুকে পার্সটা বিছানায় রেখে বুক সেলফের কাছে গিয়ে বইগুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখলো। বলল

আপনি মাসে কয়টা বই কিনেন?

হিসেব থাকেনা। যখন যেটা পাই।

সুজানা একপাশে অনেকগুলো নতুন বই দেখলো। বলল

এগুলো নতুন কিনেছেন মনে হচ্ছে।

আপনাকে নিয়ে পড়ব বলে কিনেছি। আপনি কখন আসছেন?

সুজানা একটা বই নিল হাতে। সবসময় তাকে লজ্জায় ফেলার ধান্ধা।

বইয়ের পাতা উল্টাতে উল্টাতে বলল

এই বইটার অর্ধেক আমার পড়া হয়েছে।

অভিক তার পেছনে এসে দাঁড়ালো। বলল

আমার তিনটে প্রশ্নের উত্তর দেয়া বাকি। মনে আছে?

সুজানা বইয়ের পাতা থেকে চোখ তুলে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো।

হ্যা। খুব মনে আছে।

কয়টার উত্তর পারবেন?

তিনোটার।

সিরিয়াসলি?

সুজানা মাথা দুলালো।

কিন্তু এখন জানতে চাইবেন না।

কেন?

সুজানা বইটা দিয়ে মুখ ঢেকে হাসলো। অভিক বইয়ের অপর পাশে তার কপাল ঠেকিয়ে বলল

ঠিক আছে। আপনার সালামিটা নিন এবার।

সুজানা বইটা ধীরে ধীরে নামালো। দেখলো একটা চকচকে হাজার টাকার নোট।

নিন।

সুজানা নিল। বলল

আম্মা দিয়েছে বলে শোধ দিচ্ছেন?

অভিক অবাক চোখে তাকালো।

কি আজব ব্যাপার! আমি আমার বউকে সালামি দেব না? যতই হবু হোক।
আপনার আম্মা কি দিল সেটা তো আমি খুলেও দেখিনি। এখন দেখি। ওয়েট।

অভিক তার পাঞ্জাবিটা নিল। পকেটে হাত ঢুকিয়ে রুমালটা বের করে সুজানার কাছে চলে এল। রুমালের ভাঁজ খুলতেই দেখলো

দুটো পাঁচশ টাকার নোট।

তারপর রুমালে হাতের কাজ করা তোলা ফুল আর সুঁতো দিয়ে লেখা “জামাইরাজা”।

অভিক হাসলো। সুজানাকে দেখিয়ে বলল

কি সুন্দর! এটা আমি খুব যত্নে রাখব।

আম্মা এটা রমজানে বসে বসে তুলেছে। আমি দেখতে চেয়েছিলাম। দেখাইনি। আম্মা করিমকে খুব ভালোবাসে।

জরিনার মতো?

সুজানা বই দিয়ে মুখটা আবারও ঢেকে নিল।

বাইরে থেকে হাসাহাসির আওয়াজ ভেসে এল। আনিকা বলল

আসা যাবে?

সুজানা অপ্রস্তুত হয়ে অভিকের দিকে তাকালো।

অভিক বলল

আসা যাবে না কেন?

না মানে আমরা ভুল সময়ে টময়ে এসে পড়িনি তো।

সব বাজে কথা।

ওরা ঘরে ঢুকলো মিটিমিটি হেসে। সুজানা বলল

আপনারা হাসছেন কেন?

এমনি এমনি।

সিজানের বউ তানিয়া বলল

নতুন বউ কোথায়?

আনিকা সুজানাকে দেখিয়ে বলল

এইটা।

সুজানা সালাম দিয়ে জড়িয়ে ধরলো। কোলের বাবুকে দেখে বলল

বাবু তো ঘুম।

হ্যা আমি বাবুর সাথে রুমে ছিলাম। ঘুম চলে এসেছিল। আপনি এসেছেন শুনে চলে এসেছি।

তরী আর খড়ি বিছানায় উঠে বসলো অভিকের ফোন নিয়ে। অভিক বলল

ফোনের চার্জ শেষের দিকে।

শেষ হলে দেখা যাবে।

সবাই বিছানায় গিয়ে বসলো। সুজানা বইটা সেলফে রেখে তাদের সাথে বসলো। দরজা ঠেলে অনা আবিদ চলে এল। সেন্টু গেঞ্জি গায়ে। গরমের কারণে ঈদের জামাকাপড় খুলে ছুঁড়ে ফেলেছে।

দু’জনেই বিছানায় উঠে সুজানার পাশ ঘেঁষে বলল। আনিকা সুজানাকে দেখিয়ে জানতে চাইলো।

কে এটা?

সুজান।

আর কি?

টিচার।

আর?

অভির বউ।

সবাই একসাথে হেসে উঠলো।

অভিক বলল

এসব ট্রেনিং দেয়াও হয়ে গিয়েছে? ব্র্যাভো!

জিনিয়া ওর ড্রয়ার থেকে লুডু বোর্ড করে বলল
ব্রোহ চলো লুডু খেলি। আমি, তুমি, ভাবী আর তোমার বউ।

কি একটা অবস্থা! এখনো বউ হয়নি বউ বউ শুরু করে দিয়েছ। বউ হয়ে গেলে তখন কি বলবে?

জিনিয়া খিক করে হেসে বলল

ইসতিরি।

সবাই আবারও হেসে উঠলো।

তানিয়া বাচ্চা নিয়ে বসে থাকলো।

জিনিয়া কাগজে এক, দুই, তিন চার লিখে লটারি দিল। এক আর দুই এক পক্ষে থাকবে, তিন চার অন্য পক্ষে। লটারিতে সুজানা আনিকার সাথে পড়লো। অভিক আর জিনিয়া অন্য পক্ষে।

তরী ফোনে মনোযোগ রেখে বলল

এর পরের বার আমরাও খেলব।

ওকে।

খেলা শুরু হলো। শুরুতেই স্বাভাবিক খেলে যাচ্ছিলো সবাই। সুজানার সব গুটি ছক্কা দিয়ে উঠে গিয়েছে। অভিকের একটাও না। সে মন খারাপ করে বলল

এটা কোনো কথা?

আনিকা বলল

আজ তোরা হারবি। দেখে নিস।

খেলার মাঝপথে জিনিয়ার গুটি কেটে দিল আনিকা তারপর পরপর সুজানাও কেটে দিল। সে অভিককে বলল

ধ্যাত তুমি কোনো খেলাই পারো না।

অভিক বলল

তুই খুব পারছ দেখতেই পাচ্ছি।

একদম ওরকম বলবে না। আজ হারলে তোমার জন্য হারবো।

আনিকা খিকখিক করে হেসে বলল

আহ মাথা নষ্ট হয়ে গেল দু’জনের। সুজানা হারলে চলবে না।

অভিক চুপচাপ খেলছে। তার হার জিত নিয়ে সমস্যা নেই। জিতলেও সে জিতবে, হারলেও সুজানা জিতবে। সমস্যা কোথায়? কই বাত নেহি।

তারপর ঘ্যাচাং করে সুজানার তার একটা পাকা গুটি কেটে দিল। অভিক হা করে তাকালো। বলল

হাউ সেলফিশ ইউ আর সুজানা! আমি আপনার একটা গুটি কাটিনি কিছু আগে।

সুজানা বলল

কি?

জিনিয়া বলল

কিহ? গুটি কাটোনি?

বলেই ঠাস ঠাস অভিকের বাহুতে মেরে দিল।

অভিক বলল

সুজানা এটা কি করলেন? আপনার জন্য কতগুলো মার খেলাম।

সুজানা হাসলো। বলল

আমি কি বলেছি আমার দিকে টানতে।

জিনিয়া নাকিসুরে কেঁদে বলল

বউয়ের দিকে টানছে। অসভ্য ছেলে। তুমি আর একটা গুটিও সরাবে না। তোমার গুটি আমি চালাবো।

অভিক গালে হাত দিয়ে

ওকে ফাইন।

শেষমেশ সুজানা আর আনিকাই জিতলো। আনিকা সুজানাকে জড়িয়ে ধরে বলল

ভালো মেয়ে।

অভিক বলল

আমি গুটি কাটিনি বলে জিতেছেন।

সুজানা বলল

কাটেননি কেন? আমি বলেছি?

কি আশ্চর্য! যার জন্য চুরি করি সেই বলে চোর।

সবাই একসাথে হেসে উঠলো।

চলবে……..

এবার বিয়ে বিয়ে। পাঠক গল্প শেষের দিকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here