সন্ধ্যারাতে_শালুক_ফোঁটে #আদনীন_নিশাত_তারান্নুম_চৌধুরী #পর্বসংখ্যা-(০২)

0
81

#সন্ধ্যারাতে_শালুক_ফোঁটে
#আদনীন_নিশাত_তারান্নুম_চৌধুরী
#পর্বসংখ্যা-(০২)
_______________________________

০৩.
কিছু পথ যেতেই উশখুশ করে হঠাৎ রিয়াদ বলে উঠলো,”স্যার,একটা প্রশ্ন করলে রাগ করবেন?”

“বলো।”

“আপনার সাথে কাজ করার পর থেকে আমি একটা বিষয় লক্ষ্য করেছি।”

“কী?”

“আপনার সামনে যেকোনো সুন্দরী নারী থাকলে আপনি দৃষ্টি নত রাখেন কেন?”

“কারণ নারী সুন্দরী হোক আর যাই হোক ওরা হলো বিষধর সাপের মতো।”

“কী বলেন স্যার!?”

“হ্যাঁ সত্যি! আর আমি দৃষ্টি হেফাজত না করলে ওরা আমার পরকাল দংশনে বিষিয়ে তুলবে রিয়াদ।”

অবাক নয়নে তাকালো রিয়াদ। তার স্যার এ-কি বলছে!?

“হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে,“যে পুরুষ বেগানা নারী দেখে দৃষ্টি নিচু করে চলে কেয়ামতের দিন জাহান্নামের আগুন তাকে স্পর্শ করবে না।”(আত-তারগীবঃ হা/৪৭১৩)

এছাড়াও যে যুবককে কোনো রূপসী নারী নিজের দিকে ডাকলো আর সে বলল,“আমি আল্লাহকে ভয় করি!”

সে যুবককে আল্লাহ তার ছায়ায় আশ্রয় দিবেন,যেদিন তাঁর ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না। (সহীহ্ বুখারীঃ হা/৬৮০৬)

অতএব একজন খাঁটি মুমিনের পরিচয় তো তখন মেলে যখন বেগানা নারী সামনে থাকা সত্ত্বেও তার দৃষ্টি হেফাজত করতে পারে। হতে পারে আমাদের দৃষ্টি হেফাজত করার পরীক্ষা মহান রব পরীক্ষা করে দেখতে চাইছেন উনার বান্দা কতোটা ঈমানদার! এ দুনিয়াতে হেরে গেলাম মানেই হলো পরকালে হেরে গেলাম। এছাড়াও বেগানা নারীকে দেখা মানে চোখের খেয়ানত করা। বেগানা নারীকে দেখা মানেই চোখের যিনা করা। পরনারীকে দেখে যতই তৃপ্ত হওয়া যায় না কেন ক্ষণে ক্ষণে সে আমাদেরকে জাহান্নামের দিকে ধাবিত করছে। কাজেই সকল নারীর সৌন্দর্য যেহেতু আমার জন্য নয় তার স্বামীর জন্য তাহলে আমি কেনো তাদের দিকে তাকিয়ে আমার চোখের খেয়ানত নষ্ট করবো? আর পাপের ভাগীদার হবো?”

বলেই থামলো। ফের বলে উঠলো,”সকল সৌন্দর্য উপভোগ করতে নেই রিয়াদ। সর্বপ্রথম বেগানা নারীর সৌন্দর্য! এছাড়াও সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব (রাহঃ) বলেন,

قد بلغت ثمانين سنة وما شيء أخوف عندي من النساء.

অর্থঃ “আমার বয়স আশি হয়ে গিয়েছে। তবুও এখনো আমার কাছে নারীদের চাইতে ভয়াবহ আর কিছু নেই।”(ত্বাবাকাত ইবন সাদঃ হা/৬৯৪৮)

তিনি যখন এই কথা বলেন তখন উনার দৃষ্টিশক্তি প্রায় নিভেই গিয়েছে! এছাড়াও তিন শ্রেণীর মানুষ রয়েছে যাদের চক্ষু জাহান্নাম দেখবে না।

১) যারা আল্লাহর রাস্তা পাহারা দেয়।
২) যারা আল্লাহর ভয়ে কাঁদে।
৩) যারা বেগানা নারী দেখে চক্ষু নিচু করে।

আরেকটা কথা কি জানো,ছবি দেখানো তো দূরের কথা,আমি আমার স্ত্রীর নামটাও আমার বন্ধুমহলে উচ্চারণ করবো না! কারণ আমার স্ত্রীর সকল সৌন্দর্য কেবল আমার জন্য। আর এটাকেই বলে একজন পুরুষের গায়রত।”

রিয়াদ তার উত্তরটা পেয়ে গেলো। প্রাউডফিল করলো এমন একজন মানুষের স্পেশ্যাল পারসোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট হওয়ার। আজ থেকে সেও তার স্যারের প্রতিটি আদর্শ ফলো করবে এবং মেনে চলবে। বেশকিছুক্ষণ পর হঠাৎ আরমান বলে উঠলো,”তোমাকে প্রায়শই মন ম’রা দেখা যায়। এনি প্রবলেম?”

মলিন হাসলো রিয়াদ। ভণিতা,মিথ্যা কথা বলা এবং সময় অপচয় করা তার স্যার পছন্দ করেন না। জিজ্ঞেস যখন করেছে তখন সত্যিটা বলতেই হবে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,”স্যার,ইসলামে কারো ভালোবাসায় পড়া হালাল নাকি হারাম?”

“ভালোবাসা হলো এমন একটি অনুভূতি,যা কখনোই হারাম নয়! যদি কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছাড়া কাউকে ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই তাকে বিয়ে করতে হবে।”

“কেন স্যার বিয়ে না করেও তো ভালোবাসা কিংবা প্রেম করা যায়।”

“তা যায়। তবে সেটা হারাম। তার কারণ বিয়ে ছাড়া কোনো ভালোবাসা হালাল হয় না। বিয়ের মাধ্যমেই একটি ভালোবাসা সফলতা লাভ করে।”

“স্যার,আমি একজনকে খুব ভালোবাসতাম। বলতে পারেন জীবনের প্রথম ভালোলাগা যাকে বলে। প্রথম দেখায় তাকে খুব ভালো লেগে যায়। তারপর তার নাম্বার সংগ্রহ করি। এভাবেই দু’জনের আলাপ-আলোচনা চলতে থাকে দীর্ঘদিন। হঠাৎ একদিন শুনি সে বিয়ে করে ফেলেছে। খবরটা শোনামাত্রই আমি পাগলপ্রায়! আমি ভাবতেও পারিনি সে এমনটা করবে।”

টুপ টুপ করে দু-ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো রিয়াদের চোখ থেকে। ভীষণ অবাক হলো আরমান। নিশ্চয়ই খুব ভালোবাসতো! নয়তো একজন পুরুষের চোখে জল এতো সহজেই আসতে পারে না। তপ্তশ্বাস ফেললো।

“ফোনের অপর পাশের প্রেম মিথ্যা,ধোঁকাবাজি ছাড়া আর কিছুই নয় রিয়াদ। বিবাহ পূর্ব প্রেম মানে ধোঁকা,অশান্তি! ইসলামে যাকে বলে যিনা। ফোনের ওপাশে থাকা মানুষটির জন্য নিজের গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট করা মানে দুনিয়া এবং আখিরাতে ধ্বংস ডেকে আনা।”

“ঠিক বলছেন স্যার। মৃত্যুর দুয়ার থেকে আল্লাহ আমাকে রক্ষা করেছেন। তখুনি বুঝতে পারি আল্লাহ ছাড়া আপন কেউ নেই।”

“হারামের জন্য অশ্রু না ফেলে,হালালের জন্য অপেক্ষা করা উত্তম। আর শুনো,হারাম সম্পর্ক ভেঙে গেলে শুকরিয়া আদায় করো,কাপুরুষের মতো ভেঙে পড়ো না। কারণ তুমি কিছুই হারাওনি বরং মুক্তির পথ পেয়েছো। তুমি কিছুই হারাওনি বরং আল্লাহ তাকে সরিয়ে দিয়েছেন। কারণ তুমি উত্তম কিছু ডিজার্ভ করো ইনশাআল্লাহ। এছাড়াও বিয়ে বহির্ভূত প্রেম সম্পূর্ণ হারাম। এটা আল্লাহর বিধান। এই তথাকথিত প্রেম টু লাভ কোনোটাই ভালোবাসা নয়। ভালোবাসা তৈরী হয় বিয়ের মাধ্যমে। আরেকটা সত্য হলো,প্রেম করে বিয়ে করার পর দু’জন দু’জনের কাছ থেকে কোনো সম্মান পায় না! বিশেষ করে স্বামীরা বউদের কাছ থেকে স্বামীর মর্যাদা পায় না! এরা জীবন যুদ্ধে একে-অপরের সহযোগী নয় বরং প্রতিযোগী হয়ে উঠে। ভুল জায়গায় সাক্রিফাইজ আর ভুল মানুষের সাথে কম্প্রোমাইজ না দিবে সুখ না দিবে শান্তি না দিবে সফলতা! সবচেয়ে বড় কথা,বিয়ে ছাড়া ছেলে-মেয়ের সকল সম্পর্ক হারাম। হারাম সম্পর্কে কোনো কল্যাণ নেই। হারামসঙ্গী তাহাজ্জুদের জন্য ডেকে দিলেও হারাম সে হারামই থাকবে। বিয়ে ছাড়া ছেলেমেয়ের সব সম্পর্ক হারাম এবং যিনা। একমাত্র বিয়ে পরবর্তী সম্পর্কই হালাল। এছাড়াও একজন পরনারী দ্বীনদার সেজে নিজেকে যতোই ভালো প্রমাণ করুক না কেন তার প্রতিটি কাজই বিষাক্ত। গার্লফ্রেন্ড নামক ফিতনা একজন পুরুষকে যতোটাই দ্বীনের পথে নিয়ে আসতে চেষ্টা করুক না কেনো ক্ষণে ক্ষণে ঠিক এভাবেই সে একজন পুরুষের পরকাল ধ্বংস করবে,যা যিনার সাথে যুক্ত রয়েছে। পরনারী যতোটাই সুন্দরী হোক না কেন সে একজন পরপুরুষের জন্য হারাম। রাসূল (সা.) বলেন,“যিনাকারি ও যিনাকারিনী এরা কিয়ামত পর্যন্ত উলঙ্গ অবস্থায় আগুনে জ্বলতে থাকবে।”(মিশকাতঃ হা/৪৬২১)

শুনো,এখন থেকে দাঁড়ি রাখবে। একজন পুরুষের আসল সৌন্দর্য দাঁড়িতে। আর দাঁড়ি রাখলে দেখবে দূর্বল ঈমানের মেয়েরা এড়িয়ে যাবে এবং দ্বীনদাররা সম্মান করবে। আর দ্বীনদার জীবনসঙ্গী খুঁজো এবং দ্রুত বিয়ে করে নাও। হালাল জীবনযাপন করো। জীবনকে সহজ করে নাও। আর হারাম থেকে বাঁচতে কলিজা লাগে। এটা সবাই পারে না। সমাজের সবাই নষ্টামির দিকে ছুটছে আর তুমি একা স্রোতের বিপরীতে। এরই নাম মুসলমান। অন্যের জন্য চোখের জল না ফেলে তওবার অশ্রুতে পরিচ্ছন্ন হওয়ার চেষ্টা করো।”

“স্যার আমার সেই গার্লফ্রেন্ড ও দ্বীনদার ছিলো।”

“রিয়াদ,দ্বীনদার গার্লফ্রেন্ড কিংবা বয়ফ্রেন্ড না। দ্বীনের মুখোশ পরে যে তার রবকে ধোঁকা দিতে পারে এর নিশ্চয়তা কি সে যে তোমাকে ধোঁকা দিবে না?”

“একদম ঠিক বলেছেন স্যার। সেও দ্বীনের মুখোশ পরে আমাকে ধোঁকা দিয়েছে।”

“মনে রেখো,নারী আসক্তির কারনে অন্তর ম’রে যায়। ফলে সে আল্লাহর কাছে মোনাজাতের স্বাদ পায় না। ফিতনার স্রোতে গা ভাসানো হাজারজন বন্ধুর চেয়ে অল্পসংখ্যক দ্বীনদার বন্ধু থাকাই উত্তম। মনে রেখো,জীবনসঙ্গী যদি দ্বীনদার ও নিজের মতাদর্শের হয়,তবে তুমি বিশ্ব জয় করতে পারবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সহীহ বুঝ দান করুক।”

মাথা নিচু করে মলিন গলায় বলল,”আমিন।”

আবারও আরমান বলে উঠলো,”যদি কাউকে ভালোবাসো তাহলে মন থেকে তার জন্য এইভাবে দোয়া করবে।”

কৌতুহলী হলো রিয়াদ।

“কিভাবে স্যার?”

“ইয়া রব! আমি পাপের সমুদ্রে ডুবে যাচ্ছি আমাকে হেদায়েত দিন। ইয়া আল্লাহ! আমি তাকে ভালোবাসি,তাকে পছন্দ করি তাকে আমার জন্য হালাল করে দিন। সে যদি আমার জন্য কল্যাণকর হয় তাহলেও দিন। কল্যাণকর না হলেও তার মাঝে কল্যাণ দিন। তাও আমাকে দিন,একান্তই আমার করে দিন। ইয়া আল্লাহ! আপনি আমাকে যা রিযিক দিয়েছেন,তাতেই আমাকে সন্তুষ্ট বানিয়ে দিন। তাতে বরকত দান করুন। এবং আমি যা কিছু হারিয়ে ফেলেছি,তার তুলনায় অধিক উত্তম কিছু আমাকে দান করুন। আজ থেকে এইভাবে দোয়া করে চাইতে থাকবে।”

“তাহলে কি তাকে পাবো স্যার?”

“তোমার যা চাওয়ার দোয়াতে চাইতে থাকবে। সম্ভব-অসম্ভব এইসব মানুষের ধারণা মাত্র। আল্লাহর কাছে অসম্ভব বলে কিছুই নেই। নিসন্দেহে সবই সম্ভব। আল্লাহ চাইলে পেতেও পারো। ওই যে বললাম না অসম্ভব বলে কিছু নেই।”

“ধন্যবাদ স্যার আজ থেকে আমি এমনটাই করবো। তবে একটা কথা ছিলো স্যার।”

“বলো।”

“স্যার আমরা তো পুরুষ মানুষ। একজন সুন্দরী নারী দেখলে অনিচ্ছা সত্ত্বেও দৃষ্টি চলে যায়। আপনার মতো কিভাবে পরনারী থেকে নিজের দৃষ্টি হেফাজত করবো একটু বললে উপকার হয়। কারণ কোনো সুন্দরী নারী দেখলে আমার দৃষ্টি আমি সংযত করতে পারি না।”

“খুবই সহজ রিয়াদ। আজ থেকে কোনো নারীর দিকে তাকাবে না। যদি প্রয়োজনে কথা বলতে হয় যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই বলবে। আর হ্যাঁ পৃথিবীতে পদে পদে নারী পাবে। ধরো,তোমার স্ত্রী অন্তসত্ত্বা,তোমার শালী তাকে দেখাশোনা করার জন্য এসেছে। স্ত্রীর সাথে দীর্ঘদিন শারীরিক মিলন হয় না। এ অবস্থায় নিজেকে কিভাবে সামলাবে?এখন থেকেই অনুশীলন করো মেয়েদের সাথে কিভাবে চলতে হয়। ধরো যদি বিয়ের পর স্ত্রীকে রেখে দেশ-বিদেশে যেতে হয় তখন?এজন্য সংযম করা শিখো। কোনো মেয়েকে দেখলেই উত্তেজিত হওয়া যাবে না। সেটা নিজের স্ত্রী হলেও। কারণ নিজ স্ত্রীর (পিরিয়ডস) চলতে পারে,রমজানে রোযা রাখতে পারে,অন্তসত্ত্বা হতে পারে,অসুস্থ হতে পারে। সুতরাং সংযম করো। পর্দা করা মানে নারী পুরুষ বন্দী হয়ে যাওয়া নয়। বরং যৌনতা বাদ দিয়ে স্বাভাবিক অবস্থান বজায় রেখে চলা।”

“স্যার নারী-পুরুষের চোখের পর্দা কি?”

“চোখের পর্দা মানে এটা নয় যে চোখে কাপড় পড়ে থাকবে। চোখের পর্দা মানে নিজের চোখকে সংযত করে রাখা খারাপ দৃষ্টি হতে। যেমন ধরো তুমি বসে আছো আর তোমার সামনে দিয়ে একজন নারী বেপর্দা হয়ে হেঁটে যাচ্ছে,হঠাৎ তোমার চোখ তার দিকে পড়লো। তখন তোমার কাজ হবে চোখকে নীচের দিকে করে নেওয়া। তোমার সামনে কেউ খারাপ কাজ করলে সেটাকে বাঁধা দেওয়া ও তাকে বোঝানো। এটাকেই পর্দা হিসেবে বোঝানো হয়েছে। আর একজন নারীর কাজ হচ্ছে চোখ নীচের দিকে করে চলা। যত সম্ভব পরপুরুষের সাথে কথা না বলা।

এছাড়াও আমি যখন ভার্সিটিতে পড়াশোনা করতাম তখন আমাকেও মাঝে মাঝে মেয়েদের সাথে কথা বলতে হতো। কিন্তু তারপরও আমি যা যা করতাম তা হলোঃ

১) কথাকে যতটা সম্ভব সংক্ষেপ করার চেষ্টা করতাম।

২) কারও সাথে যেচে বিনা প্রয়োজনে অহেতুক কথা বলার চেষ্টা করতাম না।

৩) কেনো মেয়ের সাথে একা একা কথা বলার চেষ্টা করতাম না। তৃতীয় কাউকে সাথে রাখার চেষ্টা করতাম। যদিও আমি মেয়েদের এড়িয়ে চলি।

৪) সব সময় ছেলেদের পাশে বসার চেষ্টা করতাম।

৫) মেয়েদের সাথে কথা বলার সময় দৃষ্টিকে নত রাখতাম।

৬) মিষ্টি কণ্ঠে কথা বলতাম না কখনো।

৭) কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে দেওয়ার চেষ্টা করতাম। কিন্তু তার পরিবর্তে কোনো ভালোবাসাপূর্ণ কথা কামনা করতাম না।

৮) তাদেরকে উপহার দেয়া এবং নেয়া থেকে বিরত থাকতাম।

৯) আমার কাজের ব্যপারে কোনো মেয়ে প্রশ্ন করলে উত্তর দেই,‘আমি এভাবেই চলি।’

১০) ক্লাস করার সময় ম্যামদের দিকে সরাসরি তাকিয়ে থাকতাম না বরং খাতার দিকে দৃষ্টি রাখতাম।

১১) সালাতের সময় হলে টিচারদের অনুমতি নিয়ে মসজিদে গিয়ে ফরয সালাত আদায় করে আবার ফিরে আসতাম।

এমনটা করার কারণে এখন পর্যন্ত আমি কোথাও তিরস্কৃত হইনি বরং আমার অধিকাংশ ক্লাসমেট আমার প্রতি ভালোবাসা দেখিয়েছে৷ তবে কেউ যদি কখনও তিরস্কার করেও তারপরও শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমি উপরোক্ত নীতিতে অটল থাকবো ইনশাআল্লাহ৷ আমার কাজগুলো কুরআন,সুন্নাহর সাথে সাংঘর্ষিক না হলে তুমিও সেগুলো অনুসরণ করতে পারো।”

“ইনশাআল্লাহ। আজ থেকে আমিও এইভাবে চলার চেষ্টা করবো।”

০৪.
গভীর রাত হলেও শশীপ্রভার চোখে আজ বিন্দুমাত্রও ঘুম নেই। আরমানকে দেখার পর থেকে শশীপ্রভা অন্য জগতে বিচরণ করছে। মানুষটার সবুজমণির চাহনি,এটিটিউড,কথাবার্তা,রাগ সব কেমন যেন অদ্ভুত! অন্যরকম! শশীপ্রভা কিছুতেই মানুষটাকে ভুলতে পারছে না। জীবনে কত-শত ছেলে সে দেখেছে। কত-শত ছেলের প্রপোজ পেয়েছে,লাভ লেটার পেয়েছে। কখনো কারো প্রতি এতোটা আগ্রহ তৈরী হয়নি যতোটা এই মানুষটাকে ঘিরে হয়েছে। শশীপ্রভা অস্থির হয়ে উঠলো। আনমনেই চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়লো। প্রথম থেকেই মানুষটার প্রতি তার অদ্ভুত রকমের আগ্রহ রয়েছে,একটা দূর্বলতা রয়েছে। কিন্তু মানুষটা তাকে বুঝেও কেমন যেন বুঝে না। প্রতিনিয়ত ইগনোর করে চলছে। ইগনোর করার কারণে মানুষটার প্রতি দিনকে দিন আরো আগ্রহী হয়ে উঠেছে।

০৫.
রাতে ডিনার করে শুয়ে পড়লো আরমান। দু-চোখ বুজতেই আকস্মিক চোখের অক্ষিপটে ভেসে উঠলো চাঁদের মতো শশীপ্রভার গোলগাল মুখশ্রী,বড় এবং টানাটানা চোখদুটো আর থুতনির মধ্যে থাকা তির তির করে কাঁপা ছোট্ট কুচকুচে কালো তিলটা। আরমান চোখ মেলে তাকালো। আশ্চর্য! মেয়েটার কথা মনে পড়ছে কেন? আবারও চোখ বন্ধ করলো। সেইম একই কাণ্ড ঘটলো। শশীপ্রভার মুখটা ভেসে উঠলো। আবারও দেখলো তির তির করে তিলটা কাঁপছে। তড়াক করে উঠে বসলো। হঠাৎ এমন হচ্ছে কেন?এমনটা তার কখনোই হয় না। এই জীবনে সে অনেক নারী দেখেছে যারা শশীপ্রভার চেয়েও হাজার গুণে উত্তম,সুন্দরী! রূপসী! কিন্তু তাদের প্রতিচ্ছবি অক্ষিপটে না ভেসে ওই মেয়েটার ছবি বার-বার ভাসছে কেন? আরমান বুঝতে পারছে না। কেমন যেন হাসফাঁস করে উঠলো। নিশ্চয়ই নফস তার দ্বারা ফিতনা সৃষ্টি করতে চাইছে। অবশ্য সে-তো কোনো ফেরেশতা নয়,সে-তো একজন মানুষ। আর নারীর প্রতি পুরুষের আকর্ষণ তো থাকবেই। আরমান অযু করে আসলো। তাহাজ্জুদ আদায় করে উত্তম জীবনসঙ্গিনীর জন্য দোয়া করে বলল,”হে আল্লাহ! যদি তার মধ্যে আমার জন্য কল্যাণ থেকে থাকে তবে তাকে আমার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দিন। আর যদি কল্যাণ না থাকে,তবে কল্যাণ দান করুন। পরে আমার সঙ্গে বিয়ে দিন। ইয়া আল্লাহ! তাকেই আমার স্ত্রী হিসেবে দান করুন,যিনি আমাকে দ্বীনদার,ঈমানদার এবং ইসলামের পথে চলতে সাহায্য করবে। আমিন।”

ফজরের আযান হতেই নামায আদায় করে জায়নামাজ গুছিয়ে শোয়ার প্রস্তুতি নিলো। ঈদার্নিং তার মা এবং দাদীমা উঠে-পড়ে লেগেছেন তার বিয়ে দিতে। কিন্তু আরমান কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। তার দাদীমার পছন্দ একজনকে আর তার আম্মিজানের পছন্দ আরেকজনকে। বিছানায় শুয়ে চোখ বুজতেই ফের শশীপ্রভার মুখটা ভেসে উঠলো। আরমান বিরক্ত হয়ে শোয়া থেকে উঠে এবার একটা স্লিপিং মেডিসিন খেয়ে নিলো।

০৬.
সপ্তাখানেক পরের কথা। জুমুআর সালাত আদায় করে আরমান মসজিদ থেকে বের হয়ে গাড়ির কাছে আসতেই দেখলো রিয়াদ গাড়ির আড়ালে দাঁড়িয়ে ধূমপান করছে। আরমানকে দেখতেই রিয়াদ সিগারেট ফেলে মাথা নুয়ে রইলো। তার স্যার দেখে ফেলেছে মানে বিরাট অপরাধ করে ফেলেছে। আরমান মুখ ফিরিয়ে নিলো। রিয়াদ যে সিগারেট খায় তা ইতিপূর্বেই আঁচ করতে পেরেছে। কিন্তু হাতেনাতে ধরার অপেক্ষায় ছিলো। রিয়াদ কাচুমাচু করলো।

“স্যরি স্যার। আর কখনো সিগারেট পান করবো না। এক্সের কথা মনে পড়লে ওই এক-আধটু সিগারেটের নেশা ধরে। তাই না পারতেই…”

“উত্তমরূপে গড়গড়া কুলি এবং অযু করে তুমি আমার সাথে কথা বলবে তার পূর্বে নয়। ইউ ক্যান গো নাও।”

একদম কঠোর গলায় বললো কথাগুলো। কেঁপে উঠলো রিয়াদ। দ্রুত অযু করে এলো। আরমান রিয়াদের দিকে তাকালো না। রিয়াদের মন ভার হলো।

“স্যার আপনি এখনো রেগে আছেন? স্যরি স্যার।”

মাথা নুয়ে রাখলো রিয়াদ।

“ধূমপান করা ভালো জিনিস?”

“অনেকেই তো পান করে স্যার। তাই আমিও মাঝেমাঝে একটু পান করি। এটা খাওয়া কি খুব খারাপ স্যার?”

“তোমার কি মনে হয়?”

আমতা আমতা করলো রিয়াদ।

১) সর্বপ্রথম সিগারেটের গায়ে লেখা থাকে “ধুমপান মৃত্যু ঘটায়।” আল্লাহ পাক বলেন,“তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ করো না।”(সুরা বাকারাঃ আয়াতঃ ১৯৫)

২) “সিগারেট নেশা-জাতীয় জিনিস।” নবী করিম (সাঃ) বলেছেন,“প্রত্যেক নেশার বস্তুই মাদক। (খামার) আর প্রত্যেক নেশার জিনিসই হারাম।”(মুসলিমঃ হা/২০০৩)

৩) “কেউ একসাথে ১০টি সিগারেট খেলে তার নেশা হতে বাধ্য।” রাসূল (সাঃ) বলেছেন,“যা অধিক সেবন করলে নেশার সৃষ্টি হয় তা কম সেবন করাও হারাম।”(তিরমিযিঃ হা/১৮৬৫,আবু দাঊদঃ হা/৩৬৮১)

৪) “সিগারেট অপবিত্র জিনিস।” আল্লাহ পাক বলেন,“তোমাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল ও অপবিত্র বস্তু হারাম করা হয়েছে।”(সুরা আরাফঃ আয়াতঃ ১৫৭)

৫) “সিগারেটে অপব্যয় ছাড়া অন্য কিছু নয়।” মহান আল্লাহ পাক বলেন,“নিশ্চয়ই অপব্যায়কারী শয়তানের ভাই।”(সূরা আল-ইসরাঃ (বনী ইসরাইল) আয়াতঃ ২৭)

৬) “সিগারেটের ধোঁয়ায় মানুষ চরম কষ্ট পায়।” রাসূল (সাঃ) বলেন,“যে ব্যক্তি আখিরাতে বিশ্বাস রাখে,সে যেন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।”(বুখারী)

৭) “সিগারেট পুষ্টিকর কিংবা ক্ষুধা নিবারণ মূলকও কিছুই নয়।” জাহান্নামীদের খাবার প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক বলেন,“এটা তাদের পুষ্টিও যোগাবে না ক্ষুধাও নিবারণ করবে না।”(সুরা গাশিয়াহঃ আয়াতঃ ০৭)

অতএব আল্লাহ পাক আমাদেরকে এ সর্বনাশা নেশা থেকে দূরে রাখুন। আমিন। এবার তুমিই সিদ্ধান্ত নাও এই ধুমপান খারাপ নাকি ভালো? আর এই ধূমপান করবে নাকি ছাড়বে?”

“স্যার আমি আর জীবনেও ধূমপান করবো না। কথা দিলাম আপনাকে।”

হঠাৎ রিয়াদের ফোন বেজে উঠলো। আরমান তাকিয়ে রইলো রিয়াদের মুখের দিকে। ঘাবড়ে গিয়ে রিয়াদ ফোন সাইলেন্ট করে দিলো। টোনের মধ্যে রিয়াদ কোরআন তিলাওয়াত দিয়েছে। আরমানের মুখের ভঙ্গি দেখে কাচুমাচু করে বলল,”স্যার এনি প্রবলেম?”

“বিরাট!”

“যদি বলতেন।”

“ফোনের রিংটোন হিসেবে আযান,কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদির ব্যবহার করবে না।”

“কেন স্যার এটা তো ভালো জিনিস।”

“মোবাইলের রিংটোন হিসেবে অনেকেই গানের বাজনা,গান ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকে। এটা যে নিন্দনীয় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এর বিপরীতে কিছু মানুষ আযান,কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি রিংটোন হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। তাদের নিয়ত অবশ্যই ভালো। কিন্তু এ কাজটি ঠিক নয়। কুরআন আল্লাহর কালাম। কুরআন তিলাওয়াত অনেক বড় সওয়াব ও ফযীলতের আমল। কুরআন তিলাওয়াত শোনাও অনেক সওয়াবের কাজ। তেমনি আযান আল্লাহ তাআলার বড়ত্ব ও তাসবীহ সম্বলিত কিছু বাক্যের সমষ্টি,যা শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক তথা “শিআর”এগুলো নিজেদের কাজে ব্যবহারের জন্য নয়। “মোবাইলে কল এসেছে।”এ খবর দেওয়ার জন্য আল্লাহর পবিত্র কালাম-ওহী বা আযান-এর ব্যবহারের দ্বারা আল্লাহর কালামকে নিজের কাজে ব্যবহার করা হয়,যা আল্লাহর কালামের সাথে বেআদবী ও নিন্দনীয় কাজ। তাছাড়া রিং আসলে মানুষ কল ধরা নিয়েই ব্যস্ত হয়। তিলাওয়াতের দিকে মনোযোগই দেয় না। আর মোবাইল নিয়ে টয়লেটে প্রবেশের পর ফোন এলে অপবিত্র স্থানে আল্লাহর নাম,তাসবীহ বা আল্লাহর কালামের ধ্বনি বেজে ওঠে। এতে যে চরমভাবে এর মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয় এ কথা কে না বুঝে। সুতরাং রিংটোন হিসেবে এগুলোর ব্যবহার থেকে বিরত থাকা কর্তব্য। হ্যাঁ,যে রিংটোনে গানের সুর বা বিশেষ কোনো তাল নেই তা ব্যবহারে দোষের কিছু নেই। যেমন অনেক মোবাইলে ল্যান্ডফোনের আওয়াজের মত বা সাইকেলের বেলের মত রিংটোন থাকে এ ধরনের রিংটোন ব্যবহারে দোষ নেই।”

সাথে সাথেই রিয়াদ রিংটোন বদলে ফেললো। আজ কত বড় উপকার করলো তার স্যার।
___________

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here