সন্ধ্যারাতে_শালুক_ফোঁটে ❤️ #আদনীন_নিশাত_তারান্নুম_চৌধুরী ❤️ #পর্বসংখ্যা-(০৩)

0
87

#সন্ধ্যারাতে_শালুক_ফোঁটে ❤️ #আদনীন_নিশাত_তারান্নুম_চৌধুরী ❤️
#পর্বসংখ্যা-(০৩)
_______________________________

০৭.
সপ্তাহখানেক পরের কথা। আরমান আর রিয়াদ জরুরী কাজে এক জায়গায় যাচ্ছিলো। আজ ড্রাইভার আনেনি। রিয়াদ নিজেই ড্রাইভ করছে। আরমান পাশে বসে রয়েছে। হঠাৎ বেশ কয়েকটি মেয়ে গাড়ির সামনে দৌঁড়ে রোড পার হতেই অসতর্কতাবশত একটি মেয়ের গায়ে গাড়ি লেগে যায়। মেয়েটি রোডে পড়ে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করলো। রিয়াদ ঘাবড়ে গিয়ে গাড়ির ব্রেক কষলো। ওরা দু’জন গাড়ি থেকে নামতেই সাথের মেয়েগুলো তেড়েফুঁড়ে এলো। আরমানকে দেখামাত্রই মেয়েগুলো চুপসে গেলো। হঠাৎ দৃষ্টিগোচর হলো শশীপ্রভা নিচে বসে আছে পা ধরে। আরমান ঘাবড়ে গেলো। আরমানকে দেখতেই শশীপ্রভা চমকালো। এবার চিৎকার করে উঠে বলল,”আপনারা দু’জন ইচ্ছে করেই আমাকে এক্সিডেন্ট করেছেন তাই না?”

বিরক্তবোধ করলো আরমান। মেয়েটা যে কি! তারা কেন এক্সিডেন্ট করবে। আজব! সেদিনের ব্যপার তো সেদিনই শেষ। রিয়াদ বলল,”আপনার ভুল হচ্ছে কোথাও মিস। আমরা কেন এমনটা করবো?এটা জাস্ট একটা এক্সিডেন্ট।”

“ও তার মানে আমি ইচ্ছে করেই এক্সিডেন্ট হয়েছি তাই না?”

এবার মুখ খুললো আরমান। গম্ভীর রাশভারী স্বরে বলল,”হ্যাঁ। আপনি ইচ্ছে করেই আমাদেরকে বিপদে ফেলতে চেয়েছেন। এখন নিজেই বিপদে পড়েছেন। রাস্তায় চলাফেরা করার সময় চোখ-কান খোলা রেখে করতে পারেন না?রোডের উপর দৌঁড়াদৌঁড়ি করেন কেন?এটা কি দৌঁড়ানোর জায়গা? ডিজগাস্টিং!”

শশীপ্রভার খুব রাগ হলো আরমানের ডোন্ট কেয়ার ভাব দেখে। মানুষটা প্যান্টের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর তাকে উপদেশ দিচ্ছে! কোথায় তাকে হেল্প করবে তা না! ভীষণ অভিমান হলো তার। আরমানের সাথে পাল্টা যুক্তি খণ্ডন করে কথা বলতে ইচ্ছে করলো না। অভিমানে মুখ সরিয়ে নিলো। ওদিকে সুরভী আর শুভশ্রী তামাশা দেখছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে।

“এ্যাই,তোরা দাঁড়িয়ে আছিস কেন?তোল আমাকে। এক্সিডেন্ট করে এখন ডোন্ট কেয়ার ভাব দেখানো হচ্ছে।”

ওরা চেষ্টা করেও শশীপ্রভাকে তুলতে পারলো না। পায়ে খুব বাজেভাবে আঘাত পেয়েছে। রিয়াদ বলল,”আপনাকে হসপিটালে নিতে হবে মিস।”

তেঁতে উঠলো সুরভী।

“আপনি গিয়ে বসে থাকুন না হসপিটালে। এক্সিডেন্ট করে এখন আবার আদিখ্যেতা দেখাতে এসেছে। যত্তসব!”

রিয়াদ হকচকালো। বাপরে! সব জল্লাদের পাল্লায় পড়লো! ওরা চেষ্টা করেও শশীপ্রভাকে হাঁটিয়ে নিয়ে যেতে পারলো না। আরমান এতক্ষণ তামাশা দেখছিলো। আকস্মিক শশীপ্রভার হাত ধরে গাড়িতে উঠালো। শশীপ্রভা চিৎকার করে উঠে বলল,”কি করছেন হাত ছাড়ুন! লাগবে না কারো হেল্প।”

পাত্তা দিলো না আরমান। গাড়িতে উঠতেই রিয়াদ গাড়ি স্টার্ট দিলো। ওরা হসপিটালে পৌঁছে শশীপ্রভাকে ব্যান্ডেজ করে ওর বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো। আঘাতপ্রাপ্ত পা নিয়ে অসহায় নেত্রে তাকিয়ে রইলো শশীপ্রভা। এমন হৃদয়হীন কেন মানুষ?এবার সে সিঁড়ি বেয়ে বাসায় উঠবে কিভাবে? আর সেও তো ভুলে গেছে ওই মানুষটা কোনো নায়ক নয় যে তাকে পাঁজাকোলে তুলে বেডরুমে নিয়ে যাবে।

০৮.
রাতে ঘুম এলো না আরমানের। শশীপ্রভার জন্য খুব চিন্তা হচ্ছিলো। ব্যান্ডেজ করার সময় মেয়েটা খুব কান্নাকাটি করেছিলো। এটা ফিকে কান্না নয়। আরমানের কেমন যেন মায়া লাগলো। বুকের বাঁ-পাশে চিনচিন করে ব্যথা করে উঠলো। এপাশ-ওপাশ হয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলো কিন্তু লাভ হয়নি। শশীপ্রভার কান্নাসিক্ত মুখখানি খালি চোখের সামনে ভাসছে। আরমান উঠে বসলো। কেন যেন মেয়েটাকে তার দেখতে খুব ইচ্ছে করছে! আরমান ছাঁদে গেলো। ছাঁদের
কার্নিশের উপর পা ঝুলিয়ে বসলো। তাকালো আকাশের দিকে। অজস্র তারাভর্তি আকাশে। গোল থালার মতো একখানি রূপালি চাঁদও রয়েছে। ওই চাঁদটাকে শশীপ্রভার মুখের মতো লাগছে। মনে হচ্ছে চাঁদ দেখছে না শশীপ্রভার মুখখানি দেখছে। ভারাক্রান্ত মনে চাঁদের দিকে তাকিয়ে অনেকক্ষণ বসে রইলো। চোখ পড়লো মহলের বাগানের দিকে। এতোরাতে ওখানে রিয়াদ বসে আছে। তাও কানে হেডফোন গুঁজে। আরমান চমকালো না। প্রায়শই রিয়াদ এভাবেই বসে থাকে। হয়তো এক্সের কথা মনে পড়ছে। দীর্ঘশ্বাস ফেললো। বসা থেকে উঠে নিচে চলে গেলো। রিয়াদের পাশে বসতেই চমকে উঠে ঘাবড়ে গেলো। কান থেকে হেডফোন সরিয়ে নিলো।

“স্যার আপনি! ঘুমাননি?”

“না।”

মৃদু হাসলো রিয়াদ।

“আমারও ঘুম আসছিলো না স্যার।”

“সেইম।”

“কফির ব্যবস্থা করবো স্যার?”

“নো নিড।”

কিছুক্ষণ নীরব রইলো দু’জনে। আচমকা বলে উঠলো,”তুমি গান শুনছো?”

“জ্বী স্যার। ওই মন খারাপ হলে একটু স্যাড সং শুনি।”

চমৎকার হাসলো আরমান।

“খুব ভালো।”

“জ্বী স্যার।”

“তা আল্লাহর ইবাদাত না করে তুমি স্যাড সং শুনছো। স্যাড সং তোমায় প্রশান্তি দিতে পারবে নাকি তোমার দুঃখ লাঘব করতে পারবে রিয়াদ? নাকি তুমি এইরকম আরো বেশ কয়েকটা রাত পাবে ইবাদাত করার জন্য?”

কথা বলতে পারলো না রিয়াদ। চিন্তায় পড়ে গেলো। প্রলম্বিত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো আরমান।

“আহ! যে গান-বাজনার জন্য নবী করীম (সা.) দুই কানে আঙ্গুল ঢুকিয়ে সরে যেতেন,আফসোস আজ সেই নবীর উম্মত কানে হেডফোন ঢুকিয়ে গান শোনে।”

লজ্জায় মাথা নুয়ে গেলো রিয়াদের।

“তুমি কি জানো গানের প্রভাবে মানুষের অন্তর উদাসীন হয়ে যায়?”

নীরবে মাথা নেড়ে না বুঝালো।

“গান এবং কোরআন মানুষের অন্তরে একসাথে থাকতে পারে না রিয়াদ। গান হলো শয়তানের বাঁশি! শয়তান যেই অন্তরে বাঁশি বাজায় সেই অন্তরে কোরআন প্রবেশ করতে পারে না।”

অপরাধবোধে মাথা নুয়ে এলো রিয়াদের। না জেনে কতবড় অপরাধ করে ফেলেছে সে।

“রিয়াদ আমি তো অবাক হই এই ভেবে,তুমি এই স্যাড সং শুনে শান্তি পাও। আর আমি শান্তি পাই,পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুর আযানে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম সঙ্গীত,“লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক,লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক,ইন্নাল হামদা,ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক,লা শারিকা লাকা।”

আমি যখন পড়ি,শ্রবণ করি তখন গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়। আমি জানি না এই সঙ্গীতের মাঝে কী এমন আছে! যতোবার শুনি,যেন শরীরের প্রতিটা কোষে কোষে তীব্র কম্পন শুরু হয়! যেন আমি হারিয়ে যেতে থাকি এক সুপ্রাচীন সৃষ্টি মুহূর্তের মাঝে। যেন আমার বিভ্রম হয়। যেন আমি আর দুনিয়াতে নেই,হারিয়ে গিয়েছি ভিন্ন সময়ের,ভিন্ন এক পরাবাস্তব জগতে। যেন আমি দৌঁড়াচ্ছি এক মনজিলকে লক্ষ্য করে আর শরীরের সমস্ত শক্তিকে জড়ো করে চিৎকার করে করে বলছি,আমি এসেছি ইয়া রব! আমি এসেছি! “লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক!”

মাথা তুলতে পারলো না রিয়াদ। তার চোখে পানি চলে এসেছে তার স্যারের মতো। তার স্যারের চোখেও পানি।

“আজ কয়েকটা কথা বলবো শুনো। ইসলামে গান-বাজনা সুপ্রতিষ্ঠিত হারাম। চার মাজহাবের ইমামদের মতে হারাম। অসংখ্য নস দ্বারা প্রমাণিত হারাম। এক দুটি হাদিসের অপব্যাখ্যা করে যারা গান-বাজনাকে হালাল বলতে চেয়েছেন,ইমাম ইবনে হাজার আসকালানি (রাহি.) থেকে শুরু করে উম্মাহর মহান ইমামগণ সেগুলো শক্তহাতে খণ্ডন করেছেন। আজকে গান-বাজনা হারাম হওয়ার ব্যপারে স্পষ্ট কয়েকটি হাদিস পেশ করবো। যেটা জানা একান্তই জরুরী। এছাড়াও যেনো হাদিসের আলোকে গান-বাজনার বিধান আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়। রাসূল (সা.)-এর হাদিসের স্পষ্ট নির্দেশনার পর আশা করি আমাদের আর কারও এ বিষয়ে গবেষণার প্রয়োজন পড়বে না।

১| আবু মালিক আশআরি (রা.) বলেন,রাসূল (সা.) বলেছেন,

لَيَكُونَنَّ مِنْ أُمَّتِي أَقْوَامٌ يَسْتَحِلُّونَ الْحِرَ وَالْحَرِيرَ وَالْخَمْرَ وَالْمَعَازِفَ وَلَيَنْزِلَنَّ أَقْوَامٌ إِلَى جَنْبِ عَلَمٍ يَرُوحُ عَلَيْهِمْ بِسَارِحَةٍ لَهُمْ يَأْتِيهِمْ يَعْنِي الْفَقِيرَ لِحَاجَةٍ فَيَقُولُونَ ارْجِعْ إِلَيْنَا غَدًا فَيُبَيِّتُهُمْ اللَّهُ وَيَضَعُ الْعَلَمَ وَيَمْسَخُ آخَرِينَ قِرَدَةً وَخَنَازِيرَ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ.

“অর্থাৎ আমার উম্মতে এমন কিছু লোক হবে,যারা ব্যভিচার,রেশম,মদ এবং গান-বাজনাকে হালাল মনে করবে।”(আবু দাউদঃ হা/৪০৪১,বুখারীঃ হা/৫৫৯০)

এ হাদিসে স্পষ্ট বলা হয়েছে,কিয়ামতের আগে অকাট্য হারাম কিছু বিষয়কে একদল মানুষ হালাল মনে করবে। তার মাঝে একটি হলো,গান-বাজনা।

২| আনাস বিন মালিক (রা.) বলেন,রাসূল (সা.) বলেন,

صَوْتَانِ مَلْعُونَانِ فِي الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ : مِزْمَارٌ عِنْدَ نِعْمَةٍ ، وَرَنَّةٌ عِنْدَ مُصِيبَةٍ.

“অর্থাৎ দুটি আওয়াজ দুনিয়া এবং আখেরাতে অভিশপ্ত। দুটির একটি হলো,বাজনার আওয়াজ এবং অপরটি হলো,কষ্টের সময় বিলাপের আওয়াজ।”(মুসনাদে বাযযারঃ হা/৭৫১৩,আল আহাদিসুল মুখতারাহঃ হা/৩/৩০২)

এ হাদিস সম্পর্কে ইমাম হাইছামি (রাহ.) বলেন,

رواه البزار ورجاله ثقات.

“অর্থাৎ হাদিসটি ইমাম বাযযার বর্ণনা করেছেন। বর্ণনাকারী সকলেই বিশ্বস্ত এবং গ্রহণযোগ্য।”(মাযমাউয যাওয়াইদঃ হা/৪০১৭)

এ হাদিসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে,বাজনার আওয়াজ অভিশপ্ত দুনিয়াতে এবং আখেরাতে।।এরপরও কেউ যদি এটাকে হালাল মনে করে,তারচেয়ে বড় হতভাগা দুনিয়াতে আর কেউ নেই।

৩| ইমরান বিন হুসাইন (রা.) বর্ণনা করেন,রাসূল (সা.) বলেন,

في هذه الأمة خسف ومسخ وقذف فقال رجل من المسلمين يا رسول الله ومتى ذاك ؟ قال إذا ظهرت القينات والمعارف وشربت الخمور.

“অর্থাৎ এ উম্মতের উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে ভূমিধ্বস,বিকৃতি এবং প্রস্তার নিক্ষেপের বিপদ আসবে। একজন সাহাবি জিজ্ঞেস করলেন,“কখন আসবে?” রাসূল (সা.) জবাবে বলেন,“যখন গায়িকা বেশি হবে,যখন বাজনা ব্যাপক হবে,মদপান করা হবে তখন।”(তিরমিযীঃ হা/২২১২)

গান-বাজনা হারাম হওয়ার জন্য এ একটি হাদিসই যথেষ্ট। কারণ এটির কারণে আল্লাহর পক্ষ থেকে গজব আসে। আর যে কাজ আল্লাহর গজব ডেকে নিয়ে আসে,তা হালাল হওয়ার কোন সূরতই নেই।

৪| নাফে বর্ণনা করেন,

أَنَّ ابْنَ عُمَرَ سَمِعَ صَوْتَ زَمَّارَةِ رَاعٍ فَوَضَعَ أُصْبُعَيْهِ فِي أُذُنَيْهِ وَعَدَلَ رَاحِلَتَهُ عَنْ الطَّرِيقِ وَهُوَ يَقُولُ يَا نَافِعُ أَتَسْمَعُ فَأَقُولُ نَعَمْ فَيَمْضِي حَتَّى قُلْتُ لَا فَوَضَعَ يَدَيْهِ وَأَعَادَ رَاحِلَتَهُ إِلَى الطَّرِيقِ وَقَالَ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَسَمِعَ صَوْتَ زَمَّارَةِ رَاعٍ فَصَنَعَ مِثْلَ هَذَا.

“অর্থাৎ ইবনে উমর (রা.) একবার রাখালের বাজনার আওয়াজ শুনতে পান,তখন তিনি কানে আঙ্গুল দিয়ে দ্রুত রাস্তা পার হয়ে বললেন,“এখনও কী শুনা যায়?” তিনি বললেন,“হ্যাঁ।”এরপর যখন আওয়াজ শুনা গেলো না,তখন হাত ছেড়ে বললেন,“আমি রাসূল (সা.) কে দেখেছি,তাঁর কানে বাজনার আওয়াজ আসলে তিনি কানে আঙ্গুল দিয়ে দ্রুত চলে গেছেন।”(মুসনাদে আহমদঃ হা/৪৫৩৫)

শায়খ শুআইব আরনাউত (রাহি.) এ বর্ণনাকে হাসান বলেছেন।

৫| আলী (রা.) বর্ণনা করেন,রাসূল (সা.) বলেন,

إ ذا فعلت أمتي خمس عشرة خصلة حل بها البلاء فقيل وما
هن يا رسول الله قال إذا كان المغنم دولا والأمانة مغنما والزكاة مغرما وأطاع الرجل زوجته و عق أمه وبر صديقه وجفا أباه وارتفعت الأصوات في المساجد وكان زعيم القوم أرذلهم وأكرم الرجل مخافة شره وشربت الخمور ولبس الحرير واتخذت القنيات والمعازف ولعن آخر هذه الأمة أولها فليرتقبوا عند ذلك ريحا حمراء أو خسفا أو مسخا.

“অর্থাৎ যখন আমার উম্মত ১৫ টি কাজ করবে,আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের উপর মুসবিত আসা বৈধ হয়ে যাবে। ১৫ টির দুটি হলো,যখন গায়িকা এবং বাদ্যযন্ত্র তারা গ্রহণ করবে,আল্লাহর পক্ষ থেকে গজব আসবে।”(তিরমিযীঃ হা/২২১০)

৬| মুসলিম বিশ্বের প্রখ্যাত বিচারক কাজী শুরাইহ এর একটি বিচার তুলে ধরা হলো। আবু হাসিন বর্ণনা করেন,

أَنَّ رَجُلاً كَسَرَ طُنْبُوراً لرَجُلِ ، فَخَاصَمَهُ إلَى شُرَيْحٍ ، فَلَمْ يُضَمِّنْهُ شَيْئًا.

“এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির বাদ্যযন্ত্র ভেঙ্গে ফেলে। শুরাইহ এর কাছে বিচার আসলে তিনি তার উপর জরিমানা আবশ্যক করেননি।”(মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাঃ হা/২৩৬৮৫)

এটা স্পষ্ট যে,বাদ্যযন্ত্র হারাম। আর হারামের জরিমানা হয় না। এখানে উদাহরণস্বরুপ ৫ টি হাদিস উল্লেখ করা হলো। ৫ টি হাদিসই আমাদের স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে যে,গান-বাজনা হারাম। এর বিপরীত ঈদের দিন রাসূল (সা.)-এর ঘরে ঈদের দিন ছোট বাচ্চাদের আবৃত্তির হাদিস দিয়ে বাজনাকে হালাল করা হাস্যকর বিষয় ছাড়া কিছুই নয়। যে হাদিস দিয়ে কথিত সীমা বৈধ করার চেষ্টা করছে,সে হাদিস সম্পর্কে উম্মাহর মহান ইমামগণ যুগে যুগে পর্যালোচনা করে চলে গিয়েছেন! ইসলাম এতোটা অসহায় হয়ে যায় নি যে,ভাণ্ডারিদের থেকে হাদিসের ব্যাখ্যা নিতে হবে।”

সব শুনে মলিন গলায় রিয়াদ বলল,”আজকের পর থেকে আমি আর কখনো গান-বাজনা এইসব কিছুই শুনবো না স্যার। কথা দিলাম।”

০৯.
রুমে ফিরতেই ঘড়িতে দেখলো রাত সাড়ে তিনটা। আরমান হাত-মুখ ধুয়ে অযু করে তাহাজ্জুদ আদায় করে নিলো। ফজর হতেই একসাথে সালাত আদায় করে জায়নামায গুছিয়ে শুয়ে পড়লো। অনেকক্ষণ চেষ্টা করার পরেও ঘুম এলো না। আরমান বুঝতে পারছে না এমনটা কেন হচ্ছে? বিরক্ত হয়ে উঠে গিয়ে দাদীমার রুমে প্রবেশ করলো। দাদীমা নামাজ শেষ করে তাসবীহ্ পাঠ করছেন। আদরের নাতীকে দেখতেই মুচকি হাসলেন। বাংলাদেশে আসার পর থেকে আরমান বেশিরভাগই উনার রুমে ঘুমিয়ে পড়ে। আজও হয়তো ঘুম আসছে না ছেলেটার। কোনো কথা ছাড়াই দাদীমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো আরমান। দাদীমা মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,”ঘুম আসছে না দাদু ভাইয়ের?”

“হুম।”

তিনি জানতেন তাই উনার কাছে এসেছে। বেশ অনেকক্ষণ যাবৎ মসৃণ,ঝরঝরে সোনালী চুলগুলোতে হাত বুলাতে লাগলেন।

“দাদুভাই ঘুমিয়ে পড়েছো?”

“না।”

“একটা কথা বলি?”

“হুম।”

“শশীপ্রভাকে তোমার পছন্দ হয়েছে?”

“মোটামুটি।”

দাদীমা ভীষণ খুশি হলেন।

“জানো দাদুভাই,আমার আপন চাচাতো বোন এবং তোমার দাদুভাইয়ের আপন ছোটবোন এছাড়াও আমার বাল্যকালের বান্ধবী শাহনাজ মির্জার একমাত্র আদরের নাতনী শশীপ্রভা। পারিবারিকভাবে শেখ বংশে শাহনাজের বিয়ে হয়। তাই আমাদের সম্পর্কটাকে আরেকটু মজবুত করার জন্য তোমার সাথে শশীপ্রভার বিয়ে ঠিক করেছি। আর মেয়েটা তো মাশা-আল্লাহ দারুণ! সুন্দরী আছে। তবে সমস্যা একটাই মেয়েটার দ্বীন সম্পর্কে বুঝ কম। কিন্তু অনেক সুন্দরী!”

মৌন রইলো আরমান। সুন্দরী মানে! এতোটাই সুন্দরী যে নিজের নাতীর ঘুম হারাম করে দিলো কুচকুচে কালো ছোট্ট একটা তিল দিয়ে। আর মেয়েটার ডাগর ডাগর আঁখি! মনে মনে বলল,”তাঁর চোখজোড়া দেখে আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে দিদিভাই! না জানি সে আয়না দেখে কিভাবে!?”

“দাদুভাই,আমি শশীপ্রভার সাথে তোমার বিয়ে দিতে চাই,তুমি কি বলো? তুমি তো দ্বীনদার মানুষ। বিয়ের পর বউকে দ্বীনদার বানিয়ে নেবে। সমস্যা নেই।”

“এ্যাজ ইউর উইশ।”

ঘুমিয়ে পড়লো আরমান। ভীষণ খুশি হলেন দাদীমা। ভালোয় ভালোয় বিয়েটা হয়ে গেলেই হয়।

১০.
শশীপ্রভার এক্সিডেন্টের খবর শোনামাত্রই শেখ ভিলায় পদার্পণ ঘটলো শেহজাদ আনবীর আরাদ খানের। কোন ভণিতা না করে আরাদ সরাসরি শশীপ্রভার বেডরুমে ঢুকে পড়লো। ব্রেকফাস্ট করে মেডিসিন নিয়ে শশীপ্রভা সবে রেস্ট নিচ্ছিলো। আরাদকে দেখামাত্রই ভয়ে কেঁপে উঠলো। কোন কুমতলবে এসেছে আপদটা শশীপ্রভা জানে না। এতোদিন রাস্তা-ঘাটে বিরক্ত করলেও আজ সরাসরি বাসায় উঠে এসেছে। এবার কি করবে সে? আরাদ শশীপ্রভার মুখোমুখি পায়ের উপর পা তুলে বেডের উপর বসলো। শশীপ্রভা সরে গিয়ে গুটিশুটি হয়ে ভয়ার্ত চোখে তাকালো। বাঁকা হাসলো আরাদ। এই জিনিসটাই তো তাকে আনন্দ দেয়। তার জন্য মেয়েটার চোখে সে ভয় দেখতে চায়!

“এতোবার কল দিলাম পিক-আপ করোনি কেনো বেইবি?”

গা গুলিয়ে এলো শশীপ্রভার।

“বেইবি তুমি এক্সিডেন্ট করেছো কিভাবে?”

কম্পিত গলায় বলল,”আপনি আমার বেডরুমে ঢুকেছেন কেন? আপনার কি ম্যানার্স বলতে কিছুই নেই?”

শশীপ্রভাকে কাছে টেনে আনতেই চিৎকার করে উঠলো। চিবুক তুলে বলল,”তোমার বেডরুমে আসতে এই শেহজাদ আনবীর আরাদ খানের লজ্জা লাগবে কেন মেরি জান?”

বলেই চিবুকে চাপ দিলো। শশীপ্রভা আর্তনাদ করে উঠলো।

“কাঁদে না জান। কাছে আসো।”

“অসভ্য পুরুষ মানুষ।”

“ওনলি ফর ইউ।”

ফাহমিদা খানম তেঁড়ে এলেন।

“এই ছেলে তুমি আমার মেয়ের বেডরুমে কি করছো?এটা কেমন অভদ্রতা?”

“ওহ্! শ্বাশুড়ি মা। ডিস্টার্ব করছেন কেন?দেখছেন না প্রেম করছি শশীপ্রিয়ার সাথে,স্যরি বউয়ের সাথে।”

“বেয়াদব ছেলে কোথাকার! বাসা থেকে বেরিয়ে যাও বলছি।”

আরাদের মাথা উত্তপ্ত হয়ে গেলো। বডিগার্ডকে ইশারা দিতেই ফাহমিদা খানমের মুখ চেপে ধরে নিয়ে গেলো। হঠাৎ ফায়াজ এলো রেগেমেগে। কিছু বলার পূর্বেই ফায়াজের গলা চেপে ধরে ধাক্কা মা’র’লো ফ্লোরে। পড়ে গিয়ে খুব বাজেভাবে কোমড়ে ব্যথা পেলো ফায়াজ। বডিগার্ডকে ইশারা দিতেই টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গেলো ফায়াজকেও। ভাইয়ের করুণ অবস্থা দেখে কেঁদে উঠলো শশীপ্রভা। সব তার জন্য হচ্ছে। সিগারেট ধরালো আরাদ।

“মাস্তানি দেখাচ্ছেন বাসায় ঢুকে?”

“যা-ই বলো বেইবি।”

“অসভ্য! লম্পট! খারাপ মানুষ।”

“এই খারাপ মানুষটাকেই তোমার বিয়ে করতে হবে ডার্লিং।”

“মাস্তান! গুণ্ডা!”

“এই মাস্তান-গুণ্ডারটার সাথেই তোমার আজীবন থাকতে হবে শশীপ্রিয়া।”

“জীবনেও না।”

আরাদের মুখে থুথু মা’র’লো শশীপ্রভা। ক্রোধান্বিত হয়ে শশীপ্রভার গাল চেপে ধরলো আরাদ।

“অনেক দুঃসাহস তোর তাই না?”

চোয়ালে চাপ দিতেই কুঁকড়ে উঠলো শশীপ্রভা। তার মনে হলো গালের সবগুলো হাড্ডি ভেঙে গুঁড়িগুঁড়ি হয়ে গেছে। গাল ধরে কাঁদতে লাগলো। আরাদ স্বাভাবিক হলো।

“চুপ থাকলেই তো হয়। কেনো এতো তিড়িং বিড়িং করে আমাকে রাগাও বেইবি? তুমি জানো না এইসব আমার বড্ড অপছন্দ!”

ক্রোধে ফুঁসতে লাগলো শশীপ্রভা। কোন কুক্ষণে এই বাজে মানুষটার সাথে তার দেখা হয়েছে আল্লাহই জানে। সেই থেকেই ওর পিছু নিয়েছে। রাস্তা-ঘাটে তো জ্বালিয়ে মা’রে এখন আবার বাসায় উঠে মাস্তানি দেখাচ্ছে।

“দেখি কোথায় কোথায় আঘাত পেয়েছো? সাবধানে চলাফেরা করতে পারো না?”

বলেই শশীপ্রভার পা চেপে ধরলো। কুঁকড়ে উঠলো আবারও। আরাদ ইচ্ছে করে তাকে ব্যথা দিচ্ছে! বুঝতে বাকি নেই শশীপ্রভার।

“আপনি এখান থেকে যাবেন না-কি আপনাকে খু’ন করবো?”

“এই ভাঙ্গা পা নিয়ে খু’ন করবে বেইবি? পারবে?দেখি তোমার পা-টা!”

বলেই মুচড়ে ধরলো। কুঁকড়ে উঠে শশীপ্রভা বলল,”আল্লাহ আপনার বিচার করবে একদিন দেখে নিয়েন।”

“যখন করবে তখন দেখবো বউ।”

“বউ মাই ফুট!”

শাহনাজ মির্জা তেঁড়ে এলেন ঝাটা নিয়ে।

“এই বেয়াদব ছেলে বেরিয়ে যাও বলছি! দিন-দুপুরে মাস্তানি করতে এসেছো আমার বাসায়? সাহস কতো তোমার? চিনো আমাকে? আমি কে?”

“আরেহ! আরেহ! আমার দাদী শ্বাশুড়ি মা যে!”

“এই ছেলে বেরিয়ে যাও। ফাইজলামি পাইছো?”

বলেই ঝাটা তুললেন। অপমানিতবোধ করলো আরাদ। রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করে বেরিয়ে গেলো। এই বুড়িটাকেও সে দেখে নেবে। আগে বিয়েটা তো হোক! আরাদ যেতেই শাহনাজ মির্জা গর্জে উঠে বললেন,”তোমাকে কতবার বলেছি ভালোয় ভালোয় বিয়েটা করে নাও। বিয়েটা করলে আজ এমন দিন দেখতে হতো না।”

পা ধরে কাঁদতে লাগলো শশীপ্রভা। যেখান থেকেই বিয়ের জন্য আসে আরাদের জন্য বিয়েটা হয় না। পাত্রের হাত-পা ভেঙ্গে হসপিটালে পাঠিয়ে দেয়। ফাহমিদা খানম এগিয়ে এসে বললেন,”এখনো সময় আছে,প্রভামণি তুমি রাজি হয়ে যাও।”

মাথা নুয়ে রাখলো শশীপ্রভা। শাহনাজ মির্জা বললেন,”রাজি হয়ে কি হবে আজ সকালে অন্য জায়গায় আরমান বিয়ে করে ফেলেছে।”

আকস্মিক শশীপ্রভার মাথায় বাজ পড়লো। চোখ তুলতেই তিনি বললেন,”তোমার মেয়ের তো আরমানকে পছন্দ হয়নি ওরা জানালো।”

“কি বলেন আম্মা,এতো সুন্দর ছেলে বিয়ে করে নিয়েছে?”

“হুম। তো কি তোমার মেয়ের জন্য আজীবন কুমার হয়ে থাকবে না-কি! ওদের সোনার টুকরো ছেলের জন্য বউয়ের অভাব পড়বে না-কি! তোমার মেয়ের তো ন্যাকা স্বভাব গেলো না। যেমন মা তেমন মেয়ে। আরো কোলের মধ্যে মেয়েটাকে ধরে রাখো। বিয়ে দেওয়ার দরকার নেই।”

ফাহমিদা খানম এর মন ভার হলো। আরমানের পিকচার তিনি দেখেছেন। রাজপুত্রের মতো এক ছেলে। ইশ! হাতছাড়া হয়ে গেলো। কোথায় আরাদ আর কোথায় আরমান!

“এবার কি হবে আম্মা?”

“নতুন আরেকটা পাত্র এনেছি। এটার সাথেই শশীপ্রভার বিয়ে ফাইনাল করে ফেলেছি। সামনের সপ্তাহে বিয়ে। মেয়েকে বুঝাও ফাহমিদা। নয়তো তোমাদের মা-মেয়ের কপালে দুঃখ আছে বলে গেলাম আমি।”

ওনারা চলে গেলেন। শশীপ্রভা হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। মানুষটা সত্যি বিয়ে করে নিয়েছে? কিন্তু কেনো? তার বিশ্বাসই হচ্ছে না। কেন মানুষটা এমন করলো! মাথার চুলগুলো খামচে ধরলো। দীর্ঘদিন মানুষটার সাথে মেসেজ করতে করতে শশীপ্রভা দূর্বল হয়ে পড়েছিলো। তারপর মিট করার পর তো একেবারেই। কিন্তু মানুষটা কেনো এমন করলো? শশীপ্রভার শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে এলো।
_________

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here