#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ২৪ খ]
___________________________
৫১.
অয়নের বিয়ের আনন্দে ভাটা পড়েছে।ডান হাতের বেহাল দশা চুপচাপ এক সাইডে বসে থাকা ছাড়া তার আর কাজ নেই।বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হবে কিছুক্ষণ পরেই।ছেলে পক্ষ এলো বলে।শ্রেয়াকে নিয়ে ঈশা পার্লার থেকে ফিরেছে কেবল।ঈশা আজ সাজতে কার্পণ্য করেনি বসার ঘরে প্রবেশ করতে মুখোমুখি হয় অয়নের ছেলেটা কেমন নির্ণিমেষ তার দিকে তাকিয়ে আছে।দ্বিধায় চোখ সরালো ঈশা আমতা আমতা স্বরে বলে,
” কিছু বলবেন অয়ন ভাই?”
” কি আর বলবো তোমাকে সুন্দর লাগছে।”
” ধন্যবাদ।’
ঈশা পাশ কাটিয়ে চলে গেলো দম যেন তার বন্ধ হয়ে এসেছিলো।ঈশান সকাল থেকে বারবার ফোন করে যাচ্ছে বিরক্ত হয়ে ঈশানকে ব্লক করেছে সে।কিছুক্ষণ পর বরপক্ষ চলে আসবে আর তখন নিজেকে যতটা পারা যায় ঈশান থেকে দূরে দূরে রাখতে হবে।শ্রেয়াকে রুমে পাঠিয়ে বাদ বাকি কাজিনদের খোঁজে গেলো ঈশা।একটা রুমে সবাই জড় হয়ে ঝগড়া করছে দুইজনের মাঝে তো বেশ কথা কাটাকাটি লেগে গেলো।ঈশা এগিয়ে গেলো তাদের কাছে।মামা তো বোন অনিকে জিজ্ঞেস করে,
“কী হয়েছে তোরা ঝগড়া করছিস কেন অনি?”
” বর পক্ষ এলো বলে অথচ বিয়ের গেট ধরবে কে?বর পক্ষের দলে কম ছেলে নেই এদের সাথে পেরে উঠবো কি করে ওদের বললাম তোরা আমার সাথে থাকবি কিন্তু ভীতুর ডিম একটাও থাকবে না।তুমি থাকবে ঈশাপু?”
ঈশা চমকে গেলো আড় চোখে তাকালো অনুর দিকে।বিয়ের গেটে দাঁড়ানো মানে ঈশানের মুখোমুখি হওয়া যেটা সে ভুলেও চায় না।
” আমি না বরং তোরা যা এই সবাই যাবি কিন্তু।”
” এদের কোন দরকার নেই। ঈশা আপু আর অনু আপু আমার পাশে থাকলেই হবে বাকিরা পেছনে থাকুক এরা ভাগের টাকা চাইলেও দেবো না আর দিলেও বিশ টাকার বেশি না।”
” প্লিজ অনি আমাকে এসবে টানিস না ভাইয়ারা কোথায়?তারাও দাঁড়াতে পারে।”
” তারা এই দায়িত্ব আমাদের দিয়েছে তারা শুধু পাশে থাকবে টাকা আদায় করার দায়িত্ব আমাদের।ও ঈশাপু চলো না প্লিজ এই কথাটা রাখো।অনু আপু তুমি হ্যাঁ বলে দাও দেখবে তোমার বান্ধবী রাজি হয়ে যাবে।”
অনু স্মিত হাসে ঈশার হাত ধরে বলে,
” রাজি হয়ে যা ঈশা।”
বর যাত্রী এসে পড়েছে সবার মাঝে সৃষ্টি হয়েছে আগ্রহ আনন্দ সবাই ছুটে গেলো গেটের সামনে।বর যাত্রীর এক অংশ প্রবেশ করলেও বর দাঁড়িয়ে রইলো গেটের বাইরে।লাল ফিতা বেঁধে টেবিলে শরবত মিষ্টি নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো একদল।ঈশান কিছুটা দূরে বাইরে দাঁড়িয়ে রইলো এসব গ্যাঞ্জাম তার বড্ড বিরক্ত লাগে।কিন্তু যখনি গেটের সামনে
ঈশাকে দেখতে পেলো তখনি ভিড় ঢেলে সামনে আসলো সে দাঁড়িয়ে পড়লো বরের পাশে।তাকে দেখে রাসেল বলে,
” তুই না এসব গ্যাঞ্জাম পছন্দ করিস না তবে এলি কেন?”
” সামনে দেখ বউ এসেছে, না এসে পারা যায়?”
অনি বরকে শরবত মিষ্টি খাওয়ালো বরের দলের একজন কাচি হাতে তুলতে কাচি ধরে ফেললো সে।
ঈশান নিমেষহীন তাকিয়ে আছে ঈশার দিকে ঈশানের চাহনি দেখে মুখ ভেংচি কাটলো ঈশা।গোল্ডেন রঙের লেহেঙ্গায় ভারী মেকাপে মেয়েটাকে কি সুন্দর লাগছে।ঈশার কানে বড় বড় দুল গুলো দেখে কপাল কুচকালো ঈশান তার মনে প্রশ্নেরা উঁকি দেয়, ‘এটা আবার কেমন দুল?এটাও কি ফ্যাশন!কান ছিড়ে পড়ে যাবে সেদিকে খবর নেই অথচ এই দুল লাগিয়ে দিব্বি হাটছে।মেয়েরা পারেও বটে।’
বর যাত্রীর মাঝে হইচই পড়ে গেছে সবাই টাকা নিয়ে তর্কাতর্কি শুরু করেছে।বর পক্ষের ছেলে মেয়েদের ছলচাতুরী দেখে নড়েচড়ে দাঁড়ায় ঈশা যে করে হোক টাকা আদায় করতেই হবে।অনু ছেলেটার হাত থেকে কেচি নিয়ে বলে,
” ফিতা কেটে প্রবেশ করতে হলে পঞ্চাশ হাজার টাকা ঢালতে হবে।”
” কত টাকা কত?শুনতে পাইনি।”
” পঞ্চাশ পঞ্চাশ হাজার টাকা।”
ছেলে পক্ষের মাঝে পুণরায় শোরগোল পড়লো তারা কিছুতেই টাকা দেবে না তাই ভুজংভাজাং কথা বলে অনুকে দমাতে চাইছে।ঈশা গলা ঝেরে কেশে বলে,
” আমাদের দাবি একটাই পঞ্চাশ হাজার টাকা চাই।”
” এই মেয়ে পঞ্চাশ বানান করতে পারো?দেখি বানান করে শোনাও আমায়।”
ঈশার কথার প্রত্যুত্তর করলো ঈশান।পঞ্চাশ বানান মুখে কী করে করবে সে।থমকে গেলো ঈশা কটমট চোখে তাকালো ঈশানের দিকে ছেলেটা তাকে ফাঁসিয়ে দিচ্ছে।ঈশা মনে মনে পঞ্চাশ বানান করার চেষ্টা চালালো, ‘প ন চ আকার চা দূর কিসব বলছি।’
দ্বিধায় পড়ে কথা ঘুরিয়ে দিলো ঈশা ঈশানের দিকে তাকিয়ে বলে,
” ঠিক আছে ছাড় দিলাম চল্লিশ হাজার টাকা দিন।”
” ধরো চল্লিশ হাজার টাকা দিলাম তার মাঝে সব দুইশত টাকার নোট এবার বলো চল্লিশ হাজারে কয়টা দুইশ টাকার নোট থাকবে।যদি বলতে পারো চল্লিশ হাজার টাকা অনায়াসে দিয়ে দিবো।”
মেয়ে পক্ষের সবাই থমকে গেলো ঈশানের ছলচাতুরীর কাছে হেরে যাচ্ছে তারা।এই মুহূর্তে ঈশার অংক মাথায় আসছে না।তাকে ফোন হাতে তুলতে দেখে চেচিয়ে উঠে ঈশান।
” খবরদার ফোনে কোন গুন ভাগ হবে না যা হবে মুখে মুখে।”
ভরা মজলিশে লজ্জায় পড়লো ঈশা অনুর দিকে তাকালো অসহায় দৃষ্টিতে।অনু ঈশার কানের কাছে গিয়ে বলে,
” ঈশানের সাথে এভাবে পারা যাবে না।আমাদের জিততে হলে একটাই রাস্তা আছে।”
” সে টা কী?”
” ঈশান ভাইকে নরম সুরে গরম কথা বলে হুমকি দে।দেখবি কাজ হয়ে যাবে।”
ঈশা মাথা নাড়ালো গলা ঝেরে জোরে বলে,
” থাক চল্লিশ হাজার লাগবে না আমাদের ত্রিশ হাজার দিন।”
ছেলে পক্ষের মাঝে হইহই পড়ে গেলো সবাই হেসে হেসে মেয়ে পক্ষকে খোঁচাতে ব্যস্ত।দলের মাঝে একটি ছেলে বলে উঠে,
” দুইটা প্রশ্ন জানতে চেয়েছি একটাও তো পারলেন না তাই কি টাকার অংক কমিয়ে দিসেন? এতে অবশ্য আমাদের ভালো কি বলিস তোরা?”
ছেলেদের মাঝে পুণরায় শোরগোল পড়লো।ঈশা দাম্ভিকতার হাসি দিয়ে বলে,
” মোটেও না চল্লিশ হাজার টাকার কথা শুনে মুখটা শকুনের মতো বানিয়ে ফেলেছেন তাই টাকার অংক কমিয়ে দিয়েছি।”
ঈশা টেবিলে হাত ভর করে ইশারায় ঈশানকে কাছে ডাকলো ঈশান নিজেও ঝুকে পড়লো ঈশার কাছে।ঈশা ঈশানের চোখে চোখ রেখে স্বল্প স্বরে বলে,
” এই শুনো না।”
” শুনছিতো বলো না।”
” এরা যদি নাজিম ভাইয়ের শালা-শালি হয় ভেবে দেখো এরা তোমারো শালা-শালি।এদের খুশি করার দায়িত্ব কিন্তু তোমারো।”
“তাদের বোনটা তো দুলাভাইকে খুশি করতে পারে না আমি কেন তাহলে তাদের খুশি করবো।”
” খুশি করার সময় হলে খুশি করে দেবো এত কথা বলেন কেন?”
” আরে রেগে যাচ্ছো কেন?”
” আপনি যদি আমার পক্ষ না নে তবে আপনার সাথে আমার কোন কথা নেই।এমন বিরোধী দলের হাজবেন্ড আমার প্রয়োজন নেই হুহ।”
ঈশান গলা ঝারলো সবার দিকে পরখ করে মেয়ে পক্ষকে বলে,
” আপনাদের দাবি কতো?”
” আমাদের দাবি একটাই ত্রিশ হাজার টাকা চাই।”
সবার এক সঙ্গে জবাব দিলো ঈশান কানে হাত দিয়ে এগিয়ে গেলো গাড়ির কাছে সেখানেই তার টাকা রাখা।দশ হাজার টাকার তিনটে বান্ডিল নিয়ে ফিরলো সে এবং টাকা দিয়ে দিলো ঈশার হাতে।টাকা পেয়ে মেয়ে পক্ষের সবার আনন্দের শেষ নেই তাদের লাফালাফি দেখে বোঝাই যাচ্ছে তারা কতটা খুশি।বর পক্ষের সবাই বাক্যহারা সবার মাঝে স্তব্ধতা বিরাজমান ঈশান যে এমন বোকামি করবে তারা স্বপ্নেও ভাবেনি।নাজিম অবাক হয়ে তাকালো ঈশানের দিকে।
“এই তোর হয়েছে কী?ত্রিশ হাজার টাকা তুই দিয়ে দিলি!কথা ছিলো দশ হাজার দেবো এর উপর একটা টাকাও না।”
” বিয়ে তো একবারেই করবি নাকি দুইবার করার ইচ্ছে আছে?এত কার্পণ্য করিস কেন?দেখ তোর শালা-শালিরা কত খুশি এদের খুশির কাছে ত্রিশ হাজার টাকা কোন ব্যপার না।”
” কথা ঘুরাবি না তুই যে তোর ঈশার কথায় টাকা দিয়েছিস সেটা আমি ভালো ভাবেই বুঝতে পারছি।তুই তো ভাই বন্ধু না শত্রু।”
” আমি তোর শত্রু? ঠিক আছে বাকি কাজ তো এখনো বাকি তুই দেখিস আমি কি কি করি।”
রাসেল জানতো ঈশার কথায় ঈশান গলে যাবে তাই মনে মনে হাসলো সে।
রাসেল বেশ কয়েকবার অনুর চোখে চোখ রাখে তবে অনু এমন ভাব করছে যেন সে চেনে না এই মানুষটাকে।
.
শ্রেয়ার কক্ষে তার দূর সম্পর্কের আত্মীয় সজনরা বসেছিলো ঈশা ও অনু তাদের পাশেই ছিলো।হুড়োহুড়ি পায়ে দ্রুত কক্ষে আসেন ঈশার মামি সুমা শ্রেয়াকে আগাগোড়া দেখে ঠোঁট বাঁকান তিনি।
” কিরে তোর শশুড় বাড়ি থেকে নাকি কত ভরি স্বর্ণ দিলো তাহলে গলায় হাতে কানে এসব কি দিলি?সত্যি দিয়েছে নাকি তোর মা বাবা চাপা ছিলো সেসব।”
অনন্যা আত্মীয়দের সামনে লজ্জায় পড়লো শ্রেয়া।কক্ষে দুজন ছেলে পক্ষের অতিথিও ছিলো।নতুন বউ হিসেবে নিজেকে যতটা পারা যায় শান্ত রাখার চেষ্টা চালালো।
” শুনলাম ছেলে নাকি বিদেশ নিয়ে যাবে এসব কি আদৌ সত্যি নাকি মিথ্যা অবশ্য আমাদের এসব নিয়ে ঘেটে লাভ নেই।আহারে মা তোর জন্য মায়া লাগছে স্বর্ণ গহনা হলো আসল আর তোকে….
সুমার কথা শেষ হওয়ার আগে প্রত্যুত্তর করলো ঈশা।
” এই তো বললেন এসব নিয়ে নাকি তোমাদের ঘেটে লাভ নেই তাহলে ঘাটছো কেন মামি?যে টা বুঝো না তা নিয়ে কথা না বললে নয় কি?এই সাজ পরনের লেহেঙ্গার সাথে কি স্বর্ণটা মানান সই হবে?শ্রেয়াপুর সাজের সাথে যদি স্বর্ণ পরানো হয় তবে পুরোটা ঘেটে ঘ হয়ে যাবে।ডায়মন্ড কাটের অর্নামেন্টস গুলাই বেস্ট লাগছে।”
ঈশার জবাবে মুখটা কুচকে নিলেন সুমা।তৎক্ষণাৎ শ্রেয়ার ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠলো হাসি রেখা।সুমা থমথমে মুখে বলেন,
” কিরে ঈশা কবে থেকে মুখে মুখে তর্ক শিখেছিস?তোর বাবা মা এইজন্য পড়াশোনা করান?একটা বেয়াদব তৈরি হয়েছিস।”
” তোমার যদি আমাকে বেয়াদব মনে হয় তাহলে আমি বেয়াদব আমার ভুলক্রুটি থাকলে মাফ করো।”
অনুর হাত টেনে উঠে গেলো ঈশা মামির মুখোমুখি থাকা মানে আরো বেশ কয়েকবার তর্ক হওয়া তাই চলে যাওয়াই ভালো।ঈশাকে যেতে দেখে তেতে উঠলেন সুমা আশেপাশে থাকা অতিথিদের দিকে তাকিয়ে বলেন,
” এই মেয়ে জন্মের বেয়াদব পরের বাড়ি গিয়ে দেখবেন দুই দিনেও টিকবে না।এসব মেয়েকে চেনা আছে লা থি মে রে বের করবে।”
৫২.
হাসি,আড্ডা,ব্যস্ততা সব মিলিয়ে শ্রেয়ার বিয়ে সম্পূর্ণ হয়।কনে বিদায়ের পর্বটা ছিলো হৃদয়াবেগ কষ্টদায়ক।শ্রেয়াদের বাড়ি কেমন নির্জিব নিস্তব্ধ হয়ে গেছে গতরাতের আনন্দটা আজকে আর নেই এক রাশ মন খারাপ ঘিরে ধরেছে সবাইকে।
অপরদিকে নাজিমদের বাড়িতে হই হুল্লোড় চলছে সবার মাঝেই ব্যস্ততা।শ্রেয়া চুপচাপ বসে আছে তার শাশুড়ী আলেয়ার কক্ষে।আত্মীয় সজন সকলে কিছুক্ষণ পরপর বউ দেখার বাহানায় কক্ষে প্রবেশ করে।সবার মাঝে নিজেকে কেমন ভীন গ্রহের প্রাণী লাগছে শ্রেয়ার, সবার দৃষ্টি আজ তার দিকে সীমাবদ্ধ।
নাজিমের কাজিন সহ ভাবীরা শ্রেয়াকে নিয়ে নাজিমের কক্ষে দিকে রওনা হলো আকস্মিক সেখানে বেধে গেলো হট্টোগোল।ঈশান, রাসেল সহ নাজিমের অনন্য বন্ধুরা তার রুম অবরুদ্ধ করেছে।নাজিম অনেকবার রিকুয়েষ্ট করেও তাদের মানাতে পারলো না।আর এই পুরো দলের কলকাঠি নাড়াচ্ছে ঈশান।সে অনড় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো, যে করে হোক তাদের বিশ হাজার টাকা বকশিশ দিতেই হবে।নাজিম ঈশানের মন গলাতে বলে,
” ঈশান প্লিজ ভাই এমন করিস না।”
” কেমন করবো না?”
” বিয়ের গেটে ত্রিশ হাজার টাকা দিয়ে এলি এখন আবার বিশ হাজার কি শুরু করেছিস তুই।”
” তুই গেটে দাঁড়িয়ে বললি না আমি বন্ধু না শত্রু নে এবার শত্রুর মতো কাজ করলাম বিশ হাজার টাকা দে।”
” ঈশান।”
” অনুনয় করে লাভ নেই বন্ধু বিশ হাজার টাকা দে।প্রয়োজনে সারা রাত লাগাবো তোর বাসরের সব ফুল শুকিয়ে যাবে প্রতিটা প্রদীপের তেল ফুরিয়ে যাবে আহারে কষ্ট।টাকা আসবে টাকা যাবে কিন্তু এই রাত ফিরে পাবি না ভেবে দেখ।নাজিম দেখে দেখ ভাবির ক্লান্ত চেহারা বেশি দেরি হলে তোর লস ভাবি বলবে যাই ঘুমাই তুমি তোমার টাকা নিয়ে বাসর করো।”
ঈশানের যুক্তি শুনে বাকিরাও সহমত করলো।রাসেল ঈশানের কান্ড দেখে চিন্তায় পড়লো এই ছেলে তো তার বিয়েতেও সব পন্ড করে ছাড়বে।নাজিম না পেরে টাকার বান্ডিল নিয়ে ফিরলো ঈশানের হাতে টাকা দিয়ে অভিমানের ছলে বলে,
” সময় আমারো আসবে।”
” কোনদিন না কারণ বিয়েতে তো আমি তোদের ইনভাইট করবো না শুধু শুধু এসে খেয়ে যাবি আর বদনাম করবি এই রান্নায় তেল বেশি হয়েছে এই রান্নায় লবন কম হয়েছে।”
” তোর কপালে বিয়ে নাই ঈশান।”
নাজিমের কথায় হাসলো ঈশান শ্রেয়ার সম্মুখে দাঁড়িয়ে স্বল্প সরে বলে,
” অল দা বেস্ট ভাবি নাজিমকে আজকেই আঁচলে বেঁধে ফেলবেন উঠতে বসতে শাসাবেন।”
.
বিয়ের পর বৌভাত।বৌভাত অনুষ্ঠান সবটা বেশ সুষ্ঠ ভাবে সম্পূর্ণ হয়।ঈশানের মায়ের সাথে ঈশার ভাব দেখে মনে মনে সন্তুষ্ট হলেন মুজাহিদ হাসান।একটা সময় ঈশা আর ঈশানের মাঝে বৈরতা ছিলো দুজন ছিলো দুজনের চোখের বালি কিন্তু এখন দুজন দুজনকে সম্মান করে তাদের সম্পর্কটাও ভালো।ঈশানের সম্পূর্ণ বিপরীত হলো তার মা কথা বার্তা চাল চলন তিনি সম্পূর্ণ আলাদা।ঈশান যতটা গাম্ভীর্য তার মা ততটাই উলটা।এই মানুষটার মুখ থেকে কখনো হাসি সরে না তিনি সম্পূর্ণ মিশুক একজন মানুষ।
ধীরে ধীরে অতিথিরা বিদায় জানিয়েছে নাজিমদের বাড়ি জুড়ে এখন মানুষ আগের থেকেও অনেকটা কম।সারাদিনে অনুর সাথে দেখা করার সুযোগ হলো রাসেলের।নাজিমের কক্ষে অনুমতি বিহীন এই মুহূর্তে কেউ প্রবেশ করবে না তাই সেই কক্ষটি বেছে নিলো রাসেল।পুরো রুমটা পরখ করে বিছানায় বসলো অনু।রাসেল তার কাঁধে মাথা ফেলে ক্লান্ত স্বরে বলে,
” তুমি ইদানীং আমায় ভুলে গেছো অনু একটুও সময় দাও না আমায়।গতকাল বিয়েতে তুমি আর ঈশা দুজনেই আমাদের চোখের আড়ালে ছিলে ব্যপারটা কি বলতো?”
” গায়ে হলুদে যে চিপকে ছিলেন মশাই শ্রেয়া আপু সহ বাকিরা বুঝে ফেলেছে আপনার আমার মাঝে কিছু চলছে তাই দূরে দূরে থাকাটাই ভালো।”
” কিন্তু এই ভালো যে আমার ভালো লাগছে না।”
” ভালো লাগা লাগি পরে আগে বলুন আমায় কেমন লাগছে?”
” প্রতিদিনের মতো সুন্দর।”
” তাহলে আসুন ছবি তুলি আপনার সাথে আজ সারাদিনে একটা ছবিও তুলা হয়নি।”
” ভালো লাগছে না অনু।”
” ভালো লাগতে হবে।”
অনুর জেদের কাছে হারলো রাসেল শুরু হলো দুজনের ছবি তুলার যুদ্ধ।
.
অনুকে খুঁজতে খুঁজতে দিশাহীন ঈশা কেউ দিতে পারলো না অনুর খোঁজ সবচেয়ে বড় কথা অনু নেই রাসেলো নেই তার মানে দুই বজ্জাত এক সাথে আছে।বুঝতে পেরে কোমড়ে হাত রাখলো ঈশা আশেপাশে পরখ করে দেখা মিললো ঈশানের ছেলেটা তার দিকেই আসছে।
” এখানে কি করছো তুমি?”
” অনুকে খুঁজে পাচ্ছি না।”
” আমিও রাসেলকে খুঁজে পেলাম না ফোনটাও তুলছে না।”
” তার মানে আমার সন্দেহ ঠিক দুজনে এক সাথে আছে।”
” আমার সাথে আসো ঈশা।”
ঈশাকে আদেশ করে হাটা ধরলো ঈশান।ঈশানের পিছু পিছু চললো ঈশা।ঈশা ভেবেছিলো অনুকে খুঁজতে যাচ্ছে সে কিন্তু তার ধারনা ভুল প্রমান করে ঈশান তাকে ছাদে নিয়ে এসেছে।সম্পূর্ণ ছাদ ফাঁকা।দ্রুত হাতে দরজটা ভিড়ে দিলো ঈশান।
” এখানে কেন এলাম?”
ঈশার জিজ্ঞেসা দৃষ্টি উপেক্ষা করলো ঈশান।ঈশার ডান হাত জড়িয়ে চুমু খেলো হাতের পৃষ্ঠে।
” আরেকটা উইকেট পড়লো আমাদেরটা কবে পড়বে?”
” এত ব্যস্ত হচ্ছেন কেন মশাই?ধৈর্য ধরুন ধৈর্যর ফল মিষ্টি।”
” যা করার ছয় মাসের ভেতর করতে হবে আম্মু চলে যাবে তাই আমি চাই এর মাঝেই যা হবার হবে।”
ঈশা থমকে গেলো সম্পর্কের শুরু হয়েছে মাত্র কয়েকদিন এর মাঝে বিয়ে!তাছাড়া ঈশানকে তার অদ্ভুত লাগে এই যে রাসেলের কাছে এত কথা শুনেছে এই ছেলে বিয়ের পর নিশ্চয়ই কঠোর হবে আচ্ছা ঈশার স্বাধীনতা কি খর্ব করবে?ঈশার ভাবনার মাঝে ঈশাকে জড়িয়ে ধরলো ঈশান মেয়েটার মাথা ঠেকলো ঈশানের বুকে।
” কি ভাবছো?”
” ক..কিছু না।ঈশান যদি বাবা মা না মানে?”
” কেন মানবে না?”
” না মানার হাজারটা কারণ দাঁড় করাতে পারে।”
ঈশান কিছুটা রেগে গেলো তার আঁজলায় বাঁধলো ঈশার গাল।
” কেন মানবে না?কি চাই টাকা সম্পত্তি, বিশ্বস্ততা?সব আমার আছে তাহলে কেন মানবে না?”
” আপনি রেগে যাচ্ছেন কেন?”
” নিচে যাও তুমি মুড খারাপ করে দিয়েছো আমার।”
” ঈশান রাগ দেখাবেন না আমি তো কথার কথা বলেছি।”
ঈশান কিছুটা শান্ত হলো কপালে ছুঁয়ে দিলো ঈশার ঠোঁট।
” তুমি কি চাও বলো?আমায় চাও না?”
” হ্যা কিন্তু.. ”
” কোন কিন্তু নেই আর এই বিষয়ে তোমার ভাবতেও হবে না নিচে যাও তোমাদের যাওয়ার সময় হয়েছে।”
ঈশা নিচে চলে গেলো।রেলিঙে দুহাত ভর করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ঈশান।হঠাৎ কেউ তার কাঁধে হাত রাখতে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো সে।অয়নকে দেখতে পেয়ে কিঞ্চিৎ চমকে গেলো।অয়ন তাহলে ছাদে ছিলো অথচ ঈশান তাকে দেখতে পেলো না।
” ঈশার সাথে তোমার সম্পর্ক আছে?”
অয়নের প্রশ্নে বুক ফুলিয়ে ঈশান জবাব দেয়,
” হুম কেন কি দরকার?”
” খবরদার ঈশার কথা ভুলে যাও, না হলে পস্তাবে তুমি।”
” কেন পস্তাবো?”
” ঈশার সাথে আমার বিয়ে হবে পারিবারিক ভাবে।”
ঈশান কিছুটা অবাক হলো এমন একটা ছেলের সাথে ঈশার বিয়ে?এই বিয়েতে তার মা বাবার মত আছে!
” সে টা আমার জানার দরকার নেই আমি ঈশাকে ভালোবাসি।”
ঈশানের কথা শুনে রেগে গেলো অয়ন খুবলে ধরলো ঈশানের কলার।ঈশান চমকে গেলো এত বড় সাহস ঈশান শাহরিয়ারের কলারে হাত দেয় এই ছেলে হয়তো জানেই না তার সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা কে,তার পরিচয় কী।মনে মনে হাসলো ঈশান অয়নের হাতের দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে বলে,
” ফিনিশ।”
#চলবে___