#তপ্ত ভালোবাসা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ৫৯
.
🍁
—” কি সমস্যা আপনার আমি কিছু ইশারা করছি সেই কখন থেকে সেটা দেখছে না কেন আপনি?
.
আমার এমন কথায় বিন্দুমাত্র ভাবান্তর ঘটলো না উনার। উনি দিব্বি আগের মতোই ফোনে লেগে রয়েছে নিজের মতো করে। কেউ যে উনাকে কিছু বলছে সেটা উনার ছিটাফোঁটা খেয়াল ও নেই। উনার এমন ভাবলেন্স স্বভাব দেখে মূহুর্তে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠি আমি। আশ্চর্য কান্ড কি এমন করেছি আমি উনার সাথে যে উনি আমার কথাটায় শুনতে চাচ্ছে না। এতটা ইগনোর করছে কেন আমাকে বারবার? আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে কপাট রাগ দেখিয়ে বলে উঠি……
.
—” এহ হ্যালো আপনাকে বলছি আমি। এখানে আমি সবাইকে ডিঙিয়ে আপনাকে কিছু ইশারা করছি আর আপনি কিনা সেটা পাত্তা না দিয়ে দিব্যি ফোন টিপছেন। সেটা কেন করছেন আপনি?
.
খানিকটা উচ্চ স্বরেই বলি কথা গুলো উনাকে। জানি না উনার কাছে আমার কথা গুলো কেমন লেগেছিল কিন্তু তখন এক মূহুর্তের জন্য মনে হয়েছিল আমি অনেক বেশি অধিকার খাটাচ্ছিলাম উনার ওপর। আর সেটা কেন নিজেও জানি না। কিন্তু তখন এক মূহুর্তে জন্য মনে হয়েছিল যে আমি যেটা করছি সেটা হয়তো ঠিক করছি। আমার এমন শত চিন্তা ভাবনা পিছনে ফেলে উনি খানিকটা বিরক্তি নিয়ে আমাকে বললো…….
.
—” কি চাই তোমার? বিরক্ত কেন করছো?…..
.
—” আমি বিরক্ত করছি নাকি আপনি আমাকে? (পাল্টা প্রশ্ন করে)
.
—” বোকার মতো কথা বলিও না। যাও তো এখান থেকে? ( বিরক্ত বোধ করে)
.
—” তাই আমি বোকা তাইতো? তাহলে বোকামির একটা কাজ করেই ফেলেই কেমন। মলের সবাইকে চিৎকার করে বলি যে আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই। আর আপনি আমাকে proposed করেছেন সেটা বললে কেমন হবে বলুন তো……
.
উনি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো……
.
—” as your wish…..
.
উনার এমন কথায় আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম মূহুর্তেই। আমার এমন বলাতে কি উনার কিছু যায় আসে না। নাকি চাই আমি এমনটা বলি সবাই সামনে? নিজের কথার জালে নিজেই ফেঁসে গেলাম বাজে ভাবে। তাই কনফিউজড হয়ে বলে উঠি……..
.
—” মানে…….
.
আমার এমন কথায় নিজের হাতের ফোনটা পকেটে রাখতে রাখতে আমার দিকে তাকিয়ে বললো……
.
—” লুক, আমার থেকে তুমি দূরে থাক এটাই তোমার জন্য বেস্ট। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো তুমি এখানে আমার সাথে কথা বলতে আসুনি রাইট, সেটা আমিও জানি সেটা তুমিও জানো। তুমি তোমার অস্থিরতা নিয়ে আমার কাছে এসেছো তোমার প্রশ্নের উত্তর জানতে। কিন্তু আমি তোমাকে আগেও স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছি যে তুমি আমার থেকে কোনো রকম উত্তরের আশা করিও না। কারণ আমি তোমাকে কোনো রকম উত্তর দিতে বাধ্য নয়। তোমার অস্থিরতা তোমাকেই মিটাতে হবে আর সেটা তুমিই চিন্তা করবে কিভাবে করবে। কারণ তোমার হাতে মাত্র আর চারদিন সময় আছে এরপর তুমি তোমার উত্তর পেলেও বিশেষ কোনো কাজ হবে না তাতে। তাই তুমি আমার পিছনে পরে না থেকে নিজের সময়টা নষ্ট না করে, অন্য কোথাও কাজে লাগাও এই সময়টা তাতে তোমারই লাভ। সো তুমি তোমার উত্তর পেয়েছো আশা করি এখন তুমি আসতে পারো এখান থেকে……
.
উনার এমন বিরক্তি মাখানো কথা গুলো আমাকে বেশ জ্বালিয়েছে ভিতর ভিতর। এক মূহুর্তে জন্য মনে হয়েছিল যে উনাকে তখনই গলা টিপেই মেরে ফেলি। কেন এমন করছে আমার সাথে সেটা জন্য? কিন্তু আমিও চুপ থাকার প্রাথী নয়। তাই আবারও বলে উঠি…….
.
—” কেন করছেন আপনি আমার সাথে এমন?
.
এমন শান্ত গলায় কথা গুলো শুনে মূহুর্তেই কপাল কুঁচকে এলো উনার। উনি আমার দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে প্রশ্ন সিক্ত কন্ঠে বললো……
—” এক্সকিউজ মি! আমি কি করেছি তোমার সাথে?
.
আমি উনার এমন প্রশ্ন সিক্ত কন্ঠ শুনে মূহুর্তেই রাগ যেন মাথায় চেপে বসে। আশ্চর্য লোকটা এতো কিছু করেও বলছে কিছু করেনি। কি সুন্দর আমার সব প্রশ্ন গুলো হাওয়ায় উড়িয়ে দিচ্ছে মূহুর্তেই। আমার এতো অস্থিরতার কোনো মূল্য নেই উনার কাছে। কথা গুলো ভাবতেই আমার কেমন যেন বুক ফেটে যাচ্ছে কান্নায়। তাই আমি আর এক মূহুর্তে ও উনার সামনে না দাড়িয়ে নিজের কষ্টটা নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখে চলে আসি উনার সামনে থেকে। আমার এমন হঠাৎ চুপ করে যাওয়াতে হয়তো উনি কিছু বুঝতে পেরেছিল তাই আমার দিকে কিছুক্ষণ নিস্তব্ধে তাকিয়ে ছিল। আমিও আর পিছন ফিরে তাকায়নি উনার দিকে চলে আসি দাদীর পাশে। রুদ্রের মা, আমার মা, আর দাদী মিলে আমার জন্য শাড়ী পছন্দ করছেন উনাদের মন মতো করে। কিন্তু আমি তখনো চুপ করে বসে থাকি আর বারবার আঁড়চোখে উনাকে দিকে তাকাচ্ছিলাম। উনি খানিকক্ষণ পরপর আমার দিকে তাকাচ্ছিল হয়তো আমার কষ্ট পাওয়াটা বুঝতে পেরেছিল তাই। কয়েকবার নিজের মধ্যে চোখাচোখি হয়েছিল কিন্তু উনি নিজের চোখ নামাই নি আমার ওপর থেকে তখনো তাকিয়েই ছিল। কিন্তু আমি তখন চোখ নামিয়ে নিয়ে ছিলাম উনার ওপর থেকে। আমি ঘুরে বসতেই আস্তে করে উনি শপিং মলে বাহিরে চলে যায় পরে আর কোথাও দেখা জায়নি উনাকে। আমি বেশ কয়েক বার ঘাড় ঘুরিয়ে উনাকে খুঁজা চেষ্টা করেছি কিন্তু কোথাও পাইনি। প্রায় ঘন্টা খানিকটা পর উনি মলে ভিতরে প্রবেশ করেন উনার দুই হাত তখন খালি থাকলেও আসিফের দুইহাত ছিল শপিং ব্যাগে ভরপুর হয়তো উনি কেনাকাটা করেছেন এখান থেকে। আমি ঘুমিয়ে তাকাতেই আসিফ আমার আস্তে করে ভাবি বলে ডাকে উনার দিকে। আসিফের মুখে ভাবি ডাকটা শুনেই মূহুর্তেই চমকে উঠি। আমি যে রিদ খানের বিয়ে করা বউ সেটা এক মূহুর্তে জন্য ভুলেই গিয়েছিলাম পৃপ্তী ডাইরিটা জন্য। যেটা এখন আসিফের ভাবি বলে ডাকতেই মনে পরে যায়। এতক্ষণে আমার মনে হচ্ছে হ্যাঁ আমার রিদ খানের ওপর শতভাগ অধিকার হয়েছে আর যায় হোক আমার বিয়েটা তো মিথ্যা নয় উনার সাথে। উনি নিজেই আমাকে জোর করে বিয়ে করেছে তাহলে আজ এতো কিসের লুকোচুরি আমার মধ্যে। কথা গুলো ভেবেই উঠে চলে যায় আসিফের সামনে ভ্রুঁ কুঁচকে আসিফের দিকে তাকাতেই আসিফের হাতে থাকা প্যাকেট গুলো আমার হাতে তুলে দিতে দিতে বললো……..
.
—“ভাবি এই প্যাকেট গুলো আপনার জন্য। ভাইয়া আগের থেকেই আপনার জন্য কিনে নিয়েছিল। এই গুলো আসতে একটু দেরি হয়েছে তাই আপনাকে দিতে লেট হলো।
.
আসিফ কথা গুলো বলতে বলতে প্যাকেট গুলো আমার দুহাতে তুলে দিল। আমি এতো গুলো প্যাকেট দেখে হা হয়ে তাকিয়ে থাকি আসিফ দিকে আর অবাক করা সুরে বলে উঠি……
.
—” এই গুলো আমার জন্য?
.
আসিফ সুমতি জানিয়ে বললো…..
.
—” হুমমম ভাবি আপনার জন্যই, ভাইয়া অনেক আগেই কিনে নিয়েছিল আপনার জন্য আমাকে দিয়ে। এখানে সব কয়েকটায় শাড়ি ভাইয়ার পছন্দ করা। আসলে ভাইয়া খুব চাপা স্বভাবের তাই কখনো কাউকে কিছু বুঝতে দেয় না। তবে আমি ভাইয়া সাথে সবসময় পাশে থেকে এসেছি তাই আমি জানি ভাই কেমন?
.
আসিফের এমন কথায় তখন এক মূহুর্তে জন্য আমি থমকে গেলাম। সবকিছু যেন আমার মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে জার কিছুই আমি বুঝতে পারছি না। রিদ খান আমার জন্য এতটা ভাবে যাহ আমার কিছু জানা ছিল না। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আসিফ ও তার বলা প্রতিটা কথা। আসিফের প্রথম কথা হচ্ছে রিদ খান কেমন সেটা আসিফ থেকে অন্য কেউ ভালো জানার কথাও না। পৃপ্তী ডাইরিতে স্পষ্ট ভাষায় আসিফের কথা উল্লেখ ছিল। আর সেদিন রাতেও আসিফ রিদ খানের সাথে ছিল যেদিন বর্ষা, কেয়া, পৃপ্তী আগুনে পুড়েছিল। আসিফ হয়তো রিদ খানের সাথে সাথে ওদের লাস্ট কাহিনীটা জানে তাই এই মূহুর্তে আসিফ এই বলতে পারবে পৃপ্তী শেষ ডাইরি কাহিনীটা। তাই আমার যা জানা প্রয়োজন সেটা এখন আসিফ জানাবে আমাকে। হ্যাঁ আসিফই আমাকে আমার সকল প্রশ্নের উত্তর দিবে। উনি জবাব দিতে বাধ্য নয় আমাকে তাতে কি হয়েছে আসিফ তো বাধ্য আমাকে আমার উত্তর দিতে। কথা গুলো ভাবতেই এক চিত্তের হাসির জলক ফুটে ওঠে আমার মধ্যে। আমি নিঃশব্দে নিজের ঠোঁটে হাসির রেখা টেনে ধরে প্যাকেট গুলো হাতে নেই আসিফ থেকে। সাথে সুবর্ণ সুযোগে আশায় থাকি কখন আসিফকে একা পাবো আর আমি আমার সকল প্রশ্নের উত্তর পাবো সেটার। আমি হাসির রেখা টেনে ধরে ঘাড় ঘুরিয়ে উনার দিকে তাকায় একপলক। উনি তখনো নিজের ফোন টিপছেন মনোযোগ সহকারে। হয়তো আমাকে দেখানো চেষ্টায় আছেন যে উনি ফোন টিপছেন আমার দিকে তার কোনো রকম মনোযোগ নেই এমন কিছু। আমিও আর কিছু না বলে উনার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি কারণ এখন আমার যাহ চাই তাহ আমি পেয়ে গেছি। তাই উনার দিকে তাকিয়ে থেকে উনাকে শুনিয়ে শুনিয়ে আসিফকে উদ্দেশ্য বললাম……
.
—” ভাইয়া, আপনি আপনার ভাইয়াকে বলবেন যে আমার এক কাপড়ে হবে না। এই কাপড়ের সাথে আমার আরও তিনটা কাপড় লাগবে। উনি যদি আমাকে সেই গুলো না এনে দেয় তাহলে আমিও এই গুলো এমনই এমনই পড়েই সবার সামনে চলে যাবো। তখন আমাকে কেমন দেখাবে সেটা জানেন নিশ্চয়ই।
.
আমার এমন কথায় আসিফ কনফিউজড হয়ে তাকিয়ে থাকে বোকার মতো করে হয়তো আমার কথা গুলোর মানে বুঝতে পারিনি। কিন্তু আমার এই গুলো বলার পরপরই উনি আমার দিকে তাকায় সাথে সাথে কিন্তুক্ষণ চুপ করে তাকিয়ে থেকে কাকে যেন ফোন লাগায় মূহুর্তে। তারপর কথা বলতে বলতে অন্য দিকে চলে যায়। আর আমি উনার দিকে তাকিয়ে থেকে মুচকি মুচকি হাসতে লাগলাম। আমাদের দুজনের এমন কান্ডের মধ্যে আসিফ ছিল বড্ড কনফিউজড পারসোন। আমি এক পলক আসিফকে দেখে প্যাকেট গুলো হাতে নিয়ে মুচকি হেসে চলে যায় দাদীর পাশে…….
.
.
.
চলবে……….