তপ্ত ভালোবাসা #লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া #পর্বঃ৬০

0
118

#তপ্ত ভালোবাসা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ৬০

.
🍁
আমাদের দুজনের এমন কান্ডের মধ্যে আসিফ ছিল বড্ড কনফিউজড পারসোন। আমি এক পলক আসিফকে দেখে প্যাকেট গুলো হাতে নিয়ে মুচকি হেসে চলে যায় দাদীর পাশে…….

.

দাদীর পাশের প্যাকেট গুলো নিয়ে হাজির হতেই আমাকে দেখে চমকে উঠে আমার মা, পরে আমার দিকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে এসে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে বলে, এই প্যাকেট গুলো কে দিয়েছে? আমার হাতে কোথায় থেকে এসেছে? এই গুলো কিসের প্যাকেট? ইত্যাদি নানান সব প্রশ্নে আমাকে বিমূর্ত করছে খানিকটা। আমি আম্মু নানান সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগেই সেখানের উপস্থিত সব মহিলা সদস্যরা সবাই এবার চলে আসে আমার সামনে। আমি হঠাৎ করে সবাইকে আমার সামনে উপস্থিত হতে দেখে মূহুর্তেই চাপা রাগ চলে আসে আম্মু ওপর। আম্মু জন্য সবসময় আমাকে একটা বিরক্তকরণ পরিস্থিতি পরতে হয় যেটার জন্য আমি কখনোই তৈরি থাকি না। এবার তাই হয়েছে আমার সাথে। আশ্চয আমি বুঝি না কখনো আমি কি এই প্যাকেট গুলো নিয়ে পালিয়ে যেতাম নাকি? এতটা চেপে ধরার কি আছে? আমি আম্মু এমন কান্ডে চাপা রাগ নিয়ে কিছু বলতে যাবো তার আগেই দাদী হালকা হেসে আমাকে নিজের কাছে টেনে নিতে নিতে স্বাভাবিক কন্ঠে সবার উদ্দেশ্য বললো……

.

—” রিদ দিয়েছে এই প্যাকেট গুলো ওকে। কিছুক্ষণ আগে যখন রিদ এই প্যাকেট গুলো আসিফকে দিয়ে পাঠিয়েছিল তখনই আমি দেখেছিলাম।

.

উনার পাঠানো কিছু দাদীকে স্বাভাবিক বগিতে নিতে দেখে আমি মূহুর্তেই চমকে উঠলাম আমি। এই ভেবে যে দাদী কি আমার সাথে উনার কথা গুলোও শুনতে পেরেছে কোনো ভাবে? নাকি বুঝতে পেরেছে কিছু? এই কথা গুলো ভেবেই কেমন যেন নিজের মধ্যে একটা সংশয় সৃষ্টি হয়। এই সংশয় নিয়েও দাদীকে কিছু বলতে পারবো না তাই আপাতত নিজের চুপ থাকাটায় স্রেয় মনে করছি। দাদীর কথা গুলো শুনে কেউ আর কিছুই বলেনি সবাই সবার মতো করে বাকি কেনাকাটায় চলে যায়। সবাই চলে যেতেই দাদী আলতো করে আমার কপালে একটা চুমু খেয়ে আদুরের সুহিত বললো………

.

—” তুই অনেক লক্ষী জানিস। তোর জন্য আজ আমার রিদ বিয়ে করতে রাজি হয়েছে। অনেক দিন ধরে চেষ্টা করেছি পারছিলাম না কিন্তু আজ তোর কথা মতোই রাজি হয়ে গেছে। এবার ওহ ভালোই ভালোই বিয়েটা করে নিলেই হবে। আমি শুধু ওর সুখটা দেখে যেতে চাই এর থেকে বড় পাওয়া অন্য কিছু নাই আমার জন্য।

.

দাদীর এমন কথায় হঠাৎই বুকের মধ্যে কেমন চাপা কষ্ট লেগে ওঠে মূহুর্তেই। নিজের বুকটা চিনচিন ব্যাথার সাথে সাথে ভারি ভারি মনে হচ্ছে নিজেকে। উনার বিয়ের কথাটা শুনে হঠাৎ করেই যেন কষ্টা হাজার গুণ কাজ করছে বুকে। আমি দাদীর কথায় কিছুক্ষণ চুপ থেকে আস্তে করে বলে উঠি…….

.

—“উনার জন্য কি এখন মেয়ে দেখবেন দাদী?

.
আমার এমন প্রশ্নে দাদী হালকা হেসে উঠে বললো…..

.
—” মেয়ে আমার আগের থেকেই ঠিক করা ছিল রিদ এর জন্য। রিদ রাজি হচ্ছিল না বলে কিছু করতে পারছিলাম না। কিন্তু আজ রিদ রাজি হওয়া সাথে সাথে আমিও রিদের শশুরকে সবটা জানিয়ে দিয়েছিলাম। তাদের কোনো আপত্তি নেই রিদের অল্প সময়ের বিয়ে করাটা নিয়ে। এখন তারাও হয়তো কিছুক্ষণ মধ্যে চলে আসবে এখানে বিয়ের শপিং করতে মেয়েকে নিয়ে।

.
দাদীর কথা গুলো তখন আমার মাথা ওপর আকাশ ভেঙে পড়ার সমান কিছু বুঝা মনে হচ্ছিল। এতো অল্প সময়ের দাদী উনার জন্য মেয়েও ঠিক করে ফেলবে সেটা কখনোই ভাবিনি। আমি শকটে পাথর মূতির মতো দাঁড়িয়ে ছিলাম জায়গায়। তখন আমার অনূভুতি কেমন ছিল সেটা হয়তো বাক্যে প্রকাশ করলেও কম হবে। রাগ, দুঃখ, কষ্ট, ক্রোব, সবগুলোই একসাথে কাজ করছিল নিজের মধ্যে। রাগটা ছিল উনার ওপর। কেন উনি বিয়ে জন্য রাজি হল? বিয়েটা না ও তো করতে পারতো তাই না। দুঃখটা ছিল দাদীর নিয়ে। উনি কিছু না জেনেই কতগুলো স্বপ্ন সাজাচ্ছিল উনার বিয়েটা নিয়ে। আর কষ্ট হচ্ছে নিজেকে নিয়ে কিন্তু কেন তা বুঝতে পারছি না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমার ক্রোবটা যেটা হচ্ছে রিদ খানের হবু বউয়ের ওপর। জানা শুনা নেই হুট করেই কি বিয়ের জন্য রাজি হতে হবে আশ্চর্য। মেয়েটার কি আর কোনো কাজ নেই নাকি উনাকে বিয়ে করা ছাড়া। একটা ছেলে বিয়ে করবে বলে রাজি হওয়ায় সাথে সাথেই কি তার গলায় ঝুলে পড়তে হবে? উফ আসলে মেয়েটা খারাপ শুধু বিয়ে বিয়ে করে। নিজের মধ্যে কথা গুলো ভেবেই হালকা বিরক্তি নিয়ে স্পষ্ট ভাষায় বলে উঠি…..

.

—” রিদ ভাইয়ার বিয়ে জন্য কি খুব বেশি তাড়াহুড়ো হয়ে যাচ্ছে না দাদী? তাছাড়া বিয়েতে তো মেয়েকেও ঠিক ঠাক ভাবে দেখতে হয়। অপরিচিত মেয়ে হুট করেই কি আর বড় বানানো জায় দাদী?

.
দাদীর আনন্দে চিকচিক করা চোখ দুটোতে হয়তো আমার বিরক্তি প্রকাশ পাওয়া ফেসটা ধরা পরিনি তখন। তাই তো দাদী আমার কথা পিষ্টে সাথে সাথে বলে উঠে…..

.
—” তাড়াহুড়ো কই হচ্ছে? রিদ তো বলেছে তোদের সাথে বিয়ে দিয়ে চাই। তাহলে আমার কি করার আছে বল। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে মেয়ে আমাদের পরিবারই। রিদের মামাতো বোন নিধি। খুব ভালো মেয়ে দেখতে খুব মিষ্টি ঘরালো মেয়ে। দেশের বাইরে থেকে পড়াশোনা করলেও বাঙালী মতোই চলাচলের। আমি অনেক আগের থেকেই ওদের দুজনের বিয়ে ঠিক করে রেখেছিলাম । নিধি তো রিদকে ছোট থেকে পছন্দ করে। আর নিধি খুব………

.

দাদীর বাকি কথা গুলো শেষ করার আগেই আমি রাগে কটমট করতে করতে দাঁতে দাঁত পিষে সেখান থেকে চলে এসে শপিং মলে সামনে দুইতলার এরিয়ায় খুলা বাতাসের নিচে। কারণ দাদীর সামনে যদি আর এক মূহুর্তেও অপেক্ষা করতাম তাহলে হয়তো রাগের মাথায় দাদীকেই উল্টো পাল্টা কিছু বলে বসতাম। নিধি নামের মেয়েটার জন্য দাদী মুখে এতো প্রশংসা আমার মোটেও ভালো লাগছিল না অসয্য লাগছিল খুব বেশি। মনে হচ্ছিল বিষাক্ত কোনো বানি শুনচ্ছিল দাদী আমাকে। আমার এমন আচরণে হয়তো দাদী কিছু বুঝতে পারিনি আবাক ছিল কিছুটা। কিন্তু কতক্ষণ এইভাবে নিজেকে ধরে রাখতে পারবো তা জানি না। তাই নিজেকে শান্ত রাখার জন্য এখানে চলে আসলা। কেন যেন নিজেকে মানাতে পারছি না উনার বিয়ে করাটা নিয়ে সেটাই বুঝতে চাস না। আচ্ছা আমি উনার বিয়ে করা বউ বলে নাকি অন্য কিছু জন্য আমার এমন অস্থিতা হচ্ছে উফফ? নিজের চিন্তা ভাবনা সাথে চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ চুপ করে দাড়িয়ে থাকি। কতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম তা জানি না তবে পিছনে থেকে উচ্চ শব্দ কানে আসতেই আমি আস্তে আস্তে চোখ তাকাল সামনে দিকে। পরে নিঃশব্দে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে নিজেকে শান্ত করে আস্তে করে পিছন ফিরে তাকালাম। পিছন ফিরে তাকাতেই চোখে পড়লো খুব সুন্দরী একটা মেয়েকে যাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে উপস্থিত পরিবার সদস্য বিন্দ সবাই। প্রত্যেকের খুশিতে চকচক করার ফেস আর সদ্ব্যবহার দেখে মনে হচ্ছে এই মেয়েটির সাথে হয়তো রিদ খানের বিয়ে ঠিক করেছে। আর এই কথাটা হয়তো এতক্ষণে উপস্থিত সবাই জানতেও পেরে গেছে। তাই তো মলের ভিতরেই আনন্দ ডল পড়ে গেছে। রিদ খান ও সবার থেকে একটু আলাদা একপাশে দাঁড়িয়ে আছে ফোন হাতে স্বাভাবিক বগিতে। হয়তো উনি আগের থেকেই জানতেন উনার বিয়েটা নিয়ে। আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে একপাশে থেকে সবটা পযবেক্ষণ করছিলাম। সবার এতো এতো খুশি হওয়ার মধ্যেও আমি খুশি হতে পারছিলাম না কোনো ভাবে। আমি চুপচাপ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার মধ্যে দিয়েই হঠাৎ নিধি নামের মেয়েটা গিয়ে উনার পাশে দাঁড়িয়ে পরে হাসি মুখে কথাও বলতে লাগে। উনিও মেয়েটির কথা উত্তর দিচ্ছল ফোন টিপতে টিপতে। দুইজনের এতো আপোষ পূর্ণতা দেখে মূহুর্তে আমি সামনের দিকে ঘুরে তাকায় ওদের দুজনকে পিছনে ফেলে। দাঁত খিঁচিয়ে শক্ত করে দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎই রাগে হনহনিয়ে চলে যায় ওদের দুজনেই সামনে। দুইজনের সামনে দাড়িয়ে পরে উনাকে উদ্দেশ্য করে কোনো রকম বনিতা ছাড়ায় চাপা সুরে বলে উঠি…..
.

—” কি করতে চাচ্ছেন আপনি.?

.
আমার হঠাৎ হামলে পড়া প্রশ্নে চমকে উঠে দুইজনেই। চোখ তুলে উনি স্বাভাবিক বগিতে তাকালেও উনার হবু বউয়ের দৃষ্টি ছিল তীক্ষ্ণ। নিধি নামের মেয়েটি আমার দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে কিছু বুঝতে না পেরে বলে উঠে……

.
—” এক্সকিউজ মি! হু আর ইউ?

.
উনার হবু বউ যে আমাকে চিন্তে পারছে না। এটা আমি ভালো করেই বুঝতে পারছি কিন্তু আমি উনার কথা কানে না নিয়ে ক্রোব করা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি রিদ খানের দিকে। উনিও আমার দিকে স্বাভাবিক বগিতে তাকিয়ে ছিল। উনাকে স্বাভাবিক দেখে আমিও আবারও উনাকে উদ্দেশ্য প্রশ্ন সিক্ত কন্ঠে বলে উঠি……
.

—” বিয়েটা করা করা কি খুব জরুরী….

.
আমার বারবার প্রশ্ন করাতে নিধি আপু ছিল আশ্চর্য। উনি তখন একটা মূহুর্তের জন্য হয়তো বুঝতে পারছিল না কি হচ্ছে এখানে। উনি কনফিউজড হয়ে আবারও আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো…….

.
—” কে তুমি? অদ্ভুত রকম প্রশ্ন কেন করছো?

.

নিধি আপুর কথার পিষ্টে এক পলক আপুকে দেখে আবারও নিজের দৃষ্টি রিদ খানের দিকে স্থির করি। উনার দিকে তাকিয়ে থেকে কাটকাট উত্তরে বলে উঠি…..

.
—” উনার বউ আমি…

.

আমার এমন কথা আপু এক মূহুর্তে এমন অবাকে চরম সীমানায় চলে যায়। কাজল কালো চোখ দুটো মূহুর্তেই বড় বড় হয়ে যায় আপুর। একবার আমার দিকে তো একবার রিদ খানের দিকে তাকাচ্ছে। কারও কোনো রকম হেলদোল না দেখে সাথে সাথে আতংকিত সুরে আটকে আঁটকে বললো……

.

—” ম মা মানে……

.
—” মানে আমি উনার বিয়ে করা বউ…..

.

আমার কথা গুলো আপুর কোনো রকম ভাবেই হয়তো গ্রহণ যোগ্য মনে হচ্ছিল না। তাই অস্থির হওয়া বগিতে দ্রুত উনাকে উদ্দেশ্য করে উত্তেজিত হয়ে বললো…..

.
—” রিদ এই মেয়েটা কি বলছে এসব….?

.

উনি আমার দিকে তাকিয়ে থেকে কোনো রকম বনিতা ছাড়ায় আপুকে উদ্দেশ্য করে বললো……

.

—” যাহ সত্যি তাই বলছে রিত……

.
উনার এমন কথায় এবার আপুর সাথে সাথে আমিও আবাক হয়ে যায়। উনার ওপর ফিদা হওয়া মন নিয়ে তাকিয়ে থাকি এক দৃষ্টিতে। কারণ আমি কখনোই আশা করিনি উনি আমার হয়ে এমন কিছু বলবে। আমি মনে করেছিলাম উনি আমাকে আগের বারের মতো হয়তো এবারও অপমান করবেআপুটার সামনে। কিন্তু উনি তা না করে উল্টো আমার কথায় সুমতী পোষণ করছে। আমার আবাক করা চোখে তাকিয়ে থাকার মধ্যে দিয়েই আপু আবারও উনাকে উদ্দেশ্য করে অবিশ্বাস কণ্ঠে বললো……

.
—” রিদ আমি এখন মজা করার মডে নেই। তুমি প্লিজ সিরিয়াস হয়ে উত্তরটা দাও আমাকে।

.
আপুর এমন কথায় উনি একবাক্যে বললো……

.

—” I mean it… নিধি

.

( রাতে আরও একটা পার্ট দিব । রাত দশটা ভিতর ভিতর)

.

.

.
চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here