#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_36
#ইয়াসমিন_খন্দকার
প্রণালী, প্রত্যুষকে নিয়ে আজ সৌভিকদের বাসায় এসেছে রায়ান। সৌভিক, অনুরাধাও এখন ঢাকাতেই থাকে। আজ এখানে আসার অবশ্য একটা রিজনও আছে। আজ সৌভিক অনুরাধার মেয়ে স্নেহার এনগেজমেন্ট। সেই উপলক্ষ্যেই তারা আজ মূলত এখানে এসেছে। প্রণালী তো এসেই স্নেহার সাথে দেখা করতে চলে গেছে। দুজনের মধ্যে বেশ ভালোই সম্পর্ক৷ যদিওবা স্নেহা প্রণালীর চেয়ে বয়সে বড় তবে তাদের সম্পর্কটা একদম বন্ধুর মতোই।
রায়ান আর সৌভিক একে অপরের সাথে গল্পে ব্যস্ত ছিল। প্রত্যুষ একা এককোণে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল। প্রত্যুষকে একা দেখে তার পাশে আসে অনুরাধা। অনুরাধাকে দেখেই প্রত্যুষ স্মিত হাসে। প্রত্যুষ শুনেছে অনুরাধা তার মায়ের বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল। তাই তো অনুরাধার প্রতি আলাদা টান অনুভব করে। অনুরাধাও প্রত্যু্ষকে দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে। তার মনে পড়ে যায় প্রভার কথা। অনুরাধা নিজের চোখের কার্নিশে জমা এক ফোটা অশ্রু মুছে হাসি মুখে প্রত্যুষকে বলে,”তুমি একা এখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন? কিছু খেয়েছ কি? মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে না। এদিকে এসো আমি তোমাকে খেতে দিচ্ছি।”
প্রত্যুষ কেন জানি অনুরাধাকে মানা করতে পারে না। যদিও তার ক্ষিধে পায়নি তবুও সে বলে,”ঠিক আছে আন্টি।”
অনুরাধা প্রত্যুষকে নিজে খাবার বেড়ে দেয়। প্রত্যুষ বেশ আয়েস করে খেতে থাকে। প্রত্যুষকে তৃপ্তি করে ইলিশ মাছ খেতে দেখে অনুরাধা মুখ ফসকে বলে ফেলে,”প্রভারও ইলিশ মাছ পছন্দ ছিল।”
প্রত্যুষ খাওয়া থামিয়ে অনুরাধার দিকে তাকায়। অনুরাধা বুঝতে পারে সে ভুল সময় ভুল কথা বলে ফেলেছে। তাই বলে,”তুমি খাও, আমি আসছি।”
বলেই সেখান থেকে চলে আসে।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
সৌভিক ও রায়ানের বিজনেস পার্টনার সজল চৌধুরী সপরিবারে পৌঁছে গেল স্নেহার এনগেজমেন্ট উপলক্ষ্যে। তাকে আসতে দেখেই রায়ান ও সৌভিক এগিয়ে গেলো অভ্যর্থনা জানাতে। সজল চৌধুরীর সাথেই এসেছিল তার একমাত্র ছেলে সমুদ্র চৌধুরী। তাকে দেখে রায়ান হেসে বললেন,”কেমন আছ ইয়াং ম্যান?”
“ভালো আছি, আঙ্কেল। আপনি?”
“আমিও ভালো আছি৷ তোমার ড্যাডের কাছে তোমার ব্যাপারে শুনলাম। কিছুদিন আগেই নাকি তুমি নিউইয়র্ক থেকে দেশে ফিরেছ। এবার বাবার ব্যবসায় হাত দাও। উনি আর কতদিন একা সামলাবেন সব?”
সজল চৌধুরী হেসে বললেন,”আমিও ওকে এই কথাই বলি।”
এভাবেই ওনারা কথাবার্তা চালিয়ে যান। এরমধ্যেই সমুদ্রর নজর আটকে যায় কাউকে দেখে। সে ঠিক দেখছে সে? ভালো ভাবে কয়েকবার পরখ করে নিলো। বিড়বিড় করে বলল,”আরে হ্যাঁ, এই মেয়েটাই তো। এর সাথেই তো সেদিন রাস্তায় ঝামেলা হয়েছিল। কিন্তু এ এখানে কি করছে?”
প্রণালী তো নিচে এসেছিল প্রত্যুষের খবর নিতে। ছেলেটা তো এমন গ্যাদারিং একদমই পছন্দ করে না। কিন্তু নিচে এসেই সবার প্রথম সে সমুদ্রর মুখোমুখি হয়। আর তাতেই পুরাতন স্মৃতি তাজা হয়ে ওঠে। রাগে প্রণালীর হাত নিশপিশ করতে থাকে। সে কিছু বলতে যাবে তার পূর্বেই রায়ান এসে প্রণালীকে বললেন,”প্রণালী এই হলো সমুদ্র চৌধুরী। তোমার সজল আঙ্কেলের ছেলে। তোমার মেবি ওকে মনে নেই। ছোট থাকেন দেখেছিলে। ও কিছুদিন আগেই নিউইয়র্ক থেকে এসেছে। আর সমুদ্র ও হলো আমার মেয়ে প্রণালী।”
সমুদ্র মনে মনে বলে,”আই সি। তাহলে এই মেয়েটা রায়ান আঙ্কেলের।”
এদিকে প্রণালীর মাথায় তো আগুন জ্বলছিল। সমুদ্রকে দেখেই তার মেজাজ গরম হয়ে গেছে। এই স্পয়েল কিডটা কিনা সজল আঙ্কেলের! অথচ সজল আঙ্কেল কত ভালো মানুষ। প্রণালী বুঝতে পারে বিদেশে থেকেই হয়তো এমন স্পয়েল কিড তৈরি হয়েছে। এরইমাঝে সমুদ্র প্রণালীর দিকে হাত বাড়িয়ে বলে,”হ্যালো প্রণালী। নাইস ঠু মিট ইউ।”
প্রণালীর তো গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছিল সমুদ্রর এমন ভালোমানুষি দেখে। আবার খ্যাট খ্যাট করে হাসছে। কিন্তু প্রণালী তো এই ছেলের আসল রূপ জানে। তবে সবার সামনে ভদ্রতা রক্ষার্থে প্রণালী সমুদ্রের সাথে হাত মেলায়।
তবে বেশিক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে থাকল না। প্রত্যুষকে খোঁজার বাহানায় সেখান থেকে চলো গেলো। সমুদ্রও নিজের মতো ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
প্রণালী প্রত্যু্ষকে দেখতে পেল অনুরাধার রুমে। সেখানে বসেই সে অনুরাধার সাথে গল্প করছিল। প্রণালী সেখানে গিয়ে বলে,”আন্টি, স্নেহা দিদি তোমায় ডাকছিল।”
“আচ্ছা, তুমি তোমার ভাইয়ের পাশে বসো। আমি যাই স্নেহার সাথে কথা বলে আসি।”
~~~~~
স্নেহার সাথে শহরের বিখ্যাত ডাক্তার ধ্রুবজ্যোতি রায়ের এনগেজমেন্ট সম্পন্ন হয়। এরপর আসে খাওয়া দাওয়ার পালা। খাওয়া দাওয়া শেষে সৌভিক রায়ানকে বলেন,”তুই একটু এই দিকে আয় তো। তোর সাথে জরুরি কথা আছে।”
রায়ান সৌভিকের সাথে চলে যায় একটু দূরে। বলেন,”হ্যাঁ, বল। আমায় কি বলার জন্য ডাকলি?”
“আসলে এসব কথা তোকে আমি আগেই বলতে চেয়েছিলাম তারপর ভাবলাম অনুষ্ঠান মিটে যাওয়ার পরই বলব। তুই আমায় আবিরের স্ত্রী সন্তানের ব্যাপারে খোঁজ নিতে বলছিলিস না? আমি খোঁজ নিয়েছি।”
রায়ান অস্থির হয়ে বললেন,”খোঁজ নিয়ে কি জানতে পারলি তুই?”
“তুই একটু শান্ত হ। আমি বলছি সব।”
এরপরেই সৌভিক রায়ানকে এক এক করে সব খুলে বলতে লাগল।
“আবিরের স্ত্রী এখন চট্টগ্রামে রয়েছে। তবে আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি ওদের ছেলে এখন ঢাকাতেই রয়েছে। ছেলেটার ছবিও আমার কাছে কাছে। তুই দেখতে পারিস।”
বলেই রায়ানের দিকে একটা ছবি বাড়িয়ে দিলেন সৌভিক। রায়ান ছবিটা দেখেই ভূত দেখার মতো চমকে উঠলেন। হতবাক স্বরে বললেন,”শান্ত!”
সৌভিক বললেন,”তুই এনাকে চিনিস নাকি?”
“এই ছেলেটার নাম শান্ত। ও তো আমার ছেলে প্রত্যুষকে টিউশনি করাতো।”
“কি বলছিস তুই? এই ছেলে তোর ঘর অব্দি পৌঁছে গেছে! রায়ান আমি বলছি তুই ভালো করে এই ছেলের ব্যাপারে খোঁজ লাগা। আমার মনে হচ্ছে এই ছেলের কোন কুমতলব আছে। ভুলে যাস না এটা হলো আবিরের ছেলে। এ নিশ্চয়ই তোর এবং তোর পরিবারের ক্ষতি করতে চাইবে। তুই তোর ছেলে মেয়েকে দেখে রাখিস।”
রায়ান অস্থির হয়ে উঠলেন। এতদিন ধরে নিজের ছেলে-মেয়েদের আগলে রেখেছেন। তবে এবার কি তাদের উপর বিপদের আঁচ পড়তে চলেছে? এমনটা কিছুতেই হতে দেবেন না রায়ান। তার নিজের ছেলে-মেয়েকে আগলে রাখতেই হবে। রায়ানের বেশি চিন্তা হচ্ছে তার মেয়েকে নিয়ে। প্রত্যুষ শান্তশিষ্ট এবং বাধ্য ছেলে। কিন্তু প্রণালী তো হয়েছে একদম জেদি আর চঞ্চল স্বভাবের। তাছাড়া ও আবার বেছে নিয়েছে উকিলের প্রফেশন। সবদিক দিয়েই বিপদ। রায়ান আর কিছু ভাবতে পারলেন না। হঠাৎ করেই অসুস্থ বোধ করতে লাগলেন। সৌভিক বলে উঠলেন,”কি হয়েছে রায়ান? তুই ঠিক আছিস তো?”
“একদম ঠিক নেই রে। আমি আর পারবো না। প্রভাকে হারিয়ে এমনিতেই আমি সর্বহারা এখন আমার ছেলে-মেয়েই আমার সব। ওদের কিছু হলে আমার কি হবে? আবির ওর ছেলেকে আমাদের পিছনে লাগিয়ে দিয়েছে। কয়দিন পর ও নিজেও জেল থেকে ছাড়া পাবে। তখন তো ও হাত ধুয়ে পড়বে আমাদের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য।”
“আমি দেখছি ঐ শান্তর ব্যাপারে যদি আরো খোঁজ খবর নেওয়া যায়। তুই শুধু নিজের ছেলে-মেয়ে দুটোর দিকে একটু বাড়তি নজর দে। আর বাকিটা তুই আমার উপরেই ছেড়ে দে ”
“তোর উপরেই সবটা ছেড়ে দিলাম সৌভিক। তুই ছাড়া যে আমার ভরসাযোগ্য কেউ নেই।”
to be continue…