একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় #Part_35 #ইয়াসমিন_খন্দকার

0
50

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_35
#ইয়াসমিন_খন্দকার

প্রণালী আজ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই নিজের বাবা ও ভাইয়ের জন্য ব্রেকফাস্ট তৈরি করেছে। প্রত্যুষ চাউমিন খেতে অনেক পছন্দ করে। তাই ব্রেকফাস্টে সেটাই করেছে প্রণালী৷ ব্রেকফাস্ট তৈরি করার পর সে গেল প্রত্যুষের রুমে। সেখানে গিয়ে প্রণালী দেখল প্রত্যুষ বই পড়ছে। এতে অবশ্য সে অবাক হয়নি। প্রত্যুষ বরাবরই এমন। ভোরে ঘুম থেকে উঠেই সে নামাজ আদায় করে পড়তে বসে। খাওয়া আর ঘুম ছাড়া বাকি সময় পড়াশোনাই করে ছেলেটা। প্রণালী প্রত্যুষের কাছে গিয়ে বলল,”ভাই, তুই তাড়াতাড়ি বাবাকে নিয়ে নিচে চলে আয়। আমি ব্রেকফাস্ট দিচ্ছি। আজ তো তোর মেডিকেলে প্রথম দিন। আমি এখন তোকে রেখে আসব।”

এই বলেই প্রণালী চলে যায়৷ প্রত্যুষের কোন কথা শোনার প্রয়োজন মনে করে না। এদিকে প্রত্যুষও কিছু বলার সুযোগটাও পায়না। সে তো পড়ে গেছে মাইনকার চিপায়। আগে তো প্রণালী আর রায়ান মিলে বাড়িটা মাথায় করে রাখত। আর যখন থেকে প্রণালীর উকিল হওয়া নিয়ে তাদের মাঝে ঝামেলা তৈরি হয়েছে তখন থেকেই তাদের মধ্যে কথাবার্তা কমে গেছে। তাদের কোন কথা বলার থাকলে তারা এভাবে প্রত্যুষকে বলে বলতে। নিজেরা মুখোমুখি হয়ে কথা বলেই না। প্রত্যুষ দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সে জানে না তার বাবা আর বোনের এই মনোমালিন্য কতদিন চলবে। সে আর বেশি না ভেবে তার বাবাকে ডাকতে যায়।

রায়ানের রুমের সামনে গিয়েই প্রত্যুষ বলে,”বাবা, আপি ব্রেকফাস্ট করতে নিচে যেতে বলেছে।”

“তুমি যাও আমি যাচ্ছি। আর আজ তো তোমার মেডিকেলে প্রথম দিন, আমি কি তোমায় নিয়ে যাব?”

“আপি নিয়ে যাবে বলেছে।”

“আচ্ছা, ঠিক আছে।”

প্রত্যুষ চলে যায়। রায়ান নিজের ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থাকে। প্রত্যুষকে দেখলেই তার প্রভার কথা মনে পড়ে। প্রত্যুষের চেহারার সাথে প্রভার চেহারার অনেক মিল। শুধু চেহারা নয় ব্যবহারেও দুজনের মধ্যে সাদৃশ্য অনেক। প্রত্যুষ যেন প্রভারই প্রতিরূপ। রায়ানের ইনোসেন্ট গার্ল প্রভার ❝ইনোসেন্ট বয়❞ এই প্রত্যুষ। শান্তশিষ্ট এবং ভদ্র, শুধু তাই নয় বেশ বাধ্য ছেলেও। রায়ান প্রণালীর কথা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। মেয়েটা একদম মায়ের মতো হয়নি। বেশ চঞ্চল এবং জেদি তৈরি হয়েছে।

~~~~~
ব্রেকফাস্ট শেষ করে প্রণালী প্রত্যুষকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের দিকে রওনা হয়। সেখানেই চান্স পেয়েছে প্রত্যুষ। রাস্তায় যেতে যেতে প্রণালী প্রত্যুষকে কিভাবে চলবে ফিরবে সেসব বলতে থাকে,”ভাই, তুই কিন্তু একদম বাইরের খাবার খাবি না, এসব তোর সহ্য হয়না। তোর ক্ষিধে পেলে টিফিন করে দিয়েছি সেটা খাবি। আর হ্যাঁ, সবসময় এমন আঁতেল হয়ে থাকবি না মোটেও। তোকে তো যেই পায় বোকা বানিয়ে যায়। একটু চালাক হ বুঝলি।”

“হু।”

“আরে কি হু হু করছিস? যা বলছি মন দিয়ে শোন, কেউ যদি তোকে বিরক্ত করে তাহলে আমায় এসে বলবি। তারপর আমি তাকে দেখে নেব। প্রণালীর ভাইয়ের সাথে লাগতে আসার ফল বুঝিয়ে দেব।”

প্রত্যুষ আর কিছু না বলে চুপচাপ থাকে। প্রণালী তাকে এখনো ছোট বাচ্চার মতোই ট্রিট করে। যেন সে স্কুলে পড়ে। প্রত্যুষের মনে পড়ে যায় তাদের স্কুলের দিনগুলোর কথা। প্রণালী কিভাবে সবসময় তাকে প্রটেক্ট করত। একবার একটা ছেলে প্রত্যুষকে মে’রেছিল স্কুলে, প্রণালী কোনভাবে সেটা জানতে পেরে নিজের বন্ধুদের সাথে মিলে ছেলেটাকে বাথরুমে নিয়ে গিয়ে সেই মা”র মে**রেছিল। শেষপর্যন্ত গার্জিয়ানদের কল করা হয়েছিল। এসব ভেবেই হাসতে থাকে প্রত্যুষ। তার বোন তাকে সত্যি ভীষণ ভালোবাসে।

হঠাৎ করে জ্যামে গাড়ি আটকে যায়। প্রণালী অবাক হয়ে বলে,”এই রাস্তায় তো জ্যাম হয়না। আজ হঠাৎ কি হলো?”

ড্রাইভার বলে,”সামনে খুব জটলা। মনে হয় কোন ঝামেলা হয়েছে।”

প্রণালী বলে,”ব্যাপারটা দেখতে হচ্ছে।”

বলেই গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়। প্রত্যুষও তার সাথে নামে। প্রণালী সামনে এগিয়ে গিয়ে দেখতে পায় একজন লোককে ঘিরে সবাই দাঁড়িয়ে আছে। প্রণালী একজনকে জিজ্ঞেস করে,”কি হয়েছে এখানে?”

“আরে দেখুন না, এই লোকটা একজন সাধারণ আইসক্রিমওয়ালা। রাস্তায় আইসক্রিম নিয়ে যাচ্ছিল এমন সময় ঐ লোকটা এসে ধাক্কা দিয়ে ওনার আইসক্রিমের গাড়িটা উলটে দেয়। অল্পের জন্য উনি বেঁচে যান। আর এখন ঐ লোকটা আইসক্রিমওয়ালার উপরই চটে গেছেন। ওনার গায়ে হাতও তুলতে চাইছেন।”

প্রণালীর মাথা গরম হয়ে যায়। সে আইসক্রিমওয়ালার দিকে তাকিয়ে দেখে বেশ প্রবীণ লোক। কতটা অমানুষ হলে কেউ নিজে অন্যায় করে এমন অসহায় বৃদ্ধ লোকের উপর চড়াও হয়। ঐ যুবকটি বৃদ্ধ লোকের উপর হাত তুলতে যাবে এমন সময় প্রণালী গিয়ে তার হাত ধরে ফেলে। যুবকটি নিজের সানগ্লাস চোখ থেকে খোলে। প্রণালীকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে বলে,”হু আর ইউ? এন্ড হাউ ডেয়ার ইউ টু টাচ মি?”

প্রণালী রাগী কন্ঠে বলে,”আপনি এত সাহস কোথায় পেলেন? একেই নিজে অন্যায় করেছেন এখন আবার এই অসহায় বৃদ্ধ লোকটির গায়ে হাত তুলছেন?”

যুবকটি বলে,”লুক। আমার ১ কোটি টাকার গাড়িতে ক্রাচ হয়েছে ওনার জন্য। আর আমি ওনাকে ছেড়ে দিব?”

“রাখেন আপনার গাড়ি। আপনার জন্য যে উনি মরতে বসেছিলেন সেটা দেখেন নি? ওনার জীবনের দাম কি আপনার গাড়ির থেকে বেশি।”

প্রত্যুষ বুঝতে পারে ঝামেলা বেশ ভালোই হতে চলেছে। প্রণালী বরাবরই বেশ প্রতিবাদী। তাই যাতে বড় কোন ঝামেলা না বাধায় তাই সে প্রণালীর উদ্দ্যেশ্যে বলে,”আপি, তুমি চলে আসো। ঝামেলা করিও না প্লিজ।”

প্রণালী তবুও থামে না। বলতে থাকে,”বলুন, আপনার গাড়ির দাম কি ওনার জীবনের থেকে বেশি?”

“অবশ্যই বেশি। এই গরীব লোক সমাজের কোন কাজে লাগে? যত্তসব আবর্জনা।”

প্রণালীর মাথায় এবার রাগ উঠে যায়। সে আর নিজের রাগ সামলাতে না পেরে ঠাস করে থা’প্পর বসিয়ে দেয় যুবকটির গালে। সকলে হতবাক। প্রত্যুষ মাথায় হাত দিয়ে বিড়বিড় করে বলে,”এই ভয়টাই পাচ্ছিলাম৷ আপি যেখানেই যাবে সেখানেই কোন না কোন ঝামেলা করবে।”

যুবকটি ক্রোধান্বিত হয়ে বলে,”তোমার এত বড় সাহস তুমি আমার গায়ে হাত তুললে? সমুদ্র চৌধুরীর গায়ে? এর পরিণাম তোমায় ভোগ করতে হবে। আই উইল সি ইউ।”

বলেই সমুদ্র নিজের গাড়িতে উঠল। তার মাথায় আগুন জ্বলছে। তার মা-বাবাও কোনদিন তার গায়ে হাত তোলে নি। আর আজ কিনা এতগুলো মানুষের সামনে একটা মেয়ে তার গায়ে হাত তুলল। সমুদ্র গাড়ি থেকে একটা মদের বোতল এনে সেই মদগুলো ছুড়ে মা*রল প্রণালীর মুখে। মদের বিশ্রী গন্ধে প্রণালীর বমি পেয়ে গেল। সমুদ্র বলল,”আমি মেয়েদের গায়ে হাত তুলি না জন্য তুমি বেঁচে গেলা। তবে এত সহজে তোমায় ছেড়ে দেব ভেবো না। সমুদ্র চৌধুরীর গায়ে হাত তোলার ফল অনেক ভয়াবহ হবে।”

এই বলে সে গাড়িতে উঠে চলে গেল। প্রণালী রাস্তার মাঝেই দাঁড়িয়ে ছিল। প্রত্যুষ দৌড়ে এসে টিস্যু এগিয়ে দিল প্রণালীর দিকে। বলল,”মুছে নেও।”

প্রণালী রেগে তাকিয়ে রইল সমুদ্রের যাওয়ার দিকে। আর বলতে লাগল,”স্পয়েল কিড কোথাকার!”

প্রত্যুষ বলল,”তোমাকে আমি বলেছিলাম ঝামেলা না করতে। দেখলে তো কি হলো। বাবা এসব জানলে খুব রেগে যাবে।”

“বাবাকে কিছু বলতে হবে না। তুই গাড়িতে উঠে পড়। দেরি হয়ে যাচ্ছে। এসব স্পয়েল কিডকে নিয়ে বেশি ভাবতে হবে না।”

এই বলে সে নিজের ব্যাগ থেকে পাঁচ হাজার টাকা বের করে আইসক্রিমওয়ালাকে দিয়ে বলে,”এই নিন আপনার ক্ষতিপূরণ। এটা দিয়ে নতুন গাড়ি কিনে নিয়েন।”
~~~~~~~~
প্রত্যুষকে মেডিকেল কলেজের সামনে নামিয়ে দিয়ে প্রণালী শান্তর সাথে দেখা করতে রমনায় এলো। সকালের ঘটনাটা ভেবে এখনো তার মাথায় আগুন জ্বলছে। শান্ত প্রণালীর মুখ দেখেই বুঝতে পারল সে রেগে আছে। তাই তো জিজ্ঞেস করল,”কি হয়েছে তোমার? এত রাগী লাগছে কেন?”

প্রণালী তখন শান্তকে সব খুলে বলে। সব শুনে শান্ত হেসে বলে,”তুমি সত্যিই বেশ সাহসী প্রণালী। একদম ঝাঁসি কি রাণী।”

প্রণালী বলে,”আমার এইজন্য এমন রিচ কিডদের সহ্য হয়না। বাপের টাকায় মস্তি করে বখে যায় একদম।”

“তুমিও তো রিচ কিড।”

“হ্যাঁ, কিন্তু আমি বা আমার ভাই আমাদের বাবার কড়া শাসনে বড় হয়েছি তাই বখে যাইনি। তবে বেশিরভাগ রিচ কিডই বখে যাওয়া। এইজন্য তো আমি সবসময় চাই কোন সাধারণ ফ্যামিলিতে বিয়ে করতে।”

“কিন্তু তোমার বাবা যদি কোন রিচ ফ্যামিলিতেই বিয়ে দিতে চায়?”

“বাবা এমন করবে না।”

বলেই শান্তর কাধে মাথা রাখে প্রণালী।

to be continue…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here