প্রজাপতির_রং🦋 Part_11

0
969

প্রজাপতির_রং🦋
Part_11
#Writer_NOVA

এক দিন পর………

—–আসসালামু আলাইকুম। কি খবর সবার? হেই গাইস, দিস ইজ মি RJ নোভানাজ আছি আপনাদের সাথে। আপনাদের শো ভোরের পাখি নিয়ে। আপনারা শুনছেন, 90.4 ঢাকা এফএম। এখন বাজে ৯ টা বেজে ১৭ মিনিট। আমি আর ৪৩ মিনিট আছি আপনাদের সাথে। আপনাদের মনের মধ্যে থাকা যেকোনো কথা কিন্তু আমাকে শেয়ার করতে পারেন।তাছাড়া কোন গানটা আপনারা শুনতে চান তাও কিন্তু জানাতে ভুলবেন না।তাহলে দেরী কিসের?এখুনি টেক্সট করে আপনার নাম,লোকেশন ও যা আপনি বলতে চান টাইপ করে পাঠিয়ে দিন। কমেন্ট করতে চাইলে অফিসিয়াল পেইজে যুক্ত হয়ে যান।আপনার পছন্দের গানের কথাও টেক্সট করে কিংবা কমেন্ট করে জানিয়ে দিতে পারেন।আমি যথাসাধ্য তা বাজিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো।কথা না বলে গানে ফেরা যাক।আপনাদের পছন্দের গান বাজাবো এখন।দেরী না করে জলদী জলদী আপনার পছন্দের গানটির কথা জানিয়ে দিন আমাকে।আমি সেটা—–

আদরঃ স্যার, আজ এত তাড়াতাড়ি অফিসে চলে এসেছেন যে? এখনও তো কেউ আসেনি?

এক ধ্যানে মোবাইলে ইয়ারফোন লাগিয়ে জোরে সাউন্ড দিয়ে এফএম শুনছিলো তাজরান।আদরের কণ্ঠ শুনে এফএম রেডিও অফ করে ওর দিকে তাকালো।আজ খুলে জলদী অফিস চলে এসেছে সে।

তাজঃ আজ অফিসে ইন্টারভিউ আছে,সেটা কি তুমি জানো আদর?

আদরঃ জী, স্যার।

তাজঃ ইন্টারভিউগুলো সব আমায় নিতে হবে।আর আমি যদি জলদী না আসি তাহলে কে নিবে? ঢাকা শহরের যামের কথা তো জানো।যদি সাড়ে নয়টার দিকে রওনা দিতাম তাহলে আমি সাড়ে দশটায়ও পৌঁছাতে পারবো না।তাই নয়টার আগেই রওনা দিয়েছিলাম। কিন্তু এখানে এসে দেখি মাত্র নয়টা পাঁচ বাজে।তাই কি আর করবো? বসে বসে আমার ফেভারিট শো শুনছিলাম।তুমি এতো তাড়াতাড়ি?

আদরঃ আমিও ভাবলাম আজ তাড়াতাড়ি চলে আসি।যদি লেট হয়ে যায়।স্যার, আমাদের শেয়ার ব্যবসার কি খবর?

তাজঃ আবেদন করেছি।এখনো পাস হয়নি।

আদরঃ ওহ আচ্ছা। স্যার, চা বা কফি কিছু আনবো?

তাজঃ এক মগ কফি হলে খারাপ হয় না।

আদর কেবিন থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলো।তাজ কিছু একটা ভেবে আদরকে ডাকলো।

তাজঃ আদর!!!

আদরঃ জ্বী স্যার, কিছু বলবেন?

তাজঃ আজকে ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য কয়জন কে সিলেক্ট করা হয়েছে?

আদরঃ প্রায় ৩০ জন হবে।ডেট তো কমিয়ে ফেললেন।নয়তো আরো ১০০ জন হতো।১০০ এর কাছাকাছি হয়েছিল। তার থেকে ৩০ জন সিলেকশন করা হয়েছে। এখন এই ৩০ জন থেকে মাত্র ৩ জন নেওয়া হবে।আপনার যাকে মনে হবে তাকে সিলেক্ট করবেন।মাস্টার্স ও অনার্স পাস করা অনেক CV পেয়েছি আমরা।এর থেকে ২০ জন মাস্টার্স কমপ্লিট করা আর ১০ জন অনার্স পাস করা সিলেকশন হয়েছে।

তাজঃ আমাকে সিলেক্ট হওয়া ৩০ জনের CV দিয়ে যেয়ো।আমি একবার চেক করে নিবো।

আদরঃ ওকে স্যার।

তাজঃ আদর, আরেকটা কথা।

আদরঃ জ্বি বলুন।

তাজঃ কফিতে সুগার ১ চামচ।

আদরঃ ওকে।

আদর কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো।তাজ কিছু সময় চুপ করে বসে রইলো।হুট করে আজ আবার ঘাড় ব্যাথা করছে।গতরাতে বিজনেসের একটা বই নিয়ে একটু পড়তে বসেছিলো। সেটা তাকের ওপর রাখতে গিয়ে অসাবধানতাবশত ওর ঘাড়ের ওপর পরে যায়।তখন ব্যাথাটা টের না পেলেও এখন প্রচুর ব্যাথা করছে।তাজ বুঝতে পারছে না এতো হালকা একটা বইয়ে ওর ঘাড় এত ব্যাথা করছে কেন? হাত দিয়ে মেসাজ করার সময় টের পেলো থাড়ের রগের মাঝ বরাবরি ফুলে আছে।এটা অবশ্য বহু আগের থেকেই আছে।সেই জায়গাটাই আবার ব্যাথা করছে।ঘাড়ের পেছনে দুই হাত দিয়ে মাথা এদিক সেদিক করে সামান্য সময় ব্যায়াম করলো।তারপর আবার এফএম রেডিও ওন করে দিলো।ইদানীং ওর মন ভালো করার ঔষধ নোভানাজের শো দুটো হয়ে গেছে। মেয়েটার কণ্ঠ ওর ভীষণ প্রিয়। যুগ যুগ ধরে চেনা ও আপন মনে হয় তার কাছে।

🦋🦋🦋

আজকে ১৫ মিনিট আগে শো শেষ করে অফিস থেকে বের হওয়ার জন্য উঠলাম।ইন্টারভিউতে সিলেকশন হয়েছি।তাই ইন্টারভিউ দিতে যাবো।গতকাল অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ভেবে দেখলাম কাজটা আমার সত্যি দরকার।নাভান বড় হচ্ছে। ওর তো একটা ভবিষ্যৎ আছে।চাকরীটা পাওয়ার সর্বস্ব চেষ্টা করবো।তারপরেও যদি না হয় তাহলে আর কিছু করার নেই।
সাদা রঙের একটা বড় গাউন আর মাথায় সাদা হিজাব বেঁধেছি।শো-এর রুম থেকে বের হতেই সাইমনের সাথে দেখা।ওর সাথে কথা বলার কোন ইচ্ছে নেই। তাই পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিলাম।

সাইমনঃ কোথাও যাচ্ছেন নাকি মিসেস এনাজ আহমেদ? পোশাক-আশাকে তো মনে হচ্ছে কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজে যাচ্ছেন।

আমিঃ আমি কোথায় যাবো না যাবো সেটা কি আপনাকে কৈফিয়ত দিবো মিস্টার সাইমন?

সাইমনঃ তা নয়।কলিগ হিসেবে তো জিজ্ঞেস করতেই পারি।আপনি রেগে যাচ্ছেন কেন?

আমিঃ কলিগ হিসেবে হলে কাজের প্রশ্ন আমায় করবেন।আমার পার্সোনাল বিষয়ে নাক গলাবেন না।আমি এটা পছন্দ করি না।আমি কোথায় যাবো কি করবো তা সম্পূর্ণ আমার ব্যাপার।তা নিয়ে আপনার মাথা না ঘামালেও চলবে।

সাইমনঃ আপনি কিন্তু সামান্য কারণে রেগে যাচ্ছেন?

আমিঃ আপনি আমার বিষয়ে নাক না গোলালে আমি খুশি হবো।আপনার ওপর একটুও রাগবো না।আপনি নিজের চরকায় তেল দিবেন।আমাকে নিয়ে আপনার এতো বেশি মাতামাতি আমার ভালো লাগে না। অন্য কাউকে নিয়ে তো আপনি এতটা পসেসিভ নন।তাহলে আমার সবকিছু তে আপনি কেন যেচে বা হাত ঢুকান।

সাইমনঃ আপনি কিন্তু আমায় অপমান করছেন।

আমিঃ আপনার মান-সম্মান আছে🤔? আমি তো জানতাম না।আপনার মান-সম্মান থাকলে না এসব অপমান আপনার গায়ে লাগতো।যদি আপমানগুলো আদোও আপনার গায়ে লাগতো তাহলে আমাকে নিয়ে আপনার এতো আগ্রহ থাকতো না।

সাইমনঃ আজ কিন্তু একটু বেশি বলছেন মিসেস নোভা ইসলাম।

আমিঃ লজ্জা থাকলে আমার সাথে যেচে আর কথা বলতে আইসেন না।অবশ্য আপনাকে তো আবার কুকুরের লেজের সাথেও তুলনা দেওয়া যায়।কুকুরের লেজ যেরকম হাজার টানলেও সোজা হয় না।তেমনি আপনাকে হাজার কথা শুনালেও সেই আমার পিছুই নিবেন।আপনার মতো বেহায়া লোক আমি দুটো দেখিনি।আজকের অপমান যদি মাথায় থাকে তাহলে আর আমার বিষয়ে কথা বলেন না।

সাইমনঃ সব কিছুর একটা লিমিট আছে।আমাকে এভাবে অপমান করার ফল কি হতে পারে তা তোমার ধারণায়ও নেই। মনে রাখবে পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে।ইদানীং তুমিও অতিরিক্ত উড়ছো।দেখো, আবার পাখা যেনো কেউ ছাটাই করে না দেয়।

আমিঃ আমাকে নিয়ে আপনার না ভাবলেও চলবে।আমি নিজের খেয়াল রাখতে পারি😊।ভবিষ্যতে কি হবে তা আল্লাহ ঠিক করে রেখেছে। তা নিয়ে এখন শুধু শুধু টেনশন করে ঘুম হারাম করার কোন প্রয়োজন নেই। আপনার শো শুরু করার সময় হয়ে গেছে। আমাকে নিয়ে না ভেবে শো তো সময় দিন।

কথাগুলো বলে চলে এলাম।সাইমন চোখ দুটো ছোট ছোট করে আমার দিকে অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে ছিলো।
ঠোটে ছিলো এক রহস্যময়ী বাঁকা হাসি।যেটার মর্মার্থ বোঝার কোন ক্লু আমি পেলাম না।অফিস থেকে বের হয়ে একটা রিকশা নিয়ে ইন্টারভিউয়ের উদ্দেশ্য বের হয়ে গেলাম।

🦋🦋🦋

রিকশা এসে থামলো ৬ তালা একটা ভবনের সামনে।এই ভবনের ৩য়,৪র্থ,৫ম ফ্লোর নিয়ে একটা ছোট কোম্পানি। আমি রিকশার ভাড়া মিটিয়ে লিফটের কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। লিফটে উঠে তিন নাম্বার বাটনে ক্লিক করলাম।তিন তালায় এসে রিসিপশনে থাকা মেয়ের দিকে এগিয়ে গেলাম।

আমিঃ আসসালামু আলাইকুম আপু। আজ এই কোম্পানির ইন্টারভিউয়ের কথা ছিলো।দয়া করে আমাকে বলতে পারবেন তা কোথায় হচ্ছে?

—- আপনি ফোর্থ ফ্লোরে গিয়ে মিস্টার আদরের সাথে দেখা করুন।আদর হলো কোম্পানির ওনারের এসিস্ট্যান্ট।

আমিঃ আচ্ছা,শুকরিয়া আপু।

আবার লিফটে উঠে পরলাম।আমার সাথে এবার অনেকে ছিলো।সবাই সম্ভবত ইন্টারভিউ দিতে এসেছে। কারণ সবার হাতে ফাইল ছিলো।আমরা লিফট থেকে বের হয়ে সামনের দিক যেতেই প্রায় ২৭/২৮ বছরের একটা ছেলে আমাদেরকে একটা রুমে বসতে বলে চলে গেল। সম্ভবত এই ছেলেটার নাম আদর।কারণ একটা লোক এসে তাকে আদর বলে ডাক দিতেই সে বেরিয়ে গেলো। আমি দরদর করে ঘামছি।অনেক নার্ভাস লাগছে।কিছু সময়ের মধ্যে ইন্টারভিউ নেওয়া শুরু হয়ে গেলো।প্রায় ঘন্টাখানিক পর আমার নামে ডাক পরলো।আমি সাইড ব্যাগ থেকে ফাইল বের করে ধীর পায়ে ভেতরে এগিয়ে গেলাম।আমার সাথে আদর নামের ছেলেটি ছিলো।সে আমায় কেবিন দেখিয়ে দিচ্ছে।

আদরঃ এখান থেকে ডানে গিয়ে তিন রুমের পর শেষের রুমটায় আপনার ইন্টারভিউ নেওয়া হবে।আপনার আগে একটা ছোট ব্রেক গিয়েছে। তাই স্যার হয়তো বাইরেও থাকতে পারে। তবে পারমিশন নিয়ে ভেতরে ঢুকবেন।

আমিঃ আচ্ছা।

আদরঃ স্যারকে একটুও ভয় পাবেন না।উনি খুব ভালো মানুষ। আপনাকে খুব নার্ভাস লাগছে।তাই বললাম আরকি।

আমিঃ উনার নামটা কি? আসলে বিজ্ঞপ্তিতে দুটো নাম দেখেছিলাম। তাই জিজ্ঞেস করলাম।

আদরঃ তাজরান তাজওয়ার।

আদর চলে যাচ্ছিলো।আমি পেছন ফিরে তাকে ডাকলাম।

আমিঃ শুনুন।

আদরঃ জ্বি বলুন।

আমিঃ বলছিলাম কি, ইন্টারভিউ কয়জন নিচ্ছে? আমি জীবনের প্রথমে কোন কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দিতে আসলাম।তাই কিছু জানি না।নাটক, সিনেমায় দেখেছি ইন্টারভিউতে অনেক মানুষ থাকে।যদি অনেক মানুষ থাকে তাহলে নিজেকে সেভাবে প্রস্তুত করে নিবো।

আদরঃ আপনি মে বি ভয় পাচ্ছেন।ভয় পাওয়ার মতো কিছু নেই। তাজরান স্যার একাই ইন্টারভিউ নিচ্ছে। অনেক মানুষ আছে এমনটা ভেবে ভয় পাওয়ার কোন দরকার নেই। আপনি কেবিনে গেলেই তাজরান স্যারকে পাবেন।

আমিঃ শুকরিয়া, সাহস দেওয়ার জন্য।

আদর আমাকে কেবিন দেখিয়ে দিয়ে অন্য দিকে চলে গেল।আমি ধীর পায়ে এগিয়ে যেতে লাগলাম।যত এগিয়ে যাচ্ছি তত ভয়টা জেঁকে ধরেছে। কেবিনের সামনে গিয়ে থুম মেরে দাঁড়িয়ে রইলাম।ভয়ে ইচ্ছে করছে উল্টো দিকে দৌড় দিতে।ভাবছি ভেতরে ঢুকবো কি ঢুকবো না।দোটানায় পরে গেছি।থাই গ্লাসের দরজায় কয়েকটা টোকা দিয়ে পারমিশন চাইলাম।

আমিঃ মে আই কাম ইন।

ভেতর থেকে কোন উত্তর এলো না।তাই আমি আবারো পারমিশন চাইলাম।এবার গম্ভীর কণ্ঠে কেউ বলে উঠলো।

— ইয়েস কাম ইন।

তার গলার স্বর পেয়ে আমার সারা শরীর কাঁপতে লাগলো।শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা একটা শিহরণ বয়ে গেলো।এই কণ্ঠ, এই কণ্ঠটা তো আমার চিরচেনা।আমি এই কণ্ঠের সাথে বহু আগের থেকে পরিচিত। আমার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে।আমি ভেতরে ঢুকছি না বলে আবারো সে বলো উঠলো।

— ভেতরে আসুন।

না,এবার আমি ভুল শুনিনি।আমার চিরচেনা কন্ঠ। কোনরকম থাই গ্লাস ঠেলে ভেতরে ঢুকলাম।ছাই
রঙের কোর্ট-প্যান্ট পরিহিত এক লোক উল্টো দিকে ঘুরে পকেটে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ তার বাইরের ব্যস্ত নগরীর দিকে।তার পেছন দিক দেখে আমি আরেকটা বড়সড় ঝাটকা খেলাম।চোখ দুটো আমার কোটর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম। সেই চিরচেনা দাড়িয়ে থাকা স্টাইল, পেছনের চুলের কাটিং,পকেটে হাত গুঁজে দাঁড়ানো, পারফিউমের স্মেল। নাহ্ আমার ভুল হওয়ার কথা তো নয়।এটা কি করে সম্ভব??উনি সম্ভবত তাজরান তাজওয়ার। তার সবকিছুর সাথে তো মাত্র একজনের মিল আছে।তাহলে কি সে বেঁচে আছে। তাও বা কিভাবে?আমার হাত-পা ঠান্ডা হতে লাগলো।আমি স্পষ্ট সুরে মুখ ফসকে শেষ পর্যন্ত তার নাম নিয়েই ফেললাম।

আমিঃ এনাজ!!!!!!

#চলবে

#

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here