#মালিনী পর্ব ৫

0
508

“মালিনী” পর্ব ৫
(নূর নাফিসা)
.
.
দুজনকে একসাথে দেখে এদিকে মালিনীর উক্তি,
– বাহ! মানিয়েছে খুব ছোট সাহেবের সাথে! বড় সাহেবের পাশে যেমন জেরিন ম্যাডামকে ভালো মানিয়েছে ঠিক তেমনই ছোট সাহেবের পাশে জেনিফা ম্যাডামকে মানিয়েছে!
মলি পানি দেওয়া শেষ করে বাসায় ফিরে গেলো। সকালে মলির মা তেলের পিঠা বানিয়েছে। মলি বের হওয়ার সময় তিন-চারটি পিঠা বাক্সে নিলো ফাহিমার জন্য। এ বাড়িতে এসে আগে পিঠাগুলো ফাহিমার হাতে দিলো। ফাহিমা খুশি হয়ে সাথে সাথেই একটা খাওয়া শুরু করলো। এটা দেখে ফারদিন বললো,
– মা, কিসব খাওয়া শুরু করেছো! এসব আলতু ফালতু খাবার খেয়ে পেটে অসুখ করবে! এই মালিনী, আর কখনো কিছু এনে মাকে খাওয়াবে না!
মলির মুখটা মলিন হয়ে গেলো! ফাহিমা জবাব দিলো,
– করুক অসুখ। তোকে তো আর খেতে বলিনি। আগে আর পরে, একদিন না একদিন তো মরবোই! খেয়েই মরি!
ফারদিন মায়ের কথা শুনে বিরক্তি নিয়ে চলে যাচ্ছিলো। জিহান দৌড়ে আসছিলো,
– দাদু তুমি কি খাও?
– পিঠা।
– আমি খাবো।
– না, তোমার আব্বু মতে পেটে অসুখ হবে। খেতে হবে না তোমার।
এদিকে ফারদিন আবার ফিরে এসে জিহানকে জোর করে কোলে নিয়ে চলে গেলো রুমের দিকে। মলির মন ভালো করতে ফাহিমা বললো,
– মলি, পিঠা কিন্তু দারুণ মজা হয়েছে! তোর মা আবার বানালে অন্তত একটা হলেও নিয়ে আসবি আমার জন্য!
মলি মুখে হাসি ফুটিয়ে তুললো শুধু। ফাহিমা পিঠা খেতে খেতে বললো,
– কিচেনে চল আমার সাথে।
– আন্টি, আমি কিন্তু বাগানে পানি না দিয়েই আপনার সাথে দেখা করেছি। পানি দিয়ে আসি আগে?
– বাগানে পানি দিতে হবে না। আজ ফরহাদ দিয়েছে আরও সকালেই।
– কেন, আমিই তো দিতাম! আর আমাকে তো রাখা হয়েছে এ কাজের জন্যই!
– হুম। কিন্তু, যার বাগান আজ তার ইচ্ছে হয়েছে দেওয়ার তাই দিয়েছে। চল।
মলি কিচেনে এসে জিজ্ঞেস করলো,
– আন্টি, সবার তো মনে হয় সকালের নাস্তা শেষ! তাহলে এখন কিচেনে কেন? রান্না শেষ হয়নি?
– পায়েস রান্না করবো। ফরহাদের খুব পছন্দ। কাল বলেছিলো পায়েস খেতে ইচ্ছে করছে। তাই ভাবলাম করে দেই।
– অহ!
ফাহিমা পায়েস বসানোর ব্যবস্থা করতে করতে দোতলা হতে ফরহাদের ডাক পড়লো। “মা, এককাপ কফি হবে?” ফাহিমাও যতটুকু সম্ভব চেচিয়ে বললো, “এক বালতি হবে।” ফরহাদ বালতিই পাঠিয়ে দিতে বললো।
মা ছেলের কীর্তি দেখে মলি খিলখিল করে হেসে উঠলো এবং বললো,
– আন্টি, সবাই ঘুম থেকে উঠে বা অবসর সময়ে কফি খায়! আর ছোট সাহেব দেখছি নাস্তা করার পর কফি খায়!
– নাস্তা করেনি। মাত্র ঘুম থেকে উঠেছে।
– আপনি না বললেন বাগানে পানি দিয়েছে ছোট সাহেব!
– ভোরে উঠে নামাজ পড়ে পানি দিয়েছে। পড়ে আবার ঘুমিয়ে পড়েছে। এখন উঠলো আর কফির জন্য সাড়া দিলো।
– অহ!
এক কাপ কফি বানিয়ে মলিকে বললো,
– এই কফির কাপটা দিয়ে আয় তো একটু ফরহাদের রুমে।
মলি কাপ হাতে নিয়ে বের হতে যাবে এমন সময় ফাহিমা তাকে ডেকে সাথে দুইটা তেলের পিঠাও দিয়ে বললো,
– এটাও নিয়ে যা।
– আন্টি, ছোট সাহেব কি খাবে পিঠা!
– খাবে, তুই নিয়ে যা।
– যদি কিছু বলে!
– আরে কি বলবে! বললে আমার কথা বলিস। তাছাড়া সে জানবেই আমি পাঠিয়েছি।
ফারদিন বেরিয়ে গেলো অফিসের জন্য। মলি ভয়ে ভয়ে পিঠা আর কফি নিয়ে গেলো ফরহাদের রুমে। দরজা তো অর্ধেক খোলা কিন্তু মানুষ দেখা যাচ্ছে না বাইরে থেকে। মলি দরজার বাইরে থেকেই মাথা বাড়িয়ে উঁকি দিলো। কাউকে না পেয়ে মৃদু স্বরে “ছোট সাহেব” বলে ডাকলো। কোন সাড়া না পেয়ে ভাবলো রুমে নেই। ভেতরে এসে টেবিলে রেখে যাওয়ার উদ্দেশ্যে দু কদম এগিয়ে আসতেই ডানদিকে দেখতে পেল বাইরের দিকে তাকিয়ে ফরহাদ বারান্দায় দাড়িয়ে আছে। কারো অনুমতি ছাড়া রুমে প্রবেশ ঠিক না ভেবে দ্রুত আবার রুমের বাইরে চলে এলো। এবার গলার স্বর আরেকটু উঁচু করে বললো,
– ছোট সাহেব, আপনার কফি পাঠিয়েছেন আন্টি।
ভেতর থেকে আওয়াজ এলো,
– কফি কি দরজার সামনে দাড়িয়ে ঢিল মেরে দিবে নাকি?
ফরহাদের কথায় মলি নিজেকে বোকা পরিচয় দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। বারান্দায় এসে ফরহাদের দিকে এগিয়ে গেলো। ফরহাদ কালো প্যান্ট আর সাদা একটা সেন্টু গেঞ্জি পড়ে আছে বিধায় মলি তাকাতেও লজ্জা পাচ্ছে তার দিকে। নিচের দিকে দৃষ্টি রেখেই কফির কাপ এগিয়ে দিলো। এগিয়ে তো দিয়েছে কিন্তু তার হাত আর ফিরে আসছে না কেন! দৃষ্টি হাতের দিকে এনে দেখলো ফরহাদ তার হাতসহ কফির কাপ ধরেছে! সে অবাক হয়ে বড়বড় চোখ করে ফরহাদের দিকে তাকালো! ফরহাদ বললো,
– ফ্লোরে কি?
– ক..কই! কিছু না!
– আমি তো দেখলাম কিছু খুজছো!
– কিছু না! এই নিন পিঠা! আমি ইচ্ছে করে আনিনি! আন্টি পাঠিয়েছে!
কথাগুলো খুব দ্রুত বলে ফেললো মলি! ফরহাদ কফির কাপের সাথে তার হাত ধরে রেখেছে খুব অসস্তি লাগছে তার! কিছু বলতেও পারছে না! সে কি ইচ্ছে করে ধরেছে নাকি খেয়ালই নেই তার! ফরহাদ মলির হাত ছেড়ে কফির কাপে এক চুমুক দিলো। কিন্তু পিঠার প্লেট ধরলো না! তাই মলি জিজ্ঞেস করলো,
– পিঠা কি নিয়ে চলে যাবো?
– কে বানিয়েছে পিঠা?
– না মানে! আমার মা বানিয়েছে! আন্টির জন্য নিয়ে এসেছিলাম।
মলির এই আমতা আমতা করে বলা কথা হয়তো ফরহাদের একটুও পছন্দ হচ্ছে না! তাই কিছু না বলে হাত থেকে প্লেট নিয়ে উল্টো দিকে ঘুরে দাড়ালো। বাইরের দিকে তাকিয়ে কফি খাচ্ছে সে। মলি ফিরে আসার সময় আবার একটু গলা বাড়িয়ে নিচের দিকে তাকালো! এখান থেকে বাগানটা খুব সুন্দর দেখাচ্ছে! সারা বাগান জুড়ে শুধু ফুল আর ফুল দেখা যাচ্ছে! হঠাৎ ফরহাদ বললো,
– কেউ আমার বাগানের উপর নজর দিলে চোখ তুলে ফেলবো!
মলি কথাটা শুনে দ্রুত সেখান থেকে চলে এলো! মনে মনে বকবক করছে, “বাবারে! কি জল্লাদ একটা! বাগানের উপর নজর পড়লে নাকি চোখ তুলে ফেলবে! আর আমি পেছন থেকে উঁকি দিয়েছি এটাই বা দেখলো কিভাবে! মাথার পেছনেও চোখ আছে নাকি!” ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ধাক্কা খেলো জেনিফার সাথে!
– আহ!
– স..সরি, মেডাম!
– এই মেয়ে চোখ কোথায় থাকে তোর! দেখে হাটতে পারিস না! রাবিশ! আর এ রুমে গিয়েছিস কেন?
– ছোট সাহেবের কফি দিতে।
– আমার জন্যও এক কাপ কফি নিয়ে আয়। আমি ফরহাদের রুমেই আছি।
রুমের ভেতর থেকে আওয়াজ এলো,
– জেনিফা, এ বাড়িতে কাউকে কাজের লোক রাখা হয়নি। সবাইকে নিজের কাজ নিজেকেই করতে হবে। তোমার খেতে ইচ্ছে হলে নিচে গিয়ে বানিয়ে নিয়ে এসো।
– এখন আবার নিচে যাবো! থাক, লাগবে না!
জেনিফা ফরহাদের রুমে চলে গেলো আর মলি জেনিফাকে মনে মনে বকতে বকতে নিচে চলে এলো। “দেখতে সুন্দরী হলেই কি স্বভাবে একদম বান্দরী! দুইটা বোনই এক জাতের! দূর! আমিও না! বোন যেহেতু, এক জাতের তো হবেই!”
বাগানে না এলে মলির ভালো লাগে না! তাই ভাবলো একবার বাগান থেকে ঘুরে আসা যাক! তাই সে বেরিয়ে বাগানের দিকে এলো। বাগানে প্রবেশ করার আগেই দোতলায় বারান্দার দিকে তাকালো। জেনিফা আর ফরহাদ বারান্দায়ই দাড়িয়ে আছে। জেনিফা বকবক করেই যাচ্ছে আর ফরহাদ চুপচাপ কফি খাচ্ছে। হঠাৎ করেই তার দৃষ্টি চলে এলো মলির দিকে। মলি আর বাগানে ঢুকার সাহস পেলো না! এমনিতেই বলেছে বাগানে কারো নজর পড়লে চোখ তুলে ফেলবে! বাগানে তো তার এখন কোনো কাজ নেই! এখন গেলে যদি আবার কিছু বলে সেই ভেবে আর বাগানে প্রবেশ করলো না! ফুলগুলোও আর স্পর্শ করা হলো না! ফাহিমার কাছে এসে কাথা বানাতে লাগলো। পায়েসের মিষ্টি গন্ধ সারা ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে! ফরহাদ প্লেট আর কফি কাপ নিয়ে কিচেনে এলো। সাথে হাটতে হাটতে জেনিফা মেয়েটা বকবক করেই যাচ্ছে। কিচেনে এসে বললো,
– ওয়াও আন্টি, কি রান্না করছো তুমি?
– গন্ধ শুনেও যেহেতু বুঝতে পারোনি তাহলে আর বুঝার দরকার নেই।
– পায়েস! রাইট?
– হুম। ফরহাদ, ভাত খাবি না?
– না মা। পেট ভরে গেছে।
– খাওয়াদাওয়ার প্রতি কোন আগ্রহ নেই! স্বাস্থ্যের কি অবস্থা করে ফেলছে!
– মা, আমার পেট ভরা! কিভাবে খাবো!
– কি খেয়ে তোর পেট ভরে গেছে শুনি?
ফরহাদ কিছু বলতে যাবে তার আগেই মলি ফিসফিস করে ফাহিমাকে বললো,
– আন্টি, আপনার পায়েসের গন্ধে পেট ভরে গেছে!
ফাহিমা হাসলো তার কথা শুনে। ফরহাদ আর কিছু না বলে বেরিয়ে গেলো কিচেন থেকে। পিছু পিছু যেতে যেতে জেনিফা বললো,
– ফরহাদ, আজ কি কোথাও ঘুরতে যাবে না?
– কেন?
– আমার খুব ইচ্ছে করছে তোমার সাথে ঘুরতে যাওয়ার। চলো না যাই?
– না, এখন কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না।
– প্লিজ চলো না যাই। বাসায় বসে বসে কি করবে! আমি তো তোমার জন্যই এসেছি।
– আর আমি কাজের ফাকে রেস্ট নিতে এসেছি জেনিফা!
ফরহাদ উপরে নিজের রুমে চলে গেলো। জেনিফা হনহন করে জেরিনের রুমের দিকে চলে গেলো। একটু পরই দুই বোন সেজেগুজে ফাহিমার কাছে বলে বেরিয়ে গেলো শপিং করার উদ্দেশ্যে! ছেলের বউকে নিয়ে যে ফাহিমা একটুও সুখী না সেটা খুব ভালোই বুঝতে পেরেছে মলি! নিজেও এক ব্যর্থতার নিশ্বাস ছাড়লো! একটু পর ফরহাদ নিচে এসে খাবার টেবিলে বসতে বসতে বললো,
– মা, হয়েছে তোমার পায়েস রান্না?
– হ্যাঁ। আসছি।

[100%গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি,আমাদের পেজের সবগুলো গল্প আপনার ভালো লাগবে।প্লিজ লাইক & ফলো দিস পেইজ। https://www.facebook.com/SeraGolpo500/
সেরা সব গল্পের লিংক All Best Story Link ]

ফাহিমা বাটিতে করে পায়েস নিয়ে গেলো ফরহাদের জন্য। ফরহাদ গরম পায়েসের বাটিতে চামচ নাড়াতে নাড়াতে বললো,
– ভাবি কোথায়?
– শপিং মলে গেছে জেনিফার সাথে।
– বাহ! চমৎকার তোমার বাড়ির বউ! হাসব্যান্ড অফিসে, ছেলে স্কুলে আর ওয়াইফ শপিংমলে! এদিকে সারাদিন পড়ে থাকো তুমি রান্নাঘরে! আমার সাথে চিটাগং চলে যাবে তুমি একমাসের জন্য! দেখা যাক কিভাবে কি করে তোমার আদুরে বউমা!
ফাহিমা হেসে কিচেনে যেতে যেতে বললো,
– তখন দেখবি বেড়াতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে হয় বাপের বাড়ি না হয় আমার পিছু পিছু চিটাগং চলে গেছে!
– হুম, সেটাই করবে! মা, পায়েস ফ্রিজে রেখে বরফ করো তো এক বক্স।
– আচ্ছা।
ফাহিমা মলিকে এক বাটি পায়েস দিয়ে নিজেও মলির সাথে বসে খেতে লাগলো।
– আন্টি, খুব মজা আপনার হাতের রান্না! পায়েসের স্বাদ তো অসাধারণ! (https://www.facebook.com/profile.php?id=100058759920318)
– বেশি পাম দিলে আবার উড়ে যাবো!
মলি হিহিহি করে হেসে বললো,
– পাম না। খাটি কথা আন্টি!
– আচ্ছা! তোর মায়ের জন্য বক্সে দিয়ে দিবো। যাওয়ার সময় নিয়ে যাস মনে করে!

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here