অদ্ভুত প্রেমবিলাস পর্ব-৪৩

0
680

#অদ্ভুত_প্রেমবিলাস
#লেখিকাঃ সারজীন ইসলাম

|পর্ব-৪৩|

ধারা একে একে সব গিফট এর প্যাকেট গুলো এনে বিছানায় রাখে। জোনাকি আর জান্নাত মিলে একে একে গিফট এর প্যাকেট গুলো খুলতে শুরু করলে, হঠাৎ ধারার ফোন বেজে ওঠে। ধারা হাত বাড়িয়ে বালিশের পাশ থেকে ফোনটা হাতে নেয়। জোনাকি ভাবির দুষ্টুমি হেসে বলল,

‘ কে ফোন করেছে?’

ধারা ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বলল,

‘ উনি।’

জান্নাত লাফ দিয়ে ধারার কাছে গিয়ে ওর হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বলল,

‘ আমি আগে কথা বলবো তারপর তুই।’

জোনাকি জান্নাতের দিকে তাকিয়ে হালকা সুরে বলল,

‘ আমি বলেছি কী জান্নাত, আগে ধারা তার উনির সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলে নিক। না হলে হঠাৎ করে ফোন রিসিভ করে অপরিচিত কারও সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ঘাবড়ে যেতে পারে বেচারা।’

জান্নাত ছোট করে বলল,

‘ কথাটা তুমি ভুল বল নি ভাবি। এই নে প্রথমে তুই কথা বল তোর বরের সঙ্গে তারপরে আমি কথা বলবো।’

জান্নাত ধারার দিকে ফোনটা এগিয়ে দেয়। পরে আবার আবার জোনাকি আর জান্নাত মিলে গিফট এর প্যাকেট গুলো দেখতে শুরু করে। ধারা ফোনটা হাতে নিয়ে ঘরের পুর্ব দিকের জানলার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। ফোন রিসিভ করতেই ইভানের হাস্যোজ্জ্বল মুখটা দেখতে পায়। সে হাসি মুখে বলল,

‘ কী করছো এখন? সকালবেলা ব্রেকফাস্ট করেছো?’

ধারা মৃদু স্বরে বলল,

‘ ভাবি আর জান্নাতের সঙ্গে বসে আছি। খেয়েছি আমি, আপনি খেয়েছেন?’

ইভান ধীর গলায় বলল,

‘ ব্রেকফাস্ট করে ইউনিভার্সিটি তে এসেছি। জান্নাত? তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড জান্নাত?’

ধারা ছোট করে বলল,

‘ হুম।’

ইভান ধারার দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ আমার শালিকার সঙ্গে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেবে না?’

ধারা ইভানের কথার উত্তর না দিয়ে জান্নাত কে বলল,

‘ জান্নাত এই নে তোর ভাইয়া তোর সঙ্গে কথা বলবে।’

জান্নাতে গিয়ে সে ধারার কাছ থেকে ফোন নিয়ে হাসি মুখে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ হ্যালল…

জান্নাতের কথা মুখে আটকে গেছে। চোখ বড় বড় করে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে। নিজেকে সামলে নিয়ে মৃদু চিৎকার দিয়ে বলল,

‘ ইভান। ইভান ভাইয়া আপনি আমার দুলাভাই? ও মাই গড আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না।’

জান্নাতের কথা শুনে ইভান মৃদু হাসে। জান্নাতের কথা শুনে ধারা আর জোনাকি জান্নাতের দিকে অবাক চোখে তাকায়। জান্নাত ধারার দিকে তাকিয়ে উত্তেজিত গলায় বলল,

‘ ধারা, ধারা। আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না।’

ধারা জান্নাতের দিকে তাকিয়ে চোখ গুলো ছোট ছোট করে বলল,

‘ কী হয়েছে বলবি তো তখন থেকে বাঁদরের মতো লাফালাফি করছিস কেন? আগে সুস্থ হয়ে বসে বসে বল কী হয়েছে?’

জান্নাত নিজেকে কিছুটা শান্ত করে বলল,

‘ ধারা তোর মনে আসে কয়েকদিন আগে নদীর পাড়ে তোর সঙ্গে আমার দেখা করার কথা ছিল? কিন্তু আমি ওই দিন যেতে পারিনি তার জন্য তুই খুব রেগে গেছিলি। আসলে ঐদিন নদী পড়ে যাওয়ার সময় আমার ইভান ভাইয়ার সাথে দেখা হয়। তার সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক নামডাক আছে। মিউজিক্যাল ভিডিও তার ফ্যান ফলোয়ার বলে শেষ করা যাবে না। আর এত বড় সেলিব্রিটি কিনা আমার দুলাভাই। এসব ভাবতেই আমার গর্ব হচ্ছে।’

জান্নাতের এসব কথা শুনে ইভান হেসে বলল,

‘ এই যে মাই ডিয়ার শালিকা। তুমি কিন্তু আমার নামে একটু বেশি বেশি বলছো। যাই হোক আমি তোমার সঙ্গে পরে জমিয়ে আড্ডা দিব আমার ক্লাসের সময় হয়ে যাচ্ছে, এবার ফোনটা তোমার বান্ধবীকে দাও।’

জান্নাত হালকা হেসে বলল,

‘ ঠিক আছে ভাইয়া, ধারা এই নে ফোন।’

জোনাকি জান্নাতের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ ওরা কথা বলুক আমরা বরং যাই এখন। ওদের কথা শেষ হলে, তারপরে এসে এগুলো গুছিয়ে রাখবো।’

জান্নাত আর কিছু না বলে জোনাকির সাথে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। ধারা ফোন নিয়ে বিছানায় বসে বলল,

‘ হ্যাঁ, বলুন।’

ইভান মৃদু স্বরে বলল,

‘ দুপুরে খেয়ে নিয়ো। আমি একবারে বাসায় ফিরে তোমাকে কল ব্যাক করো।’

ধারা ধীর গলায় বলল,

‘ পরশুদিন নানার বাড়িতে অনুষ্ঠান আছে মানে মিলাদ অনুষ্ঠান। দুপুরের পরে খাওয়া দাওয়া করে আমরা রওনা দিব। আম্মা আর চাচি জান আপনাকে কথা টা জানাতে বলেছে।’

ইভান কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলল,

‘ আচ্ছা ঠিক আছে সাবধানে যাবে। নিজের খেয়াল রেখো।’

এইটুকু বলে ইভান ফোনের স্ক্রিনের শব্দ করে চুমু খেয়ে ছোট করে বলল,

‘ বায়!’

ধারা লজ্জায় ইভান কে কিছুই বলতে পারে। শুধু আলতো চোখে তাকিয়ে থাকে।

ইভান ধারার সঙ্গে কথা বলে ফোনটা কেটে রাখতে না রাখতেই দেখে ওর বন্ধুরা এদিকে আসছে। হেরি, রোজ, রাহুল আর মিহু এসে কিছুক্ষণ ঘুরে ঘুরে ইভান কে দেখে। ইভান বিরক্ত ভাব নিয়ে ওদের দিকে তাকায়। রাহুল ইভানের সামনে এসে ওর দিকে ছোট ছোট চোখে তাকিয়ে বলল,

‘ মেয়েটা কে ছিল?’

ইভান রাহুলের দিকে না তাকিয়ে বলল,

‘ কোন মেয়ে?’

মিহু সন্দেহের গলায় বলল,

‘ কিছুদিন আগে আপনি আপনার একাউন্টে একটা ভিডিও আপলোড করেছিলেন সেখানে একটি মেয়ে আপনার বুকের উপর শুয়ে ছিল। আপনি মেয়েটিকে চুমু খেয়েছিলেন। ভিডিওর নিচে ট্যাগ করে বড় বড় অক্ষরের লিখেছিলেন লাইফ লাইন। আই থিঙ্ক এবার আপনার মনে পড়েছে।’

ইভান উত্তর না দিয়ে পকেটে হাত ঢুকিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে। হেরি মৃদু স্বরে বলল,

‘ হাউ মেনি টাইমস হ্যাভ ইউ কোল্ড ইউ টু ফাইন্ড আউট এবাউট দিস? বাট ইউ রিসিভ দা ফোন এন্ড সে নাথিং প্রপারলি। তোর ঐ ভিডিওটা আপলোড করার পর ইউনিভার্সিটি কত গরম হয়ে গেছিলো জানিস? ইউনিভার্সিটির কমবেশি সব মেয়েরা তোকে পছন্দ করে, তোর ভিডিও আপলোড করার পর থেকে আমাদের অবস্থা নাজেহাল। প্রতিদিন দলে দলে মেয়েরা আসবে এসে তোর কথা জিজ্ঞেস করে যায়। এবার বল মেয়েটা কে আর তার সঙ্গে তার সম্পর্ক কী?’

রোজা ধীর গলায় বলল,

‘ হোয়াই আর ইউ সাইলেন্ট নাও? ইউর্স, জেসি, হাস বিন হারাসিং উস।’

ইভান স্পষ্ট গলায় রোজার দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ আমি আগেও বলেছি এখনও বলছি। আমি ওই জেসি কে ভালোবাসি না তাই ও কি করল না করল তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আর তোরা ওকে সুযোগ দিয়েছিস কেনো তোদের সঙ্গে মিস বিহেভ করার?’

ইভান এইটুকু বলে থেমে আবার বলল,

‘ ভিডিওতে আমার সঙ্গে কে ছিল এই বিষয়ে আমি এখন কোন কথা বলতে চাচ্ছি না। যখন বলার হবে আমি নিজেই তোদের বলব। এখন প্লিজ জোর করিস না। চল ক্লাসে দেরি হয়ে যাচ্ছে।’

ইভানের কথা শুনে কেউ কিছু না বলে একে একে ক্লাসের দিকে যেতে শুরু করে। ইভান ওর বই গুলো গুছিয়ে দেখে হেরি এখনো দাঁড়িয়ে আছে। ইভান হেরির দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বলল,

‘ কিরে চল ক্লাসে দেরি হয়ে যাচ্ছে।’

হেরি তার ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে এসে চিন্তিত গলায় বলল,

‘ আমি জানি তুই ছেলে হিসেবে খারাপ না। তুই সব সময় আন্টির কথা শুনে চলিস। তুই যথেষ্ট হ্যান্ডসাম একটা ছেলে। তোর এক ইশারায় মেয়েরা তাদের সবকিছু উজাড় করে তোকে দিতে পারে। কিন্তু এমন কোন কাজ করিস না যাতে কোনো মেয়ের জীবন নষ্ট হয়ে যায়। আমি জানি তুই এমন ছেলে না, তাও আমার বলার দরকার মনে হল তাই বললাম। কিছু মনে করিস না বন্ধু।’

এইটুকু বলে হেরি চুপ হয়ে যায়। ইভান কিছুক্ষণ চুপ থেকে মৃদু স্বরে বলল,

‘ সি ইজ মাই ওয়াইফ।’

ইভানের কথা শুনে হেরি চমকে ওঠে। ইভানের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবে সে হয়তো ভুল কিছু শুনেছে এইমাত্র।

চলবে…

আলহামদুলিল্লাহ এখন একটু সুস্থ আছি। কিন্তু মাঝে মাঝে জ্বর কমে আবার কিছুক্ষণ পরে বাড়তে শুরু করে। এখনো সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হয়নি। ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here